কামাল উদ্দিন মেহেদী এর সকল পোস্ট

অনেক অনেক বছর পরের গল্প (কল্প গল্প)

২০৫৭ সাল। চোখে ঠিকমত দেখতে পাই না। শরীরেও আগের মত বল নেই। ১৩ বছরের নাতি আব্দুল্লাহ তার মোবাইলে কি যেন করছে। এখনকার মোবাইলগুলো আমাদের যুগের মত আদ্যিকালের নয়, চোখের ইশারায় চলে, ফাংশানগুলো আমি ঠিক করে বুঝিও না বাপু! উঁকি দিয়ে দেখলাম ফেসবুক ব্যবহার করছে। খুব শখ হলো নিজের আইডিতে একবার লগিন করি, বহুবছর ফেসবুকে ঢোকা হয় নি। নাতিকে সে কথা বলতেই ও লগিন করিয়ে দিল। ভাগ্যিস শেষবার নিজের জন্ম তারিখকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম! না হলে এ বয়েসে এসব ছাঁইপাস মনে থাকতো না।

ফেসবুকে ঢুকে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আগে আমার চ্যাটলিস্টে পাঁচ-ছয়শ জনকে অনলাইনে দেখতাম। আজ দেখি মাত্র ১১ জন, কিন্তু পরিচিত কাউকে দেখলাম না, অনেকের নামটাও ভুলে গেছি। হঠাৎ করে মনে পড়লো ফ্রেন্ডলিষ্টটা একটু চেক করি। ফ্রেন্ডলিষ্ট থেকে প্রথমে সিদ্দিকি ভাই’র প্রোফাইলে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখলাম তার নামের পাশে একটা শব্দ লেখা- ”Remembering”. যাষ্ট ফ্রিজ হয়ে গেলাম…। আমার মৃত্যুর পরও হয়তো আমার কোন এক নাতি অনেকটা শখ করেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে রিকোয়েষ্ট করে, আমার একাউন্টটিও “মেমোরাইজড” প্রোফাইল করে দিবে। অনেক স্মৃতি দু’চোখের কোনে এসে ভীড় করলো এবং দু’ফোটা অশ্রু হয়ে ঝরে গেল।

পাগলা সাইফের কথা মনে পড়লো। অনেকদিন ধরে যোগাযোগ নেই। বছর তিনেক আগে একবার ওর ছোট ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছিল, বলেছিল- বুড়োর শরীরটা তেমন ভালো নেই, সারাদিন চুপচাপ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে। যাইহোক ওর প্রোফাইলেও উঁকি দিলাম। দেখলাম- শেষ পোষ্টটা ৯ বছর আগের। ওর হাতের তোলা একটা ছবি দেয়া- জানালার ভেতর থেকে তোলা একটা ফুলের ছবি। ছবিটা ঠিক করে তুলতে পারেনি, একটু বেঁকে গেছে। বয়স বেশী হলে যা হয় আর কি! পাগলাটা ফটোগ্রাফির শখটা এতদিন জিঁইয়ে রেখেছিল! এখন কোথায় আছে, কে জানে!

এরপর রবিন ভাইয়ের প্রোফাইলে ঢুকলাম। তার শেষ পোষ্টটাও ১২ বছর আগের! জীবন নিয়ে লেখা বেশ কয়টি রিয়ালিষ্টিক পোষ্ট দেখলাম, তাতে কিশোরদের কিছু কমেন্ট- “খুব ভালো লিখেছো দাদু”। লেখার হাইলাইটসগুলো স্ক্রল করতে করতে অনেক বছর আগের একটা পোষ্টে নজর আটকে গেল, খুব সযতনে লেখা ছোট্ট একটা লাইন- “প্রতিটা গল্পের একটা সমাপ্তি রয়েছে, কিন্তু জীবনের ক্ষেত্রে, প্রতিটা সমাপ্তির অর্থ হলো একটা নতুন শুরু।” ভাবলাম… বেঁচে থাকাকালীন কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু জীবনের শেষ সমাপ্তির (মৃত্যু) পর, এই জগতে আর নতুন করে শুরু করা যাবে না। ভাবনাটা আমাকে অসুস্থ করে দিলো, খুব খারাপ লাগলো… খুউব। যখন তরুণ ছিলাম, তখন তার রিয়ালিষ্টিক কথাগুলো প্রেরণা যোগাতো। বুড়োটা এখন কোথায় আছি জানি না, শেষবার শুনেছিলাম খুব অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। আসলে আমাদের বুড়োদের দুনিয়াটা খুব ছোট, তাই ইচ্ছে করলেই সবার সাথে যোগাযোগ হয় না…।

আরো অনেকের কথা মনে পড়ছে, কিন্তু কারো প্রোফাইলে ঢুকতে ভয় পাচ্ছি। যদি আরও একটি “মেমোরাইজড” প্রোফাইল দেখি! বুড়ো মানুষ, খুব ভয় পাই, মৃত্যুর ভয়! শেষবারের মত মেঘাদ্র নীল ভাইয়ের প্রোফাইলে ঢুকলাম। ভরা যৌবনে বুড়োটা প্রচুর লিখতো, কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে তার কোন লেখা নেই! তার কিছু কিছু লেখা আমার বেশ ভালো লাগতো। এই যেমন কয়েক যুগ আগের একটা লেখা এইমাত্র চোখে পড়লো- “গভীর চিন্তা… জীবনবোধ, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও মৃত্যু নিয়ে।” খুব জানতে ইচ্ছে করছে- চিন্তিত লেখক জীবনবোধ নিয়ে এখনো কি চিন্তাই করছেন, নাকি মৃত্যুর করাল গ্রাস তাকে সেই চিন্তা হতে মুক্তি দিয়েছে! বিশ্বাস করুন, জানার কোন উপায় নেই। ঐ যে বলেছিলাম- বুড়োদের দুনিয়াটা খুব ছোট, এখানে ইচ্ছে করলেই সবকিছু করা যায় না।

অনেক কাজিন এবং শুভাকাংক্ষীদের এই মুহূর্তে মনে পড়ছে…। কিন্তু হাতেগোনা ক’জন ছাড়া বাকীদের সাথে এখন আর যোগযোগই নেই। জীবনের টানে কে কোথায় হারিয়ে গেছে! ইচ্ছে করলো কয়েক জনকে ম্যাসেজ দেই, কিন্তু ছেলেমানুষি করে কি লাভ? জানি ম্যাসেজগুলো সীন হবে না। হয়তো ম্যাসেজ সীন করার লোকগুলোই আজ বেঁচে নেই। শুধু তাদের প্রোফাইলগুলোই কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে…। কে বেঁচে আছে, আর কে বেঁচে নেই- সে হিসেবটুকুও রাখতে পারি নি। ইনবক্সে রয়ে যাওয়া চ্যাটগুলোও পড়তে ইচ্ছে করছে না, বেঁচে থাকতে চাই পুরনো স্মৃতিগুলো হতে।

লগআউট করার আগে ভাবলাম, একটা ষ্ট্যাটাস লিখি- “বেঁচে আছি…।” কিন্তু পরক্ষণেই খেয়াল হলো- আমার বেঁচে থাকায় কার কি আসে যায়, শুধু বুড়িটা ছাড়া। অনেক্ষণ হলো বুড়িটাকে রুমে দেখছি না, গেলো কোথায়! বুড়িটার জন্যে খুব চিন্তা হয়। জানি, কেউ আমাকে ভালোবাসুক আর নাইবা বাসুক, বুড়িটা ঠিকই এখনো আমাকে ভালোবাসে। খুুউব ভালোবাসে…।বাসার সামনের লনে দেখছি একটা গোলাপ ফুটে আছে! যাই নাতিকে দিয়ে গোলাপটা আনিয়ে রাখি। উঁহু… আমার জন্যে নয়, বুড়িটার জন্যে।

কামাল উদ্দিন মেহেদী
[প্রথম লেখা কল্প গল্প]

ভালো থাকুক ভালোবাসা!

রাফি ভাইকে কখনো কাঁদতে দেখি নি। শত আঘাতেও সবসময় হাসিমুখ করে থাকতেন। কিন্তু যেদিন তার স্ত্রী সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, সেদিন তার চোখে আমি পানি দেখেছিলুম, ভালোবাসার আকুলতা দেখেছিলাম। একটা সময় পর রাফি ভাইয়ের চাকুরি চলে গেল। সংসারে খুব অভাব ছিল কয়েক বছর। সেই সময়টাতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায় ‘খোলা তালাক’ নিয়ে। সেদিন রাফি ভাইকে আমি দ্বিতীয়বার কাঁদতে দেখেছিলাম।

রাফি ভাইয়ের ঘরে আবারো প্রাচুর্য ফিরে এসেছে, খুব ভালো একটা চাকুরি হয়েছে তার। রাফি ভাই একদিন এসে বললেন-
: ভাই, বৌটা কান্নাকাটি করে বলছে ভুল হয়ে গেছে। এখন সে আবার সংসারে ফিরতে চায়।
: যে মেয়ে আপনার বিপদে আপনাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে, তাকে আবার জীবনে আনতে চান, ভাই?
: সবই ঠিক আছে, কিন্তু আমি তারে ভালোবাসছিলাম তো!
: ভাই! ভালো তো সেও আপনাকে বেসেছিলো! কি প্রতিদান পেলেন!

