ট্যাগ আর্কাইভঃ প্রেম

বর্ষার চিঠি

আমি কি গান গাব যে ভেবে না পাই-

উতল-ধারা বাদল ঝরে। সকল বেলা একা ঘরে। সত্যিই গত কয়েকদিন ধরে এমন অঝোর বৃষ্টি। সারাদিন। কখনো ঝিরিঝিরি তো কখনো মুষলধারে। মাঝেমধ্যে এক একটি দমকা হাওয়া যেন মনের মধ্যে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে চলে যায়। ভেতরটা মুচড়িয়ে ওঠে। হু হু করে। দক্ষিণের জানলাটা খোলা। ঠান্ডা বাতাসে একটা আরামে চোখ বুঁজে আসে। পূবের জানলা দিয়ে সামনের রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে সেই রেলস্টেশন অব্দি। খুব বেশি দূরেও নয়। সারাদিন ট্রেনের শব্দেই ঘড়ির কাজ হয়ে যায় প্রায়। আজকাল ট্রেন বেশ সময় ধরেই চলছে দেখছি। এখান থেকে রেলস্টেশনটা দেখা যায় না ঠিক। কিন্তু দক্ষিণের জানলা দিয়ে ঐ দূরে ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ট্রেনের চলে যাওয়াটা দেখা যায় চেষ্টা করলে। ট্রেনের চলে যাওয়ার সাথে প্রিয়জনের চলে যাওয়ার একটি মিল আছে যেন। মনে হয় একই রিদিমে অনেকটা দূরত্ব সাথে নিয়ে চলে গেল যেন। ঠিক যেমন চলে গিয়েছিল পিয়ালী। সে অনেক দিন আগের কথা। এখন এই আধা শহরেই পাকাপাকি একটি বন্দোবস্ত করে নিয়েছি প্রায়। প্রায় এই জন্যেই যে জীবনে চিরস্থায়ী কিছুই নয়। আজ আছি। কাল কি হবে জোর দিয়ে কে বলতে পারে। পরশুর কথা তো দেব নঃ জনান্তি! এই বৃষ্টি ভেজা অলস দিন। কি বলবো আমিই জানি না। কি কথা আমার যা অন্য কাউকে বলা যায়। কিন্তু কাউকে না কাউকে যে অনেক কথাই বলতে ইচ্ছে হয়। বিশেষ করে এমন দিনে। কিন্তু সত্যি বলতে কি আজকাল আর কথাই খুঁজে পাই না। অথচ অনর্গল কথা বলার একদিন ছিল। সেসব যেন ধুসর স্মৃতি আজ। এই বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে মনটাও কেমন উতলা হয়ে ওঠে। পুরানো স্মৃতির সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে যেতে চায় অনেক অতীতে। তবু প্রশ্ন জাগে জীবন কি সত্যিই অতীত হয় কখনো? কেই বা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে?

এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়-

সত্যিই তাই এ আমার জীবনেরই ইতিহাস যেন। কতযুগ আগের কথা। এরকমই এক উথাল পাতাল বৃষ্টিভেজা বিকাল। ইউনিভার্সিটির ক্লাসে আমরা দুজন। ভাষা শিক্ষার ক্লাস ছিল। বৃষ্টির মধ্যে কেউই আসতে পারেনি। শুধু আমরা দুজন বাদে। সে ছিল মোবাইল ফোন আবিষ্কারের আগের যুগ। খুব কম মানুষের বাড়িতেই তখনো ল্যাণ্ডফোন। আমাদের ভাষাশিক্ষার ক্লাসের অধ্যাপকও হয়তো আটকিয়ে গিয়েছিলেন সারাদিনের বৃষ্টিতে। কিন্তু সেই বৃষ্টিও আমাকে আটকাতে পারেনি। পারেনি কারণ সেই ক্লাসেই প্রথম দেখা মিতালীর সাথে। তাই একটি দিনও ক্লাস মিস করার উপায় ছিল না। আসতেই হতো। কিন্তু মিতালীও কি তাই এসেছিল? নিশ্চয়ই তাই। না হলে আর কেউ না এলেও শুধু আমরা দুজনেই বা কেন অমন অঝোর বৃষ্টির বিকালে গিয়ে উপস্থিত হবো। ইউনিভার্সিটির বিশাল বিশাল জানলার কাঁচের ওপারে তখন বৃষ্টি আর সবুজ গাছপালার যুগল নৃত্য। ভেতরে আমাদের চঞ্চল চোখের দুইকুলে। মিতালীর মতো সুন্দরী আমি সত্যিই আর দেখিনি। সব কিছু বাদ দিলেও অমন দুটি চোখ। যে কোন মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমার তো রোজই ঘুরতো। ভাষা শিক্ষার ক্লাসের অধ্যাপকের কথা উড়ে যেতো মাথার উপর দিয়ে। শুধু অবাক হয়ে দেখতাম মিতালী কি অবলীলায় নতুন একটি ভাষাকে দ্রুত তালে রপ্ত করে নিচ্ছে! সেই থেকে মিতালীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার শুরু। সেদিনের সেই বৃষ্টির বিকেলেই তাই ঠিক করে ফেলি, আর স্বপ্ন নয়। এবার স্বপ্নকে নামিয়ে আনতে হবে বাস্তবতায়। এমন মধুর লগ্ন সহজে আসবে না আর।

কিছু বলবো বলে এসেছিলেম, রইনু চেয়ে না বলে

হয়তো এটাই জীবন। এইভাবেই জীবনের নাগরদোলায় আমাদের ওঠা নামা। দূর থেকে দেখলে হাসিই পায়। কিন্তু যারা ওঠে নামে তাদের যে সবসময় অবিমিশ্র ভালোই লাগে তা নাও হতে পারে। সেদিন মিতালীর মনেও রং ধরিয়েছিল ঝরঝর বরিষণ। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই সহপাঠির কাছেই তার ভালোবাসার গল্পগুলি মেলে ধরেছিল। আমার মধ্যে ভরসা করার মতোই একজন মানুষকে খুঁজে পেয়ে অনর্গল উপুর করে দিয়েছিল তার মনের আদিগন্ত। তৃপ্তি পেয়েছিল। ঠিক যে ট্রেনটা ধরার জন্যে আপনি ব্যাকুল হয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন, সেটি আপনাকে না নিয়েই স্টেশন ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে যেমন অসহায় দশা হয়, আমারও সেদিন সেই দশা। বাইরে আদিগন্ত উথাল পাতাল বৃষ্টি। ইউনিভার্সিটির জানালার কাঁচ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে জলপ্রপাতের মতো। ভিজে যাচ্ছি আমিও। আমার স্বপ্নগুলোও তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ধ্বসে যাচ্ছিল গলে গলে। সেও তো রক্তজল করা কষ্ট না কি। একমনে কত কথাই বলে যাচ্ছিল মেয়েটি। কত তার স্বপ্ন। কতরকম পরিকল্পনা। হয়তো সেই প্রথম আমি আঁচ করতে পারছিলাম নারীর মন। কতরকম বিচিত্র তার নকশা। কতরকম বিচিত্র তার বুনন। কিন্তু ভরা বর্ষার নদীর মতোই যেন অবাধ তার গতি। একবার জল পেয়ে গেলে আর যেন দুকুল মানে না। সবিকিছুই ভাসিয়ে নিয়ে অভিমুখ তার সাগরসঙ্গমে। ভাষাশিক্ষার ক্লাসে সেই আমার শেষদিন। মনে মনে অধ্য়াপককে শুভকামনা জানিয়েই রওনা দিয়ে ছিলাম বাড়ি ফেরার পথে। সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে।

