সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

প্রাচীন প্রেম

প্রাচীন প্রেম

সেঁদো মাটির ঘ্রাণে ভেসে উঠে চোখে
প্রাচীন প্রেমের তৈলচিত্র,
মাছরঙা ঠোঁটে ক্লান্তি চিহ্ন এঁকে এঁকে
মিয়ম্রাণ বুক ঢের ক্লান্ত!

একবার যখন তুমি মেঘের নীল ডানায়
তোমার জানালা রাখো খুলে,
কদম জল ভোরের হাওয়ায় মিশে মিশে
ঘ্রাণ নেয় সদ্যস্নাত ভেজা চুলে!

শালিকের চোখে লেগে থাকা ঘুম আজ
আদ্রতা খুঁজে পামের খড়ে,
ব্রোঞ্জের কৌটায় লিপিস্টিক আরও কত
নীলপালিস, চুড়ি গুমরে মরে!

আদি থেকে অনাদিকাল ত্রিভুবন লয়ে
এই প্রেম, সেই প্রেম ত্রিভূজে,
আবর্তিত যুগল দ্বয়ের হাতে হাতে সদা
চিত্ত রঞ্জিতে থাকিবেই সেজে!

তৈলচিত্রে শুধু সেই প্রাচীন প্রেমব্যাখ্যা
লীন সব প্রেম আবেগের স্রোতে,
ঘুমন্ত চোখের আড়ালে তবুও গাওয়া
প্রাচীন সেই প্রেমগীত একাকিত্বে!

০২/০৯/১৮

স্বপ্ন অতপর মৃত্যু

স্বপ্ন অতপর মৃত্যু

মৃত্যুর চুমু তাদের চারপাশে
শূণ্যতা পূরণ করে চলে,
উদ্বিগ্ন জীবনের ক্লিষ্ট স্বপ্নটা
সমাধানে অনন্ত বিশ্রামে …!

ঘুম আর ঘুমন্তে যেখানে মানুষ
থাকে পড়ে,
দিন শেষে সেখানে মানুষ বাঁচে
এম্নি ভাবে
নিজ ঘরে আলপনা ছাড়া দেয়াল
কল্পনা করে …!

মৃতের দরজায় কড়া নাড়ে নিয়ত
ঘুম ও স্বপ্ন মায়াজাল বুনে,
স্পর্ধা কই স্বপ্ন ছুঁই, তাড়নে রক্তাক্ত
নির্জীব প্রাণ মৃত্যু দিন গুনে …!

বিশ্রামে যাবার আগে ফলক খুলে
দেখে নেয় একবার সংগোপনে …!
সহস্র মুখ,সহস্র রক্তরঞ্জিত চোখ
মৃত্যু কল্লোলে হিল্লোলে নাচে …!

অন্তিম লগ্নে চোখে জল এনে শুধু
বলা হায়,
কর্মে মর্মে নষ্ট সময়ে চিত্র মননে
কার রোষে,
অস্তিন ফুঁড়ে এতটা দৈন্যতা আসে
জীবন ভাঁড়ে …!

৩১/০৮/১৮

শরৎ বৃষ্টিতে

শরৎ বৃষ্টিতে

রিমঝিম এই শরতের ঘোর দিনে
কারে যে মনে পড়ে একেলা ক্ষণে
পথের দিকে চেয়ে।

ঊষার পাতে শিশির জল মেখে
বেণুবন ঐ ভিজিয়ে তরুলতা
ভাসায় সবুজ গাঁ।

প্রিয়া তোমায় ভেবে একেলা ঘরে
বৃষ্টির সুরে মন কাঁদিয়া ওঠে
নিরব নিথর দিনে।

এমনো দিনে থাকো কেন যে দূরে ?
ফিরে আসো না জলের স্রোতে ভেসে
ঝরা পাতার সুরে।

এই যে মধুর বৃষ্টির দিন শেষে
পথের পানে চেয়ে থেকে থেকে যে
একেলা ফিরে যায়।

তুমি বিহনে একা থাকা ভীষণ দায়,
শরৎ দিনে জুঁই, কামিনী ফুলে
সে কথাই যায় বলে।

31/08/15 পরিমার্জিত

তাপসিনী রাঁধিকা

তাপসিনী রাঁধিকা

শরৎ সন্ধ্যা, উদাস নীল আকাশ
ছল ছল চোখ,
কাশ ফুল, ছায়া রেণু পুষ্প যূথিকা
শুভ্র শ্বেত মেঘ।

বেদনা বিধূর তোমার’ই এই প্রণয়
ওগো ও ক্ষণিকায়,
সিক্ত সেফালী,চাঁপা নিশি ভোরে
ফোঁটা কেয়া রেণুকায়!

সেই কবে থেকে আজ,ঢের সময়ে
লীন হয়েছে প্রেম,
ক্ষণিকের ও দেখায় দুকূল ছাপায়ে
ফটিক জলে এলেম!

