কালাম হাবিব এর সকল পোস্ট

কালাম হাবিব সম্পর্কে

কবি কালাম হাবিব ১৯৯৯সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি মালদা জেলার অন্তর্গত সাহাবান চক গ্রামে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা লাল মহাম্মদ মিঞা ও মাতা রুকসেনা বিবি। মা বাবার তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান। শিক্ষা শুরু হয় সাহাবান চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ২০০৯সালে বেদরাবাদ হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং ২০১৬ ও ২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কলা বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ বেদরাবাদ হাই স্কুল থেকেই। তার পর ওই বছরই উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন 'কালিয়াচক সুলতানগঞ্জ কলেজ'-এ।বর্তমানে পার্শ্বীয় কালিয়াচক সুলতানগঞ্জ কলেজ'এর বি এ সাম্মানিক বাংলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পাঠরত। কবিতা লেখালেখির হাতেখড়ি দশম শ্রেণি পড়াকালীন , তবে আজও তার বেগ প্রবাহমান! কবির এই লেখালেখি বিশেষ কারও দ্বারা প্রভাবিত নয় বললেই চলে কবিতা পড়তে পড়তে ভাবনা আর সেই ভাবনা লিপিবদ্ধ করার অধীর আগ্রহই হাতে উঠে আসে কলম! কবিতার পাশা পাশি গল্প লেখাতেও কবির রয়েছে বিশেষ আগ্রহ ও মনোযোগ! কবির কবিতায় কথা বলে কলম, শরিয়তের মধ্যে থেকে সঠিক সত্য কল্যাণময় আদর্শের! কোন ভীরুতার ধার ধারেনা, সর্বাবস্থায় আওয়াজ তোলে সজীব তীক্ষ্ণ জীবন্ত দন্ড খান প্রতিবাদের শীর্ষক মাকামে! কবির প্রথম কবিতা "বেআইনি অস্ত্র ” এবং প্রথম গল্প " নৌকা যাত্রীরা"। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী কয়েটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সাথে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত রয়েছেন......

জন্মভূমি

জীবনের গহিন ব্যাথা,
বুকের ভিতর চাপা কথা,
সবি যেন সহিছ তুমি,
ও আমার জন্মভূমি।

শত বেদনার পরে,
সবি আপন করে,
যেন নিয়েছ তুমি
ও আমার মাতৃভূমি।

তোমার বিরহে,
জীবন মোহে
কি করে আমি সহি
ও আমার মমতাময়ী।

শত আঘাত পেয়ে,
তোমারি গান গেয়ে,
নিছক্ তোমায় বেয়ে,
যাবো আমি গড়িয়ে,
হৃদয় নড়িয়ে,
ও আমার স্বদেশভূমি।

আর হবেনা বুঝি শেয়ার,
ভালোবাসা দেয়া-নেয়ার।
জানিনা কখন, ডাকিবে নিধন
তোমায় করি একা।

সম্মুখের প্রতি সময়
তোমার আমার যেন শেষ দেখা।
শত বিরহ বেদনার পরে,
এ ভাঙা হৃদয় ভরে,
আশিস মাগি আমি
তোমারি চরণ চুমি
ও আমার জন্মভূমি
ও আমার মাতৃভূমি।।

(১৮/১০/২০১৮)

অদ্ভুত ভাবনা

অদ্ভুত ভাবনা

কোলাকুলি মুখে আজ অদ্ভুত ভাবনা।
ঢের জমা কত কী!
যদি উড়ে প্রাণপাখি!
একখান থান ছাড়া আর কিছু পাবনা।।

ভুলেও কখনো মাস্তানি করনা!
তুমি যে কী?
বুঝবে যখন উড়িবে তোমার প্রাণপাখি
ভুলেও বেঈমানিতে মরনা!
কোলাকুলি বাদ দাও,
ঈমানের সাথ নাও,
স্মরণ করো আল্লাহকে।
করনা তুমি নেতাগিরি,
কারও জীবন নিয়ে হিরিতিরি,
ভার করনা তুমি গুনাহের পাল্লাকে।।

কখন না জানি থামে,
সামনে কিংবা ডানে বামে,
তোমার চলন গতি।
চোখেরজল ফেলে মোনাজাত করো,
সক্রিয় হও,আর পাপ থেকে দূরে সরো,
পাওয়ার আগে আল্লাহর ক্ষতি।।

তুমি যে দু’নম্বরি মাল,
নিশ্চিত ধরা খাবে আজ নয়তো কাল,
এ আমি বলছি না।
শয়তানি করোনা,
পাপে ঝোলা ভরোনা,
মনে রাখো অদ্ভুত ভাবনা।।

ঢের জমা কত কী!
উড়ে যদি প্রাণপাখি!
এক জোড়া একখান,
গায়ে দিয়ে সাদা থান
মুখে গেয়ে আল্লাহর গান!
নিয়ে যাবে কবরস্থান।
আমলের বিচার ছাড়া কিছু আর পাবনা।।

শিক্ষা

অণুকাব্য : ২ শিক্ষা

সন্তান আপনাদের, ভাবনা আমাদের, শিক্ষা পকেটে।
মুখের একটু কৌশল, জ্ঞান ওড়ে রকেটে।
ডিগ্রী কভার ফাইলে, বডি এদোর ওদোর।
সমাজ পালাবে অন্ধ হয়ে মাটির ভিতর।
আসুন আসুন আসুন, ভর্তি করুন।
অনায়াসে ডিগ্রী নিয়ে অনাহারে মরুণ।

কলম

কলম

হে কলম তুমি আল্লাহ্‌ প্রথম সৃষ্টি
জড় নয় যেন আস্ত জীব।
ঝড়ের গতিতে তোমার আদর্শ
হুকুম করে যাহা মনিব!

খালি করনি তো কোন হস্ত,
করিয়াছ সবারে ব্যস্ত,
ভরণপোষণ নিয়া সমস্ত।
বর্তমানে লিখে দাও আদর্শ অনাদর্শ,
আদি থেকে এখনো ব্যস্ত সব বর্ষ।

তুমি লিখে দিতে পারো,
তা কভু গ্রাহ্য কভু অগ্রাহ্য,
হুকুমতের হুকুম তোমার
করো কত সহ্য।
তুমি মৃত্যুর আগপর্যন্ত থেমোনা,
কভু আসন ছেড়ে নেমোনা।
লিখো…. আরও লিখো!
কিন্তু মানবের বুকে সত্যের
বোমা মারতে শিখো।।

(০৭/০৯/২০১৮)

আযানের শব্দ

♥আযানের শব্দ ♥

সত্যিই যদি আযানের শব্দে
কান ব্যাথা হয়।
অচিরে সেই কান হয়ে যাক ক্ষয়।
রাখবো কেন সেই কান?
না যদি রাখতে পারি তার মান
সত্যিই যদি আযানের শব্দে
স্ট্রেন হয়।
যানবাহনে ইঞ্জিনের শব্দ ,আর হর্ন
কেন তবে রয়?

