দেবদারু বনে ঠান্ডা শিরশিরে হাওয়া
এলোমেলো চুল উড়ে যায় তোমার
মুখে চিন্তার রেখা বয়সের ছাপ
তবু কি সুন্দর তোমার হাসি
তুমি হাসলে তোমার চোখও হাসে
কত কিছু বলতে চেয়ে থেমে যাও
মাঠের লতাপাতা তোমার পা আঁকড়ে ধরে
একরাশ ভালোবাসা কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে
আমার হাতটা ধরে নাও আমি বড় একা
তোমার কবিতা হয়ে খাতার পাতায় রয়ে যাই।
ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট
স্বর্গীয়
পাখিদের গান দূরে মিলিয়ে যায়
সন্ধ্যার গাঢ় আঁধার ছেয়ে আসে
নদীর জলে ভেসে যায় ডিঙি নৌকা
জলে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা যায়
তিরতির করে বয়ে চলা নদীর জলে
মৃদুমন্দ ঢেউ, বাতাস এসে ছুঁয়ে যায়
রাতের আকাশে তারার শয্যা পাতা
চোখে মায়াকাজল এঁকে ঘুমন্ত চাঁদ
বাইরে অলৌকিক অপার নিস্তব্ধতা
নির্জনতা উপচে পড়ে স্বর্গের শান্তি।
আমি বিবর্ণ ফুলই ভালোবাসি … রবার্ট ব্রিজেস
অনুবাদ – ইন্দ্রানী সরকার।
আমি বিবর্ণ ফুলগুলিকেই ভালবেসেছি
সেইসব ফুল যাদের জাদুকরী তাঁবুতে
সুমিষ্ট গন্ধের স্মৃতি এখনো বিদ্যমান ।
সেইসব ফুল যা দেখা মাত্রই
মধুচন্দ্রিমা আনন্দে ভরে ওঠে,
ভালোবাসার খুশি উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে ।
কিন্তু কিছুক্ষণেই সেইসব ফুল
বিবর্ণ হয় যেমন আমার গান হয়ে যায় ।
সেইসব বাতাস যারা আকাশে বৃষ্টির ফোঁটা
হবার আগেই নিঃশেষ হয়ে যায়
আমি তাদেরই ভালোবেসেছি ।
সেই সমস্ত বর্ণমালা যারা আগুনে
জ্বলে উঠে মনের বাসনা প্রকাশ করে
ও অবশেষে তারা মৃত ও বিলুপ্ত হয়
আমার গানও ওই বাতাসের মত ।
আমার গান তুমি এক নিঃশ্বাসের মতই
নিঃশেষ হয়ে যাও যেমন ফোটা ফুল বিনষ্ট হয়;
পুষ্পশয্যায় মৃত্যুর কথা ভুলেও ভেব না,
অনুকুল বাতাসে ভরা সমাধি আশায় থেকো না !
খুশিতে উড়ে বেড়াও যেখানে সেখানে,
যে নরম ভালোবাসা তুমি অনুভব করতে
এখন তা শব-বহনকারী একটি আধার,
যেখানে সৌন্দর্যের মৃত্যু হয় ।
অভিযান
রাতের তারারা জ্বলজ্বল করে আকাশে
চাঁদের আলো মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে।
পাইন গাছের মাথায় বাতাসের কারচুপি
