সুরাইয়া নাজনীন এর সকল পোস্ট

ডেঙ্গু জ্বরের জানা-অজানা

ডেঙ্গু জ্বরের জানা-অজানা

ডেঙ্গু ভাইরাস নামক চার ধরনের ভাইরাসের মধ্য থেকে যে কোনো একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট জ্বর বা অসুস্থতাই হলো ডেঙ্গু জ্বর। এই ভাইরাসগুলো প্রত্যেকে একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও এরা সম্পূর্ণ এক নয়। কোনো ব্যক্তির কোনো একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়া মানে এই নয় যে, আর কোনো ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সে রক্ষা পাবে। সুতরাং ডেঙ্গু জ্বর একই মানুষের একাধিকবার হতে পারে।

শুধু কি দিনে কামড়ায়?
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী একধরনের মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায়। এই মশা সাধারণত দিনের আলোয় কামড়ালেও সারাদিনের যে কোনো সময়ে এই মশা কামড়াতে পারে। কাজেই সংক্রমণ ঋতুতে সবসময়ই সতর্কতা প্রয়োজন। অন্ধকার জায়গায় এই ধরনের মশার বাস এবং জমাকৃত জলে এরা বংশ বিস্তার করে। সুতরাং প্রজনন ঋতুতে বাড়ির ভেতরে ও বাইরে কোথাও জল জমিয়ে রাখা বা অপ্রয়োজনীয় জল জমতে দেয়া উচিত নয়।

উপসর্গগুলো কী?
ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর ৪-৭ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়; যা ৫-৭ দিন পর্যন্ত থাকে। জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পেছন দিকে ব্যথা, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা, র‌্যাশ; এটি চ্যাপ্টা বা স্ফীত আকৃতির হতে পারে, এতে চুলকানিও থাকতে পারে। সাধারণত যাদের আগে ডেঙ্গু হয়নি, তাদেরই র‌্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পেটের সমস্যা তথা বমিভাব, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। কাশি, বন্ধ-নাক, গলাব্যথা হতে পারে, কণ্ঠনালি লালচে থাকতে পারে।

রক্তবর্ণ চোখ
শিশু ও অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গগুলোর তীব্রতা কম হতে পারে। যাদের আগে অন্তত একবার ডেঙ্গু হয়েছে বা যে কোনো ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তীব্রতর ডেঙ্গু সংক্রমণের উপসর্গগুলো এ রকম হতে পারে:-

অসহ্য পেটে ব্যথা, ব্যথা না পাওয়া সত্ত্বেও ত্বকে আঘাতের চিহ্ন, ত্বকে ছোট ছোট বেগুনি রঙের স্পট দেখা দিতে পারে, রক্ত বমি, নাক থেকে রক্তপাত, কালচে মলত্যাগ, অচৈতন্য হয়ে যাওয়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকেই প্রতিকার হয়ে যায়, তবুও ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি কেন?

উপরোক্ত লক্ষণগুলোর একটিও যদি আপনার শিশুর ক্ষেত্রে ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তবে একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন রোগের তীব্রতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে কিনা অথবা নিম্ন রক্তচাপ বা রক্তপাতের সম্ভাবনা আছে কিনা।

ডেঙ্গু মশা শীতকালে মারা যায় কি?
মশা শীতল রক্তের প্রাণী এবং বেঁচে থাকার জন্য এদের ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। ৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচের তাপমাত্রায় অর্থাৎ শীতকালে এরা শীতনিদ্রায় চলে যায়। কোনো কোনো প্রজাতির মশকী কোনো ছিদ্রপথে বাস করে এবং উষ্ণ আবহাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। অন্য কোনো প্রজাতির মশকী শীতকালে ঠাণ্ডা জলে ডিম পাড়ে এবং মারা যায়। শীতকালে এই ডিম এখানেই থাকে এবং আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করলে মশার ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়।

ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের পরীক্ষা:
ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার এবং উপসর্গগুলো যাচাইয়ের পর একমাত্র একজন চিকিৎসকই বলতে পারেন ডেঙ্গু আছে কিনা। রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য দু’ধরনের পরীক্ষা হয়। প্রথমটি হলো এনএস ১ এন্টিজেন; যা লক্ষণ প্রকাশের এক দু’দিনের মধ্যেই পজিটিভ হতে পারে। দ্বিতীয়টি এন্টিবডি আইজিএম ডেঙ্গু টেস্ট; যা লক্ষণ প্রকাশের ৪-৫ দিনের মধ্যেই পজিটিভ দেখাতে পারে। যদিও খুব তাড়াতাড়ি রক্ত পরীক্ষায় সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এতে টিএলসি এবং প্লেটলেট্স কাউন্ট কম দেখাতে পারে।

ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসককে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ছে কিনা (যার অর্থ রক্তে ফ্লুয়িড কম হয়ে যাচ্ছে) এবং প্লেটলেট্ কাউন্ট কম হচ্ছে কিনা জানার জন্য পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হতে পারে। ডাক্তারের কোনো সন্দেহ হলে ফ্লুয়িড সংগ্রহের প্রমাণ পরীক্ষার জন্য তিনি ফুসফুস ও তলপেটের আলট্রাসনোগ্রাফিও করতে বলতে পারেন।

প্রতিকার
ডেঙ্গু ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক না থাকলেও ডাক্তাররা উপসর্গগুলো কমানোর চিকিৎসা করতে পারেন। অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর নিয়ন্ত্রণের ওষুধ দিয়েই তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সবচেয়ে নিরাপদ। মেফানেমিক এসিড অথবা আইবুপ্রোফেনের ব্যবহারে রক্তপাত হতে পারে বিধায় এসবের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্যারাসিটামলে জ্বর নিয়ন্ত্রণে না আসলে শিশুকে কলের জলে (স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলে) স্পঞ্জ করিয়ে দিন। উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে বমি ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা করা দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু আয়ত্তের মাঝে এলেও শিশুর রক্তচাপ পরিমাপ এবং রোগের অগ্রগতি জানার জন্য পরবর্তী কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ সময় শিশুকে প্রচুর পানীয়জাত খাবার দিন। তবে সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে অতিরিক্ত ফ্লুয়িড থেরাপি এবং প্লেটলেট পরিসঞ্চালন করতে হবে।

ডেঙ্গু মশকী দিনের আলোয় অধিক কার্যক্ষম থাকে। এ সময় শিশুকে বাড়ির বাইরে বের করবেন না। স্ক্রিন ও এয়ারকন্ডিশন্ড বিল্ডিং সবচেয়ে নিরাপদ। বিশেষত বাইরে খেলতে পাঠানোর সময় শিশুকে জুতো, লম্বা-হাতার জামা, লম্বা প্যান্ট পরিয়ে দিন। জমাকৃত জলে মশা বংশ বিস্তার করে। কাজেই বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জলাধার, গামলা, ফুলের টব থেকে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন। বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই শিশুকে মশা বিতারক ক্রিম লাগিয়ে দিন।

মশা বিতারক ক্রিম বা লোশন শরীরের অনাবৃত অংশে লাগানো উচিত। এক্ষেত্রে অ্যাডভান্সড ওডোমস বা অন্যান্য পণ্য শিশুর জন্য নিরাপদ। কিন্তু ৩০% এর চেয়ে অতিরিক্ত পণ্যের ব্যবহারে শিশুর ত্বকে এলার্জি হতে পারে। প্রাকৃতিক পণ্য যেমন সাইট্রোনেলা বা ইউক্যালিপটাস জাতীয় পণ্য ভালো হলেও রাসায়নিক মশক বিতারকের মতো অতটা কার্যকর নয়। মশা নিরোধক রিস্ট ব্যান্ড বা প্যাচেসগুলো শরীরের সব জায়গা, তথা গলা বা মুখমণ্ডলে লাগানো সম্ভব নয় বিধায় এগুলো ততটা কার্যকরী নয়।

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

রাগ অনেকের বংশগত হয়ে থাকে। অনেকের সাংসারিক জটিলতা, অর্থের অভাব, যোগ্যতানুযায়ী কাজের অভাবসহ পারিপার্শ্বিক অনেক কারণে রাগ হয়ে থাকে। তবে ঘন ঘন ও মাত্রাতিরিক্ত রেগে যাওয়াকে এক ধরনের মানসিক রোগ বলে মনে করে থাকেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ভালো কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। কিন্তু যারা স্বভাবসুলভ যেখানে সেখানে বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে রেগে যান, তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো।

অফিসে আপনাকে অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা চরিত্র থাকে। তাই সবাই সব কিছু সমানভাবে নিতে পারেন না। তাই অফিসে সব সময়ই নিজেকে একটু মানিয়ে চলতে হবে। এ জন্য অনেক কিছু ভালো না লাগলেও ছাড় দিতে হবে। কারো ওপর যদি মেজাজ খারাপ হয়েই যায় বেশিক্ষণ তার সামনে থাকবেন না। কাজ থেকে একটু অবসর নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসুন, সম্ভব হলে এককাপ চা পান করে আসুন। আপনি যেহেতু অফিসের বস নন, তাই অন্যের সঙ্গে বসের মতো আচরণ করবেন না। কাউকে দিয়ে কোনো কাজ করাতে হলে আদেশ না দিয়ে অনুরোধ করুন। এতে সম্পর্ক সুন্দর হবে। আর কেউ যদি আপনার সঙ্গে এমন আচরণ করেই ফেলে তাহলে রেগে না গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে, অনেকটা ঠাট্টার ছলে তাকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেন। অল্পতেই যারা রেগে যান তাদের জন্য ধীরে ধীরে এক থেকে ১০ পর্যন্ত উল্টো করে গোনার বিষয়টি খুব কাজে দেয়। নিজের আসনে একটু রিল্যাক্স করে মৃদু শব্দে পছন্দের কোনো গান বা কবিতা শুনুন।

