চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

হেমন্তের বাতায়ন

হেমন্তের বাতায়ন

হেমন্তের বাতায়ন
খুলেছে দ্বার! আকাশে মেঘ যেন ফুরালো
রোদের রসনাই আকাশময়; যেন চুপসে আছে
নীলের মহাশূণ্য বলয়।
আলোর কিন্নরি ষ্ফুরণ
বাতাসের সাথে করে খেলা
বানভাসি পথ ঘাট জেগেছে; পলির আইল পথে
সবুজ ঘাস সবে উঠছে গজে।

আইল পথের কাদায় ছাপ এঁকে রয়
ডাহুক ডাহুকির বিবসনা মুর্চ্ছনায়
ক্ষেতের ধানের ঝোপে বাঁধবে বাসা; ললনার বাসনা
বানের বিদ্রুপ মিটে গেছে!
এখন শুধু কুয়াশার ঢল নামবে মাঠজুড়ে
শিশিরের আচ্ছদনে ভিজাবে অঙ্গ
এমনি শ্রীমতি বাসনায়; ঘাসফুড়িং এর ঝাঁক উড়ে উড়ে
হেমন্তের বাতায়নে খোলা হাওয়ার স্নানে
আপ্লুত পথিক অন্তদহনে পুড়ে।

১৪২/০২,কার্তিক/হেমন্তকাল।

ক্ষুধা

ক্ষুধা

____ক্ষুধা
ক্ষুধা দিকে দিকে,
পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত ব্যপ্তি।
ক্ষুধার জন্য ছুটে ছুটে-
পৃথিবী বাস যোগ্য হয়ে উঠার
প্রত্যয় ছিল বলেই;
আজ পৃথিবী মানুষের বাস যোগ্য।

তবুও ক্ষুধা মিটে কই?
ক্ষুধার জন্য লড়াই,
ক্ষুধার জন্য মৃত্যু,
ক্ষুধার জন্য দেশান্তর,
ক্ষুধার জন্য প্রজন্ম লড়াই,

_____অধিকারের বুলি
মুখে মুখে, দেশে দেশে, মানুষের মুক্তির অধিকারের বুলি। স্বাধীনতা পেলেই মুক্তি মিলে। আর মুক্তির পর অধিকার নিরুপন। কোথায় মুক্তি? কোথায় অধিকার? দন্যদশায় সেই একই আলখেল্লার সামিনায়; বজ্রমুষ্টির স্বপ্ন ক্ষয়ে যায়, পুড়ে যায়, পুঁজির দর্পদহনে। আবার সেই একই মিছিল মুক্তির তরে, থিতিয়ে যায় প্রজন্ম, নতুন প্রজন্ম গর্জে উঠে। এমনি ধারাবাহিকতা, তবুও মুক্তির অধিকার নাহি মিলে।

______পথেই তাদের সাজা
পথে পথে মানুষ,
পলিথিনের ঝুপরিতে ঘুমায়; কোলাহলে বস্তি
বুনে যায়! বাসস্থান মিটাবে বলে,
পুঁজির চোখ রঙিন চশমায় ঢেকে যায়;
যদি পেছনে কেউ ডেকে উঠে-
ঐ যে পুঁজির আড়ম্বর পালকি চলে
ওকে নামিয়ে আনো পথে? দেখব এবার
অধিকার না পূরণে কেমনে এরা বাঁচে?

