শংকর দেবনাথ এর সকল পোস্ট

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

পানকৌড়ি ও বুনোহাঁসের গল্প

-বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কী দেখছো গো অমন করে?- পানকৌড়ি-বউ জানতে চায় পানকৌড়ির কাছে।
-ও, কিছু না। এমনি….
-কিছু না বললে হলো। আমি আজ ক’দিন ধরেই তো দেখছি তোমার হাবভাব। মনে হচ্ছে কিছু একটা যেন খুঁজছো তুমি। বল না কি হয়েছে?

শীতের হালকা পরশ লাগতেই পানকৌড়ির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। বারবার আকাশের দিকে তাকায় কার যেন আসার পথ চেয়ে।

পানকৌড়ি মুখ খোলে।
-বউ, তোর বুঝি মনে নেই আমাদের সেই বন্ধুর কথা।
-বন্ধুর কথা? ও সেই বুনোহাঁস।
-হ্যাঁ, বন্ধু কী বলেছিল তোর মনে নেই?
-আছে তো। সে তো বলেছিল শীত এলে আবার সে আসবে আমাদের সাথে দেখা করতে।
– শীত তো পড়ে গেল। তাই মনটা বড় ব্যাকুল হয়ে উঠছে বন্ধুকে দেখার জন্য।
– ওর কি আর আমাদের কথা মনে আছে?
– নিশ্চয় আছে। দেখবি ও ঠিক আসবে।

একবছর আগে এমনি এক শীতের বিকেল। রক্তাক্ত অবস্থায় বুনোহাঁসটি এসে পড়েছিল এই পোলতার বাঁওড়ের কচুরীপানার উপর। পাশের ফাঁকা জলে ডুব-সাঁতারের খেলায় মেতে থাকা পানকৌড়ি ও তার বৌ দেখে এগিয়ে গিয়েছিল কাছে। বুনোহাঁসটিকে দেখেই বুঝতে পেরেছিল শিকারীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার দেহ। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে তাদের আস্তানায় নিয়ে গিয়েছিল তাকে।
আসলে সুদূর শীতের দেশ থেকে হাঁসের একটি দল টানা উড়ে এসেছিল সাঁতরাগাছির বিলে। সেখান থেকে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিল এই হাঁসটি। শিকারীর বন্দুক যে তাকে তাক করে আছে, সে বুঝতে পারেনি। তারই আঘাতে আহত হয়ে হাঁসটি এসে পড়েছিল এই বনগ্রামের পোলতার বাঁওড়ে।
পানকৌড়িদের টানা শুশ্রূষায় ধীরেধীরে সুস্থ হয়ে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় বুনোহাঁস।
পানকৌড়িদের সেবা আর ভালবাসার আশ্রয় না পেলে বুনোহাঁসটি কিছুতেই হয়তো বাঁচতে পারতো না। ওরা যেভাবে এই বিদেশী অচেনা হাঁসটিকে আগলে রেখে খাইয়ে দাইয়ে সুস্থ করে তুলেছিল তাতে অভিভূত ও কৃতজ্ঞ হয়ে বুনোহাঁসটি বারবার সজলচোখে ঋণ স্বীকার করেছিল। আর সঙ্গীদের মাঝে ফিরে যাবার আগে কথা দিয়ে গিয়েছিল আগামি শীতে এসে দেখা করে যাবে পানকৌড়িবন্ধুর সাথে। থাকবেও কিছুদিন ওদের সাথে।

পানকৌড়ি-বৌ হঠাৎ বলে ওঠে – ওই দেখ, দু’টো হাঁস যেন এদিকেই উড়ে আসছে। দেখ, দেখ।
পানকৌড়ি আকাশের দিকে তাকায়- তাই তো। কিন্তু দু’টো যে। তাহলে হয়তো আমাদের বন্ধু নয়। অন্য কোনো…
পানকৌড়ির কথা শেষ হবার আগেই ঝপাৎ করে জলে এসে পড়ে হাঁসদু’টি।

-আরে এই তো আমার বন্ধু! পানকৌড়ি আনন্দ আর উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারে। বলে ওঠে – বলেছিলাম না বন্ধু ঠিকই আসবে।
পানকৌড়ির গলা আর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বুলাতে বুলাতে বুনোহাঁসটি গদগদ গলায় বলে- বন্ধু, কেমন আছো তোমরা?
তারপর পানকৌড়ি-বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলে- একেবারে সোজা আমাদের দেশ থেকে এখানেই চলে এসেছি দিদি। আর সাথে করে নিয়ে এসেছি তোমার বোনকেও।

হাঁসিনী পানকৌড়ি-বৌয়ের পাশে যায়। বলে- তোমাদের দু’জনের কথা ও যে কতবার আমাকে বলেছে তার ইয়ত্বা নেই। আর সারাবছর ধরে আমিও অপেক্ষা করে ছিলাম, কবে তোমাদের দেখব।
-তুমি খুব ভাল বোন। এই যে এলে এতে আমি ভারি খুশি হয়েছি। তা গতবার তুমি এদেশে আসো নি? হাঁসভাই একাএকা বেরিয়ছিল?