তা সম্ভব না হলে মজার কোনো স্মৃতি মনে করুন। দেখবেন মনটা ভালো হয়ে গেছে। আপনার পাশের সিটে যে ব্যক্তিটি কাজ করেন তাকে আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। তাই বলে তাকে সব সময় এড়িয়ে চলবেন না। তার সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী সৌজন্যমূলক ব্যবহার করুন। একজনের রাগ অন্যজনের ওপর ঝাড়বেন না। যেমন- বাসায় স্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয়ে রাগারাগি করেছেন, সেই রাগ অফিসের পিয়নের ওপর বা ঝাড়বেন না। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ একা থাকুন। যে কারণে রেগে গেছেন বা যার ওপরে রেগে গেছেন তাকে সবার সামনে অপমান করবেন না, বা তখনই সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবেন না। সুযোগ বুঝে দুজনে আলাদাভাবে কোথাও বসে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কখা বলুন। অতিরিক্ত কাজের চাপে কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফেললে, মাথা ঠাণ্ডা হলে তাকে সরি বলতে ভুলবেন না।

এতে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না, বরং ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাগের মাথায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন না। এটি সুফল বয়ে আনে না। অফিসে সব সময় গুরুগম্ভীর না থেকে, নিজেকে ফুরফুরে মেজাজে রাখুন, সবার সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে অন্যের কাজে সহযোগিতা করুন।

ভার্চুয়াল জগৎ এবং পুরুষালি নোংরামি

ভার্চুয়াল জগৎ এবং পুরুষালি নোংরামি

বাস্তবে হয়তো কোনো বন্ধু নেই কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে সে খুব আনন্দ ও কোলাহলপূর্ণ জীবনযাপন করছে। সে ওই জগতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে নিজেকে। অবচেতন মনেই তার মনের কথাগুলো বলে ফেলছে নিঃসঙ্কোচে। সমস্যা দেখা যাচ্ছে শেষ প্রান্তে। যখন ফিরে আসার সময় নেই। বর্তমানে নারীরা ভার্চুয়াল বেড়াজালে বন্দি হচ্ছে। যা দিন দিন এক খারাপ পরিণতির গল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভার্চুয়াল সম্পর্ক আসলে অবাস্তব আবেগ অনুভূতির মায়াজালে ঘেরা ঠুনকো সম্পর্ক। যা বাস্তবিক চেতনার উদ্বেগ জাগায় এবং রোমাঞ্চিত করে তবে তা ক্ষণস্থায়ী এবং অলীক ভাবনা মাত্র। যার বাস্তবতা বা পরিণতিই নেই তবু এক নেশার ঘোরের মতো কাজ করে। এটি বাস্তবিক নয় পুরোটাই বায়বীয়। ক্ষণস্থায়ী এ সম্পর্কের ঘোর কেটে যাওয়ার পরে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় যার মোকাবিলা অনেক ক্ষেত্রে মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ অবাস্তব সম্পর্কগুলো বাস্তব সম্পর্কগুলো অস্বীকার করে ফলে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায়।

জীবন ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে এর সুফলের থেকে কুফলই বেশি প্রতীয়মান হয় সমাজে। কারণ এর কোনো বাস্তবিক ভিত্তিই নেই শুধু ধোঁয়াশায় ঘেরা বেনামি সম্পর্ক। বাস্তব সম্পর্কগুলো ভেঙে সামাজিক ও পারিবারিক ভাঙনের সৃষ্টিই বেশি করে যার প্রভাব আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে এবং সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এসবের যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে তেমনি এর ব্যবহারকারীদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ‘অসামাজিক মনোভাব’ উসকে দিতেও এসবের জুড়ি মেলা ভার। ইদানীং বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে ফেসবুকে পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই ফেসবুকের ‘লাইভ’ অপশনটি ব্যবহার করছেন। এভাবে ‘লাইভ চ্যাট’ করা, ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা-মতবিনিময় করা, পরিচিত-অপরিচিতদের সঙ্গে নানা ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় জড়ানো এসবের

কোনোটিতেই তেমন আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো মেয়ে ইউজার যখন এই ‘লাইভ চ্যাটে’ আসেন তখন সেখানে ‘এমন সব অশোভন, অশ্লীল, রগরগে, আপত্তিকর’ শব্দ ও বাক্যে চ্যাটস্ক্রিন ভরে যায় যে মনটা বিষিয়ে ওঠে। আমরা কতটা ধার্মিক, ভালো, সৎ, চরিত্রবান তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করছি খোদ দেশে এবং বিদেশে সেটা তখন বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাইভচ্যাটের মেয়েটি সেসব কমেন্ট এড়িয়ে যান কিন্তু তাতেও বিপত্তি কমে না, বরং আরো আপত্তিকর-অশ্লীল শব্দের বান ছুঁড়ে মারা হয় তখন। সবমিলিয়ে ‘লাইভ চ্যাটে’ আসাটা তখন একধরনের বিড়ম্বনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে তার জন্য। কিছুদিন আগের ঘটনা, একটি মেয়ে তার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ‘লাইভ চ্যাটে’ এসেছেন হয়তো এই আশায় যে পাশে একজন ‘পুরুষ’ থাকলে, তিনি হয়তো এ ধরনের বিড়ম্বনার কম শিকার হবেন (পুরুষকে নারীর ‘যথার্থ নিরাপত্তাদাতা’ মনে করা আর কী!)। কিন্তু, বিধিবাম! ঘটল উল্টো। বরং, তখন মেয়েটির সঙ্গে তার ছোট ভাইকে জড়িয়েই শুরু হলো নানা ধরনের অসভ্য-অশোভন আচরণ।

কারা এধরনের পরিস্থিতি তৈরি করছে? খেয়াল করলে দেখা যাবে এদের শতভাগই হচ্ছে তরুণ তথা পুরুষতন্ত্রের অদম্য-অনমনীয় প্রতিনিধি। পুরুষতন্ত্রের এই ভোগকাতর-হিংস্র মানসিকতার বিস্তার যেন দিনদিন বেড়েই চলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রযুক্তির যে কোনো ধরনের অগ্রগতির সুফল নারী-পুরুষ সবাই পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিংবা বলা যায় এটা তো এমন নয় যে, ফেসবুকের ওই ‘লাইভ অপশন’ ফিচারটি শুধু পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়! তবে, কবে পুরুষদের বোধোদয় হবে? লাইভ চ্যাটে ‘পুরুষালি ওই বিকৃত থাবা’ থেকে কোন মেয়ে কবে নিস্তার পাবে?

ভয়ঙ্কর প্রভাবগুলো
* কারো সঙ্গে অপ্রয়োজনে কথোপকথনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। কিন্তু আদৌ সেটা প্রেম নয় বরং একটা ধোঁকার সম্পর্ক। তবু এই বায়বীয় সম্পর্কে জড়িয়ে অনেককে প্রতারিত হচ্ছে।

* বিবাহিত নারী পুরুষও এই ভার্চুয়াল জগতে নিজের অজান্তেই অস্বীকৃত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ফলে স্বামী স্ত্রী দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকে। এই মোহের সম্পর্কগুলো বাস্তব সম্পর্ক মিথ্যা করে দেয় আর মিথ্যা সম্পর্কগুলোই প্রাধান্য পায়।

* কখনো আবার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একসময় ভার্চুয়াল বন্ধুমহল আড্ডার নাম করে একে অন্যের ঠিকানা নিয়ে নিচ্ছে। প্রায়ই আড্ডা চলছে হঠাৎ একদিন একা পেয়ে হাত পা বেঁধে সব লুট করে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে আবার প্রমাণ মুছে ফেলতে গুম হত্যাও করছে অহরহ। সিরিয়াল কিলার, লুট, ডাকাতি, চুরি অধিকাংশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ভার্চুয়াল জগতের ভয়ঙ্কর কিছু পরিণতির অংশ।

* শুধু এ সম্পর্কই না, ব্যাখ্যাতীত কিছু সম্পর্কও আছে যার আদৌ কোনো বাস্তবতা নেই আছে শুধু অসুস্থ বিনোদন, আবেগ আর অনুভূতি। যার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি বা পরিণতি নেই! তবু যুবসমাজ এর কবলে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সাজ ফ্যাশনে ছেলেদেরও চাই সচেতনতা

সাজ ফ্যাশনে ছেলেদেরও চাই সচেতনতা

আবহাওয়া পরিবর্তনে সবারই চায় সচেতনতা। এখনকার ছেলেরাও কিন্তু কম সৌন্দর্য সচেতন নয়। তারাও চোখ কান খোলা রাখছে ফ্যাশন দুনিয়ায়। কোন সময় কিভাবে নিজের যত্ন নিতে হবে সে বিষয়ে ধারনা থাকতে হবে। আজকে ছেলেদের রুপ সচেতনতা নিয়েই আয়োজন ।

