ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

তোমার বসে থাকা

তোমার বসে থাকা

শুকনো পাতার মধ্যে তোমার বসে থাকা
টুপটাপ শব্দে খসে পড়ে এক একটা পাতা
তোমার চুলে লেগে থাকে উদাসীন মায়া
সৃষ্টি ভেসে যায় দিগন্ত ছাড়িয়ে সুদূর নীলিমায়।
গানের সুরে ভেসে যায় সারা চরাচর বিশ্বনিখিল
সেই সুরের আবছা আবেশে ভরে থাকে মন
একদিন তুমি পাখা মেলে উড়ে যাবে বহুদূর
শুধু রঙগুলো লেগে যাবে দু’ চোখের পাতায়।

সমুদ্রের ধারে

অনুবাদ কবিতা : ইন্দ্রাণী সরকার
মূল: উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ – বাই দ্য সী

এই সুন্দর শান্ত বিকেল যেন এক পবিত্র
সন্ন্যাসীনির ন্যায় প্রেমপরিপূর্ণ পরিশ্রান্ত,
সুর্য্য তার প্রশান্তির সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে।
সমুদ্রের উপর স্বর্গীয় নীরবতা —-
শোন সেই পরম শক্তি এখন জাগ্রত
তার অনন্ত গতি বজ্রের ন্যায় অবিশ্রান্তভাবে
শব্দ করে যায় —-
প্রিয় শিশু ও কন্যা, তোমরা যারা আমার সঙ্গে
এখানে হেঁটে গেছ, যদি এই পবিত্র রাত্রি
তোমাদের ছুঁয়ে নাও যায়
প্রকৃতি তবুও কম পবিত্র নয়।
তোমরা সবাই ঈশ্বরের বক্ষে আজীবন আশ্রিত
তোমরা জানো আর না জানো ভগবান
তোমাদের মনের মন্দিরেই বিরাজিত।

তুমি যে এত সুন্দর

নুড়ি-চমকানো পথে নিত্য
তোমার অবুঝ যাওয়া আসা
গোলাপী তোমার এত প্রিয় কেন ?
গোলাপের সৌরভে ভরে থাকো তাই ?
চোখে স্বপ্ন নিয়ে চলে যাও শুধু,
যমুনায় দেখো বসে আছে রাই
রূপের ভিতর থেকে ফুটে ওঠে
লাবনী মাখা গোলাপের পাপড়ি
আমার মুঠোয় ভরা একরাশ
ক্রিসেনথিমামের ঝরা কলি
মৌন পরিক্রমায় পৃথিবী ঘুরে নেয়
তার আমিকে এক দিন এক রাত
নিঃশ্বাসে তোমার গন্ধরাজ
মেঘ কালো চুলে পাহাড়ের নীরবতা
রক্তিম ঠোঁটে ঝরা মেপলের আল্পনা
একদিন ঠিক খুঁজে নেব সেই পথ
যে পথে শকুন্তলা হরিনশিশু খুঁজে নেয়
যে পথে ডাকহরকরা ভৈরবী গায়
দেখো একদিন ঠিক তোমায় ছোঁব
এই সমস্ত আমার আমিকে নিয়ে
আকাশের নীলিমায় ভরে যাবে
সোনালী সুখের অপরূপ কারুশিল্প
উজ্জ্বল আলোর অবাক ছন্দময়তায়
খুঁজে পাব আরব্যরজনীর চুম্বন
তুমি যে এত সুন্দর,
তাই তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখি |

নিজেদের বড্ড চালাক মনে করি

তুমি যে একা তাই তোমায় আমরা
সম্পূর্ণ গ্রাস করতে চেয়েছি
রাহুগ্রস্ত চাঁদের মত

তাই প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
কেঁচোর মতো ভিখিরী হাত সরিয়ে নিয়েছি

জানি তুমি এসে বলবে, কি গো তোমরা কই ?
আমরা বসে বসে শুনব, হাসব, মজা দেখবো,
কথার উত্তর দেব না, অজুহাত দেখাবো
যাতে তুমি বারবার এসে বলো
সেই সুযোগে আমরা তোমায় ধরে রাখব

নিজেদের বড্ড চালাক মনে করি
ভাবি পৃথিবীর আর সবাই বোকা।।

নিজেকে বড্ড চালাক ভাবি

সহস্রলোচন হয়ে সহস্র চক্ষু দিয়ে গিলি
নিজের বা ধার করা যখন যা সুবিধে
ভালোবাসাতে খালি ঘেন্না ভরিয়ে দিই

যেটা দরকার সেটা খালি করতে অপারগ
স্বার্থে টানাটানি পরে যায় নিজের ভবিষ্যৎ
দেখতে হবে না ? অন্যেরটা ত মুফত ব্যবসা
শুধু শখের জন্য করে রোজগারের ত’ নয়

