ফারজানা শারমিন মৌসুমী এর সকল পোস্ট

স্মৃতির আলনায় রঙিন এলবাম…….

মাঝি বিহীন ভাবনার নৌকায়
ডুবে যেতে চায় মন,
ঠিক তার মাঝ তরঙ্গে
প্রগাঢ় অভিলাষের জোনাকিরা
খুঁজে বেড়ায় নিরিবিলী আঁধারের ঝোপ,
চোখের কোনে জেগে থাকে
সারারাত জলন্ত জল বিন্দু হয়ে,
আকাশ ছোঁয়া আকাঙ্খা
এখনো রয়েছে চির সজীবতা,
এখনো বুঝতে ইচ্ছে করে তোমার ওই ভালোলাগা
মৌসুমের সাথে যায় সবকিছু বদলিয়ে,
পড়ে রইলো স্মৃতির আলনায়
সময়ের সাথে সংক্ষিপ্ত রঙ্গিন এলবাম,
বাস্তবিক প্রতিফলের তোমার আমার
ছবি কেবলই এক অস্তিত্বের সন্ধান,
আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি
খুঁছে পাই হারানো মুখোশের ছাঁয়া………..

তোমার অপেক্ষায়……

ফিরে যেতে যেতে বারবার পেছন ফিরে তাকাই
তোমাকে ফিরে পাবার বাহানা খুঁজে বেড়াই,
পুরোনো স্মৃতি, গোধুলী লগ্ন,
রিমঝিম বৃষ্টিতে যেন তোমাকেই খুঁজে পাই ।
অতীতের সব স্মৃতি গুলো আজও আছে রঙিন
কিছু হাসি কান্না, কিছু মান অভিমান
মিশে আছে কবিতার ভাঁজে ভাঁজে,
আজও কিছু অনুভূতি সদ্য ফোঁটা
গোলাপের পাঁপড়ির মত যেন বিধাতার সৃষ্টি
শুধু বদলে গেছো তুমি পাল্টেছে তোমার দৃষ্টি,
কিছুই তো বলার নেই তবুও কেন এই পথ চেয়ে থাকা
এই হৃদয়ের হাহাকার বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা,
সবাই কি জীবনে এমনই ঠকে যায় ?
বিরল মুক্তার বদলে শুধুই একটা কড়ি পায়,
তাই ইচ্ছে করেই দংশিত হলাম আমি,
বিষাক্ত শরীর নিয়ে শুধুই রয়ে গেলাম একাকী,
কিন্তু জানি না কেন এই ঠকে যাওয়াতেই
এক অদ্ভুত আনন্দ,
প্রিয় তোমাকে জিতিয়ে দেবার আনন্দ………..

— ফারজানা শারমিন

প্রাণের কবি……

সুপ্রিয় কবি তুমি ছুঁয়ে দিলেই হয়ে যায় কবিতা
তুমি ছুঁয়ে দিলে প্রেম হয়ে যায় প্রজাপতি
মনের বাগানে ঘুড়ে বেড়ায়,
স্মৃতিরা উড়ে যায়,
তুমি হৃদয় ছুঁয়ে যাও গোপনে
প্রেম দিয়ে যাও স্বপনে,
বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জল যেন এক শিহরণ
নিশিথের হাসনাহেনা ফুল
যেন ভালোবাসার ইংগিত,
আমি কবিতার খাতা ছুঁয়ে দেখি
যেন তোমার ঠোঁট ছুয়ে দিয়েছি
এ কেমন প্রেম শুধু তোমায় নিয়ে সারাবেলা……..!!

— ফারজানা শারমিন

মিছে প্রণয় ( পর্ব ২ )

মিছে প্রণয় ( পর্ব ২ )

