ট্যাগ আর্কাইভঃ শান্ত চৌধুরী’র কবিতা

বর্ষার চিঠি

প্রিয়তমাষু
হিজলের বন ছুঁয়ে ঝিরিঝিরি বর্ষণে সেদিন তুমি এসে ছিলে। কেয়া, কদমের পাপড়ীতে মিশে। শালিক, শ্যামারা উৎসবে মেতে ছিলো অনেক দিন পরে। তোমার কাজল কালোকেশী চুল ছুঁয়ে গিয়েছিল বৌণ-পানকৌড়ির বুক, ডাহুকের রেশমতুলি। বটবৃক্ষ নুয়ে পরে ছিল তোমার রূপমাধুরীতে। তুমি এসেছিলে বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়। প্রশস্ত মাঠের জলে ভরা যৌবনে, এসেছিলে শাপলা-শালুকে মিশে। স্রোতশীল জল, মাঝিমাল্লার ভাসমান নৌকায় ভেসে অথবা পাড়ার ছেলে কিশোরের জলকেলি খেলায়, ভরা বর্ষার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শীতল দক্ষিণা বাতাসে, কদমের ঘ্রাণে বৃষ্টি ভেজা খামে।

মনের স্টেশন (গান)

মনের নেই কোন স্টেশন
ছুটে চলে যখন তখন
ফেরারী মন ফেরারী সময়
ধূসর সময়ে হারিয়ে যায়।

নিস্তব্ধ নিরানন্দ নীলাকাশ
কিছু প্রজাপতি উড়ে উড়ে যায়
মুগ্ধতা ছড়িয়ে বাগান বিলাস
মনের নাটাই ঘুড়ি উড়ায়।

মানেনা মন বাধা-ব্যবধান
ছুটে চলে নিরবধি আপন স্টেশন
ফেরারী সময় ফেরারী মন
দূরে বহু দূরে ছেড়ে কোলাহল।

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে ….
আবিরের রঙে হারায় ধূসর বিকেল।
অনবরত পাখিদের কলরব
নীড়ে ফিরে যাওয়ার স্লোগান।
শেষ বিকেলের সূর্যটা
লাল আগুনের লেলিহান দিয়ে
শাসাতে চায় ধরাকে।

মেষনার স্রোতশীল নদীর
জলে,বালিহাঁস খেলে যায়।
দু’একটা কাঠবিড়ালির ছুটাছুটি
এগাছের ডাল ছেড়ে ওগাছে।
মাঝিমাল্লারা অাপন নিবাসে
ফিরে যাওয়ায় মত্ত।

কিছু জেলে ছোট ডিঙ্গিনাওয়ে
ভেসে ইলিশের জাল
ফেলে অপেক্ষার প্রহরে।
গায়ের বধু ব্যস্ত হয়ে পরে
রান্নাবান্না শেষ করে
সন্ধ্যা রাতের প্রদীপ জ্বেলে।

জোনাকগুলো নিভুনিভু আঁধারে
আলো জ্বেলে হারিয়ে যায়
রাতের আধাঁরে।
যখন সন্ধ্যা নামে
নীড়ে ফিরে যাওয়ার ছুটাছুটি
অনবরত অনন্ত আদি।

উপলব্ধি

অনুভূতি যখন থেঁতো হয়ে যায়, কাব্যরা তখন পায়চারি করে। নিখুঁত আলপনায় জড়ো হয় কাশফুলে, উড়ে যায় বেদনাতুর কোন স্পর্শের আড়ালে। কাবিনের জমিনে করে জীবনের চাষাবাদ, ফুলের অনাবিল সুবাস, অজস্র কলরব। শেষ ট্রেনের যাত্রী অনন্তের পথে, তখনও নির্মলা সৌজন্য।

দু’একটি কাঠ-ঠোকরা অনুপম কারুকার্যে আপন নিবাস সাজায়, হুতুম প্যাঁচা অবিচল আঁধারে। নক্ষত্রের নিপুণ চিত্রে ঊর্মিমালী, বেলাভূমিতে জাপটে পড়ে সীমাহীন হুংকারে। থেমে নেই কেহ আজো উচ্ছ্বাস আমোদ সৃষ্টি প্রণোদনায়। হেমন্তের ঝরাপাতার মরমর কুহেলিকার সাইরেন, একটি অনুভূতি যন্ত্রনা অথবা যৌবনের।