ট্যাগ আর্কাইভঃ সুশিক্ষা

মানুষের মতো মানুষ কাকে বলে?

তিন থেকে সাড়ে তিন বছর হলো প্রিতম নামের ছেলেটির এই সুন্দর পৃথিবীতে আসা। প্রিতম যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটা-চলা শুরু করলো, ঠিক তখনই শুরু হয়ে গেল প্রিতমের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান চিন্তাভাবনা। চিন্তা শুধু কোন স্কুলে ভর্তি করবে! আর কোথায় পড়াবে! কীভাবে প্রিতমকে মানুষের মতো মনুষ করবে! এমন চিন্তাভাবনার মাঝে ছোট প্রিতমকে নিয়ে অভিভাবকদের স্বপ্ন দেখারও কমতি নেই!

প্রিতমের বয়স যখন চার বছর ছুঁই ছুঁই, তখন বাসার সামনে থাকা একটা নামী-দামী কিন্ডারগার্ডে প্রিতমকে ভর্তি করা হলো। যাকে বলে ইংলিশ ইস্কুল। স্কুল আর লেখাপড়া যে কী, ছোট প্রিতম তা বুঝে না। প্রিতম শুধু বুঝে মুখে হাতের বুড়ো আঙুল পুরে দিয়ে আঙুল চোষা। আর মজার মজার খাবার খাওয়া, সুন্দর সুন্দর জামা পেন্ট; সুন্দর সুন্দর খেলনা দিয়ে খেলা। কিন্তু এখন স্কুলের সময় হলে মজার খেলা বাদ দিয়ে প্রিতমকে স্কুলে যেতে হয়। স্কুলে না গেলে মায়ের বকুনি খেতে হয়। সময়সময় বাবার বকুনিও খেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে মাজার খেলে ফেলে রেখে, মন খারাপ কোরে সময়মত প্রিতমকে স্কুলে পৌঁছাতে হয়।

স্কুলে যাবার সময় স্কুল ব্যাগের ভেতরে দামী পাউরুটি, ডিম, চকলেট সহ আরও অনেকরকমের মজাদার খাবারও ভরে দেয়। এসব প্রিতমের কাছে খুবুই পছন্দের। শুধু স্কুল আর বই, কলম, খাতা প্রিতমের কাছে সবসময়ই অপছন্দের। তবু প্রিতমের মা-বাবা সবসময়ই বলে, নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে। মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে, বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে; অনেক বড় মাপের মানুষ হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

মা-বাবার এসব কথা ছোট প্রিতমের একেবারেই পছন্দ হয় না। প্রিতমের পছন্দ হয় না এই কারণে যে, “আমিতো মানুষই আছি! আমাকে আবার মানুষের মতো মানুষ হতে হবে কেন? মহল্লার আরও দশজনের মতো আমারও হাত আছে, পা আছে, নাক আছে, কান আছে, চোখ আছে, সুন্দর মুখমণ্ডল সংযুক্ত একটা মাথাও আছে। তাহলে আমাকে আবার কোনধরনের মানুষের মতো মানুষ হতে হবে?” এসব নিয়ে প্রিতম একা একা ভাবে। আর মানুষের মতো মানুষ খোঁজে।

প্রিতম মনে করে মানুষের মতো মানুষ মনে হয় অন্যরকম মানুষ! হয়তো ওইসব মানুষের চোখ হবে চারটে। হাত হবে চারটে। মাথা হবে দুটো। আর নাহয় হবে অনেক লম্বা মানুষ। যেমন– তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। আমরা সবাই ওই তালগাছের মতো লম্বা মানুষটির হাঁটুর নিচেই পড়ে থাকবো, এমন।

এরকম ভাবনা নিয়ে প্রিতম স্কুলে যায়, লেখে, পড়ে। প্রিতম রাস্তায় বেরুলেই মানুষের মতো মানুষ খোঁজে। কিন্তু পায় না! তবুও স্কুলে যাবার সময় মা বলে, ভলো করে পড়তে হবে! বাবা বলে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। এসব কথা শুনলেই প্রিতমের শরীরে জিদ ওঠে!