সত্যি কি আযানের শব্দ
সাউন্ড পলিউশন?
হেড ফোন আর এয়ার ফোন
তবে নাকি তার সলিউশন?
পটকা বাজি ফাটানোতে তবে কি
কান হয় প্রবলেমহীন?
তাই দোষ দিই আযানের শব্দের
দিন দিন!

বাজাই ডি জে, হৃদয় ভিজে
কতই শান্তি পাই!
বলবোনা গীর্জা, মন্দির!
কান ব্যাথার উদ্দেশ্য
জানবো তাই?

সত্যিই যদি আযানের শব্দে
শব্দদূষণ আর কান ব্যাথা হয়।
তবে শুনবোনা সেই শব্দ
রাখবোনা সেই কান
তা শুনে করবো সদা ভয়।।

[♥০৫/১১/২০১৮♥]
(TT৮.৫৬ amTT)

তখন পাবে

তখন পাবে

আগমনের উদ্দেশ্যটা জানেনি তাই,
এত আজ মাতামাতি।
স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটিতে জ্ঞান নয়,
শুধু ডিগ্রী হয় রাতারাতি।

বোঝেনা অবুঝ মন তাই,
খেলা চলে গ্রাম থেকে দেশ।
অবুঝ মন দেখেনা নিজের দিকে,
কোথায় তার শেষ।

আভাস তার সয় না গাই,
ভুলে রয় দেহটা কার।
সারাক্ষণ বহে ডিগ্রীর বোঝা,
হয় না জ্ঞানের জিম্মাদার।

চোখ থেকেও অন্ধ!
হয়না চোখের কাজ।
পেয়ে যাবে সর্ব পাওয়া!
যদি কেয়ামত হয়ে যায় আজ।

(২১/১০/২০১৮)

ডিগ্রী

ডিগ্রী

পাকড়াও করলো ডিগ্রী,
একের পর এক বিক্রি।

রাখলে জীবন বাকি,
ডিগ্রী বোঝায় মাথা
এদিকওদিক হাঁকি।

মনে চাপা চাপা কথা;
কেমনে সুখের আসা?
গতি রকেটে, উত্তর পকেটে।

হস্ত খালি, জীবন কালি।
উড়িল পাখি, ছাড়িল বাসা
গড়িল আত্মহত্যার ফাঁদ।
এইতো ভাই চলে দিনরাত।।

ভয়

ভয়

এবার বুঝি মনে হয় হয় হয়!!
আশ দেখে -পাশ দেখে, দিন দেখে -রাত দেখে
মনে আসে ভয় ভয় ভয়!!

এ যে আমি কোন পাড়ায়?
চলি আজও কারবা সাঁড়ায়!
মানুষেই এখন মানুষ গড়ায়!
ব্যাস্ত সবে দাঙ্গা লড়াই

আমি তো সবচেয়ে কঠিন ইস্পাত! সহজে নেই তো মোর ক্ষয়!!
সময় এসেছে ঘনিয়ে, মনে মোর সন্দেহ হয়!

ধ্বংস হব আমি আজ মোর নিজ অস্ত্রাঘাতে!
জয় কার, হাসা হাসি কার সুখ শান্তিইবা কার বিচলিত আজ কে তাতে?

বলে চলেছি শুধু আজ মোরা হায় হায় হায়!
হইয়াছে মাথা হেট, খুঁজিয়া বেড়ায় বাঁচার উপায়!
প্রশ্ন জাগে মনে কেন মোরা আজ দূর্যোগ আর চরম বিপর্যয়ের কূলে!
ঝলমলে উত্তর, মোরা গেছি কোরান-সন্নাহ ভুলে!
কোরান- সুন্নাহ ভুলে!
মোরা এসেছি কোন কূলে!

করিতেছি কারবা মোরা জয়!
আশ দেখে -পাশ দেখে, দিন দেখে-রাত দেখে মনে আসে ভয় ভয় ভয়!
কে যেন মোদের করিয়া দিয়াছে সাবধান!
আর দিয়েছে এক মধূর নিয়ম নীতির বিধান!
যা মোরা আজও আছি ভুলে।
মোরা এসে পড়েছি কোন্ কূলে?

দেশের ভয়ে দশের ভয়ে করব মোরা কি?
যে ভয় দরকার তাতো মোরা ভুলে গিয়েছি!
শেষ তো হব না, ব্যাস্তও হব না দেশের-দশের ভয় দেখে!
পথ চলব, কাজ করব, বিদায় নেব কেবলি মনে আল্লাহর ভয় রেখে!!

_____________________
সাহাবান চক, বেদরাবাদ, মালদা।

উলঙ্গ সমাজ

উলঙ্গ সমাজ

উলঙ্গিনী একটি মেয়ে,
বস্ত্র, অলঙ্কার না পেয়ে।
সে কাঁদছে ডুকরে ডুকরে,
ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কখনোবা
হুকরে হুকরে।

বুকের মধ্যে তার
অনেক চাপা কষ্ট ব্যাথা।
কিন্তু শক্তিও নেই,
যে বলবে কোন কথা।

তার ঠাই হাতে হাতে,
পাতেপাতে, দূষিত ধোঁয়ায়,
ভোরের গাঢ় কুয়াশায়।
কখনো কোট,প্যান্ট ও
শার্টের পকেটে,কখনো
মুখের মিথ্যে বচনে,

কখনোও ভোটের পচনে
বেশিরভাগই,
মেয়েটি সবার ঘরে ঘরে,
তবুও বস্ত্র নাই তাহার তরে,
অলঙ্কারও নাই।

একজন কবি, যে একাই
সামনে আগাই, হাতে তার
একটা অস্ত্র, গড়াবে অলঙ্কার,
পড়াবে বস্ত্র, নীরব সাতশো কোটি জনতা।
তাহার মাঝে কয়েকজন নেতা দেখাই ক্ষমতা।

তবুও কবি ভাইরা নির্ভয়ে মেলায় ধাঁচে ধাঁচ।
উলঙ্গিনীকে বস্ত্র দিয়ে গড়তে চাই সমাজ।।

