জ্যামিতি বুঝিনি বলে
আমি বারবার
ভুল করে ফেলি পথ
ঠিকানা তোমার
শংকর দেবনাথ এর সকল পোস্ট
আমার বাড়ি…
পরমাণুগল্পঃ রতি
ফুল। মুখে হাসি। বুকে মধু।
মধুকর। মুখে বিষ। বুকে খিদে।
ফুল ডাকে। রঙিন ইশারায়।
মধুকর দিশা পায়। গুন গুন। খুন শোনায়।
হুলের প্রেমে ফুলের হাসি ঝরে। পাপড়ি বাসি হয়।
ফুল মরে। কষ্টরতির পরিণতিতে।
গাছ ফলবতী হয়।
মগ্ন-পদ্য
মগ্ন_পদ্য
বেভুল সকাল। আলোকে লাল।
ভোরাই মউল হাওয়া।
কোথায় পাখি? আয় না ডাকি।
ওড়াই প্রাণের গাওয়া।
উদাস দুপুর। হৃদয় উপুড়।
প্রীতির পাতায় ছাওয়া।
কোথায় পুকুর? ঝাপুর-ঝুপুর।
স্মৃতির জলে নাওয়া।
বাউল বিকেল। বক্ষে কী খেল!
নেশায় নাচে দাওয়া।
কোথায় পাগল? ভাঙরে আগল।
মেশাই চাওয়া-পাওয়া।
রূপকথা রাত। বাড়ায় দু’হাত।
স্বপ্ন-তরী বাওয়া।
কোথায় অরূপ? ধর না স্বরূপ।
মগ্ন-আলোয় নাওয়া।
হাইকু ছড়া -২
পক্ষীরা ডাকে
ভোরে উঠে সজোরে
কাকে গো কাকে?
গম্ভীর স্বরে
মেঘেরা ডাকে কাকে
আকাশ ‘পরে?
নদীতে বান
কাকে কাছে পেতে সে
ডাকে আপ্রাণ?
শুধু তো জানি
খিদেতে পেট ডাকে
একটুখানি।
হাইকু ছড়া
হাই কু কুকু-
আছে বুকে ছন্দের
ধুকু ও পুকু।
হাই কু কুরে-
গন্ধেরা চারপাশে
বেড়াচ্ছে ঘুরে।
কু কু হাই রে-
পাঁচে-সাতে-পাঁচেতে
নাই নাই রে।
হাইকু হাই-
কড়াচালে ছড়াকে
ছড়াতে চাই।
দুই শালিকের গল্প
বনগাঁ লিটল ম্যাগাজিন মেলা-২০১৯ এ সময়ের মুখ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হল শংকর দেবনাথের ছোটদের উপযোগি গল্পের বই ” দুই শালিকের গল্প”
ছড়ার খাতা খুলি
রাত্রে ফিরে বাসায়
একটু ওমের আশায়
লেপ দিয়েছি মুড়ি-
হঠাৎ আসে ধেয়ে
আমার পাশে কে এ?
থুত্থুড়ি এক বুড়ি।
খুকখুকিয়ে কেশে
বলল হেসে শেষে
কথার কাঁপন তুলে-
ও ছড়াকার তুমি
দিচ্ছো কেন ঘুমই
পদ্য লেখা ভূলে?
অন্যঋতু নিয়ে
খুব করে তো ইয়ে
শব্দে ভরো খাতা-
আমার বেলায় তবে
এমন কেন হবে?
একটু ঘামাও মাথা।
আমার ঝোলা খুলি
দিচ্ছি পিঠে- পুলি
মিষ্টি খেঁজুর রসও-
সব্জি-শাকের আটি
দিচ্ছি সতেজ খাঁটি
হও না তবু বশও।
চড়ুইভাতির বাঁশি
ফুলের হাসা- হাসি
দিচ্ছি কত আরো-
নলেনগুড়ের ঘ্রাণে
ছন্দে তালে গানে
লিখতে কিছু পারো!
শীতের আমেজ মেখে
গা চাদরে ঢেকে
পায়েস খেতে খেতে-
চুকিৎকিতের সুরে
হৃদয় রসে পুরে
ছড়ায় ওঠো মেতে।
রাত পোহালো যেই
মা এনে দেন সেই
সামনে পিঠেপুলি-
শীতের অনু- রোধে
ভোরের সোনারোদে
ছড়ার খাতা খুলি।
ছড়ায় ছড়ায়
এই শীতে
তোমরা তো ওম্ রাতে
নিয়ে শোও স্বস্তিতে-
এই শীতে নেই ঘুম
যারা আছে বস্তিতে।
ছেঁড়াকাঁথা কম্বল
সম্বল রাত্তিরে-
ভাঙা ঘরে শীতে মরে
হাতে বেঁধে হাতটিরে।
পিঠে পুলি মিঠে রসে
নলেনের সন্দেশে,
তোমরা তো খুবই মাতো
পিকনিক গন্ধে সে।
পিঠে নয়- বুকে-পিঠে
আর খোলা কানডাতে-
ওরা চায় শুধু হায়
উষ্ণতা- ঠাণ্ডাতে।
নীরেন্দ্র-বন্দনা

রাজা রে তোর
কাপড় কোথায়?
