ট্যাগ আর্কাইভঃ চারু মান্নানের কবিতা

কোথাই যে তুই রইলে পরে?

কোথাই যে তুই রইলে পরে?

কোথাই যে তুই রইলে পরে? এমন সুবোধ নন্দন পুরে। যেখানে ছিল মিলে মিশে আদি অন্ত স্বপ্ন ঘ্রাণ। মাঘ ফুরালেই বসন্ত আসে। নদ নদীর ঐ জোয়ারে ভাসে। বর্ষা ফুলে থৈ থৈ জল। বিল ঝিলে ঐ কলমি লতা ভাসে। চন্দ্র মাসে অমাবশ্যা এলে ঝর ঝর বৃষ্টির ঐ বাদল নামে।

খনার বচন মেপে ভুঁইয়ে বীজ দিনু পুঁতে দ্যাখো ঐ মাটি ফুঁড়ে গজিয়েছে চারা মন্ত্র জঁপে জঁপে।

৭ চৈত্র ১৪২৩

বসন্তের মাতাল হাওয়া

বসন্তের মাতাল হাওয়া

ধরেছি তারে। ঝুলবাড়ান্দায় একলা পেয়ে। বসন্ত বেলা। তাই তো সুবোধ প্রেমের রং ছড়ায় একলা একলা। শহর ভুঁজে, সারি সারি গহনা ইট সুরকির উঁচু উঁচু দালান চোখে পরে।

আরও চোখে পরে একচিলতে মেঘ যেন খুব ম্রিয়মান, অভিমানে লুকিয়ে যায় চুপি চুপি ভেসে। তারে ধরে রাখতে পারেনি আকাশ; নীল দম্ভ আলোর মরিচিকায় সব ভুলে যায় নিমেষই। কদাচিত বর্ণের স্মৃতিমাখা কুন্ডলি শরীর ছুঁইয়ে যায়; বসন্তের মাতাল হাওয়া।

৫ চৈত্র ১৪২৩/বসন্তকাল।

বড়ই মায়া

বড়ই মায়া

তুমি কি ছিলে আমারই সাথে,
প্রপিতামহের গোত্রের সেই গুহাবাসে?
সেখানে শুধু,
আকাশ নামের নীল ছাদ ছিল।
অনেক বড় বড় প্রস্থের দিগন্ত
যায় না ছোঁয়া; সবুজ গালিচা শেষে
উঁচু উঁচু পাহার পর্বত,
আর ছিল গুহার ধার ঘিঁসে বিশাল জলরাশির সমুদ্র।

খাবার তালাশে,
খুঁজে খুঁজে এই সমুদ্র চেনা, সৈকতকে জানা
জোয়ার-ভাটা ঝড়-তুফান; জলচ্ছ্বাস
ঝড়ের তান্ডব;
সুনামিতে গোত্রের সব গুহা ডুবে গেল।
ভাসতে ভাসতে পাহাড় চুড়ায় আশ্রয়
পাহারের ধারে যত সামান্য সমতলে
পাথর দেয়ালে ঘর বাঁধা শেখা।
তোমাকে টানে, বড়ই মায়া।

আজ ৪ চৈত্র ১৪২৩

হৃদমাজারে

হৃদমাজারে

যাতনা যানান দেয় প্রতিক্ষণে
পলে পলে হাওয়ার মাতম যেমন
জলের ঢেউ এর মতো করে বয়ে চলে নিরবে নিঃশব্দে
তেমনি কাঁদিয়ে চলে অর্হনিশি!
দেখবার, জানবার,
তেমন কোন অনুক্ষণে যায় না বুঝা
দ্রোহ কিন্তু অবিরাম চলে;
সচল হৃপিন্ডের চলার পথ ধরে।

চোখের জল বাহ‌্যিক,
সবাই দেখতে পায়
অনুভব করা যায় তার যাতনা নিরিক্ষে
কিন্ত মন যাতনা কেউ দেখে না!
কেই জানে না;
কেই বুঝতেও পারে না
চিতা সম পোড়ায় নিরবে।

কালে কালে যাতনা সয়ে সর্বসহা প্রাণীকূল
মানুষ তার পোড়াভো পরম্পরা দায়ভার বহে
সদা তৎপর যুগে যুগে!
এ যাতনা যেন প্রহন লাগা পার্থিব্য
নিতেই হবে বুকে তারে,
দিতে হবে স্বেচ্ছায় আশ্রয়; হৃদমাজারে।

আজ ১ চৈত্র ১৪২৩

বিবর্তন বীজে অঙ্কুরোদগম

বিবর্তন বীজে অঙ্কুরোদগম

বিবর্তন বীজে অঙ্কুরোদগম
প্রথম যে বীজ মৃক্তিকা কোলে নিয়েছিল ঠাঁই
না কি মৃত্তিকা দিয়ে ছিল আশ্রয়?
সেও তো কালের বিবর্তন; মৃত্তিকায় পরেছে চাঁপা
সেই বীজেই
যুগে যুগে কালে কালে
শস্য মগ্নতা পৃথিবী জুড়ে
আহার সমগ্র; ভয়াল যুদ্ধ বিগ্রহ
খরা, অনাহার! আহার দ্রোহ যুগে যুগে
বৃত্তের সীমায় যেন বার বার ফিরে আসার
এ এক নন্দন খেলা।

