শংকর দেবনাথ এর সকল পোস্ট

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কুসুম-কুমার

IMG_20221017_203813পর্ব-১

অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মামৃতং গময়। –

বাবার ভরাট গলায় উপনিষদের আবৃত্তি শুনতে শুনতে ঘুম ভাঙে মিলুর। শুয়ে শুয়েই দেখে – মা পাশে নেই। প্রতিদিনের মত তিনি সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছেন – বুঝতে পারে। আড়মোড়া খেয়ে বিছানায় বসে। বাবার দিকে তাকায়। তিনি পাশের খাটে যোগাসনে বসে একমনে আওড়ে চলেছেন মন্ত্র। ছোট ভাই আশোক তখনও আঘোরে ঘুমচ্ছে ৷ ছোট্ট মিলু আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে পড়ে। ধীর পায়ে বাবান্দায় আসে। চোখ দু’টো রগড়ায়। হঠাৎ তার চোখে পড়ে ভোরের সূর্যের সোনালী আভা গাছগাছালির পাতার ফাঁক দিয়ে বারান্দায় এসে পড়েছে। মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকায়। এগিয়ে যেতে থাকে বারান্দার পুবকোণের দিকে।

হঠাৎ ভেসে আসে মায়ের কন্ঠস্বর। বড় মিষ্টি মায়ামাখা সেই কণ্ঠ।
তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে
মলিন মর্ম মুছায়ে ৷ –
প্রার্থনা সঙ্গীতটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে স্নান সেরে এলোচুলে মা বারান্দায় উঠছেন।

মিলু একবার মায়ের দিকে তাকায়। মা-ও তাকান ছেলের দিকে। গান থামিয়ে বলেন- উঠে পড়েছ ?
মিলু কোনো উত্তর দেয় না। সে যেন মায়ের কথা শুনতেই পায়নি। গুটিগুটি পায়ে পুব-বারান্দার চৌকাঠে গিয়ে বসে ৷ মা-ও আর কোনো প্রশ্ন না করেই ঘরের ভেতরে চলে যান ৷
ছোট্ট মিলু গাছপালা ভরা সামনের বাগানের দিকে তাকায়। পাতার ফাঁক গলে আসা ভোরাই আলো মৃদু হাওয়ায় যেন নেচেনেচে বেড়াচ্ছে সারা বারান্দায়।
অবাক বিস্ময় চোখে মেখে চুপচাপ বসে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে মিলু। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে ঘু.ঘু শব্দ। দৃষ্টি ফেরায়। দেখে দুটো ঘুঘু পাখি ভীত পায়ে হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েকটা শালিক দোয়েল চড়ুই ওড়াউড়ি করছে। অন্যদিকে গুল্মঝোঁপের পাশে একটা ডাহুকী দুটো ছানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে বসে বসে দেখতে দেখতে ছোট্ট মিলুর উদাসী মনটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।

খেয়ালই করতে পারে না – কখন তার ঠাকুরমা এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ও দাদুভাই –
কানে যায় না ঠাকুরমার ডাকও।
ঠাকুরমাও তার আদরের নাতির এই ভাবলুতাকে ভাঙতে চান না। তিনিও চুপচাপ তার পাশে বসে পড়েন।
কিছুক্ষণ পরে ঘর থেকে বৌমার ডাক কানে আসে- মা মিলুকে নিয়ে আসুন।

এবার ঠাকুরমাকে বাধ্য হয়েই ধ্যান ভাঙতে হবে নাতির। গায়ে স্নেহের হাত রেখে ডাকেন – দাদুভাই ও দাদুভাই মা ডাকছেন। এখন যে উঠতে হবে। হাত মুখ ধুঁতে হবে। কিছু খেতে হবে। চলো।

মিলু কোনো কথা না বলেই বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে।

(চলবে)