একদিন প্রিতম তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা মানুষের মতো মানুষ দেখতে কেমন? ওইসব মানুষগুলা কি তালগাছের মতো লম্বা? নাকি চার হাত আর চৌপায়া?”
প্রিতমের বাবা বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়, “তা ওইসব এখন তোমার মাথায় ঢুকবে না বাবা! তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাও! একদিন তুমি নিজেই মানুষের মতো মানুষ হবে।”
মা- বাবার এরকম কথায় প্রিতম সবসময়ই ভাবে। প্রিতমের ভাবার যেন শেষ নেই।

স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় প্রিতম অনেক বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকে ভিক্ষা করতে দেখে। কারোর হাত নেই। কারোর পাও নেই। কেউ কুঁজো। কারোর চোখ নেই! এরকম বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকদের দেখে প্রিতম মনে মনে ভাবে, এরাই মনে হয় মানুষের মতো মানুষ! কিন্তু এরা আরও দশজনের কাছে হাত পাতে কেন? প্রিতমের হিসেব মেলে না! আবার ভাবে!

এসব নিয়ে রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে! ভাবতে ভাবতে প্রিতম একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিতম একদিন ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে আকাশছোঁয়া এক লম্বা মানুষ। মানুষটি স্কুলে যাবার মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রিতম দূর থেকে আকাশছোঁয়া লম্বা মানুষটিকে দেখে দৌড়ে তার সামনে যেতে লাগলো। প্রিতম খুবই খুশি! দৌড়াচ্ছে আর মনে মনে বলছে, “এই তো পেয়ে গেছি মানুষের মতো মানুষ!
প্রিতম আকাশছোঁয়া লম্বা মানুষটির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার বাড়ি কোথায়? তুমি রাতে ঘুমাও কোথায়?”
আকাশছোঁয়া লম্বা মানুষটি হেসে বললো, “আমার মাপমতো তোমাদের এই দুনিয়ার কেউ ঘর বানিয়ে দিতে পারে না বিধায়, আমাকে সবসময় খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়। রাতে ঘুমের ভাব হলে বড় একটা মাঠে গিয়ে সোজাসুজিভাবে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকি। মাঠে যখন শুয়ে থাকি, তখন আমার শরীরের উপর দিয়ে কতো শেয়াল কুকুর এদিক ওদিক যায়, তা বলে আর শেষ করতে পারবো না। তবু শেয়াল কুকুরকে কিছুই বলি না, আমি চুপচাপ শুয়েই থাকি। কারণ, ওদের-ও-তো এদিক সেদিক যেতে হয়, তাই।”
প্রিতম আবার জিজ্ঞেস করে, তুমি এতো বড় লম্বা হলে কী করে? আমাকে তোমার মতো এতো বড় লম্বা করে দিতে পারবে?”
প্রিতমের কথা শুনে আকাশছোঁয়া লম্বা মানুষটি হেসে বললো, “এতো বড় লম্বা হওয়াটা আমার জন্য দুর্ভাগ্য! আমি এখন ঠিকমত খাবার পাই না। তোমাদের মতো রাতে আরাম করে ঘুমাতে পারি না। তুমি আমার মতো এতো বড় লম্বা হবার স্বপ্ন দেখো না। যদি হও, তাহলে আমার মতোই তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে!” এই বলেই আকাশছোঁয়া লম্বা মানুষটি অদৃশ্য হয়ে গেল! হঠাৎ প্রিতমের ঘুম ভেঙে গেল! প্রিতম হতবাক হয়ে এদিক ওদিকে চাচ্ছে, কিছুই দেখছে না। এবার প্রিতম একা একা হাসতে লাগলো!

প্রিতম এখন খেতে বসে হাসে। গোসল করতে গেলে হাসে। আবার ভাবতে থাকে। স্কুলের ক্লাসে বসে হাসে। স্কুল শিক্ষক প্রতিদিনের হোম রুটিন দেখে ভেরি গুড বলে। মা- বাবার মতো স্কুল শিক্ষকও বলে, “লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।”

স্কুল শিক্ষকের মুখে একথা শুনে প্রিতম খিটখিটে হাসে। প্রিতমের এরকম হাসি দেখে স্কুল শিক্ষক প্রিতমকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “আমার কথা শুনে ক্লাসের আর কেউ টুঁশব্দ করেনি। অথচ তুমি হাসলে কেন?”