যায় দিন, শ্রাবণদিন যায়

সে শ্রাবণ বড়ো নিঃসঙ্গ। চারদিকে কান পাতলে শুধুই বৃষ্টির গোঙানি তখন। মেঘের তোরে যেন ধুলিস্মাৎ সব স্বর্ণালী স্বপনের রামধনু আশা। জলকাদা মাখামাখি শহরের গোলকধাঁধায় ভাষাহীন ব্যাথার নিরব প্রতিধ্বনি। রোজকার খবরের কাগজের মতোই নিরানন্দ পৃথিবী রোজকার ভেজারাতে উঁকি দিয়ে যায় জানলায়। নিবিষ্ট অন্ধকার জমে উঠতে থাকে দিনলিপির সব সাদা সাদা পাতা জুড়ে দুই মালাটের জীবনে। পথ চলতি রাস্তায় বেহঁশ গাড়ীর চাকায় জলকাদা ছিটকিয়ে ভিজে যাওয়ার মতো অসহনীয় সে অবস্থা। তবু স্মৃতিময় ঝরে পড়া স্বপ্নের আবেশ নিয়ে অলস সময়ের হাতছানি। চারিদিকে কেউ নাই। কিছু নাই। তবু মিতালীর সেই দুটি চোখ রয়ে গিয়েছে তখনো। যে চোখ তার সহপাঠীকে ভরসা করে ছিল। সেই স্মৃতিটুকু খড়কুটোর মতো ধরে নিজের দিকে চেয়ে নতুন ভাষা খোঁজা কেবল। মানুষের মন বেশিরভাগ সময়েই অবুঝ শিশুর মতো খেলা করে জীবনের চারকোণে। নিজের কাছেই তার যত বায়না। আর চাওয়ারও শেষ নাই, আশার ভাঁজে ভাঁজে।

মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো

গিয়েছিলাম বেড়াতে। পাহাড় ছিল। টলটল জলের নদী পাশ দিয়ে। মনে হয় হেঁটেই পার হয়ে যাওয়া যাবে। সঙ্গীসাথী কেউ নাই। একাই। বেশ কিছু ছুটি জমে গিয়েছিল সরকারী দপ্তরের। একটু ছুটি চাইছিলাম। নিরবে নিভৃতে নিজের সাথে বসার জন্যে।
সেও এমনই শ্রাবণ মাস। রোদ বৃষ্টির লুকোচুড়ি খেলা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির একটা মৌতাত আছে। যতটুকু গায়ে মেখে নেওয়া যায়। একাই বসেছিলাম নদীর ধারে পাহাড়ী ঢালে। সামনে সবুজে সবুজ। আর মেঘে ঢাকা বৃষ্টির আকাশ। না কোন কবিতার কথা মনে ছিল না। বেসুর গলা নিজের বশেই ছিল। ভাবাবেগের স্রোতও ভাটির টান, সেও অনেক দিন। শুধুই নিরিবিলি ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মুখোমুখি নিজের সাথে একা। দেখা হল ঠিক সেই সময়। নদীর জলে পা ডুবিয়ে নদীতে নামার জন্যে ব্যালেন্স ঠিক রাখার চেষ্টায়। আমি ছিলাম সামান্য বাঁদিকে। কখন যে কেউ সামনে এসে গিয়েছে খেয়াল করতে পারিনি। যখন পারলাম ততক্ষণে সে টাল সামলাতে না পেরে নদীর জলে হাবুডুবু। তারপর অনেকটা চিত্রনাট্যেরই মতোন। হবু শ্বশুর শাশুড়ীর অনেক আশীর্বাদ আর তাঁদের ডাকাবুকো মেয়ের স্পর্শ নিয়ে ফেরা একটা আস্ত গোটা রাত। বাঁধ ভাঙা বন্যার জলের তোড়ের মতো উচ্ছাসে উদ্দাম।

হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে

সত্যই তাই প্রায় নাচতে নাচতেই পিয়ালীর সাথে কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর। বেঁচে থাকা যে এমন মনোহর হতে পারে, সেটা জেনেছিলাম ওর কাছেই। যেমন ডাকাবুকো তেমনি উচ্ছল। সবেতেই ওর বিস্ময়। আর সবেতেই ওর আনন্দ। ঠিক যেন প্রকৃতির মতোই। মনে হয় না কোথাও কোন দুঃখ আছে। ছিল। থাকবে কোনদিন। গোটা জীবনের অর্থটাই যেন বদলে দিয়ে গেল। কি বিপুল উৎসাহ। কোন কাজেই পিছপা নয়। হাজার পরিশ্রমেও কোন ক্লান্তি নাই। বিরক্তি নাই। আর সারা মুখে সেই দুকুল ছাপানো হাসি। না পিয়ালী, আমি আজ এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় তোমার ঢাক পিটাতে বসিনি মোটেও। তুমি যা তুমি তাই। যারা তোমাকে চিনতো তারাই তা জানে। কাউকে ডেকে ডেকে শোনানোর কোন প্রয়োজন নাই আমাদের কারুরই। জীবনের আনন্দ যে চলার ছন্দের মধ্যেই এ কথা প্রথম শেখা তো তোমার কাছেই। সেই ছন্দটাকেই চলিষ্ণু রাখাটাই প্রতিভা। বলেছিলে তুমি। সেদিন যখন তোমার সাথে প্রথম আলাপ। তোমার মায়ের অজস্র বকুনির উত্তরেই। সেই হয়তো আমার জীবনের প্রথম সহজপাঠ।

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে

কবি বলেছিলেন; ‘জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না। কিন্তু আজ এতদিন পেরিয়ে এসেও আমি তো জানি। জানি কেন এমন পাগল করা বৃষ্টিও আমাকে আর ভেজাতে পারে না আগের মতো। আসলে ভিজতে চাওয়ার মতো মনটাই যে হারিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে যাওয়া মানুষের মতো। যাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যাবে না কোনদিন। মিসিং ডায়েরী করার সময়ও বুঝতে পারিনি, যা হারিয়ে যায় সে আর ফিরে পাওয়া যায় না হয়তো কোনদিন। গিয়েছিলাম আবার পাহাড়ে। সে হিমালয়ের সবুজ অরণ্যের অনেক গহন ভেতরে। গিয়েছিলাম শুধু দুজনেই। অবিশ্রান্ত বৃষ্টির রাতে খেয়াল চাপলো তার বৃষ্টিতে ভেজার। আমিও যে নিষেধ করেছিলাম তেমনটাও তো নয়। কিন্তু পিয়ালী, বারণ করলেই কি তুমি শুনতে? আমিও তো তখন তোমারই মতো। তোমার আনন্দেই বিভোর। কি যে জাদু করেছিলে! গোটা জীবনটাই যেন একটা উদযাপন হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি ইচ্ছেই এক একটি উৎসব। বাঁধন ছেঁড়ার সাধন শুধু। শুধু জানতাম তুমি আছো আমি আছি।

আমার প্রিয়ার ছায়া
আকাশে, আজ ভাসে, হায় হায়!
বৃষ্টিসজল বিষন্ন নিশ্বাসে, হায়!
আমার প্রিয়া মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
সন্ধ্যাতারায় লুকিয়ে দেখে কাকে,
সন্ধ্য়াদীপের লুপ্ত আলো স্মরণে তার আসে। হায়!
বারি-ঝরা বনের গন্ধ নিয়া
পরশ-হারা বরণমালা গাঁথে আমার প্রিয়া।
আমার প্রিয়া ঘন শ্রাবণধারায়
আকাশ ছেযে মনের কথা হারায়।
আমার প্রিয়ার আঁচল দোলে
নিবিড় বনের শ্যামল উচ্ছ্বাসে, হায়।

শ্রীশুভ্র

ইন আ ক্লোজড রিলেশনশিপ : পর্ব ০২

প্রথম পর্বের পর:

“ও আচ্ছা। এত লজ্জা পাস আমার সাথে ঘুরতে? তাইলে রিলেশনশিপে গেলি কেন, লজ্জা করবে না? নাহ করবে না।” “আগে কখনও কারো সাথে প্রেম করিনি তো তাই!” এই বেটা এই আমি কি এর আগে রিলেশনে ছিলাম নাকি? গাধা একটা আচ্ছা আজকে যে দেখা করতে এলি একটা ফুলতো আনতে পারতিস? তুই একটুও রোমান্টিক না” “তাতে কি তুই আমাকে রোমান্টিক বানিয়ে নিবি, কোথায় কি নিয়ে যেতে হয়, ক্যামনে যেতে হয় এগুলো তুই শিখিয়ে দিবি” আচ্ছা বাবা দিব” এবার বল কি খাবি?
ফুসকা খাওয়া।
ফুসকাওয়ালাকে ডাক দিয়ে রুদ্র বলে এই মামা দুই প্লেট ফুসকা দিয়েন।
আচ্ছা মামা বসেন।
তারপর বল, কেমন লাগছে আজ গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে এসে?
তেমন কিছু না তো!
গাধা, তুই আসলে আমাকে ভালোই বাসিস না!
ভালোবাসি তো তোকে অনেক ভালোবাসি।
আচ্ছা বাবা বুঝেছি।
এভাবেই চলতে থাকে গল্প-আড্ডা। দুজনের জীবনেরই প্রথম প্রেম। তবে বেস্টফ্রেন্ড থেকে পার্থক্য এমন কারো কাছেই লাগেনি।
অতঃপর ২ ঘন্টা ঘোরার পর নীলাকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় চলে আসে রুদ্র। আর তারপর রিকশা করে নিজের বাসায় ফিরে যেতে যেতে রুদ্র নিজেকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা গার্লফ্রেন্ড আর বেস্টফ্রেন্ডের মাঝে পার্থক্য কি? সেটা কি শুধুই একটা শব্দভেদ নাকি আরো অনেক বড় কিছু? রেসপন্সেবলিটি থাকে রিলেশনশিপে? তো রেসপন্সেবলিটি কি বেস্টফ্রেন্ডশিপে থাকে না। যে আমার উপর পুরোটা বিশ্বাস করে কাটিয়ে দিচ্ছে দিনেরপর দিন।তার জন্য কি রেসপন্সেবলিটি নেই? কি জানি? নীলাকে জিজ্ঞেস করবোনি.. ও আবার এগুলো ভালো বোঝে। খালি আমিই মনে হয় বুঝিনা।আচ্ছা ও তো আগে অন্য যেকোন মেয়ের সাথে মিশতে দিতো। তাইলে এখন কি দিবে না? এসব ভাবতে ভাবতেই সে তাকিয়ে দেখা রিকশা বাসা পর্যন্ত এসে গেছে! “মামা, নামবেন না, এইহানেই তো আসতে কইলেন!” ওহ হ্যাঁ এখানেই। ওইযে নীল বিল্ডিংটা ওখানে সাইড কর। এবার রিকশায় থেকে নেমে বাসায় চলে যায় রুদ্র। এভাবেই কেটে যায় তাদের সম্পর্কের প্রথম দিনটি।

চলবে…

ইন এ ক্লোজড রিলেশনশিপ: পর্ব -০১

নীলার সাথে আজ রুপকের প্রথম দেখা। প্রথম মানে জীবনে প্রথমবার তা নয়। রিলেশন হওয়ার পর প্রথম দেখা। মেসেঞ্জারে প্রপোজ, একসেপ্ট তারপর ফরমালি এটাই প্রথম দেখা তাদের; লোকে তাকে কি জানি বলে? ডেটিং! নাহ ডেটিং বোধহয় এটাকে বলে না। যাহোক প্রথম সামনাসামনি দেখা করতে যাওয়া আরকি! কোথায় যাওয়া যায় বোটানিক্যাল গার্ডেন? নাহ ওখানে নাকি কাপলরা অন্য কাজ করতে যায়। আমরা তো সামাজিক কাজই করব। জাস্ট দেখা করব আরকি।