রোদ, ধুলাবালি, ঘাম সব মিলিয়ে তাদের ত্বক রুক্ষ ও মলিন হয়ে পড়লে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। ব্রণ তো দেখা দেয়ই। তৈলাক্ত ও ঘামে ভেজা ত্বকে ধুলাবালি মিশে লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে এমনটি ঘটে। ব্রণ হলে প্রতিদিন শেভ না করে একদিন পর পর করাই ভালো। শেভ করার পাঁচ-দশ মিনিট আগে কোনো ভালো ময়শ্চারাইজার লাগানো যেতে পারে। শেভের আগে রেজারটি অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে উষ্ণ গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা জরুরি। শেভিংয়ের সময় রেজার নিচের দিকে টানতে হবে। অনেকেরই শেভ করার পর ত্বকে র‌্যাশ হয়। সে জন্য হালকা কোনো শেভিং ক্রিম বা ত্বকবান্ধব জেল নয়তো ফোম ব্যবহার করুন। র‌্যাশ হওয়ার প্রবণতা যাদের রয়েছে, তাদের আফটার শেভ লোশন এড়িয়ে চলা ভালো। শেভিংয়ের পরে কোনো অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বা অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগানো জরুরি।

ব্রণ সমস্যায় করণীয়

ব্রণ সমস্যার জন্য ভালো কোনো পার্লারে গিয়ে হারবাল ফেসিয়াল করতে পারেন। বাসায়ও সে রকম প্যাক তৈরি করা যায়। ব্রণের উপরে দারচিনি পেস্ট করে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ময়লা জমে ব্রণ হয়, তাই রুটিনমাফিক ত্বক পরিষ্কার করুন। বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে নিন। ব্রণে নখ লাগানো ঠিক নয়। এতে দাগ পড়তে পারে। বেশি ব্রণ এবং সে কারণে ব্যথা বা অস্বস্তি তীব্র হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রচুর পরিমাণ পানি, মৌসুমি ফলমূল ও শাক-সবজি খেলে ব্রণ হয় না। বাইরে থেকে ফিরে বেশি করে পানির ঝাপটা এবং ভালো মানের ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। চা কম খাবেন। রাত জাগবেন না।

সানবার্নে করণীয়

গরমে ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ ও সানবার্ন হয়ে থাকে। ছেলেদের হাতে ও মুখে সানবার্ন বেশি দেখা যায়। তাই বাইরে যাওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন ত্বকে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিমের এসপিএফ ৪০-৫০ হওয়া দরকার। প্রতিদিনের ব্যবহার্য কমপ্যাক্ট পাউডারটিও যেন অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম লাগানোর ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে আবার লাগিয়ে নিন। ১ ঘণ্টা পর সানস্ক্রিন লোশনের কার্যকারিতা থাকে না। বিকল্প হিসেবে টকদই, গোলাপজল ও মুলতানি মাটি দিয়ে প্যাক তৈরি করে প্রতিদিন ত্বকে লাগালে দাগ কমে যাবে। আটা, টমেটো ও কাঁচা হলুদের রস দিয়েও প্যাক বানানো যায়। ১৫ মিনিট পর গোলাপজল দিয়ে মুছে ফেলুন। নিয়মিত ফেসিয়াল করুন।

ধরন বুঝে ত্বকের যত্ন

যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা ঘুমের আগে ভালো মানের ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে স্ক্রিন টোনার লাগাতে পারেন। লেবু, শসা দিয়ে প্যাক বানানো যায়। এতে অয়েলি ভাব কমবে, ফ্রেশও লাগবে। তবে দুধ বা দুধের সর এ ধরনের ত্বকে লাগানো ঠিক নয়। দুধের বদলে তিলের পেস্ট লাগাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে এটি দেয়া যাবে না। এতে ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে যায়। দুধ বা অলিভ অয়েল দিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগাতে পারেন। ময়শ্চারাইজিং ক্রিম দিতে পারেন ঘুমের আগে। মিশ্র ত্বকে মধু, পেঁপে দিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া ফলের রস ত্বক কোমল করার সঙ্গে সঙ্গে রোদে পোড়া ভাব দূর করে। ঘরে বসে যত্নের পাশাপাশি ত্বকের ধরন বুঝে পার্লার থেকে নেয়া যেতে পারে ডিপ ক্লিনজিং, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, হার্বাল, স্পেশাল হার্বাল, অ্যালোভেরা, ডায়মন্ড ও ফ্লাওয়ার ফেসিয়াল। ভালো মানের পার্লারে ফেসিয়াল করুন। তবে ত্বকে বেশি ঘষামাজা করবেন না।

সুগন্ধির সুবাস ছড়াক সারাদিন

সুগন্ধির সুবাস ছড়াক সারাদিন

সেজেগুজে বের হলাম কিন্তু কি যেন বাকি আছে! সেটা ছাড়া সাজগোজের পূর্ণতা নেই। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন সুগন্ধি। ঈদে সুগন্ধি ছাড়া চলে ? ঈদ দোরগোড়ায়। সুগন্ধি বাছাই প্রায় শেষের দিকে। সাধারণ সময়ের থেকে উৎসবের সুগন্ধি একটু অন্যরকম হতে হয়। আর মনে রাখতে হবে সুগন্ধি ব্যবহারের কিন্তু আলাদা নিয়ম আছে যা আপনার সুবাস দীর্ঘসময় স্থায়ী হতে সহায়তা করবে।

ঈদ যেহেতু গরমে তাই পারফিউমের কদর অন্যরকম। কিন্তু মনে রাখতে হবে লাগানোর জায়গা ও কায়দা ভুল হওয়ায় সুগন্ধি বেশিক্ষণ থাকে না। ব্রিটিশ পারফিউম বিশেষজ্ঞ রুথ মাসটেনব্রোয়েক গবেষণা করে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার কথা বলেছেন। যেসব জায়গায় পারফিউম লাগালে সেটা সারা দিন সুরভিত করে রাখে। তবে এর বাইরেও টুকটাক কিছু ‘কারসাজি’ আছে। পদ্ধতিগুলো অনুসরণে অতিরিক্ত পারফিউম ব্যবহার করতে হবে না। বরং অল্প পরিমাণ পারফিউম দিয়েই সুরভিত থাকবেন অনেকক্ষণ।

নির্দিষ্ট এই জায়গাগুলোতে সুগন্ধি ব্যবহার করলে অনেকক্ষণ ধরে প্রিয় গন্ধ ঘিরে রাখবে আপনাকে। শরীরের পালস পয়েন্টগুলো পারফিউম দেওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। কব্জি, কনুইয়ের ভেতরের অংশ, কলার বোন, হাঁটুর পেছনে, পায়ের গোড়ালি, নাভির কাছে, কানের পেছনে পারফিউম লাগালে সেই গন্ধটা স্থায়ী হয় বেশ কিছুটা সময়। মজার কথা হলো, চুলে পারফিউম লাগালে সেটা বেশ ভালো কাজে দেয়। সরাসরি স্প্রে না করে চিরুনিতে পারফিউম স্প্রে করুন। এবার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন।

কিছু কিছু পারফিউম নির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয় রাত ও দিনের জন্য। দিনের বেলায় তুলনামূলক ভারী সুগন্ধিগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। রাতের বেলায় হালকা। কারণ, দিনের বেলায় অনেকটা সময় ধরে সুগন্ধির প্রয়োজন। গোসলের সময় রোমকূপগুলো খুলে যায়। এ কারণে গোসলের পরপরই পারফিউম ব্যবহার করা হলে রোমকূপগুলো সুগন্ধ অনেকাংশেই টেনে নেয়। সুগন্ধি এ কারণে অনেকক্ষণ ধরে থেকে যায়।

পারফিউম দেওয়ার আগে হাতে পায়ে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে নিন। কারণটা হলো, ত্বক খসখসে থাকার বদলে যদি মসৃণ আর নরম থাকে, তাহলে পারফিউম নিজের মধ্যে টেনে নেয় অনেকক্ষণের জন্য। কাপড়ের ওপরে নয়, বরং শরীরের পালস পয়েন্টগুলোতে পারফিউম ব্যবহার করুন। কাপড়ের ওপরে পারফিউম ব্যবহারে অনেক সময় দাগ বসে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। পারফিউম দেওয়ার সময় শরীর থেকে ৫-৭ ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রাখুন। পারফিউম দেওয়ার পরে এটাকে আপনা থেকেই শুকাতে দিন। অনেকে হাতের কব্জিতে পারফিউম দিয়ে কাপড় বা শরীরের অন্য কোনে অংশে ঘষেন। এটা করার প্রয়োজন নেই। আঙুল দিয়ে পারফিউমের ভেজা অংশ ঘষারও মানে হয় না। এতে গন্ধ অনেকটাই কমে যায়। বেশি পরিমানে পারফিউম ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। সঠিক জায়গায় অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন। দরকার হলে চার-পাঁচ ঘন্টা পরপরও কিছুটা পারফিউম দিয়ে নিতে পারেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়েই পারফিউম ব্যবহার করা উচিত। দিনের বেলায় ব্যবহার করতে পারেন লাইম কিংবা স্পাইসি ধরনের সুগন্ধি। আর রাতে বেছে নিন একটু কড়া ধাঁচের সুগন্ধি। এ ছাড়া পরিবেশ অনুযায়ী আলাদা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হয়।