রাফি ভাইয়ের চোখে আবারো পানি দেখলাম, তৃতীয়বারের মত…।

খুব বলতে ইচ্ছে করছে- রাফি ভাই, সে আপনার ভালোবাসা পাবার যোগ্যই নয়। কিন্তু…. থাক…। রাফি ভাইরা হয়তো এযুগের মানুষ নয়, এযুগের মানুষগুলো এতটা ভালো হয় না। ভালো থাকুক রাফি ভাইয়ের ভালোবাসা। আল্লাহ ভালো রাখুন তাকে।

[Re-writing: Kamal Uddin Mehedi.
একটি সত্য জীবনগল্প অবলম্বনে ছায়াগল্প। মূল কাহিনীর লেখকদ্বয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।]

আমার চোখে চেন্নাইঃ রিভিউ ০৩

ভেবেছিলাম চেন্নাই নিয়ে রিভিউ লেখা দ্বিতীয় পর্বেই শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু নতুন কিছু জানার আনন্দে আর লেখক মনের উৎসাহে তৃতীয় পর্বও লিখতে বাধ্য হলাম…।

১) তামিল ভাষা আমার জন্যে দুর্ভেদ্য, এক শব্দও এখনো বুঝিনি। পুরাসাওয়াকাম হাই রোডের যেখানে আছি, সেখানকার ম্যানেজার বাবু অমায়িক লোক। খুব ভালো ইংরেজী বলতে পারেন, তাই রক্ষে। তার সাথে আমার আড্ডা জমে ভিনদেশী ভাষায়, ইংরেজীতে। আমি অবশ্য তেমন ভালো ইংরেজী বলতে পারি না। শুধু বিগেনার লেভেলে বলতে পারি, মাঝে মাঝে আটকেও যাই। যেমন অনেক চেষ্টা করেও ‘ঝিম ঝিম করা’ শব্দের ইংরেজী বোঝাতে পারি নি, হা হা…। ও হ্যাঁ, এখানে আরও তিনটে নেপালিও আছে। ছোটটা দু’এক শব্দ বাংলাও বোঝে। নেপালে নাকি প্রচুর বাঙালি ভ্রমণে যায়। এই নেপালিরা দেখলাম ইন্ডিয়ায় ভিসা ছাড়াই চলে এসেছে এবং এখানে কাজ করছে।

২) ম্যানেজার বাবুর সাথে চেন্নাই ও তামিল নাডু রাজ্য নিয়ে টুকটাক আলাপ হলো। এই রাজ্যের অনেক মানুষ নাকি হিন্দি ভাষা জানেই না! এখানে আমাদের দেশের মতোই সরকারি চাকরির অনেক ডিমান্ড। মানুষ সরকারি চাকুরির পেছনে অবিরাম ছুটছে। এখানেও সরকারি চাকুরি পেতে ঘুষ দেয়া লাগে, এমনকি বেসরকারি চাকরিতেও ৪-৫ লাখ রুপি ঘুষ নেয়। ভদ্রলোকের সাথে বাংলা ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হলো। ভাষার জন্যে আমাদের অবদান, স্বাধীনতা প্রসঙ্গ নিয়েও বললাম। তিনি ভেবেছিলেন আমরা বাংলার পাশাপাশি উর্দুও বলি! বললাম, আমাদের দেশের মানুষ উর্দু ভাষা জানেনা বলতে গেলেই চলে, বরং হিন্দি কিছুটা জানে। এছাড়াও তাকে সারা বিশ্বের মুসলিমদের সংখ্যা সম্পর্কে বললাম, একই রকম সালাত পড়ি জানালাম। গর্বের সাথে বললাম, তোমাদের দেশের কিছু রাজ্যের সাম্প্রদায়িক অবস্থার চেয়ে আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি অনেক ভালো। তোমাদের দেশের মুসলিমদের চেয়ে আমাদের দেশের হিন্দুরা বরং বেশী সুখে আছে। তিনিও বোধহয় ব্যপারটা জানেন।

৩) চেন্নাইতে বাঙালি এরিয়া বলে খ্যাত- গ্রিমস রোড। এই রোডেই রয়েছে এ্যাপোলো হসপিটাল ও শংকর নেত্রালয়। তাই চিকিৎসার জন্যে ৯৫% বাঙালিই এখানে এসে উঠে। আমি অবশ্য মানি এক্সেঞ্জের জন্যে এই পর্যন্ত দু’বার গিয়েছিলাম গ্রিমস রোডে। এখানে কোলকাতার বাঙালি ও বাংলাদেশীদের দেখা পাবেন। প্রচুর মানি এক্সেঞ্জ, ট্রাভেল এজেন্সি, বাঙালি রেস্টুরেন্ট, হোটেল, লজে এ এলাকা ঠাসা। প্রায় হোটেল-লজের মালিকগন বাঙালি লোক রাখে, যাতে বাঙালি কাষ্টমারদের সাথে সহজে কমিউনিকেট করা যায়। তবে হোটেল-লজ এরিয়া একটু গিঞ্জি মনে হলো, যদিও থাকার ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে পুরাসাওয়াকাম থেকেও। এখানকার সব বাঙালি রেঁস্তোরার খাবার সুস্বাদু নয়। তবে হোটেলে উঠলে নিজেরা বাজার করে বাসার মত রান্না করার মত সুব্যবস্থাও রয়েছে।

৪) গ্রিমস রোড যেহেতু বাঙালি দিয়ে ঠাসা এবং পরিবেশটাও বাঙালি, সেহেতু সেখানে থাকলে চেন্নাইয়ের তামিলদের প্রকৃত পরিবেশ-সংস্কৃতি-খাবার-পোষাক ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন জানা হবে না বলে ধারনা করছি। হয়তো বিদেশে এসে কুয়োর ব্যাঙই থাকা হয়ে যেতো, যদি গ্রিমস রোডে থাকতে হতো! পুরাসাওয়াকাম এ থাকায় চেন্নাইয়ের প্রকৃত পরিবেশটা বেশ পেয়েছি।

৫) বাঙালি এবং চিটিং, এই দুই শব্দের খাতিরটা বেশ, এমনকি বিদেশের মাটিতেও! চেন্নাই শহরের বিভিন্ন এরিয়া দাপিয়ে এলাম, কোথাও কোন চিটার-বাটপার দেখলাম না। কালো মানুষগুলোকে পেলাম সৎ ও আন্তরিক। যেখানে থাকি, সেখানে একবার আমার মানিব্যাগ বেখেয়ালে ড্রপ হয়। পরে ম্যানেজার বাবু মানিব্যাগে আমার ন্যাশনাল আইডির কপি দেখে, আমাকে খুঁজে তা ফিরিয়ে দেন। এক পয়সাও নড়চড় হয় নি। কিন্তু কোলকাতা ও গ্রিমস রোডের বাঙালি এরিয়া, দু’জায়গাই বাঙালি চিটিংবাজের খপ্পরে পড়েছি কিংবা চিটিংবাজি দেখেছি। মন খারাপ হয়েছিলো এদের চিটিং দেখে।

৬) একদিন গুগল ম্যাপে আবিস্কার করলাম, আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে ৩-৪ মিনিটের দুরুত্বে মসজিদ। এতদিন আযানের শব্দ কেন যে টের পাই নি, আল্লাহই মা’লুম! সেদিন আসরের সালাত পড়তে গিয়েছিলাম মসজিদে। অচেনা পরিবেশে মসজিদ পেলে আমার আবেগ বেড়ে যায়, খুব করে কান্না এসেছিলো সেদিন। জানিনা, কেনো! হয়তো একাকী থাকতে থাকতে আপন একটা পরিবেশ পাওয়ায়! বিদেশের মাটিতে মসজিদের পরিবেশটা কতোটা আপন মনে হয়, সেটা হয়তো পরবাসীরাই বেশ বুঝবেন।

৫) আসরের সালাত শেষ করে ইচ্ছে করেই পরিচিত হলাম স্থানীয় ক’জন মুসল্লিদের সাথে। ভালোলাগার ব্যপার হলো, চেন্নাইতে মোটামুটি সবাই ইংরেজী বোঝে। শিক্ষিতরা ভালো ইংরেজী বলতেও পারে। তাদের থেকে জানলাম যে, পুরাসাওয়াকাম এরিয়ায় ২৫০ টি মুসলিম পরিবার বাস করে, আলহামদুলিল্লাহ। এরা হানাফী মাজহাব অনুসরন করেন, আবার পুরো মসজিদ জুড়ে সবাই জোরে আমীন বলেন। আমাদের দেশের মত ‘জোরে আমীন বলা নিয়ে’ হাঙ্গামা ও মাযহাবী গোঁড়ামী দেখলাম না এখানে। আমার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো- সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি। কেমন আছে আমার ভাইয়েরা! উনারা বললেন, চেন্নাইতে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ অনেক ভালো। মুসলিম-হিন্দুরা মিলেমিশে থাকে। তবে গোলমাল রয়েছে অন্যান্য কিছু রাজ্যে। তাদের থেকে জানলাম বাচ্চাদের দ্বীনী জ্ঞান শেখার জন্যে মক্তব হিসেবে এই মসজিদ-ই ব্যবহৃত হয়। এখানেও তাবলীগ আছে (ব্যক্তিগতভাবে আমি তাবলীগ সাপোর্ট করি না)। এদের মাঝে একজন মুরুব্বী পেলাম, যিনি আবার বাংলাদেশে থেকেও ঘুরে এসেছেন।

৬) মসজিদের গলিটা সুনসান, পরিচ্ছন্ন এবং চমৎকার পরিবেশ। এই গলিতে দেখলাম একজন পূর্ণ হিজাবী বোন তার দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছেন। আরেক হিজাবী বোনকেও দেখলাম স্কুটি চালাচ্ছে। আসলে ইচ্ছে থাকলে প্রয়োজনের খাতিরে পর্দার ভেতর থেকেও কাজ করা যায়, এই পরিবেশে সেটাও শিখলাম। এদেশের হিন্দু পুরুষদের চেয়ে প্রায় সব মুসলিমদের চেহারাই সুন্দর, পরিস্কার ও উজ্জ্বল। সম্ভবত এটি অযুর স্নিগ্ধ এক মায়াময়ী উপহার। মুসলিমদের সাথে আর কতটুকু মিশতে পারবো জানি না..। তবে সময় ও সুযোগ পেলে ভালোভাবে মেশার ইচ্ছে আছে। আমার ছোট বোনের সাথে আমার সম্পর্ক যতোটা না শ্রদ্ধার ও স্নেহের, তারচেয়েও বেশী বন্ধুতার। আমার মুখে এই শহরের পরিবেশ ও সহজ সরল মানুষের কথা শুনে, তারও নাকি এখানে এসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে!