আচ্ছা কি পরা যায়?
পাঞ্জাবি? কি কালার?
নীল পরি।

নীলার তো নীল পাঞ্জাবিই পছন্দ হওয়া উচিৎ। এমন ভাবতে ভাবতেই ফোনটাতে টুং করে উঠল। মেসেঞ্জারে মেসেজ আসল। মেসেজটা যে নীলার তা না দেখেই আন্দাজ করতে পারল রুপক। “অই, বের হবি কখন? আর কোথায় আসবি?” সংসদ ভবনের সামনে আয়, এইতো ৫/৭ মিনিট লাগবে” রুপকের রিপ্লাই। রিলেশন হয়ে যাওয়ার পরেও তুই থেকে তুমি পর্যন্ত এখনো যাওয়া হয়নি। আগে থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড তো। তাই পারলে তুই এর পরে কিছু থাকলে তাই বলতো। ভাগ্যিস এর নিচে আর কিছু নেই।

যাহোক তাদের পরিচয় টিএসসিতে। রুপক বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। আর নীলা পড়ে ফার্মেসীতে। সেও সেকেন্ড ইয়ারের ই। আন্তঃ ডিপার্টমেন্ট ডিবেট করতে গিয়ে পরিচয় সেই একবছর আগে। তখন থেকেই বন্ধু। আস্তে আস্তে অনেক ক্লোজ। আজ তারা “ইন আ রিলেশনশিপ”! যাহোক সব কাজেই একটু দেরী করে বের হওয়াটা রূপকের স্বভাব। এর জন্য তো আগে কম বকা খেতে হয়নি নীলার কাছে। তবে এবার ব্যাপারটা ভিন্ন, এবার তো আর ফ্রেন্ড হিসেবে দেখা করতে যাচ্ছে না। এবার যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ড – গার্লফ্রেন্ড হিসেবে। আচ্ছা বের হওয়ার কথা তো ৫/৭ মিনিটের মধ্যে এখনো বের ই হয়নি রুপক। থাকে সংসদ ভবন এলাকার পাশেই, শের-ই বাংলা নগরে। আবারো মেসেঞ্জার টুং করে শব্দ।
এইবার মেসেজ আসলো:

অই? ১৫ মিনিট হয়ে গেল তোর কোন খবর নাই কেন? একটা কাজেও যদি ঠিক সময়ে আসে!”

এইতো রিক্সায় উঠছি”
ওকে, তাড়াতাড়ি চলে আয়”।

“অ্যাই রিক্সা, সংসদভবন যাবা? কত নিবা?” “২০ টাকা দিয়েন মামা” আচ্ছা চলো। রিক্সায় উঠেই রুপক বলে : আচ্ছা একটা জিনিসতো খেয়াল করা হয়নি। প্রথম দেখা করতে যাওয়ার সময় কি সাথে কিছু নিয়ে যেতে হয়? কি জানি? হয়তো নিতে হয়। কার থেকে শোনা যায়। নাহ কাউকে বলা ঠিক হবে না। কোন ফ্রেন্ডকে বললে শালা আবার মাইকিং করে দিবে। থাক কিছু নিতে হবে না। ও যদি বলে কিছু আনিস কেন তাহলে সরি বলে দিব। তাতেই হবে। আবারো টুং “অই আসবি?” ততক্ষনে রিক্সা সংসদ ভবনের সামনেই এসে গেছে। “আসতে এত লেট করলি! আজকের দিনটাতে তো একটু টাইমলি আসতে পারতিস, আই বস এখানে, আচ্ছা আগে বলতো ক্যাম্পাস বাদ দিয়ে এত দুরে দেখা করতে আসলি কেন?” না মানে ক্যাম্পাসে সিনিয়র, জুনিয়র আছে তো তাই” তো তাতে কি? আগে কি একসাথে ঘুরিনি ক্যাম্পাসে? ঘুরেছি বাট তাও কেমন জানি লাগছিল। তাই বললাম এখানে আয়। এই জন্যই…….