এই হয়েছে সর্বনাশ!
আঁধার রাতে বস্তি গেল পুড়ে; এবার
কোথায় যাবে মানুষ; ক্ষুধা আর বাসস্থানের
সর্বহারা, সর্বক্ষয়া, নিঃস্ব হল
খোলা আকাশ তলে! এবার পুঁজি অট্টহাসিতে মজে
মানুষ বলে কথা; পথেই তাদের সাজা।

____অন্ন চাই উনুনে
অন্ন চাই উনুনে,
উনুনে শুধু পানি সিদ্ধ;
সাথে সামান্য নুন, কাঁচালঙ্কা আধখানা
দু’মুঠো চাল; আলু কাটা দু’টো।

পেটে ক্ষুধা,
হাঁড়িমুখ করে মা ইটের উনুনে
কাগজ পোড়ায়, ধুঁয়া উঠে আকাশ ছেয়ে যায়
দুধের বাটে ঝুলে আছে শিশু;
ঝুপরি ঘরে পাঁচ পাঁচটি মুখ
এদিক ওদিক চোখ টলমলে চেয়ে রয়
ক্ষুধার কাব্যে, ঝুপরি ঘর মৌ মৌ করে।

_____ক্ষুধার জন্য মুক্তি কই?
ক্ষুধার জন্য মুক্তি কই?
বাঁচার জন্য মুক্তি কই?
জীবনের জন্য মুক্তি কই?
অধিকারের মুক্তি কই?
নতুন প্রজন্মের মুক্তি কিসে?

আসন্ন দিনে সুবর্ণ স্বপ্নের মুক্তি চাই।
বিপন্ন পুঁজির লোলুপ গ্রাস থেকে মুক্তি চাই।

১৪২৪/২৪, আশ্বিন/শরৎকাল।

কার্নিশে ঝুলে ছিল আকাশ

কার্নিশে ঝুলে ছিল আকাশ

___কার্নিশে ঝুলে ছিল আকাশ
কার্নিশে ঝুলে ছিল আকাশ
তোমার অভিমান দেখবে বলে!
বেলা যখন পড়ে এলো-;
তন্দ্রামাখা মুখ নিয়ে দাঁড়ালে বারান্দায়
বিরহের সুত্র খুঁজতে দেরি হয়নি তার!
এলোকেশে বালিশের গা ঘেঁসা দাগ
তোমার টোল পরা গালে
এখনো জ্বল জ্বলে; টিপটা
একটু উপরে উঠে গেছে এই যা’
এ যে নিত্য বে’দৌরা বেশভূষার চিহ্ন
মুগ্ধ হয়ে আকাশ চেয়ে ছিল।

____অনাহারি রাতের মতো
অভিমানে তো, পেরোল দু’ দুটো যুগ
আহ্নিকগতির অহমিকা আক্ষেপ জুড়ে
শতরঞ্জির রং এখন ধূসর বর্ণ ধারন করেছে
একসময় বাহারি রং ছিল বেশ জমপেস।

অনাহারি রাতের মতো ক্ষুধার্থ্য জমকালো আঁধার
যখন জেঁকে বসে সদ্য পৃথিবী সমেত; আনকড়া
বিদ্রুপ যে জেগে উঠে বারং বার সন্তাপে
কবিতার খলস পরে কখন যে বেরিয়ে পড়ে
আত্মহননে প্রথিত প্রথা ভেঙে দিতে চায়
পুনঃ পুনঃ গ্রহন লাগা রাতের দ্বিপ্রহে।

____রংবদলের পাড়ে
রংবদলের পাড়ে
দিগন্ত বার বার ফিরে আসে
তোমারি কাছে!
আশ্বিনের মহুয়া টান;
কোজাগরি জোছনার বেহাল্লাপোনা
তুমি বার বার আচম্বিতে ফিরে যাও
অতীত কোলাহলে।

সময় তো পেরিয়ে গেছে যুগ বিড়ম্বনায়
তাই তো এর কি বা প্রয়োজন?
এমন নিদর্য় ঢলে পড়া বেলায়
যা হয়নি পাওয়া, তার কিবা আশ্ফলন!
নিত্য বেলোয়ারি কোলাহলে।

_____নির্মলা
ঐ যে, ঐ পথে তোমার নন্দন পায়ের ছাপ এখনও আঁকা আছে। তুমি যে ছিলে নির্মলা। অর্নব অপসরী। তাই তো সেই ছাপ তোমারি, সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে ঢেকে রাখে নিমিত্তের আবরণে। কি জানি কি ভেবে আশ্বিনের জেগে উঠা পথে, তোমার চঞ্চল চলায় বেহুলার গীত বাজে। কালে কালে সব ইতিহাস গেয়ে উঠে, কিন্তু নির্মলা, তুমিই রইলে পরে কোন সে সূ-দূরে? এই পথ মাড়াবে কি কোন আবহনে?