পাঁচটা আঙুল

একটা হাতের
পাঁচটা আঙুল
মনে এবং
দেহে –
ভিন্ন তবু
একসাথে রয়
জড়িয়ে গভীর
স্নেহে ৷

একসাথে কাজ
করে তারা
দিবস এবং
রাতে –
বিপদ এলে
লড়াই করে
মুষ্ঠিবদ্ধ
হাতে ৷

আদর্শ বাবা

ছেলেটি ভারি বিরক্ত করছে। মা কিছুতেই সুস্থ মনে রান্না করতে পারছেন না। কখনও ভাঁড়ারের সবজি ছড়াচ্ছে তো কখনও আবার কলসীর জলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে জল ছেটাচ্ছে ৷পরক্ষণে আবার মায়ের আঁচল ধরে টানাটানি করছে ৷
– কী চাস বলতো? আমাকে রান্না করতে দিবি না নাকি?
মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলেটি তার দুষ্টুমি চালিয়েই চলে।
মা যতই তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন – ছেলেটির দুষ্টুমি যেন ততই বেড়ে যাচ্ছে। মা একটু রাগতস্বরে কথা বললে কিছুক্ষণ চুপ থাকছে। তারপর আবার …
কোনোভাবেই ছেলেকে শান্ত করতে না পেরে মা একটু ছলনার আশ্রয় নিলেন আর দশটা মায়ের মতই। ছেলের মুখে-মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন -শোনো বাবা, তুমি যদি ও’ঘরে গিয়ে এখন ঘুমোও – তাহ’লে ঘুম থেকে উঠলেই আমি তোমাকে সন্দেশ খেতে দেবো ৷
সন্দেশের নাম শুনেই খুশিতে ছেলেটির মন যেন পাল্টে গেল ৷
হাসিমুখে বলল -ঠিক বলছো মা? সন্দেশ দেবে তো ?
– হ্যাঁ বাবা। তুমি এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা মা ৷
সন্দেশ পাবার আশায় পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটি তার সমস্ত দুষ্টুমি ভুলে মায়ের কথামত ঘুমোতে চলে গেল পাশের শোবার ঘরে।

মা-ও আপাতত ছেলের দুষ্টুমির হাত থেকে রেহাই পেয়ে রান্নার কাজে মন দিলেন।

পাশের অন্য একটি ঘরে বসে ছেলেটির বাবা বই পড়ছিলেন। মা আর ছেলের কথাবার্তা হয়তো তারও কান পর্যন্ত গিয়েছিল। কী জানি কী ভেবে তিনি বইপত্র গুঁটিয়ে রাখেন। তারপর কাঁধে একটা ফতুয়া ঝুলিয়ে কোথাও একটা যাবার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।

ব্যাপারটা ছেলেটির মা দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে বললেন – এই ভরদুপুরে তুমি আবার কোথায় চললে ? একটু আগেই তো বলছিলে, এ’বেলায় এই ঠা ঠা রোদে আর কোথাও বেরোবে না ৷
ছেলেটির বাবা গিন্নির কথার উত্তর দিতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ বললেন – সন্দেশ কিনতে ৷
– সন্দেশ ? কেন ?
– তুমি যে ছেলেকে বললে- ঘুম থেকে উঠলেই তাকে সন্দেশ খেতে দেবে। তা তোমার ভাঁড়ারে কি সন্দেশ আছে ?
– না নেই। তাতে কী ? এই অসময়ে আর তোমাকে এককোশ পথ হেঁটে সন্দেশ আনতে যেতে হবে না ৷
– ঘুমের থেকে উঠেই তোমার কাছে ছেলে যখন সন্দেশ চাইবে তখন কী করবে ?
– ও কি আর তখন ওর মনে থাকবে ৷ শিশু মন৷ ভুলে যাবে। আর যদি চায়ও তো ব’লে দেবো – বাবা রাতে এনে দেবেন ৷
– না, তা হয় না গিন্নি ৷ ওকে যখন তুমি আশ্বাস দিয়েছো ঘুম থেকে উঠলেই সন্দেশ দেবে – সে কথা তো তোমার রাখতেই হবে ৷ তাই ও ঘুম থেকে ওঠার আগে ঘরে সন্দেশ এনে রাখতে হবে যাতে তুমি ছেলের কাছে মিথ্যাবাদী হয়ে না যাও।

গিন্নি চুপচাপ তার পণ্ডিত আর আদর্শবাদী স্বামীর কথা শুনছেন আর নিজের ভুলটা উপলব্ধি করতে পারছেন।

স্বামী আরো বললেন – তা না করলে তোমার প্রতি ওর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে। ভাববে মা তো ওরকম বলেন। তোমার কোনো কথাই তখন আর ও বিশ্বাস করবে না। শিশু বলে তার সাথে ছলনা করলে সে বুঝতে পারবে না বা কিছু হবে না এ’রকম কখনো ভাববে না। এভাবেই মা-বাবা-পরিজনদের কাছ থেকেই শিশুরা নিজের অজান্তে ভাল বা খারাপ সংস্কার পেয়ে পেয়েই বেড়ে ওঠে- যা তার পরবর্তী জীবনে-যাপনে ফুটে ওঠে ৷
স্বামীর কথার মমার্থ বুঝতে পেয়ে গিন্নি মনে মনে প্রতীজ্ঞা করলেন- এমন ভুল আর তিনি ভুলেও করবেন না।

