শংকর দেবনাথ এর সকল পোস্ট

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

আমার বাবা

আমার বাবা যখন ডাকেন-খোকা!
গাছের ডালে নাচের তালে
হাসে ফুলের থোকা।

যখন বলেন আদর করে – শোনো,
সাগর-নদী ডাগর তাকায়,
এবং পাহাড়, বনও।

হাতটা ধরে বললে বাবা- চলো,
আঁখির কোণে পাখির মনের
স্বপ্ন টলোমলো।

আছেন বাবা আমার কাছে কাছে-
ভয়গুলো সব শব ভয়েতেই
সাহস বুকে নাচে।

খিদে ও জীবন

খিদের ভেতর
লুকিয়ে থাকে জীবন-
জীবন থাকে
ছোট্ট একটা ঘরে-

ঘরের মাঝে
একটু আলো হাওয়া-
হাওয়ায় থাকে
গন্ধরাজের ঘ্রাণ-

ঘ্রাণের সাথে
জড়িয়ে থাকে প্রেম-
প্রেমের গোলা
ভর্তি প্রাণের বীজে-

বীজের বুকে
ঘুমিয়ে থাকে সবুজ-
সবুজ মেখে
রঙিন- সরস জীবন।

জন-শঙ্কা

জন যদি হয় সংখ্যা শৃুধুই
শঙ্কা তাতে বাড়ে-
বোঝা হয়ে পৃথিবী মা’র
চেপেই থাকে ঘাড়ে।

টানাটানির হানাহানির
স্বার্থ লোভের বিষে-
সুস্থ মনও দুঃস্থ হয়ে
হারায় পথের দিশে।

জন তখন আর সম্পদ নয়,
জনপদ হয় ভারি,
বিশ্ব হাঁটে নিঃস্ব পথে-
ধ্বংস অনিবারই।

সন্ত্রাসে মন ত্রাসেই কাঁপে
শান্তিরা যায় ভেগে-
এই পৃথিবী সেই পথে কি
যাচ্ছে দ্রুতবেগে?

গাই-বাছুর

মায়ের ডাক শুনেই রনি তিড়িং বিড়িং করে তিন লাফ দিয়ে ছুটে আসে। মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। আদর খায়।

রনির প্রতিদিন বিকেলটা খুব ভাল কাটে। পাড়ার খেলার মাঠে ছুটোছুটি করে। ইচ্ছেমত খেলেধুলে বেড়ায়। যখন ইচ্ছে করে মায়ের কাছে ছুটে আসতে পারে।

ওরা গেরস্থবাড়ির গাই-বাছুর। গিন্নিমা আদর করে বাছুরটিকে রনি বলে ডাকেন। ভালবেসে গলায় ঘুঙুর পরিয়ে দিয়েছেন তার।

কত্তাবাবা রোজ বিকেলে এই মাঠে রনির মাকে বেঁধে রেখে যান। বাছুরটি মানে রনিও মায়ের সাথে মাঠে আসে। স্বাধীনভাবে ঘোরে। গলায় তখন তার কোনো দড়ির বাঁধন থাকেনা।

রনির হঠাৎ খিদে পেয়ে যায়। মায়ের পেটের নিচে মুখ চালিয়ে সজোরে গুতো মারে পালানে। বাট ধরে আর আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে। মা তার সন্তানের সারা শরীর চেটেচেটে আদরে সোহাগে ভরে দেয়।