শিক্ষকের প্রশ্নে প্রিতমের কোনও শব্দ নেই! প্রিতম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার ক্লাস শিক্ষক ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার! কথা বলছ না যে?”
প্রিতম মাথা উঁচিয়ে ক্লাস শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে বললো, ” স্যার, মানুষের মতো মানুষ কোথায় গেলে দেখতে পাবো? মানুষের মতো মানুষ দেখতে-ই-বা কেমন? ওইসব মানুষগুলো কি অনেক লম্বা? নাকি একেবারে বেঁটে মানুষ? সেসব মানুষের মাথা কি দুইটা? হাত কি চারটা?”
এসব বলেই প্রিতম আবার হিহিহি করে হাসতে লাগলো!

প্রিতমের হাসিতে ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী হাসতে লাগলো।
ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রীদের হাসি দেখে ক্লাস শিক্ষক বিরক্ত হয়ে খুব জোরে ধমক দিয়ে বললো, “গাধা কোথাকার! যাও, নিজের জায়গায় গিয়ে বসো।”
স্কুল ছুটি হলে ক্লাসের সব ছাত্ররা হাসতে হাসতে প্রিতমকে সাবাস সাবাস বলতে লাগলো!

প্রিতম বাসার বুয়ার সাথে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে স্বপ্নে দেখা আর ক্লাস শিক্ষকের কথা মনে কোরে নিজে নিজেই হাসতে লাগলো!
প্রিতমের হাসি দেখে মা জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার বাবা প্রিতম? আজ তোমাকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে! ক্লাসে পড়া মনে হয় খুবই ভালো করেছো? আমার বিশ্বাস তুমি একদিন সত্যি মানুষের মতো মানুষ হবে! তোমাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন যেন পূরণ হয় বাবা!”
মায়ের কথা শুনে প্রিতম এবার আরও জোরে জোরে হাসতে লাগলো!
প্রিতমের হাসি দেখে মা বললো, “কী ব্যাপার, আজকাল তুমি একটু বেশি বেশি হাসছো যে? হয়েছে হয়েছে, আর হাসতে হবে না! স্নান করে খাওয়া-দাওয়া করে রেস্ট নাও!কিছুক্ষণ পর তোমার হোম টিচার আসবে! স্কুলের রুটিন দেখাবে! ঠিকমত পড়বে!”
এই বলে প্রিতমের মা চলে গেল। প্রিতম তখনো মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।

প্রিতম স্নান করে খাওয়া-দাওয়া কোরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর প্রিতমের হোম টিচার ঘরে ঢুকলো। কাজের বুয়া প্রিতমকে ঘুম থেকে ডেকে উঠালো। হোম টিচার প্রিতমকে স্কুলের রুটিন দেখাতে বললো। প্রিতম স্কুলে দেওয়া আগামীকালের রুটিন দেখালো। সাথে স্কুলে দেওয়া গতকালের হাতের লেখাও দেখালো। হাতের লেখায় স্কুল শিক্ষকের লাল কলমের ভেরি গুড লেখা দেখে হোম টিচার বললো, “হ্যা, ঠিক আছে প্রিতম! এভাবেই তোমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। হোম টিচারের কথা শেষ হতে-না-হতেই প্রতিম হিহিহি করে হাসতে লাগলো।
প্রিতমের হাসি দেখে হোম টিচার হেসে দিয়ে বললো, “হয়েছে, আর হাসতে হবে না। এবার বই বের করো?”
প্রিতম বই না বের করেই হাসতে লাগলো। এবার হোম টিচার রাগ হয়ে বললো, “কী ব্যাপার বলো তো শুনি? তুমি এতো হাসছো কেনো? স্বপ্ন দেখেছো নাকি?”
প্রিতম হেসে বললো, “হ্যা স্যার!”
হোম টিচার জিজ্ঞেস করলো, “কী স্বপ্ন দেখেছো?”
প্রিতম হাসতে হাসতে সেদিনের স্বপ্নের কাহিনী হোম টিচারকে শুনালো। প্রিতমের দেখা স্বপ্নের কাহিনী শুনে হোম টিচারও হাসতে হাসতে প্রিতমের মাকে সামনে ডেকে আনলো।
প্রিতমের মা হোম টিচারের কাছে প্রিতমের স্বপ্নে দেখা কাহিনী শুনে হেসে বললো, “তাই তো বলি, এতো হাসি কেন? এই তোমার হাসির কাহিনী?”
শুনো বাবা প্রিতম, ‘মানুষের মতো মানুষ হতে হবে’, ওটা বাবা কথার কথা। আসলে যে অনেক পড়ালেখা করে, সে অনেক কিছু জানতে পারে। আর যে অনেক কিছু জানতে পারে সে অনেক মানুষের মধ্যে সেরা মানুষ হয়। তাকে লোকে বলে জ্ঞানী! জ্ঞানীগুণী মানুষেরা দেশ ও দশের উপকারে আসে। তাঁরা সবসময়ই দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো কিছু দেওয়ার আশা করে। তাদেরই মানুষের মতো মানুষ বলে। লেখাপড়া শিখে তুমিও একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে।             