৩০ ফাল্গুন ১৪২৩

না হয় থাকলে না

না হয় থাকলে না

না হয় থাকলে না
জাপিত কালে;
দেখছ তো
আকাশ, বাতাস, রৌদ্র,
সমুদ্র সোপান!
নিঙ্করে নিয়েছে
যত জল! ছায়ার মতো
বেধরা বিদ্রুপে।

এঁকেছে মুখ তোমার
সুর্যকে বলল; ডেকে ডেকে
দেখতো প্রতিমা!
চন্দন সুবাসে, বেআব্রু আঁধার
স্বপ্নঘোর যাতনা সহে।

আজ ৩০ ফাল্গুন ১৪২৩

শুধু কিছু প্রশ্ন সুধাবার?

শুধু কিছু প্রশ্ন সুধাবার?

সে দিন ঝরাপাতার দিনে
এসেছিলে আমার দ্বাড়ে,
কি জানি কি বলবে বলে?
এলোমেলো কেশরাশি উড়ছিল হাওয়ায়।

কপালে ছিল না কোন চেনা টিপ
খুব অস্থির অন্যমনস্ক বেশ,
চাঁদোয়া আঁচল অগোছাল
চোখের নিচে বেশ জমেছে কালো দাগ।

বললাম অভয় দিয়ে,
ভিতরে এসো, একটু না হয় বসে যাও!
একটু জলপান
তার পর না হয় শুনবো তোমার কথা।

অভিমান, সবটুকু বাসনা তোমার
নিয়েছে লুটে চুপিসারে;
তাই তো রাগ দ্রোহ সব জেগেছে বুকে
শুধু কিছু প্রশ্ন সুধাবার?

আজ ২৯ ফাল্গুন ১৪২৩

দ্বিধা, সাহস

দ্বিধা, সাহস

একদিন মুখিয়ে ছিল বাসনা
তোমার নন্দন রুপের পরতে পরতে
কোথায় মুক্তটা আছে?
খুঁজার প্রয়াসে;
তপ্ত কত কাল কেটেছে মগ্নতায়!
জানতেই পারনি তুমি;
খেয়াঘাটের মাঝির মতো
পথিকের অপেক্ষায় অপেক্ষায়
কেটেছে প্রনমি সকাল, সন্ধ্যা, কাল।

দ্বিধা, সাহস
খুব করে সংসয়ে পুড়িয়েছিল
বাসনার আপাদোমস্তক!
সেই পোড়া দাগই এখন
দগ দগে বিরহের নামান্তর

আজ ২৮ ফাল্গুন ১৪২৩

বেশ তো ছিলে পালিয়ে

বেশ তো ছিলে পালিয়ে

খুব, খুব করে!
কেন তবে মনে পরে তারে?
বসন্ত এসছে তাই
ঝরা ফুলের পাঁপড়ি যাতনায়।

মন তো ছিল বেশ
ভুলে তোমায়; বদ্ধ পুকুর জলের মতো
দু’ একটা ঢিলে শুধু নির্লিপ্ত ঢেউ
মিলিয়ে যায় মেইয়ে যায়
নিজে নিজেই; বাতাস প্রদাহে
ফুরিয়ে যাওয়া ঢেউ গুলো সব
লজ্জবতির বিছানো গায়ে বিলিকেটে
ছুঁয়ে যায় মৃত্তিকার গায়ে।

বেশ তো ছিলে পালিয়ে
কেন যে টান ধরে পাঁজরে?
চিন চিনে ব্যথা
বুকের মধ্যখানে।

১৪২৩/বসন্তকাল/২৫, ফাল্গুন।

অমুলক বিশ্বাস

অমুলক বিশ্বাস

একদিন ঠিক বুঝবে,
যখন সবুজ ঘাসে মোড়ক ধরবে;

থলের পকেট হাতরিয়ে
মিলল সেই পুরোনো আনা পাই
সে না কি তোমার ভালোবাসা বদলাবে?
তাই গচ্ছিত থলের নিচ তলায়
বহু দিন পর মনে পরল!
ঐ পুরোনো সুটকেশ ঘাটাঘাটিতে।

আঙ্গুল চেপে,
হাতের তালুতে বেশ কয়েক বার যত্নসহকারে
চাপাচাপিতে কি বুঝে ফেলে দিলে দূরে
আগাছার ঝাড়ে; এ এক অন্ধ যাতনা
কেনই বা এত দিন?
যত্ন সহকারে গচ্ছিত ছিল
অমুলক বিশ্বাস।