আচ্ছা কি হয়,
যদি ছোট্ট এই মুসলিম সমাজের মাঝে একেবারে থেকেই যাই? যদি আর না ফিরি..!
২৫১ তম ঘরটি আমার হলে মন্দ কি..!!

জানুয়ারী ২০১৯,
পুরাসাওয়াকাম, চেন্নাই, তামিল নাডু।

আমার চোখে চেন্নাই শহরঃ রিভিউ- ০২


[প্রতিটা গল্পের পেছনে, না বলা অনেক গল্প থাকে…।]

ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের চেন্নাই শহর নিয়ে কয়েকদিন আগে প্রাথমিক একটা রিভিউ লিখেছিলাম। কিন্তু চেন্নাইকে ভালো করে জানতে হলে আজকের বিশদ রিভিউটি আপনাকে পড়তেই হবে….।

১) চেন্নাই শহর মুসলিম অধ্যুষিত শহর নয়, বরং হিন্দু অধ্যুষিত শহর। তবে জুমুআ’র নামাজ পড়ার মত চমৎকার মসজিদ রয়েছে। ধারনা করি তিন-চার কিলো অন্তর অন্তর মসজিদ রয়েছে। সাধারনত স্থানীয় সময় দেড়টায় খুতবা শুরু হয়, তাই জুমুআ’র নামাজের জন্যে আপনাকে আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। গুগল ম্যাপে সার্চ করে মসজিদ খুঁজতে পারেন, বা স্থানীয়দের সহায়তাও নিতে পারেন।

২) চেন্নাই শহরে চোখে পড়ার মত ব্যাপার হলো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। এই শহরে প্রচুর পাবলিক বাস রয়েছে। বাসগুলো একই রঙের, একই গঠনের এবং একই কোম্পানির, শুধু বাসের নাম্বার আলাদা। যেমন- 29A, 21G, 23C, 23D ইত্যাদি। সাধারণত তিন ধরনের বাস রয়েছে- লোকাল, ডিলাক্স এবং এসি। বাসগুলোর মডেল আধুনিক নয়, তবে সীটগুলো বাংলাদেশের বিআরটিসি’র মতোই। কোন বাসেই ফ্যান দেখলাম না। ভালোলাগার ব্যপার হলো, নারী-পুরুষের সীট নিয়ে কোন বিবাদ নেই। বাসের এক সাইড জুড়ে পুরুষরা বসবে, অন্য সাইড জুড়ে নারীরা বসবে। কন্ডাক্টরের জন্যে রয়েছে আলাদা সীট। ভাড়া দেবার পর সে তার হাতে থাকা অনলাইন পে যন্ত্রের মাধ্যমে টিকেট কেটে দিবে। স্টপিজ আসলে বাঁশিতে হুঁইসেল দিয়ে বাস থামাবে। এমনকি এক টাকা বাকী থাকলেও আপনাকে ফেরত দিবে। বাস ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, অটো ড্রাইভার সবাই নির্দিষ্ট ড্রেস পড়ে। বাসের ভাড়া অনেকটা সহনীয়। বাসগুলো চক্রাকারে পুরো শহর ক্রমাগত প্রদক্ষিণ করতে থাকে। এই শহরের বাস ব্যবস্থাপনা চমৎকার। এমনকি একই রোডে পরপর ৪-৫ টা স্টপিজ এবং যাত্রী ছাউনিও থাকে। যাত্রীরা ধীরস্থির ভাবে ছাউনিতে অপেক্ষা করে। তারপর একেক বাস একেক স্টপিজে দাঁড়ায়। এতে করে সব বাস একই স্টপিজে এসে জ্যাম বাধায় না।

৩) জ্যামের রাজ্য ঢাকা শহরে থাকতে থাকতে প্রায় জ্যামহীন এই চেন্নাই শহরকে একদম অচেনা লাগে। মাঝে মাঝে সিগন্যালের হালকা দু’এক মিনিট জ্যাম ছাড়া এখানে আর কোন বাঁধা নেই। গাড়িগুলো যেন একটা নির্দিষ্ট রিদমে স্রোতের টানে ভেসে চলছে। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি, কিন্তু বেহুদা ওভারটেকিং নেই, বা নেই গাড়ি নিয়ে কোন কুস্তি খেলা। অবৈধ পার্কিং নেই। প্রচুর ওয়ানওয়ে রোড রয়েছে। কোন রিকশা নেই। এখানে প্রায় সব গাড়িরই দাম কম বলে, প্রচুর মানুষ বাইক এবং স্কুটি ব্যবহার করে। স্কুটির দাম ৪০-৫০ হাজারের ভেতর। নারী-পুরুষ সবাই দেদারসে স্কুটি চালায়। পুরো শহরটাই যেন একটা বাইক-স্কুটির নগরী। হুটহাট দু’একটা সাইকেলও দেখতে পাবেন। রাস্তায় প্রচুর অটো (বেবিট্যাক্সি) রয়েছে আপনার জন্যে। আরেকটু বিলাসিতার জন্যে রয়েছে উবার এবং ওলার প্রাইভেট কার, তবে ভাড়া সহনীয়। এদের উন্নয়ন মাটির নীচেও চলে, তাইতো রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেইল। কোথাও কোন ফুটওভার ব্রীজ দেখলাম না। সিগন্যাল পড়লে মানুষ ধীরে সুস্থে রাস্তা পেরুচ্ছে। ফুটপাথ অবৈধ দোকানে ভর্তি নয়, ফুটপাথ বেশিরভাগই পরিস্কার। ফুটপাথে যেন ‘নবাবী বাইকারগন’ না উঠতে পারে তার জন্যে মাঝে মাঝে হাঁটু সমান পিলার দেয়া। খুব বেশী ফ্লাইওভার নেই, নেই ফ্লাইওভারের উপর দ্বিতল জ্যাম। পুরো শহরটাই যেন স্মুথলি রিদম সহকারে একটা ফ্লো মেনটেইন করে চলছে।

৪) সখি! তোমার সাথে দেবো পাড়ি শহর ছেড়ে শহর, রাজ্য ছেড়ে রাজ্য… দূর বহুদূর। আন্তঃশহর, আন্তঃরাজ্য ও দূরের যেকোন যাত্রায় ভারতের ৯৫% মানুষই ট্রেনে পাড়ি দেয়। যেমন কোলকাতা থেকে চেন্নাই ২৮ ঘন্টার জার্নি। ‘এ জার্নি বাই ট্রেন রচনা’ লিখে ফেলার আদর্শ যায়গা। নির্দিষ্ট টাইমে ট্রেন ছেড়ে যায়। তবে ফরেনারদের জন্যে ট্রেনের টিকেট পাওয়া দুস্কর। অনলাইনেই বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি হয়। সে জন্যে আপনাকে কোন এজেন্সির মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচসহ টিকেট কাটতে হবে। স্টেশনে যেয়ে টিকেট পাওয়াটা সম্ভবত একটু কঠিনই (শিউর না)। ট্রেনের পরিবেশ আমাদের চেয়ে ভালো, তবে খাবার জঘণ্য। ট্রেনে আপনার সাথে নানা বর্ণের, নানা ভাষার মানুষের পরিচয় হবে। তবে ভারতে এত পরিমান ভাষা যে, এই ভাষার কারনে পুরোপুরি ভাব বিনিময়টা আটকে যেতে পারে বন্ধু! ইশারায়ই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

৫) চেন্নাইতে ফলের দাম আমাদের দেশের চেয়ে অনেক সস্তা। ছোট সাইজের তরমুজ ১২ রুপি, বড়টা ২৪ রুপি। আঙুরের কেজি ১১০ রুপি, আনারের দাম কম-বেশী ১০০ রুপি। আপেলের দাম ১৫০ এর উপরে হবে। তবে শুনেছি হায়াদারাবাদে ফলের দাম আরো সস্তা।

৬) এই শহরে সুলভ মূল্যে ভালো মানের পোষাক পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মিডিয়াম কোয়ালিটির ১০০০/- টাকার শার্ট পিস এখানে ২০০ রুপি (মিটার প্রতি ৮০/ ১০০ রুপি)। আর দুই-আড়াই হাজার টাকার শার্ট পিস ৭৫০ রুপি। থ্রি পিস বা ফোর পিস তিন হাজারেরটা এখানে ৭৫০ রুপি। নরমাল থ্রি পিস ৫০০ রুপির নীচে। সাড়ে তিন থেকে চার হাজারেরগুলো এখানে ১৫০০ এর উপরে। বিভিন্ন দোকান ও মেগাশপগুলোতে প্রচুর ডিসকাউন্ট অফার পাওয়া যায়। যেমন- ভালো কোয়ালিটির দুটো জিন্স প্যান্ট ৮৫০ রুপি, ৩টি মিডিয়াম মানের হাফ শার্ট/ টি-শার্ট ৬৯৯ রুপি। আড়াই হাজারের ব্রান্ড শার্ট ৮৫০ রুপি। মিডিয়াম মানের শাড়ি ৫০০ রুপিতেও পাওয়া যায়। এখানকার ২ হাজার রুপির শাড়ির দাম বাংলাদেশে ৫-৬ হাজার টাকা পড়বে। তবে ছেলেদের শর্টসের দাম অন্যান্য পোশাকের তুলনায় বেশী। এই শহরের বিখ্যাত সিল্কের নাম- মাদার শাহ (কেউ বলে মাদারসা) সিল্ক, মুসলিম মেগাশপ। এক নামে এই বিশাল শপ সবাই চেনে। এরা নিজেরা নারী-পুরুষ সবার জন্যে কাপড় উৎপাদন করে, নিজেরাই বিক্রি করে। তবে যতটুকু জানি হায়দারাবাদ শহরে পোষাকের দাম আরো অনেক অনেক কম।