______যদি আসো ফিরে আশ্বিনে
যদি আসো ফিরে আশ্বিনে; ভাঙা চাঁদের জোছনা বাহার
আমলকি বন যেন কিন্নরি সাজে; পুকুরের শান্ত জল
জোছনা ছোঁয়ায় নড়ে চড়ে উঠে; হাওয়ায় মাখা ঢেউ প্লাবন
যেন জল উতলায়; যেমন জোয়ারে নদীর তীর ভাসায়
পুকুরের শান্তজলের ঢেউ; জোছনা ছোঁয়ায় ঝিকমিক করে
যেন জলে আয়না বসানো! হালকা কুয়াশার রাত্রি
বাতাসের সজাগ পাহারায় রাত উজান ঠেলে; গভির হতে গভিরে
প্রত্যার্বতনে সরব হয়ে উঠে; ভিজাবে তোমায় কুয়াশা মাখা হাওয়া।

১৪২৪/২৩, আশ্বিন/শরৎকাল।

আশ্বিনের পঞ্চপদ

আশ্বিনের পঞ্চপদ

হাটু জলে ফুটপাত

শরতের মেঘ ভিজালো
পথের বাঁক! হাটুজল ফুটপাত নিচে তল
গাড়ী গুলো চলছে দ্যাখো
জলের বাজনা বাজিয়ে;
ফুটপাতের নকশা যুগোল
খসে পড়ে ধীর লয়ে! আগাছা গুলো নৈছাবদ
জল ফুরালেই উঠবে জেগে
সাহেব সুবোদ হাঁটে দ্যাখো
খালি পায়ে; ময়লা জলের গন্ধছুটে।

শরতের মেঘ

একটু আগে,
সাদা মেঘের পাহাড় জমা
আকাশ জুড়ে!
ভবনগুলো দেখছে উঁকি দিয়ে
খানিক বাদে, সাদামেঘ জলে ধূঁসর
বৃষ্টিভরা রঙ্গ রাগে রাঙা
যেন ঝরবে এখনিই; মাথার উপর
পাহাড় সম উঁচু দালানের গা ঘিঁসে
দাঁড়িয়ে মেঘ রঙ্গবেশে
ঝর ঝর ধারায় ঝরিয়ে পড়ে
সুরম্য দালানের অঙ্গ ধুইয়ে।

ঘুমে কেটে যায় মধ্যন্ন ভোজ

এমন দিনে চকচকে পথ ঘাটে,পথিক হাঁটে গুনগুনিয়ে। চঞ্চল হাওয়া যেন কাশবন হতে
ভেসে আসে উম্মাতাল মগনে। পত পত হাওয়ায় উড়ায়। ঝুপরির চাউনির পলিথিন; ইটের উনুনে ধুঁয়া উঠে চাল সিদ্ধ। রাতভর আধপেটা! তার উপর ধকল শরীরে, জোছনা চুলায় মাংস সিদ্ধ। ঘুমে কেটে যায় মধ্যন্ন ভোজ।

কামুকি শহর

শরতের বৃষ্টি কামুকি শহরের
যেন জৌলুস ছড়ায় দিগ হতে দিগন্তে, হাজার বিড়ম্বনার
রৌদ্র মশালেও ঢেকে যায়, মিইয়ে যায়
সোদা দিন বদলের আহল্লাদে।

এ নগরের এক অফুরান কামাঙ্খা জাদুর টান যেন-
কাহারে বা রঙ্গে পোড়ায়,
কাহারে বা রুদ্রো রসে মোজায়
কাহারে বা চেতনার অবগাহনে মাতায়
কাহারে বা স্বর্ণশিখরে বসায়
কাহারে বা নন্দন রুপে ভাসায়
কাহারে বা কাঙাল ক্ষুধায় পোড়ায়