হাঁসিনী বলে- এসেছিলাম। তবে পথের ক্লান্তিতে সেদিন আমার শরীরটা একটু ম্যাজমেজে ছিল বলে ওর সাথে বের হইনি। ও একাই একটু বেরিয়েছিল বাইরেটা দেখতে। তারপরেই বিপদ। আমি পথ চেয়েচেয়ে কেঁদেকেটে ক্লান্ত হয়ে ওর আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম শিকারীর বন্দুক হয়তো ওকে-… বলেই কেঁদে ফেলে হাঁসিনী। তারপর সকৃতজ্ঞ স্বরে বলে- দিদি, আপনারা আশ্রয় আর সেবা না দিলে….

পানকৌড়ি-বৌ হাঁসিনীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়। বলে- জানো, তোমাদের জন্য আমরা সেই শীতের শুরু থেকেই পথ চেয়ে আছি। কী যে আনন্দ হচ্ছে আজ!

পানকৌড়ি হাঁসিনীর দিকে তাকিয়ে বলে- জানতাম, আমাদের বন্ধু নিশ্চয়ই আসবে। কথার খেলাপ করবে না।
বুনোহাঁসের কন্ঠস্বরে কৃতজ্ঞতার সুর- দেশে ফিরে যাবার পর প্রতিমুহূর্তে তোমাদের মনে করেছি। তোমরা যে আমার জীবনদাতা। যতদিন বেঁচে থাকব, এভাবেই প্রতিশীতে আসব।
হাঁসিনী বলে- আর এখানেই থাকব সারাশীতকাল।
পানকৌড়ি-বৌ সহাস্যে বলে- কী মজা! কী আনন্দ! আমরা একসঙ্গে খাবো দাবো, খেলা করবো। গল্প করবো। চল তাহ’লে…..

চারজন ডুব-সাঁতারের খেলায় মেতে ওঠে।

অভিমান

সামনে বইখাতা খোলা। টিচার আসবেন পড়াতে। বিকেল পাঁচটায়। হোমওয়ার্কটা এখুনি করতে হবে। নইলে…

কিন্তু কিছুতেই ছোট্ট শ্রমণের মন বসতে চাইছে না পড়াতে। বারবার যেন আনমনা হয়ে যাচ্ছে।

বইয়ের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে অক্ষরগুলো যেন ওকে হা করে গিলতে আসছে।

হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে বাতাস আসে। ওর সারাগায়ে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়। ফিসফিস করে বলে- চলো ভাই, আমার সাথে। দু’জনে মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াবো। ইচ্ছেমত।

শ্রমণ বলল- না ভাই, আমার এখন পড়তে হবে। তুমি ফিরে যাও।

বাতাস বিষন্ন মনে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

শ্রমণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। বাগানের ফুলগুলো মিটিমিটি হাসে ওর দিকে চেয়ে।
বলে – এসো ভাই। আমাদের কাছে। রঙ আর ঘ্রাণ মাখিয়ে দেবো তোমার মনে।

মলিনমুখে শ্রমণ বলল- না গো, অমন করে আমাকে ডেকো না। আমার সময় নেই। এক্ষুনি স্যার আসবেন পড়াতে।

ফুলেরা ফ্যাকাসে পাপড়ি মেলে ওর দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।

পাশের গাছ থেকে কী যেন একটা পাখি ডেকে ওঠে- বন্ধু, চলে এসো বন্ধ ঘর থেকে বাইরে। আমরা একসাথে উড়বো। ঘুরবো। গান গাইবো।

শ্রমণের বুকের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। সত্যি যদি ও পাখি হতে পারতো। রাতদিন উড়ে ঘুরে বেড়াতে পারতো। বই পড়তে হতো না। মা বাবা স্যারদের চোখরাঙানি দেখতে হতো মোটেই। কী মজাই না হতো তাহ’লে!