আজ সকালে আধ ঘন্টা যাবত গলায় ফাঁসী দেবে বলে সিলিং ফ্যানে ওড়না আটকানোর চেষ্টা করছিল জয়িতা কিন্তু সে পারছেনা। কখনও সে ঠিক মতো ওড়নাটা ফ্যানের সাথে বাঁধতে পারছে না, কখনো বা তার মনে এতো সাহস পাচ্ছে না। মনে মনে ভাবছে – “এখন যদি কেউ রুমে এসে পড়ে ? বাসায় কেউ দেখে ফেললে জানাজানি হয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হয়ে যাবে…..
কিন্তু এভাবে আর কত দিন ? শোভনের বাচ্চা তার পেটে বাসায় যদি তা কোন ভাবে জানতে পারে এই মুখ আর দেখানো যাবেনা। তার চেয়ে ফাঁসী দেওয়াই ভালো, এবার ওড়নাটা ঠিক মতন বাঁধা হয়েছে কিনা চেক করে নিলো জয়িতা। কিন্তু এমন সময় একটি ছেলে রুমে ঢুকে দেখে ফেললো জয়িতা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে সিলিং ফ্যানে তার ওড়না আটকানোর চেষ্টা করছিলো…..
বছর আঠারোর মতো হবে , এক ছেলে । চোখে সানগ্লাস, পরনে টিশার্ট আর জিন্স।
– কে আপনি আর এখানে কি করছেন ?
ম্যাডাম আপনি একি করছেন ? আপনি এখনই এখান থেকে চলে যান। কেউ দেখে ফেললে ভীষণ বিপদ হয়ে যাবে। এমনিতেই বিপদের মধ্যে আছি।
হ্যাঁ চলেই যাবো আমি এখানে থাকতে আসিনি। আপনার বাবা আমাকে ফোন দিয়েছিলো আপনার রুমের নাকি এসি নষ্ট হয়ে গেছে সেটা দেখতে এসেছি।
জয়িতা – আমি কিছু জানি না, আপনি এখান থেকে চলে যান ব্যাস।
ছেলে – দাঁড়ান, দেখি ওড়না টা ঠিক মত বেঁধেছেন কিনা। শেষমেষ খুলে গেলে তো না মরে হাত পা ভেঙে হাসপাতালে পড়ে থাকবেন।
জয়িতা – ঠাট্টা করছেন আমাকে নিয়ে ?
ছেলে – ঠাট্টা করব কেন, আমি তো আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি।
ওড়নাটি টাইট করে বাঁধার অজুহাতে ফাঁস খুলে সেটি নামিয়ে নিয়ে এলো সেখান থেকে ছেলেটি। তারপর বলল –
এবার বলুনতো মরতে যাচ্ছিলেন কেন ?
জয়িতা – সেটা আপনাকে কেন বলব বলুনতো ? কে আপনি আর আমাকে বাঁচালেন ইবা কেন…..
ছেলে – আমার সামনে আপনি ফাঁসী দিতে যাচ্ছিলেন আর কি চেয়ে চেয়ে দেখব ? সত্যিকরে বলুন তো কেন এমন কাজ করছিলেন ?
চেয়ার থেকে নেমে দুচোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ঝড়তে লাগলো জয়িতার…….
শুধু অনুভব করছে বুকের ভেতরের চাপা বর্ণহীন অনুভূতি আর একরাশ শুন্যতা। কি করবো আমি না শোভনের কাছে ফিরে যেতে পারবো, না এই বাচ্চা। কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুটি তো কোন অপরাধ করেনি। ভাবতে ভাবতে কাঁদতে লাগলো জয়িতা…….

লেখা : ফারজানা শারমিন

স্বাধীনতা অর্জন ( প্রতিবেদন )

২৫শে মার্চের কাল রাত্রির কথা বাঙালীরা ভুলতে পারবে না কোন দিনই। ১৯৭১ সালের মার্চের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলিতে চলছিল অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারা বাংলাদেশে যে বেসামরিক প্রশাসন আওয়ামী লীগ হাতে তুলে নিয়েছিল তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব যেন ৭ই মার্চের পর থেকে তাঁর কাঁধেই অর্পিত হয়েছিল…..

মায়েরা হাসতে হাসতে তাঁদের ছেলেমেয়েদের উৎসর্গ করে ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। বাবারা তাঁদের ছেলেমেয়েদের উৎসর্গ করে ছিলেন আমাদের এই স্বাধীনতার জন্য। ভাই ও বোনেরা নিজেদের জীবন এই মুক্তির জন্য উৎসর্গ করে রেখে গিয়েছেন। ত্রিশ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা…..