৭) তামিলরা খাবারে প্রচুর মশলা খায়। এ যেন আপনার পাতে মশলার এক জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুটা ঝালও খায় এরা। প্রায় সব খাবারের সাথেই আপনাকে টকের একটা পদ আলাদাভাবে দেবে। ভেজিটেরিয়ান ও নন-ভেজিটেরিয়ান হোটেল রয়েছে। তবে খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের রুচির সাথে প্রায় যাবেই না, মানিয়ে নিতে হবে।

৮) বলা হয়ে থাকে যে, পুরো ভারতের সেরা চিকিৎসা হয় চেন্নাইতে, ভারতীয়রাই বলে। বাংলাদেশের অনেকেই এই শহরে চিকিৎসা নিতে আসেন, তবে খরচ পড়ে প্রচুর। আমাদের দেশের মতোই চিকিৎসা শেষে এক্সট্রা বিল চার্জ করবে, অনেক হিডেন চার্জ থাকবে। তবে চেন্নাইতে চিকিৎসা করাতে হলে, আপনাকে হয় তামিল জানতে হবে, নয়তো ইংরেজীতে মোটামুটি কথা বলতে পারে এমন কাউকে লাগবে। আর আপনি নিজে ইংরেজী বলতে পারলে তো কথাই নেই।

৯) কালো মানুষের মন ভালো। চেন্নাইতে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ পেয়েছি। এই শহরের মানুষগুলোর ব্যবহার অমায়িক। যেমন আপনি কোথাও যেতে চাইছেন, কিন্তু কোন বাসে যাবেন খুঁজে পাচ্ছেন না? এরা নিজে না জানলেও আরেকজনের সাথে আলোচনা করে বাসে উঠিয়ে দেবে। এমনও হয়েছে যে, আমরা যে বাসে উঠেছি সেটা আমাদের গন্তব্যের পুরোটা যায় না। তখন কন্ডাক্টর সেই গন্তব্যে ফোন করে, শিউর হয়ে, বিস্তারিত জেনে সহজ পথ খুঁজে দিয়েছে। তামিলরা খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করে, অহেতুক দেমাগ বা ‘আমি কি হনু রে’- এই ভাবটা এদের মাঝে দেখিনি। কোন কোন আংকেলকে লুঙি পরেও শহরের মাঝে ড্যা ড্যা করে বাইক চালাতে দেখেছি। আরো দেখেছি বুড়ি কে পেছনে বসিয়ে বুড়ো দাদু মহানন্দে স্কুটি চালাচ্ছে। আমরা মুসলিম- এটা জেনে এখানকার মুসলিমদেরকে খুশি হতে দেখেছি, সালাম দিতে দেখেছি। একটু হাসিমুখে কথা বললে বড়োই খুশি হয় এই শহরের সাধারণ লোকেরা।

♣ শেষ কথাঃ ছিমছাম এই শহরটা আমার ভালো লেগেছে, শুধু তামিল মেয়েদের ওরনাবিহীন চলাফেরা ও তরুন-তরুনীদের ফ্রি মিক্সিং ছাড়া। হয়তো এই পরিবেশে, এই সংস্কৃিতেই ওরা বেড়ে উঠেছে। তবে এই শহরেও আমি পূর্ণ হিজাবী-নিক্বাবী দেখেছি। এটা প্রমান করে দেয় যে, ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। যদি সত্যিই আপনার মনে আল্লাহর বিধান মেনে চলার ইচ্ছে থাকে, Allah will make a way for you.

♥ শেষের পরের কথা…
কে জানে, একদিন হয়তো কোন এক তামিল কালো মায়াবতী নিক্বাবীর বাঁধনে নিজেকে বেঁধে এই শহরেই থেকে যাবো…! তবে নিজ দেশের প্রতি, নিজ মাতৃভূমির প্রতি আলাদা একটা টান সবসময় থেকেই যায়, দেশটা যেমনই হোক না কেনো।

জানুয়ারী ২০১৯,
পুরাসাওয়াকাম, চেন্নাই, তামিল নাডু।

আমার চোখে চেন্নাই শহরঃ রিভিউ- ০১

আমি পথের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, সামনে সীমাহীন জল-সমুদ্দুর, এখানেই পথের শেষ…। অনেকটা পথ হেঁটে এসেও, হয় নি দেখা তোমার সাথে।

ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের চেন্নাই শহরে এসেছি গত কয়েক দিন হলো। এই কয় দিনে যেসব অভিজ্ঞতা পেলামঃ

১) স্থানীয়রা সাধারণত তামিল ভাষায় কথা বলে, হিন্দিতে না। হিন্দি ওরা বলতেই চায় না। বেশীরভাগকেই হিন্দি/ ইংরেজীতে প্রশ্ন করলে উত্তরে তামিল বলে। তবে উচ্চ শিক্ষিত/ তরুণদের ইংরেজী ভাষায় প্রশ্ন করলে সুন্দর করে জবাব দেয়।

২) ড্রাইভারদেরকে ভাষা বোঝানো কষ্টকর। কখনো কখনো এরা বিদেশী পেলে আকাশ-পাতাল ভাড়া চেয়ে ঠকায় না, আবার মাঝে মাঝে অনেক বেশীও চায়।

৩) কোলকাতা, চেন্নাই সব জায়গায় শতকরা ৮০% নারীই বুকে ওরনা পরে না, হোক সে বুড়ি বা ছুড়ি। সে জন্যে রাস্তায় দৃষ্টি সংযত রেখে হাটা মুশকিল। প্রচুর মেয়েরা স্কুটি চালায়। তবে স্কুটি চালানোর সময় এরা প্রচন্ড রোদের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ওরনা দিয়ে মুখ ও হাত ঢেকে রাখে (নিকাবের মত)।

৪) খাবার বাংলাদেশের সাথে ৯০% ই অমিল। বিরিয়ানির চেয়ে ভাতের দাম বেশী। যেখানে বিফ বিরিয়ানি ৭৫ রুপি, সেখানে খালি সাদা ভাত (মাছ/ গোশত ছাড়া) ই ৬৫ থেকে ৯০ রুপি (দোকানের মানভেদে ৪০ রুপিও রয়েছে)। তবে ভাতের সাথে তিন-চার পদের সবজি ফ্রি। চিকেন বিরিয়ানি ১০০ রুপি। গোশতের চেয়ে মাছের দাম বেশী। হোটেলে দেখলাম মানুষ বিরিয়ানি, ভেজিটেবল, চিকেন এগুলোই বেশী খায়। শতকরা ৯৯% হোটেলে কলাপাতায় করে খাবার দেয়া হয় এবং নীচে স্টীলের প্লেট দেয়। থালা-বাটি, বাসন-কোসন সব স্টীলের, মেলামাইন বা কাঁচের কিছুই দেখলাম না।

৫) কলরেট সুলভ মূল্যে ও ইন্টারনেট সহজলভ্য। উচ্চগতির ইন্টারনেট। ভোডাফোনে ২৫০ টাকায় ২৮ দিনের পাওয়ার প্যাক কিনলে, পুরো ইন্ডিয়া জুড়ে যত মিনিট কথা বলতে চান, কল চার্জ ফ্রি+ প্রতিদিন দেড় জিবি করে ডাটা। এয়ারটেলেও এরকম সুলভ পাওয়ার প্যাক রয়েছে।

৬) চেন্নাই শহরটি ছিমছাম। চমৎকার বাড়িঘর, ওল্ড টাউনে তিন চার তলার বেশী উঁচু বাড়িঘর একদম কম। রাস্তাঘাট বেশ পরিস্কার। প্রচুর গাড়ির ফ্লো আছে, বাট জ্যাম নেই বললেই চলে। সবাই ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলে, কারন সিসি ক্যামেরা ফিট করা থাকে।

৭) বেশীরভাগ মানুষের গায়ের রঙ বাংলাদেশীদের চেয়ে কালো। মুসলিমরা বাদে আর সব পুরুষরা বিশাল গোঁফ রাখে ও কপালে তিল-চন্দন দেয়। গোঁফে এদেরকে বিশ্রি লাগে আমার কাছে। কিন্তু এটাই হয়তো ওদের কাছে ভালো লাগে।

৮) চেন্নাই সমুদ্র তীরবর্তী শহর। শহরের কোল ঘেঁষে বিশাল মেরিনা সী বীচ। কিন্তু বীচে প্রচুর মানুষ যায় এবং আমাদের কক্সবাজারের মতই বীচ অতটা পরিস্কার নয়। তবে সিকিউরিটির সমস্যা তেমন নেই বলে ধারনা করছি।

________________________
জানুয়ারী, ২০১৯
পুরাসাওয়াকাম, চেন্নাই, তামিল নাডু।

পর্যটকের ডায়েরীঃ ইন্ডিয়াতে ট্রেনে ভ্রমণ (শেষ পর্ব)