____________
(২৯/০৯/২০১৮)

উত্তর দেয়নি

উত্তর দেয়নি

“তার পর স্মরণে এলো”, আগের বছরের ঘটনা। কার্তিক মাস একটু একটু শীতের মরশুম, মাস প্রায় শেষের দিকে, চলছিল কালী পূজোর হই হুল্লড়। আগের দিন শেষ হয়ে গিয়েছিল পূজো, মেলারও ধর্মকর্ম। —–

“হইহুল্লড়, পটকা বাজি কালী মার বিসর্জন হবে;
তাইতো পরেরদিন সীমাহীন মাতওয়ারা সবে।”

“আশ্চর্য ব্যাপার!” ‘বাড়ির কাছে গাঁ, কিন্তু সেই গাঁয়ের আমি কেউ না।’ একথার অর্থ বুঝতে ঘাবড়ে গেলেও একথা একদিক হতে একেবারে খাঁটি। কেননা ওগাঁয়ে আমার বিপরীত সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। এতে মাথা খারাপ করার কিছু নেই। একথা বলে কি আমি শয়তান হাসাবো, আর হাসির ছলে ঈমান ধ্বসাবো? না…না আমি সেপথ অবলম্বন করিবো না। তার সাথে আমি একথাও ভুলে যাবো না যে ওগাঁয়ে যারা বসবাস করে তারা যদি হয় মানব, তাহলে আমার ও তাদের সম্পর্ক একেবারে ঘনিষ্ঠ। আমার ও তাদের সৃষ্টির উৎস এক।

সারাদিন হইচই, দিন শেষ, সন্ধের আগমন এমন সময় আযান পড়ছে মসজিদে মসজিদে বেরিয়েছি নামাজের উদ্দেশ্যে। সাইকেলে চড়ে চলেছি। একটু এগিয়ে গেলে রাস্তার ডানে বামে পড়ে ছোটো ছোটো কয়েকটা জলাশয়। সেখানে চোখে পড়লো বিপরীত সম্প্রদায়ের মা কালীর বিসর্জন মেলা।

তারা মাকে মাথায় করে ঘরে তুলেছিল খুব যত্নের সাথে। আর দিয়েছিল পশুবলি। রাখলোও দু’তিন দিন ধূপ ধূনো দিয়ে খুব আদরযত্নে। “কিন্তু আজ অবাক কান্ড!” দেবীর মান সম্মান ও স্থান একেবারে শোচনীয়! কোথায় যাচ্ছে চলে,ভাবাই যায়না। হাজির হয়েছে জলাশয়ে। খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে, নিরীহ রমণীর মতো, নেই কোন বাক্, পলকবিহীন চোখ তার ভক্তের দিকে চেয়ে রয়েছে। একটু পরেই তার সমাপ্তি। আছাড়ে ফেললো জলে, সঙ্গে সঙ্গে আট দশজন ছেলে তার ওপর ওঠে শুরু করেছে গুতোতে। মাথাটা তখনো ডুবেনি। সাইকেল রেখে একটু এগিয়ে গেলাম মাথাটার দিকে। তার চোখ গুলো যেন সাহায্য কামনা করে আমার দিকে চেয়ে আছে।
আমি তখন মা কালীকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম ——-

“মা কালী মা কালী
তুই আর চুলকানি পাড়া যাবি?
তুই কি আর ওই পাঠার মুন্ডু খাবি?
উত্তর দে উত্তর!
উত্তর না দিলে এমনই শাস্তি পাবি!”

আমি বলতেই আছি এমনি সময় তার মাথায় লাফিয়ে এসে একজন দিলো জোরে এক লাথি, তখনই সঙ্গে সঙ্গে গলে গেলো মাথাটা।

সেখানেই একজন সুর করে গেয়ে উঠলো ——-

“হাতে গড়া দেবী মোর,ছিলো কালী মা।
শুধুই গেলো সময় নষ্ট, কর্ম হলো না।
শুধুই হলাম পাপে ভস্ম, ধর্ম হলো না।।
এইতো তুমি মোদের দীপা কালী মা।।”

আমি বলে উঠলাম হ্যাঁ ভাই ঠিকই। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করিসনা কেন? কী করবো ভাই——-

“আদি হতে বহিয়াছে
বাপ দাদা সহিয়াছে
মোরা কেমনে ছাড়ি।
জানি আমি জানি
আমি যদি না মানি
তারা করিবে আড়ি।।”

ইতিমধ্যে একজন চেঁচিয়ে বললো তাকে এই তুই কি ফালতু বলছিস। আমি মাঝ থেকে বলে উঠি ও যা বলেছে তা থাক তুই আমার কথা শোন। সে আমাকে আজেবাজে বকতে লাগলো। তুই এখান থেকে গেলি। তোরা বাদিয়ারা এরকম কেন করিস? কিরে ভাই কি করি? আমাদের প্রতিমার সম্পর্কে আজেবাজে বলিস। না…..না তোদের প্রতিমার সম্পর্কে আজেবাজে কিছুই বলি না। কেননা তাতে আমার কোন অধিকার নেই আদেশও নেই। তোদের প্রতিমার সমন্ধে প্রশংসা করলে যতটুকু পাপ, নিন্দে করাতেও সমপরিমাণ পাপ। তাহলে বল তোদের প্রতিমার সমন্ধে প্রশংসায় কেন করতে যাবো আর নিন্দেই বা কেন করবো? আমার যে আদেশ ও অধিকার আছে সেটা হলো আমার ধর্ম ছাড়া আর কোন সঠিক ধর্ম নেই তা তোদের মতো লোকের কাছে তুলে ধরা।আমার ধর্ম সমন্ধে আমি যতটুকু জানবো ততটুকুই তোকে সচেতন করবো। এটা আমার রবের আদেশ ও আমার অধিকার। সে তখনো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, কোন উত্তর দেয়নি।

*(১৩/১১/১৮)

নয়ন

👁👀👁👀👁
👁👀👁নয়ন👁👀👁

ও নয়ন তুমি আমার দর্শনের মনীষা
তুমি আমার জীবন, অনুপ্রেরণার দিশা
আমার সনে, নিষ্ঠাবানে থাকো যদি দীপ্ত
কাটিয়ে দেবো সকল বাঁধা, হবোনা ক্ষিপ্ত।

আসুক যতোই তন্দ্রা, যাবনা নিদ্রা
কোন কঠিন সংকেত পেলে,
কাটিয়ে ওঠবো সকল বাঁধা
তোমায় আমি মেলে।

ও আমার চলার সাথি
ও তুমি আলোক বাতি
সেতো আমার মহান রবের দান।
কভু সইবো না, কভু বইবো না
কভু দেখবো না, কভু হইতে দেবো না,
সেই আমার মহান রবের অপমান।