সুগন্ধি কেনার সময় ভালো করে গন্ধটা বুঝে নিতে চাইলে, সাদা কাগজে স্প্রে করে নিন। বাতাসে শুকিয়ে গন্ধ নিলে আসল গন্ধটা আপনি উপভোগ করতে পারবেন। আর শরীরে পারফিউম স্প্রে করার সময় যদি গড়িয়ে পড়ে যায়, বুঝতে হবে সুগন্ধিটির মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। সুগন্ধি স্প্রে করার সময় একটু দূর থেকে স্প্রে করতে হয়। এতে গন্ধটা ভালো ছড়ায়। আর বেশি দিন রেখে দেওয়া সুগন্ধি ব্যবহার করলে কাপড়ে দাগ বসতে পারে। ব্যবহার করার পর পারফিউম স্বাভাবিক তাপমাত্রার কোনো জায়গায় সংরক্ষণ করুন। ঈদের সময় এভাবে মেনে চললে দেখবেন আপনার সারাদিন সুন্দর কাটছে।

এবার মেজাজ ঠিক থাকবে রান্নাঘরে গেলে

সমস্যা নিয়েই তো দিনের পথচলা শুরু। কিন্তু এগুলো দূর করার যদি যথাযথ কৌশল জানা থাকে তাহলে আর দৈনন্দিন সমস্যাগুলো সামনে আসে না। গৃহে কাজ করার সময় নানাবিধ অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই ঘর-গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজকর্ম ঝামেলাহীনভাবে শেষ করতে চায় সবাই। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় ছোটখাটো বাঁধা মেজাজ বিগড়ে দেয়ার পাশাপাশি সময়ও নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই টুকিটাকি কিছু গৃহস্থালি সমস্যা সমাধানের টিপস দেয়া হলো।

অনেক সময় বয়ামের লবণ গলে পানি হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি চাল ফেলে রাখুন বয়ামে। আপেল কাটলে কিছুক্ষণের মধ্যে তা কালচে হয়ে যায়। কাটার পর পরই খানিকটা লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। তাহলে তাজা থাকবে আপেল। কড়াই কিংবা ফ্রাইপ্যানে খাবার পুড়িয়ে ফেললে দাগ পড়ে যায়। সাবান মেশানো গরম পানিতে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন। পরিষ্কার হবে দ্রুত। অনেক সময় ডিম সিদ্ধ করতে গেলে ফেটে যায়। পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে সিদ্ধ করলে ফাটবে না ডিম। মসলার বয়ামে নাম লিখে রাখুন। খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।

পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কাটার সময় চোখ জ্বালা করবে না। মোমবাতি ফ্রিজে রাখতে পারেন। ক্ষয় কম হবে। রান্নাঘরের চিনির বয়ামে কয়েকটি লবঙ্গ রেখে দিন। পিঁপড়া আসবে না। শুকনো নিমপাতা গুঁড়া করে রান্নাঘরে ছড়িয়ে দিলে পোকার উপদ্রব কমবে। মাংস সিদ্ধ না হলে এক টেবিল চামচ সিরকা মিশিয়ে দিন। কাজ হবে দ্রুত। মুড়ি নরম হয়ে গেলে চুলার আঁচে খানিকক্ষণ গরম করে নিন। মচমচে হয়ে উঠবে তাড়াতাড়ি। তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেলে একটি আলু কেটে দিন। অতিরিক্ত লবণ টেনে নেবে। সামান্য টক দিলেও তরকারির লবণ কমে আসবে। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে খাবার সোডা কিংবা এক টুকরো কাটা লেবু রাখতে পারেন ভেতরে।

রসুনের খোসা ছাড়ানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। খুব সহজেই খোসা খুলে আসবে। ছোলা সিদ্ধ হতে না চাইলে এক চিমটি খাবার সোডা দিয়ে দিন। মাছ ভাজার সময় তেল ছিটলে একটু লবণ দিয়ে দিন। তেল আর ছিটবে না। গরম তেল ছিটকে শরীরে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান ঠাণ্ডা পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। ২০-২৫ মিনিট রাখলে জ্বলুনি কমে যাবে। খেজুরের গুড়ে দুধ দিলে অনেক সময় ফেটে যায়। এ জন্য দুধের সঙ্গে মেশানোর আগে গুড় পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে তার পর মেশান। দুধ ফাটবে না।

বিস্কুট রাখার আগে কৌটার নিচে এক টুকরো ব্লটিং পেপার রাখুন। দীর্ঘদিন মচমচে থাকবে বিস্কুট। কাঁচা মুগডাল ভেজে পানিতে ধুয়ে নিলে কালো হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। ডাল রান্না করার আগের রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দ্রুত সিদ্ধ হবে। কাঁচামরিচ বোঁটা খুলে সংরক্ষণ করলে অনেক দিন তাজা থাকে। রান্না করার ১৫ মিনিট আগে মাছ ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখুন। আঁশটে গন্ধ থাকবে না। মাছ ভাজার সময় একটু ময়দা কিংবা চালের গুঁড়া মিশিয়ে ভাজলে খেতে মচমচে হবে। ওল অথবা কচু রান্না করার সময় একটু তেঁতুল মিশিয়ে নিন তাহলে গলা ধরবে না।

এগুলো হানিমুনের দ্বীপ

এগুলো হানিমুনের দ্বীপ


বোরা বোরা দ্বীপ, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া
দক্ষিণ প্যাসিফিক দ্বীপগুলোর ভেতরে এই স্থানটি পর্যটকদের ভোটে বিশ্বের সেরা রোমান্টিক দ্বীপগুলোর ভেতরে এক নম্বরের যোগ্যতা অর্জন করেছে। সাগরের সাদা বেলাভূমি, একুয়া লেগুন এবং বিলাসবহুল হোটেল নবদম্পতির হানিমুনের জন্য একদম উপযুক্ত জায়গা এই দ্বীপ। হলিউডের নামকরা তারকা তাদের জীবনের অনেকটা সময় এই দ্বীপে কাটিয়েছেন বলে রেকর্ড বইয়ে লেখা আছে। এসব তারকাদের ভেতর নিকোল কিডম্যান, কেইথ আরবান, টনি পার্কারও আছেন।


সান্তোরিনি দ্বীপ, গ্রিস
যদি আপনি ইয়টে করে এই দ্বীপে পৌঁছান তবে, এই স্মৃতি আপনার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবে। পাহাড় কেটে বানানো গ্রাম, সাদা রঙের ছোট ছোট বাড়ি, নীল আকাশ, রাতের বেলায় আলোর কারসাজি, এসব ছেড়ে আপনি চলে আসার কথা বেমালুম ভুলে যেতে পারেন!


রঙ্গলী দ্বীপ, মালদ্বীপ
এই দ্বীপে আপনি পাবেন পানির ছোঁয়া অবিরাম। দ্বীপে পা রাখা মাত্রই পরিষ্কার পানি আপনাকে টানবে। এখানে হোটেল, স্পা কেন্দ্র সবই পানিতে ঘেরা! চারিদিকে পানি এ অবস্থায় অনেকে বিয়েও সেরে ফেলেন এখানে!


মলোকাই, হাওয়াই
এই দ্বীপটাকে বলা হয় এটাই সত্যিকারের হাওয়াই! এর বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো তুলনাই আপনি পাবেন না। খাড়া পাহাড়ের রং-বেরঙের কোরাল আপনাকে ভুলিয়ে রাখবে। এই দ্বীপে পা রেখে যেটা আপনার প্রথমেই মনে হবে সেটা হলো এইমাত্র কেবল আপনিই এই দ্বীপটি আবিষ্কার করলেন। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশকে ভালোবেসে ফেলতে আপনি বাধ্য!


লুকালা দ্বীপ, ফিজি
কেবল নবদম্পতির হানিমুনের জন্য এ জায়গাটি হতে পারে সবচেয়ে ভালো পছন্দ। গ্রাম্য পরিবেশের সঙ্গে বিলাসবহুল হোটেল আপনাকে এনে দেবে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। ২৫টি বিলাসবহুল হোটেলের প্রত্যেকটিতেই আছে বড়সড় লেগুন পুল।


সেন্ট লুসিয়া, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল
হানিমুনের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা হিসেবে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ভোটে পাঁচবার পুরস্কার জিতেছে সেন্ট লুসিয়া দ্বীপটি। সেন্ট লুসিয়া দ্বীপে প্রায় সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে! রোমাঞ্চপ্রিয় দম্পতির জন্য আছে পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে ওঠার সুযোগ, আছে শান্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে বানানো রিসোর্ট!