এই আদর্শবাদী বিবেকবান বাবা আসলে কে জানো ? ঠাকুরদাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই ছোট্ট ছেলেটি আর কেউ নয় – স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৷

বাড়ির সাথে আড়ি

সমস্ত দিন আমায় কেবল রাখিস চোখে ধরে,
ডাকিস কাছে রাখিস বেঁধে স্নেহের কড়া ডোরে ৷
এই করে না,ওই কোরো না – ওদিক যেও না না,
কেউ বোঝে না কি চাই আমি -শুধুই নিষেধ মানা।
ভাল্লাগে না মাগো তোদের আদর বাড়াবাড়ি,
বাড়ির সাথে আড়ি দেব- বাড়ির সাথে সাথে আড়ি ৷

ডাকছে অপু-দুর্গা আমায় – ডাকছে ইছামতি,
হাতছানি দেয় মাঠ -ঘাট ও বন- দখনে হাওয়ার গতি ৷
ডাকছে আমায় বৈঁচি ঘেটু বন্য ফুল আর ফলও,
দেয় ইশারা শাপলা শালুক- পদ্মদিঘির জলও৷
খেলব আমি ওদের সাথে আমায় দেমা ছাড়ি’,
বাড়ির সাথে আড়ি আমার বাড়ির সাথে আড়ি ৷

আম কাঁঠাল আর জামের বনে ঘুরব সারাবেলা,
ওরাই আমার মিতা, ওদের সাথেই আমার খেলা ৷
বটের ছায়ার শ্যামল মায়ায় ঘাসের বিছান পাতি’,
ক্লান্ত হয়ে বসলে হবে পাখপাখালি সাথি।
বন্ধু বলে ধরবে এ’হাত তাল সুপারীর সারি,
বাড়ির সাথে আড়ি আমার বাড়ির সাথে আড়ি ৷

সন্ধে হলেই সাঁঝের পিদিম জ্বালবে জোনাক পোকা,
আকাশ ফুলের বাগান জুড়ে ফুটবে তারার থোকা |
চাঁদের বুড়ি আমায় পেয়ে চরকা কাটা ভুলে,
বসবে আমার গা ঘেঁষে তার গল্পঝুলি খুলে।
ফুলপরীদের সঙ্গে দেব অচিন দেশে পাড়ি,
বাড়ির সাথে আড়ি আমার বাড়ির সাথে আড়ি ৷

ভূত মরে ভূত

পোড়োবাড়ি নেই কানাগলি নেই
শ্মশানে বিজলি আলো –
ভূতেরা কি মরে ভূত হয়ে গেছে?
সমস্যা জমকালো ৷

ভূত মরে ফের ভূত যদি হয়
এ ভূত কেমন তবে?
এরা কি আগের ভূতেদের চেয়ে
ভয়ানক বেশি হবে ?

ভূতেদের বাড়ি নাই যদি আর
কোনখানে থাকে এরা ?
ঘর বেঁধে থেকে মানুষেরই মত
করে বুঝি চলাফেরা ?

ভূত যদি ঘোরে শহরে ও গাঁয়ে
মানুষের বেশে শেষে –
তবে তো এ ভূত চেনা ভারি দায়
কে ভূত ? মানুষ কে সে ?

কান্তগোঁসাই

কান্ত গোঁসাই শান্ত ভীষণ, জানতাে সবাই তাকে,
সাত চড়ে রা করেন না যে, নেই কোনাে হাঁক ডাকে ।
হঠাৎ যে তার মাথার ভেতর ঢুকলাে কীসের পােকা,
ভাব চেহারায় জ্ঞান যে হারায়, তার মেয়ে-বউ-খােকা।

হাসেন কাঁদেন, গল্প ফাঁদেন বিদ্ঘুটে আজগুবি,
দাঁত খেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেন-আমার তাে কাজ খুবই।
নস্যি দিয়ে হাঁচেন কেবল, নাচেন পা-হাত ছুঁড়ে,
এবং বলেন, ‘পেলেন’ চড়েই সগগে যাবেন উড়ে ।