-মা, এভাবে যদি সারাক্ষণ তোমাকে পেতাম-
-তাহলে?
– তাহলে আমার আর কোনো কষ্ট থাকতো না। কিন্তু মা বাড়ি গেলেই তো কত্তাবাবা তোমাকে আর আমাকে আলাদা করে দেবে। সারারাত তোমাকে ছেড়ে একাএকা থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়।
-আমারও কি ভাল লাগে তোকে ছেড়ে থাকতে?
-ওরা খুব খারাপ। আমার খাবার ওরা জোর করে কেড়ে নিয়ে যায়।
মা নিরুত্তর থাকে।
একটু পরে রনি বলে- আমার খুব খিদে পায়। সারারাত একটুও দুধ খেতে পাইনে তো। পেট একেবারে পিঠের সাথে লেগে যায়। তারপর সকালে যখন আমাকে ছেড়ে দেয় তখন একদৌড়ে চলে আসি তোমার কাছে। বাটে মুখ দিই। তুমি দুধের ধারা যেই দিতে শুরু কর, অমনি ওরা আমাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর সবটুকু দুধ নিয়ে যায়। তখন যে আমার কি কষ্ট হয়। খুব রাগ হয় ওদের উপর।
– কি করবে বাছা। ওরা আমাদের যত্ন করে। ভাল ভাল খাবার খেতে দেয়। বিনিময়ে ওই দুধটাই তো ওরা চায়।
– আমার জন্য একটুও দুধ রাখে না বাটে। ওরা ভারি লোভি। স্বার্থপর আর নিষ্ঠুর।
– দুঃখ কোরো না, একটু বড় হলেই তুমি খড় বিচুলি ঘাস খেতে শিখবে। তখন আর খিদের কষ্ট পেতে হবে না।

রনি আর কোনো কথা বলে না। বুঝতে পারে এমন জীবনটাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে। মনমরা হয়ে মায়ের পাশে চুপচাপ শুয়ে থাকে।

বেলা পড়ে আসে। কত্তাবাবা এসে ওদের বাড়ি নিয়ে যায়। গোয়ালে মাকে বেঁধে রাখে। তারপর রনির দিকে হাত বাড়ায় । আদর করে। রনির অসহ্য লাগে এই ভালবাসা। দুঃখ ক্ষোভে তার ছোট্ট বুকটা যেন দুমড়ে মুষড়ে যেতে থাকে। ও জানে প্রতিদিনের মত ভালবাসার ছল করে গলায় পরিয়ে দেবে একগাছা লোভের দড়ি। তারপর টেনে হেঁচড়ে আলাদা করে দেবে মায়ের কাছ থেকে।

আজও তার ব্যতিক্রম হল না গলায় দড়ি দিয়ে অন্যঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রনিকে।
মা একবার হাম্বা করে ডাক দেয়।

নিরুপায় রনি ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকায়।

রোদেলা শব্দেরা

আমাদের বাসা শুধু ভালবাসা নয় –
মেলে দেওয়া শাড়ির মতন
কিছুু দায় ঝুলে থাকে ঘরে
কিছুটা শেকলও থাকে মালা হয়ে মনে।

আমাদের স্বাধীনতা মুক্তি নয় শুধু-
ঘুড়ি আর লাটা’য়ের মত
কিছুটা বন্ধন থাকে প্রাণে
কিছুকিছু নিষেধেরও বেড়া থাকে ঘিরে।

আমাদের আমি শুধু স্বৈর-আমি নই-
তেভাগা চাষের মত কিছু
ভালবাসা এসে দাবি করে
সমাজেরও অধিকারে থাকে কিছু ভাগ।

আমাদের প্রেম শুধু একমুখি নয়
দুগ্ধপোষ্য শিশুর মতন
স্বকীয়া আঁচল খোঁজে কিছু
কিছু ভাসে পরকীয়া বেনোজল স্রোতে।

জীবনের মানে সবটুকু বাঁচা নয়
সাপ কিংবা শুঁয়োর মতন
মননে মৃত্যুুরও খেলা চলে
গোপনে ঘুমিয়ে থাকে আততায়ি পাশে।

মিষ্টি মেয়ে

চটকদারি ভাষার ঘটক
ছেলের বাবার কাছে-
জানায়- হাতে একটা খুবই
মিষ্টি মেয়ে আছে।

বাবা বলে – ঘটক মশায়
চলবে না এ মেয়ে-
ছেলের হবে ডায়াবেটিস
মিষ্টি খেয়ে খেয়ে।

সপ্তপদী কবিতা

আমার বুকের মধ্যে মন্থক্ষত এঁকে
ঝরণার মত তুমি হেসে ভেসে যাও
আমিও তোমার স্মৃতি-জলে জ্বলে জ্বলে
চেয়ে দেখি- কিশোরীর চোখ ক্রমাগত
নারী হচ্ছে – ভালবাসা বেগবতী নদী
ছুটে যাচ্ছে মিয়েন্ডার – সঙ্গমের দিকে…

