জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

চড়ুই পাখির বিয়ে

cho

শীতের বুড়ি থুর থুরি
কোন দেশেতে বাড়ি
হীরা দিব জহরত দিব
আইস তাড়াতাড়ি!
শীতের দিনে শীত করেনা
এ কেমন কারবার
তোমার জন্য খোকাখুকু
বসাবে যে দরবার!
চুপি চুপি চলে এসো
ঘোমটা মাথায় দিয়ে
জলের নুপুর পড়িয়ে দেব
চড়ুই পাখির বিয়ে!
সেই বিয়েতে কুটুম পাখি
আসবে নিয়ে পালকি
তাক ডুমা ডুম ঢোল হবে
আজ বাদে কালকি!!

ঘুম

কিছু জাগ দেওয়া শব্দ বারবার জেগে উঠতে চায়
যেভাবে শুকনো পাতারা মর্মরে জীবন ফিরে পায়
যেভাবে কালিহীন কলম সাদা কাগজে পদচিহ্ন রেখে যায়
ঠিক ঠিক সেভাবে…শব্দেরাও সশব্দে আন্দোলন
করতে চায়.. আন্দোলিত হতে চায়!
যে সময় কালঘুমে চুমু দিয়েছে
নর্তকীর নিক্কণ তার কতোটা ভাঙাবে বেলোয়ারি ঘুম
দেখছ না… আমাদের সবার হাজার হাজার চোখের
চারপাশে ঘুমের ধুৃম পড়েছে…. ধুম….!!
আয়েশ করে যে পথিক রাস্তার উপর ঘুমায়
গন্তব্য কি তার চোখে, মুখে, কপোলে, কপালে চুমায়?
কবিতাটা আরও দীর্ঘ হতে পারতো
হতে পারতো কোটি বছর আয়ুকাল পাওয়া কিংবদন্তি
আফসোস! সেও অশুদ্ধ সময়ের কাঁটাতারে বন্দি
অতঃপর সেও ঘুমের সাথে করে নিয়েছে নিঃশর্ত সন্ধি!!

পাঁজর

কিছু না কিছু ভাবনা রোজই শিঁকেয় তুলে রাখি
নাবালক প্রেম এই বয়সেও ঢেঁকুর তুলতে চায়
পাস্তুরিত হতে চায়…. পাস্তুরিত হয়!
কে জানে না…
যে ঢেউ সমুদ্র মন্থন করে সেও তীরে আশ্রয় চায়
যে খেচর সমস্ত আকাশ মাথায় তুলে পুতুল নাচন নাচে
সেও সাজ প্রহরে রোজ ফিরে আপনার নীড়ে!
কেবল মানুষের কোনো নীড় নেই.. নেই কোনো
পোতাশ্রয়
কেবল স্মৃতির পাঁজরে কিছুটা সময় বুঁদ হয়ে থাকা
আবার যদি নাবালক প্রেম নালিশ দেয়
আবার যদি সাত রাস্তার মোড়ে পাওয়া যায়
উড়ন্ত পাখির ঝাঁক
আবার যদি ভাঙাশামুক ঘুরিয়ে দেয় জীবনের বাঁক!

ভ্রম অথবা বিভ্রম

অনেকদিন থেকেই চাইছি
ভ্রম আর বিভ্রমের মাঝামাঝি কিছু একটা হোক
এই যেমন দেশান্তরী আলোর নাচন হোক
জোনাকির পাখায় ভর করে গোটা ব্রহ্মাণ্ড
পরিভ্রমণ হোক!
সাশ্রয়ী মূল্যে পরিসমাপ্তি হোক সকল দেনা
যেখানে আমি নিজেই নিজেকে চিনি না…
সেখানে কীভাবে সম্ভব অন্যজনকে চেনা?
কেবল
মুখ থুবড়ে পড়ে থাক আমার বুক আর মুখ
ওরা যেন পরস্পর বিদেশ
চোখও কম যায় না… ভ্রু কুঁচকে উপেক্ষা করে
নিয়তির আদেশ!
তবুও এগিয়ে যাই ভুল আর ভ্রান্তির বেড়াজাল
তবুও বারংবার কুমির ডেকে আনি.. স্বহস্তে
কাটি.. কাটতে থাকি আমার সোনার খাল!!

