রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

আজ ২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’

আজ ২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই দিনটি পালন করা হয় নীল রঙের পোশাক পরে।

‘অটিজম’ বা ‘অটিস্টিক’ শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। অনেক পরিবার বা ব্যক্তি আছেন যাঁরা অটিজম বা অটিস্টিক শব্দটির সঙ্গে তখন পরিচিত হয়েছেন যখন তাঁরা জানতে পারেন যে তাঁদের পরিবারে বা তাঁদের কাছাকাছি কেউ এই অটিজম সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে এটাকে রোগ বলে অভিহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে অটিজম কোনো রোগ নয়। স্বাভাবিক শিশুর মতো দেখতে হলেও কথা বলতে গেলেই কেবল বোঝা যায় তারা অটিজমে আক্রান্ত। অটিজম বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মনোবিকাশজনিত সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য মানুষ বা বিষয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না বললেই চলে। অটিস্টিক শিশু মানে বোকা বা অমেধাবী নয়। অটিস্টিক শিশুরা স্কুল-কলেজ এমনকি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে সফলতা অর্জন করার যোগ্যতা রাখে। বিখ্যাত সংগীতশিল্পী লেডি হাক এবং ডারিল হান্না, কার্টুন ছবির আবিষ্কারক সাতসি তাহেরিসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তি অটিস্টিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁদের সফলতায় অটিজম কোনো বাধা হতে পারেনি। অটিস্টিক শিশুদের সুস্থ বিকাশে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা।

ভালো থাকুক পৃথিবীর সব শিশুরা …
বিশ্বজয় করুক ….

কবিতা : বন্ধন

বন্ধন

ঘরে ফেরা পাখিদের মতোই রোজ সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসে সব দুঃখগুলো। এই নিয়ম তাদের আজানা নয়। তবুও একদিন একটা দুঃখ সময়মতো ফেরেনি, দুশ্চিন্তা আঁধার থেকে দু’কদম হেঁটে এগিয়ে গেলো। রাত গভীর হলো। প্রায় ভোরের দিকে সে ফিরে এলো। পথ হারিয়ে ফেলেছিল। তখন থেকেই তাদের একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি। দড়ির আর এক প্রান্ত আমার সাথে বাঁধা। যেখানেই যাই আমি, এরা ঠিক বুঝে নেয় অবস্থান। সন্ধ্যেবেলায় দড়িতে টান দিলেই, একে একে চলে আসে আমার কাছে।

আমিই আমার দুঃখগুলির রাখাল।

চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ-ভ্যান গঘ এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা

জন্মদিনে সমকালীন ও আধুনিক চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ-ভ্যান গঘ এর প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা …

“ছবি এঁকে কিছু বলতে চাই আমি, আর তাতেই সঙ্গীত যেমন সান্ত্বনা দেয় তেমনি সান্ত্বনা পাবো” – বলেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ- পৃথিবীর মহান শিল্পীদের একজন। জন্মেছিলেন হল্যান্ডে ১৮৫৩ সালে আজকের দিনেই। সেজান, গঁগা এবং ভ্যান গঘ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্কর এই তিন শিল্পীই আধুনিক শিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ। অতীত এবং সমকালীন শিল্প সাহিত্য জগত সম্বন্ধে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের এর প্রচুর জ্ঞান ছিলো; নিজের মননে সব কিছুর সম্মেলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন।

“কখনো কখনো অনির্বচনীয় অনেক কিছু থাকে, সমস্ত প্রকৃতিটা যেন মনে হয় কথা বলতে চায়; এ জিনিসটা সবাই দেখতে পায় না, অনুভব করতে পারেনা। যার চোখ আছে, কান আছে, হৃদয় আছে তার জন্যেই ঈশ্বর এ সৌন্দর্য করে রেখেছেন। এ কারণেই আমার মনে হয় একজন শিল্পী সুখী, সে যা দেখে তার একটুখানিও প্রকাশ করতে পারলে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায়।

আমি আমার কাজের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যার ভেতর আমার হৃদয় ও আত্মা সম্পূর্ণ দিয়ে নিবেদিত থাকতে পারি এবং যা আমার বেঁচে থাকা অর্থময় করে, অনুপ্রাণিত করে।” (ছোট ভাই ও জীবনের একমাত্র সহযোগী থিও-কে লেখা চিঠির অংশ বিশেষ )

ভ্যান গঘ সম্বন্ধে বলা হয় … His paintings are characterized by thick brush strokes, brilliant colors, and jagged lines, through which Van Gogh expressed his emotional response to his subjects rather than providing an accurate description of them. As a result he became a leader in the development of expressionism in painting.

বেলজিয়ামে গিয়ে এন্টর্প একাডেমিতে ভর্তি হন পদ্ধতিগতভাবে ছবি আঁকার নিয়ম-কানুন শিখতে। কিন্তু নিয়মে বেঁধে থাকা তাঁর পক্ষে ছিল অসহনীয়। ফলে ফার্স্ট টার্ম শেষ হওয়ার আগেই আর্ট একাডেমি ছাড়লেন।

ভ্যান গঘ তার জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। তীব্র মানসিক অস্থিরতার ফলে প্রায় উম্মাদ দশা হয় তাঁর। সেন্ট রেমি-র এক মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হন কিন্তু থেমে থাকেনি শিল্পচর্চা। মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে বসে-ও ২০০ ক্যানভাস আঁকেন !!!