গাছের ছায়া পড়ে বাড়ির চালে আর আশেপাশে।
তিরতির বয়ে চলা নদীর জলে মৃদুমন্দ ঢেউ
পার্শ্ববর্তী শহরের আলোয় চিকচিক করে।
এমনি একটি রাতে তোমার হাত ধরে হেঁটে গেছি
অনেক দূর দেবদারু পাইনের মাথা ছাড়িয়ে।
আরও অনেক দূর যেতে চাই অন্য কোনো দেশে
তুমি থেকো সাথে চিরকালীন হাত ধরে ভালোবেসে।
সুরের লহমায়
রূপক রাগে যে মীড়ের অলংকার ছিল
তা কোনো পাখির পালকে আঁকা রং,
সুরের লহমার মত আবেশে জড়ায়।
পাখির গান মিলিয়ে যায়
সন্ধ্যার আঁধার ছেয়ে আসে
নদীর জলে ভেসে যায় ডিঙিনৌকা।
ছায়ার মত অনুসরণ করে ভালোবাসা
অগণিত তারার ভিড়ে মিলিয়ে যাওয়া মুহূর্ত।
মরসুমি
মরসুমি ফুলের বাগান দিয়ে
মেয়েটির যাওয়া আসা।
দূরে সাতকাহনের পাড়া,
চত্ত্বর ভরা ঝুমকোলতার টিপ্,
বালুকাবেলায় পড়ন্ত আলো।
রাস্তার দু’ধারে মোরগফুলের ঝাঁক
আলো নিভু নিভু হয়ে আসে,
মেয়েটির ত্র্যস্ত পায়ে নূপুরের নিক্কণ।
ভেসে আসে শঙ্খের আওয়াজ
সে বাড়ির পথে ক্রমশ মিলিয়ে যায়।
অবহেলে
সব প্রাপ্য পাওনা মাথায় তুলে নিয়েছি প্রিয়
তুমি আছ কি নেই আমার জীবনে আর ভাবি না
তবু তোমার না থাকা জুড়ে কিছু স্মৃতি রয়ে গেছে।
তোমার নতুন আগার সুখ শান্তিতে ভরে থাকুক
তুমি খুব দ্রুত আমায় ভুলে যাও তাই আমি চাই
কি করে একটা মানুষ আর একটা মানুষকে
ভালোবেসে অবহেলে সরিয়ে দেয় তার শিক্ষা
তুমি ভালোভাবেই দিয়ে গেলে যাবার আগে।
করোনা দূষণ
গ্রাম্ভারি হয়ে সর্বজ্ঞের মত দিনরাত বসে থাকি
পাতাল খুঁড়ে বের করে আনব কবিতার রসদ
ফুলে ফলে শস্যে ভরে যাবে আমার কবিতার ময়দান
বন্ধুকে এই মাঠে কবেই পিঠ দেখিয়েছি
আমার অমলিন জীবন ইতিহাস
বন্ধুর ছোঁয়ায় পাছে দূষিত হয় তাই ছয় ফুট দূরত্ব রাখি।
নীল সামিয়ানা
আকাশের নীচে নীল সামিয়ানা
নীল আকাশের রং হয়ে তুমি আসো আমার ঘরে
পায়ে লেগে থাকে কচি ঘাসের সবুজ
অনেক গাঢ় করে যখন কাজল পড়িয়ে দাও
দুচোখের জল টলমল আরশির মত শুকতারা হয়।
তুমি কি জানো কত সুগন্ধি লেগে থাকে
তোমার ওই মোহময় মৃদু স্পর্শে?
কত রহস্য থাকে ওই মেঘ কালো চুলে?
তোমার ভেজা পাপড়ি ঠোঁট আমার
চোখের দুপাতায় মৃদু আবেশ দিয়ে যায়
তুমি কি জানো তোমায় ভালোবেসে আমি শুদ্ধ হই?