কষ্ট বুকে চেপে শ্রমণ অভিমানি স্বরে বলে- তোমরা আর আমাকে ডাকবে না। আমি কোত্থায় যাবো না। কোত্থায় না।
বলেই ছলছল চোখে বইয়ের পাতা ওল্টাতে থাকে শ্রমণ।

দুঃখে-সুখে মিল-বুকে রই

গাছগাছালির ভীড়ে,
রহিম রাম আর আমার বাড়ি ইচ্ছামতির তীরে।
নদীর জলে মদির সুখে সব ভেদাভেদ ভুলে,
সাঁতার কাটি সাম্যগাঁথার ছন্দে তুফান তুলে।

ঈদের দাওয়াত পেয়ে,
আয়েস করে সেমাই পায়েস সবাই আসি খেয়ে।
সরস্বতী-দুর্গা-কালী- লক্ষ্মীপুজো এলে,
সবাই মিলে খুশির নীলে বেড়াই ডানা মেলে।

বিকেলবেলায় মাঠে,
খেলার মেলায় সুখের ভেলায় সবার সময় কাটে।
হারুণ-হাবিব-সমর-সুজয় দারুণ ভালবেসে,
একসাথে হাত হাতে রেখেই ইস্কুলে যায় হেসে।

অঞ্জলীদির ঘরে,
ছুম্মা-তৃষা-লায়লা-দিশা একসাথে বই পড়ে।
রিয়াজ অমল ফিরোজ কমল গাঁয়ের দোকানেতে,
চায়ের কাপে তুফান তোলে রাজনীতিতে মেতে।

করিমচাচার সাথে,
ঝাঁকামাথায় হারাণকাকা যান খামারে প্রাতে।
ধানের শীষে গানের শিসে প্রাণের প্রীতি-টানে,
দুঃখে-সুখে মিল-বুকে রই হিন্দু-মুসলমানে।

মুজিব-বন্দনা

মুজিব মানে জাতির পিতা – বন্ধু বাঙালীর,
আপোষবিহীন বিদ্রোহী এক বীর।
মুজিব মানে বাংলাদেশের চিরসবুজ নেতা,
স্বদেশপ্রেমিক – জন্ম স্বাধীনচেতা।

মুজিব মানে মায়ের হাসি- বাবার ভালবাসা,
ভাইয়ের -বোনের স্বপ্ন-আলো-আশা।
মুজিব মানে বাঁচতে শেখা- চলতে শেখা পথ,
ভালবেসে মরার সাহস সৎ।

মুজিব মানে জল থৈ থৈ নদীর কলতান,
দোয়েল-শ্যামা হাজার পাখির গান।
মুজিব মানে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের মাঠ,
শাপলা-ঝিল আর পদ্মদিঘির ঘাট।

মুজিব মানে শারদ-রাতের চাঁদের মধুর হাসি,
কবির কলম – কাব্য-ছড়ার রাশি।
মুজিব মানে কৃষাণবধুর নকসি করা কাঁথা,
বটের ছায়ায় প্রাণের বিছান পাতা।

মুজিব মানে সবুজ বুকে লাল সুরুজের মুখ,
পাখির ডানায় সার্বভৌম সুখ।
মুজিব মানে বাংলাভাষা- মুক্তগলার গান,
চিরঞ্জীবী মৃত্যুহীন এক প্রাণ।

মুজিব মানে আঁধার শেষে ভোরাই আলোর রবি,
মুজিব ছাড়া যায় না আঁকা বাংলাদেশের ছবি।

জীবনখানা নয়তো স্বাধীন

ইচ্ছেমতন ঘুরবো এবং
উড়বো পাখির মত,
পুড়বো একা
জ্বালিয়ে আপন ক্ষত।

কিন্তু আমি নইতো স্বাধীন
বাঁধহীনও নই মোটে,
ফিরতে হবে
সেই পরাধীন গোঠে।

পথ চেয়ে মা থাকেন চেয়ে
আঁকেন চোখে আলোই,
ফিরবে বাড়ি
ছেলে ভালোয় ভালোয়।

রোগশয্যায় শুয়ে বাবাও
বোজেন না দুই আঁখি,
খোঁজেন শুধু-
খোকন, এলি নাকি?

ছোট্টবোনের মনের কোণেও
কোন সে চপলতা?
ফিরলে বাড়ি
শান্ত মধুরতা।

কাজের ফাঁকে বউয়ের মনও
ক্ষণ গুনে যায় শুধু,
নেই কাছে সেই
জন্যে কি বুক ধুধু?