প্যারিসে এসে ফানার্ড করমনের স্টুডিওতে কাজ করতে শুরু করেন। এসময় বন্ধু পল গঁগ্যার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পরেন এবং এক ব্যাক্তিগত কারণে তিনি নিজের এক কান কেটে নেন। এ ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন গঘ। রক্তাল্পতা এবং হ্যালুসিনেসনে ভুগতে থাকেন। আর্লেসের হাসপাতালে দু’সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ঘরে ফিরে অবিরাম ছবি আঁকতে থাকেন অদ্ভূত উন্মাদের মতো।

এক পর্যায়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গঘকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে আর্লেস থেকে বিতাড়িত করে নগর কর্তৃপক্ষ। গঘ নিজেই গিয়ে ভর্তি হন সেন্ট রেমি’র মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সুস্থ না হয়ে বরং বিষণ্নতায় ভুগে ভুগে পূর্ণ পাগলই হয়ে যান গঘ। এতো অসুস্থতার মধ্যেও বন্ধ করেননি ছবি আঁকা। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে বসেও ২০০ ক্যানভাস ছবি আঁকেন। ছোট ভাই থিও তাঁকে নিয়ে এলেন প্যারিসে। কিন্তু কিছুদিন পরই গঘ চলে গেলেন অভঁরো। ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই রাতে নিজের বুকে গুলি করে শুয়ে থাকলেন আর ঐ অবস্থাতেও খালি পাইপ টেনে গেলেন। ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পৃথিবীর দুঃখীতম এই চিত্রকর। তখন তার বয়স মাত্র ৩৭ বছর।

সেজান, গঁগা আর গঘ … স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এই তিন শিল্পীই আধুনিক চিত্রশিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত … সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গগ … শিল্পী জীবন পেয়েছিলেন মাত্র ১০ বছরের … অতীত এবং সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য জগত সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান ছিলো তাঁর নিজের মননের সাথে সব কিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। বন্ধুহীন, নিঃস্ব আর দূর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটালেও সমকালীন চিত্রকলায় তাকেই মনে করা হয় সবচেয়ে সার্থক শিল্পী হিসেবে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী ১০ টি চিত্রকর্মের মধ্যে একক ভাবে তাঁরই অঙ্কিত রয়েছে ৪ টি!

জীবনের গল্প

ওই যে কথায় বলে না ‘first impression is the last impression ‘. আমার ক্ষেত্রে সবসময় first impression worst impression হয়েছে। মাত্র তিনটে পয়েন্ট বললেই ব্যপারটা বোঝা যাবে।

১. এমনিতে আমি মানুষটা কথাকলি। অনর্গল কথা বলে যেতে পারি। কিন্তু ওই যখনই কোথাও গেছি, চেনাদের মাঝে টুকটাক কথা বললেও অচেনা কেউ সামনে পড়ে গেলেই হয়েছে – একেবারে স্পিকটি নট। হুম, হা করে কাজ চালিয়ে নেওয়া। আর শান্ত আমি কোনো কালেই ছিলাম না। মনে আছে ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে কোথাও গেছি সব অচেনা মানুষের ভীড়। আর আমি একেবারে চুপ। সেইসব অবশেষে আমাকে সার্টিফাই করলেন, ভীষণ শান্ত, লাজুক স্বভাবের মেয়ে। ভীষণ কম কথা বলে।

২. কলেজে উঠেছি, মানে পড়ালেখা করে প্রোমোশন হয়েছে আর কি। অনেকদিন কলেজ করার পরে আমরা কয়েকজন বন্ধু হতাশ হয়ে পড়লাম। স্কুলের সাথে কোনো পার্থক্য পাচ্ছি না বলে। সবাই ক্লাস বাঙ্ক করে আর আমরা রোজ রোজ সবকটা ক্লাস করে যাচ্ছি। একদিন মনে সাহস নিয়ে, মুখে বিরক্তির ছাপ এনে বললাম -চল তো আজ কফি হাউজে যাবো। রিনা বললো আমার বয় ফ্রেন্ডকে ডেকে নিই? ও পাশেই থাকে। আমরা বললাম ডেকে নে। কলেজে পড়ার সময়ও আমিই একমাত্র পদার্থ যার বয় ফ্রেন্ড জোটেনি। যারা ঝরতি পড়তি এসেছিলেন একটা ফুঁ দিলেই উড়ে গেছে। তাই মনে মনে দুঃখ থাকলেও কাউকে বলতাম না। থাক সেইসব দুঃখের কথা। কফি হাউজে তো আমরা হেঁটে হেঁটে গেলাম। গিয়েই রিনার বয়ফ্রেন্ডকে দেখলাম যে বীর বিক্রমে বসে আছে। আসলে নাম তার বিক্রম। রিনা তার পাশে বসলো আর আমি ওদের উল্টো দিকের চেয়ারে। সবাই কফির অর্ডার করছে কে কি খাবে।

ততদিনে টিভিতে হিন্দি, তামিল, ওড়িয়া, মানে ভারতের যতো ভাষা আছে সেইসব সিনেমা দেখে এটা বুঝেছি যে কফি মানেই ব্ল্যাক কফি। তখনও কফির স্বাদ জানি না। মানে আমাদের বাড়িতে ছোটদের চা, কফি দেওয়া হতো না। যদি খুউউব বায়না করা হতো তাহলে এক কাপ দুধে কয়েক ড্রপ চায়ের লিকার ফেলে চা বলে আমাদের দেওয়া হতো। সেই আমি বললাম ব্ল্যাক কফি খাবো। যথা সময়ে আমাদের সামনে কফি এলো, সবাই ব্ল্যাক কফিই নিয়েছে। সাথে সিঙ্গারা। সবাই কফিতে চুমুক দিয়েছে। আমি কিন্তু দিচ্ছি না। রিনা লাজুক লাজুক মুখ করে বিক্রমকে দেখছে। অবশেষে আমি ভাবলাম। নাহ্, কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এইবার খেয়ে নেওয়া দরকার। বলে যেই এক সিপ নিয়েছি! ও মা গো! কি তেতো! পুরো কফিই মুখ থেকে ফু করে বেরিয়ে এলো। বেচারা বিক্রমের সাদা শার্টে কফির ছিটে ভর্তি। আর আমি যারপরনাই লজ্জিত। বিক্রম তো ঠিক আছে ঠিক আছে বলতে বলতে হাত মুখ ধুয়ে এলো! রিনা সহ বন্ধুরা ভাবছে কফিতে কিছু পড়েছিল হয়তো। কিন্তু আমি তো জানি, যে মেয়ে তেতো খেতে হবে বলে ভাত জানলা দিয়ে গলিয়ে ফেলে দিতো সেই মেয়ে খাবে ওই তেতো কফি! যাকে মা ধরে বেধে হয়তো এক গরস নিম বেগুন বা উচ্ছেভাজা দিয়ে ভাত খাওয়াতে পারতো, সেই মেয়ে খাবে পুরো এক কাপ ওই তেতো কফি! কভি নেহী।