দ্বিতীয় পর্বের পর…
সকাল হয়েছে। ধীরে ধীরে জেগে উঠলো সবাই। ট্রেনেই বেসিনে হাত মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা ছিলো। একটু সকাল হতেই ট্রেনের বিশেষ বেয়ারা আসলো নাস্তার অর্ডার নিতে। অবশ্য আমরা সকালবেলার নাস্তা আমাদের সাথে থাকা সুস্বাদু বিস্কেট, পাওরুটি, শুকনো খাবার, চিপস, কলা ইত্যাদি দিয়েই সেরে ফেললাম, এবেলা আর ট্রেনের খাবার খাই নি। নাস্তার সময় ভারতীয় দিদিমনিকে খাবার সাধলাম। উনি প্রথম বারেই নিঃসংকোচে খাবার নিলেন। একটুপর উনিও শুকনো খাবার বের করলেন। পিঠে জাতীয় এক ধরনের প্যাঁচানো শুকনো খাবার আমাকে সাধলেন। এবার আমি বিপদে পড়লাম। গতরাতে তার দেয়া খাবার নেই নি, অথচ সকালে উনি আমারটা নিয়েছেন। এবার না নিলে খুব দৃষ্টিকটু হয়ে যায়, তাই নিলাম। বন্ধুবর তো রেগে গিয়ে মাতৃভাষায় বলেই ফেললো- কেন নিলি? যদি কিছু মিশিয়ে দেয়? আমি শুকনো পিঠে চিবুতে চিবুতে বোঝালাম- এবার আর না করাটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাকেও শুকনো পিঠে দিলাম। বাহ! এবার দেখি বন্ধুবরও পিঠে চিবুচ্ছে।


পাহাড়ি এলাকায় ট্রেন থেকে মোবাইলে তোলা ছবি।

ওদিকে মাঠ-ঘাট-জনপদ-প্রান্তর বেয়ে ট্রেন অবিরাম ছুটে চলছে। এ ছোটার যেন শেষ নেই। রেললাইনের দু’পাশে বিস্তৃত খালি প্রান্তর পড়ে রয়েছে। খালি প্রান্তের মাঝে ফসলি জমি আর কৃষকের বাড়িও রয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম এবং শহরতলী পেরিয়ে যাচ্ছি। বার কয়েক ট্রেনের দরজা খুলে দাঁড়ালাম। কিন্তু এত জোরে ট্রেন চলছে যে, দাঁড়ানোটা বেশ বিপদসংকুল মনে হলো। মাঝে মাঝে কোন কোন ইস্টিশনে মাত্র দুই-এক মিনিটের জন্যে ট্রেন থামছে। নানান ভাষার মানুষ উঠছে, আবার অনেকেই নামছে। পুরো কামরা জুড়ে ভারতীয়রা নিজ নিজ প্রদেশের ভাষায় গল্প করছে। মজার ব্যপার হলো ভারতের এক প্রদেশের মানুষ আরেক প্রদেশের ভাষা তেমন একটা বোঝে না। তাই খুব প্রয়োজন না হলে, তাদেরকে অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে দেখলাম না। হয়তো এক দেশে থেকেও এদের কাছে অপর প্রদেশের মানুষকে ভিনদেশী অনুভব হয়। অপরিচিতদের সাথে পারস্পারিক যোগাযোগের সময় এরা সাধারণত হিন্দি ব্যবহার করে। একসময় বড় একটি স্টেশনে ট্রেনটি থামলো। সে সময় আমাদের পানির খালি বোতল স্টেশন থেকে ভরে নিলাম।

দুপুর বেলায় ট্রেনের বেয়ারা খাবারের অর্ডার নিতে আসলো। এই ট্রেনে ভাত, মুরগি, ডিম, ডাল সহ বিভিন্ন পদের খাবার পাওয়া যায়। যেহেতু আল্লাহর নামে জবাই না করা পশুর গোশত খাওয়া মুসলিমদের জন্যে নিষিদ্ধ, তাই আমাদেরকে ‘ডিম-ভাত’ এর প্যাকেজই অর্ডার করতে হলো। প্রায় দেড়-ঘন্টা পর বেয়ারা একে একে সবার খাবার দিয়ে গেলো। খাবার দেয়া হয়েছে ওয়ানটাইম ট্রে তে করে। ট্রে টা মূলত খোপ খোপ সিস্টেমের। দেখলাম এক খোপে সাদা ভাত, আরেক খোপে ডাবল ডিমের তরকারি, একটাতে ডাল, একটাতে ছোট কালো মিস্টি রয়েছে। খাবারের সাথে ওয়ানটাইম চামচ এবং এক প্যাকেট পিকল দিলো। খাবার দেখতে ভালো হলেও খেতে হোস্টেলের খাবারের বিস্বাদই লাগলো। দম চেপে খেয়ে নিলাম। বাঙালি খাবারের সেই চিরচেনা স্বাদের জন্যে জিহ্বাটা যেন হাহাকার করে উঠলো।

মাঝখানের এক জংশনে ট্রেনের এঞ্জিন বদল করা হলো। দুপুর পেরিয়ে সূর্য্যি মামা বিকেলের দিকে এগুচ্ছে। ঝিক ঝিক করে ট্রেন চলেছে পাহাড়ী পথ ধরে। দু’পাশ জুড়ে বিশাল পাহাড় এবং উপত্যকা শুয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে পাহাড়ের পাদদেশে চমৎকার সব জনপদ দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের কোল ঘেষে নানা রঙের ছোট ছোট বিল্ডিং ছড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিম দিগন্ত হতে সূর্য্যি মামা তার নরম-কোমল রোদ ঢেলে দিচ্ছে জনপদের উপর। আমার মন চাচ্ছিলো সব ছেড়ে নেমে যাই এই ছোট্ট জনপদে। ছোট্ট একটি ঘরে ঠাঁই নেই এবং এখানেই পাহাড়ের কোলে থেকে যাই।

দিন গড়িয়ে রাত নেমেছে, চিরচেনা একরাশ আঁধার নিয়ে। বাইরের কালো আঁধারের দিকে তাকালে বুকের মাঝে যেন এক বিশাল শূণ্যতা হাহাকার করে উঠে। একেলা আমি, আর এই আমার ছুটে চলা, জীবনের টানে।

রাতে ভারতীয় দিদিমনি আমাকে তার ভাষায় কি যেন জিজ্ঞেস করলেন। ইশারায় বোঝালাম- বুঝি নি। তারপর দিদিমনি বললেন- মাম্মি, ড্যাডি? বুঝলাম আমার সাথে বাবা-মা কেন নেই, তারা কোথায়- সেটা জানতে চাচ্ছে। তখন চেন্নাইতে কেন যাচ্ছি, সেটা ইশারা ইংগিতে বোঝালাম। কতটুকু বুঝলো আল্লাহ মা’লুম। সন্ধ্যা পেরুতেই বেয়ারা রাতের খাবারের অর্ডার নিতে এলো। এবার ডিম আর চাপাতি (পরোটা) অর্ডার দিলাম। কিন্তু রাতের খাবারের এই প্যাকেজে চাপাতি, ভাত, ডিমের তরকারি, ডাল, পিকল ও মিস্টান্ন ছিলো। একটা জিনিস বুঝলাম, খাবারের পর মিস্টান্ন খাওয়াটা ভারতীয় ঐতিহ্যেরর অংশ। রাত ক্রমশ বেড়েই চলছে। গত রাতের মত সবাই তৈরি হচ্ছে ঘুমানোর জন্যে। একসময় আমরাও বিছানা করে নিলাম। খুব ভোরে ট্রেন পৌঁছবে চেন্নাইতে, তাই বেশী রাত না করে শুয়ে পড়লাম।

তবে গত রাতের মতোই ট্রেনে খুব একটা ঘুম হলো না। ভোররাতে বন্ধুবর আমাকে ডেকে তুললো। চোখ মেলে দেখি চেন্নাইয়ের কাছাকাছি চলে এসেছি প্রায়। ট্রেন গতি কমিয়ে দুলকি চালে এগিয়ে চলছে। দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে বসলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক পর ভোর চারটার দিকে আমাদের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ‘চেন্নাই সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে’ প্রবেশ করলো। দীর্ঘ ২৮/ ২৯ ঘন্টার ট্রেন যাত্রা শেষ হলো। এটিই ছিলো ট্রেনটির শেষ স্টেশন। ধীরে সুস্থে ট্রেন থেকে নামলাম। এরপর প্ল্যাটফর্মে বসে রইলাম আরো এক ঘন্টা। অচেনা দেশ, তাই আলো ফোটার আগে হুট করেই স্টেশনের বাইরে বের হলাম না। ভোরের অপেক্ষায় ঘুম জড়ানো চোখে বসে আছি আমরা দু’জন। অপেক্ষায় আছি এক অচেনা শহরের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে। (সমাপ্ত)

পরবর্তীতে আসছে: আমার চোখে চেন্নাই শহর

পর্যটকের ডায়েরীঃ ইন্ডিয়াতে টেনে ভ্রমণ (পর্ব ০২)

প্রথম পর্বের পর…
রাতে শোয়ার জন্যে ট্রেন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বালিশ, ধবধবে সাদা চাঁদর আর কম্বল দিয়েছিলো। বিছানাও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছি। সবাই শোয়ার জন্যে তোড় জোড় করছে। অন্ধ্র প্রদেশের যে গ্রামীন দম্পত্তি (দেখে গ্রামীনই মনে হয়েছিলো) আমাদের সহযাত্রী ছিলেন, তারা দেখলাম নিজেদের ভাষায় জোরে জোরেই কথা বলছেন। কিন্তু এক বর্ণও বুঝি নি। একটু পর দিদিমনি (ভদ্রলোকের স্ত্রী) শুকনো খাবার বের করলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বললেন আর খাবার সাধলেন। বারবার অনুরোধ করতে লাগলেন, খাবার নিতে। কিন্তু নিলাম না। বন্ধুবরও উপরের টায়ার থেকে ইশারা দিচ্ছে- নিস না, নিস না, খবরদার নিস না। যাইহোক পেটে ইশারা করে ভদ্রমহিলাকে বোঝালাম আমরা ঠেসে খাবার খেয়ে এসেছি। ইংরেজীতে বললেও তারা তেমন একটা বুঝেই না বলতে গেলে।