একটি সন্ধ্যা, প্রতি সন্ধ্যায় করে মনে
তাপসিনী যুথিকা,
বর্ষা নূপুর খুলে আজ শরৎ কন্যা ওগো
ধ্যান মগ্ন রাঁধিকা …!

অবসর, নিজ ঘর,
২৪/০৮/১৮

অভিমান

অভিমান,
বিকেলের রৌদ্দুর তোমার খোলা জানালায়
গোধূলি এঁকে গেলে,

জানালার গ্রীল ধরে তুমি আর থেকো না দাঁড়িয়ে
এমন উদাস চোখে!

চুলের ভাঁজ খুলে দিয়ে সন্ধ্যাকে আমন্ত্রণ করিও
নীরব তুলসী তলে!

দীপশিখা জ্বালিয়ে আরতি করিও যতনে যূথিকা
রাত্রি নামার মুখে!

যেটুকু অভিমান মনে পুষে রাখো তাকে মুছে ফেল
প্রিয় অভিসারে!

মেঘালয়ে মেঘবরণে সোনা মুখে একটু হাসিও তুমি
ভালোবাসি বললে…!

১৫/০৮/১৮

তোমার ইচ্ছে হলে

তোমার ইচ্ছে হলে বৃষ্টি পাঠিয়েও
মেঘলা আকাশ
বাদল ঝরো দিনে !

তোমার ইচ্ছে হলে কদমে সাঁজিয়েও
বৃষ্টি সুরে সুরে
একলা আনমনে,!

তোমার ইচ্ছে হলে আমার খবর নিও
একলা আকাশ
দেখার সময় করে,!

তোমার ইচ্ছে হলে আমায় ভাবিয়েও
শ্রাবণও দিনে
জানালার গ্রীল ধরে!

তোমার ইচ্ছে হলে উড়ো চিঠি লিখিও
মনের সব
না বলা কথা দিয়ে,!

তোমার ইচ্ছে হলে সোনা চলে আসিও
আমার কাছে
আলতা রাঙা পায়ে,!

তোমার ইচ্ছে হলেই উঠোন ভাসিয়েও
জোছনা নদীর
নীলময়ী ঢেউয়ে,!

তোমার ইচ্ছে হলেই দীপন্তি ভালোবাসিও
একলা একাকে
নিজের মত করিয়ে,!

৩৮/০৭/১৮

বৃষ্টি বিলাস

বৃষ্টি বিলাস
.
খণ্ড-খণ্ড মেঘ উড়ে যায়
কাছে থেকে দূরে,
রৌদ্র হয়েছে আজ বিলীন
আষাঢ়ের দুপুরে।
.
বৃষ্টিরা ঝরছে আজ অঝরে
তোর এলোকেশ ছুঁয়ে,
ঢেউয়ের নূপুর বাজছে তোর
আলতা রাঙা পায়ে।
.
বাদল দিনে হবে বৃষ্টি বিলাস
তোর সঙ্গে ভিজে,
জলের খামে স্বপ্ন সাজাবো
তোর বুকের মাঝে।
.
13-06-17

যে দিন পৃথিবী থেমে যাবে

একদিন ঝরাপাতারা থেমে যাবে
মাটির ছলনায়-গোধূলির সহচরে।
একদিন জীবনের পেয়ালায়
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরবে
কিশোরী কাঁকনের রাগিণী সুরে।

একদিন ঘুমিয়ে যাবো আমি
কেয়াফুল, শেফালীর দলে।
পলাতকা যূঁথিকার পায়ের শব্দে
হয়তো জাগবো আবার কখনো
আষাঢ়ের ভোরে কদম ফুলে।

একদিন ঝরে যাবে সব ফুল
শরতের ভোরে; শিশিরের মতন।
সেদিন,
নিঝুম ঘুমের ঘোরে হেঁটে যাবে তুমি
হেমন্তের হিম ঘাসের ‘পরে !

সেদিন,
থাকবো আমি সাঁঝদীপ জ্বেলে
আলো আঁধারের বনপথ ধরে।
সেদিন এই পৃথিবীও থেমে যাবে;
থেমে যাবে কৃষ্ণাতিথির শশী !

11-03-17

ছেলেটিও মেয়েটিকে ভালোবাসে

মেয়েটি শুধুই খুঁজে ফিরে কারুর
প্রশস্তত বুক, নির্ভয়ে মুখ লুকাবে,!
ছেলেটি খুঁজে ফিরে হয়ে দিশেহারা
শহরের পথে পথে নেশারা আঁখড়া,!

যেখানে গেলে ছেলেরা মেয়েটিকে ভুলে
বৃদ্ধরা ভুলে থাকে তাদের ভুল নারীদের,!
মেয়েটি শুধই খুঁজে ফিরে কারুর দুটি হাত
বিশস্তত দশ আঙুল থাকবে রাতের পর রাত,!

মেয়েটি পেলো না প্রশস্তত বুক, আর হাত,
ছেলেটি কিন্তু ঠিকই পেলো সেই আঁখড়া,
মেয়েটি এখন রোজ কাঁদে গোপনে মুখ লুকিয়ে,
ছেলেটি এখন মেয়েটি ভুলে নেশায় গেছে হারিয়ে,!