(চলবে)

মনোমুগ্ধকর মনোহৃদয়ও উচ্ছ্বাসে

মনোমুগ্ধকর মনো-হৃদয়ও উচ্ছ্বাসে
মেঘের পালকিতে চড়ে আকাশে ভেসে
শিবসা-পাড়ের সবুজ ঘাস আর ঘাসফুলের দলে
শরতের নীড়ে উঁকিঝুঁকি কাশবনের আড়ালে
মাচু পিচু, সিন্ধু এবং পুণ্ড্র নগরীর প্রাচীরে
আলেকজান্দ্রিয়া, পারসেপলিস এবং ঝুলন্ত উদ্যান— মনোরমপুরে
কৃষ্ণ-লোহিত-লৌহিত্যের বন্দর-দ্বীপ-জল-তটে
ভোরের নক্ষত্র পথ দেখায়— স্বরচিত পটে
অন্নপূর্ণা ও পিলাতুসে সাদা বরফ আলো ঝলমলে
রোদের কিনারে ভিড়ে মোমের মতন গলে
শিশির ভেজা চন্দ্র-নিশিত-রজনী গায় মেখে
আমরা গিয়েছি দুজনে হারিয়ে— সবার অলক্ষ্যে
মনোমুগ্ধকর মনো-হৃদয়ও উচ্ছ্বাসে
মেঘের পালকিতে চড়ে আকাশে ভেসে!

যুগপৎ

আমার সর্বশেষ প্রেমিকার বয়স কত, তার জন্মদিন কবে;
অথবা তাকে সর্বশেষ কোথায় দেখা গিয়েছিল সেসব আমি জানি না।
আমার সাথে তার কোনদিন দেখা হয়নি, জন্মদিনে কেক কাটা হয়নি-
তার যাওয়া-আসার পথে শিঞ্জন শুনিনি;
শুধু জেনেছি তার বাম পায়ে থাকে মিসরীয় পায়েল-
নাভি নিচে পুরোটা কোমরজুড়ে সাপের মত প্যাঁচানো পার্সিয়ান কোমরবন্ধ।

অনন্ত অপেক্ষান্তে মিলনের মৌসুমে আমাদের মিতালি হলে-
চামড়ার ভাঁজ ও শরীরের খাঁজ-ভর্তি আদিম গহনা দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হবে না
আমার প্রেমিকার বয়স শতবর্ষী বৃক্ষের চেয়ে কম কিছু না-

চন্দ্রগ্রহণের মত আমাকে সে গ্রহণ করুক দুর্নিবার আকর্ষণে-
মধ্যবর্তী দূরত্ব ঘুচে গিয়ে বনাবনি হোক প্রেম ও অহংবোধের;
আঙুলের স্পর্শে অবনত হোক লজ্জাবতীর ললাট গ্রীবা-
অমরাবতী ধরণী নীলাভ হোক সর্বনাশা প্রেমে।

আমার ঠোঁট থেকে পুনর্জন্ম পাক ফলবতী বৃক্ষ,
প্রেমিকার নাভিতে শুদ্ধ হোক আমার অমর জনম-
আমাদের সত্য জন্মতিথি হোক অভিন্ন দিনে

ছবি- ছবিটা এখান থেকে নেয়া

আত্মসমর্পণ

আমার নিঃস্ব হওয়ার নিকষ রাতে-
মহুয়া বনে মাতাল হাওয়া
ডাল ভাঙ্গার চুরমার শব্দে;
নিঃশব্দে-
কলিজার ভিতরে যেন মিশে যাচ্ছে পিত্তরস-
মুখ ভর্তি তিক্ততায়-
কি এক গরল বিষে;
নিমিষেই বুঝতে পারি-টের পাই
দেহে অচেনা মোচড়- অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রদবদল

অন্তরের সবটুকু বিষ কানে ঢেলে দিয়ে
কানেকানে কি যেন চাইছে বলতে-
ফিসফাস-
আমি বুঝতে পারি না কিছুই
সব শব্দ অক্ষর দলা পেঁচিয়ে – হিজিবিজি হিজিবিজি
কান ফেটে যায় অশ্রাব্য অশ্লীল শব্দে

পলাতক ঘাতক অসীম ক্ষিপ্ততায়-
দেয়ালে ঠেলে ধরে পিঠ
হাতে চেপে রাখে নাক- ঠোঁটে ঠোঁট
দম বন্ধ করে খুন করতেই যেন সে উদ্যত;
আমিও ভুলে যাই ফেরাতে-
দমে যাই-
যদিওবা ফেরাতে চাই;
সাধ্যি কি থামিয়ে দেই মস্ত এক দানব!