একফালি চাঁদ

কাল সারারাত বসে ছিল পার্কের বেঞ্চিতে, একফালি চাঁদ। তার জোছনা কুহরে, আদি অন্ত না ভেবে জোনাক স্বজন আশ্রয় নিয়ে ছিল ঝোপের ঘাসে। আর অপেক্ষায় ছিল, নিশুতি রাতের গ্রহন লাগা চাঁদের পালিয়ে যাওয়া। বিবর্ণ জোছনা মুছে গেলে, জেগে উঠে সদল বলে জোনাক স্বজন নগর পাহাড়ায়। নিয়ন আলো চুপসে আসে। খিরকির স্তুতি বাসনার মোলায়েম বায়ু বয় ধীর লয়ে, রাত গভীরে প্রণয় আঁধার জেঁকে বসে।

১৪২৪/১৮, আশ্বিন/শরৎকাল।

তৃঞ্চার জল

তৃঞ্চার জল

এমন কার্তিকে
নেশা ধরা কাশবন সমীরণ ছেড়ে;
কোথায় ছিলে এত কাল?
শারদীয় চিত্ত মোহ মায়া রঞ্জে রাঙা
প্রেম রহস্যের চির যামিনী অর্নব অপসরী
দ্রোহ কেন?
মায়ার আঁচল তলে প্রেম, বিরহ, অভিমানের
শূন্য বলয়ে বার বার আঙ্গিক ছায়াতল
নিঃশেষ হয় না কখনো;
তৃঞ্চার জল!
অপরাহ্নে কার্তিকের সাঁঝ লালিমা বড়ই
আমুদে মাখা;
আকাশ বর্ণে শুভ্র কথিকা
ম্রিয়মান নিবির আঁধারে ঢেকে যায়
মৃত্তিকার গায়!
উঁইপোকার ঢিবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে উড়বার
হাট বসে সাঁঝ কুড়ানো আলোয়।

১৪২৪/১২, আশ্বিন/ শরৎকাল।

পথে হেঁটে যেতে পার

পথে হেঁটে যেতে পার

পথে হেঁটে যেতে পার
ফুটপাত ব্যপি হকারদের আবহনে!
সর্পপথ মাড়িয়ে;
এখানে ওখানে ঘুরে ঐ সেই পথে
একটু মুক্ত হাওয়া বয় সম্মুখে লেক সোপান
শরতে জল ভরা;
মিহি ঢেউয়ের জলবিথিকা নিরন্ন আবশে
উত্তরের পাড় ছুঁয়ে দেয়।

হাজার পথিকের ঘমাক্ত উৎকট গণ্ধের
বিমর্ষ কোলাহলে ভাসে;
গাড়ি, রিকশা বাস, অটো, টেম্পুর হর্ণ কোলাহলে
ভেঁপু বাজিয়ে যায় গাড়ি দ্রুতলয়ে;
মৃতপ্রায় রোগীর দ্রুত সেবার আচ্ছাদনে।

১৪২৪/১০, আশ্বিন/ শরৎকাল।

একটু দূরে এক পা বাড়ালেই

একটু দূরে এক পা বাড়ালেই

বর্ষার ছিপ ফেলানো
জলের ছাপ এখনো জ্বল জ্বল করছে
নন্দন নগর জুড়ে!