রাতের বেলায় ছাতে উঠেই চাঁদ ছুঁতে দেন লাফ,
জাপান যাবেন চা-পান খাবেন, বলেই ছাড়েন হাঁফ ।
ঘােলের ঝােলে চান করে রােজ ওলের স্যালাড খাবেন,
তাতেই নাকি হাতেই তিনি অ-মরি বর পাবেন ।

রাজাধিরাজ সিরাজ সেজে বিরাজ করেন গেহে,
থেকে থেকেই বউকে ডেকে ‘লুৎফা’ বলেন স্নেহে।
মীরজাফরের বংশ এবার ধ্বংস দেব করে,
বলেই হাতে রামদা নিয়ে নামতা পড়েন জোরে।

জানিস কি তা? লিখবাে গীতা, পাল্টে দেব সবই,
বইয়ের মলাট, গ্রহের ললাট, চন্দ্র-তারা-রবি।
বলেই হাসেন খানিক কাশেন এবং চেঁচান জোরে-
রথের চাকা পথের ফাঁকায় খাচ্ছে গিলে ওরে ।

কুঁকিয়ে কেঁদে লুকিয়ে থাকেন, মাখেন গায়ে কাদা,
বলেন- ব্যাঁ ব্যাঁ, ছ্যাঁ ছ্যাঁ, আমি যাচ্ছি হয়ে গাধা।

গাছের জন্মদিন

গাছের জন্মদিন
শংকর দেবনাথ

– দাদা, বাবাকে যা যা আনতে বলেছিলি, বাবা কি সে সবকিছু নিয়ে এসেছেন?
সন্তু বলে ওর দাদা রন্তুকে।

হ্যাঁ, সবই এনেছেন। এখন আমাদের কাজগুলো তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। চল ভাই।

রন্তু সন্তুর হাত ধরে এগিয়ে যায় ওদের বাগানের দিকে।

সকাল থেকে রন্তু আর সন্তু খুবই ব্যস্ত। জন্মদিন বলে কথা।

ওরা পিঠে-পিঠি দুই ভাই। রন্তু পড়ে ফাইভে আর সন্তু ফোরে। সীমান্তঘেঁষা ছোট্ট সবুজ শহর বনগাঁ। তার মাঝে প্রায় মজে যাওয়া প্রিয়নদী ইছামতি।
আর এই ইছামতির পাড়েই ওদের সুন্দর একটা একতলা বাড়ি। বিঘে খানেক জমির উপর ওদের ছোট্ট বাড়ির চারপাশে গাছগাছালির ভিড়।

ওরা দু’ভাই কমলালেবু গাছের চারাটির কাছে আসে। আশপাশটা ভাল করে পরিস্কার করে দু’জনে মিলে। কিছু গুঁড়োমাটি এনে রাখে গাছটির পাশে।

এই গাছটি ঠিক একবছর আগে আজকের দিনে প্রথম মাটি ফুঁড়ে আলোর মুখ দেখেছিল।
ওদের বাবার এনে দেওয়া কমলা খেয়ে কয়েকটা বীজ পেয়েছিল ওরা। সেগুলো দেখিয়ে মাকে বলেছিল- মা, বীজগুলো পুঁতলে কি কমলালেবুর গাছ হবে মা?
-দেখ পুঁতে, হলেও হতে পারে।
মায়ের কথায় ভরসা পেয়ে সেদিন দুই ছোট্ট শিশু গভীর মমতায় বীজগুলো পুঁতে রেখেছিল উঠোনের এককোণে। কলতলার পাশে।
ঠাকুরদা ঠাকুরমাকেও জানিয়েছিল ওরা। তারাও খুব খুশি হয়েছিলেন। ঠাকুরমা বলেছিলেন- নিশ্চয় চারা হবে। আমাদের তো আগে একটা কমলালেবু গাছ ছিল। তোর ঠাকুরদা বীজ পুঁতেছিলেন। হয়েও ছিল।
ঠাকুরদা বললেন- ফলও হতো কত। তবে সামান্য টক হতো। আমাদের এই জলবায়ুতে বোধহয় এরকমই হয়।

ওরা প্রতিনিয়ত নজরে রাখতে শুরু করে – বীজ থেকে চারা বের হয় কিনা দেখার জন্য। ওদের এই আগ্রহ আর বৃক্ষপ্রীতিতে মা-বাবাও উৎসাহি হয়ে ওঠেন।