আমি একজন নারীর কথা জানি –
যিনি একটা পুকুরের পাশে কাপড় কাচছিলেন,
সেই পুকুরে পানার নিচে কোনো রকমে নাক ভাসিয়ে লুকিয়ে ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মিলিটারি বলল, মুক্তি কিধার হ্যায়, নারীটি বললেন, দেখিনি,
মিলিটারি চলে যাচ্ছিল, হঠাৎ নড়ে উঠল পানা,
মিলিটারি গুলি করে মেরে ফেলল সেই নারীটিকে…..
এক নারী ভোরবেলা গ্রাম্য কুটিরের দুয়ারে বসে কোরআন শরিফ পড়ছিলেন, ভেতরে ছিল মুক্তিযোদ্ধারা, পাকিস্তানি মিলিটারি ওই ঘরের দুয়ার থেকে ফিরে গেল, মুক্তিযোদ্ধা নিরাপদে সরে গিয়ে আক্রমণ করল পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর,
ফেরার পথে মিলিটারিরা জ্বালিয়ে দিল ওই বাড়ি,
শহীদ হলেন সেই নারী…..
আমি একজন বাবার কথা জানি –
তাঁর একমাত্র ছেলে নারায়ণগঞ্জে অপারেশনে এসে শহীদ হলো। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে সেই খবর দিল, কাকা, আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে।
তিনি কাঁদতে লাগলেন। বললেন, আমি এ জন্য কাঁদছি না যে আমার একমাত্র ছেলে শহীদ কেন হলো ?
আমি কাঁদছি এই জন্য যে আমার কেন একটা মাত্র ছেলে। আজ আরেকজন ছেলে থাকলে তো আমি তাকে যুদ্ধে পাঠাতে পারতাম।
আমি একজন বোনের কথা জানি –
একাত্তরে তার পেটে গুলি লেগেছিল। তাকে নেয়া হয়েছিল আগরতলার হাসপাতালে।
রক্ত দরকার। রক্ত জোগাড় করা যায়নি,
ডাক্তারের হাত ধরে সেই বোন বলেছিলেন, দাদা, আমি তো মারা যাচ্ছি,
আপনি কথা দেন যে দেশটাকে স্বাধীন করে যাবেন।
আমি একজন মায়ের কথা জানি –
তাঁর একমাত্র ছেলে আজাদ যুদ্ধে ধরা পড়ার পর তাঁর কাছে ভাত খেতে চেয়েছিল। মা বলেছিলেন, শক্ত হয়ে থেকো বাবা, কোনো কিছু স্বীকার করবে না।
মা ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন রমনা থানায়।
ছেলের দেখা পাননি। এই মা আরও ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন। আর কোনো দিনও ভাত খাননি…..
আসলে স্বাধীনতার ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবেনা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই রেসকোর্স ময়দানে রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন…..
আমরা পেয়েছি দেশ পেয়েছি ভাষা আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি স্বাধীনতা।

আমাদের তাই করতে হবে যা আমাদের সবার ভেতরে আছে দেশের জন্য ভালোবাসা। নিজেকে আলোকিত করতে হবে ১৬ কোটি প্রাণে যদি আলো জ্বলে ওঠে
আলোয় আলোয় ভরে উঠবে এই দেশ। নিজেদের গড়ব আমরা ন্যায়ের পথে চলব অন্যায়ের প্রতিবাদ করব, সত্যের জন্য লড়বো। আমাদের কষ্টের অর্জিত এই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো………..!!

লেখা : ফারজানা শারমিন

দুজন দুজনায় ( কথোপকথন )

হে সুপ্রিয় কবি
.
কেমন আছেন আপনি ?
.
তুমি কোথায় কোথায় হারিয়ে যাও বলো তো ? হঠাৎ দেখি তুমি নেই।
.
হারিয়ে যাই নি কবি। আপনাকে রেখে কোথায় হারাবো। তবে মাঝে মাঝে লুকিয়ে থাকি, দেখি আমার কথা আপনার মনে পড়ে নাকি।
.
তুমি জানো না এক পলক তোমাকে না দেখলে মন অস্থির হয়ে যায়, বুকে ঝড় উঠে, তোলপাড় করে হৃদয়।
.
এতো ভালোবাসেন আমাকে ?
.
ভালোবাসার পরখ করতে চাও ? তবে এসো এই বুকটা ছুঁয়ে দেখো কতোটা পুড়ছে হৃদয় তোমার প্রেমের আগুনে, ঠোঁট দুটি ছুঁয়ে দেখো কতোটা তৃষ্ণার্ত আমি।
.
আপনার এই ভালবাসার ঋণ কিভাবে শোধ করবো আমি হে প্রাণের কবি ?
.
ভালোবাসায় ঋণ থাকতে নেই। আমাদের ভালোবাসায় শুধু আমরা দুজন দুজনায়। চলো হারিয়ে যাই অজানায় হে প্রেয়সী আমার।