মেয়েটি পথ চেয়ে থাকে রোজ রোজ আসবে সে,
ছেলেটি পথ গেছে ভুলে তাইতো আর ফিরে না সে,!
ছেলেটি জানে মেয়েটি তাকে অনেক ভালোবাসে,
ছেলেটি ও মেয়েটিকে(!) শুধু পারেনা বলতে সে,,!

২২/০৭/১৮

অসমাপ্ত বিকেল

একটি অসমাপ্ত বিকেল থমকে আছে
শঙ্খচিলের সোনালি ডানায়____!
একটি গোধূলি সন্ধ্যা রোদ্রের চিলেকোঠায় বন্দি,
মাসকাবারি আলোক ফ্রেমে____!
পুকুরের তরঙ্গ জলে অস্হির স্তবিরতায় রূপান্তর__
বেলজিয়ামের আয়নায় মুখ ও মুখোশ ছবি
অথৈ ভাবে ভাবান্তর চারপাশ ঘিরে ।

হঠাৎ করে’ই গাছের আড়ালে
দেখা গেলো একটি কচি হাত___!
ছায়া মানবীর হাত____!
নিঃস্তব্দ স্তব্দতায় নিঃসঙ্গ একা হাত,,!
ইশারায় ডাকে খোলা আকাশটাকে,
আর কত দূর তুমি__!

নিয়ে যাও আমায়______
এই কুয়াশা ভাঙ্গা নিতম্ব ঝড়ের
নির্মম ঝঞ্ঝা থেকে ।

১০/০৪/১৮

যে স্বপ্নে আর ঘর বাঁধি না

নতুন করে কেউ আমায়
এখন স্বপ্ন দেখালে,
সেই স্বপ্নে আমি আর
সুখের ঘর বাঁধি না ।

কত স্বপ্নই তো দু’চোখে
স্বপ্ন হয়েই রইলো,
কখনো তো আশার ফুল
হয়ে তা ফুটলো না ।

১২/০১/১৮

মাটির ঘ্রাণ

একদিন আমিও তোর শহরটা
কিনে নিবো মন বিনিময়ে ।
একদিন তোর শহরে আমি একাই
রবো,কাকতড়ুয়ার বেশে ।

একদিন আমিও তোর শহরে
ঘর বানাবো রৌদ্র চিলেকোঠায়।।
প্রযত্নে লিখবো ‘তোকে চাই’ ।

অলস বিকেলে একলা হাঁটতে গিয়ে
যদি কখনও আমায় মনে পড়ে তোর,
তবে পাঠিয়ে দিস উড়ো চিঠি,
বে- নামি খামে ‘রৌদ্র চিলেকোঠায়’ ।।

এই শহরের কংক্রিটের আস্তরণ সরিয়ে
কোনো এক বিষন্ন বিকেলে
আমিও ঠিক খুঁজে নিবো তোর পায়ে
ধুলো ছড়ানো ‘ মাটির ঘ্রাণ’ ।

05/01/2018

মেয়েটির কেউ রাখে না খোঁজ

মেয়েটির কেউ রাখে না খোঁজ,

যে মেয়েটি রোজ রোজ জানালার গ্রীল ধরে
দাঁড়িয়ে থাকত দু চোখ মেলে
দূর মেঘের মিনারে,
প্রিয় কারুর আশায়।

যে মেয়েটি রোজ রোজ সন্ধ্যা নামার আগেই
গুছিয়ে নিতো এলো কেশি আস্তাবল,
গোধূলীর চিলেকোঠায়।

পূজার ডালা হাতে যে মেয়েটি রোজ জ্বালত
সন্ধ্যা প্রদীপ নীরব তুলসীবনে,
করত বসে আরতি ।

যে মেয়েটির দূরন্ত উচ্ছ্বাস বইচির বাগান ঘেরা,
কলাবতী নলক নাকে,
ছোট্ট গাঁ’টি করত সারা ।

যে মেয়েটি রোজ রোজ রাখত সবার খবর,
সবই মনে রাখত সে,
কখন কি লাগবে দরকার ।

যে মেয়েটির রোজ রোজ বাড়ন্ত সময়,
ধুলোমাখা পথে,
বইয়ের ভাঁজে রাখত ফুটন্ত গোলাপ।

সে মেয়েটি ছিল সবার মধ্যমণি,
আদরের তুলতুলি,
খুঁশির রাঙা প্রভাত।

সে মেয়েটির এখন রোজ রোজ ছন্নছাড়া ভাব,
আওলা ঝাওলা কথায়,
বে ভুলি কাজের হিসেব রাখা।

সে মেয়েটি আজ কোথায় আছে,কেমন আছে,
হায় নিয়তি,সেই মেয়েটির
কেউ রাখে না আর খোঁজ!

মেয়েটি এখন ঘর পালিয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে,
দূরন্ত মেয়েটির নির্জীব প্রাণ,
অবহেলায় কাটে দিন।
০৩/০১/২০১৮