বোধ

ঘটনা অনেক আগের, তখন আমার শৈশবকাল, বৈশাখের পাকা ধান কাটা হয়ে গেলে খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। গোপালপুর হাঁট থেকে দাদাকে দিয়ে লাল, নীল কাগজ আনিয়ে, বল্লা গোটার আঠা দিয়ে একটা ঘুড়ি বানিয়েছিলাম। তখন সাধারণত গরমের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকতো, পড়াশোনার চাপও থাকতোনা তাই কাজ বলতে ছিল ঘুড়ি উড়ানো। সারাদিন উদাম গায়ে দৌড়ে দৌড়ে ঘুড়ি উড়াতাম, বিকেলে ঘুড়ির নাটাই গাছের সাথে বেঁধে সবাই মিলে ফুটবল খেলতাম, কোনদিন আবার বৃষি্ট হলে ঘুড়ি উড়ানো হতোনা তবে ফুটবল খেলা হতো ঠিকই আর দিন শেষে দিঘীতে গোসল করে বাড়ি ফিরতাম।
.
একদিন আমার শখের ঘুড়িটা ভুল করে বারান্দায় রেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি, মাঝরাতে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে দেখি একটা ছোট বাচ্চা কুকুর আমার ঘুড়ির উপর আয়েশ করে শুয়ে ঘুমাচ্ছে, এটা দেখে আমার প্রচন্ড রাগ চাপে মাথায়। কী করা উচিত না ভেবেই মোটা একটা লাঠি দিয়ে ঘুমন্ত কুকুরটাকে দিলাম কষে এক বাড়ি। বাচ্চাটার মাজায় লাগলো আর লাফিয়ে পড়ে গেলো দু/তিন হাত দূরে, আর তার অসহায় সুরে কেঁউ-কেঁউ করে উঠলো কয়েকবার, তার করুণ আর্ত চিৎকারে হয়তো সেদিনের অন্ধকার আরও গাঢ় হচ্ছিলো, হঠাৎ কান্নার শব্দে উঠানের আম গাছে থাকা কয়েকটা পাখিও চেঁচা-মেচি শুরু করে দিয়েছিলো কিন্তু এরপরও সেটাকে আর সেখানে থাকতে দেইনি তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সকালে দেখলাম বাচ্চাটা ঠিকমতো হাঁটতে পারছেনা।
.
তারপর কয়েক বছর কেটে গেছে, তখন আর সেই দূরন্ত শৈশব নেই, ঘুড়ি উড়ানো, মাঠে ফুটবল খেলা সব কালের যাত্রায় হারিয়ে গেছে। একদিন কুষ্টিয়া থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম, মধুপুর বা গোপালপুরের কোন গাড়ি পাইনি। অগত্যা টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে হলো অন্য একটা গাড়িতে। এলেঙ্গা নেমে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ১০ টা ছুঁই ছুঁই, কিছুক্ষণ রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু আমার গন্তব্যের কোন গাড়ি আসলোনা। তখন গাড়ির আশা ছেড়ে ভাবলাম মাসজিদে রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে চলে যাবো এই ভেবে ওখানের একটা মাসজিদের বারান্দায় গিয়ে ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হালকা তন্দ্রা আসছে এমন সময় কারো ডাকে তন্দ্রা কাটলো মাথা তুলে দেখি বেশ কয়েকজন মানুষ। তারা মাসজিদ কমিটির লোক, তারা আমাকে চলে যেতে বললো, এটা হলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলার পরের ঘটনা তখন দেশ ব্যাপী সতর্কতা চলছিলো। কোন ভাবেই তাদের বুঝাতে পারলাম না কিছু। নিরাপত্তার অজুহাতে তারা অবশেষে তাদের অপারগতার কথা জানালো, দু/একজন ক্ষিপ্তও হলো। রাগে দুঃখে বেড়িয়ে পড়লাম ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তায়, ভয়ে শঙ্কায় চোখ দিয়ে পানি আসছিলো, রাস্তায় এসে ল্যামপোস্টের নিচে দাঁড়াতেই আমাকে দেখে একটা কুকুর দু/তিনবার ডেকে উঠলো। তখন কেন জানিনা মনের অজান্তেই সেই কুকুরটার কথা মনে পড়ে গেলো….
.
৩০/০৩/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

মাসুদুর রহমান (শাওন) সম্পর্কে

মাসুদুর রহমান (শাওন) এর জন্ম ১৯৯৭ সালে, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার সবুজে ঘেরা ছায়াঢাকা পঞ্চাশ গ্রামে। পিতার নাম মোঃ মজনু মিয়া, মাতা মোছাঃ খুকুমণি। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বর্তমানে আনন্দমোহন কলেজ'এ (ময়মনসিংহ) বাংলা সাহিত্যে অনার্সে অধ্যায়নরত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছড়া লেখার মাধ্যমে সাহিত্যে প্রবেশ। কবিতা ছাড়াও ছোট গল্প লিখে থাকেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ দ্বারা প্রভাবিত।

8 thoughts on “বোধ

  1. দারুন স্মৃতি কথাhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gif শুভকামনা থাকলো।

    1. ধন্যবাদ জানবেন প্রিয়……

  2. স্মৃতি আত্মশুদ্ধির সুযোগ এনে দেয়।      

    1. ঠিক বলেছেন আপনি, ধন্যবাদ……….https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. আপনিও ভালো থাকবেন………

  3. যাপিত জীবনের খণ্ড দর্পণ।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।