ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

গবলিনী কবিতা

গবলিনী কবিতা

জোছনার মুখ গবলিনের মত বেঁকে থাকে
হাত নিশপিসে চুরিবিদ্যায়
অন্যের কলম চালিয়ে কবিতার নৈবেদ্য সাজায়
রোদ্দুরে আচার দেবে বলে

কপালটা ফুলতে ফুলতে ক্রমশ:
গাছে গিয়ে আটকে যায়

পাঁজর বেঁকিয়ে পায়ের নূপুর বাঁধতে গিয়ে দেখে
খরগোশে চুরি করে নিয়ে গেছে ।

ফর্ম্যালিনে কলম ভিজিয়ে ন্যাকড়ায় মোছে
ফের কবিতা চুরি করে মুণ্ডছেদের জন্য

নান্দনিক

নান্দনিক

নান্দনিক তার চলাফেরা, নান্দনিক তার হাসি
দুটি গজদন্ত শ্বাপদ হয়ে ছুঁড়ে দেয় খাবার বাসী
অপরূপ তার ভঙ্গিমা, অপরূপ তার কালিমা
সেই অপরূপে মন মেজে নিয়ে হয় বৃন্দাবাসী।
নাগর এসে একমুঠো করে ধুলো ছুঁড়ে দেয় বাতাসে
আমরা অভাজন তাই চেটে খাই আরও পাবার আশে
বার করে নেওয়াটাই আসল কথা নাগর দিল লিখে
জানো না কি অভিমন্যু শুধু ঢুকেছিল বেরোয় নি সমুখে !

আসল অভিপ্রায়

আসল অভিপ্রায়

অনেকটা সময় লেগেছে ওই বোবাকে বুঝতে
আসল কথা চুপ করে থেকে মানুষকে খুঁচোনো
এটাই উদ্দেশ্য, হাজারটা দোষ ঢাকবে কি সে?
তার ওপর আবার জমজমাট সহোদরের নীরব প্রেম
এখন তার ডিজিটাল অক্সিজেন না পেয়ে জীবন মরণ
নিজের অহংকারে নিজেই হয়েছে পতন —-
তাই রোজ তারিখে খুঁচিয়ে মরণ কামড় দিয়ে যায়
ওসব অবৈধ সন্তান, বিবাহের সিগন্যাল ওসব কিছু নয়
লোকদেখানি ফাঁকা মাঠে গোল করাই আসল অভিপ্রায়।

খুনসুটি

নিজের বৌরে রোজ গুন্ডাদের ঘরে ঠেলে দেয়
উহাকে আর উহার গেরোস্থালী কাজের মেয়ে দেখে
এখানে এসে কখানা হাড় নিয়ে মস্তান পিন্টো
মেমসাহেবরে গুঁতোয় আর এক ঝুঁড়ি মিথ্যে নামায়
এতগুলো বছর যখন কেটেই গেলো এভাবে
তখন পাপের ভয় আর কই ?

বৃক্ষ হাত

বৃক্ষ হাত

কবে জানি না হাতের পাঁচটা আঙ্গুল
লম্বা হয়ে এক একটা বৃক্ষ হয়ে গেল
যার প্রয়োজন তাকে ছায়া দিতে হয়
ক্রমশ: ছায়া হেকে জন্ম নেয় ছায়ামানব
শীর্ণ হাত, পিপাসু ঠোঁট
সব সরোবর শুকিয়ে গেছে
তাই মানস সরোবরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সম্পর্ক

সম্পর্ক

পুরোনো সম্পর্ককে ভেঙে দেবার
কি অসম্ভব প্রয়াস !
দেবদূতেরা ছুটে ছুটে যায়
এদিক থেকে ওদিকে,
অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে পিশাচীরা।
চেতনার গভীরে প্রোথিত মেকী
অস্তিত্বের বিলুপ্তি প্রয়াসে
একের পর এক লিখিত হয়
ব্যঞ্জনাময় অনুকাব্য।

অশ্রুমতী চাঁদনী

অশ্রুমতী চাঁদনী

হাতের স্পর্শ পাথরে রেখেছি মুখ
কাঁচে কাঁচ ঠোকা জোনাকি আলোয়
ঝিলিমিলি রাতে মনমানবীর হাতছানি
তুলে নিই তাকে পরম যত্নে ভুলুণ্ঠিতা্
ঐশ্বর্য এঁকে দিই তার কুন্তলিনী কপালে
দেবলীনা থেকে দিলাম দেবী স্বরস্বতী
আজন্ম বিশ্বাসে আঁকড়ে নিলাম হাত
দেব না হতে আর অশ্রুমতী চাঁদনী।