পড়ার মাঝে ছেলেও থাকে
মেলে চোখ আর কানও,
মনখানা তার
করছে যে আনচানও।

এমনি করে টানছে সবাই
বাঁধছে আমায় ডোরে,
একটুও নই
স্বাধীন আমি ওরে।

ঘুড়ির মত উড়ছি আমি
ঘুরছি বায়ুভরে,
লাটাই হাতে
ঘর বসে রয় ঘরে।

জীবনখানা নয় তো স্বাধীন
স্বাদহীন নয় তাতে,
বন্দি থাকি
ভালবাসার হাতে।

কেয়া সাধুখাঁ-র কবিতা

অকথ্য ভালোবাসা
কেয়া সাধুখাঁ

কিছু চাওয়া পাওয়া সবসময়
সম্পূর্ণ হয় না
তেমনি কিছু ভালোবাসা
অকথ্য থেকে যায়
নির্বাক খেলায়
জড়িয়ে গিয়েছিলাম
দেখেছিলাম একটা
আশা বাঁধা স্বপ্ন
যেখানে শুধু
তুই আর আমি
ভুল ভেবেছিলাম
ভালোবাসার কথা
জড়িয়ে গিয়েছিলাম
অভিনয় ভালোবাসায়
ভুলে গিয়েছিলাম
ভালোবাসা মনের মিলন নয়
মিলন শুধু সৌন্দর্যের
সবই বেশ আছে
সাজানো গোছানো বিশ্বটা
শুধু কাঁচের টুকরো মন এখন
যদি নাই ভালোবাসটিস
বলে দিতে পারতিস
কেন ঠেলে দিলি
অগ্নিশালায়
পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি
মনের গভীর তল আজ
নীচে নেমে গেছে
নিঝুম সমুদ্র
চাইলেও পারছি না
হাত বাড়িয়ে তোকে ছুঁতে
আপসোস থেকেই গেল
আজও পেলাম না কাউকে
যে শুধু আমাকেই
ভালোবাসবে।।

দিগন্ত পালিত-এর গল্প

রোগী
দিগন্ত পালিত

মাঝপথেই গাড়িটা খারাপ হয়ে গেল। কলকাতা যাচ্ছিলাম। গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। ড্রাইভার সব চেক করার পর বলে ঠিক করতে দেড় – দুই ঘন্টা লাগবে। জায়গাটা সম্পূর্ণ শুনশান। বাড়িঘর কিছুই চোখে পড়ছে না। শুধুমাত্র কিছু গাছপালা দেখা যাচ্ছে।
এমন সময় একটা ছেলে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি ডাক্তার ?
আমি বলি, কী করে বুঝলে?
– তোমার গলায় ঝোলানো যন্ত্রটা দেখে।
– ঠিক ধরেছ।
– একবার আমাদের বাড়ি চলো। আমার মার খুব শরীর খারাপ।
-ডাক্তার দেখাওনি?
– এখানে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। রেশম ডাঙ্গার কাছাকাছি একটা ডাক্তার আছে। কিন্তু আমরা খুব গরীব। আমাদের কাছে ডাক্তার দেখানোর মত টাকা নেই। যাবে?
ভাবলাম, গাড়ি ঠিক করতে তো এখনো দেরি আছে। তাহলে ঘুরেই আসি। যদি কারোর উপকারে লাগি।
জিজ্ঞাসা করি, তোমার বাড়ি কোথায়?
-সুবলপুর ইটভাটার পিছন দিকে আমার বাড়ি।
– চলো, ঘুরে আসি।
ছেলেটাকে এবার ভালোভাবে দেখি। দেখে মনে হয় দশ-বারো বছরের হবে। তার জামা নোংরা, পরনে একটা হাফপ্যান্ট। পা খালি। তবে তার দৃষ্টি খুবই উজ্জ্বল।