বালি দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া
এই দ্বীপটি সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই মনে হয়, কারণ এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বীপ এবং বেশিরভাগ নবদম্পতির প্রথম হানিমুনটা এখানেই হয়। এই দ্বীপে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা ভাড়া করে নেয়ার সুযোগ আছে। দ্বীপের কুপু কুপ বারোং গ্রাম এবং গাছের স্পা বেশি বিখ্যাত। দ্বীপটি আপনাকে দেবে পাহাড়ের গ্রামে জীবন কাটানোর অনিন্দ্য অভিজ্ঞতা।

শিশুরা ডানপিটে হলে

শিশুরা ডানপিটে হলে

শিশু বাড়াবাড়ি রকমের চঞ্চল হলে বাবা-মায়ের চিন্তাটাও বেড়ে যায় স্বাভাবিকভাবে। দেখা যায় অতিরিক্ত ছটফটানি শিশুকে অমনোযোগী করে তুলছে পড়াশোনায় আবার অশান্ত আচরণ প্রভাব ফেলে তার স্বাভাবিক কাজকর্মেও। বাসায় ও স্কুলে এসব ডানপিটে শিশুকে সামলানো খুবই কষ্টকর। ক্লাসের পড়া ঠিকমতো না শোনা, সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি করা কিংবা অন্যের টিফিন কেড়ে নেয়ার মতো কাজগুলো করে চঞ্চল শিশু আবার বাসায় থাকলেও দু’দণ্ড স্থির হয়ে বসতে চায় না। খাবার খাওয়া কিংবা টিভি দেখার মতো বিষয়গুলো নিয়ে জেদ করতে থাকে অনবরত। অযথা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা, অকারণ বকবক করা, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে ফেলা, বারণ করলে ইচ্ছা করে অন্যায় করা, টেবিল-চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামা, গালাগালি করা ডানপিটে শিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের শিশুরা মন দিয়ে শুনতে চায় না কোনো কথা। অনেক শিশু খেলাধুলা করতে গিয়েও মনোযোগ দিতে পারে না।

শিশুর ছটফটে আচরণের কারণ
সাধারণত পাঁচ বছরের আশপাশে যাদের বয়স তাদের মধ্যে এ প্রবণতাগুলো বেশি দেখা যায় আবার অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থাও শিশুর মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতার কারণ হতে পারে। দেখা যায় ডে কেয়ারে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থাকা শিশু অন্যের দেখাদেখি দুরন্তপনা বা বদঅভ্যাস রপ্ত করছে। অতিরিক্ত টিভি দেখা অথবা গেম খেলার কারণে কিছু শিশু আবার কার্টুন বা পছন্দের চরিত্রের অনুকরণে দুরন্ত আচরণ করতে চায়। মায়ের গর্ভকালীন ধূমপান বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের ফলে অনেক সময় শিশুর এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর ডানপিটে হওয়ার হার অনেক বেশি।

শিশুকে সামলান ধৈর্য ধরে
নির্দিষ্ট বয়সের দুরন্তপনা সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক হয়ে যায়। এর পরও ডানপিটে শিশুর রক্ষণাবেক্ষণে বাবা-মাকে নিতে হবে খানিকটা বাড়তি যত্ন। অনেক বাবা-মা শিশুর অস্থির আচরণে নিজেরাই অস্থির হয়ে পড়েন। রেগে গিয়ে বকাঝকা ও মারধর করেন শিশুকে। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এতে উল্টো ফল হতে পারেন। চঞ্চল শিশুকে সামলান ধৈর্য ধরে। শিশুর অকারণ দৌড়ঝাঁপে বিরক্তি প্রকাশ না করে কৌশলে অন্য কাজ করতে দিন। যে শিশু বেশি কথা বলে তার সামনে পছন্দের বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলুন। এতে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার অভ্যাস তৈরি হবে। অস্থির শিশুরা কোনো কিছুতেই ঠিকভাবে মনোযোগ দেয় না। ফলে কিছু বললে বুঝতে দেরি করে। এতে রেগে না গিয়ে প্রয়োজনে এক কথা বারবার করে বুঝিয়ে বলুন। গান গাওয়া বা ছবি আঁকায় শিশুর আগ্রহ থাকলে সেগুলো শেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এতে সে নতুন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবে।

শিশুর পড়াশোনাটা নিজেই দেখিয়ে দিন। যতটা সম্ভব আনন্দের সঙ্গে যেন সে পড়তে পারে সে ব্যবস্থা করুন। পড়াশোনার অবস্থা বা স্কুলে শিশুর আচরণ সম্পর্কে জানার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি। শিশুর কাজকর্মের ক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে তিরস্কার করবেন না বরং ভালো কোনো কাজ করলে তাকে বাহবা দিন। প্রিয় কোনো জিনিসও উপহার হিসেবে দিতে পারেন। শিশুকে স্কুল বা অন্য কোথাও একা যেতে দেবেন না, সেটা যত কাছাকাছিই হোক না কেন। সম্ভব হলে শিশুর প্রতিটি কাজের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করুন। তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে শিশু নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। কোনো কিছু নিয়ে শিশু জেদ করলে প্রথমে বুঝিয়ে বলুন। কাজ না হলে কৌশলে অন্য কিছুতে ব্যস্ত করে দিন তাকে। তবে শিশু খুব বেশি দুরন্ত হলে বা জেদের বশে নিজেকে জখম করার মতো কাজ করতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

শরৎ শুভ্রতায় ফুলেল সাজ

শরৎ শুভ্রতায় ফুলেল সাজ

হিমেল হাওয়া। নদীর আঁকাবাকা স্রোতের গন্তব্য এক অজানা পথে। মাঝির পালের হাওয়ায় বকসাদা কাশফুলগুলো দুলছে মনের আনন্দে। অবারিত কাঁশফুলের স্নিগ্ধ উপস্থিতিই জানান দিল শরতের আগমন বার্তা। এই বুঝি শরৎ এসেছে। নীল-সাদা আকাশ। এই রোদ এই বৃষ্টি। দুরন্ত কিশোরী ছুটে চলছে ধুলো মাখা পথে। তার যেন সময় এসেছে ভোরের সুবাসিত শিউলি কুড়ানোর। জোছনা রাতে বাড়ি মুখোরিত হয় শিউলির পাগল করা সুবাসে। সেই সুবাসে পুজোর দিন প্রতিমার চোখে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় দেবীর।

শুভ্রতাকে আরও বেশি শুভ্র করে রাখতে ফুলের সাজিতে ভরে ওঠে নানা রং এর ফুলেরা। সাদা আর দুধ সাদার মিলনমেলায় একাকার হয় দোলনচাঁপা, বেলী, শিউলি, শাপলা। রংধনু রং এর ফুলেরও কমতি নেই এই ঋতুতে। নানা রং এর ফুলেরা যেন সুর তুলেছে একই সুরে। জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, জল পদ্ম, সন্ধামনি, বোগেনভেলিয়া, জয়ন্তিসহ আরও কত কী! পুজার থালা রাঙাতেই বুঝি থরে থরে ফোটে ঝুমকো জবা, লটকন জবা, লঙ্কা জবা। স্বর্ণচাঁপা আর কাঁঠালচাঁপার লাজুক হাসিতে উদাসী হয়ে যায় পাখিরা। ফুলেই শুধু থেমে নেই শরতের ফুলেরা তারা জলেও খেলা করছে আপন মনের মাধুরিতে। অজস্র ঢেউয়ের মত ফুটে চলেছে শাপলা, শালুক, রক্তকমল আর জলপদ্ম। টবেও ফুটতে দেখা যায় কঙ্কনা, নীলচিতা আর রেইনলিলি।

শরতে বাঙালি মেয়েদের সাজেও যেন ফুটে ওঠে অপরুপ শুভ্রতা। ফুলের আভাতে নিজেকে করে তোলা যায় একেবারেই স্বতন্ত্র। আটপৌরে শাড়ি, কপালে সিঁদুর রং এর টিপ, চোখে কাজল, চুলে কয়েক গাছি শিউলির মালা। কনের হলুদ সন্ধাটাও সুরভিত করা যায় শিউলির মিলনমেলায়। চুলের এলোখোপাতে বেছে নেওয়া যায় কাশডাটা, পদ্ম কিংবা আধফোটা শাপলা। আর অবাধ্য চুলেরা যদি বাধা মানতে নাই চায় তাহলে চুলগুলোকে হালকা ফুলিয়ে টার্সেলে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় বিনুনির বাঁধনে। বিপরীত পাশে গুজে দেওয়া যায় শাপলা বা পদ্ম। পুঁতিতে গেঁথে নেওয়া যায় রঙ্গনের মালা, তবে জড়িয়ে নিতে হবে বিনুনি অথবা খোঁপায়। জবা পরতে চাইলে খোলা চুলে ব্লো ডাই করে এক পাশে গুঁজে নিতে হবে কয়েকটি জবা। সাজে আরও বৈচিত্র আনতে চুল মুড়িয়ে ফেঞ্চেরোল করে এক পাশে আনতে হবে। অন্যপাশে আটকে নিতে হবে রক্তজবা অথবা হলুদ এলামেন্ডা। যদি ক্লিপ দিয়ে গাঁথা যায় সোনালি চাঁপা তাহলে সৌন্দর্যে-সুগন্ধে নিজেকে করে তুলবে অন্যতমা।

শুধু সাজ নয়, ঘরের সজ্জায়ও নিয়ে আসতে পারেন শরতের নান্দনিকতা। মাটির চাড়িতে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিন চাঁপা, টগর। অথবা রঙিন পদ্ম ও শাপলা। সঙ্গে থাকুক মোম কিংবা প্রদীপের আলো। শরতের প্রকৃতি টুপ করে ঝরে পড়বে আপনার ঘরে। কাঁসার থালায় নিন উপচে পড়া শিউলি। এক পাশে রাখুন শুভ্র শঙ্খ, উঁচু কাঁসার প্রদীপ জ্বলবে তারই পাশে। দেখুন না, কীভাবে বদলে যায় ঘরের কোণটি। যদি চান ঘরের কোণে আলো ছড়াতে, তাহলে কোনায় বসান বড় টব। তাতে রাখুন বড় থালা। থালায় সাজান প্রদীপ, সঙ্গে সবুজ পাতায় মেশানো সাদা শরতের ফুল।

শুধু আকাশ নয়, শরতের প্রকৃতিও যেন সেজেছে নির্মল এক মায়াবী শুভ্রতায়। ফুলেরা ছড়াচ্ছে সুনীল সজীবতা সারাবেলা!