বোধোদয়

কে জানে না…
আমরা এক পা, দুই পা করে কোথায় চলেছি!
একসন্ধ্যা অথবা এক সকাল সর্দি-জ্বর-কাশি হলেই
দাম্ভিক পা দুটো অকস্মাৎ থেমে যায়; অথচ
একটু আগেও যে পায়ের পদভারে পৃথিবীর মাটি
কাঁপতো, বাতাস কেটে কেটে শৌর্য ও বীর্যের বিকাশ
ঘটতো
এখন মনে হচ্ছে সেই পা দুটি নাই!
অতঃপর এইস, লোরাটিন, বড়জোর কয়েকদিন এন্টিবায়োটিক চলবে
এরপর আবার পায়ের আওয়াজে আকাশ কাঁপবে
পাতাল কাঁপবে
কেবল বোধোদয় হবে না!!

সুতোটা একটানে ছিঁড়ে গেলো

জোড়াতালির সুতোটা একটানে ছিঁড়ে দিলাম
বিষয়টা ধর্ষণ আর দর্শনের মাঝামাঝি
তবুও সহাস্যে স্যালুট জানিয়ে বিদায় নিলাম!
কেবল পাঁজরের হাড়ে লুক্রেতিউস ব্যথার
ঢেউ, তখন উপায় আর উপশম সুদূর পরাহত
হয়; যখন ফুল কুড়াতে সংগী হয় না কেউ!
আগেই বোধ-বুদ্ধি বিক্রয় করেছিলাম
এখন গোটা বিবেক শুদ্ধ নিলামে দিলাম
বোটা খসিয়ে ফুলগুলো সব তুমি নিও
আমি না হয় ঝরে পড়া ফুল কুড়ানি হলাম….!

প্রচ্ছদ

টুলের উপর কিছুক্ষণ বসার পর মনে হলো
শিরদাঁড়া মচমচ করছে
কাগজ ভাঁজ করলে অথবা কাগজের ভাঁজ খুললে
যেভাবে মচমচ আওয়াজ হয় ঠিক সেভাবে!
তবে যা কিছুই হোক আপাতত কবিতা লেখা
ছাড়ছি না, আলোর পেছনে ছুটতে কার না ভালো লাগে?
মলাট বন্দি বইয়ের মতো জীবনও মলাট বন্দি
সময় যেমন কোনোদিন কারো নয়
জীবনেরও তেমনি কেবল প্রচ্ছদ বদল হয়!

বাঁচা

গল্পটি প্রথম থেকেই বেশ উত্তেজক ছিলো
একবার অন্ধকারের উপর আলো
আরেকবার আলোর উপর অন্ধকার
আমি স্বরলিপি ঘাটতে ঘাটতে দেখি
“অ” ছাড়া আর কারো নামে নাই কার..!!
হিসাবটা জলের মতোন একেবারেই সোজা
মৃতদের দুনিয়ায় কোনো আ-কার, ই-কার নেই
বারংবার যারা মরে..তাদের
মাথার উপর পাহাড় সমান মৃত্যুর বোঝা!
তারচেয়ে বরং
মরার মতোন একবার কেবল মরো
বেঁচে যাবে… অনেক বড়ো বাঁচা
যে কাপুরুষ তার সবসময়ই শূন্য থাকে খাঁচা!!

আট-কপালে

আজকাল বান্ডিল অফারের ছড়াছড়ি দেখি
আর মনে মনে গাছ-পাথর কষি
ঠুনকো আঘাতেই ভেঙে যায় রোহিঙ্গা চাঁদ
তবে কি বান্ডিল অফারের সবগুলোই নিছক ফাঁদ?
ডানা ছাড়াই কত পাখি ওড়ে
ওড়তে ওড়তে সাত-সমুদ্দুর তেরকাদা ঘুরে
মানুষ হওয়ার কেউ বান্ডিল অফার দেয় না
সবাই কেবল ক্ষেপণাস্ত্র উঁচিয়ে এগিয়ে আসে
যতটা ভালোবাসার এরচেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসে!
একটা সময় দুই হাত দশ হাত হয়
দশমিক ভগ্নাংশও বাক দেওয়া উঠতি বুদ্ধিজীবীর
মতোন কথা কয়
তখন হাওয়া লাগে পালে
আমিও কিনা বান্দা নাছোড়….
তার নাম দিয়েছি আট-কপালে!!