ইটভাটা পার করে পিছন দিকে যেতেই একটা ভাঙাচোরা বাড়ি চোখে পড়ল। ছেলেটা বলল, এটাই আমাদের বাড়ি।
বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। ভিতরে জিনিসপত্র কিছুই নেই। ফাঁকা বললেই চলে। পাশের ঘরে বিছানার ওপর শুয়ে আছে এক মহিলা। ওনার দুটি চোখ বোজা। বুঝতে পারলাম ইনি হলেন ছেলেটির মা।
ছেলেটা তার মাকে দুই – তিনবার ডাকতেই তার মা চোখ খুললো।
আমি থার্মোমিটারে তাপমাত্রা চেক করলাম। একশো চার ডিগ্রি জ্বর। কিন্তু ইনি কিভাবে চুপচাপ শুয়ে আছে সেটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়।
ছেলেটাকে আশ্বাস দিলাম, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এই জ্বরের জন্য উপযুক্ত ওষুধ আমার কাছে ছিল না। সব ছিল আমার গাড়ির মধ্যে। ছেলেটাকে বললাম, আমার গাড়িতে ওষুধ আছে। তুমি তোমার মায়ের কাছে থাকো। আমি নিয়ে আসছি।
বাড়ি থেকে বেরোলাম। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে গাড়ির দিকে গেলাম। ওখানে পৌছেই গাড়ির ভেতর থেকে ওষুধের বাক্স টা নিয়ে আবার ছেলেটার বাড়িতে ফিরে এলাম।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে দেখলাম ছেলেটা নেই। এমনকি তাঁর মা-ও বিছানার ওপর শুয়ে নেই। ফলে হতভম্ব হয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম দু তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
একজন জিজ্ঞাসা করল, কাউকে কি খুঁজছেন?
আমি বললাম, হ্যাঁ, এখানে আমি একজন রোগী দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু….
-তা কি করে হয় দাদা। এই বাড়িটা তো বহুদিন আগে থেকেই ফাঁকা পড়ে আছে। এখানে একজন মহিলা ও তার ছেলে থাকত। হঠাৎ ওই মহিলার প্রচন্ড জ্বর হয়। আমরা ডাক্তার ডাকার আগেই তিনি মারা যান। আর তার ছেলে মায়ের শোকে থাকতে না পেরে কড়িকাঠে ঝুলে পড়ে। কি বলব বলুন ….
সব কথা শোনার পর আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি দ্রুত হাঁটতে শুরু করি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ির কাছে পৌঁছতে হবে।

সৌম্যজিৎ সাধুখাঁ-র কবিতা

স্বপ্ন
সৌম্যজিৎ সাধুখাঁ (নবম শ্রেনি)

স্বপ্ন মানুষকে জিততে শেখায়
স্বপ্ন মানুষকে বাঁচাতে শেখায়
জাগিয়ে তোলে নতুন কিছু
গড়ে তোলে উদ্দীপনা |

আবার স্বপ্ন মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়
হ্যা সত্যি,
স্বপ্ন আমি দেখতে শিখেছি
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আমি

আমি জানি,একদিন এই স্বপ্ন-ই
গড়ে দেবে আমার ভবিষ‍্যৎ
সমাজের বুকে আমি দাঁড়াবো
মাথা তুলে,
এই স্বপ্নেরই হাত ধরে |

দিগন্ত পালিত-এর গল্প

ট্যাংরাকুমার
দিগন্ত পালিত (নবম শ্রেণি)

এক সুন্দর বিকাল। সুবোধ বিমলদার চায়ের দোকানে এসে বসল। চা খাওয়া হলে সে বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। আজ তার পকেটে অনেক টাকা। এমনকি যাতায়াতের খরচাও সে বহন করবে। তাই তার মন আজ আনন্দে পরিপূর্ণ।

সুবোধ বিমলদার কাছে গিয়ে বলে, ও দাদা! এক কাপ কড়া করে দুধ চা বানাও তো। একটু তাড়াতাড়ি দাও। তাড়া আছে।

বিমলদা বলে, একটুখানি বোস। এই চা টা হয়ে গেলে তোর জন্য চাপাব।

সুবোধ বসে থাকে। শরৎকাল বলে আকাশে তুলোর মতো মেঘ ভাসছে। বিমলদার চায়ের দোকানের পিছনে সাদা কাশফুলের বাগান। একবার তাকালে আর দৃষ্টি ফেরানো যাবে না, এতই সুন্দর।

এমন সময় পাশ থেকে কে বলল, দাদা, একটু সরে বসবেন ?

সুবোধ সরে বসে। একজন লোক মৃদু হেসে তার পাশে বসল।

লোকটি বলল, দাদা কেমন আছেন? বহুদিন পরে আপনাকে দেখলাম।

সুবোধ লোকটিকে আগে কখনও দেখেনি। তাই একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল, আপনি আমাকে কবে দেখলেন? আমি তো আপনাকে কখনও দেখিনি।

— আপনি না-ও দেখতে পারেন তবে আমি আপনাকে দেখেছি। ওই তো সেদিন আপনি কাকার বাড়িতে যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে গেলেন। খুব চোটও তো পেলেন। আপনার কাকা আর তার ছেলে ডাম্বু এসে আপনাকে ধরে বাড়ি নিয়ে গেল।

– মানে আপনি সেদিন ওখানে ছিলেন ?