৩. বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার হাতের বানানো চা খাবে। বিয়ের আগে কোনোদিন রান্নাঘর মুখো হই নি। রান্নার র জানি না, কোনো কাজ পারি না সেই মেয়েকে বাবা, মা সাহস করে বিয়ে দিয়েছে। মা অবশ্য আমার দস্যিপনা দেখে মাঝেমধ্যে বলেই ফেলতেন ‘তোর বিয়ের পরের দিনই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তোকে ফেরত দিয়ে যাবে সাথে একটা ঝুড়ি দিয়ে। আর সেই ঝুড়ি ভর্তি থাকবে তোর নামে অভিযোগ! ‘ আমি তো সেই ছবি কল্পনা করেই শিউরে উঠতাম, না জানি কি কি অভিযোগে ভরা সব চিরকুট থাকবে! সেই আমাকে হঠাৎ বলা হলো চা করে আনতে। আমার পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠলো। হে ধরণী দুভাগে ভাগ হয়ে যাও আর আমি তাতে তলিয়ে যাই। কাঁপতে কাঁপতে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম। রান্নাঘরে গিয়ে চুপকরে দাঁড়িয়ে আছি গ্যাস জ্বালাতে পারি না। আমার ভাসুর কিছু একটা আন্দাজ করে রান্নাঘরে গেছেন। অবশেষে আধঘণ্টার চেষ্টায় আমাকে গ্যাস জ্বালানো শিখিয়েছেন। তারপর বললেন, কাপ মেপে জল নেবে আর চা, চিনি সব এখানেই আছে। দাদা চলে গেলেন। আমিও একটা পছন্দসই বাসন নিয়ে তাতে কাপ মেপে জল নিয়ে অনেক খুঁজে কোনো পাতা জাতীয় কিছু না পেয়ে একটা কৌটোতে চা পাতা আন্দাজ করে সেই মাপা জলে চামচ মেপে চা পাতা দিতে জল ফুটতে দিলাম। দশ মিনিট হয়ে গেলো জল ফুটে প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থায় কিন্তু জলের রঙ পাল্টাচ্ছে না। আবার জল দিলাম, এইবার সেই বাসন ভর্তি করে। আবার জল ফুটছে কিন্তু রঙ সাদাই। কেঁদে ফেলার আগের স্টেজে আমার শাশুমা রান্নাঘরে এলেন। আমার অবস্থা দেখে তিনি হাসবেন না কাঁদবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। অবশেষে নিজেকে সামলে তিনি বললেন এটা কি দিয়ে চা বানাচ্ছো? এটা তো কালোজিরে! ওটা চা পাতা। তখন আমার চোখে তো সবই একই রকম। তুমি কালোজিরে দিয়ে চা বানাচ্ছো? তখন তিনি আমাকে ধরে ধরে চা বানানো শেখালেন।

তাহলেই আপনারা বুঝুন প্রথম ইম্প্রেশন আমাকে কতখানি বিপদে ফেলে। তারপর তো প্রথম শাড়ি পরে হাঁটতে গিয়ে ধুপধাপ পড়ে যাওয়ার কথা আর নাই বা বললাম। সেই গল্প আর একদিন বলা যাবে।

কলম্বিয়ান কবি মারিও রিভেরোর কবিতা …

কবি মারিও রিভেরো ছিলেন একজন কলম্বিয়ান কবি। নানান রং ছড়িয়ে ছিলো তাঁর জীবনে। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, সমালোচক, ট্যাঙ্গো গায়ক, এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ ই এপ্রিল ২০০৯ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তাঁর জীবনে তিনি দেশী, বিদেশী নানাবিধ পুরুষ্কারের পুরস্কৃত হয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত পুরুষ্কারের মধ্যে হল :
National Poetry Prize Eduardo Cote Lamus. 1972
National Poetry Prize Jose Asuncion Silva. 2001

কলম্বিয়ান কবি মারিও রিভেরোর কবিতা …
অনুবাদ: রিয়া চক্রবর্তী

ব্যাথাকে ভালবেসো
সঞ্চয় যা করেছ তাতেই
শুদ্ধ হবে শব্দেরা
প্রতিদিন তোমাকে ফিরিয়ে
দেবে যা শুধুমাত্র তোমারই ছিলো …

দৃষ্টি হবে শুদ্ধতম
সামান্য ধুলোর কণা
মুছে যাবে আঘাতে আঘাতে
তোমাকে বিদ্ধ করে অনবরত…..

সৃষ্টি হবে মুক্তোদানার
তোমার হৃদয়ে
বিষাদে পরিপূর্ণ হবে যখন ….

রঙের ছবি

রঙের ছবি

আবীর রঙের ফাগুন খেলায়
আমার ছবি এঁকো।
পেঁজা মেঘের স্নিগ্ধ আলোয়
শিউলি কুঁড়ি রেখো।
চলতে চলতে পথের বাঁকে
একটুখানি দেখো
তোমার হাতেই আমায় দিলাম
তোমার করে রেখো।

বিশ্ব কবিতা দিবস…

গতকাল ছিলো বিশ্ব কবিতা দিবস… কবিতার উচ্চারণে ভেসে যাক সকল অন্যায়-অবিচার… কবিতায় মুক্তি হোক বিশ্ব মানবতার। ২১ মার্চ, বিশ্ব কবিতা দিবস। ১৯৯৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ত্রিশতম অধিবেশনে একুশ মার্চকে বিশ্ব কবিতা দিবস (World Poetry Day) হিসেবে পালনের ঘোষনা করা হয়। কবিতা সংস্কৃতির এক নান্দনিক উপাদান, কবিতা সমাজের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অনড় উচ্চারণ।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত উড়িয়ে দেয়া হয় অজস্র কবিতার রঙ বেরঙের পালক। আমাদের মানবিক চেতনার চিরসুন্দর আঙ্গিনায় ওরা বর্ণিল বেলুনের মতো উড়ে যায় ভিন্ন বোধ, ভিন্ন অনুভূতি, ভিন্ন ভাষার সুবাস ছড়িয়ে। তাইতো চেক রিপাবলিকের কবি, Jarosav Seifert, Nobel Prize in Literature 1984, তাঁর To Be a Poet কবিতায় লিখেছেন,

“Life taught me long ago
that music and poetry
are the most beautiful things on earth
that life can give us.
Except for love, of course.”