আমি চায় তুমি থাকো হয়ে তীক্ষ্ণ ইশা
ও আমার জীবনের তিশা
ও আমার দর্শনের মনীষা।

___________
(০৬/১১/২০১৮)

ভ্রমণ বৃত্তান্ত

ভ্রমণ বৃত্তান্ত

চৈত্রের শেষের দিকের ঘটনা। সালটা সম্ভবত ১৯৮৯ হবে! এই কথা শুনতেই বলে উঠলাম, ঠিক মনে পড়ছেনা নাকি? উত্তর এলো না না সম্ভাব্যতা নয় একেবারে ১৯৮৯ সালেই। সেই সালে মাধ্যামিক পরীক্ষা চলছিলো। আমিও পরীক্ষা দিতে ছিলাম। আগে থেকেই মনে মনে ঠিক করিয়াছি আমি বাংলাদেশ যাইবো। কিন্তু সুযোগ পাই নাই, পড়াশোনা আর অন্য কাজে কাজে ব্যস্তই থাকিতাম। ইতিমধ্যে পরীক্ষাও শেষ হইয়াছে, কাজও তেমন নাই। মিলিয়া গেলো সুযোগ! আমি কেবল একাই যাইবো না, সঙ্গে আরও দুই জন মিলিয়া তিনজন যাইবো। আমি কোন ছোটো কালে গিয়াছিলাম, এখন সেই রাস্তা ভুলিয়াছি, সঙ্গে আছে কাকাতো ভাই ‘মজিবুর’।

তার নাকি সব চেনাজানাই আছে। তাকে সঙ্গে লইয়া যাবো। সঙ্গে আরও একজন, তার বাড়ি আমাদের বাড়ি হইতে কিছুটা দূরে ছিলো, সেও সম্পর্কে ভাই হইতো। তার নাম ‘সোফিকুল’। একদিন ভোর ভোর তিনজন মিলে বাহির হইনু। তখন যা অবস্থা ছিলো তা আর কী কহিবো ….। কেন্ কেমন ছিলো? শুন বলিতেছি তোকে। … বিশাল মাঠ, মাঠ ধরেই যাইতে হইবে, সরু রাস্তা, রাস্তায় ধারে কোনো গাছ গাছালী নাই, গাড়িরও কোনো ব্যবস্থা নাই। কেন্ গাড়ি নেই? তোকে কী আর কহিব! তখন সব খানে গাড়ি চলিতো না, কেবলি শহরেই চলিতো গাড়ি তাও আবার কয়েকটা। তাই আমরা যেথা সেথা হাঁটিয়াই গিয়াছি এখানেও তাহার ব্যতিক্রম নয়। ও হো আচ্ছা তার পর? শুন হাঁটিতে হইবে, হাঁটিয়াই যাইতে হইবে প্রায় ‘বিশ-বাইশ ক্রোশ’ পথ। ভোরের বেলা কেবলি বাসি ভাত খাইয়া হাঁটিয়া চলিয়াছি এই পথ। হাঁটিয়া যাই, হাঁটিয়া যাই কোনো গাঁয়ের সন্ধান পাইছি না।

সূর্য ক্রমে ক্রমে ঢোলে পড়িতেছে পশ্চিম আকাশে। এমন সময় পৌঁছাইয়াছি ভারতের সীমানায়, এদিক ওদিক সব সীমানা রক্ষী পাহারা দিতেছে। ভারতের কাউকে পার হইতে দিবে না, আমরা একটু কৌশল করিয়া এদিক ওদিক তাকিয়া এক পলকে পার হইয়া গেলাম! আর পৌঁছাইয়া গেলাম বাংলাদেশ সীমানায়। “সেখানে সীমানা রক্ষীদের লইয়া কোনো সমস্যায় হইল না, সেখানে হলো তো হলো পথ লইয়া!” __এতক্ষণে ‘ষোলো সতেরো ক্রোশ ‘পথ অতিক্রম করিয়াছি। পা ফুলিয়া মোটা মোটা হইয়াছে। হাঁটার আর শক্তি নাই, ক্ষিদের জ্বালায় পেট জ্বলিয়াছে পৌঁছেছি একটা মোড়ে। ডানে বামে পথ কোনটায় যাইতে হইবে আমি কহিনু? মজিবুর বাঁধাইল ঝামেলা! সেও নাকি পথ ভুলিয়াছে। আমি কহিনু চল কাউকে কহিয়া দেখি। ঠিক আছে চল … চল। আমারা আগাইলাম একটা লিচুর বাগানের দিকে। কিছু দূরে আমাদের চোখে পড়লো পাঁচ সাতটা ছেলে বসে আছে। তাহাদের পথের কথা কহিব মনে করিয়া আগইলাম। তারা কি করিতেছিলো তা বুঝিতে পারিতেছিলাম না। “কাছা কাছি আসতই এক অদ্ভুত কাণ্ড!” আমাদের দেখিয়া ছেলেপুলেটি দিইলো দোড়। আমরাও হতভম্ব হইয়া গেলাম! কাকে এবার কহি কোন পথে যাইবো!

মাথায় হাত কী অবাক কাণ্ড! আমরা তিনজনই ফুলপ্যান্ট পড়িয়াছিলাম আর শার্ট ও ছিলো ভালোই। আমরা গাছের তলায় গেলাম। গাছের তলায় দেখিতে পাইলাম কিছুটা তাশ ছড়াইয়া আছে। এবার বুঝতে পারিনু কেন তারা পালাইয়া গেলো। তারা আমাদের পুলিশ ভাবিয়া দিইয়াছে দোড়। একটু পরে মজিবুর কহিলো চলোনা এট্যাই রাস্তা হইবে। ফের হাঁটিতে লাগিনু। হাঁটিতে হাঁটিতে একটা গাঁয়ের মধ্যে ঢুকিনু। গাঁয়ের মধ্যে বিশাল একটা নিমের গাছ! বিশাল মানে একেবারে বিশাল! এতবড়ো নিম গাছ এই প্রথম দেখিনু! তার তলায় কত গোরুমোষ বাঁধা, সাত আটটা গোরুর গাড়ি, কত লোক আরাম করিতেছে তার তলায়। আমরাও ওই গাছের তলায় যাইয়া গোরুর গাড়িতে বসিনু। ক্লান্তিতে ঢুলিতে লাগলাম, ঢুলিতে ঢুলিতে কখন ঘুমাইয়া গেছি। হটাৎ করিয়া ঘুম ভাঙিলে তখন দেখি সন্ধে হয় হয়। চোখ কচলাতে কচলাতে তাকাইয়া কয়েকজন কে দেখিতে পাই। হ্যাঁ গো তোমরা ঘুমানোর আগে সেখানে কাওকে জিজ্ঞাসা করনি?জিজ্ঞাসা করিবো কেমন করে, কেউ তো আমাদের কাছে আসিতেই চায় না! ……. কেন্?