— ছিলাম বইকি।

লোকটা এক বিন্দুও ভুল বলেনি। সত্যিই সে কাকার বাড়ি যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে আছাড় খেয়েছিল। সুবোধ একটু লজ্জা পেল। লোকটা সুবোধের মনের অবস্থা বুঝে বলল, লজ্জা পাবেন না। এরকম তো হতেই পারে।

এসময় বিমলদা চা নিয়ে এল। পাশের লোকটাও এক কাপ চা নিল।

সুবোধ চায়ে চুমুক দিয়ে লোকটিকে বলে , আপনার পরিচয় টা তো বললেন না?

লোকটি বলল, আমার নাম ট্যাংরাকুমার পাল। আমি থাকি সোনামুখী পাড়াতে। ওখানে গিয়ে আমার নাম বললে যে কেউ চিনবে। ট্যাংরাকুমার চায়ে চুমুক দেয়। সুবোধ বিমলদাকে চায়ের দাম দেয়। কিন্তু টাকা ফেরত নেবার সময় একটা কয়েন নীচে পড়ে যায়।
ট্যাংরাকুমার বলে, আমি তুলে দিচ্ছি।

সুবোধ দ্যাখে ট্যাংরাকুমার তার মানিব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

সুবোধ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, আমার মানিব্যাগ ….

— আপনি যখন বিমলদাকে টাকা মেটাচ্ছিলেন তখন এই মানিব্যাগ হয়তো আপনার পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল।

— আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি দেখতে না পেলে যে আমার কি ক্ষতি হয়ে যেত…

সুবোধকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ট্যাংরাকুমার বলে ওঠে, না না, এর আর এমন কী।

ট্যাংরাকুমার বিমলদাকে চায়ের দাম দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সুবোধ মনেমনে ট্যাংরাকে আবারও ধন্যবাদ জানালো। সিনেমা শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই সুবোধ হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

হলের কাছাকাছি একটা দোকান দেখে সুবোধ ভাবল, কয়েক প্যাকেট চানাচুর কিনে নেবে। সে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। কিন্তু মানিব্যাগ খুলে সে দেখে ওর মধ্যে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। কাগজে লেখা ছিল…

চারটে নোট আমি নিলাম। তবে এটা আমি নিজের জন্যে নিচ্ছি না। এই লকডাউনে সোনামুখী পাড়ার বহু মানুষ অর্থাভাবে খেতে পাচ্ছে না। তাই এই টাকায় আমি তাদের আজকে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আপনি এখানে এসে খোঁজ নিয়ে যেতে পারেন।

ইতি
ট্যাংরাকুমার

লাগ ভেল্কি লাগ -ছড়ার বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া

শংকর দেবনাথের ছড়ার বই “লাগ ভেল্কি লাগ”-এর পাঠ প্রতিক্রিয়া
উত্তমকুমার দেবনাথ

একটি বই। কারো কাছে তা একটি মাত্র সংখ‍্যা। কিন্তু যিনি তার স্রষ্টা, তার কাছে একটি বই মানে তার স্বপ্ন, তার ভালোবাসা, তার আবেগ, তার সন্তান। তেমনই সন্তানসম স্নেহ দিয়ে, হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে দিয়ে একের পর এক ছড়া, কবিতা, শিশুতোষ গল্প লিখে চলেছেন শংকর দেবনাথ। নিজেকে শিশু সাহিত‍্যিক, শিশুদের কবি তথা ছড়াকার হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ‍্যবোধ করা এই লেখক শিশু সাহিত‍্যকে প্রাধান্য দিয়ে নিরলশ ভাবে কাজ করে চলেছেন। কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা ও কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত‍্য সম্মানে ভূষিত শংকর দেবনাথের অসাধারণ একটি সৃষ্টি ছড়ার বই ‘লাগ ভেল্কি লাগ’।