কিছুটা অনুবাদ করলে এইরকম বলাই যায় …

“ভালবাসা ব্যতীত জীবনের আরও একটি সবচেয়ে সুন্দর আশীর্বাদ হল,
কবিতা ও সঙ্গীত।”

মনের ভাষা যা প্রকাশ করা যায় না সরাসরি তা অনেক সময় কবিতা হয়ে কলমে আসে। ঝরে পড়ে কাগজের বুকে । কবিতা একটি শক্তি , একটি অনুপ্রেরণা। আমরা সবাই কবিতা লিখি একটি আলাদা আলাদা অনুভূতি থেকে। তবে সব কবিতাই একসময় আমার বা অন্যর মনের ভাষার রূপ নেয়। কবিতায় প্রেম, দ্রোহ সব ফুটে ওঠে স্পষ্ট ভাবে। কবিতা হোক মানবতার মুক্তির সনদ।

কবিতা না থাকলে পৃথিবীর আর কী এত সুন্দর ও ছন্দময় হত! জানি না। জানি না কোথায় চন্দ্রপ্রভার রূপ এত মোহ জাগানিয়া শব্দে গাঁথা হত, জানি না কোথায় তুষার ঝরার শব্দগুলো জমা হত! জানি না আর কী দিয়ে তোমার-আমার কথাগুলো কবিগুরুর গানের সুরে বাঁধা হত? মেক্সিকোর কবি অক্টাভিও পাজ (Octavio Paz, Nobel in Literature 1990) তাঁর Motion কবিতায় লিখলেন,

“If you are the first snow
I am he who lights the hearth of dawn….
If you are the morning tide
I am the first bird’s cry….
If you are the sleeping land
I am the green cane”….

কিছুটা অনুবাদ এইরকম হতে পারে …

“তুমি যদি হও প্রথম বরফ,
তবে আমি হবো ভোরের শুকতারা,
“তুমি যদি হও প্রভাত স্রোত,
আমি হব প্রথম পাখির ডাক।
তুমি যদি হও সুপ্ত ভূমি,
আমি হব সবুজ ফসল অপার।”…..

কবিতা দর্শন। কবিতা মূল্যবোধের হাতিয়ার। কবিতা শেখায় বিনয়ী হতে, সহিষ্ণু হতে, মানবিক হতে। কবিগুরু তাই মাত্রাবৃত্তে লিখলেন,

“আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধুলার তলে ।
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে ।”
…….

আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের যে কবিতা আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি তা হলো …

“আমারে না যেন করি প্রচার
আমার আপন কাজে ;
তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ
আমার জীবন-মাঝে।” (গীতাঞ্জলি)

কয়েকবছর আগে আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস উপলক্ষে UNESCO প্রধান Ms Irina Bokova বলেন, “Poetry is one of the highest forms of linguistic and cultural expression. Giving complete creative and verbal freedom, it is an integral part of peoples’ identities and, like music, dance and art, also often helps us to create our own personal identity.”

সত্যিইতো, কবিতা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ। সেই স্বাতন্ত্র্য সংস্কৃতির, ভূ-প্রকৃতির এমনকি জাতির সোনালী ইতিহাসেরও। জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় লিখলেন,

“হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে!” (হায় চিল, বনলতা সেন কাব্য)

অথবা

“সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়। ”
(বাঙলার রূপ আমি দেখিয়াছি, রূপসী বাঙলা কাব্য)

এই যে চিল, ধানসিড়ি নদী, অশ্বত্থ, শ্যামা, খঞ্জনা , ভাঁটফুল ,প্রতিটি উপাদান এই বাঙলার রূপের প্রসাধনীর মতো। কবিতা কত সুন্দর হয়ে ওঠে প্রকৃতিকে তুলে ধরে। কত স্বতন্ত্র্য এই রূপ! কবিতায় কবির স্বাতন্ত্র্য রূপ ও স্পষ্ট হয়ে উঠে। কবিতা তথা সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে কবিও কাব্য সৃষ্টির পৃথক সত্ত্বা। এই পার্থক্য বুঝতে হলে বুঝতে হয় কবির সৃষ্টি, গভীর উপলব্ধি করতে হয় কাব্যের বার্তা। প্রতিটি কবি তাঁর নিজ নিজ সৃষ্টিতে পৃথক। তাই সেখানে তুলনা অমূলক, নিরর্থক। প্রকৃতি মানেই বৈচিত্র্যতা, প্রকৃতি মানেই ভিন্নতা। এখানে বিশালতা বৈচিত্র্যে, আকার কিংবা সংখ্যায় নয়। এই বৈচিত্র্যতার সবচেয়ে সুন্দর মিল হল সৌন্দর্য্য। আমাদের আর এক প্রিয় কবির কথা অনুযায়ী বলতেই পারি…

“কবিতা কবির অহংকার,
কিন্তু অহংকারীরা কবিতার কেউ নয় ”

তাহলে কবিতার অকৃত্রিম অভিন্নতা কী? কোথায় তার সেই সৌন্দর্য্য অন্তর্নিহিত?