তোমার দু’চোখে আমি ফিকে হচ্ছি- ফিকে…

সম্পর্ক

তোমার চোখের মধ্যে
অরূপলোকের জল
টলমল করে আর
গদ্যে পদ্যে খিচুড়ি পাকায় –

বুকের গভীর থেকে সাপ
স্বপ্নের উত্তাপ মেখে
কামনার ফণায় তাকায়

মন আর দেহের মধ্যিখানে
অলৌকিক যানে বসে
প্রেম ওঠে হেসে-

সম্পর্ক সাজানো থাকে
উজ্বল শো’কেসে—

ছড়াদাদুর পাঠশালা ৯


আজ প্রথমে আমরা একটা ছোটদের কবিতা লিখব।
দাদু বললেন – এইধরণের কবিতায় শিশু-কিশোরমনের নানা স্বপ্ন-কল্পনা-ভালবাসা-আবেগ প্রভৃতি মাননিক বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা থাকে। যেমন ধরো, একটা বালক পড়া, ঘোরা, খেলা সবকিছু যথাসময়ে মন দিয়েই করে। এভাবেই সে তার জীবনটা গড়ে তুলবে- এই ভাবনা তার মা-বাবা তাকে দিয়েছেন। আমরা স্বরবৃত্তে এই বিষয়টাকেই লেখার চেষ্টা করবো-

মা বলেছেন/ – যা সোনা, আয়/একটুখানি /খেলে-
মুক্ত বায়ের/ সুখ তো গায়ে/খানিকটা আয় /ঢেলে।

পড়ার শেষে /হেসে-ভেসে/ কল্প-না’য়ে /চড়ে-
ওড়ার কথা -/ ঘোরার কথা/ বাবাও বলেন/ গো রে।

আমার পড়ায়/ আমেজ ছড়ায়/নেই বিরক্তি-/ভীতি-
লেখার খাতায়/ কেকার খুশি/ ঝরায় নিতি-/ প্রীতি।

খেলার সময় / কেবল খেলি/মেলি মনের/ ডানা-
পড়ার সময়/ শুধুই পড়ি / গড়ি জীবন/খানা।
আদৃতা বলে – দাদু এটি
৪+৪+৪+২ মাত্রার তিনটি পর্ব এবং দুই মাত্রার একটি অতিপর্ব রেখে লেখা হল। তাই না?
দাদু সোৎসাহে বলেন- একদম ঠিক বলেছো। এটা একটা ছোটদের কবিতাটি। অনেকে একে আবার কিশোর কবিতাও বলেন।
এবার লিখব একটা ছড়া। চারদিকে এত নকল সামগ্রী আর মিথ্যে বাড়বাড়ন্ততে সত্যি ও আসল জিনিসেও সন্দেহ জাগছে মানুষের।

সকল কিছুই /নকল এবং/ মিথ্যে দেখে/ দেখে-
চিত্ত জুড়ে/ নিত্য সবাই/সন্দেহ নেয়/ মেখে।

সত্যি কি এক/রত্তিও নেই/আসল কি নেই/ কিছু?
উঠছি ভোরে/ ছুটছি জোরে/মিছের পিছু/পিছু!

সন্দেহে মন/-দেহের ভিতর/ভাবনা ইতর/ জাগে-
অবিশ্বাসের/ বিষ শ্বাস এখন/অবিরতই /লাগে।

আসলটাকেও /নকল লাগে/ধকল সয়ে /সয়ে-
সত্যিগুলোও/ ধুলোয় পড়ে/যাচ্ছে মিছে/ হয়ে।

সত্যি মরে/ পথ্যি ছাড়া/আসল মরে /ধুঁকে-
মিথ্যে বেড়ায়/ নৃত্য করে/চিত্তভরা/ সুখে।

অরনি বলে- এটাও ৪+৪+৪+২ মাত্রার স্বরবৃত্ত।
-ঠিক ধরেছো। দাদু বলেন। – তাহলে আজ এই পর্যন্ত থাক। আগামি দিন আমরা মাত্রাবৃত্তে লেখার চেষ্টা করবো। (চলবে)

ছোট্টগল্পঃ দু’টো বাড়ি

-বনলতা, এই বনলতা…
-বল!
-একটা খবর আছে।
– কী খবর সুরঞ্জনা?