-কিরে চারা বেরিয়েছে? বাবা মজা করে কখনও সখনও জানতে চান।
-না বাবা। ওদের মনে হতাশা।

হঠাৎ একদিন ভোরে উঠোন ঝাঁট দিতে দিতে মায়ের চোখে প্রথম ধরা পড়ে ব্যাপারটি। দু’টো কচিপাতা নিয়ে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে একটি চারা। কমলার চারা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল সেদিন ওরা। তারপর কত যত্ন। কত ভালবাসা।

আজ গাছটির বয়স ঠিক একবছর।
হিসেবটা রেখেছিলেন ওর ঠাকুরদা। গত দু’তিনদিন আগে ঠাকুরদার সাথে পরামর্শ করে ওরা সিদ্ধান্ত নেয় গাছের জন্মদিন করার। তারই পরামর্শমত গতরাতে ওদের বাবাকে দিয়ে সারের দোকান থেকে দশ কিলো সুফলা আনিয়েছে।

ঠাকুরদা এগিয়ে আসেন ওদের কাছে। বলেন- তোরা দু’জনে গিয়ে বাগানের সকল গাছকে কমলার জন্মদিনের নেমতন্ন করে আয়।
-আচ্ছা দাদু। রন্তু বলে – কি বলতে হবে গাছেদের?
সন্তু সোৎসাহে বলে- হ্যাঁ দাদু, তুমিও চলো আমাদের সাথে।
-ঠিক আছে। চল।

ওরা তিনজনে মিলে বাগানের আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, পেয়ারা, বাতাবি, নারকেল, সুপারি, বেল, কুল সব গাছকেই জানিয়ে আসে কমলার জন্মদিনের কথা।

বাবা এলেন। মা ঠাম্মা এলেন। এল ওদের পাড়ার বন্ধুরাও। একটা অন্যরকম আনন্দ আর উচ্ছ্বাস সবার ভেতরে।

ঠাকুরদার নির্দেশে বাবা একটা কোঁদাল নিয়ে এলেন। জল তোলা মটরের পাইপটাও আনা হল বাগানে।মা আর ঠাকুমার উলুধ্বনির ভেতর দিয়ে শুরু হয়ে গেল কমলার জন্মদিনের অনুষ্ঠান।

সবাই সোৎসাহে হাততালি দিয়ে বলল- হ্যাপি বার্থ ডে টু কমলা। শুভ জন্মদিন কমলা।

সকলে একসাথে কমলার ছোট্ট চারাটির গায়ে হাত বুলিয়ে দিল গভীর মমতায়।
রন্তু বলল- ও দাদু, এবার কী করতে হবে বলনা?
সন্তু বলল- তাড়াতাড়ি বলো।
ওদের মা বলেন- তোদের ঠাকুরদা পারেনও বটে।
বাবা মজার সাথে বললেন- বল বাবা বল। পাগলদের ক্ষেপিয়েছো তো তুমিই।

ঠাকুরদার মুখে মৃদু হাসি। তৃপ্তির হাসি। বলেন- সবাই তো মানুষের জন্মদিন করে। আমরা না হয় গাছের জন্মদিন করলাম একবার গাছকেও আমাদের পরিবার ভেবে। দোষ কি?
-না বাবা, সেকথা বলছি না। তুমি তো ভাল কাজই করছো। ওদের ভেতরেও গাছের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলছো তুমি।
ও দাদু, বল না এখন আর কি কি করতে হবে? সন্তুর যেন আর তর সইছে না।
ঠাকুরদা বললেন – আগে কমলার চারাটির গোড়ায় একটু জল দাও। তার সুফলা দাও কিছুটা। তারপর মাটি দিয়ে ভাল করে গোড়াটি ঢেকে দাও।

সযত্নে কমলার গোড়ায় জল, সার আর মাটি দিয়ে দেওয়া হল বাবার সহযোগিতায়।

ঠাকুরদা আবার বললেন- কমলার জন্মদিনে তো বাগানের সব গাছকেই নেমতন্ন করা হয়েছে। ওদের প্রত্যেকেই আপ্যায়ন করতে হবে না? তাই এবার একে বাগানের সব গাছের গোড়ায় আগে জল দিয়ে দাও পাইপটা দিয়ে। তারপর সার আর প্রত্যেকটির গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চলো সবাই কাজে লেগে পড়ি।

প্রচন্ড উৎসাহে সবাই হাতেহাতে কাজগুলো করতে লেগে যায়।
একসময় বাগানের সকল গাছের সেবাযত্ন শেষ হয়।