এক বিকেলের দেখা
মরসুমি ফুলের বাগান দিয়ে
মেয়েটির যাওয়া আসা।
দূরে সাতকাহনের পাড়া,
চত্ব্বর ভরা ঝুমকোলতার টিপ,
বালুকাবেলায় পড়ন্ত আলো।
রাস্তার দু’ধারে মোরগফুলের ঝাঁক
আলো নিভু নিভু হয়ে আসে,
মেয়েটির ত্রস্ত পায়ে নূপুরের নিক্কণ।
ভেসে আসে শঙ্খের আওয়াজ
সে বাড়ির পথে ক্রমশ মিলিয়ে যায়।
খুঁজে পেলাম
খুঁজে পেলাম তোমায় দেবদারু বনে
বাঁশি নিয়ে মেঠো সুরে তান তোলো।
সুরের মূর্চ্ছনায় ভরে যায় চারিপাশ
পাশে দাঁড়ালে মৃদু হাসি খেলে যায়
তোমার চোখে, মুখে, সারা শরীরে।
হাওয়ার তালে চুল হয় এলোমেলো
আমার হাত দুটি ধরে পাশে বসিয়ে,
ফের মেঠো সুরে ভরাও আমার মন
ধানের শীষে হাওয়া ঢেউ এনে দেয়
প্রান্তরে সবুজ হেসে বলে ভালবাসি।
আচ্ছাদন
গায়েতে জড়িয়ে গেছে উলের মত মায়া
চাদরের মত ভালোবাসা সান্ত্বনায় ঢেকে রাখে,
কোনোদিনো তাকে পাবেনা জেনেও।
মুখের কথা আর সরে না
আঘাত পেয়ে পেয়ে ভয়ে শুধু জড়োসড়ো।
কোনোদিন ধানসিঁড়ি নদীতে হয়তঃ চিল উড়েছিল
এখনো তার কান্নার রেশ বাতাসে জড়িয়ে আছে।
রাখালিয়া সুর দূরের মাঠ থেকে ভেসে আসে
সে দূর নদীর দিকে চেয়ে চেয়ে অঝোরে কাঁদে,
গলার স্বর যেন বন্ধ হয়ে আসে।
তবুও একদিন সে শিখে নেবে সহজ পাঠ
কোনো শান্ত বয়ে যাওয়া একটি ঝর্ণার পাশে বসে
হয়তঃ বা কোনো পাখির ডাকে ডাক মিলিয়ে।
ততদিন পুরোনো স্মৃতিগুলো আগলে ধরে রাখা।
প্রত্যয়ী মন
অলীক ভাবনায় আচ্ছন্ন মনের কোণে
হঠাৎ নতুন আশার বিজলি হেনে যায়।
মন মৃদু হেসে বলে, জানো না, তোমায়
গান শোনাব তাই আমার সকল নিয়ে
বসে থাকা তোমার তরে আমার তুমি।
চমকে তাকাই বাইরে, যেন তোমার
অঙ্গের আভাস, কিন্তু না, কান্না হাসির
দোলায় বুঝি সব দারিদ্র্য ঢেকে যায়
তোমায় পাওয়ার অপরূপ ঝর্ণাধারায়
পুনরায় সজীব মন, প্রত্যয়ে মুখ চুমি।
আহা বৃষ্টি
বৃষ্টি এল এই অরণ্যে
উঁচু উঁচুপাইনের মাথা
হাওয়ায় দুলতে থাকে
ঘাসে ঘাসে চিকচিকে
জলের অজস্র ফোঁটা
এক হয়ে মাটি ভেজায়
কতদিনের শুকনো মাটি
চাতকের মত চেয়ে থাকে
ভিজে সতেজ প্রাণস্পর্শ
দোয়েল শ্যামা সুর ধরেছে
রাস্তাঘাট জলে ডুবু ডুবু
উষ্ণতা থেকে শীতলতা
পাহাড়ের ঢালু পথ চিরে
নেমে এসে জলের ধারা
পদ্ম শালুক হাসি ছড়ায়
পানকৌড়ি আর মাছরাঙা
জলের ধরে বসে ভাবিত
আহা বৃষ্টি কি অপূর্ব তুমি !
নীলকণ্ঠ
রাত্রির নির্জনতায় বাঁশপাতা কেঁপে কেঁপে ওঠে
শিরশিরে হাওয়ায় কিছু শব্দের হালকা প্রতিধ্বনি
রাতপাখিদের ডানায় ডানায় একরাশ ঘরে ফেরা
নদীর পাড়ে হু হু বাতাস কপাল ছুঁইয়ে ভালবাসে
তখনি কি তুমি আসো ধীর পায়ে অতি নির্জনে ?
চেনা পথটার ধার দিয়ে চুপিসারে অতি সন্তর্পণে ?
সারা শরীরে তোমার জড়িয়ে বাতাবীলেবুর ঘ্রাণ
বুকের নির্জনতায় তেপান্তরের গভীর হাতছানি
তোমার ঠোঁটের স্পর্শ সারা শরীরে ছড়িয়ে দাও
সমস্ত ব্যথা নিঃশেষে শুষে নিয়ে নীলকণ্ঠ হও।।