প্রশ্ন ছিল শিশুর-
মনন জুড়ে
স্বপ্ন ছিল
কলিকাতার যিশুর।
সেই কবি আজ
নেই শরীরে
এই আমাদের পাশে-
রবেন তিনি
কাব্য-ছড়ায়
আর কবিতার ক্লাসে।
বড়দিনের শুভেচ্ছা
আঁধার পথে বাঁধার পথে
আলোর শিশু ভালোর শিশু
যিশু
ভুলের দেশে ফুলের বেশে
ঘ্রাণের শিশু প্রাণের শিশু
যিশু।
দুখের ঘরে সুখের স্বরে
হাসার শিশু আশার শিশু
যিশু-
ঘৃণার পুরে বীণার সুরে
গানের শিশু ত্রাণের শিশু
যিশু।
ভূত আছে ভূত নেই
কেউ বলে – ভূত নেই- ধুৎ ধুৎ আজ-
ভয় পাওয়া নয় মোটে শোভনীয় কাজ।
শুধু শুনে ভয় বুনে চলে মনে যারা-
হয় খল, দূর্বল- নয় ভীরু তারা।
কেউ বলে ভূত আছে- খুঁতখুঁত রাখো-
ক্ষমা পাবে অমারাতে যদি রাম ডাকো।
শবগুলো ভূত সব – রাত্তিরে ঘোরে-
একা পেলে দেখা দেয় নানারূপ ধরে।
ভূত আছে – ভূত নেই – এই নিয়ে ভারি-
দুইদলে শুধু চলে তক্ক ও আড়ি।
ভয়টুকু নয় মিছে- মনে থাকে বসে।
জুৎ পেলে ভূত সেজে বের হয় গো সে।
পরাণদাদার গল্প ৯
হাটের থেকে সেদিন রাতে একটা ইলিশ কিনে-
আঁধার পথের ধাঁধার ভেতর চলেছেন পথ চিনে।
হঠাৎ কে সে ডাকল এসে, পরাণদাদা থেমে-
ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে দেখে ভয়েই ওঠেন ঘেমে।
বাড়িয়ে দু’হাত দাঁড়িয়ে ভূতে বলল নেকো স্বরে-
“মাছটা দিয়ে পরাণ নিয়ে যা চলে তুই ঘরে।
অনেকদিনই খাই নি তো মাছ- পাইনি সুযোগ মোটে-
আজকে ইলিশ মাছকে খাব” – বলেই হেসে ওঠে।
ভয় পেলে ক্ষয়- সাহসে জয়- ভেবেই পরাণদাদা-
বলেন – “আমি দেখছি- তুমি সত্যি বড়ই হাঁদা।
ইচ্ছে তোমায় দিচ্ছে তাড়া একটু ইলিশ খাবে-
বলছি সাঁচা – খাইলে কাঁচা স্বাদ কি ভাল পাবে?
ছলছি না গো – বলছি শোনো- চলো আমার সাথে-
সত্যি তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়াবো আজ রাতে।”
ভাজির লোভে রাজি ভূতে দাদার পিছে হাটে-
বাড়ি এসেই বলেন হেসেই – “দাঁড়াও উঠোনটাতে।”
বলেই দাদা গেলেন চলে ঘরের ভেতর ধীরে-
মশাল হাতে উঠোনটাতে আবার এলেন ফিরে।
“মাছ খাবি আয়” বলেই দাদায় মশাল উঁচু ক’রে-
দাঁত খেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেন “ভাজবো তো আজ তোরে।”
“ওরে বাবা মরেই যাবো”- বলেই পরাণ-পণে-
ভূত পালালো বেজুত বুঝে দুঃখভরা মনে।
(অল্প আলোয় গল্প বলেন পরাণদাদা রাতে-
গবাই-ভবাই পাড়ার সবাই ভয়ের মজায় মাতে।)
সারাজীবন খাবেন বসে
সারাজীবন খাবেন বসে
পাবেন আরাম ভারি-
যাচ্ছে পাড়ায় ফেরিওয়ালা
হাঁকিয়ে গলা তারই।
কৌতুহলে ঘরের বউ আর
আবালবৃদ্ধ সবে-
প্রশ্ন করে- ক্যামনে গো রে
এমনটি ভাই হবে?
ঘাড় নাড়িয়ে মুখ বাড়িয়ে
চোখের কোণে হেসে-
ফেরিওয়ালা একটু দেরি
করেই বলে শেষে।
বুলিটি নয় মোটেই ফাঁকা,
একশ টাকা দিয়ে-
সারাজীবন খাবেন বসে
পিঁড়িটি যান নিয়ে।