বনলতা আর সুরঞ্জনা। ছোট্ট দুটো বাড়ি। পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে। ওদের মধ্যে ভারি মিতালী। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে যখন আর ভাল লাগেনা তখন দু’জনে সুখদুঃখের গল্পে মেতে ওঠে।

সেই দশ বারো বছর আগে বুড়োকত্তা তৈরি করেছিলেন ওদের। তাঁর দুই ছেলের জন্য। কবিতাপাগল কত্তামশায় ভালবেসে নাম রেখেছিলেন সুরঞ্জনা আর বনলতা। জীবনানন্দের কবিতার দুই নারীচরিত্র। সুন্দর ছোট্টছোট্ট দুটো একতলা বাড়ি। হালকা সবুজরঙে ভরে দিয়েছিলেন সারা শরীর।

সুরঞ্জনা বলে – কাল রাতে আমার কত্তা তার গিন্নিকে বলছিল- আমাকে নাকি ভেঙে নতুন করে ত্রিতল করবে।
-তাই নাকি? তাহলে তো তোর ভারি আনন্দ।
-সে তো একটু হচ্ছেই।
– তোর কত্তা ভাল চাকরি করে। শুনেছি উপরিও আছে। তোকে যত্নআত্তি করা ক্ষমতা আছে। আমার কত্তা তো আর চাকরি-বাকরি করে না। ওই ছোট্ট একটু দোকান। – বনলতা থামে।
সুরঞ্জনাও কোনো প্রতিউত্তর করে না।
বনলতা আবার বলে- তা তোর তো নবজন্ম হবে। পূর্বজন্মের প্রিয় সাথিকে তখন মনে থাকবে তোর?
– কী যে বলিস না তুই! মনে থাকবে না? আমরা দুইজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একসাথে কত ঝড়-বৃষ্টি-খরা সহ্য করলাম। কত সুখ-দুঃখের দিন পার করলাম। সেসব কি ভোলা যায়? বড় হলে কি হবে। তুই আমার প্রাণের সাথি ছিলি, আছিস, থাকবি চিরকাল।

সুরঞ্জনাকে ভাঙা হলো। খুব কষ্ট হল তার। তবু বড় হবার স্বপ্নে সব সয়ে নিল দাঁতে দাঁত চেপে।

বনলতাও বিমর্ষ মনে দেখল তার সাথির নিঃচিহ্ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য।
দেখল সুরঞ্জনার ধীরে ধীরে পূনর্জন্ম প্রাপ্তির দৃশ্যও। সে এখন বিশাল এক সুরম্য অট্টালিকা। দিনক্ষণ দেখে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল প্রাসাদের। পার্টি চলল গভীর রাত পর্যন্ত। গর্বভরা চোখে সুরঞ্জনা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল নাচ-গান।

নতুন নামকরণও হল। তার কপালের উপর খোদাই করে বড়বড় ইংরেজি অক্ষরে লেখা হল-সানভিলা।

বনলতা চুপচাপ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল, শুনল সবকিছু। সুরঞ্জনা কি ভুলে গেল তার প্রিয় সঙ্গীকে?

রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। বনলতার চোখে তবুও ঘুম আসেনা।
পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়েছে। সুরঞ্জনাও কি ঘুমিয়েছে? না কি…

বনলতা কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকে – সুরঞ্জনা!

সুরঞ্জনা নয় সানভিলার চোখ এখন শুধু আকাশের দিকে। নীচে তাকানোর ইচ্ছে, সময় – কিছুই তার নেই।
-সুরঞ্জনা!
বনলতার ডাক সানভিলার কঠিন কংক্রিট দেহে ধাক্কা ফিরে ফিরে আসে তার কাছে।

বাংলা কবিরই দ্যাশ তো

এক
কবিতা লেখা তো ভীষণ সহজই
লাগেনা ছন্দ-ফন্দ,
মুখের ভাষাতে ব্যাঁ ব্যাকরণেতে
আধুনিক বাক-বন্ধ।

অর্থ লাগেনা – শর্তটা শুধু-
খেই হারা কিছু শব্দ-
সাজিয়ে দিলে তা – চমকাবে পিলে
আঁধারে পাঠকই জব্দ।

দু’লাইন লিখে – খ্যাতি দিকে দিকে
কবি খুবই ব্যাতি-ব্যাস্ত,
সকলেই কবি- কেউ কেউ নয়,
বাংলা কবির দ্যাশ তো!