ভাব বিনিময়ের মাধ্যম ভাষা এক না হলে কি যে সমস্যা, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তারা তাদের ভাষায় বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করে। আমি কখনো ইংরেজীতে বলি যে, তোমাদের কথা বুঝি না, কখনোবা ঠোঁট উল্টিয়ে হাতের ইশারায় বোঝাই- কি যে বুঝি না, তাও বুঝি না। যাইহোক ট্রেন ছাড়ার প্রায় দেড় ঘন্টার মধ্যেই সবাই শুয়ে পড়লো। কিন্তু ট্রেনের প্রচন্ড দুলুনিতে আমার তেমন একটা ঘুম হলো না। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উপরের টায়ারের (শোবার সীট) শেকল ভেঙ্গে যাত্রী দুজন আমার ঘাড়ে এসে পড়বে অথবা প্রচন্ড দুলুনির চোটে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যাবে। সারা রাতে মনে হয় ২ ঘন্টার মত ঘুম এসেছিলো। অথচ প্রচন্ড দুলুনিতেও ইন্ডিয়ানরা দেখলাম চোখ বুজে আরামে ঘুমুচ্ছে।

পরদিন খুব সকালে ঘুম জড়ানো আধো আধো চোখ মেলে দেখলাম- দিদিমনি মাঝের টায়ার (শোবার সীট) থেকে নেমে নীচের টায়ারে স্বামীর কম্বলের নীচে ঢুকলেন। হয়তো পরম আদরের স্বামীর উষ্ণ বুকে আশ্রয় খুঁজে নিলেন। বুঝলাম দু’জনেই দুটো পাখির ছানার মতো গলাগলি করে উষ্ণতা নিচ্ছেন। কি ঘটছে টের পাওয়া মাত্রই আমি লজ্জ্বায় চাঁদরের নীচে মাথা ঢুকিয়ে চুপচাপ পড়ে রইলাম….

♥ “তুই কাছে আয় দেখি, আয় একবার,
মুখ তোর রাখ্ দেখি বুকেতে আমার!
দেখি তাহে এ হৃদয় শান্তি পায় যদি!
কে জানে উচ্ছ্বসি কেন উঠিতেছে হৃদি!
দেখি তোর মুখ খানি, সখি তোর মুখখানি,
বুকে তোর মুখ চাপি, কেন, সখি, কেন
সহসা উচ্ছ্বসি কাঁদি উঠিলিরে হেন?” ♥
(-ভগ্নহৃদয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

আরো কিছুক্ষন পর বিছানা থেকে উঠে দেখি ট্রেন দুলকি চালে ধীরে ধীরে চলছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাইরে ভালোই কুয়াশা পড়েছে। কোন প্রদেশে আছি ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাইরে ঠান্ডা আর ভেতরের এসির কারনে বেশ শীত করছিলো। পুরো কামরাকে মনে হচ্ছিলো যেন এক লাশের ঘর। সবাই সাদা চাদর মুড়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছে। এ যেন ডিপ ফ্রিজের তাকে তাকে সাজানো লাশের সারি। বেশ ভুতূড়ে লাগছে দৃশ্যটা। অবশ্য লেখক মন নাকি সবকিছুকেই খুঁটিয়ে দেখে। খুব সাধারণ দৃশ্যও তাদের কাছে অসাধারণ লাগে। আমি ভালো লেখক নই, তবে ছোট্ট একটি লেখক মন আছে, এই যা…।

(চলবে… )

পর্যটকের ডায়েরীঃ ইন্ডিয়াতে ট্রেনে ভ্রমন (পর্ব ০১)

গত জানুয়ারী মাসে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছিল জীবনের দীর্ঘতম ট্রেন ভ্রমনের। ব্যক্তিগত জরুরী একটি কাজে ঢাকা থেকে কোলকাতা হয়ে চেন্নাই যেতে হয়েছিল। ট্রেন ভ্রমনের সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরছিঃ
ভারতের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই দূরের যাত্রায় ট্রেনে চলাচল করে। বিস্তৃত এই দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থাপনাও ব্যাপক পরিসরের। ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক বাসে কোলকাতার মারকুইস স্ট্রীটে পৌঁছানোর পর, চেন্নাই যাবার জন্যে রেলওয়েই বেছে নিলাম। অবশ্য কিভাবে যাবো তার প্ল্যান দেশ থেকেই করা ছিল। প্ল্যান ছিল কোলকাতায় একদিন থাকবো, কারন ভারতে দিনের টিকেট দিনে পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে, সেদিন রাতের “চেন্নাই এক্সপ্রেস” ট্রেনের টিকেট পেয়ে গেলাম। সময় লাগবে ২৮ ঘন্টা, পথের দুরুত্ব ১৭০০ মাইল। আমার ভ্রমন সাথী ছিলো আমারই এক বন্ধুবর।

দুপুর একটায় কোলকাতায় পৌছেছিলাম, আর ট্রেন ছাড়ার সময় ছিলো রাত সোয়া এগারোটায়। মাঝের এই সময়টুকু কোলকাতা শহরে ঘুরে ফিরেই কাটালাম। ভারতীয় ট্রেনের টিকেট সাধারণত ৩ ধরনের হয়। কিছু টিকেট আগে থেকেই ছাড়া হয়। কিছু টিকেট যেদিন ট্রেন যাবেন, সেদিন সকালে ছাড়া হয়- এ টাইপ টিকেটের নাম- তৎকাল টিকেট। আর কিছু টিকেট ‘রিজার্ভড/ সংরক্ষিত’ (সৈনিক, বিদেশী ইত্যাদি কোটার)। অনলাইন ও রেলওয়ে স্টেশন থেকে- দুই ভাবেই টিকেট কাটা যায়। স্টেশনে টিকেট পাওয়া কঠিন, তাই অনলাইনেই টিকেট কিনেছিলাম। যেহেতু আমাদের ইন্ডিয়ান বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড নেই, তাই একটা ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট কেটেছিলাম। ওরা নির্দিস্ট রেটের চেয়ে ৩০০/ ৫০০ রুপি বেশী রাখে। তবে কোলকাতা হলো চিটারদের শহর। এই শহরের মানুষ যে কি পরিমান চিটার, তা আপনার ধারনারও বাইরে। তাই আপনাকে কয়েকটা ট্রাভেল এজেন্সি ঘুরে, টিকেটের আসল দাম জেনে, দরদাম করে টিকেট কাটতে হবে।

গরুর গোশত দিয়ে পেট পুরে রাতের খাবার খাওয়ার পর (গরুর গোশতের কেজি ১৫০ রুপি মাত্র), ট্যাক্সিতে করে হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। স্টেশনে পৌঁছে দেখি- সে এক এলাহি কারবার! সুবিশাল স্টেশন, হাজার হাজার মানুষে ঠাসা। বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ (ভারতে প্রায় ৫০টির মত ভাষা আছে, অফিসিয়ালি সম্ভবত ১৮ টার মত)। কেউ বসে আছে, কেউবা পরিবারসহ বিছানা বিছিয়ে শুয়ে আছে। ট্রেন আসছে-যাচ্ছে, মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কোলাহল করছে, গমগম করছে পুরো স্টেশন। ভারতের অনেক স্টেশনেই দেখলাম গুগল হাই স্পীডের ফ্রি ওয়াইফাই সেবা দিয়ে রেখেছে। স্টেশনে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা আছে। আমরা প্রায় এক ঘন্টা আগে পৌছেছি।

স্টেশনে বসে যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন যাত্রীর সাথে আলাপ হলো। সে বাংলা বোঝে না, আমি আবার হিন্দি বুঝি না। তাই আলাপটা ইংরেজীতেই করতে হলো। তবে আলাপ খুব বেশি জমলো না, কারন সে ইংরেজী বুঝলেও খুব বেশি বলতে পারে না। তবে সে ছিল একদম অল্প বয়েসের। আমি বিদেশী এটা জানার পরও বোকার মত, অথবা নিজেকে জাহির করতে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো- আমার পাসপোর্ট আছে কিনা? আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম- পাসপোর্ট না থাকলে সীমান্ত পেরিয়ে আমি এখানে কিভাবে এলাম (তোমাদের কাস্টমস-বিএসএফ কি আমার খালু)? বেচারা সেখানেই লা-জবাব।

ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার বেশ আগেই দেখলাম প্ল্যাটফর্মের একটা বিশাল নোটিশবোর্ডে যাত্রীদের তালিকা আটকে দেয়া হলো। অনেক খুঁজে আমাদের নাম বের করে নিশ্চিত হলাম- আমরা যাচ্ছি। নির্দিস্ট সময়ের আগেই ট্রেন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করলো। দুপুর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক জন বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় হয়েছিলো, তারা যাবে ভেলোরে (চেন্নাই থেকে প্রায় ৫০০ কি.মি পরে)। একই সাথে টিকেট কেটেছিলাম আমরা। যাহোক ট্রেন ও বগি নাম্বার মিলিয়ে উঠে পড়লাম সবাই।