আমরা তো তাহাদের মতো নয়, অজানা, অদেখা, কেহ কেহ আমাদের পুলিশই ভাবিয়াছে, ভয়ে কাছে ঘেঁষে না। একজন কে কাছে ডাকিয়া বলিলে … কী কন বাবু? আরে আমরা তো বাবু নয়, তোমাদের মতো লোক, এইদিকে আইসো। ..
… বলেন? পানি কোথায় পাবো … বলিতেই সে দুএকজন ছেলেপিলে কে চটভট বলে’ “এই ওই তোরা জলদি কইরা পানি আইনা দে”। তাহার কথা শুনিয়া ছেলেগুলো আমাদের তাড়াতাড়ি করিয়া পানি আনিয়া দিলো। তিনজন মুখ হাত ধুইনু ও কিছুটা খাইনু। এরপর তাহাদের কহিনু
আচ্ছা ভোলাহাট আর কত দূর? তার উত্তর দিইলো “বাবু আপনারা তো ভুল পথ আইছেন,
ভোলাহাট এই দিকে না। তাহলে কোন্ দিকে? “আছার পথে একটা মোড় পাইছেন নি ওই মোড় থাইকা বাম দিকে যে পথ যাইছে সেটাই ভোলাহাটের পথ। “সেই কথা শুনিয়া মাথা হেঁট।”
সোফিকুলের পা ফুলে ঢোল, সে কাঁনো কাঁনো মুখে কহিল আমি আর যাইতে পারবো না। আসিয়াছি যখন কস্ট করে চল আমি কহিনু। আচ্ছা তুমি বললে ভোলাহাটের কথা কেন্? আরে তোকে তো কহায় হয়নি। কী বলা হয়নি?
তোকে তো কেবলি বাংলাদেশ যাইবো কহিয়াছি। হ্যাঁ তো কী হয়েছে? বাংলাদেশ কার বাড়ি যাইবো সে কথাতো কহিনি। বলনিতো কার বাড়ি যাবা। শুন আমি যাইবো ভোলাহাট ফুফুর বাড়ি আর মজিবুরও ওইখানেই। আর সোফিকুল? সোফিকুল তো যাইবে তার নানির বাড়ি, ভোলাহাট থেকে আরও দূর বরিশাল শহরের কাছা কাছি।
আমি তাহাদের কে কহিনু কতদূর হইবে?
তাহারা কহিল ‘আপুনারাতো এইদিকেই তিন ক্রোশ পথ বেশি আইছেন, ওই মোড় থ্যাইকা আরও তিন ক্রোশের মতো যাইতে হইবে তাহলেই ভোলাহাট পাইবেন। আমরা আবার হাঁটিতে লাগিলাম। ওই মোড়ে পৌঁছাইয়া বাম দিকের পথ ধরিয়া হাঁটিলাম। একটু দূরে ভোলাহাটের কাছাকাছি পথেই দেখা হলো এক দূরসম্পর্কের ফুফুর। “তোরা কোনে যাবিরে বা?” সে চিন্তে পেরে কহিল। তার সেরকম ধন সম্পত্তি ছিল না। তার কাঁঙ্খে ছিলো এক কিসের বস্তা। তার পর সে চলিয়া গেলো। আমাদের আর পেট মানছিল না। এতক্ষণ পর্যন্ত কোনো দোকান পাসারও পাইনায়। কিছু না খাইলে চলবেনা। হাঁটিত হাঁটিত একটা ছোট্ট বাজার পাইলাম। সে বাজারে একটা মিস্টির দোকানে যাইনু। মিস্টির দাম শুধাইলাম, মিস্টি কত করে? “দোকানদার কহিল চব্বিশ ট্যাকা স্যার।” আমরাকে এক স্যার করে দাও আর তিন স্যার প্যাকেট করে দাও। দোকানদার কহিল ‘বয়েন দিইছি’। আমি কহিনু চল চল বস, বস আগে তো খাই, তার পর না হয় যাইব। তিন পাত্রে ময়রা মিস্টি দিল। আর তিন স্যার এক পাত্রে প্যাকেট করিয়া দিলো। খাওয়া শেষ হইলে হাত মুখ ধুইয়া পানি টানি খাইনু পেট একুটু শান্তি হইলে উঠিয়া পড়ি আমাদের মুল উদ্দেশ্যে। একটু হাঁটলে পৌঁছাইয়া যায় সেই রাস্তায় দেখা হওয়া ফুফুর বাড়ি। তখন সন্ধে ছয়টার উপরে। আমাকে আর সোফিকুলকে বাড়ির লোকেরা চিনিতে পারিতেছে না। কেবলি মজিবুর কে চিনিতে পারিতেছে। এর পিছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে। তার পর লোটা ভর্তি পানি আনিয়া দিলে পা হাত মুখ ধুইয়া খাট ওপর শুইয়া পড়ি।

সারাদিনের ক্লান্তি চেপে ধরিয়াছে।”হইয়াছি গভীর তন্দ্রায় মগ্নচৈতন্য”। এমনি অবস্থায় বাড়ির কেউ এসে ওঠো ওঠো কথায় চোখ খুললাম। দেয়ালে চোখ পড়তিই দেখি ঘন্টার কাঁটা রাত্রি নয়টা অতিক্রম করিয়াছে। বলে খাইবেননা। এই কথা শুনিয়া তড়িঘড়ি উঠিয়া পড়ি। খাইতে যাইয়া দেখি থালাতে রুটি। দেখিয়া মাথা খারাপ, সারাদিন কিছু খাইনায় আবার দেখি থালাতে শুকনো রুটি। “তোরা কি দ্বীপ্রহারে ভাত রাঁধনাই আমি মনে মনে কহিনু।” বৈকাল বেলার শেষে তো খাইনু মিস্টি, তাতে তো হালকা পাতলা পেট ভরিয়াই আছে। তাও কি করিবো একটু খাইনু। আর একটা কথা তোকে বলি। হ্যাঁ হ্যাঁ বলো, সে দিন টা ছিলো রামযান মাসের প্রথম। আমি রামযান মাসে রোজা প্রতিদিনই করি।” কিন্তুু এক আজব কাণ্ড!”