ঠাকুমা বলেন- বাহ্, কমলার জন্মদিনের অছিলায় সমস্ত গাছপালার যত্ন করা হয়ে গেল।
মা বললেন- এরকম প্রতিবছরই করা উচিত। তাতে গাছগুলোরও উপকার হবে।
ঠাকুরদা সানন্দে বললেন- বৌমা, এবার ওদের বন্ধুদের মিষ্টিমুখ করাও একটু।
মা বললেন- চলো সবাই ঘরে।

একটা অদ্ভূত অন্যরকম আনন্দ সবার মনে।

রন্তু আর সন্তু দু’জন বাগানের চারপাশে তাকাল। মনে হলে গাছগুলো যেন পরম আনন্দে হাসছে।
মৃদু হাওয়ায় সবুজ পাতা দুলিয়ে বাগানের সবগাছগুলোই যেন বলছে- গাছের জন্মদিন করে তোমরা আমাদের চিরবন্ধুত্বের স্বীকৃতি দিলে।

কমলালেবু গাছটির দিকে আবার তাকাল ওরা। মনে হলো- গাছটি যেন সানন্দে, সকৃতজ্ঞ চোখে ওদের দিকে চেয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবুজাভ হাসি।

প্রেমের পদ্য

যদি কোনো বেভুল বিকেলে-
বাউল বাউল হাওয়া
দেয় ডানা মেলে।
অশথের প্রিয়শাখা থেকে-
পাতাগুলো নেচে ওঠে
বুনোসুখ মেখে।

পাখিদের আঁখিভাষা যদি-
সুরেসুরে লেখে বুকে
শ্রাবণের নদী।
ফুল যদি ভুল রঙ আঁকে-
সামাজিক প্রজাপতি
না খোঁজে গো তাকে।

না বলা কথারা যদি জাগে-
প্রাণময়ী কবিতার
প্রিয় অনুরাগে।
সেইদিন নীরব ভাষাতে-
একবার যদি ডাকো-
রয়েছি আশাতে।

এই করোনা ভীষণ ভাল

এই করোনা ভীষণ ভালো
হিসেব করে চলে,
ট্রেন ও বাসে চড়েই না সে
যায় না শপিংমলে।

হাট-বাজারে যায় না রে সে
হাজার লোকের ভীড়ে,
মিছিল মিটিং বিয়ের ইটিং
দেখলে সে যায় ফিরে।

এই করোনা ভীষণ ভাল
সকল কিছু ভুলে,
পড়ার নেশায় সে যায় শুধু
কলেজে-ইস্কুলে।

আছে-নেই

লোকেদের চোখ আছে
তবু শোকে পানি নেই,
ব্যাগ আছে পকেটেতে
দ্যাখ তাতে Money নেই।

সর্ষেতে ভূত আছে
তাকে পেষা ঘানি নেই,
মুখ আছে মুক হয়ে
প্রতিবাদী বাণী নেই।

ভুল গাছে হুলভরা
ফুল আছে ঘ্রাণই নেই,
নানারূপ হানা আছে
শুধু চাকে Honey নেই।

ছাই আছে চারপাশে
রাখবার দানি নেই,
পাখি আছে নাকি গাছে
ঘুমভাঙা গানই নেই।

শিবের গীত তো আছে
ধান ভানাভানি নেই,
ভোটে জেতা নেতা আছে
ঝড়-জলে ত্রাণই নেই।

নানাভাবে টানা আছে
হৃদয়ের টানই নেই,
লোভ আছে ক্ষোভ আছে
ভালবাসা জানি নেই।

শব আছে সবখানে
ধড়ে কারো প্রাণই নেই,
রাজা আছে তাজাসুখে
পাশে কোনো রানি নেই।

এই শিশুটি ওই শিশুটি

এই শিশুটির নেই জামা বই
নেই তো খেলার বল,
শুধুই আছে চরম খিদে
গরম চোখের জল।

ওই শিশুটির অথৈ সুখ আর
কতই ব্যাগে বই,
খেলনা ঘরে হরেক তবু
খেলার সময় কই?

দুইটি শিশুই সুইটি ভারি
ভুঁইটি তবু কারা-
চাষ করে আর ঘাস মারা বিষ
দেয় ছড়িয়ে তারা!