চিৎকাৎ

বেশি বেশি ঢেঁকুর তোল…
লাল হউক সময়ের ফর্সা গাল
ইতিহাসের ইতিবৃত্ত একদিন সবকিছু ভুলে যাবে
কেবল ভুলবে না কেউ এই বেবুঝ করোনা কাল!
ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে জামা-কাপড় উদ্ধার করো
হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণু মুক্ত করো হাত
মনের গহীনে যে অন্ধকার কানাগলি আছে
সেই কুহেলিকা রাত কবে হবে প্রভাত….?
ম্যাক্ররা চোর নয়, সাক্ষাৎ ডাকাত
মুক্তবাকের ফেনা তুলে এখন হয়েছে চিৎকাৎ!

খবর

ইদানিং আপাদমস্তক বেদনারা থৈ থৈ করে..যেভাবে
বরষার নবীন জলেরা থৈ থৈ করে ঠিক সেভাবে
আমি অপলক চোখ মেলে তাকিয়ে কেবল দেখি…
গরু ওড়ে
গাধা ওড়ে
কিছু কিছু মানুষ তারাও ওড়ে
কেবল ভোরের পাখি ওড়ে না.. ঘুড়ি ওড়ে না!

সাঁই সাঁই করে সাঁতার কাটে ফাইটার জেট
নিরীহ কিছু পোকা-মাকড়ের উপর মলের মতোন
বোমা ফেলে মেটায় মনের খেদ!

ওরা কতোটা সময় হাত-পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে জীবনের
শেষ জানান দেয়… অতঃপর হাওয়াই মিঠাইয়ের
মতোন জিহবায় গেলেই যেমন সবকিছু শেষ..
তেমনি ওরাও থুতু ছিটাতে ছিটাতে যুদ্ধ-কে শেষ
বিদায় জানায় অবশেষ…!!

অতঃপর বড় বড় গর্তে গড়ে উঠে সভ্যতার কবর
ড্রোন, ট্যাংক, মর্টার শেল, কামান–ওদেরও অনেক
দাম আছে.. কেবল মানুষ নেয় না মানুষের খবর!

আজারিরা ভালো থাকুক
আর্মেনিয়রা ভালো থাকুক!!

রাত্রির মতো দুর্গন্ধযুক্ত ন লৌকিক কিছু একটা

রাত্রিতে পেঁচার রাস্তা মাপার কিছু নিরীহ সুখ যেমন আছে;
তেমনি কিছু নিষ্পৃহ বেদনাও আছে
আগ্রাসী ধুলোবালিদের না দেখেই যেমন গিলে খাওয়া যায়..
তেমনি কাকেদের মতোন চোখ বন্ধ করে পুকুরচুরিও করা যায়;
কেউ দেখে না, দেখতেও চায় না…..
যেমন মনে মনে আস্ত মেয়ের আপাদমস্তক গিলে
খেলেও কেউ দেখতে পায় না তেমন …!!

আমি রাত্রির মতো দিনের কিছু আজব অন্ধকারের
কথা বরাবর বলতে চেয়েছি
ঘাড়ের উপরে মাথার সংখ্যার কথা ভেবে বারংবার
পিছমোড়া আঁধারে ফিরে গিয়েছি
আমি ভোট আর জোট হারানোর কথা বলছি না
মাথা নড়লো কি নড়লো না কেউ জানে না… তবুও
সেদিন রাত্রিতে যে রাত্রির বিয়েটা কবুল পর্যন্ত গড়ালো
তার কথা বলছি
নীতি আর দুর্নীতির মাঝামাঝি আমাদের নিস্পৃহ
জলদগম্ভীর অবস্থানের কথা বলছি!!

কিছু ভালোবাসার যেমন কোনো দায় থাকে না
কিছু আকাশের যেমন একটাও চাঁদ থাকে না
কিছু প্রেমের যেমন কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকে না
তেমনি আমার আজকের এই শিরোনামহীন কবিতাটাও
কর্তিত আখাম্বা নখের মতো….তারও একটা বিলাসী নাম দিয়েছি..
রাত্রির মতো দুর্গন্ধযুক্ত ন লৌকিক কিছু একটা..!!