চেন্নাইতে যাবার সময় আমরা ‘থ্রি টায়ার’ টিকেট কেটেছিলুম। ‘থ্রি টায়ার’ মানে কামরার প্রতি সাইডে ৩টি করে শোবার বিছানা। নীচে একটি, মাঝে একটি এবং উপরে একটি। আমার সীট পড়েছে ডানপাশের নীচের টায়ারে আর বন্ধুবরের বাম পাশের নীচের টায়ারে। কিন্তু আমাদের সহযাত্রী ছিলো অন্ধ্র রাজ্যের এক দম্পত্তি। স্বামী ভদ্রলোকটি বন্ধুবরকে অনুরোধ করলো যাতে সে নীচের সীট ছেড়ে একদম উপরের সীটে যায়। এতে করে উনারা স্বামী-স্ত্রীর নীচের ও মাঝের- এই দুটোতে শুতে পারবেন। উনার ভাষা তেমন বুঝি নি, তবে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝেছি। ভদ্রলোকের অনুরোধ রাখা হলো।

একদম নির্দিষ্ট টাইমে ট্রেন ছেড়ে দিলে, নো লেট। দেখলাম বাংলাদেশী ট্রেনের তুলনায় প্রায় তিনগুন স্পীডে চলছিল ট্রেনটি। যতটুকু জানি, ভারতের বেশীরভাগ ট্রেনই ইলেক্ট্রিসিটিতে চলে। রেল লাইনের পাশ দিয়ে শত শত মাইল জুড়ে ইলেক্ট্রিসিটির লোহার থাম। রেললাইনের উপরে ঝুলে থাকা তার হতে বিদ্যুত আহরন করে সজোরে চলছে ট্রেনটি। রাতের আঁধারে জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য অস্পষ্ট লাগছে। অচেনা প্রান্তর বেয়ে ছুটে চলছি…। (স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ছেলে বেলার সেই ছড়াটা মনে পড়ছে… )

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই ?

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,
দিন কেটে যায় বেশ।

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
একটু কেশে খক।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
ঝক ঝকাঝক ঝক।

(চলবে… )

সত্যিকারের ভালোবাসা

সবকিছুই আগের মত আছে, ফুল যেমন আছে; মৌমাছিও তেমন আছে। শুধু মাঝখান থেকে লুন্ঠিত হয়ে যায় ফুলের মধুটুকু, পবিত্রতাটুকু; কখনো ফুলের ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়, কখনোবা “তোমায় ভালোবাসি” এটা প্রমানের জন্যে।

মুঠো মুঠো শারিরিক ভালোবাসা আছে, ক’মিনিটের প্যাকেটজাত ভালোবাসা আছে, নষ্টামীর লালসা আছে। নেই শুধু পবিত্র ভালোবাসার ইচ্ছে (বিয়ে), নিজেকে পবিত্র রাখার ইচ্ছে, কিংবা “তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না”- আবেগটুকু।

ভালোবাসা জোর করে প্রমানের বিষয় নয়, শরীর দিয়েও প্রমানের বিষয় নয়। সত্যিকারের ভালোবাসার ভিত্তি থাকে “জীবন সাথী’র জন্যে নিজেকে পবিত্র রাখা, তাকে পাওয়ার পর (বিয়ের মাধ্যমে) তার বিশ্বাস বজায় রাখা ও তাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা- এই আবেগটুকুর” মাঝে। ভালোবাসার প্রধান উপাদান বিশ্বাস, বিশ্বাস এবং বিশ্বাস। No faith, no love.

ভালোবাসা দেখতে হলে চলে আসুন কোন এক মধ্যবিত্ত পরিবারে…
: মা, খাচ্ছো না কেন, কত সময় যে গড়িয়ে গেল!
: তোরা খেয়ে নে বাপ, আমি তোদের বাবা এলে একসাথে খাবো।

: অনেক রাত হয়ে গেলো, এখনো খাচ্ছো না কেন বাবা!
: তোরা খেয়ে নেয়ে, তোদের মাকে ছাড়া কখনো একা খেয়েছি? আমার খিদে নেই…।
দেখেছেন, ভালোবাসাটুকু!

আমার টুকরো টুকরো লেখার ঝুড়ি…

How to stop criticism just by one word: তো?

: তুমি আনস্মার্ট, একটা ক্ষ্যাত।
: তো?
: কেউ তোমাকে ভালোবাসে নি।
: তো?
: তুমি তার যোগ্যও নও।
: তো?
:কিভাবে কাউকে পাবে! তুমি তো আনকালচার্ড, এখনকার কালচার বোঝ না!!
: তো?
: তুমি যাষ্ট পুরনো বাতিল মাল। যুগের সাথে তাল মেলাতে পারো না।
: তো?
: তুমি দেখতে সুদর্শন নও।
: তো?
: তেমন লম্বাও নও।
: তো?
: বেকার/ ভালো একটা চাকরিও নেই!
: তো?
: তাই তোমার জন্যে কেউ নেই।
: তো?
: আমিও নেই।
: তো?
: :/
: তো?
: :/ :/
: তো?
.
→ People judge you from their viewpoint and you should avoid what they think. Let them to think more & more. If they remark something, just reply: so? (তো?). It kills them mentally. 😀

সুন্দরী প্রতিযোগীতা: দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়!!

【সতর্কতাঃ এটি একটি আঠারো প্লাস লেখা। বাচ্চারা অবশ্যই এড়িয়ে যাবে।】

সুন্দরী প্রতিযোগীতার স্লোগান- “দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়”, আর “কাপড় খুলে ফেলো” এই দুটো কথা আদতে একই। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, প্রথমটিতে ভদ্র ভাষার ঢঙ্গে অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, আর দ্বিতীয়টিতে ডিরেক্ট অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। :/

সুন্দরী প্রতিযোগীতায় মেয়েদের কিভাবে নির্বাচন করা হয় জানেন? কুমারীত্ব (অবিবাহিতা), উচ্চতা, বুক ও কোমরের সাইজ, গায়ের রঙ্গ ইত্যাদি দেখা বা মাপা হয়। ব্যাপারগুলো কি শালীনতার পর্যায়ে পড়ে?

ফ্রাষ্ট্রেটিং কোশ্চেন হলো- মেয়েগুলো কি কোরবানির গরু? এখানে একটা মেয়েকে যাষ্টিফাই করা হয় ঠিক কোরবানীর হাটের পশুর মত। হাটে আমরা দেখি গরুটি নাদুস-নুদুস কিনা, শিং ঠিক আছে কিনা, রঙ কেমন ইত্যাদি…। সেইম রিপিট কি এই নোংরা প্রতিযোগীতায়ও হয় না! ব্রেষ্ট, চেষ্ট, ওয়েষ্ট, ওয়েট, ফিগার, হাইট, চেষ্টটিটি, কালার…. মেয়েদের এইগুলা যাষ্টিফাই করা হয়….। স্যরি, বিষয়গুলো লিখতে আমারও যে সংকোচ হচ্ছে।

প্রতিযোগীতার আয়োজক আর দর্শকদের নিয়ে কথা বলার আগে সবচেয়ে অবাক লাগে প্রতিযোগীদের মানসিকতা নিয়ে। একটা মেয়ে কিভাবে পারে সবার সামনে নিজের বডি-ফিগারের প্রদর্শনী করে তথাকথিত স্টার হতে! হাজার হাজার মানুষ রসিয়ে রসিয়ে তার বডি পার্টসগুলো উপভোগ করছে! একসাথে হাজার হাজার জনতা চক্ষু দিয়ে ধর্ষণ করছে বা মানসিকভাবে গিলে খাচ্ছে। কতটা নোংরা আর অসুস্থ মানসিকতার হলে নিজেকে এভাবে “সিম্বলিক প্রস্টিটিউট” এর পর্যায়ে নামানো যায় (স্যরি ফর দ্য হার্ড ল্যাংগুয়েজ)! আমরা অধিকাংশ ছেলেরা মেয়েদের সামনে দূরে থাক, পুরুষ জনতার সামনেই নিজেদের পেট-পিঠ-ন্যাভল দেখিয়ে বেড়াতে লজ্জ্বা পাই। আচ্ছা কখনো কি দেখেছেন পুরুষরা স্বেচ্ছায় নিজেদের পেট-ন্যাভল বের করে রাস্তায় হাটছে! ইজ ইট কমন সিন ফর ম্যান? আর আপনারা মেয়ে হয়ে…!!

আর সেসব অভিবাবকেরাই বা কেমন, যারা নিজেদের মেয়েদেরকে ফ্রিতে জনতার কামনার খোরাক হতে দিচ্ছেন! নিজেদের মেয়েদের ফিগার আম-জনতা উপভোগ করছে, আর তাদের প্রাউড ফিল হচ্ছে! ফিলিং প্রাউড ফর ন্যুডিটি! হাহ, এদের মানসিকতার উপরে কি গজব পড়েছে নাকি- ভেবে ভেবে আকুল হই!!