___________________
দুজন দুজনায় ( কথোপকথন )
— ফারজানা শারমিন

অদেখা প্রেম (গদ্য কবিতা)

হে সুপ্রিয় কবি,
.
হ্যাঁ বলো
.
আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। আপনার কবিতা শোনাবেন নাহ ?
.
অবশ্যই শোনাবো।
.
কি কবিতা শুনবে বলো, কোনটা তোমার প্রিয় ?
.
আপনার লিখা সব কবিতাই আমার প্রিয়।
হ্যাঁ আপনি পাশে থাকলে, পৃথিবীর আর কোন সুখ চাইনা। কিন্তু আপনি মাঝে মাঝে হারিয়ে যান কেন ?
.
আর হারাবো না,
সাথে পাবে,
যখন মন চাইবে,
.
ইশ্
.
খুব খু্ব কাছে,
একেবারে নিঃশ্বাসেরও কাছে।
.
আমার বুক কাঁপছে কবি, ধমনীতে শ্বাস উঠানামা করছে,
.
ঠিক নিঃশ্বাসেরও কাছে এসো ছুঁয়ে দেই তোমার লাল টুকটুকে ঠোঁট, ছুঁয়ে দেই তোমার ধমনীর শিরা উপশিরা গুলো।
.
কিন্তু আপনি আর হারিয়ে যাবেন না তো ? আমি আপনাকে হারিয়ে যেতে দিবোনা। বেঁধে রাখবো আমার শাড়ীর আঁচলে।
.
আমাদের কবিতায় শুধুই আমরা দুজন।
.
হ্যাঁ, সব সময় আছি, থাকবো চিরকাল অনন্তহীন।
.
অন্তহীন শুভ কামনা ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা।
.
আমার সব কবিতাই আপনাকে নিয়ে লিখা।
.
খেয়াল করে দেখো আমারও তাই। তোমার সাথে পরিচয় না হলে হয়তো কবি হয়ে ওঠা যেতো না।
.
সত্যি তাই ?
.
হ্যাঁ ঠিক তাই।
.
কবিতা গুলো পড়ো দেখলেই বুঝবে।
.
পড়ি, আপনার সব কবিতা পড়ি, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় অন্য কাউকে নিয়ে লিখেছেন হয়তো
.
এভাবে না ভাবলেই হলো।
.
ঠিক আছে আর ভাববোনা।
.
কোনটা তোমাকে নিয়ে সেটাও বুঝবে।
.
আচ্ছা এখন মন দিয়ে পরবো
.
আমাদের ভালোবাসা পবিত্র শুভ্র ভালোবাসা যা সবাই বাসতে পারে না।
.
হ্যাঁ এটা সত্যি যে, আপনাকে কখনো দেখিনি শুধু আপনার হৃদয়টা অনুভব করেছি, তবুও এতোটা ভালোবাসি।
.
হয়তো জীবনে কখনো দেখাই হবে না, তাতে কি মনের চোখে সর্বক্ষণ দৃশ্যমান আছো তুমি সেটা কম কি ?
.
এটা ঠিকই বলেছেন।
.
আমার দেখা পবিত্রতম সুন্দর একজোড়া চোখের অধিকারী তুমি, তোমার দুচোখে অপূর্ব এক মায়া, তোমার মনও অনুরূপ পবিত্র হতে বাধ্য বিধায় এত ভালো লাগে।
.
দেখা হবে, অবশ্যই। প্রিয় মানুষটারে নিজের চোখে দেখবো না এটা কেমন করে হয়, নিজের হাতে ছুঁয়ে দিবো তার লোমশ বুক, নিঃশ্বাসেরও খুব কাছে এসে ছুঁয়ে দিবো কামনারত ঠোঁট।
.
এমন চোখ পৃথিবীর কোথাও কারো আছে জানা নেই। তোমার মোকামে আমি যাবো গো বৈষ্ণবী গান বাঁধা ভোরে
আমাকে বাজিও তুমি শরীরী সেতারে।
.
আহ্ কবি, আপনাকে ভালোবেসে আজ আমি প্রণয়িনী।
.
নিরন্তর শুভকামনা ভালোবাসা। অনেক অনেক ভালো থেকো প্রিয় সুপ্রিয়।
.
আজ বিশ্ব কবিতা দিবসে আপনাকে প্রণাম কবি। শত সহস্র সালাম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হে প্রাণের কবি হৃদয়ের বাদশাহ প্রেম আমার। আপনিও ভালো থাকুন।

— ফারজানা শারমিন
অদেখা প্রেম ( গদ্য কবিতা )

হে প্রিয় আত্মা…….