কবিতা হলো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণের আঘাত। কবিতা হলো অশান্তির দেয়ালগুলো ভাঙার কামান, কবিতা হলো অনাদিকালের প্রেম-ভালবাসার সতেজ সুর। আর কবিতার অভিন্নতা এখানেই। তাই তো কবিতাই পারে পৃথিবীকে সমন্বিত করতে।

এক টুকরো আমি

আমাদের বাড়ির পাশেই একটা মাঠ আছে। আমার মেয়েবেলায় দাপিয়ে বেড়িয়েছি সেই মাঠে। ঘুড়ি ওড়ানো, কানামাছি, ডাংগুলি, গুলি, ক্রিকেট, ফুটবল আরও কত খেলার সাথী সেই মাঠ। খেলার সময় ছিলো বিকেল সাড়ে চারটে থেকে ছটা পর্যন্ত। তারপর মায়ের এক ডাকেই বাড়ি ফিরতে হতো। সাড়ে ছটায় পড়তে বসা সাড়ে নটা পর্যন্ত। তারপর খেয়ে জেঠুর জন্য অপেক্ষা। আমাদের সব ভাই বোনদের গল্প শোনাবে। খুব ভালো গল্প বলে জেঠু। সব স্বরচিত গল্প। মুখে মুখেই। আর আমি চোখের সামনে ঘটতে দেখতাম সেই গল্প।

একদিন বাড়ির পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা চুরি করছি বন্ধুদের জন্য। কারন, ঠাম্মা বন্ধুদের বাড়িতে ঢুকতে দিতো না। জিনিস ভাংচুর করবে বলে। সব তো লক্ষীছানার দল তাই। এমন সময় দাদুর বন্ধুরা একে একে বাড়িতে আসছেন। কারন চারটের সময় দাদুর বন্ধুরা আসতেন রোজ। আমি মহা বিপদে পড়লাম। কি করে নামবো গাছ থেকে কেউ দেখে নিলে মাকে বলে দেবে।

ঠিক সেই সময় রক্ষাকর্তার মতো আবির্ভাব হলেন আমার ভাঁড়ওয়ালা দাদু। মাটির ভাঁড় বানাতেন বলে ওই নামে ডাকি। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। নামালেন গাছ থেকে। বললেন বড়িবিটি চল তোমার জন্য খেলনা বানিয়েছি। বললাম দাঁড়াও দাদু আমি ওদের পেয়ারাগুলো দিয়ে আসি। আর তোমার তো দাঁত নেই তুমি দুটো জামরুল খাও আমি পেরেছি গাছ থেকে।

দাদু থাকতেন মাঠের শেষ প্রান্তে একটা ছোটো ঘরে। টালির ঘরে। আমার খুব ভালো লাগতো খুব শান্তি ছিলো সেই ঘরে। আমাকে দিলেন মাটির বানানো খেলনা। হাড়ি, কড়াই, উনুন, এমনকি শিল নোড়া পর্যন্ত! কি সুন্দর দেখতে, কত সুন্দর ডিজাইন করা। খুব পছন্দ হলো আমার আনন্দে লাফাতে লাফাতে বাড়ি এলাম সবাইকে দেখালাম। সবার পছন্দ হল খুব।

বাসন্তি মাসি বললো “তোমার ঘর কোথায় যে সংসার পাতবে”। বাসন্তি মাসি টুকটাক কাজ করতো বাড়ির। ভাবলাম তাইতো! আমার ঘর কোথায়। পরেরদিন আবার গেলাম ভাঁড়ওয়ালা দাদুর ঘরে, দাদু নেই তাই খুব বায়না ধরলাম দাদীর কাছে বললাম আমায় খেলনা দিলে আর একটা ঘর দিতে পারলে না! দাদী হেসে বললেন আচ্ছা আমি তোমার দাদুকে তোমাদের বাড়ি পাঠাচ্ছি বাড়ি ফিরুক। এখন ছটা বাজে বাড়ি গিয়ে পড়তে বস।

দাদুর ঘরে আওয়াজ পেলাম ভাঁড়ওয়ালা দাদুর। দৌড়ে নামলাম নীচে। দেখলাম দাদুর সাথে কিসব কথা বলেছে। আমাকে দেখে বললেন কি হল জরুরি ডাক কেন? আমি রেগে বললাম আমায় ঘর বানিয়ে দাও। দাদু বললেন আলি এইবার তোমার নিস্তার নেই যেমন খেলনা দিয়েছ এখন ঘর দাও। ভাঁড়ওয়ালা দাদু বললেন আচ্ছা পরশু ঘর হয়ে যাবে কিন্তু এর মধ্যে বাড়ির পেছনের বাগানে যাবে না। বললাম জো হুকুম মেরে দাদু।

ঘর হয়ে গেলো পাতার ঘর। ভীষণ সুন্দর ঘর। কিযে পছন্দ হয়েছিলো আমার! আজ হঠাৎই মনে পড়লো সেই ঘরের ছবি। আমার সেইসব পুরোনো দিনের কথা মনে পরলো। তবে আমার সেই ঘর ছিলো। কিন্তু বাঁধন আমার ছিঁড়েই গেছে কবে।

মন ভালো করা ছবি

কোনোদিনই সকালে আমার খবরের কাগজ পড়া হয় না। সকাল এগারটা পর্যন্ত এতো ব্যস্ত থাকি যে তখন যদি যমদা আসেন ডেটিং এর জন্য, তাকেও বলতে পারি এগারোটার পরে আসতে। তখন সাজুগুজু করে নাহয় ডেটিং এ যাবো। প্রতিদিনই দুপুরে আমি খবরের কাগজ পড়ি। আজও বাড়ি ফিরে আনন্দবাজার উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো। ‘বৈচিত্রে ঐক্য ‘ অনেকে দিন পর এইরকম ভালোলাগা রইলো মনে। হ্যাঁ এটাই তো আসল ভারতের চেহারা হওয়া উচিত। সব ধর্ম মিলেমিশে হাত ধরাধরি করে থাকবে। শান্তিতে থাকবে।

ধর্ম হচ্ছে কোনো কিছু ধারণ করা। অর্থাৎ, কোনো কিছু যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সেটাই তার ধর্ম।

দ্রৌপদী একবার কৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন –
ধর্ম কি তা কিভাবে জানবো ?
আর কিভাবেই তা হৃদয়ে ধারণ করবো ?

উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন –
ধর্মকে জানতে হলে, প্রথমে ধর্মের আধারকে জানতে হবে, এই আধারই ধর্মকে জানতে ও ধারণ করতে সাহায্য করবে। ধর্মের আধার হলো পাঁচটি …

১. জ্ঞান = জ্ঞানই মানুষকে সত্য দর্শন করায়।
২. প্রেম = মানুষের হৃদয়কে শান্ত করে।
৩. ন্যায় = মানুষের কর্তব্য ও কর্মকে জানিয়ে দেয়।
৪. সমর্পণ = যা মানুষের ভক্তি ও শ্রদ্ধাবান করে তোলে।
৫. ধৈর্য = যা মানুষকে সমস্ত কার্যের শক্তি প্রদান করে।

যখন মানুষ এই আধারকে আয়ত্ত্ব করে নেয়। তখন সে ধর্ম কে জানতে ও হৃদয়ে সহজেই ধারণ করতে পারে। আর তার সমস্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর সমস্ত কিছুই তার কাছে সহজলভ্য হয়ে যায়। যাইহোক, সব ধর্মের সারকথা কিন্তু একই। সেটা যে আমরা কবে বুঝবো!