সুন্দরী প্রতিযোগীতার দর্শকদের (যারা শুধু নিজেদের মা-বোনের বেলায়ই সুশীল) একটা কথাই বলতে চাইঃ আপনার বোনদেরকেও প্রতিযোগীতার হাটে তুলুন, ওদেরও সুযোগ দিন। আরেহ চিন্তা নেই! আপনাকে দর্শক হতে হবে না! এ বেলা না হয় আমরাই তাদের সৌন্দর্য্য আর বডি পার্টসগুলো ফ্রিতে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করবো! কি বলেন? চলুন উপভোগ করি, অনেক ফূর্তি হবে, অনেক….।

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদঃ যেমন চোর তেমন সাগরেদ

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদের মাঝে কথপোকথনঃ
(১ম সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আনেকদিন ধরে আমার প্রায়ই পেটে ব্যাথা হয়। ডাক্তার বলছে গ্যাস জমেছে, সারতে সময় লাগবে।
– ভুল কথা, জ্বীনের বদ নজর লাগছে। বাবার মাজারে মোমবাতি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(২য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বুক ব্যাথা করছে। এখন ডাক্তারের ঔষধ খাচ্ছি।
– ঔষধ খেয়ে কিছু হবে না রে, বাবার মাজারে মুরগি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(৩য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার চাকরি হচ্ছেনা, কি করি?
– বাবার ওরশে ছাগল দে, চাকরি হয়ে যাবে।
 
(৪র্থ সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বিয়ে হচ্ছে না। কি করি?
– বাবার ওরশে গরু দে, বিয়ে হবে।
 
(১ মাস পর…)
– খাদেম আব্বা, এই নেন মিষ্টি! নতুন বিয়ে করলাম।
– আরে পাগলা এখন দেখি আমারেই বাবা ডাকে! দেখলি বাবার মাজারে তোর দেয়া মোমবাতি, মুরগি, ছাগল, গরু- সব দান কাজে লেগেছে। বাবা কবর থেকে মুরিদদের সবকিছু জানে (নাউজুবিল্লাহ)।
– জ্বি না, বাবা কিছুই জানে না। নইলে মিছিমিছি পেট ব্যাথা আর বুক ব্যাথার কথা বললাম, তবু বাবা টের পেল না কেন?
– মিছমিছি হলে তুই মাজারে এসব কিছু দিলি কেন?
– আপনার মেয়েকে পটানোর জন্যে আব্বাজান! মোমবাতি, মুরগি, গরু, ছাগল মাজারে দিয়ে আপনার বাসায় আসা যাওয়া নিশ্চিৎ করেছি, আর আপনার মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করেছি।
– কি! তোর এত বড় সাহস, শেষে আমার মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে? তোর চাকরি পাওয়ার কথাও তো তাহলে মিথ্যা! তুই মোমবাতি কেনার টাকা পেলি কই?
– ইয়ে, মাজারের দানবাক্স থেকে টাকা মেরে দিয়ে…
– মুরগি কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– ছাগল কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– গরু কেনার টাকা?
– ঐ যে দানবাক্স থেকে…
– ই ই ই…. ধপাস!! (খাদেম মিয়া অজ্ঞান)
– খাদেম আব্বা, কি হলো? আজকে ’হুহ হাহ হুহ’ ড্যান্স দিলেন না যে!

পূর্বে প্রকাশিত।

টিপসঃ মন খারাপ হলে কি করবেন?

একটি সাদা কাগজ আর একটি কলম নিন। সাদা কাগজের বাঁ পাশে সিরিয়াল করে আপনার খারাপ গুনগুলোর কথা লিখুন। আর ডানপাশে প্রতিটি খারাপ গুনের সামনে- ‘কতদিনের ভেতরে সেটা পুরোপুরি ছাড়বেন’, তার টার্গেট লিখুন। এবার কাগজটি সেইফ প্লেসে রাখুন। তারপর আল্লাহর কাছে সকল পাপের জন্যে তাওবা করুন। এবার টার্গেট অনুযায়ী খারাপ গুনগুলো ত্যাগ করতে সচেষ্ট হোন। একটি খারাপ গুন ছাড়তে পারলে প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং এটা ভেবে আনন্দিত হোন যে, আপনি শয়তানকে পরাজিত করতে পেরেছেন, কনগ্রাচুলেশন! তারপর সম্ভব হলে নিজেকে নিজে ট্রিট দিন, হোক সেটা যতই ছোট। প্রতি টার্গেট পুরনে মনে প্রচন্ড শান্তি পাবেন ইন শা আল্লাহ।

কোন কারনে পিছলিয়ে গেলেও প্রবলেম নেই। তাওবা করে আবার শুরু করুন। আবার পিছলে গেছেন? নো প্রবলেম! তাওবা করে আবার শুরু করুন…. যতবার পিছলাবেন, ততবার নতুন করে শুরু করবেন। একসময় শয়তান বিরক্ত হয়ে পালাবে ইন শা আল্লাহ। জেনে রাখুন! আল্লাহর কাছে তাওবাকারীর মর্যাদা অনেক।

শেষ করছি হৃদয় প্রশান্তকারী একটি আয়াত দিয়ে ও একটি হাদীস দিয়েঃ
❤ “তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে, কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।” [সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১৩৫] [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, এই আয়াতটি যেদিন নাযিল হয়, শয়তান সেদিন কান্না করেছিলো।]

❤ রাসূল (ছাঃ) বলেনঃ
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’। [তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬।]

পূর্বে প্রকাশিত।

ভালোবাসা ও যৌনতাঃ এ হ্যামার অন দ্য মেন্টালিটি

আমাদের এই সময়টাতে, এই তরুন সমাজে এখন প্যাকেট প্যাকেট ভালোবাসা পাওয়া যায়। ভালোবাসা বন্দী ছোট্ট একটি প্যাকেটে। যদি এক প্যাকেট ভালোবাসা থাকে তনু’র জন্যে, তো আরেক প্যাকেট ভালোবাসা থাকে অনু’র জন্যে। মানিব্যাগের ফাঁকে শোভা পায় স্ট্রবেরী কিংবা চকোলেট ফ্লেভারের ভালোবাসার প্যাকেট (কনডম)।

ভালোবাসা এখন যৌনতার ভদ্দর নাম। যদি একদিনের ভালোবাসা বরাদ্দ থাকে অনি’র ফ্ল্যাটে, তো আরেকদিনের ভালোবাসা বরাদ্দ হয় রনি’র ফ্ল্যাটে। নারীরা আগে পতিতা হতো পেটের দায়ে। আর এখন পতিতা হয় কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো প্রেমে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, কখনোবা ”আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি”- এটা প্রমাণের স্বার্থে। এযুগের প্রেম মানে অবাধ সুযোগ, উপভোগের সুযোগ; যার শুরুটা হয় প্রেয়সীর হাত মুঠোয় নিয়ে অথবা ফ্রেঞ্চ চুমু দিয়ে। আর শেষটা…?

কখনো শেষটা হয় নৈতিকতার চরম অধঃপতন, স্ক্যান্ডাল, সতীত্বনাশ, বুকফাটা আর্তনাদ ও সুইসাইড দিয়ে। আবার কখনোবা প্রেম ”সব হারানো মানুষটিকে” প্রবেশ করিয়ে দেয় এক চরিত্রহীন উচ্ছৃঙ্খল জীবনে, যেখান থেকে অনেকসময় ফেরার পথটাও রুদ্ধ হয়ে যায়!

দিনশেষে আমরা সবাই ক্লান্ত হই, অবসন্নতা ঘিরে ধরে। ঠিক সেই মুহূর্তে সারাদিন প্রেম প্রেম খেলা বা মউজ-মাস্তি করে বেড়ানো ছেলে কিংবা মেয়েটিও হতাশ হয়। প্রচন্ড ঘেন্না জন্মে নিজের জীবন নিয়ে, প্রচন্ড ঈর্ষা হয় পবিত্র মানুষগুলোর জীবন যাপন নিয়ে, খুব আক্ষেপ হয় খুউব…। আপনার সামনে হাসি হাসি ও সাঁজুগুজু মুখ করে রাখা, ড্যাশিং লুকের কথিত ওয়েল ম্যানারর্ড ছেলে বা মেয়েটিও নির্জনে কাঁদে, শুধু একটুখানি মানসিক প্রশান্তির খোঁজে। এটাই হলো না বলা এক চরম বাস্তবতা।

আমরা এটা বুঝি না যে, আল্লাহ ও তার নির্ধারিত বিধানের বাহিরের জীবন কখনোই আপনাকে শান্তি এনে দিতে পারবে না। একটা ব্যপার সবসময় মনে রাখবেনঃ A real man will offer you Niqah (marriage), but a fraud & coward man will offer you Jinah. Good for good, bad for bad. Just be a real man, that’s all.

নিমন্ত্রণ রইলো আমার ব্লগে।

শিখে রাখুনঃ মানুষ কিভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করবে!

যে জিনিসগুলো শিখে রাখবেনঃ

দিনশেষে সবাই…
* আপনাকে সম্পদ দিয়ে বিবেচনা করবে, সততা দিয়ে নয়।
* আপনার বাহ্যিক সোন্দর্য্যের কারনে ভালোবাসবে, চরিত্রের কারনে নয়।
* আপনার বাহিরটা বিবেচনা করবে, ভালো অন্তরটা নয়।
* আপনার ভালোমানুষিকতার কোন দাম দেবে না।
* আপনার সরলতাকে পুঁজি করে ঠকাবে।
* আপনার আবেগ কে কাজে লাগিয়ে কাঁদাবে।
* আপনার বিশ্বাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেবে।

আর দিনশেষে আপনি…
* সততার কারনে ঠকবেন।
* মানুষের কাছে চরিত্রের মূল্যায়ন পাবেন না।
* অন্তরটা কষ্টে ফেটে যাবে, প্রকাশ করতে পারবেন না।
* ভালোমানুষিকতার কারনে প্রতিশোধও নিতে পারবেন না।
* সরলতার কারনে বোকা বনে যাবেন।
* আবেগের কারনে সীমাহীন কষ্ট পাবেন।
* বিশ্বাস করে চরমভাবে প্রতারিত হবেন।

তারপরও…
আপনি আপনার সততা, চরিত্র, ভালো অন্তর, ভালোমানুষিকতা, সরলতা, আবেগ ও বিশ্বাসকে লালন করবেন। কারন একমাত্র আপনার প্রতিপালকই জানেন, আপনি কতটুকু ভালো বা কতটুকু খারাপ! হৃদয়ে বিশ্বাস রাখুন- সবার উপরে একজন বসে আপনাকে দেখছেন। এই দুনিয়া ছাড়াও, জাজমেন্ট ডে তে সবকিছুর সুবিচার তিনিই করবেন।

পূর্ব প্রকাশিত এখানে।