হে প্রিয় আত্মা,
তুমি নিঃশ্বাস হয়ে এই মাটির দেহ কে
নিয়ন্ত্রণ করো,
মানব শরীর কেমন বিচিত্র
তোমাকে ছাড়া বেচে থাকা অসম্ভব,
হে আমার প্রেম
এ হৃদয় পুড়িয়ে ডানা ভেঙে দিয়ে
উড়ে যেও না,
আমি তোমার জন্য সযত্নে গড়েছি ভালোবাসার রাজ্য
সে কি তুমি জানো ?
কি করে বোঝাই শুষ্ক মরুভুমির মতো
বিরহ দহনে পুড়ছে এ হৃদয়
আমি আছি প্রতিক্ষায় মেঘের আরাধনায়,
তোমাকে ফিরে পাবার
চির আদম্য ভালোবাসায়
হে প্রিয় আত্মা,
তুমি নিঃশ্বাস হয়ে এই মাটির দেহ কে
নিয়ন্ত্রণ করো,
মানব শরীর কেমন বিচিত্র
তোমাকে ছাড়া বেচে থাকা অসম্ভব,
হে আমার প্রেম
এ হৃদয় পুড়িয়ে ডানা ভেঙে দিয়ে
উড়ে যেও না……….

প্রবন্ধ : মিছে প্রণয়………..

হৃদয়ের বিশাল আকাশটা আজ বড্ড শূন্য।
তোমার অপেক্ষায় আছি, কবে এসে পূর্ণতা দেবে তুমি ?
তুমি জানো না তোমাকে ছেড়ে থাকাটা কতটা কষ্টের,
তুমি কি বোঝোনা আমার নিরবতাটুকু যে শুধুই অভিমান। চায়ের চুমুকের সাথে কফি শপে বসে আনমনে ভাবনা গুলো ভাবছে জয়িতা।
বড্ড কষ্ট হয় তুমি কি বোঝোনা ?
হৃদপিণ্ডটা দুমড়ে মুচড়ে যায় নিরব বিষণ্নতায়। তোমার দেয়া প্রতিটি আঘাত যেন মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। তোমার বলা প্রতিটা বাক্য আমার দুচোখের অশ্রু ঝড়ায়। এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারলে তুমি ?
তোমার মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা যে আজ আমাকে অতি মাত্রায় একা করে দিয়েছে। তোমার শূন্যতা আমাকে বড্ড কষ্ট দেয় তবুও চাইবো ভালো থেকো তুমি…..
ওয়েটার এসে জিজ্ঞাসা করছে ম্যাডাম আর কিছু লাগবে ?
ভাবনার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো জয়িতা।
এই কফি শপে শোভনের সাথে হাজার বার এসেছে সে, প্রতিদিন ক্লাস শেষে আড্ডা দিতো শোভনের সাথে। যখন তার কথা মনে পড়ে, খুব কষ্ট হয়। বেদনার রঙ নীল, পুরো নীল বেদনায় ভরে আছে হৃদয়ের সবটুকুই।
শুধু অনুভব করছি বুকের ভেতরের চাপা বর্ণহীন অনুভূতি আর একরাশ শুন্যতা ভাবছে জয়িতা। একদিন তুমিই কাছে এসেছিলে আর সেদিন আমি তোমায় ফিরিয়ে দেইনি। দুহাত জোর করে বলেছিলে ভালোবাসি জয়িতা, কিন্তু আজ তোমার হৃদয়ে আমার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে……
শুনেছি মন থেকে ভালোবাসলে নাকি কাউকে ভোলা যায়না। তবে কি তুমি শুধুই অভিনয় করেছিলে ? আমাকে পাওয়ার জন্য, আমাকে পেয়ে গেছো তাই আজ এতো অবহেলা ?
সেদিন যখন উত্তর চেয়েছিলাম কেন করলে এমন ?
তুমি বলেছো সব কেন এর উত্তর হয়না।
আচ্ছা তোমরা ছেলেরা তো বলো যে মেয়েরা নাকি ভালোবাসতে জানে না। করে শুধু ছলনা, যদি জানতে তাহলে চিরকাল সযত্নে আগলে রাখতে। তোমার প্রতি আমার দুর্বলতাই এই অবহেলার কারণ……..!!