দুই
ছড়াটা আসেনা – কড়াটা মেজাজ
গড়াটা সহজ নয়তো,
টানটান চাই ছন্দের জ্ঞান
ওখানে সবারই ভয় তো!

ছড়া শিশু-খেলা – করে’ অবহেলা
কবি দেয় গালি নিত্যি-
মূলো খাওয়া নূলো ছড়াকারগুলো
দেখলেই জ্বলে পিত্তি।

ছড়াকার হাসে – ” আঁখিজলে ভাসে ”
কবিতার এ কী ভাগ্য!
ছন্নছাড়ারা অন্ন ছড়ায় –
খায় এসে কত কাক গো!!

ছড়াদাদুর পাঠশালা ৮

ছড়াদাদু বললেন- তিনরকম ছন্দ আর অনুপ্রাস নিয়ে মোটামুটি আলোচনা করা হল। এবার আমরা যাব মুক্তকছন্দে। মুক্তক বা মুক্তছন্দ আসলে কোনো ছন্দ নয়। ছন্দের আঙ্গিক বিন্যাস মাত্র। তিনটি ছন্দেই মুক্তক পদ রচনা করা যায়। এটি যে কোনো ছন্দে প্রতি লাইনের পর্বসমতা কম-বেশি করে লেখা হয়।
যেমন –
খবরটা নয় /উড়ো-৪+২
চিনদেশেতে /আছে সে এক/ পাঁচবছরের/ বুড়ো।৪+৪+৪-২
খরায় জ্বরায়/ ভিজে ভিজে-৪+৪
থমকে আছে /বয়সটা তার /
একটু বাড়ে/নি যে।৪+৪+৪+২
এটা স্বরবৃত্তে লেখা একটি মুক্তপর্বের ছড়া। তো ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছো তো?
আদৃতা বলে- কিছুটা। তবে অন্য ছন্দের আর একটা উদাহরণ পেলে আরো পরিস্কার হয় যাবে।
দাদু বলেন – এবার তাহলে রবীন্দ্রনাথের কবিতাই বলি-
প্রিয়া তারে রাখিল না/ রাজা তারে/ ছেড়ে দিল পথ-৮+৪+৬
রুধিল না /সমুদ্র পর্বত ৪+৬
আজি তার রথ……৬

আসলে মুক্তছন্দে ছন্দকে ঠিক রেখে ইচ্ছেমত ভাবের প্রসার ঘটিয়ে ইচ্ছানুযায়ী মাত্রা, পর্ব, ছন্দের অন্ত্যমিল এবং স্তবকসহ কবিতার পুরো বিন্যাসকে নিজেরমত করে সাজিয়ে নেওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথই প্রথম পয়ার ভেঙে অসমপর্বের এই ছন্দের প্রবর্তন করেন।
এই মুক্তকছন্দের সাথে গদ্যছন্দের সাদৃশ্য আছে। গদ্যকবিতার ছন্দেও ভাষাগত পরিমিতি, ভাবের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ ধ্বনিপরিমিতি মেনে সচ্ছন্দ গতিশীলতা বজায় রাখতে হয় যাতে পড়ার সময় হোঁচট খেতে না হয়।
দীপেন বলে – দাদু একটা গদ্য কবিতার উদাহরণ দিন।
– বলা-ই যায় না
শুধু দলাদলা কষ্টরা
দীর্ঘশ্বাস বেয়ে নেমে আসে।
দেখ, এখানে হয়তো ছন্দের নির্দিষ্ট রূপ নেই তবু এর চলনে রয়েছে একটা সচ্ছন্দ গতিশীলতা যা অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্তের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। ছাড়ো এসব।