ছোটবেলায় আমরা সবাই এক সাথেই বড় হয়েছি। হাত ধরাধরি করে। এক সাথেই উৎসব পালন করেছি। এতো ভেদাভেদ আমাদের ছিলো না, আর আমাদের বাড়ি থেকেও এইসব ভেদাভেদ শেখানো হয় নি। মন ভালো করা ছবিটি দিই।

উস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ … অন্তরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা

উস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ জন্মে ছিলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গৌরী পুরে ২৮ শে অগাস্ট ১৯২৮ সালে। বাবা সেতার ও সুরবাহার বাদক এনায়েৎ খাঁ, মা বশিরন বেগম। ওনার ঠাকুর্দা বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ইমদাদ খাঁ। তাই ওঁর শিক্ষা ইমাদাদখানী বা এটাওয়া ঘরানায়।

বিলায়েৎ খাঁ বহু বছর কলকাতায় কাটিয়েছেন। এক সময়ে তিনি ও তাঁর ছোটভাই ইমরাত খাঁ (সুরবাহার) একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে বাজাতেন। দুবার বিয়ে করেছিলেন বিলায়েৎ খাঁ। প্রথম পক্ষের তিনটি সন্তান দুই পুত্র এক কন্যা। দুই পুত্র হলেন ইমন খাঁ, কন্যা জিলা খাঁ একজন প্রতিষ্ঠিত সুফি গায়িকা এবং সুপ্রতিষ্ঠিত সেতার বাদক সুজাত খাঁ। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর একটি পুত্র হিদায়ৎ খাঁ। তিনিও সুপ্রতিষ্ঠিত সেতার বাদক।

বিলায়েৎ খাঁ প্রথম জীবনে বেশ শৌখিন মানুষ ছিলেন। অর্থ যেমন উপার্জন ব্যয়ও করেছেন সেইভাবে। দামী গাড়ি, দামী বেশভুষা, দুষ্প্রাপ্য অ্যান্টিক জিনিস সংগ্রহ ইত্যাদিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ঘোড়ায় চড়তে ভালো বাসতেন; পুল খেলা, সাঁতার, বলরুম ডান্স – সবকিছুতেই উৎসাহ ছিল। শেষের জীবনে এসব জিনিসের প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে। বিলায়েৎ খাঁর সেতারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। সাধারণ সেতারের যা গঠন তাতে অনেকগুলি উচ্চ-স্বর পর্যন্ত মীড় দিতে গেলে তারের টানে অন্যান্য তারগুলির সুর হারানোর সম্ভাবনা থাকে, বাজনার ফাঁকেই তাদের নতুন করে বাঁধতে হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য বিলায়েত্ খান বাদ্যযন্ত্র-নির্মাতাদের সাহায্য নিয়ে সেতারের গঠনকে মজবুত করেন। তবলী (নিচের গোলাকৃতি তুম্বার-এর কাঠের ঢাকনা) এবং তারগহনকে (দণ্ডের উপরে সেতারের কান থেকে বার হয়ে তারগুলি যেখানে বসে নিচে নেমে আসে) সুদৃঢ় করেন।

এছাড়া সেতারের ঘাটগুলোতে (ফরএতস) তিনি আরও বক্রতা দেওয়ান এবং তার ও ঘাটের মধ্যে দূরত্বটা বাড়ান যাতে তারকে টেনে পাঁচ-স্বর পর্যন্ত মীড় দেওয়া সম্ভব হয়। সেতারের সাতটি প্রধান তারের বদলে তিনি ছয় তারের সেতার চালু করেন। অন্যান্য কিছু তারকে এমন ভাবে বাঁধেন, যাতে রাগের ফাঁকে ফাঁকে সেগুলো বাজিয়ে ভরাট করা যায় – তানপুরার সহযোগিতা ছাড়াই বাজানো যায়।

বিলায়েৎ খাঁকে অনেক পুরষ্কার বা সম্মান দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্ম-বিভূষণ সবকিছুই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। ‘আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ পক্ষ থেকে তাঁকে ‘ভারত সেতার সম্রাট’ উপাধি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ তাঁকে ‘আফতাব-ই-সিতার’ বা ‘সান অফ দ্য সিতার’ আখ্যা দেন। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে কোনও বড় ওস্তাদের স্নেহচ্ছায়ায় না থেকে নিজের অক্লান্ত চেষ্টাতেই তিনি বড় হয়েছিলেন। এনায়তখানই কানাড়া, সাঁঝ সারাবলি, কলাবন্তী ও মান্দ ভৈরব রাগের উদ্ভাবক ছিলেন তিনি।

যশলোক হাসপাতালে ১৩ মার্চ রাত ১১ টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সারা জাগানো এই সেতার শিল্পী। তাঁর মরদেহ কলকাতায় আনা হয় সঙ্গে আসেন স্ত্রী জুবাইদা (এলিজাবেথ)। সুন্দর কারুকাজ করা কাঠের শবাধার, তিনি যে আজীবন শৌখিন মানুষ ছিলেন। শিল্পীর নিজস্ব রুচিমাফিক তৈরি করা হলো কাঠের শবাধার। তাতে পিতলের প্লেটে লেখা। উস্তাদ বিলায়েত খাঁ। প্রিয় শিল্পীকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে আসেন স্বনামধন্য সরোদিয়া আমজাদ আলি খান।

বিলায়েত খাঁকে ‘সেতারের কিংবদন্তি’ আখ্যায় স্মরণ করে আমজাদ বলেন, তিনি নিজের পরিচয় দিতেন ইমদাদখানী ঘরানা, ইনায়েতখানী ঘরানা বা কখনো ইটাওয়া ঘরানার সেতারবাদক বলে। খাঁ সাহেব ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। আসলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেই একটা ঘরানা হয়ে উঠেছিলেন। সেতারের দুনিয়া তাঁকে স্মরণ করবে উস্তাদ বিলায়েত খাঁ ঘরানা হিসেবেই। পার্ক সার্কাসে পিতা মহানশিল্পী ইনায়েত খাঁর সমাধির পাশে সমাহিত করা হয় সেতার সাধক বিলায়েত খাঁকে, তাঁর ইচ্ছানুসারে।শিল্পীর কোন জাত নেই, শিল্পীকে কখনো সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে রাখা যায় না। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত এমন দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন যা এক কথায় অসাধারণ। তাঁর অসংখ্য বাজনা আমাদের চিরকাল আনন্দ দেবে। আজ তাঁর মৃত্যু দিনে তাঁকে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

নারী দিবস!