ছবি সংগ্রহ ইন্টারনেট থেকে।

সাকসেস পয়েন্ট আয়োজিত, শিক্ষা সফর ২০১৯

সাকসেস পয়েন্ট, গোয়ালাবাজার।

সিলেটের, ওসমানীনগর উপজেলার, গোয়ালা বাজারে অবস্থিত” প্রাইভেট কোচিং সেন্টার” সাকসেস পয়েন্ট এর আয়োজন করেছে শিক্ষা সফরের। প্রথম বারের মতো এবারও শিক্ষা সফরের আয়োজন। বিভিন্ন পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে ১৩ই মার্চ ২০১৯ রোজ বুধবার শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়।

কোথায় যাওয়া হবে? তাই নিয়ে শিক্ষার্থীর মাঝে কত কি যে প্রশ্ন জাগে। প্রকৃতির লীলাভূমি দেখার যেন শেষ নেই। অনেক আলোচনার পরে, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, ভ্রমণে নাকি জাফলং যাবে। আর কোথায় যাওয়া হবে? শ্রীপুর পার্ক আর মনিপুরী রাজ বাড়ি।

বাংলাদেশের সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পাশে, একটি পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোনয়ন প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে মন প্রাণ শীতল হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক বালুকণা, পাথর আর পানির সংমিশ্রণ যেন মন ভুলানো অপূর্ব দৃশ্য।

অলরাউন্ডার শিক্ষার্থী হতে হলে

অলরাউন্ডার শিক্ষার্থী হতে হলে

শিক্ষাজীবন মানেই হচ্ছে নানান রকম প্রতিযোগিতা এবং পড়াশুনার চাপ। আর তার ওপর পরীক্ষা কাছাকাছি আসলে তো কথাই নেই। প্রজেক্ট শেষ করা, ফাইনাল পেপার তৈরি করা, প্রেজেন্টেশন দেয়া এবং অবশ্যই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া—সবকিছু মিলিয়ে একটা হুলুস্থুল অবস্থা। এর পাশাপাশি যদি চাকরিজনিত জটিলতা থাকে, তবে প্রশান্ত মন নিয়ে থাকাটা বেশ মুশকিল হয়ে যায়। এ সমস্ত চাপজনিত টেনশনে থেকেও মনকে প্রশান্ত রাখার জন্য মেডিটেশনের কোনো জুড়ি নেই।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, প্রতিদিনের নিয়মিত মেডিটেশন সব ধরনের মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য দারুন কিছু সুফল বয়ে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে এবং শিক্ষার্থী জীবনটাকে আরো আনন্দপূর্ণ করে তোলে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা। শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন গবেষণা থেকে বেশ চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো :

অঙ্ক ও ইংরেজিতে ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা
অঙ্ক ও ইংরেজিতে ভালো করতে পারছিল না ক্যালিফোর্নিয়ার এমন ১৮৯ শিক্ষার্থীর ওপর ২০০৯ সালে একটি গবেষণা চালানো হয়। তিন মাস ধরে প্রতিদিন দুবেলা তাদেরকে মেডিটেশন করতে বলা হয়। ফলাফল চমৎকার। দেখা গেল তিন মাস পর এদের মধ্যে ৭৮ জনই শুধু অঙ্ক আর ইংরেজিই নয়, সব বিষয়েই আগের চেয়ে ভালো করছে। বাকিরাও ভালো করছিল তাদের চেয়ে, যারা এই মেডিটেশন প্রোগ্রামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

মানসিক সমস্যার সমাধান এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
এটেনসন ডেফিসিট হাইপার-এক্টিভিটি ডিস-অর্ডার হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ দেখা যায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এত বেশি মাত্রায় সিরিয়াসনেস কাজ করে যে, কোনো একটা বিশেষ কাজে তারা মন দিতে পারে না। ফলাফল হলো শুধুই অস্থিরতা। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা এবং মনোযোগ বাড়াতে মেডিটেশন খুবই ভালো একটি প্রক্রিয়া। জার্নাল অফ সাইকোলজিতে এ নিয়ে গত বছরে দারুন একটা লেখা ছাপা হয়েছে । মাধ্যমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। সেখানে তাদের তিন মাস প্রতিদিন দুই বেলা মেডিটেশন করতে বলা হয়েছে। তিন মাস পরে দেখা গেল, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা এবং এই মানসিক রোগের উপসর্গ প্রায় ৫০% কমে গেছে। গবেষকরা আরো দেখেছেন, মেডিটেশন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়েছে।

মানসিক চাপ থেকে মুক্তি
মানসিক চাপ অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরই একটা বড় সমস্যা। দেখা যায়, ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও মানসিক চাপের কারণে পরীক্ষায় ভালো করতে পারছে না বা নানারকম শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালে সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ৬৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ওপর একটি পরীক্ষা করেন। পরীক্ষাভীতি ছাড়াও নার্ভাসনেস, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মনোযোগ কম ইত্যাদি নানারকম সমস্যা এদের ছিল। তিন মাস নিয়মিত দুবেলা মেডিটেশনের পর দেখা গেল, এদের মনোযোগ, সচেতনতা এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়েছে এবং পরীক্ষার সময়, যখন নাকি সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী থাকে তখনো তারা বেশ রিল্যাক্সড ছিল এবং আগে এসময় যে-সব শারীরিক সমস্যায় তারা ভুগত, এবার আর তা হয় নি।

আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন
মেডিটেশন যে মস্তিষ্কের কর্মকাঠামোতে পরিবর্তন ঘটায় এটা এখন গবেষণাতেই প্রমাণিত। ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওরিগনের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। এদের মধ্যে ২২ জনকে বাছাই করা হয় মেডিটেশনের ওপর একটা পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেয়ার জন্যে। বাকিদেরকে শুধু রিলাক্সেশনের মতো হালকা কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে ব্রেন ইমেজিং পরীক্ষা করে দেখা যায়, যারা মেডিটেশনের কোর্সে অংশ নিয়েছে তাদের ব্রেনে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে ব্রেনের যে অংশ আবেগ এবং আচরণকে প্রভাবিত করে, সে অংশে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। যার মানে হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরোধপূর্ণ আচরণে না জড়ানো এবং মানসিক চাপ সামলানো তাদের পক্ষে এখন বেশ সহজ। মজার ব্যাপার হলো, মাত্র ১১ ঘণ্টা মেডিটেশন অনুশীলন করেই তাদের মধ্যে এ পরিবর্তন দেখা গেছে। অন্যদিকে যারা কন্ট্রোল গ্রুপে ছিল, তাদের মধ্যে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি।

মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি

ড্রাগ বা মাদকে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা তরুণদের মধ্যেই বেশি। এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আবার শিক্ষার্থী। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করে তারা সাধারণত মাদকাসক্ত হয় না। এলকোহলিজম ট্রিটমেন্ট কোয়ার্টারলি-তে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, শিক্ষার্থী হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক—মেডিটেশন করলে তাদের সবার মধ্যেই মাদকাসক্তির প্রবণতা কমেছে, কমেছে অসামাজিক আচরণের প্রবণতা এবং এটা সিগারেট থেকে শুরু করে মদ, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি যে-কোনো মাদকের ক্ষেত্রেই সমানভাবে কার্যকরী বলে দেখা গেছে। এমনকি প্রচলিত কাউন্সেলিং বা সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম যা করতে পারে নি, শুধু মেডিটেশন করেই তার চেয়ে তিনগুণ বেশি ফল পাওয়া গেছে।