ছড়ার সকল নিয়ম মেনে তবেই ছড়া লেখেন তিনি। নিয়ম ভাঙলেও অত‍্যন্ত দক্ষতার সাথে ভাঙেন তিনি যা হয়ে ওঠে অনন‍্য। ছড়াকার বলেন ও বিশ্বাস করেন, “নিয়ম জেনেই তবে নিয়ম ভাঙতে হয়”। সেসব নিয়ম কানুন আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের অনুপোযোগী বিধায় সে আলোচনায় যাবার ধৃষ্টতা দেখানো সমীচীন হবে না। আজকাল খুব বেশি শিশুতোষ ছড়া নিয়ে কাজ লক্ষ‍্য করা যায় না। সেদিক থেকে এ সময়ে এ রকম তুখোড় একজন ছড়াকার পেয়ে বাংলা শিশু সাহিত্য আর একটু সমৃদ্ধ হবে এ আশা ব‍্যক্ত করা যায়। বইটি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে এবং মনে হয়েছে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত এমন ভালো বইয়ের কথা যাতে পাঠক উপকৃত হতে পারে।

সমালোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই। এটা দক্ষ পাঠকগণ করবেন। আমি আমার ভালো লাগা দেখতে পাই বইয়ের শুরুতে উৎসর্গ পর্বে। ছড়াকার তার আবেগ ঢেলেছেন,
সুজন স্বজন এরাই ক’জন
শ’জন হ’য়ে আমার-
জড়িয়ে থাকে ভরিয়ে রাখে
পদ‍্য-ছড়ার খামার।

নাম ভূমিকার ছড়া ‘লাগ ভেল্কি লাগ’ ছড়ায় যেমন ফুটে উঠেছে সব শিশুর মনের কথা,
স্কুলগুলো ঠিক ভুল করে দিক
সব দরজায় তালা-
যাক মিলিয়ে ঝিল মিলিয়ে
পাশ ও ফেলের জ্বালা।

শিশুর মন তাধিন ধিন করে নাচতে নাচতেই যেমন বলে ওঠে,
ফুলের ঘ্রাণে পাখির গানে
মাতুক নতুন ভোর-
ঘুম কাতুরে সব বুড়োদের
ভাঙুক ঘুমের ঘোর।

‘যেই এঁকেছি’ ছড়ায় যেন ছড়ায় ছড়ায় এক একটি ছবি ফুটে ওঠে মানসপটে,
গাছ এঁকেছি ফুল এঁকেছি
লাল সবুজের রং মেখেছি
এবং ডালে পাখি-
আকাশ জুড়ে নীল ঢেলেছি
সূর্যিমামার দ্বীপ জ্বেলেছি
সঙ্গে নদীও আঁকি।

একে একে ‘আমার বাবা, কী যে হই, পাখির ছবি, পড়বো ছড়ার বই, ভাল্লাগে না’ এমন ছেষট্টিটি ছড়ার গাথুনিতে মোড়া হয়েছে বইটি। প্রত‍্যেকটি ছড়ায় ছড়াগুণ, মান তথা খুদে পাঠক মন জয় করে নেবার দাবী রাখে। শিশু মনন গঠনেও রাখবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। নিছকই ছড়াকে ভালোবাসলে বা ছড়ারস আস্বাদন করতে চাইলেও বইটি একবার পড়া উচিত।

ছড়াকারের ভাষায় ছড়িয়ে পড়ুক সৌহার্দ্যের গান, শুদ্ধতার আহবান,
তেপান্তরের মাঠও দিলাম
আর কী বলো চাও?
এবার আমায় তোমার প্রাণের
বন্ধু করে নাও।
(বন্ধু করে নাও)
কিংবা,
তাই বলি মা-মর্ত‍্যবাসীর
মন-কালিমা নেশে
যাস্ মা এবার এসে
মানুষ হয়ে উঠুক সবাই
এই অসুরের দেশে।
(মানুষ হয়ে উঠুক সবাই)

ধন্যবাদ জানাই কবি, শিশু সাহিত‍্যিক, ছড়াকার শংকর দেবনাথকে এত সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দেবার জন‍্য। সাধুবাদ জানাই অন‍্যান‍্য লেখার পাশাপাশি শিশু সাহিত‍্য সমৃদ্ধি ও সংরক্ষণকল্পে আপনার লেখা ছাড়াও সম্পাদনাসহ অন‍্যান‍্য প্রচেষ্টাকে।

শেষ করি ছড়াকারের সমাপনী সুর দিয়ে,
সকল জীবন ধকলবিহীন নকলবিহীন সুখে-
শান্তিতে থাক- ক্লান্তিবিহীন ভ্রান্তিবিহীন বুকে।

কিচ্ছু ভালো লাগছে না

কিচ্ছু ভাল লাগছে না আর
কিচ্ছু ভাল লাগছে না,
মন খারাপের ক্ষণটা যেন
কোনোমতেই ভাগছে না।

চোখের রঙে সংগোপনে
স্বপ্ন-ছবি আঁকছে না।
রূপকথারা চুপ হলো কি?
অরূপলোকে ডাকছে না!