২৩, ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

তোমার বসন্ত ফেরারি আজ

তোমার বসন্ত ফেরারি আজ

রং তুলির ছোঁয়ায়
তোমার বসন্ত ফেরারি আজ
তবুও আসমানি রঙ মিশে
বিন্দু বিন্দু মিনার
সাজিয়েছে বেশ!
পরন্ত মেঘের ছায়ায়
যুবতি রৌদ্র করে খেলা।

ভেসে আসা মনিমানিক্য
জোয়ারের টানে; ভাটির জল সিঞ্চনে
অবরাহি হন্তারকের
কালো ছায়ায়!
এ কোন বসন্ত তোমার?
পুড়িয়েছে যাপিত কাল;
এখন শুধু শুধু
সবুজ আবিরে হলুদ জাফরানে
রঙতুলি মাখে।

২৩, ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

এই পথে, কত শত পথিক চলাচলে?

এই পথে, কত শত পথিক চলাচলে?

এই পথে, কত শত পথিক চলাচলে?
দেখে দেখে নিত্য ব‌্যাথা বুকে টলে;
যদি আসে, বটের ঝুড়ির নিত‌্য শীতল হাওয়া গায়ে
পথিক জিরয় প্রশান্তির আবেশে।
হাওয়ার নাচন, পাতার পত পত গানে
স্মৃতির আকন্ঠ তৃঞ্চা বুনে আনমনে
আকাশ দেখে দেখে যাতনার নির্ঝর বারি ঝরে।

যদি সে, পথ ভুলে আসে এই পথে
পথের ধুলোয় তার নন্দন পাদুকার চিহ্ন আঁকে
পথ তারে সহিঞ্চু আঁচলে বাঁধবে বলে
আগাছার লকে লকে বেনুফুল,
মন কারবে তার!
ধ্রুবতি দক্ষিণা হাওয়ার গান মাতাবে তারে।
খসে পরা শঙ্খচিলের পালক!
তার যুগোল পাদুকার সমুখে;
স্মৃতির আলখেল্লা উড়ায়।

১৪২৩/২২, ফাল্গুন/বসন্তকাল।

সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও

সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও

সে কি এখনও উচ্ছ্বলতায় হাসে? অযথা এমনি এমনি। নকল সুরে পাখিদের ডাকে ব্যঙ্গ করে, হো হো করে হেসে আটখানা। পুকুর ঘাটে সদা তৎপর সাঁতার হইহুল্লুর। বৌ ঝিদের আদরের পঞ্চসখি ছিল যে! নদের নন্দনপুরে। সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও। যে গাঁয়ে ছিল তারই নাড়িপোতা, শৈশব, কৈশর, যৌবন।

কনকাঞ্জলি লেপনে সেই যে বিদায় নিয়ে চলে গেল! সে কি আর ফিরেছে কখনও? যদি ফিরে আসো কখনও! দেখে যাও, নন্দন পুর এখন স্মৃতিভ্রম। আলখেল্লায় বাহারি, নেই কোন চিহ্ণ আর তোমার মায়া মাখা বন্য অতীত! তয় এসেছে নতুন বসন্ত। দক্ষিণা খোলা হাওয়া বয় নির্লিপ্ত।

21, ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

সে কি ভুলেছে সবই?

সে কি ভুলেছে সবই?

সে কি ভুলেছে সবই?
যাতনা অভিমান ছিল যত
যৌবনে সোদা গহনজুড়ে; সাপের খলস
খসে পড়ার মতো!
বার বার যন্ত্রণায় পুড়েছি কি শুধুই একা একা?
পলাশ শিমুলের ঝরে পড়া পাঁপড়ি
বিধুঁর বেদনায় ধুলো মাখে গায়; ছুঁয়ে যায়
দক্ষিণা বায়ু! উদাস মেঘ উড়ে যায়
নীলের পর্দা উড়িয়ে।

ঝুল বারান্দায় নিলাজ হাওয়া
বার বার ছুঁয়ে করেছে এলোকেশ, সুবর্ণ মুখটি
ঢেকেছে কিয়াদংশ; আঙ্গুল চেপে সরিয়ে কেশ
মেঘের পরে নীলের দো’টানায়
পড়েছে ভুলে, আচমকা ভাবনা কড়া নারে।

২০শে ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

জলের ফোটায় এ কোন বৃত্ত?

জলের ফোটায় এ কোন বৃত্ত?

জলের ফোটায়
এ কোন বৃত্ত?
ঝর ঝর ঝরনার
অহমিকা আঁকে; বৃত্তের
প্রপাতে মরমী শরীর যেন
আত্মজা আবিষ্ট,
গুঞ্জন মাখে।
সুদূর পরাহত যাতনা যত
কালের অঙ্গে অঙ্গে
জল সিঞ্চনের মতো
নপুর ঝঙ্কার বুনে।

ভুলে থাকা রমনীয় মার্ধুয্য
বসন্ত ঢেলেছে তারই গায়ে
যত পার কবিতা বিলাও
পাপ পণ্যের জনম
খুঁড়ে খুঁড়ে।

08,ফাল্গুন/বসন্তকাল/1423