সেইদিন রাত্রে সেই ফুফুর বাড়িতে সব চুপ চাপ। এমনিই তাহাদের হাব ভাব রোজা বলে কোনো খেয়ালিই নাই। ভোর রাতের সময় একটু একটু হাঁড়ি বাসনের আওয়াজ। আমার ঘুম ভাঙিয়া গিয়াছে। আমি একটু চোখ চেঁড়ে দেখি সেই ফুফু আর তাহারই এক মেয়ে, তাহারা দুজনে ভাত রাঁধিয়া কেমন যেন গোপনে গোপনে খায়তেছে। আর সারা বাড়ির লোক নিঃশাড়।

আমি রোজা ধরার জন্যে কাঙ্খিত হইয়া আছি। কিন্তু কোনো উপায় নাই, কেননা সেইটা তো আর নিজের বাড়ি নই যে সড়সড় করিয়া উঠিয়া যাইব ভাত খাউনের লায়গা। “মাথার ওপর যেন পাহাড় লইয়া শুইয়াই থাকিনু। তাহারা খাইয়া দাইায়া শুনশান হইয়া গেলো। কিছু কইলোও না আর। আমি কিছু কইতে পারিলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে ভোর হইয়া গেলো। এবার বিছানা ছাড়িয়া ওঠিলে সামনে পানির লোটা আইনা দ্যাই। চোখ মুখ ধুয়া শেষ হলে সামনে আগাইয়া দ্যাই ভাতের থালা। ভাতে থালা দেখে মাথা গরম হইয়া গেলো। আমি রাগের সহিত কহিনু তোমরা কেমন লোক গো জান না আজিকে প্রথম রোজা।” তা তো জানিরে বা। মুইতো রোজা আছিরে বা।” তাহলে আমাদের কহিলানা কেন্? “মুইতো জানিনারে বা তোরা রোজ কোরস।” কেন্? “মুইয়ের বাড়িতে তো কোনো পোলাপানরা রোজা করেনাই। তাই ভ্যাইবাছি তোরও রোজা করবিনা। “সেই ল্যাইগাই তোরা কে রোজা ধরবার ল্যাইগা ঘুম থ্যাইকা উঠায়নি রে বা”। রাগ করিসন্যা রে বা খাইলে! না না খাইবো না। খাইলে রে বা খাইলে! কোনো রকম রাগ মানিয়া লইয়া অল্প কিছুটা খাইনু। এবারে যাইতে হইবে ভোলাহাট। ফুফুর ছেলে কাল সারাদিন পথ চাইয়া কি জানি কী মন লইয়া বইসা রইছে। সেই স্থান ত্যাগ করিয়া ভোলাহাটের দিকে পা বাড়াইতেই মজার কাণ্ড! “কুড় একুশ হইবে এমনই এক কুমারী আসিয়া ঘিরিয়া লইলো আমাদের যাইবার পথ।” আমি তো আশ্চর্য হইয়া গেইনু! না জানি কি কাণ্ড করিয়া দ্যায়! কিন্তু না, তেমন কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। মেয়েটি মজিবুরকে চিনে, মজিবুরও তাহাকে চিনে, তাহার নাম “রুমেলা” তাহার বাড়ি ওই খানেই। মজিবুর এরআগের বার যখন আসিয়াছিল, সেই সময়ে মেয়েটিকে ধোকা দিয়া গিয়াছে।

কীসের ধোকা গো? শুন কহিছ তোকে। বেশ তাহলে শুনি! মজিবুর মেয়েটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়া বিয়ে করার কথা দিয়াছিল। সেই মোহে মেয়ে টি মজিবুরকে সাত শো টাকা দিয়াছিল। তার পর বিয়ে না করিয়াই মজিবুর সেইস্থান ত্যাগ করিয়াছিল। এখন পড়িয়াছে ধরা কি করিবে! আমি তখন কোনো রকম বাহানা করিয়া সেই খান থেকে পালায়। ভোলাহাটের দিকে যাইতে যাইতে সামনে পড়িল ছোট্ট একটা নদী। সেইটা ঠিক নদী নয় জলাশয়ই হইবে। পারা পারের জন্যে ডিঙি ও রইয়াছে। পার হইতে নিতেছে পাঁচ টাকা করিয়া। সেখানে কেহ কেহ মাস্তানি করিতেছে। আমরা কহিনু ভাই আমরা যাইবো “সাদেকের” বাড়ি। কহিতেই চটভট ওপারে পৌঁছাইয়া দিলো। টাকা বাহির করিয়া দিতে গেইনু কিন্তু তাহারা টাকা লইল না। বুঝিতে পারিলাম সাদেকের নাম শুনিয়ায় টাকা লইল না।

ওপারে যাইতেই দেখিতে একখানি বাজার। বাজারে চায়ের দোকানে ভিড়। একটু আগাইলাম। ভিড়ের মধ্যে সাদেক, চলিতেছে জমজমাট আড্ডা। চা চলিতেছে হাতে হাতে। কেহ পয়সা দিবে না। পয়সা দিবে সাদেক। বড়ো দিল দার লোক। আমাদের দেখিয়া হাসিয়া উঠিল। আরে বা! কখন আইলি রে বা। আয় চা খাইলে। হইলো চায়ের অর্ডার। চা খাইতে খাইতে হইল হাসি মজার গল্প। ম্যালা গল্প হলো রে বা চল…বাড়ি চল। না ভাই এখন যাইতে পারিবো না। ম্যালায় পথ হাঁটিয়াছি পা চলে না।

খুব ধরাধরি করিতে লাগিল। শেষপর্যন্ত যাইলাম তাহার বাড়ি। বিশাল বাড়ি, আঙিনা ও বিশাল। বাড়ি কিন্তু মাটির দেয়াল আর ওপরে টিন। মাঠে তাহার অনেক জমি! বাড়িতে বড়ো বড়ো ধানের গোলা। সারা মাঠ ধানে পূরণ হইয়া আছে। মাঠের সব ধান যেন তাহারি। আরও কত কী………। বাড়িতে নইও হাস মুরগীর অভাব। সে বাড়ি যাইয়ায় মুরগা কাটিল। আমরা একটু আরামে বসিলাম। দেখতে দেখতে খাওয়ার হাজির হইয়া গেল।বলে খাইলে রে বা। খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো বটে কিন্তু মাংস দেখিয়া আর মন মানলনা খাইতে লাগলাম। গল গল করিয়া খাইনু। এবার, সাদেক ভাই কই? সাদেক ভাই যায়। মুই তো যাইতে দিমু না রে। না সাদেক ভাই তাহারা পথ চাইতেছে। যাইবি যখন আর কী কমু। তো এত রাইতে যাইবি ক্যামনে? খাড়া য্যাইস। কহিয়া বাহির হইতে দুতিনজন লোককে ডাকিয়া আনিল এবং আমাদের সঙ্গে পাঠাইল। তাহাদের কাছে আছে লাঠি আর একটা করে লাইট।আমরা আবার আগের বাড়িতে ফিরিয়া আসিলাম। তাহারা থালাতে ভাত লইয়া বসিয়া আছে। বলিলাম আমরা তো সাদেক ভায়ের বাড়ি হইতে খাইয়ায় আসিতেছি, থাক এখন আরর খাইবো না। এই কথায় কহিনু।