দাদু একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন- আমরা যেহেতু শুধুমাত্রা ছড়া বা ছোটদের কবিতা লেখার কায়দাকানুন নিয়ে কথা বলার জন্য পাঠশালা খুলেছি, তাই ও’গুলো লিখতে গেলে যতটুকু ছন্দ-অলঙ্কার জানার দরকার সেটুকুই শুধু বলা ভাল। যা যা আলোচনা হল তা কি তোমাদের বোধগম্য হয়েছে?
ওরা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল।
দাদু বললেন- এবার তাহলে আমাদের ছড়া আর ছোটদের কবিতা লেখায় হাত দিতে হবে।
আগামিদিন আমরা সেপথেই এগুবো। আজ ওঠা যাক।
(চলবে)

ছড়াদাদুর পাঠশালা ৭

আজকের আলোচনা হবে অনুপ্রাস নিয়ে – ছড়াদাদু বলেন।
ওরা পাঁচজন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
তবে তার আগে তিনপ্রকার ছন্দের মধ্যে পার্থক্যটা সংক্ষেপে একটু করা যাক।
-ঠিক। – ওরা সম্মতি জানায়।
-স্বরবৃত্তে রুদ্ধদল একমাত্রা আর মুক্তদলও একমাত্রা।
মাত্রাবৃত্তে রুদ্ধদল দুইমাত্রা আর মুক্তদল একমাত্রা।
অক্ষরবৃত্তে শব্দের শুরুর রুদ্ধদল একমাত্রা আর শব্দের শেষের রুদ্ধদল দুইমাত্রা।
পর্বের ক্ষেত্রে স্বরবৃত্ত চারচার চালে চলে। মাত্রাবৃত্ত চার, পাঁচ, ছয় ও সাত মাত্রার চাল হতে পারে। আর অক্ষরবৃত্তে মুলত চারমাত্রার চালে চলে। এটাকে আট বা দশ মাত্রা হিসেবেও গোনা যায়।
স্বরবৃত্ত চটুল, মাত্রাবৃত্ত শান্ত আর অক্ষরবৃত্ত গম্ভীর। স্বরবৃত্ত শ্বাসাঘাত বা ঝোঁকপ্রধান, মাত্রাবৃত্ত ধ্বনিপ্রধান আর অক্ষরবৃত্ত তানপ্রধান ছন্দ।
আর একটা কথা যদিও আমরা ছড়ার আলোচনায় বসেছি, তবু তোমার জ্ঞাতার্থে এখন মুক্ত বা গদ্যছন্দ নিয়ে দু’চার কথা বলবো।
– আদৃতা বলে – খুব ভাল হয় তাহলে।
দেখ, ছন্দ তো মূলত তিনপ্রকার। গদ্য বা মুক্ত ছন্দ আসলে কোনো ছন্দ নয়। মাত্রাসমতা ঠিক রেখে পর্ব কম-বেশি করে লেখা হলে মুক্তছন্দ আর টানাগদ্যে লেখা হলে গদ্যছন্দ।
অক্ষরবৃত্তই এই কাজের উপযুক্ত। তবে অন্য ছন্দও অসম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলোচনা আর না এগিয়ে আমরা অনুপ্রাসে যাই।
দাদু একটু থেমে বলেন- -অনুপ্রাস হল একধরনের শব্দালংকার। অনু শব্দের অর্থ পরে বা পিছনে আর প্রাস শব্দের অর্থ বিন্যাস, প্রয়োগ বা নিক্ষেপ। একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছের একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে সুন্দর ধ্বনিসাম্যের সৃষ্টি হয় তার নাম অনুপ্রাস। এর ফলে সৃষ্টি হয় একটি সুন্দর ধ্বনি সৌন্দর্যের। যেমন ধরো-
“কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ।” এখানে ক বর্ণটি ৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এটাই হল অনুপ্রাস।
অনিক জানতে চায় – এই অনুপ্রাস কত রকম হতে পারে ছড়াদাদু?
– তিনরকম- ছড়াদাদু বললেন- অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্ত্যনুপ্রাস এবং ছেকানুপ্রাস।
কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তারই পুনরাবৃ্ত্তিতে যে অনুপ্রাস অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম অন্ত্যানুপ্রাস। অর্থাৎ কবিতার দু’টি চরণের শেষে যে শব্দধ্বনির মিল থাকে তাকেই অন্ত্যানুপ্রাস বলে।
যেমন – হাঁস বলে – ও হাঁসিনী,
দু’জন মিলে পুকুর-বিলে
বল্ কতদিন ভাসিনি?
এখানে হাঁসিনী আর ভাসি নি। একে অন্ত্যমিলও বলা হয়ে থাকে।

একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বা বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে যে অনুপ্রাসের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস।
যেমন: কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ। বা চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।
এখানে প্রথমটিতে ক এবং দ্বিতীয়টিতে র বা আর বৃত্তের মত বৃহুবার উচ্চারিত হয়েছে।

আর দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে একইক্রমে মাত্র দু’বার ধ্বনিত হলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম ছেকানুপ্রাস। একে আদ্যানুপ্রাসও বলা হয়ে থাকে। এ ধরণের অনুপ্রাসের বাস্তব ব্যবহার বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না।
যেমন: অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আসলে এগুলো তো অলঙ্কার। হলে ভাল লাগে। শব্দচলনে একটা সমধ্বনির অনুরনণ আসে। পড়তে ভাল লাগে।

আদৃতা জানতে চায় – ছড়ার ক্ষেত্রে অন্ত্যমিলটা বাধ্যতামুলক। কিন্তু অন্যগুলো না হলে কি কোনো ত্রুটি হয় ছড়াদাদু?

দাদু বলেন- অন্ত্যমিল বাধ্যতা মূলক ঠিকই কিন্তু অন্তে মিল না রেখেও যে লেখা যাবে না তা কিন্তু নয়। ছন্দচলনটা ঠিক থাকলে ওটা গৌণ হয়ে যায়, তা ইদানিং কোনো কোনো ছড়াকার তো দেখিয়েছেন।
-তাই? মামুন বিস্মিত হয়।
-একটা উদাহরন দিতে পারবেন দাদু? – অনিক বলে।
– শোন তবে- দাদু বলেন-
দুয়ারে নীরবে দাঁড়িয়ে বাতাস
বাড়িয়ে বাউল-ডানা,
হৃদয় নাড়িয়ে চলে যায় দুরে
বলে যায় নানা কথা।
এখানে দেখ লাইন শেষে অন্ত্যমিল নেই। কিন্তু দাঁড়িয়ে, বাড়িয়ে, নাড়িয়ে -অনুপ্রাসের ব্যবহারে আর স্বরবৃত্তের চলনে লেখাটি ছন্দময় হয়ে উঠেছে।
ওরা একসাথে -বাহ্ – বলে ওঠে।
দাদু বলেন – আসলে কবিতা বা ছড়া রচনার প্রধান শর্ত হল সাবলীল আর নির্ভুল ছন্দ। অন্ত্যমিল নয়। (চলবে)

ছড়াদাদুর পাঠশালা ৬

আজও ছড়াদাদুর পাঠশালা বসেছে। দাদুর বাড়ির দক্ষিণদিকের খোলারমাঠের ঘাসের উপর সবাই বসে পড়েছে হাত পা ছেড়ে।