আমি অপরাজিতা নারী………

কতটুকু চিনতে পেরেছিলাম
আমরা দুজন দুজনকে,
আজ আর কোন প্রশ্ন নয়
নয় কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা,
সোনার পেয়ালায় রাখা
অমৃত সুধা পান করেছি আমি
কেঁদেছি একাকী,
আজ আর কোন প্রশ্ন নয়
নয় কোন অনুশোচনা,
আমি প্রতিবার সফল হয়েছি
আরো সাহস নিয়ে
আরো শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছি
আর নিজেই আগুনে পরিণত হয়েছি,
জয় করা না পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেইনি,
জয় করা আমার প্রথম টার্গেট,
হোক তা কারো হৃদয় হোক তা পাহাড় সমান দুঃখ ।
কারো হৃদয় জয় করা খুব সহজ,
কিন্তু দুঃখ কে জয় করতে হয়
হাজার বার নিজেকে ভেঙে নিজেকে গড়ে,
হাজার বাধা বিঘ্ন পেড়িয়ে দুঃখ কে জয় করতে হয় | আর যে দুঃখ কে জয় করতে পারে তার কাছে পৃথিবীর অসাধ্য বলতে কিছু নেই,
আর আমি সেই অপরাজিত নারী……..

কেন ডাকো আমাকে পিছুটানে…

এই সংক্ষিপ্ত জীবন
তোমায় দিতে চায় অনেক কিছু
কিন্তু তোমার ওই উষ্ণ হৃদয়
সহজে ধরে রাখতে পারবে কী ???
আমার অন্তহীন ভালোবাসা
আমি তোমার থেকে অনেক দূরে হেঁটে চলে গিয়েছি
বলোতো এভাবে কেন ডাকো আমাকে পিছুটানে ???
কেন মিছে হাত বাড়ালে ???
কেনই বা ভালোবাসার প্রদীপ রাখো জ্বালিয়ে ???
আমার বুকের ভেতর তোমার জন্য মৃত নদী
কিছু দীর্ঘশ্বাস যন্ত্রণার নীল মেঘ
ভুলে যাবো ভেবে এতো দূরে আসা,
বলোতো এভাবে কেন ডাকো আমাকে পিছুটানে ???
কেন মিছে হাত বাড়ালে ???
কেনই বা ভালোবাসার প্রদীপ রাখো জ্বালিয়ে ???

ভালোবাসা……..

ভালোবাসা সে তো নদীর স্রোতের মতো আবহমান ধারা,
সীমাহীন নীল আকাশের মতো বিস্তৃন আবার কখনো
শ্রাবনের মেঘলা আকাশ……..
ভালোবাসা সে তো বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে রবীন্দ্রনাথের গান,
ভোরের বেলা শিশিরের বিন্দু মেশানো শিউলী ফুলের একটি মালা…….
ভালোবাসা সে তো সন্ধ্যা তারার কাছ থেকে নেয়া,
রুপালী অক্ষরে তোমায় লেখা একটি চিঠি…….
তোমায় এতো ভালোবাসি বলেই আকাশ ও প্রকৃতি জুড়ে চলছে এতো আয়োজন…….
দুর থেকে মনে হয় আর একটু কাছে গেলেই ছোঁয়া যাবে,
অথচ যতোই কাছে যেতে চাই ততোই যেনো আরো দুরে সরে যাই……..

হেঁটে চলেছি আমি বন জোছনায়……..

হেঁটে চলেছি আমি বন জোছনায়
পড়েছি রঙধনু রঙ শাড়ি
অপরূপ চন্দ্রাহার তারার গহনা
কানে পড়েছি জোনাকির দুল , হাতে ঝিনুকের চুড়ি
নি:শব্দ সীমাহীন গহীনে আকাশ হলো সাথী
একাকী হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়
দেখেছি বাদুর আধারে ডানা মেলে যায় হীম জোছনায়
রহস্যময় আবেগীমন চায় পূর্ন স্পন্দন
যেতে চায় গভীর থেকে গভীরতম সমুদ্রে
যেখানে অনাবিল আনন্দ স্বপ্নের বিথীকায়
হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়………..