নিজেকে বড্ড চালাক ভাবি যেন সবাই বোকা।

জোছনায় আলাপন

জোছনায় আলাপন

চাঁদনী রূপসী রাতে না হয় ঘুমিয়ে যাক্ উজ্জল তারকাগুলি,
শুধু মৃদু জোছনায় হতে থাক কিছু কথা কিছু মধু আলাপন।
হরিদ্রা-কুসুমে রাঙা অষ্টাদশীর বাঁকা চাঁদে রঙিন কথাগুলি,
ফিরে পাক সুমধুর নির্যাস, স্বপ্নে হোক তাই এ নিশি যাপন।।

নেই-আঁকড়া

নেই-আঁকড়া

তুমি রোজ এ দিকে তাকিয়ে কি কথা বলে যাও ?
পাতাল থেকে খুঁড়ে আনো জল
বাতাসে ছড়াও বিদ্বেষের বাষ্প
তোমার কি জীবন নেই,
জীবনে কোনো সাধ আহ্লাদ নেই ?
কি ভাবে তুমি কবর থেকে তুলে আনো
মৃতদেহের সম্পত্তি ?
দুহাতে শুধু ছাড়াও গরল
বরং একটু ঘুরে বসো অন্যভাবে
সব কিছু এতটাই মন্দ নয়
যে ভাবে তুমি এন্যাটোমি করো।

তুমি ত একজন মানুষ
কোনো ভদ্র পিতামাতার সন্তান
কিছু ভরসার কথা দাও
একই টার্গেটে তীর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ক্লান্ত হও না ?
তোমার মুখের সেই বরাবরের
উজ্জ্বল হাসিটা নীলিমায় ছুঁড়ে দিয়েছো ?
দাঁড়াও একটু, কার গায়ে রোজ ঢিল মারছো ?
নিজের, হ্যাঁ নিজের, কিছু অজ্ঞ আর অন্ধ মানুষের কাছে
নিজেরই রোজনামচা আর নেই-আঁকড়া স্বভাবের গান গাও।

চিত্রকল্প

চিত্রকল্প

বাইরে অলৌকিক অপার নিস্তব্ধতা
অচেনা রহস্যের মত সাদা সাদা বালুকণা
পথ প্রান্তর জুড়ে ছড়ানো অসীম উদাসীনতায়
সবুজ ঘাস পাথর কুঁচির মত চাপা পড়েছে বালুকণায়
তুষারপাতের চিহ্ন পাতাবিহীন শাখায় শাখায়
প্রেরণার মত উড়ে যায় ঝোড়ো বাতাস
নির্জন পথঘাটে স্বর্গের শান্তি যেন উপচিয়ে পড়ছে
চিত্রকল্প বর্ণনায় এ আমি আজ মৌনী আত্মস্থ।

নই মায়াবিনী

নই মায়াবিনী

রেশমী জরীতে জড়ানো বেনী চোখেতে টানা সুরমারেখা
কপালের মাঝে উজ্জ্বল তারা
ছলছল মেঘ চুপিসারে বলে,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

চপল আঁখি দুটি বড় উজ্জ্বল ত্রস্ত চাহনিতে একরাশ কথা ;
ময়ুরকন্ঠী রাঙা শাড়ি পরিধানে,
জোছনা আকাশে সপ্তর্ষি শুধায়,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

ভেজা বাতাসে কাঠচাঁপা সুবাস
জুঁই চামেলীতে ভরা চারিপাশ
নদীর ঢেউয়ে ছলাত ছলাত বিরহী ডাহুকী ডেকে উঠে বলে,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

নিথর নীরব তার আধভেজা চোখ ঠোঁট দুটি কাঁপে মৃদু থরথর
শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে নিয়ে
ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সে,
আমি শুধু এক সাধারণ মেয়ে।

সহজতা

সহজতা

সহজতা চাইতে নেই বিশেষত: জটিলতা যেখানে শাস্ত্র
যেখানে একটা শব্দ খুঁচিয়ে হাজার শব্দের সৃষ্টি হয়,
যেখানে একটা কথা জিলিপির প্যাঁচে নিক্ষেপিত হয়।
যেখানে দিন মানে চব্বিশ ঘন্টাই দিন, রাতও তাই,
যেখানে সন্ধ্যে মানে শুধুই গোধূলি আর কিছু নেই।

যেখানে রোবটেরা এক জায়গায় প্রহরীর মত জাগে
যেখানে দিন অভিনেতা নয় শুধু এক পায়ে দাঁড়ানো
একটি উট যে নিত্য সাহারা বালুতে হেঁটে চলে যায়।

যেখানে ভালোবাসা মানে অভিনেত্রীর সত্য অভিনয়
যেখানে বীরপুরুষরা অভিনয় না করেই কিংবদন্তি হয়।

নয়নতারা

নয়নতারা

চোখ এত সুন্দর তাই
ভেজা বাতাসের স্পর্শ আনি,
অনুভূতি আছে বলেই
তোমার আমি হৃদয় খনি।

কষ্ট কিসে জানি না তো
তোমার কথাই ভেবে ভেবে
পূর্ণ হল ভালোবাসা
তোমার আমার অনুভবে।
রাত পোহানোর স্বপ্ন-কথা
স্বপ্ন হয়েই থাকতে দাও
মনের ঘরের মায়াবতী
ভেবে শুধুই কাছে নাও।