কাশফুলের গন্ধ মাখা মেঘের হাওয়া
বইছে উতালপাথাল,
আকাশ তার খেড়োখাতায় নীলের জমিন পাড়ে
সাদা মেঘের উল্কি আঁকে,
শঙ্খচিলের পালক দিয়ে।
ইচ্ছে হলেই,
ফড়িং ডানায় যত সামান্য কাব্যকথা
সবুজ ঘাসের নন্দনপুরে; শৈশবের ঐ ঘুড়ি উড়ে
শালিক জটলা সবুজ ঘাসে
নৈবর্ত্যের স্বপ্ন উড়ে আকাশ মাঝে!
দল ছুট ঐ কাঠবিড়ালী
পালিয়ে যায় লজ্জাবতীর শরীর ছুঁয়ে!
এমন কান্ড কাশবনে,
যেন সাদা মেঘের আবির ঢালে; নগর ছুঁয়ে
একটু দূরে এক পা বাড়ালেই।

১৪২৪/৯, আশ্বিন/শরৎকাল।

সাদা মেঘের আঁড়ালে

সাদা মেঘের আঁড়ালে

শারদীয় আমন্ত্রণ! ফিরে এলে তুমি
তোমার সেই শৈশবের উঠানে; সে তো
কত বছর হবে বলতো?

বুড়িয়ে গেছে, তোমার সাথে বেড়ে উঠা ঐ যে সজনে গাছটা
সে দিন তুমি ছিলে একলা বটে;
দু’চার জন পাড়ার খেলার সাথী আর এখন
মস্তবড় সংসার তোমার; বাড়ীময় উঠোন দ্যাখো
গম গম করছে তোমার আত্মজার পদভারে।

ঐ যে বুড়িয়ে যাওয়া সজনে গাছের হলুদ পাতায়
মাখামাখি ধুলো আর কাদা মাটির
পুতুল বিয়ের খেলনা বাটি; মনে পড়ে গেল বুঝি
একটু ফিকে হাসিতে কেমন আনমনা হয়ে গেলে!
উঠানের কোণে তেঁতুল গাছটা আর নেই
ওখানে সদ্য ইটের ঘর তুলেছে ছোট ভাই;
মা’র রান্নাঘর টাও নাই
সেই খানে কত কত স্মৃতি? আনমোনা বেবস নির্মলা
আকাশ নীল মুখ ফেরাল, সাদা মেঘের আঁড়ালে।

১৪২৪/শরতকাল/৫, আশ্বিন

ঘুনে ধরা খিড়কি খসে পড়ে সিঁথানে

ঘুনে ধরা খিড়কি খসে পড়ে সিঁথানে

কালের ক্ষতে এখন দগদগে ঘা
পুঁজ চুঁইয়ে পড়ে;
ক্ষতের মাংস খসে পড়ে এখন
পোকাগুলো কিলবিল করে
যেন মৃত খায় কুঁড়ে কুঁড়ে ভূ-ভক্ষ কিটের দল।

সেই ক্ষত এখন কালসিটে দাগ
ঘুটঘুটে আঁধার রাতে;
এক চিলতে জোনাক আলো যেন
কামাক্ষা সমীপে দরাজ জানলা
খুলে দেয় স্বপ্ন দুয়ার দিগন্তজুড়ে নীলের ভারি টান!
আচমকা বাসনায় ডুবে যায়
যেমন নীল ছেড়ে জোছনা ভাসে নিজ উল্লাসে।
ক্ষুধার পোড়া দহন যুগে যুগে!
সেই ক্ষতেই আগ্নিয়গিরি হয়ে জ্বলে; পৃথিবী জুড়ে
শুধু মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

ভোতা বোধ মরে বেঁচে থাকে পালিয়ে পালিয়ে
যন্ত্রণা শুকে শুকে ভোতা বোধের আড়মোরা ভাঙ্গে
জেগে দ্যাখে বেলা ডুবে সারা কাঞ্চনজঙ্ঘা হারিয়ে গেছে
ঘুনে ধরা খিড়কি খসে পড়ে, সিঁথানে।

৪,আশ্বিন/শরৎকাল/১৪২৪

ক্ষুধার জন্য টান টান বাসনা খসে পড়ে

ক্ষুধার জন্য টান টান বাসনা খসে পড়ে

ক্ষুধার জন্য টান টান বাসনা খসে পড়ে
ইট সুরকির পুরাতন দালানের মতো
স্বপ্নগুলো চুঁইয়ে চুঁইয়ে কদাচিত ধুমকেতুর ফলা বুনে যায়
অরন‌্যের বিনুনীতে সদ্য ফোটা ফুলের তোরায়
মধুর গুঞ্জণ নেশার হাট বসে সহসা;