প্রতিটা লাশের পেছনে ছোটছোট গল্প…

পোড়া লাশ আর স্বজনদের আহাজারিতে প্রকম্পিত চারিদিক। প্রতিটা খবরে ক্ষণে ক্ষণে আতংক বাড়ছে। গর্ভবতী স্ত্রী নামতে পারেননি তাই স্বামীও নামেননি। গর্ভের সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু। স্বামীর স্ত্রীকে ছেড়ে চলে আসার সুযোগ ছিলো কিন্তু চলে যায়নি স্ত্রী আর গর্ভের সন্তান কে মৃত্যুর মুখে রেখে কারণ তাদের ভালবাসায় ছিলনা কোনো স্বার্থ, এটা ছিলো পৃথিবীর বুকে প্রকৃত ভালোবাসা, বেঁচে থাকার এক অন্যন্য ইতিহাস। মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একা রেখে পালিয়ে যান নি স্বামী। ঠিক কতটা ভালোবাসলে কেউ এমন করতে পারে তার প্রমাণ ছিলো এটা। ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে তাদের ভালোবাসা……
.
চার বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন প্রতিদিনের মতো, স্বপ্ন ছিলো বিশ্ব জয়ের, অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তারা কি জানতো যে এটাই ছিলো জীবনের শেষ আড্ডা, চারটি মাথার পোড়া খুলি পরে আছে…..
.
বাবার কাছে সন্তান বিরিয়ানি খেতে চাইছে। বাবা বিরিয়ানি নিয়ে ফিরে এসে সন্তানকে এখনো পাননি, এক বাবার বুক ভাঙা আর্তনাদ বিরিয়ানী প্যাকেট হাতে নিয়ে ছেলেকে খুঁজে চলেছে অসহায় বাবা……
.
জমজ দুই সন্তান বাবাকে খুঁজছে, তারা নিজেরা ও জানেনা তার বাবা লাশের মিছিলের মাঝে পড়ে ছাই হয়ে আছে…..
.
দুই ভাইয়ের জড়াজড়ি করা লাশ আলাদা করার পর দেখা যায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরা এক শিশুর লাশ। শিশুকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছিলেন দুই ভাই, আপ্রাণ চেষ্টা করে কিন্তু শেষমেশ তারা আগুনের কাছে পরাজিত হয়……
.
নর্থসাউথ এ পড়ে এমন সন্তানের লাশ চাচ্ছে তার মা, ছেলের ছাই হয়ে যাওয়া লাশ। সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিটা আর্তচিৎকার। ছেলেটার বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন পুড়ে বিলীন হয়ে গেছে…….
.
মৃত ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে বাবাকে ফোন দিয়ে বলছে ভাইয়ের লাশ পাবার কথা……
.
আহ্, প্রতিটা লাশের পেছনে ছোট ছোট গল্প লুকিয়ে আছে। মরে যাওয়ার আগে কত জনে কত গল্প তৈরি করে গিয়েছে তার হিসেব নেই, কারো গল্প মানুষ জেনেছে কারোটা জানেনি। প্রিয়জনের সাথে শেষ কথা, শেষ দেখা, শেষ স্মৃতি। এখন তা শুধুই চিৎকারে পরিনত হয়েছে, তারা কেউ আর বেঁচে নেই মরে গেছে, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে…….
.
একুশের শোক চকবাজার ট্রাজেডি মিলে পুরো জাতিকে ভাষাহীন নির্বাক করে দিলো। আল্লাহ সবাইকে বেহেশতে নসীব করুন এবং শোকার্ত পরিবারকে ধৈর্য্য প্রদান করুন, সহ্য করার তৌফিক দিন, আমীন…….

অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি………

২১শে ফেব্রুয়ারি তুমি
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
স্বাধীনতার পটভুমি,
তোমার জন্যে পেয়েছি আজ
স্বাধীন মাতৃভূমি,
২১শে ফেব্রুয়ারি তুমি শহীদ মিনার
সকালের প্রভাত ফেরি
লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে,
শহীদদের দেখা স্বপ্ন একটি দেশ
প্রিয় মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশ
একটি স্লোগান
বাংলা আমার মাতৃভাষা চির অম্লান,
২১শে ফেব্রুয়ারি আমার অহংকার
সন্তানহারা মায়ের চিৎকার
আজ আমি গর্বিত
আমি বাঙালি
বাংলা ভাষায় কথা বলি
হৃদয়ে ধারন করি
অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি………….

— ফারজানা শারমিন