হৃদয়পুর আজ নিদয় বুঝি?
যাচ্ছে তাকে কই চেনা?
বুকের ভেতর সুখের ধারায়
উছল নদী বইছে না।

গন্ধ মেখে ছন্দরা আর
আগের মত আসছে না,
নৃত্য-তালে প্রাণের ডালে
ছড়ার ফুলও হাসছে না।

খুশহারা এই দুঃসময়ে
ধুস, কেন সুর জাগছে না!
কিচ্ছু ভাল লাগছে না আর
কিচ্ছু ভাল লাগছে না।

গুহাবাসী

আমরা কয়টি পরাণী, ভয়টি
জড়িয়ে ছোট্ট
দু’হাতে-
গৃহমাঝে নয় আছি মনে হয়
আদিমযুগের
গুহাতে।

দুরুদুরু মনে প্রতি ক্ষণেক্ষণে
হানা দেয় ভীতি-
ভাব এসে-
বাইরে করোনা করে আনাগোনা
বের হলে গিলে
খাবে সে।

শুধু চারপাশে নীরবতা ভাসে
নিবিয়ে উছল
সুখ-আলো-
বন্ধু স্বজন যা ছিল ক’জন
সকলে কোথায়
লুকালো!

কিছুটা খাবার গুছিয়ে আবার
আদিম মানুষ
যেভাবে,
ফিরতো গুহায় সাবধানি পা’য়
ফিরে আসি নিতি
সেভাবে।

ভয়েভয়ে বাঁচি- মনে হয় আছি
পাহাড়-গুহায়
কী বনে?
পৃথিবী আবার ফিরে গেল তার
নাকি সে আদিম
জীবনে?

ভাষার এ মাস

ভাষার এ’ মাস আশার এ’মাস
ভালবাসার ফালগুন এ’-
অ আ ক খ-র সঙ্গে খেলি
রঙ্গে নাচি তাল গুনে।

মায়ের এ’ মাস ভা’য়ের এ’ মাস
শিমূল-পলাশ অঙ্গনে-
ফাগের রাগে রাঙিয়ে হৃদয়
বঙ্গজনের সঙ্গ নে।

স্মৃতির মাস এ’ প্রীতির মাস এ’
গীতির মধু-সুর ভরা-
সঞ্জীবনী মন্ত্র শেখায়
গন্ধ লেখায় পূর্বরা।

প্রাণের এ’ মাস ত্রাণের এ’ মাস
স্বপ্ন-স্নানের ছন্দে রে-
পরদেশিদের ঘর ছেড়ে সব
অ আ ক খ-য় মন দে রে।

শীতের পদ্য

শীতের পদ্য লিখব অদ্য
ইচ্ছে দিচ্ছে তাড়া,
কিন্তু কী লিখি? শুধু চারদিকই
কু-আশার কুয়াশারা।

ভাব জড়োসড়ো কাঁপে থরোথরো
ওম খোঁজে একটুকু,
হিমে যেন শব শব্দ নীরব
মুখখানা দুখুদুখু।

লেপের তলায় ছন্দরা হায়
শুয়ে আছে জবুথবু,
খাতাপেন হাতে এই শীতরাতে
পদ্য লিখবো তবু!

শাল দিয়ে মুড়ি সহসা কে বুড়ি
দাঁড়ায় সামনে এসে,
থালাভরা পিঠে তার হাতটিতে
বলে হেসে ভালবেসে-

যতখুশি খা না, আরো আছে নানা
খাবার আমার কাছে,
খেজুরের রস ভাঁড় পাঁচ-দশ
নলেনের গুড়ও আছে।

মজা করে খাবি তবেই তো পাবি
শীতের আমেজখানা,
ছন্দ নাচবে ভাবেরা হাসবে
আসবে শব্দ নানা।

লিখবি তখন যতখুশি মন
শীতের পদ্য-ছড়া,
এইকথা বলে বুড়ি যায় চলে
বাইরে বেরিয়ে ত্বরা।

পিঠেপুলি দেখে জিভে লালা মেখে
ছন্দ ভাব ও ভাষা,
শীতটিত ভুলে নাচে হেলে দুলে
আহা মরি খাসা খাসা!

খেয়ে পিঠেপুলি ডায়রিটা খুলি।
ভাব হাসে ফিকফিকই,
ছন্দে গন্ধে পরমানন্দে
শীতের পদ্য লিখি।