নারী দিবস!

“পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে
সে নহি নহি,
হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে
সে নহি নহি।
যদি পার্শ্বে রাখ মোরে
সংকটে সম্পদে,
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে
সহায় হতে,
পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।”

নারী, যার আঁচল জুড়ে ভালবাসা আর মায়ের পূর্ণতা, নারী এক বিশাল আকাশ নয়। সমুদ্র সৈকত। কিংবা ভীষণ বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরি। নারী কারো কারো অক্সিজেন। নারীর চোখে তাকিয়ে দেখ-দেখবে সহজ সরল, মায়া ভরা এক দীপ্ত আলো, সে অবাধ ভাবে মায়া দিতে পারে, বাঁচতে শেখাতে পারে, আমাদের ভেতরের মানুষটাকে চেনাতে পারে।

কখনো সে দেবী। সে কখনোও রাগী। কক্ষনোও শান্ত। কখনোও বধূ নামের আত্মার প্রশান্তি। বহুদুর হেঁটে এসে শিশু যখন হুমড়ি খেয়ে পরে তার আঁচলে একটু ঘুমের জন্য, মায়া নামের অনুভুতিটা মায়ের বুকের গন্ধে খুঁজে পায়। যাকে তোমরা নারী বলো-তার আরেকটা ছায়ার নাম প্রশান্তি, সিক্ততা ,পবিত্রতা, মায়া। বন্ধন তার অলংকার।

নারী তুমি অর্ধেক আকাশ,
ও নারী তুমি সর্বংসহা…

আমরা বলি নারী পুরুষ সমান সমান, কিন্তু আজও এখনও কন্যা ভ্রুণ অবস্থায় মেরে ফেলা হয়। আজও পণের টাকার জন্য নারীই বলি হয়। আজও রাস্তায় একা মেয়ে দেখলে লকলকে জিব সামলানো যায় না। নারী তার নারীত্ব নিয়ে গর্ব করে না। যে পুরুষ নারীকে হত্যা করে তার সম্ভ্রম লুটপাট করে নেয়, তাদেরও যে জন্ম হয়েছে নারীর অংশ থেকেই। আজ নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি রইলো আমার শ্রদ্ধা।

আজ এই গানটা থাক …

youtu.be/6VOEjYNSwK4

আমার ভালোলাগা

আমার ভালোলাগা

আজকাল কি একটু একটু বদলে যাচ্ছি আমি? তবে কি নিজের অজান্তেই ? একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি রোজ? অবশ্য আজকাল সবকিছুতেই এক ভালোলাগা মিশে থাকে।

আমি রোজই আমার ঘরের প্রতিটি কোনের সাথে কথা বলি, দূরের ওই আমগাছটাকে রোজ বলি কত সুন্দর হয়েছে সে, মুকুলে মুকুলে ভরে গিয়ে। ঝাঁকড়া নিমগাছের কাছে গল্প শুনি কাক দম্পতির। ছাদের কার্নিশে বসে থাকা পায়রাদের কাছে শুনি সারাদিনের নানা কথা। আর আকাশভরা তারাদের মাঝে নিজেকে হারাই আবার খুঁজি। অদ্ভুত ভাললাগায় মন ভরে ওঠে। হালকা একটা হাসি খেলে যায় ঠোঁটের পাশে।

আজকাল আমাকে ভালোলাগা গুলো ছুঁয়ে থাকে। তাই মনে হয় কাল-আজ-কাল নিয়ে ডুবুরির মতো সময় ভাবায়। ডুবে থাকি বিশ্বাসে-অবিশ্বাসে। ঠিক কি পেয়েছি, কি পাইনি, কি যে চেয়েছি, কি চাইনি-কোন পথে মাঝপথ কাঁটাগুলো শেষ। কোন পথে কাঁটাগুলো শুরু। হিসেব করিনা আর। আজ বারবার মনে হয় সামনের কোন পথের বাঁক পেরোলেই, সেই মেঠো পথের শুরু। সেই আলপথ, যে পথ কবে থেকে আমার আসার অপেক্ষায় বসে আছে, যে পথের মাঠে বাজে বাঁশী, মন কেমন করা সুর।

জানিনা আমার সেইখানে যাওয়া হবে কি না, আলোটা যদি নিভে যায় সে বাঁকের কোনো ফাঁকে? যদি দিকভুল করে ফেলি আমি? যদি কোথাও হোঁচট খেয়ে হৃদয়ে আবার ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়? যদি আমার আর যাওয়া না হয় সেই স্বপ্নপুরিতে?

রাত ফিরে আসে আমার এই চিলতে ঘরটায়। পাশের বাড়িতে গান “এ জিন্দেগী গলে লাগালে” বাজছে। আমারও তো ওই একই কথা।

গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় ভালোবাসার রং।

youtu.be/2tjx_Hng56g

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

আগুন

আগুন

আকাশে আগুন জ্বললেই,
নিজেকে জড়িয়ে থাকি।

আমার জন্ম হয়েছিল,
চিতায় ছড়ানো তিল ফুল থেকে।
যা আজও শুকিয়ে যায়নি।

শোনো, শুধু একবার শোনো,
আমার যন্ত্রণায়, মৃত নদীর
বুকেও বেজে ওঠে কলতান।
যা বোবা শিশুর দুঃখের মতো।

দুহাতে ছড়িয়ে দাও
আদিগন্তে শস্যের বীজ।
খুশিতে হেসে উঠুক মাটি।
আর মুহুর্মুহু শিহরিত হোক
আমার স্তব্ধ হৃদয়।

মনে আগুন লাগলেই জেনো
আকাশে উজ্জ্বল হয় লেলিহান শিখা।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

শ্রদ্ধায় ও স্মরণে ….