গবাইচাঁদের ক্ষ্যামতা

সবাই জানে গবাইচাঁদের ক্ষ্যামতা আছে কত,
মুখেতে সে সুখেতে খই ফোটায় অবিরত।
বেতাল দিয়ে তিলকে সে তাল দেয় নিমেষে ক’রে,
বেজায় মজায় ভেজায় চিড়ে কথা মহাতোড়ে।

হাটের মাঝে মাটির হাঁড়ি পা-টির মেরে লাথি,
হেসেহেসেই দেয় ভেঙে সে, কাজটি ভারি পাতি।
নয়টাকে ছয় করতে পারে- ভয়ভীতি নেই তো রে,
ভীমতেজে সে ডিম ভেঙে দেয় আছাড় দিয়ে জোরে।

থোতা মুখ দেয় ভোঁতা করেই এমন তেজী ভাষা,
এক পলকে ক্যাঁক করে দেয় উল্টে পাশাটাশা।
ফুঁ দিয়ে সে হু হু করে দেয় উড়িয়ে তুলো,
আঙুলের এক খোঁচায় ছেঁড়ে কচুর পাতাগুলো।

ঘুম ভেঙে দেয় দুমদুমাদুম ঘুষি মেরেই জোরে,
সবই মাটি করতে পারে কাঠি দিয়েই গো রে।
সবাই জানে গবাইচাঁদের ক্ষ্যামতা ঝুড়ি ভরা,
তাকে নিয়েই রামদা দিয়েই দিলাম কেটে ছড়া।

মুখোমুখি- দীর্ঘ ছড়া

মুখেমুখে রটে কথা, খই ফোটে মুখে,
মুখ খুলে জীবনটা কাটে কারো দুখে।
কথা ঝেড়ে মুখ মেরে মুখ টিপে হাসে,
মুখ দেখে সুখ, কেউ মুখে ভালবাসে।

মুখে মেখে চুনকালি মুখ বুজে থাকে ,
মুখ উজ্জ্বল করে কেউ মুখ রাখে।
মুখ পুড়ে যায় কারো, মুখে পড়ে আলো,
মুখ ঝামটাতে কারো মুখ হয় কালো।

মুখটা খারাপ ভারি হয়ে থাকে কারো,
ভয়েতে শুকায় মুখ, হয় মুখ ভারও।
মুখ সামলিয়ে কথা বলা ভাল নাকি,
মুখেতে আগুন দিতে কেউ আছে বাকি!

বড় মুখ করে কথা বলে কেউ শেষে,
লজ্জায় মুখ ঢেকে মরে কেশেটেশে।
মুখের মতন দিয়ে জবাবটা পরে,
মুখ চুন করে কারো যেতে হয় ঘরে।

মুখটা ফসকে কথা বের হয়ে গেলে,
মুখ তুলে চাওয়া দায় হয় অবহেলে।
মুখ থুবড়িয়ে পড়ে, মুখ কারো চলে ,
মুখে ফুল চন্দন পড়ে- লোকে বলে।

বুক ফাটে তবু কারো মুখ তো না ফোটে,
মুখে মধু ঝরে কারো মুখে ছাই জোটে।
কত মুখ চেয়ে থাকে এক মুখপানে,
দশমুখ ভরা সোজা নয়- লোকে মানে।

থোঁতামুখ ভোঁতা হলে মুখে রা না করে,
বিপদের মুখে পড়ে কেউ কেঁদে মরে।
অভিমানে মুখ ফোলে, রাগে মুখ লাল ও-
মুখে দেয় থুথু, কারো চাঁদমুখ ভালো।

মারমুখো হয়, কেউ ক্লুপ আঁটে মুখে,
পোড়ামুখী বাসিমুখে হাসি দেয় সুখে।
সম্মুখে কম মুখই- মুখোশ তো বেশি,
মুখটা ঘুরিয়ে নেয় কেউ শেষমেশই।

মুখে ভাত দিতে কেউ মুখোমুখি বসে,
মুখ চাওয়াচায়ি করে, কেউ মুখ ঘষে।
মুখ চুরি করে ছড়া লিখে থোড়াথোড়া,
এই ছড়াকার শেষে হলো মুখচোরা।