অনুপস্থিতির হার কমায়
২০০৩ সালে গবেষক ভার্নন বার্নেস, লিনেট বাউযা এবং ফ্রাংক ট্রিবার কিশোরদের ওপর মেডিটেশনের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করেন। ৪৫ জন আফ্রিকান-আমেরিকান হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হলো। একগ্রুপ চার মাস ধরে নিয়মিত মেডিটেশন করল। আরেক গ্রুপ কিছুই করল না। গবেষণা শেষে দেখা গেল, যারা মেডিটেশন করেছে তারা ক্লাসে অনুপস্থিত কম ছিল। শিক্ষক বা ক্লাসমেটদের সাথে ভালো আচরণ করেছে এবং সবার সাথে সহজভাবে মিশতে পেরেছে। অন্যদিকে যারা মেডিটেশন করে নি, তাদের মধ্যে অস্থিরতা, আবেগের ভারসাম্য না থাকা, সহপাঠীদের সাথে অসহিষ্ণু বা সহিংস আচরণ, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মবিধ্বংসী আচরণও দেখা গিয়েছিল।

সুখানুভূতির অনুরণন এবং আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা
মেডিটেশন একজন মানুষের মধ্যে ‘আমি সুখী এবং পরিতৃপ্ত’ এরকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি করে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের একদল গবেষক ৬০ জন ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা করেন। চার মাস নিয়মিত মেডিটেশন করার পর দেখা গেল, আগের চেয়ে তাদের মধ্যে ইতিবাচক আবেগ বেড়েছে, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি এবং মমত্ববোধ বেড়েছে, আত্মমর্যাদাবোধ এবং মানসিক পরিপক্কতা বেড়েছে।

দেহ ও হার্টের সুস্থতা
মেডিটেশন শিক্ষার্থীদের মনের পাশাপাশি দেহের জন্যও বেশ উপকারী। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, প্রতিদিন মেডিটেশন করলে ব্লাড প্রেসার, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা বেশ কমে যায়। তেমন কোনো বাছবিচার না করে এ গবেষণাটির জন্যে মোট ২৯৮ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। এদের কেউ কেউ মেডিটেশন করত, কেউ কেউ করত না। কেউ আবার ছিল উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এমন ঝুঁকির সম্মুখীন। তিন মাস পর এদের ব্লাড প্রেসার মাপা হলো, দেখা হলো তাদের মানসিক এবং আবেগের অবস্থা। দেখা গেল, বিশেষত উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকা ছাত্রদের এই ঝুঁকি কমে গেছে প্রায় ৫২%।

বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি
ছাত্রজীবনে প্রায় সবাই বেশ চিন্তাগ্রস্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, একজন শিক্ষার্থী যে সমস্ত চাপ, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতায় ভোগে—তা দূর করার জন্য মেডিটেশন হলো সবচেয়ে ভালো সমধান। চার্লস ড্রিউ ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীরা মেডিটেশন করেছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গগুলো অনেক কমে গেছে। কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় ৪৮% কম। এমনকি এদের কেউ কেউ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের রোগী পর্যন্ত ছিল।

বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি
মস্তিষ্ককে শাণিত করার এক চমৎকার মাধ্যম হচ্ছে মেডিটেশন। এজন্যেই বলা হয় নিয়মিত মেডিটেশন করলে বুদ্ধিমত্তা বাড়ে। মহাঋষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন করে হাইস্কুলের স্টুডেন্টদের সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তা বেড়েছে। বেড়েছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। এমনকি বাস্তব বুদ্ধি আইকিউও বেড়েছে মেডিটেশন অনুশীলনের ফলে।

( কোয়ান্টাম আর্টিকেল থেকে- দাউদুল ইসলাম, কবি ও প্রাবন্ধিক )