শ্রদ্ধায় ও স্মরণে ….

‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে, অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে…’

এই বিখ্যাত লেখাটি যিনি বাংলা সাহিত্যে ভাণ্ডারে রেখে গেছেন সেই প্রেমের কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন আজ। জীবনানন্দ দাশ নিঃসন্দেহে সর্বকালের সর্বোৎকৃষ্ট নিঃসঙ্গতার কবি। বিশ্ব ইতিহাসে ক্ষণজন্মা প্রতিভাশীল প্রচার বিমুখ অন্যতম এক কবির নাম জীবনানন্দ দাশ। তাই সাড়ে আট শত কবিতার বেশী কবিতা লিখলেও তিনি জীবদ্দশায় মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও কাব্য সংকলনে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। তার জীবদ্দশায় তার নামের প্রতি কোন সুবিচার হয়নি বললেই চলে।

######

আজ আরও এক মহান ব্যাক্তির মৃত্যু দিন যাঁকে আমরা প্রায় ভুলেই গেছি। তিনি হলেন ….

জিওর্দানো ব্রুনো।

কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক, সৌরজগতের ধারণা সংক্রান্ত বইটির নাম অরবিয়াম। বইটি ১৫৫৯ সালে প্রকাশের পর জিওর্দানো ব্রুনো তা প্রচারে নামেন। রোমের ধর্মযাজক এই মতবাদের বিরোধীতা করে, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, তাঁকে দণ্ডিত করেন। উক্ত দণ্ড কার্যকর করার জন্য নিয়ে যাওয়া হল রোমের বধ্যভূমিতে। রক্তলাল পতাকা, সব গির্জার ঘণ্টা বেজে উঠল, আনুষ্ঠানিক পোশাকে শত-শত যাজক মৃত্যুকালীন স্তব গাইতে লাগল। খুঁটিতে বাঁধার আগে মুক্তি লাভের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। যা ছিলো তাঁর প্রচারিত তত্ত্ব ভুল, একথা স্বীকারের জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৬০০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে একটি মঞ্চে খুঁটিতে বেঁধে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়।

ব্রুনোর জন্ম দক্ষিণ ইতালির নোলা নগরে ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে, কোপার্নিকাসের মৃত্যুর ৫ বছর পরে। ইতালীয় এই ঘটনা আমাদের নিয়ে যায় সেই প্রাচীন কাপুয়া থেকে রোম যাবার আপ্পিয়ান মহাপথের ধারে, মনে করিয়ে দেয় যার দু’ধার দিয়ে স্পার্টাকাসের ছয় হাজার মৃত্যু প্রতীক্ষারত দাস সঙ্গীকে ক্রশে ঝুলিয়ে রাখার কথা, যুদ্ধে সময় স্পার্টাকাসকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলার কথা। ফলে তাঁর শরীর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, রোমানদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় বিদ্রোহীরা মহা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। স্পার্টাকাসের দোষ ছিল তিনি দাসদের দাসত্ব থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, গ্ল্যাডিয়েটরদের নির্মম অমানবিক খেলা থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। মানবিক জীবনের জন্য সংগ্রামের পথনির্দেশনা দিয়েছিলেন, যারা দাসত্ব ও গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো পশুর জীবনকে নিয়তি ভেবে প্রতিবাদ করতে ভুলে গিয়েছিল। আর তাঁর দেড় হাজার বছর পরে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, হাজার বছরের পুরনো চিন্তার-দাসত্ব থেকে বের করে মানুষকে বিজ্ঞানের আলোয় নিয়ে আসতে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন জিওর্দানো ব্রুনো। বিজ্ঞানের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, যে-বিজ্ঞান মানুষের জীবন-যাপনে স্বাচ্ছ্যন্দ এনে দিয়েছে, স্বপ্ন দেখিয়েছে বৃহত্তর মানবতার, সমগ্র মানব জাতিকে এগিয়ে নিয়ে নক্ষত্রে যাবার।

ভালোবাসি

ভালোবাসি

আজকাল দিনগুলো স্বপ্নের মতো কাটে। যে মুহুর্তে তুমি আমার হাতে হাত রাখো ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই আমার চারপাশটা ভীষণভাবে বদলে যায়। নতুনভাবে জন্মাই তোমার ছোঁয়ায়। তোমাকে চাই, তোমাকেই ভালোবাসি এর থেকে কোনো সত্যি আপাতত আমার জানা নেই। আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন জানে কতখানি ভালোবাসি তোমায়। তুমি তোমার ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছো আমায়। অসম্পূর্ণ আমাকে সম্পূর্ণ করেছো। আমি তোমার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছি সম্পূর্ণরূপে।

এতদিন একা থেকেছি কারণ, ভালোবাসা মানে একা থাকা। ভালোবাসা মানে অপেক্ষা করা। একদিন আয়নার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া। যাকে পেলে এমনিতেই মনের সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যায়। প্রথম স্বপ্নের কথা মনে পড়া। আর তুমিই সেই এক ঝলক স্বপ্ন। মনের মাঝে বয়ে চলা সব ভার এক পলকে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছি তোমায় পেয়ে। আর তাই বারবার মনে হয়, তুমিই সেই ঈশ্বর যাকে পেতে নয়, নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সঁপে দিতে এত বছর ধরে একা হাঁটছি।

ভালোবাসি তোমায় আঙুলের স্পর্শে। ভালোবাসি তোমায় কবিতায়। ভালোবাসি তোমায় সঙ্গীতের মূর্ছনায়। ভালোবাসি তোমায় অনুভবে। আমি তোমায় ভালোবাসি। আর ভালোবাসবো মৃত্যু পর্যন্ত। হয়তো মৃত্যুর পরেও…।

ঈশ্বর আমার ….