দেয়ালে মনের কাব্য

দেয়ালে মনের কাব্য

ঘরের সাজে, দেয়ালে নানা ধরনের ওয়ালপেপার ব্যবহৃত হয়। তবে আবহাওয়া ও ঘরের অবকাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে ওয়াল পেপার ব্যবহার করুন। না হলে এটা সৌন্দর্যবর্ধক না হয়ে সৌন্দর্যহীন হয়ে যাবে। দেয়ালের সাজে দেয়াল পেইন্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আপনি ইচ্ছামতো কল্পনার সব রং দিয়ে দেয়াল পেইন্ট করাতে পারেন। বর্তমান সময়ে আধুনিক ইন্টেরিয়রে কর্ন মিক্স বা রাফ টেক্সারের কাজ করা হয়। এ কাজ করলে দেয়াল অমসৃণ বা খসখসে থাকবে। যা দেখতে সুন্দর লাগে। এটি ব্যয়বহুল ও ক্যাজুয়াল বলে অনেকেই এড়িয়ে যান। ইন্টেরিয়র বিশেষজ্ঞদের মতে, দেয়ালে কর্ন মিক্স করলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক বেশি কাজ করা যায়।

আবার অনেকেই দেয়ালে আস্তর বা রং না দিয়ে সলিড ইটের দেয়াল রেখে দিচ্ছেন যা ইদানীং অনেক দেখা যায়। চাইলে বিভিন্ন ধরনের দেয়াল কেবিনেট ব্যবহার করতে পারেন। এতে দেয়ালের সৌন্দর্য ও শোপিস রেখে কেবিনেটটিকেও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং ঝোলাতে পারেন। ইদানীং বসার ঘরে ফ্ল্যাট এলসিডি ব্যবহৃত হয়। দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের চাইমার, শোপিস, কৃত্রিম ফুল, মুখোশ ব্যবহার করে সাজিয়ে নিতে পারেন, যা সাজানো দেয়ালের অলঙ্কার হিসেবে কাজ করবে।

দেয়ালের সাজ ও রঙের সঙ্গে মিল রেখে ফার্নিচার ব্যবহার করুন আবার দেয়ালের সাজের সম্পূর্ণ উল্টো রঙের ফার্নিচারও ব্যবহার করতে পারেন। দুটিই ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও দেয়ালে বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- এসিপি, এবিএ মার্ট, ডায়মন্ড ক্রিস্টাল এসিপি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। লাইট ব্যবহার করে দেয়ালের সাজে সৌন্দর্য আনতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ফোকাস লাইট, স্পট লাইট দেয়ালে ফেলে আলো-আঁধারীর আবহ তৈরি করতে পারেন, যা দেখে যে কেউই অভিভূত হবে। দেয়ালে বিভিন্ন শেল্ফ তৈরি করে ফ্যামিলি ফটোফ্রেম রাখতে পারেন।

দেয়ালের সাজের সঙ্গে মিলিয়ে জানালার পর্দা বাছাই করুন। কারণ যত সুন্দর করেই দেয়াল সাজান না কেন, শুধু পর্দার সঠিক ব্যবহারের অভাবে সব পরিশ্রম পণ্ড হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থেকে দেয়ালের সাজের সঙ্গে মিলিয়ে জানালার পর্দা ব্যবহার করুন। দেয়ালের সব সাজের জন্য, দেয়ালকে সুন্দরভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য উপযুক্ত দেয়াল আবশ্যক। স্থপতি লতিফা সুলতানা বলেন, দেয়াল সাজের আগে লক্ষ্য রাখতে হবে দেয়াল যাতে ড্যাম না হয়, দেয়ালের প্লাস্টার যেন ভালো হয়। এ জন্য দেয়াল তৈরির সময় সঠিক দিকনির্দেশনা দিন, যাতে পরবর্তী সময়ে ঝামেলায় পড়তে না হয়। আমরা প্রায় সবাই বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এলোমেলোভাবে দেয়াল সাজিয়ে থাকি। কিন্তু একটু চিন্তা করে বুদ্ধি খাটিয়ে শোপিস, ফটোফ্রেম বা রং, টাইলস ইত্যাদি এদিক-সেদিক করে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করে ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে পারি। এ জন্য প্রয়োজন সৃষ্টিশীল মন ও উপযুক্ত পরিবেশ। তো হয়ে যাক আপনার রুচিশীল মনের বহিঃপ্রকাশ, যাতে আপনার বাড়িতে আগন্তুক যে কেউই আপনার নিজ হাতে সাজানো দেয়ালটা দেখে ঈর্ষান্বিত হন।

নিঃসঙ্গতা বাসা বাধে মধ্য বয়সে

নিঃসঙ্গতা বাসা বাধে মধ্য বয়সে

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি ঝরছিল। হঠাৎ শিল পড়তে শুরু করল। আয়েশা খানম তখন সবে ম্যাগাজিনটার পাতা ওল্টাচ্ছেন। শিল পড়ার প্রচণ্ড শব্দে আয়েশা খানম দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়ে ছাদে গেলেন কিন্তু ছাদে পা রেখেই যেন সব উৎসাহ হারিয়ে ফেললেন। আমেরিকায় কি শিল পড়ে ?

বাবু এখন আমেরিকায়। গেছে এমবিএ পড়তে। ছোটবেলায় বাবু সারা বছরই বৃষ্টি হলে দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে যেত, শিল পড়ছে কিনা দেখতে। কোথায়, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে বাবুর তৈরী সেইসব মজার জগৎ! সে এখন খুব বড় হয়ে গেছে। সবই বোঝেন আয়েশা খানম। বাবু তার ভবিষ্যৎ তৈরি করছে, তাকে ঘিরে থাকবে নিরাপত্তার সোনালী আশ্বাস। কিন্তু তাও মন মানে না, একলা দুপুরে খাঁ খাঁ করে বুক। স্বামীকে মিস করে কখনও কখনও , আবার যেন তাকে কাছে পেলেও নিজের মনে হয়না। যেন ভিনগ্রহের কেউ হঠাৎ করে এসে পড়েছে এই জগতে।

একাকিত্বের দীর্ঘনিঃশ্বাস সমানে পড়ে রায়না ইসলামেরও। তার দু’টি সন্তান ছেলেটি সম্প্রতি ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে, মেয়ে ব্যস্ত এমফিল-এ। মাকে দেয়ার মতো সময় তাদের কারও নেই। বাড়িতে দু’টি কাজের লোক; তা সত্ত্বেও রায়না ইসলাম, সর্বদাই এটা করছেন, ওটা করছেন। তবু চব্বিশটা ঘন্টা যেন শেষই হতে চায় না। সময় যেন ‘থ‘মেরে গেছে। কিছুতেই কাটে না। ইদানীং বেশ হয়েছে নতুন একাকীত্ববোধ-নিজেকে অপাংক্তেয় বোধ করছেন তিনি। বাচ্চারা সবাই গড়ে নিয়েছে নিজেদের জগৎ, স্বামীর কাছেও আর তার যেন মেন প্রয়োজন নেই। পৃথিবীটা কেমন আলো-বাতাস শূন্য হয়ে গেছে রায়না ইসলামের কাছে। রায়না ইসলাম বা আয়েশা খানমের মহো মহিলার সংখ্যা এই শহরে অগণিত। প্রতিষ্ঠিত স্বামী তার কাজ ক্লাব বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ায় তাদের জন্য সময় দেয়ার প্রয়োজনটাই যায় মিটে। ফলে ফুলে ফেঁপে ওঠে বুক জুড়ে শূন্যতা।

একই সমস্যা শর্মি মাহবুবেরও। অথচ চমৎকারভাবে সে মানিয়ে নিয়েছে নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে। চিরকাল ছবি আঁকতে ভালবাসতেন তিনি কিন্তু গড়িমসিতে সেটা আর শিখে ওঠা হয়নি। অথচ ছবির প্রতি এক অমোঘ টানে তিনি ফাঁক পেলেই ঘুরে বেড়াতেন গ্যালারিগুলোতে। ক্রমশ তার চেনা হয়ে যায় সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গেও। ইদানীং ঝাড়া হাত-পা শর্মি এই গ্যারিগুলোর বিভিন্ন কাজে সাহয্যে করেন-তার মধ্যে প্রধান হল, নতুন শিল্পী খুঁজে বরে করা। অনেক তরুণ প্রতিভাই অকালে ঝরে যায় কেবল যথাযথ যোগযোগের অভাবে। শর্মি মাহবুব চেষ্টা করেন এইসব নতুন মুখকে একটা পরিচিতি দিতে।

সব সময় যে সফল হয় তা নয়, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই তার বাছাই করা শিল্পীরা নিশ্চিতভাবে লোকের নজর কাড়ে। সম্প্রতি তো দু-একটি গ্যালারি তাদের ছবি বিক্রির পর শর্মি মাহবুবকে ভাল রকমের পারিশ্রমিকও দিয়েছে। অন্তত তার সময়টা তো সুন্দরভাবে কেটে গেল, আবার সময়ের মূল্যও পাওয়া গেল। নিজেকে শর্মি মাহবুবের আর বান্ধবহীন একা মনে হয় না; বেঁচে থাকার একটা জোরালো নেশা তিনি পেয়েছেন।