পরদিন সকালে ধরিলাম ভোলাহাটের রাস্তা। রাস্তায় হাঁটিতে শুরু করিয়াছি, পা ফুলা একটু কমেছে। আবার তিন ক্রোশ হাঁটিতে হইবে। হাঁটিতে হাঁটিতে ভোলাহাটের নিকট পৌঁছাইয়া গেলাম। রাস্তা এক মানুষ নিচা। উপরে আমের বাগান। বাগানের এক কোণে একটা ঘর চোখে পড়ল। ঘরের কাছে কোনো রকম গেলাম। ফুফার নাম সলিমুদ্দিন। লোকে সলিমুদ্দিন ডাকাত কয়। আশ্চর্য! লোকে ডাকাত কয় কেন্? কোনো সাধারন লোক ছিলো না অবশ্যই? হ্যাঁ, সে সেই সময় কার নাম করা ডাকাতই ছিলো। একজন কে কাছে পাইলাম। তাকে কহিনু ওই ভাই সলিমুদ্দিনের বাড়ি কোনটা? সলিমুদ্দিন ডাক্যাইত নাকি? হ্যাঁ,,,, হ্যাঁ

আমি কহিনু। আপুনারা তো আয়্যাই পড়সেন, এইটাই তো।কহিয়া সে চলিয়া গেলো। আমরা বাগানের দিকে একটু তাকাইলাম বিশাল বাগান। বাগানে কয়েকজন লোক, আম গাছ ধুইতেছে। গাছে ছোটো ছোটো গুটি, কেবলিই মুকুল ছেড়েছে। বাগানে লোক গুলো আর কেহ নয় তাহারা ছিলো আমার ফুফাতো ভাই আর তার লেবার। সেই বাগানটা আমার ফুফারই। আমার ফুফাতো ভাই সামশুদ্দিন ওই বাগানটা ভাগে পাইয়াছে। সামশুদ্দিনের আমাদের দিকে চোখ পড়িলে সে হাসতে হাসতে কাছে আসিয়া ‘কী রে তোরা এখনি আইলি যে, তোদের কাইলকা আসার কথা ছিলো না……………। কোনো কাজ না কইরে তোদেরি পথ চ্যাইয়া ছিনুরে, তোরা তো অ্যাইলি না তখন অ্যাইজ লেবার নিয়া কাজে লাইগাছি ….। তো এখন বাড়ি চল, বাড়িতে বইস্যা গল্প কইরবো চল … চল চল। ঘরের দিকে যাইতে যাইতে আমরা তো কাইলি আইসি। তোরা কাইল আইসিস! তোরা ছিলিস কোথে? ওইতো ওই ফুফুর বাড়িতে। কেইনেরে?

আর কহিস না… এইসব ম্যালায় কথা। সেই আগের ঘটনা শুনাইনু। এইযে বস ম্যালাকথা কলি। এই কথা কহিয়া সে ছোটো এক গামলা মুড়ি চানাচুর তেল এইসব দিয়া মাখিয়ে দিয়া দিলো। “এইযে খা, সে কহিলো। এখনি ‘পাক্’ কইরবে! ” কহিয়া সে বাহিরে গেলো। আমাদের মাথায় হাত নতুন করিয়া শুনিলাম ‘পাক্ করা’ এইটার মানে আবার কী?তিনজনেরই মনে প্রশ্ন, কিন্তু অতো অবাক হওয়ার কিছু নাই। একটু মাথাই শুধু চুলকাইলাম! ‘পাক্ করা’ মানে জানিতে পারিলাম। তার মানে হইলো ‘রান্নাকরা ‘। গল্প করিতে করিতেই ভাতের থালা সামনে আইসা হাজির, ভাতের সঙ্গে মাছ আরও কত কী। একটা আশ্চর্য ব্যাপার! “তাহার একদিনও মাছ ছাড়া ভাত খায়না!” এর ও একটা কারণ আছে ‘সামশুদ্দিন ছিলো জেদালো ধরনের। তার বাপ মনে ফুফা সলিমুদ্দিন তার বিশাল সম্পত্তি কিন্তু সে ডাকাত।
স্বভাব টাও খুব ভালো ছিলো না। সেই কারণেই তার বাড়ি ও একেবারে গ্রাম ছাড়া বাগানের ভিতরে। সে হঠাৎ একদিন এক ভিক্ষাকরানিকে বিয়ে করিয়া ঘরে তুলে। তাহাতে তাহার বাপের সহিত সামশুদ্দিনের তুমুল ঝগড়া বাধিয়া যায়। সেই দিন হইতেই সামশুদ্দিন আর তাহার মা, মানে আমার ফুফু তাহারা ভিন্ন হইয়া যায়। আর আলাদা হইয়া দিন কাটাই। সেই দিনই তাহার বাপকে কথা দিয়াছিল যে মাকে সে সুখে রাখবে কোন কষ্ট অনুভব করতে দিবে না। আরও বলে যে সে বিনা মাছে এক দিনও মাকে ভাত খাওয়াইবে না। সেদিন হইতে ফুরায় না মাছ তাহার ভাতেরই থালাতে। মাছ যে প্রত্যহ পাইবে সামশুদ্দিন। তাওতো ভাবারই কর্মকলাপ! কিন্তু সেটা ওতো সহজই হইয়া যায় তাহার কাছে। উঁচু উঁচু ভিটা সবই। রাস্তা ছোটো ডাড়ার মতো। তাহারই দুই পাশে, হালকা হালকা পানি আসে। তাহাতে মাছ শিঙি,মাগুর, আরও পুটি, গুটি যতো। তাহাতে তার ধরা আছে, কলসি ভর্তি কত। কলসি হইতে প্রতিদিন একটা দুটা রান্না করিয়া খাওয়াই তাহার মাকে। আমাদেরও চললো মাছ ভাত খাওয়া সেই দিন দুপুরে।