রাতের রাজধানী

রাতের রাজধানী

রাতের রাজধানী অপূর্ব সাজে সেজেছে
পথে পথে আলোক তোরণ, নক্ষত্রমালা
স্বচ্ছ জল ফোয়ারায় বর্ণিল রঙের ছটা
বাজছে ভেরী বাজছে নিনাদ; ধর্মচক্ররাজ
এ পথে পুষ্পমাল্য আলোক শোভিত রথে
চলে যাবেন আর দু হাতে বিলিয়ে দেবেন
তাঁর শেষ কড়িটুকু, এ তাঁর এক ব্রতপালন।

দরিদ্র জনসাধারণ বৎসরের এই একটি বিশেষ
দিনের অপেক্ষায় থাকে, সেই শুভ মুহুর্তটি
ঐ তিনি আসেন, মুখে কি অদ্ভুত প্রশান্তি।

দাও দাও, চারিদিক থেকে ওঠে কোলাহল
তিনি ধীর স্থির অবিচল, পার্শ্ববর্তী বিশ্বস্ত
রক্ষীরা এক একটি দানসামগ্রী তাঁর হাতে
তুলে দেয় অত্যন্ত সযত্নে, অবনত মস্তকে।

চারিদিক থেকে প্রপাতের ন্যায় শব্দ জাগে
জয় জয় মহারাজের জয়, আজ এই পবিত্র
রজনীতে রাজধানী পরম পরিতৃপ্ত, আশস্ত্ব।

ক্রমে ঐ দেখা যায় দিকচক্রবালে তাঁর দৃপ্ত
পুন্যাবয়ব ক্রমশঃ দীর্ঘকায় হতে হতে দূরে
আকাশ ছুঁয়ে নেয় সপ্তর্ষিমণ্ডলের বিন্যাসে।

তিলোত্তমা আমি

তিলোত্তমা আমি

চকমকি নুড়ি পাথরে আলো জ্বালা সন্ধ্যায়
অবাক চোখে দেখি তোমায়,
তোমার প্রশস্ত ললাট, আবেগী ঠোঁটের হাসি
চোখ জুড়ে শুধু স্বপ্ন আঁকা।
জরীর ফিতেয় বাঁধা রেশমী চুল বিছিয়ে দিই
তোমার মুখে আলতোভাবে ,
নরম আবেশে বুঁজে আসে তোমার দুই চোখ।
তিলোত্তমা আমি তোমার সাথী
এক জনমে নয় জন্ম জন্মে পড়ে আছি বাঁধা।

নীল আকাশের নীচে

নীল আকাশের নীচে

কাল রাতে নীল আকাশের নীচে তোমায় পেলাম।
তোমার গভীর চাউনি দিয়ে সাজিয়ে দিলে,
সব দ্বিধা, সংশয় ভুলে ছুঁয়ে দিলাম
তোমার লজা রাঙানো আবীর গাল।

চাঁদনী রূপসী রাতে না হয় ঘুমাক্ উজ্বল তারাগুলি,
শুধু মৃদু জোছনায় হোক কিছু আলাপন।
হরিদ্রা-কুসুমে রাঙা অষ্টাদশীর চাঁদে
ফিরে পাই সৌরভ আর বিগত কাল।

তোমার আমার মাঝে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে
তবুও বালুকাবেলায় ঝিনুক কুড়ানোর
প্রাচীন অভ্যাসে আজো ছুঁয়ে দিলাম
আলতো করে তোমার কপাল।
ছন্দে অনুপ্রাসে তোমায় সাজাই নিরিবিলি কবিতায়
শীতলপাটি বিছিয়ে দিই মনের দালানে
নীল জলে নীল সায়রে ভেসে যাই
ময়ুর নৌকায় তুলে দিয়ে পাল।

কথার পুতুল

কথার পুতুল

কতবার তোকে খুন করতে গিয়েও
হাতগুলো সরিয়ে নিই
তোর হিরন্ময় মন, তোর হিরন্ময় কথা
কথাদের আমরা সাজাই নানান ভাবে
তাদের গায়ে রং দিই, আলখাল্লা জড়িয়ে দিই
দেখতে দেখতে কথাগুলো এক একটা পুতুল হয়ে ওঠে
মাকড়সার জাল থেকে বেরিয়ে কথাগুলো
বায়বীয় আকার হয়ে বাতাসে মিশে যায়।

হারিয়ে পাওয়া

হারিয়ে পাওয়া
(বুলবুলি)

সেই বহুদিন আগে পুতুল খেলতে খেলতে
ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম
সব কথা আমারি ছিল
লাজুক মানুষ কখনো রা কাড়ে নি

কতদিন পুতুল খেলেছি তাও মনে নেই
এতগুলোর বছর আগেকার কথা
কি আর মনে থাকে?
তারপর আমি অন্যদেশে এসে গেলাম

নতুন দেশ নতুন লোক আর মানুষের ভীড়ে
কবেই ভুলে গেছিলাম ওকে
কথাগুলোও এখন মনে পড়ে না
সবই আবছায়া স্মৃতি

সেদিন কে যেন তার নাম বলে গেল
আমি ভাবলাম তাই ত ?
দেখি ত ওর পুরোনো বাড়িটা আছে কি না !
ও মা গিয়ে দেখি সেই ত রয়েছে ।

বাড়ির ভেতর গিয়ে ওর আঁকা ছবিগুলো
নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখি
সেই ছোটবেলার ছবিগুলো দেওয়ালে আঁটা
তারপর দেখে অবাক যে আমার কথা সে ভোলে নি

সেই থেকে গালে হাত দিয়ে এখন ভাবছি
সে কি সেই তখন থেকেই এতগুলো বছর মনে রেখেছে
না কি আর পাঁচজনের মত কখন যেন
পথ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে ?

আগমনী

আগমনী

শরতের মেঘে মেঘে মায়ের আগমনী
সোনা সূর্য্য ঝিকমিকিয়ে যায় পাতায় পাতায়,
কাঁচা হলুদ বরণ যেন লেগে আছে ঘাসে
কাশের দল মাথা নেড়ে ফিসফিসিয়ে হেসে যায়।

শিশির ভেজানো সকালে কে ঐ বালিকা
খালি পায়ে নূপুর পড়ে বাগানে শিউলি কুড়ায় ?
দূরে শুরু হয় ঢাকের আওয়াজ ভোর হল
পূজার ফুল এনে সে ঝুড়িতে উপুড় করে দেয়।
শুরু হয় মন্ত্র, শুরু হয় আরতি, পুষ্পাঞ্জলি
মায়ের পাশটিতে দাঁড়িয়ে ছোট মেয়ে মন্ত্রগান গায়,
নানা বস্ত্র, আভরণ সজ্জিত যত পুরুষ ও নারী
পূজাস্থান ভরিয়ে রাখে হাসি আনন্দের ফোয়ারায়।।

রাতের রাজধানী

রাতের রাজধানী

রাতের রাজধানী অপূর্ব সাজে সেজেছে।
পথে পথে আলোক তোরণ, নক্ষত্রমালা
স্বচ্ছ জল ফোয়ারায় বর্ণিল রঙের ছটা
বাজছে ভেরী বাজছে নিনাদ; ধর্মচক্ররাজ
এ পথে পুষ্পমাল্য আলোক শোভিত রথে
চলে যাবেন আর দু হাতে বিলিয়ে দেবেন
তাঁর শেষ কড়িটুকু, এ তাঁর এক ব্রতপালন।

দরিদ্র জনসাধারণ বৎরের এই একটি বিশেষ
দিনের অপেক্ষায় থাকে, সেই শুভ মুহুর্তটি।
ঐ তিনি আসেন, মুখে কি অদ্ভুত প্রশান্তি।
দাও দাও, চারিদিক থেকে ওঠে কোলাহল।

তিনি ধীর স্থির অবিচল, পার্শ্ববর্তী বিশ্বস্ত
রক্ষীরা এক একটি দানসামগ্রী তাঁর হাতে
তুলে দেয় অত্যন্ত সযত্নে, অবনত মস্তকে।
চারিদিক থেকে প্রপাতের ন্যায় শব্দ জাগে
জয় জয় মহারাজের জয়, আজ এই পবিত্র
রজনীতে রাজধানী পরম পরিতৃপ্ত, আশ্বস্ত।

ক্রমে ঐ দেখা যায় দিকচক্রবালে তাঁর দৃপ্ত
পুন্যাবয়ব ক্রমশঃ দীর্ঘকায় হতে হতে দূরে
আকাশ ছুঁয়ে নেয় সপ্তর্ষিমণ্ডলের বিন্যাসে।

নতজানু সত্তা

নতজানু সত্তা

অনন্তকাল শুকনো বাঁশপাতার মত
কাঁপে মনের এলোমেলো চিন্তাগুলো,
যে ভাবনাগুলো কেউ যেন গুঁড়িয়ে
পায়ে দলে গিয়েছিল আদিম ইচ্ছেয়,
কেন জানিনা তারা আবার ফিরে এল।

সুদূরপ্রসারী দুটি ধ্যানস্থ চোখ নতজানু,
স্তব্ধতা ছুঁয়ে যায় রাতের সহস্র তারা।

তুমি কি এলে? মায়া না কি স্বপ্নছায়া ?
শত শত ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রতটে
তুমি কি করে একটি ঝিনুকই কুড়োলে?
তোমার ইচ্ছেগুলোকে মুঠোয় রেখে
আমি একা হেঁটে যাব সামাজিক পথ
তবু আঁচড় লাগতে দেব না তার গায়ে
যে দ্বিখন্ডিত সত্তাকে সযত্নে জুড়ে দেয়।