অগত্যা;
থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই
ঘাত প্রতিঘাত
ধস্তাধস্তির পরে নিস্তেজ-
বুঝতে পারি ঠিক পর মুহূর্তেই-
আর নেই নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কিছুই
কুক্ষণে করেছি অর্পণ
ক্রমশ জমানো প্রেম।

বিভ্রান্ত প্রেমিক

হে অল্পভাষী অপরিণামদর্শী প্রেমিক,
ভালোবাসা ও অবহেলার মত পরস্পরবিরোধী যুগল শব্দে তুমি লিখতে চাও কোন মহাকাব্য ?
নারী হৃদয়ের ব্যাকুলতা ভরাতে চাও তোমার কোন কাব্যিক উপমায় ?
স্রোতের বিপরীতে দাঁড় টেনে পালে যে হাওয়া তুমি লাগিয়েছ
সে হাওয়া ঘূর্ণি হয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে দূরে – আরও দূরে!
যদিওবা কাছাকাছি তুমি কোনদিনও আসতে চাও নি৷

আমার অপরাধের শীর্ষ ও সর্বশেষ সীমানাঃ কেবল তোমাকে ভালোবাসা।
নিজের ছোট্ট বুকে চপলতা ও চঞ্চলতায় লজ্জিত মুখে
হৃদয়ে যে তুলে দিয়েছি এক সর্বগ্রাসী ঢেউ
সেই চঞ্চল চপলা আমি তখন তোমার নবলব্ধ প্রেমিকা;
যা’কে তুমি আপন করে নিলে ঠিকই কিন্তু বশে নিলে না।

তোমার বৈরাগ্য ও উদাসীনতা আমাকে যে খুব বেশি সুখ এনে দিত তাও নয়
তুমি ভেবেছ,
সম্ভোগ পরের বিষয়, আপাতত আপনাতেই থাক
আপন আলোয়- আপন আলয়ে;
নিজের প্রতি যে বিতৃষ্ণা তুমি ধরিয়েছ তা কোন অসুখ নয়-
ভেবেছ তোমার এই খামখেয়ালীপনা বুঝি নারী হৃদয়ের কাম্য,
ভুল পুরুষ বেখেয়ালে জলাঞ্জলি দিয়েছ নিজ যক্ষের পৌরুষ,
যে নিজের শরীর চিনে না- নিজেকে ভালোবাসে না
অন্য আরেক সত্ত্বাকে কি ভালোবাসা সে দেবে?

বিদায় ঊষা লগ্নে হে প্রিয় এই হোক কামনা-
বেপরোয়া জীবনের গতিতে ভেসে যাওয়ার আগেই শুধরে নিও নিজেকে
অদম্য ইন্দ্রিয়শক্তিতে নিজেকে করে নিও শাণিত
দুর্নিবার গতিতে চলতে চলতে কখনোবা থমকে যেও- দেখে নিও নিজেকে
প্রণয়ের রঙে ও রূপে যা আমিও দেখেছিলাম তোমার চোখে ।

    ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮

————————–

কবিতায় দুইটা জিনিস বোঝাতে চেয়েছি, পুরুষের হৃদয়ের বৈরাগ্য নারী হৃদয়ে কেমন প্রভাব ফেলে একজন পুরুষ হয়ে সেটা অনুধাবন করা। এবং নারীর চোখে পুরুষের রূপ দেখা।

ছবির ক্রেডীটঃ ছবি এখান থেকে নেয়া