পাতিলেবু

তারা কোনোদিনই পরাজিত হয়নি…
আগাছা, পরগাছা থেকে মাচা বেয়ে তিরতির করে
ওঠে গেছে রস থেকে রসায়ন..
এক ফুল থেকে অন্য ফুলে.. ফুলেফেঁপে হরদম
আয়োজন করে গেছে দেদার পরাগায়ন!

আর আমরা সেই তিমিরেই আছি..যে তিমিরে
আদ্যিকালে ছিলাম…. কেবল দিয়ে যাচ্ছি
প্রতিনিয়ত আবদ্ধ জলের মহড়া.. যারা কোনোদিন
পরাজিত হয়নি আমরাই দিই তাদেরও প্রহরা!

তবুও আমাদের রাত্রিগুলো আর পোহায় না
আমাদের ময়ুরীরা কতোদিন পেখম মেলে না
পতিত জমির ঘাসের মতো কেবল বড়সড় হয়…
পাতিলেবুর মতো যতো চাপ দেওয়া যায়.. ততোই
যেন রস বের হয়..!

হাজার বছর ধরে… চলে আসছে এই একই রীতি
সাধুর মুখে যে নীতি..
চোরের মুখেও সেই একই নীতি..
সাধু আর চোরের মাঝখানে আমরা কেবলই দলিত
কেউ বলে সাধু ভাষা আর কেউ বলে চলিত..!!

বাপজান

চলো.. এবার সভ্যতার পাটাতন উল্টে দিই
গুড়িয়ে দিই কামুক নগর থেকে শহর
বস্তাবন্দি করে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিই এইসব প্রহর!

চলো.. আবার জংলী হই আন্দামান থেকে
আমাজান, দু’উরুর সন্ধিতে রক্ত দেখে দেখে
আর কতো কাঁদবে সখিনার বাপজান…?

চলো.. ফিরে যাই দিগম্বর বেলা; অতঃপর
যতো খুশি খেলতে থাকো আদিম খেলা..
ওহে কাবিলের উত্তরাধিকার!
যে জন্মছে নারীর গর্ভে.. সেই কেড়ে নেয়
তার অধিকার!

ডিকশনারি ঘেঁটে কোনো শব্দ পাইনি..কেবল
বেজন্মা ছাড়া; কবিতা লিখি বলে সব দায়
কাঁধে তুলে নিতে নিঃশর্ত রাজি আছি…
কেবল একটিবার স্বীকার যাও তুমি পথহারা!!

বেদনা নিও না নারী…

বেদনা নিও না নারী—একবুক শূন্যতা নিও…
আবার কোনোদিন যদি ছলাৎছলাৎ জল আসে
আবার কোনোদিন যদি পাঁতিহাসের ডানা হাসে
আবার কোনোদিন যদি জলের গায়ে ভেসে ঊঠে
হাজারে হাজার বীভৎস লাশের জীবন্ত ছবি
সেদিন আমি আবারও কবি হবো-নপুংসুক কবি!!

আবারও বলি—-
বেদনা নিও না নদী.. বুকভরা হাহাকার নিও
বৃক্ষের যেমন কোনো বেদনা থাকতে নেই
নারীর যেমন কোনো বেদনা থাকতে নেই
তেমনি তোমারও কোনো বেদনা থাকতে নেই!!

যাদের ললাটের বলিরেখায় কবরের মাটি লেখা নেই
চিতার আগুনের স্পর্শ লেখা নেই, তাদের কোনো
বেদনা থাকতে নেই; এই যেমন সবাই জানে—
নদীও একদিন গর্ভবতী নারী ছিলো
নারীও একদিন কৌমুদী জলের নদী ছিলো!

এখন আর সেসব কিছুই নেই; কেবল শূন্যতা আছে
বিরান মরুভূমির মতো এ যেনো শুধুই পাপের ছবি
জানো, ভাসমান পতিতাদের মতোন আমি আবারও..
আমি আবারও কবি হতে চাই –নখদন্তহীন কবি!!