কিভাবে একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব সে বিষয়ে মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল বলেন, ‘মধ্য বয়সের এই একাকিত্বে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা দিশেহারা হয়ে যান, অবসাদ ঘিরে ধরে তাদের । মনে হয় জীবন বুঝি এখানে শেষ হয়ে গেল। তাছাড়া স্বামী-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে চাওয়াটাতো খুবই স্বাভাবিকও। কিন্তু বাস্তবে যদি তা নাও ঘটে, তাতে হা-হুতাশ করে জীবনটা বিফলে দেওয়ার কোনও অর্থ নেই। অন্য দশটা জীবনের মতই আপনারটাও যথেষ্ট মূল্যবান।

আর তা একটাই। জীবন একটাই, তাই জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। এতদিন ঘর-সংসারের চাপে যে ভালো লাগাগুলোকে ধামা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, সেগুলোকেই নতুন করে উজ্জীবিত করে তুলুন। যেমন হয় তো গানটা শিখে ওঠা হয়নি, হয়তোবা বিদেশী ভাষা শিখতে চেয়েছিলেন, হয়নি-সেসব নতুন করে প্রাত্যহিকীর অঙ্গ করে নিতেই পারেন আপনি। পড়াতে ভাল লাগলে কাজের লোকের বাচ্চাকে পড়াতে পারেন। আসল কথাটা হলো, না পাওয়ার হতাশার কাছে নিজেকে হারিয়ে না ফেলে জীবনটাকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা।

রঙিন আবেশে বর্ষা বিলাস

রঙিন আবেশে বর্ষা বিলাস

প্রকৃতির বিচিত্র্য খেলায় জীবনকে আরো রঙিন করতে পোশাকে আর সাজে আনতে পারেন বৈচিত্র্যতা। নানা রঙে, নানা ঢঙে। আর আপনার মনের শুভ্রতা ফুটে উঠুক রঙে রঙে।

প্রকৃতি যেন আমাদেরও রাঙিয়ে দিয়ে যায়। আর সেই সাজে সজ্জিত হতে আমরা মন দেই বাহ্যিক রঙের বাহারের দিকে। নানা ঋতুতে নানা রং ব্যবহারকে প্রাধান্য দিলেও নিজের পছন্দ থেকেও রঙের ব্যবহার করে থাকি আমরা। এর বেশি ছাপ পড়ে পোশাকে। আমরা জানি, রঙেরও নিজস্ব ভাষা আছে। রং কথা বলে। আমাদের নানা অনুভূতিকে প্রকাশ করে। তাই যে কোনো সময়, সাজে আমরা রংকে প্রাধান্য দেই আলাদা করে। আবার বিশেষ কিছু উপলক্ষে থাকে বিশেষ রং। আবেগের রং বলা হয় নীলকে। যে কোনো আবেগ প্রকাশের জন্য নীল হতে পারে উপযুক্ত রং। বর্ষার দিনগুলোতে যে কোনো বয়সী মানুষের পোশাকের রং হতে পারে নীল। গাঢ় নীল রঙের জমকালো পোশাক, জুতা, ব্যাগ আর চোখের ওপর নীলাভ আইশ্যাডো ব্যবহার করে তরুণীরা নিজেদের সাজিয়ে তোলে মোহনীয় সাজে। উৎসবের রং হলো লাল। তবে লাল রঙের পোশাক আবার সবাই পছন্দ করেন না। তবে যে কোনো সময় লাল রঙের পোশাক হতে পারে ট্রেন্ড। ছোট ছেলেমেয়েদের লাল পোশাকে রাজকীয়ভাব আসে। লাল রংকে কমন রং ধরা হয়।

আকাশ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছাটা সবারই হয়। কিন্তু কজন পারেন ! আদৌ কি কারো পক্ষে সেটা সম্ভব? তবে সে আশা পূরণের জন্য ঘন বর্ষায় পরিধান করাই যেতে পারে আসমানি রঙের পোশাক। অনেকে আবার আসমানি রঙের জুতা পরে এ সময়ে ট্রেন্ডকে ধারণ করছেন। ফতুয়া, কুর্তা, শাড়িতে আসমানি রং আলো ছড়াতে পারে। তরুণেরাও বেছে নিতে পারেন হালকা আসমানি রঙের শার্ট বা পাঞ্জাবি। সাদা রংকে বলা হয় পবিত্রতার প্রতীক। শুভ্র, সতেজ আর সুন্দরের প্রতিচ্ছবি সাদা রং। অনেক সময় আগে বাংলার জামদানিতেই যেন সাদা তার রূপ খুঁজে নিয়েছিল। তবে আজো রয়েছে এর ভীষণ কদর। সাদা ধবধবে কামিজ বা শাড়ি যেন আজো নজর বেড়ে যায় সবার। আর ছেলেদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরেই রয়েছে এ রং।

ঋতুভেদে সাজগোজের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন নির্ভর করে নিজস্ব রুচি ও চিন্তার ওপর। এখন যেহেতু বাইরে রোদ-বৃষ্টির খেলা, তাই সাজের ক্ষেত্রে উপকরণটি অবশ্যই যেন পানিরোধক হয়। এ সময়ে দিনের বেলা গরমে গাঢ় সাজ যেমন মানানসই নয়, তেমনি অন্যদের চোখেও তা দৃষ্টিকটূ লাগে। তাই সব মিলিয়ে সাজসজ্জায় স্নিগ্ধভাব থাকা চাই। এজন্য হালকা মেকআপই ভালো। আগেই বলা হয়েছে, সাজের ক্ষেত্রে সাজের উপকরণটি পানিরোধক বেছে নেয়া ভালো। আর সাজের উপকরণের রঙে অবশ্যই উজ্জ্বল রং বেছে নেয়া উচিত।

এ সময় লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, সবুজ রঙে ইচ্ছামতো সেজে উঠতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাজের আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন মুখটা। তারপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে অপেক্ষা করুন ১৫ মিনিট। যেহেতু চোখ আর ঠোঁট রাঙাবেন রঙিন করে, তাই হালকা বেইজ নিয়ে নিন আগে। এর ওপর লাগাতে পারেন পাউডারও। চোখের কোণের অংশটায় খুব মন দিয়ে বেইজটা মিশিয়ে শুরু করে দিন চোখের সাজ।

পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন রঙিন কাজল। নীল, সবুজ, গোলাপি, লাল কাজলের রেখা টেনে নিতে পারেন চোখের কোণে। যারা রংটা একটু বেশিই পছন্দ করেন, তারা পোশাকের রঙের বিপরীত রংটিও বেছে নিতে পারেন।

এ সময়ে দিনের বেলায় কোনো দাওয়াতে অথবা যে কোনো সময়েই আনুষ্ঠানিক পরিবেশে সাদা পোশাক পরলে তার সঙ্গে মেরুন, বাদামি, গোলাপি অথবা কফি রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতের বেলায় সাজে জমকালো ভাব আনতে লাল, ম্যাজেন্টা, কমলার মতো গাঢ় রং বেছে নিতে পারেন।

ঘর শীতল থাকুক এসি ছাড়াই

ঘর শীতল থাকুক এসি ছাড়াই

কাঠফাটা রোদ। শান্তি নেই কোথাও। গরমে নাজেহাল অবস্থা। এসময় বাইরে যেন জ্বলন্ত আগুন। তবে ঘরে কি ঠান্ডা? এসময় সবাই ঘরে একখানা এসির প্রয়োজন অনুভব করছে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে এসি ছাড়াও কিন্তু ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। এখনই প্রশ্ন আসবে কিভাবে? হ্যাঁ তাদের জন্যই আমাদের আজকের আয়োজনঃ

ঘর শীতল রাখার বিষয়টি বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণের সময়ই খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট উত্তর-দক্ষিণ দিক করে তৈরি করতে হবে। কেননা, দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস ঢুকে উত্তর দিক দিয়ে বের হবে। সে সঙ্গে গরমকেও নিয়ে যাবে। হয়তো কোনো বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেটি পশ্চিম দিকে তৈরি করা। তাহলে সূর্যের আলো যেন কম প্রবেশ করে সে ব্যবস্থা করতে হবে। হালকা রঙের ভারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। বড় বড় জানালা রাখা প্রয়োজন। বাড়িতে যত বাড়তি জিনিস ও আসবাবপত্র কম রাখা যায় ততই ভালো।

কিছু কৌশল জানা থাকলে গরমেও ঘরে শান্তি বিরাজ করবে-
গরমের সময়ে ওভারহেড ট্যাঙ্কে বেশি পানি রাখবেন না। পানি তাড়াতাড়ি তেতে আগুন হয়ে যায়। গরম পানির ভাপ সব সময়েই বেশি। তাই সেই পানি যখন ব্যবহার করবেন তার গরম বাষ্প ঘরও গরম করে তুলবে। তাই প্রয়োজন মতো অল্প অল্প পানি তুলে ব্যবহার করুন। এতে পানিটাও ঠাণ্ডা পাওয়া যাবে।
সূর্যাস্তের পরে ঘরের জানালা-দরজা খুলে দিন। ঠাণ্ডা বাতাসে ঘরের গুমোট হাওয়া তাড়ান। অতি পরিচিত ঘর ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম করে হয়ে ওঠে না অনেক সময়।