তেপান্তরের মাঠ পেরোনো
রূপকথা আর চুপকথারা
ঘুমিয়ে পড়ে রাজার কুমার
রাজকন্যের নয়নতারা।

পরিক্রমা

পরিক্রমা

যখন তুমি ঘুমালে আমি উঠে গেলাম
ইদানীং চুপকথা তোমার মর্জি
তুমি দরজা খুলে দিলে কিন্তু বসতে বলো নি
আমি পায়ে পায়ে একরাশ কথা নিয়ে
তোমার দিকে অবাক চেয়ে রইলাম
দেখতে দেখতে তুমি একটা শিরদাঁড়া হয়ে গেলে
চুন পলেস্তারার মত গা থেকে মাংস খসে খসে পড়ল
তোমার শরীরে কি রক্ত নেই?
শুধুই কাদা মাটির প্রলেপ আর হাড় কখানা
অপরিচিতের মত মিলিয়ে যায় তোমার ছায়া
আর সাবেকী দুটো শিরা বের করা হাত
একদিন ওই জানলায় আমার চোখ রেখেছিলাম
কোনো কনক ভোরে কে যেন খুঁজেছিল আমায়
তারপর পোড়া চিঠিটা শুধু জীবাশ্ম
তোমার চোখ থেকে উড়ে যায় সবুজের টিপ
তুমি এক মৌনপথে পৃথিবী পরিক্রমা করো।

শ্মশানবিলাস

শ্মশানবিলাস

কবিতায় জীবন, জীবনে কবিতা
জাগতিক বলে এখানে কিছু নেই, সবই অসার,
কি করা যাবে এই ভবিতব্য, এই নিয়তি,
এখানে থাকা মানে মৃত্যুই পরিণতি
মন বেঁচে থাকলে মেরে দেয়
মরে গেলে শ্মশানযাত্রী হয়
জীবনে শুধু কবিতা আর হা হুতাশ
ডুকরে কাঁদে শ্মশানবিলাস
কারো ভালো দেখলে পরাণ জ্বলে যায়
খারাপ দেখলে অধিক আনন্দ হয়
এরা মানুষ নয় দেবদূত আর দেবদূতী
যত কাছাকাছি থাকে ততই ধনে মানে উন্নতি।

অনুবাদ : I Wandered Lonely As A Cloud

অনুবাদ কবিতা : I Wandered Lonely As A Cloud
(by William Wordsworth)

আমি মেঘের মত একা ভেসে যাই

আমি মেঘের মতো একা ভেসে যাই
পাহাড়ি উপত্যকার উপর দিয়ে,

হঠাৎ দেখি পথের ধারে এক ঝাঁক
সোনালী ড্যাফোডিলের গুচ্ছ।

জলের ধারে ধারে, গাছের পাশে পাশে,
তারা হাওয়ায় ওড়ে আর দুলে দুলে নাচে।

ফুলগুলো সুন্দর ওই নক্ষত্রমন্ডলীর
ঝিকমিকে তারাদের মত সারে সারে সাজান।

হাজার হাজার ফুলেরা চারিদিকে ফুটে রয়েছে,
বাতাসের দোলায় যেন তারা মাথা হেলিয়ে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

ড্যাফোডিলের বাগানে বাতাসের দোলায়
ঢেউ ওঠে যা জলের ঢেউকেও হারিয়ে দেয়।

তার মনোলোভা রূপে বিমুগ্ধ আমি
হতবিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখি।

যখন আমি একাকীত্বের সুরভিতে নিমগ্ন
ড্যাফোডিলের সৌন্দর্য্য আমার অন্তরাত্মায়
অপার্থিব ভাবনার সৃষ্টি করে।

আমি ডুবে যাই অনাস্বাদিত এক অনাবিল
আনন্দে ওই ড্যাফোডিলের সুন্দরতায়।।

অবহেলা

অবহেলা

চাঁদের গায়ে পেরেক পোঁতার শব্দ
ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসে,
দূরে কালপুরুষ এক রাশ অপেক্ষা নিয়ে
তারাদের সাথে লুকোচুরি খেলে।

বহুদূরে নীল নীলিমায় চাঁদনী আকাশ
আঁধারে আঁধারে মেঘে আর চাঁদে
লুকোচুরি নক্ষত্রপতনের শব্দ
কান পাতলে শোনা যায়।

অন্ধকারে পেঁচার চোখ ফসফরাসের মত
জ্বলতে থাকে।

সীমন্তিনী কপালে কালো টিপ্
দুঃস্বপ্নের মত জেগে
আলোকবর্ষ দূরে একটি সোনালী গ্রহ
অবহেলার পাশে গড়ে ওঠে।