করতলে ছিল যে মাছি
কৌতহল বসত মৃত! তুচ্ছ লীলায় ধুলোর আবিরে এখন
কি অধিকার ছিল তারে করতলে রাখবার?
বাঁচবার অধিকারে স্বাধীনতা হারালো;
না কি স্বাধীনতা এক বিচ্ছিন্ন একচিলতে বাসনা?
ইচ্ছে করলেই ক্ষয়ে যায়, খসে পড়ে, নুয়ে পড়ে
গ্রহণ লাগা মেরুদন্ড;
চন্দ্রাবতীর ভালোবাসায় আপ্লুত, মোহগ্রস্থ
অভিমানের ফারাক টেনে টেনে কালের আবর্তে
যেমন থাকে বাতাসের হাতে মেঘের লাগাম!

০৩,আশ্বিন/শরৎকাল/১৪২৪

নীলের উঠান জুড়ে শরৎ সম্ভার

নীলের উঠান জুড়ে শরৎ সম্ভার

মেঘের খোলা জানালায়
গাঢ় নীল রং!
আকাশের কার্নিশ হতে চুঁইয়ে চুঁইয়ে
পরছে যেন, বাসনার অমোঘ আবেশ ছড়িয়ে;
মেঘমোল্লার বসন পাল্টিয়েছে খানিক
ধবল কাশ বনের আমন্ত্রণে!
মেঘেদেরও তাই সাদা বসন।

সন্ধ্যাবতীর জলছবি,
টান ধরা বানের জলে টলমল করে ভাসে
মিহি ঢেউয়ে! বিছানো জলে
হেলাঞ্চার বেগুনী ফুলে লাল ফড়িং
কেঁপে কেঁপে উঠে;
মাছের পোনার ঝাঁক দেয় উঁকি
ডোবার পদ্মপাতায় সুবর্ণ ব্যাঙ
গায়ে যেন আষাঢ়ে শেওলা মাখা তামাটে রং।

সাদা মেঘের ওপাড়ে আকাশ নীলে যেন
পথ হারা এক ঝাঁক চিল ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ায়।
মৃদ লয়ে সজনের পাতা ঝরার উর্মি নেশায়
নীলের উঠান জুড়ে শরৎ সম্ভার।

১৪২৪/১, আশ্বিন/ শরৎকাল।

কবিতার গায়ে রঙ চরাতে

কবিতার গায়ে রঙ চরাতে

কবি আজ ক্লান্ত,
ভোতা বোধের বির্মষ যাতনায়
তাইতো আর কবিতা হয়ে উঠে না;

সীমান্তের কাঁটা তারে
পথ ফুরায় শীর্ণ শ্রান্ত নগ্ন পদযুগল
মৃত্যু ভয়! পুঁজির দাবানলে সব পুড়ে ছাই!
পুঁজির কেতকী মহুয়া নেশা খুনের তান্ডবে মাতে
বর্বর বোমার বর্ষণে,
মায়া মমতা যতো আত্মহননের প্রত্যয় খুঁজে
লজ্জায় বিমর্ষ!
বোধের উঠানে কলঙ্কিত সদ্য খুন মৃত মাছের মতো
ধুলোয় গড়াগড়ি খায়।

ধুঁয়া ভরা আকাশে,
ধবল ডানার চিল ডেকে ডেকে কেঁদে কেঁদে ফিরে
সভ্য বোধের হিসাব কসে কসে
অভিশাপে গাছের সবুজ পাতা লীন হয়ে
মরে যেতে বসেছে আজ।

২৬, ভাদ্র/১৪২৪/শরৎকাল।

ঈদের তিন পদ

ঈদের তিন পদ

০১/ঈদে বাড়ি ফেরা

বাড়ি ফেরার মধুর সুখ
ঈদের রং এ রাঙা বেশ!

মানুষ মানুষে ঠাসাঠাসি
বাস ট্রেন আর লঞ্চ বোঝাই!
শৈশবের ঐ দোল মাখা মমতার টান
মায়ের আঁচলপাতা যে ঐখানে!

কত চেনা কত যে সুখের আঁধার
মায়া ভরা ঐক্যতান!

০২/আসবে সবাই বাড়ি

এমনি সুখের মায়ার টানে
আসবে সবাই বাড়ি।
কারো নাই যে ঘরকন্যা, চরবে না যে হাঁড়ি।
নাই যে বাড়ি। নাই যে ঘর।
বাস্তুু ভিটে করেছে পর।
সর্বনাশের বান যে এবার স্বপ্ন নিল তল।

সুখে ভরা উঠোন ছিল,
টোনা টুনি ডালিম গাছে!
সর্ষে মাঠে সবে হলুদ ফুল দুলে;
এমনি সময় উত্তরের বান নিল সব যে কেড়ে।

০৩/সুখের মিলনের ঈদ

দুঃখ কষ্টের আঁধার ঠেলে, মিলবে আলোর দেখা
তাইতো সবাই বুক চিতিয়ে, মিলবো মোলাকাতে
আতর টুপির বাসনা ছড়ায়, ছামিয়ানার নানা বেশ
হইহুল্লুর চেচামিচি, আনান্দের নাইরে শেষ!
অনেক দিনের পর মিলবে সবাই, একই উঠোনের ঠাঁই
প্রজন্মের পরে প্রজন্ম মিলে, বেড়েছে কত কি?
সবাই খুশি দাদুর উঠানে, সুখের মিলনের ঈদ

ভালোবাসার টুকরো

ভালোবাসার টুকরো

ভালোবাসার টুকরো
আদি অন্ত! কোথায় যেন
লেখা আছে অথবা সবার মুখে মুখে
চরে চরে বেড়ায়,
প্রেম আসে চুপিসারে; আবার তা
মিলিয়ে যায় মেইয়ে যায় এমনি এমনি!
শুধু সময় তার পিছু হাঁটে
পথিকের ছায়ার মতো,
কর্দয্য কোলাহলেও পিছু ছাড়ে না কখনও;
দিনমান শেষে!
রাতের প্রহরে প্রহরে তন্দ্রাঘুমে
যন্ত্রণার আকর বুনে যায়।

সত্যই তো!
আধো ঘুমে চোখ কচলাতেই
হাজির; সমুখে বরেন্য বধুয়া!
পড়নে তার বসন্ত আবির মাখা
সুপূর্ণা আঁধিয়ার আবেশ ঘন
ঘোমটার আঁড়াল।

১২, ভাদ্র/১৪২৪/শরৎকাল।

অনামি দহনে জৌলুস ছড়ায়

অনামি দহনে জৌলুস ছড়ায়

নগরে, একতলা দু’তলা
তে’তলা চৌতলা বহুতল
গগনবিদারী দৃশ্যপটে
আচমকা নৈর্বত্যের গান ভেসে আসে।
বিশালতার মাপকাঠিতে
সব কিছু তুচ্ছ অতি, নগন্য অস্পৃস্য
বাড়ি ঘর নয়তো,
দালান কোটার এক চকচকে প্রক্ষালণ।

অথচ তারই নিমিত্তে
মৃত্তিকা ঘ্রাণ বাহারি পাথরের ফাটলে
গজে উঠা আগাছার ধ্রমজাল!
বিমর্স পাথর দেয়ালের গায়ে
লকলকে ফার্ণ; পরোকিয়ার অম্ল
সুখের নেশায় বেড়ে উঠে
অনামি দহনে জৌলুস ছড়ায়।

১৪২৪/০৭,ভাদ্র/শরতকাল।