খুশির পুষি

– আমার পুষি কোথায় মা?
বাড়িতে ঢুকেই উদ্গ্রিবভাবে জানতে চায় খুশি।

দু’দিন আগে বিনা নোটিসে হঠাৎ মামাবাড়ি যেতে হয়েছিল খুশিকে।
ওর বড়মামা এসেছিলেন বেড়াতে। আর একপ্রকার জোর করেই ওকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাথে। গরম ছুটি চলছে। তাছাড়া অনেকদিন মামাবাড়িতে পড়ার চাপে যাওয়াও হয়নি ওর। তাই মামা বলতেই খুশির মা-বাবা সহজেই সম্মতি দিয়ে দেন। খুশির পুষিকে নিয়ে একটু দোটানা ভাব থাকলেও শেষপর্যন্ত মামার সাথে যেতে আপত্তি করেনি। কারণ ওদিকেও খুশির একটা টান আছে। সে হলো মামার মেয়ে। পাঁচবছরের মিমিকে দেখার জন্য ওরও মনটা আইডাই করছিল।

একটা দিন খুশির মামাবাড়িতে বেশ আনন্দেই কেটে গিয়েছিল মিমির সাথে খেলা করে। কিন্তু রাতেই ও পুষির অভাব বোধ করতে থাকে। কষ্ট লাগে পুষির জন্য। বাড়িতে স্কুলের সময়টুকু ছাড়া সবসময়ই পুষি খুশির সাথেসাথেই থাকে। এমনকি প্রাইভেট টিউটর পড়াতে এলেও পুষি বসে থাকে খুশির পাশে। রাতে খুশির পাশে শুয়ে গদগদ আনন্দে ঘুমোয়। খাবার সময় খুশির পাশে গিয়ে বসে পড়ে। খুশির দেওয়া খাবার পরম তৃপ্তিতে খায়।

আজ খুশির পীড়াপীড়িতেই মামা খুশিকে আবার ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে এসেছেন।

-মা, আমার পুষি কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি নে কেন?
ব্যাকুল হয়ে ওঠে খুশি।

যে পুষি খুশির স্কুল থেকে ফেরার অপেক্ষায় বারান্দায় বসে থাকত রাস্তার দিকে চেয়ে। খুশিকে দেখে পেলেই ছুটে যেত কাছে। মিঁউমিঁউ করে ডেকে খুশির পাশে ওর তুলোর মত নরম পশমগুলো ঘষে আদর করে দিত। খুশি দু’দিন পরে বাড়ি ফিরলেও কেন দেখা নেই সেই পুষির?

খুশি পাগলের মত খুঁজতে থাকে পুষিকে। এ’ঘর থেকে সে’ঘর। কিন্ত কোথাও পেল না পুষিকে।
অগত্যা কাঁদোকাঁদো গলায় মাকে বলে- মা, আমার পুষিকে তো কোথাও পেলাম না। ওর কি খারাপ কিছু হয়েছে?

মা এতক্ষণ চুপচাপ মেয়ের অস্থিরতা দেখছিলেন। কিছুই বলছিলেন না। এবার আর কথা না বলে পারলেন না- আছে রে পাগলী, তোর পুষি আছে। কিন্তু তোর উপর ওর বড্ড অভিমান হয়েছে। তাই তোর সামনে আসছে না।

– কোথায় আছে সে?
চঞ্চল হয়ে ওঠে খুশি।

মা বলেন- তুই যাবার পর তোর পুষি একটি দানাও মুখে তোলে নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি খাওয়ানোর জন্য। খাবারের সামনে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আস্তেআস্তে চলে যেত। শুয়ে পড়ত তোর পড়ার টেবিলের উপর। আর আজ সকাল থেকে তো আর ওঠেই নি।

– কই, পুষিকে তো টেবিলের উপর দেখলাম না?
খুশি ব্যস্ততা হয়ে ওঠে।
– না, আজ তোর টেবিলের উপর নয় খাটের নিচে শুয়ে আছে। একটু আগেই ঘর ঝাড় দিতে গিয়েই আমার চোখে পড়েছে।
খুশির মা বলেন।

খুশি একদৌড়ে ছুটে গেল খাটের কাছে। টেনে বের করে কোলে তুলে নিল পুষিকে। আদরে সোহাগে ভরে দিল ওকে।
– পুষি আমার সোনা পুষি। তুই আমার উপর খুব রাগ করেছিস বুঝি?
পুষির চোখ দু’টো জলে ছলছল করে ওঠে। খুশিরও।
– আমারও তোকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে রে। তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। তোকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারিনে পুষি।

পুষি বন্ধুকে ফিরে পেয়ে সব মান-অভিমান নিমেষে ভুলে গিয়ে আনন্দে গদগদ সুরে মিঁউমিঁউ করে ডেকে উঠল।

খুশি তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু পুষিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল।