ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

পোস্টমর্টেম আগে ও পরে

#
এখন পোস্ট মর্টেমে আছি
এভাবেই কিছু কাল থাকতে চাই
পুরুষানুক্রমিক এই কাজে সিদ্ধ
কারো মৃত্যুর আগে কিংবা পরে
যতক্ষণ না একটা অর্ধমৃত শুকুন এসে
সবটা উদরস্থ করে ।
#
যে টার্গেট হয় পোস্টমর্টেমে
তার শরীরের সব জায়গায় হাত চালাই
হেটেরো অথবা হোমো হব বাছবিচার করি না
শকুনের এমনি নির্দেশ |
#
নিজেদের উপপতি ও উপপত্নীগুলি গুনে নিয়ে
তারপর ভার্চুয়ালে আসি
টার্গেটের নাড়ি নক্ষত্র শুঁকে শুঁকে দেখি
আমাদের জীবনের পরম মোক্ষ আর তৃপ্তি |
#
নির্বাণের আর দেরি নেই
স্বর্গ থেকে মায়ের আত্মা রোজ হাতছানি দেন
শকুন ড্রিবল করে বেরিয়ে যায়
পরের জন্মে পতিতাদের দালালগিরি করার তপস্যায় |

শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি

শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি

আমি কবিতা কখনো লিখি নি
শুধু তাকে হাত বদল হতে দেখেছি
যেন এই অন্ধ পৃথিবীতে সে মৃত।

তাকে বাঁচাতে উদ্ভ্রান্ত ছুটে যাই
ধূসর সভ্যতা থেকে আলোকিত উত্তরণে
নবজাগরণের মত সে একদিন
আমার বিস্মিত চোখ খুলে দিয়ে যাবে।

সেই আশায় হাতে ভরসার শব্দ মুঠি করে
পাতায় পাতায় লিখি তার আগমনী
নতুন দিনে নতুন আশার পদধ্বনি।

এই নির্দয় পৃথিবীর বাগিচায় নিয়মিত
কবিতাকে পদদলিত হতে দেখেছি
ভুলুন্ঠিত কবিতার চোখে জলের বর্ষা
যতবার তাকে আগলাতে গেছি
ততবার সে ছিটকে পড়েছে এদিক ওদিক।

এখন সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় আছি
যখন কবিতাকে দেব শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি
সমস্ত মানুষের মনে খোদিত করে যাব
এক অপূর্ব ঐশ্বর্য ঐশ্বর্যশালী কবিতা
যার নাম শান্তির দূত বহনকারী “স্বাধীনতা”।

বটতলার কাব্য

বটতলার কাব্য

কিছু মানুষ আছে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল
চিলের শিকার ধরার মত রোজ একদিকে চেয়ে
ছোঁ মেরে পেজা থ্রী রিপোর্ট লিখে দেয়
হরি হে তুমিই সত্য ! মাইরি বলছি।

সেই মানুষের হনুমানের বগলের তলায় সূর্য্যের মত
বাগদত্তা খলবলে প্রেমিকা,
যার কাজই হচ্ছে মানুষকে নিচু করা

পায়ের তলায় দুশো প্রেমিক প্রেমিকা,
দাদাবাবু আর দিদিমনির চামচা
কাটা ঘায়ে রোজ নুনের ছিটে দিয়ে বটতলার কাব্য লেখে।

প্রায়ই মনে হয় দুহাতে গোবর নিয়ে কর্তা গিন্নির মুখের ওপর
ঘুঁটে শুকোতে দিই আর মুন্ডু দুটো ঘুরিয়ে টার্গেট বদল করে দিই।।

প্রশ্ন

প্রশ্ন

তোমার দশহাজারি, আর আমার আছে শুধু ফাঁকাদুয়ারী
এমত অবস্থায় বলে দাও কি করে তোমার সাথে পারি ?

যখন ছিলাম সহজ, তখন ভেবেছ জটিল
এখন কিসের কারণে, খুঁজে যাও অন্তমিল ?

এ ওকে দোষী করে, সে তাকে দোষী
ভুলে যায় নিজে কি, সম্পূর্ণ নির্দোষী ?

সব ঘাটে ছিপ মারি কোনো ঘাটে নেই ?
ঘাটে ওঠার স্ট্যাটাস তবে কি করে যে দেই ?

স্বভাব যায় না ম’লে, ইল্লদ যায় না ধুলে
এহেন কবরস্থানে কি শুধু নিরব থাকাই চলে ?

মায়ের আগমনী

মায়ের আগমনী

দীর্ঘদিন তপস্যায় সিদ্ধিলাভের পর
মাতা আসেন ভক্তদের সমাগমে।
পরণে লালপাড় শাড়ি, পায়ে আলতা,
মাথায়, কপালে সিন্দুরের পবিত্র টিকা।

মা মা গো, ভক্ত রমণীরা পায়ে পড়েন
মা মোক্ষলাভের উপায় বলে দাও
মা হাসেন, অতি পবিত্র শুচিস্মিত হাসি।
তিনি বলেন, সাম্যবাদ পড় নি ?
সবাইকে সমানভাবে দেখতে হয়
এই হল প্রকৃত হিন্দুনারীর কর্তব্য।

যে চোখে স্বামীকে দেখো, তাঁর সাথে
আচরণ কর, সেইভাবেই পিতা, ভ্রাতা,
পুত্র, জামাতার সাথে আচরণ করবে।
ভেদাভেদ রেখো না মা, ভেদাভেদ
রেখো না, এই হল প্রকৃত মোক্ষ,
আর সব শুধু কেবল নিমিত্তমাত্র।

মায়ের পবিত্র রথ এসে যায়, মা রথে
চড়ে বসেন, যাই মা সকল, যা বললাম
মনে রেখো, আবার এসে যাব আর এক
তপস্যা শেষে– রথ আকাশে মিলিয়ে যায়।
ভক্ত রমনীরা হাত জোড় করে উপরে
তাকিয়ে বলেন, মা মা গো, তুমিই সব।

ফরেন ট্রিপ

ফরেন ট্রিপ

সুন্দরী ইউরোপ ট্রিপে গিয়ে
সেফ সেক্স পরকীয়া করে
রাস্তায় একটা গণ্ডার এঁকে
পেঁচা চোখে আগুন জ্বেলে বললেন,
হু! শেষ পরকীয়া !
তারপর নিজেই নিজের
গবেট মস্তকে চাঁটি মেরে বললেন,
এ কি করে হয় !
ছবির সাথে পরকীয়া !
কোনো ডেট না করেই ?
তারপর তিনি গণ্ডারটি পকেটে পুরে
শকুনের চোখে সার্চলাইট জ্বেলে
ঘরের মাসীর সাথে
ইশ্ক কেয়া হোতা হ্যায়
এই থিসিসে ব্যস্ত;
যতক্ষণ না আর একটা শিকার মেলে
খাবার ভেতর থেকে লুকোনো
নখগুলো বের করে আর একটা
গণ্ডারকে হাঁচড়ানোর সময় |
পরের ট্রিপটা এখনো স্কেজুল হয় নি ||

শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি

শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি

আমি কবিতা কখনো লিখি নি
শুধু তাকে হাত বদল হতে দেখেছি
যেন এই অন্ধ পৃথিবীতে সে মৃত।

তাকে বাঁচাতে উদ্ভ্রান্ত ছুটে যাই
ধূসর সভ্যতা থেকে আলোকিত উত্তরণে
নবজাগরণের মত সে একদিন
আমার বিস্মিত চোখ খুলে দিয়ে যাবে।

সেই আশায় হাতে ভরসার শব্দ মুঠি করে
পাতায় পাতায় লিখি তার আগমনী
নতুন দিনে নতুন আশার পদধ্বনি।

এই নির্দয় পৃথিবীর বাগিচায় নিয়মিত
কবিতাকে পদদলিত হতে দেখেছি
ভুলুণ্ঠিত কবিতার চোখে জলের বর্ষা
যতবার তাকে আগলাতে গেছি
ততবার সে ছিটকে পড়েছে এদিক ওদিক।

এখন সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় আছি
যখন কবিতাকে দেব শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি
সমস্ত মানুষের মনে খোদিত করে যাব
এক অপূর্ব ঐশ্বর্য ঐশ্বর্যশালী কবিতা
যার নাম শান্তির দূত বহনকারী “স্বাধীনতা”।

ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ধরা ছোঁয়ার বাইরে

আমার কোনো নিজস্ব দেবতা নেই
যাকে ধূপ ধুনো দিয়ে রোজ আরতি করি,
যার ওপর আমার সীলমোহর লাগানো আছে।

যে সব দেবতাদের একাধিক দেবী আছেন,
যারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তাদের আমি ভালোবাসি
কারণ তারা আমায় প্রথমা দেবী করে রেখেছে।

হেকিমনি

হেকিমনি

কুম্ভকর্ণ ঘুমাচ্ছিল নাকে দিয়ে তৈল
সবাই বলে ও বাবা গো এ কি ভীষণ হইল
দিনের পর দিন কেটে যায় মাসের পর মাস
কুম্ভ তবু নড়ে না গো একই সব্বনাশ !

পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ও পাড়ার হেকিম চাচা
রাবণ এসে বলল তারে, “চাচা আমায় বাঁচা।
ভাইটা বুঝি তুলবে পটল নিঃশ্বাসও বয় মন্দ
সে যদি যায় আমিও যাব নেই কো তাতে সন্দ।”

হেকিম কয়, “দাঁড়াও তবে আনছি ডেকে হেকিমনি
ঝাড়ু মেরে করবে ভালো যত রোগ আর রুগিনি।”
হেকিমনি এসে বলে, “আন ত দেখি মালা
মালা পরিয়ে ভাঙব আজি কুম্ভোর ওই দেয়ালা।”

মাল্য গলায় কুম্ভ তাকায় ভাঙল যে তার ঘুম,
গন্ধ মুখে হেকিমনিকে দিল বিশাল চুম।
হেকিমনি গন্ধ শুঁকে উল্টে পড়ে দাওয়ায়
বল ত দেখি তার পর কি হতে পারে হেথায় ?

ত্রিশূল

ত্রিশূল

#
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
বরাবর ছিল যারা এখনো আছে
শুধু যারা নিজের জায়গা নিতে পারে নি
ছলাকলাতে অপরকে ঠকাতে নিজে ঠকেছে
তারাই কলম্বাস হয়
পরিত্যক্ত উপদেশ নথিভুক্ত হয়

#
নস্টালজিয়া সর্বক্ষণ পাশে থাকা
মানুষের জন্য হয় না
যাকে একবার পাশে পাওয়া গিয়েছিল
এখন আর নেই তার জন্য হয়

জঘন্যতা জঘন্য মানুষদের মানায় বেশি
যে কোনোদিনই সাফসুতরো হতে পারেনি
তার কাছে এর চেয়ে বেশি কি আসা করা যায় ?
তার কাহিনীতে দেবত্ত্বের আশা দুরাশা

#
দেবালয় আগেও ছিল এখনো আছে
কারা যেন শকুনের ডানা থেকে পালক তুলে
বারে বারে দেবালয় চিহ্নিত করে
আর নিত্য তুষের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরে।

কোথায় তুমি ?

কোথায় তুমি ?

ওগো প্রিয় আমার, তুমি ছাড়া কেন
কিছুই আর ভাল লাগে না ?
শুধুই চেয়ে থাকি আকাশ পানে
উদাসী মেঘে হই আনমনা।

কৃষ্ণচুড়ার বনে লেগেছে আগুন
সে আগুন আমার মনে জ্বলে,
ছায়াঘন পথের ধারে থাকি বসে
তোমার ছায়া দেখতে পাবার ছলে।

আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলতে থাকি
যদি পাই হঠাত তোমার দেখা,
নিশুতি রাত, ভালোবাসা কথা কয়
সবখানে তোমারি নাম আছে লেখ।

পংক্তিমালা

পংক্তিমালা

#
নতুন খাতাটা ছিল না পাশে তাই পুরোনো খাতাটা তুলে নিয়েছিলাম
নৈসর্গিক শুঁড় নিয়ে কে যেন ঢুকে যায় সবেতে হয়ত: অনামিকা নাম
কথায় গরল চোখেতে অনল চিনি না সে যে কে, কারই বা সে বালা
ব্যাঁকা চোখে এদিক চেয়ে রোজ গড়ে নেয় তার বিষধর পংক্তিমালা
#
একাকী বালিকার চোখে ধু ধু জল, পালক মাতাপিতা নিয়েছে বিদায়
পূতিগন্ধমাখা অসহায় পিতা শুয়ে আছে জড়ের মত ঘরের দাওয়ায়
অস্ফুট সুরে বালিকা বলে ওঠে, আমি আছি বাবা এখনই বল না যাই
নীল গোলাপে গোলাপবালা আমি ভালোবাসা পেলে আর কিছু না চাই

কাছে আসি

কাছে আসি

সুরে সুরে আর গানে গানে
চেয়ে তোমার চোখের পানে
আলতো ঠোঁটের নীরব ছোঁয়ায়
বলেছি চুপিচুপি ভালোবাসি।
যখন তুমি একলা বসে
চোখটি তোমার আধবোজা
ভাবছো জানি আমায় শুধু
তাই ত’ এত কাছে আসি।
কি যে আছে ঐ চোখের জাদু
এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে আসি
কূল পাই না চোখের ঝিলে
ডুবে গিয়েও আবার ভাসি।
পারি না যে তুমি ছাড়া কিছু
বুঝেও কেন তা বোঝো না
ছেড়ে যাবো যেদিন চিরতরে
ছড়িয়ে দিও ফুলের রাশি।

আলেয়া

আলেয়া

মেলানো যায় নি একটি সরবতা ও একটি নৈঃশব্দকে।
নৈঃশব্দটি ছিল নদীর ধারে তার একলা ঘরে সজ্জিত,
হালকা মেঘে ভেসে যেত তার সলাজ চোখের দৃষ্টি।
হঠাৎই ঈশান কোণে একটা ঝোড়ো বাতাসে
ধুলিস্ম্যাত হয়ে সব ভেঙেচুরে ছড়িয়ে গেল।
অনিশ্চিতের ঢেউয়ে দোলে ময়ূরপঙ্খী নাও।
স্বর্ণ শুভ্র ওড়না আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত,
অদূরে ডাহুক পাখিরা ডানা ঝেড়ে নিল।
অন্ধকারে ভেসে যাওয়ার মুহুর্তে
রাতের অন্ধকারে আলেয়া
এক ফুঁয়ে নিভে গেল।

নিঃসঙ্গতা

নিঃসঙ্গতা

নিত্য ভিক্ষার শেষে একটি বৃদ্ধকে
শহরের একটি জনবহুল রাস্তা পার হতে হয়।
রাস্তার ওপারে একটি পাথরের সাদা পরী,
তার নীচে বেদিতে বসে সে আহার সম্পন্ন করে।
চরাচরের সব মানুষ তাকে বর্জন করেছে
কেবল ওই পরীটি ছাড়া।

কতগুলো কাক পরীটির গায়ে ঠ্যাং তুলে মুতে দিয়ে যায়।
বৃদ্ধটিকে রাস্তা পার হতে গিয়ে অন্ধ সাজতে হয়
নয়ত: সে গাড়ি ঘোড়ার মাঝ দিয়ে ঠাহর করতে পারে না।
কতগুলো ঘুঘু রাস্তার ওপর ল্যাম্পপোস্টে বসে
নিত্য এই দৃশ্য দেখে ।
পাশের জঙ্গল থেকে একটি কোমর ভাঙা বলগা হরিণ,
যে শেয়ালদের পাড়ায় বেড়াতে এসে নিজের পরিচয় ভুলেছে
বৃদ্ধটির লাঠিটা কামড়ে ধরে।
সেও বৃদ্ধটির মত নিঃসঙ্গ জীবনে ওই পাথরের পরীটির পাশে ঝিমোয়।
ঘুঘুপাখিগুলো ল্যাম্পপোস্টের উপর থেকে ডেকে ওঠে,
“বল হরি হরি বল, বল হরি হরি বল।”