দাদু বলেন- স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত হল, আজ অক্ষরবৃত্ত। তাই তো?
ওরা বলে – হ্যাঁ,
– শোনো, অক্ষরবৃত্তে মুক্তদল একমাত্রা ও রুদ্ধদল যদি শব্দের শুরুতে বা মধ্যে থাকে তাহলেও এক মাত্রা হয়। কিন্তু, যদি শব্দের শেষে থাকে তাহলে দুইমাত্রা হয়।
এর সাথে মাত্রাবৃত্তের সামান্য মিল আছে। এ দুটি ছন্দে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ রুদ্ধদল সবসময় দুইমাত্রা। কিন্তু, অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শুধুমাত্র শব্দের শেষের রুদ্ধদল দুইমাত্রা, বাকিগুলো একমাত্রা। যেমন-
‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন
তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি”।
বিশ্লেষণে দাঁড়ায় – হে +বঙ্ +গ +ভান্+ডা+রে+ত+ব / বি+ বি+ধ+ র +ত+ন –
এখানে বঙ্গ- বঙ্+গ, ভাণ্ডার – ভান্+ডার,। শব্দের শুরুতে বলে এই বঙ্ ও ভান্ এক মাত্রা করে হবে কিন্তু রতন- র+ তন্, এখানে রুদ্ধদল- তন্ শব্দের শেষে বলে দুইমাত্রা পাবে।
তোমাদের বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি কি?
অরনি বলে – হ্যাঁ দাদু, বুঝতে পেরেছি।
আদৃতা বলে – স্বরবৃত্তে তো চারচার মাত্রার পর্ব, মাত্রাবৃত্তে চার,পাঁচ, ছয় ও সাত মাত্রা, কিন্তু অক্ষরবৃত্তে পর্ব ভাগ হয় কিভাবে?
-এটাই আমি বলব ভাবছিলাম। তুমি সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন তুলেছ। শোন তবে-
‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব/ বিবিধ রতন-৮+৬
তা সবে অবোধ আমি/ অবহেলা করি”। ৮+৬
বা
হাজার বছর ধরে/ আমি পথ হাঁটিতেছি/ পৃথিবীর পথে,৮+৮+৬
সিংহল সমুদ্র থেকে/ নিশীথের অন্ধকারে/ মালয় সাগরে।৮+৮+৬
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতার আবৃত্তি ধীরগতি ও একটু গম্ভীর হয়।
অক্ষরবৃত্তের বৈশিষ্ট্যগুলো একটু বলুন দাদু – অনিক বলে।
দাদু বলেন- এই ছন্দের প্রতিটি পর্বে জোড়সংখ্যক মাত্রা থাকে। পর্বে মাত্রা সংখ্যা দুই থেকে শুরু করে চার, ছয়, আট, দশ যে কোনো সংখ্যক রাখা যায়। এক্ষেত্রে মানতে হয় জোড়ে জোড়, বিজোড়ে বিজোড়।
আদৃতা বলে – কি রকম দাদু?
– জোড় মাত্রার শব্দের পাশে জোড় মাত্রার শব্দ এবং বিজোড় মাত্রার শব্দের পাশে বিজোড় মাত্রার শব্দ বসানো। পরে ইচ্ছেমতো লাইন তৈরি করলেও ছন্দের ক্ষেত্রে কোনো ক্রুটি হয়না।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের চাল আসলে চার মাত্রার । চারের যে-কোনও গুণিতকের সঙ্গে দুই যোগ করলে যে-সংখ্যাটা মিলবে, তত সংখ্যার মাত্ৰা দিয়েই অক্ষরবৃত্তের লাইন তৈরি করা যায়।
দীপেন বলে – যেমন?
দাদু জানান- হাসিমাখা/ মুখ
এ হল ৪+২=৬ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত। এর সাথে আরও চার মাত্রা জুড়ে দিয়ে – হাসিমাখা/ মুখখানি/ দেখি
৪+৪+২=১০ মাত্রা। এভাবে মাত্রা বাড়াতে হয়।
আদৃতা বলে – তাহলে চতুর্দশপদীগুলোর মাত্রা মুলত ৪+৪+৪+২ হবে।
-একদম ঠিক বলেছো। ওটাকেই যুক্ত করে ৮+৬ বলা হয়।
মামুন জানতে চায় – সব ছন্দের ক্ষেত্রে মাত্রার সাথে কিছু অপূর্ণমাত্রা যেমন ১, ২, বা ৩ মাত্রা বেশি রাখতে হয় কেন?
দাদু বলেন-পড়ার সময় একটু দম ফেলার জন্য এই মাত্রাঘাটতি রাখতে হয়। যদি পূর্ণমাত্রা রাখা হয় তাহলে তো থামার ফাঁক পাওয়া যায় না তাই । ওদের যদি না জুড়ে দেওয়া হত, তাহলে প্রথম লাইন শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় লাইন শুরু করতে হত।
– বাহ্, এইবার বুঝলাম। অতিপর্ব আসলে কেন রাখতে হয়। – মামুন বলে।
দাদু বলেন – আজ তাহলে ওঠা যাক। আবার পরের দিন।
সকলে উঠে পড়ল।
(চলবে)