বাড়ির লাগোয়া জমি থাকলে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বড় গাছ লাগান। এতে সারাদিন বাড়িতে রোদ পড়ার হাত থেকে বাঁচবেন। ঘরও অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা থাকবে।
বেশ কিছু ইন্ডোর প্লান্ট রয়েছে, যা বাড়ির মধ্যে রাখলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে। যেমন অ্যালোভেরা, বস্টন ফার্ন, স্নেক প্লান্ট, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম ইত্যাদি। ঘরের বাতাসকেও শুদ্ধ করে এই গাছগুলো।

বাড়ির মধ্যে কয়েকটি জায়গায় বড় মাটির মালসায় পানি রাখুন ও তাতে কয়েকটি সুগন্ধি ফুল ফেলে দিন। দিনে দু’তিনবার পানি পাল্টান। ঠাণ্ডা পানির বাষ্পে ঘর ঠাণ্ডা থাকবে। ভ্যাপসা গন্ধও হবে না।

তুলার বালিশের পরিবর্তে বাজরার বালিশ ব্যবহার করুন গরমকালে। তুলার বালিশ খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়।

সন্ধ্যাবেলা ছাড়াও দুপুরের আগে আর একবার ঘরের সব দরজা-জানালা খুলে হাওয়া আশা যাওয়া ব্যবস্থা রাখুন। মুখোমুখি জানালা খুলে দিলে সবচেয়ে ভালো। ঘরের গুমোট খুব ভালো দূর হয়।

সাধারণ বাল্ব-টিউব পাল্টে ব্যবহার করুন এলইডি বাল্ব। কারণ ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব থেকে গরম হয়ে যায় ঘর। দিনে দু’বার করে ঘর ও জানালার স্ল্যাব ভালো করে মুছুন। এতেও ঘর ঠাণ্ডা হতে সাহায্য করবে। ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে পাখার ব্লেড একটু অন্যভাবে লাগান, যাতে পাখা ঘোরে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ। এভাবে পাখা ঘুরলে গরম হাওয়া নিচে নামবে না, বরং উল্টোটাই হবে।

শিশুর ডায়াপার কি ক্ষতিকর?

শিশুর ডায়াপার কি ক্ষতিকর?

একবার ভেবে দেখুনতো হাতের নাগালে সবকিছু চলে এলেই কি তার সমাধান সহজ হচ্ছে? আগের দিনে শিশুরা অবলীলায় খেলে বেড়াত, মায়ের নজর কম থাকলেও বিপদ কম হত কিন্তু এখন? যত চিন্তা ততো বিপদ! এখন শিশুদের জন্মের পরেই ডায়াপার পরিয়ে দেয়া হয় কিন্তু অভিভাবকরা একবার ভেবে দেখেন না, শিশুর ত্বকের নীরব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই শিশুকে ডায়াপার পরালেও একটু বুঝেশুনে নিয়ম মেনে পরাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ডায়াপার নিয়ে নির্ভরযোগ্য মতামত দিয়েছেন, চলুন দেখে নেয়া যাক-

– যতবার পারেন শিশুর ন্যাপি পরিবর্তন করে দিন। এতে তার নিতম্ব পরিষ্কার ও শুকনা থাকবে।

– শিশুকে কিছুক্ষণ ডায়াপার ছাড়া উন্মুক্ত অবস্থায় রাখুন। ফুসকুড়ি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

– ত্বক আর্দ্রতা মুক্ত রাখতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।

– পানিতে আধাকাপ ভিনিগার মিশিয়ে তাতে শিশুর নোংরা কাপড় ভিজিয়ে রাখুন। কোনো রকম ডিটারজেন্ট বা সাবান ব্যবহার না করে তা ধুয়ে ফেলুন।

– ডায়াপারের র‌্যাশ দূর করতে পেট্রোলিয়াম জেলি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

– শিশুর জামাকাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে সুগন্ধী সাবান অথবা ডিটারজেন্টের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এগুলো অনেক সময় ফুসকুড়ির কারণ হতে পারে।

– শিশুকে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ওয়াইপ্সের পরিবর্তে ক্ষরহীন সাবান ও হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।

– শিশুকে অন্য ন্যাপি পরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তার নিতম্বের অংশ সম্পূর্ণভাবে শুষ্ক থাকে।

– গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ ওটামিল মিশিয়ে তা দিয়ে শিশুকে গোসল করান।

– শিশুকে প্লাস্টিকের প্রান্ত বিশিষ্ট ডায়াপার পরাবেন না।

– শিশুর নিতম্ব পাতলা তোয়ালে অথবা তুলা দিয়ে আলত করে মুছুন। কখনই জোড়ে ঘষে মুছবেন না।

– যতটা সম্ভব শিশুর শরীরে টেলকাম পাউডার কম ব্যবহার করুন। কারণ এটি অনেক সময় শিশুর শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে।

যেসব সমস্যা

ত্বকে র‌্যাশ: যেসব শিশুর ত্বক সংবেদনশীল তাদের অধিকাংশেরই নিয়মিত ডায়াপার পরার কারণে র‌্যাশ ওঠে যায়। সারাক্ষণ ভেজা থাকা এবং একেবারেই বাতাস প্রবেশ না করার কারণে ত্বকে র‌্যাশ ওঠার সমস্যাটা দেখা দেয়। যার দরুন শিশুর ভীষণ কষ্ট হয়, এবং কান্নাকাটি করে।

অ্যালার্জি: ডায়াপারে সুগন্ধী সৃষ্টির জন্য বা তার কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহারের নানা প্রকার সুগন্ধী এবং রাসায়নিক উপাদান। অনেক শিশুই এসব রাসায়নিক উপাদানের কারণে অ্যালার্জির শিকার হয়। ফলে ফুসকুড়ি হয়ে, ত্বকের দাগের সৃষ্টি হতে পারে।

রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত: অতিরিক্ত শক্ত করে ডায়াপার পরানোর কারণে শিশুর ত্বকের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে আপনার অজান্তেই আপনার শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষতি হয় এবং আপনার শিশু কষ্ট পায় কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না।

ইউরিন ইনফেকশন: শিশু যদি দীর্ঘ সময় ধরে মল-মূত্রসহ ডায়াপার পরে থাকে তাহলে, তার ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শিশুর মল-মূত্র করার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াপার বদল করা উচিত। তাছাড়াও একই ডায়াপার ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পরে থাকা স্বাস্থ্যকর নয়। ৩ ঘণ্টা পর পর ডায়াপার বদলে দিন আপনার শিশুর ডায়াপার।

শখের গাছ নষ্ট হচ্ছে না তো?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানি কম-বেশি হওয়াতে গাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরীক্ষা করে দেখুন টবের মাটিতে কী পরিমাণে পানি আছে। মাটিতে একটি আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিন। এক ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত যদি মাটি শুকনো থাকে, তাহলে বুঝতে হবে পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে গাছটি। দ্রুত এতে পানি দিন। এক ইঞ্চি নিচে যদি মাটি ভেজা থাকে, তাহলে হয় গাছটি যথেষ্ট পানি পাচ্ছে অথবা পানি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। শিকড় পচে গেছে কিনা বা পচা গন্ধ আসছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখুন।

পরিমিত পরিমাণে পানি দিন গাছে। দরকার হলে এমন একটি টবে গাছ নিয়ে নিন যাতে পানি নিষ্কাশন ভালো হয়। পানি যদি নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কারণ দেখতে হবে। অনেক সময়ে গাছে পোকা-মাকড় আক্রমণের কারণেও গাছ অসুস্থ্য হয়ে যায়। মিলিবাগ বা স্পাইডার মাইটের মতো বালাই গাছে আক্রমণ করছে কিনা দেখুন। এগুলো খালি চোখে ধরা নাও পড়তে পারে। তবে এদের কারণে পাতায় ছোট ছোট ফুটো দেখা যায় বা মোমের মতো সাদা একটি প্রলেপ পড়তে পারে। এর হাত থেকে গাছ বাঁচাতে চাইলে ভালো করে পানি দিয়ে গাছ ধুয়ে নিন। আক্রান্ত পাতা ছেঁটে ফেলুন। এতেও কাজ না হলে নার্সারি থেকে কীটনাশক কিনে স্প্রে করতে পারেন।

ঘরে রাখা টব আসলে যথেষ্ট আলো পায় না। সৌন্দর্যবর্ধন করতে গিয়ে সাধারণত টবটিকে শেলফে বা শোকেসে রাখা হয়। মাঝে মাঝে এই গাছটিকে রোদে রাখা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা গাছটিকে রোদে রাখুন বা তার গায়ে রোদ পড়ার স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিন। মনে রাখবেন, আপনি রোদ পছন্দ না করলেও আপনার গাছটি কিন্তু ঠিকই তা পছন্দ করে।

টবের গাছগুলো বেশিরভাগ সময়েই শীত সহ্য করতে পারে না। আপনি যদি নিয়মিত এসি ছেড়ে রাখেন এবং গাছটিও এসির বাতাসেই থাকে, তাহলে গাছ হলুদ হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এসি রুমে রাখা গাছ খুব ঘন ঘন পানিও দেয়ার দরকার নেই। এসব বিষয় বিবেচনা করে গাছটিকে এসি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন।

গাছের পুরনো পাতা যদি হলুদ হয়ে যায় এবং নতুন পাতা খুব হালকা হলুদ হয়, তাহলে এটা নাইট্রোজেনের অভাব হতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরিয়া বা অন্য কোনো নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ সার দিতে পারেন। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে সার দেবেন। অতিরিক্ত সার দিলে গাছ মরেও যেতে পারে।