এক দিন কাটাইলাম ফুফাতো ভাই সামশুদ্দিনের বাড়িতে। মাথায় একটা বোঝা আছে। সোফিকুলকে পৌঁছাইতে হবে তার নানির বাড়ি সদরগঞ্জ। বরিশালবিভাগ, অনেক দূরের রাস্তা, ট্রেন আছে, কিন্তু আধেকটা,বাকি পথ সেই পায়ে হাঁটা। একটু হাঁটিয়া গেলাম, তার পর স্টেশন। ট্রেনে উঠিয়া পড়িলাম।ট্রেনে উঠতেনা উঠতেই, পৌঁছাইতে হইলো পরের স্টেশন। এই স্টেশনেই নামিতে হইবে। কী আর করবো নামিয়াই পড়লাম তিনজনে। আবার শুরু হইলো হাঁটা পথ। বেলা তখন তিনটে। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। তবুও তার তেজ কমে নাই। মাঠের পথ আরও এক দু কিলোমিটার বাকি আছে। আমি কহিনু একটু আরাম করি তারপর না হয় যাইবো। আচ্ছা বেশ তাই করি। বসিলাম এক গাছ তলায়। সেখানে আছে চায়ের দোকান তারই মাচাতে। চোখ আর থামলো না বসিতে বসিতেই ঘুমে ঢলেছি। হঠাৎই একজন লোক এসে ওঠো ওঠো তাহাতে ঘুম ভাঙিল। তখন বাজে প্রায় পাঁচটা। তিনজনই রোজা করিয়াছিলাম। রোজা ইফতারের আর বেশি সময় নাই। এই কথা ভাবিয়া দোকান হইতে কিছু খাবার লইয়া মাঠের পথ ধরিয়া লইলাম। তিনজনই হাঁটিতেছি আর বেশি পথ বাকি নাই। সন্ধে হয় হয় রোজা ইফতারের আর বেশি সময় নাই, এমন সময়ই বাড়ি ঘরের হদিস পাই। সামনেই একটা বিশাল বাড়ি, আশেপাশে দুতিনটে গোরুর গাড়ি, সেখানেই একজন ওজু করছে, সে আর কেউ নয়, সোফিকুলের মামা, সে চিনিয়া লইছে। চোখ পড়তেই তার মামাও তাকে চিনিয়াছে। সে হাতের লোটাটা ফেলিয়া দ্রুত কাছে এসে আমরা তিনজনকেই বাড়ির ভিতর নিয়া গেল। পানির লোটা দিয়া বলে তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুইয়া লে রোজা ইফতারের সময় হইয়াছে।

তারপর সামনে অনেক খাওয়ার দিয়া দিলো। ওই সব খাওয়ার খাইয়া রোজা ইফতার করিলাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে তিনজনেই শুইয়া গেলাম। তাহাদের বাড়িতে মুরগা মুরগির অভাব নাই, রাতেই হল মুরগার মাংস। সেখানে তাহারা ভালোই সেবা করল।পরদিন সকালে সোফিকুলকে রাখিয়া আমরা আবার ফুফুর বাড়িতে আসিলাম। তাকে কহিয়াই আসিলাম যে তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস চলিয়া আসিস, তুই আসিলেই আমরা বাড়ি ফিরিয়া যাইবো। আর একটা কথা আমরাকে ছেড়ে সোফিকুল তার নানির বাড়িতে থাকার ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু নানির বাড়ির খাওয়ারে ওই বাড়ির কথা ভুলে গিয়াছিল। কারণ তার তিন চার দিন থাকার কথা ছিল কিন্তু পাঁচ ছয় দিন রাস্তা দেখিনু কিন্তু ওই আইলো না। আমারও মন খারাপ। তখন একা একায় কহিনু কে আর অতখানি রাস্তা আবার তোকে ডাকতে যাইবে আসবি আয় না আসবি না আয়। আমরা পাঁচছয় দিন ফুফুর বাড়িতে থাইকা, ভালোমন্দ খাইনু তার পর বাড়ির দিকের রাস্তা ধরিনু।

(০৯/০৯/২০১৮)
[৩৭৭ সমাপ্ত]

নৌকা যাত্রী

নৌকা যাত্রী

চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু, কড়া রৌদ্রে আর সেদিনের গরমে গলা শুকিয়ে একেবারে দুরুদুরু। এমন সময় ডাক এলো, বড়ডিয়ায় ভ্রমন। নৌকায় ভ্রমন, সবাই আনন্দে মেতে উঠলো, তবে কেউ কেউ দ্বিধা করছিল, পরবর্তীতে তারাও রাজি। কথা পাকা পাকি হয়ে গেল বৈকাল তিনটায় পাড়ি দিবো, তার আগেই সবাইকে ঘাটে উপস্থিত হতে হবে। দুপুরের খাওয়া সেরে অনেকেই ইতিমধ্যে উপস্থিত, কেউ কেউ খাওয়া তো দূরের কথা স্নানও করেনি, আনন্দে মেতে ঘাটে উপস্থিত। সেখানে দশ দিনের মতো ভ্রমন, সেই মতো আসবাবপত্র, চাল, ডাল, তরিতরকারি, মশলাপাতি সবকিছু ঠিকঠাক জোগাড় নেওয়া হলো। তারপর আর কেউ বাকি আছে নাকি দেখে তা দেখে তিনটে পনেরো মিনিট হবে এমন সময় নৌকায় চাপা হলো। চাপার সময় নৌকাটা একটু একটু দুল ছিল, এতে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করছিল, আবার কেউ কেউ ভয়ে কাঠ, যারা আনন্দ পাচ্ছিল তারা এর আগে বারকয়েক নৌকায় ভ্রমন করেছে, আর যারা ভয় ভয় করছে তারা এই প্রথম।
আব্দুল মাঝি এক্কেবারে পাক্কা মাঝি, প্রচুর তার নাম ডাক,এখনো বয়স বেশি হয়নি, তবুও প্রচুর দক্ষ। সেই…….. তার বয়স যখন তিনচারের মতোই হবে তখন থেকে নৌকায় থাকে।

তার বাবা পাঁচু মাঝি তখনকার সময়ে কতই না নাম ডাক ছিল। “হঠাৎ একদিন সে ডুবে মারা গেল”। পড়ে থাকা পাচুর নৌকা হাল ধরলো আব্দুল। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট নুরুদ্দিন মালিকের খুব বিশ্বস্থ। মালিক আদেশ করলো মেশিন জুড়ে দে, অমনি সে মেশিন স্টার্ট করলো,আর আব্দুল ভ্রমনের পথে হ্যাল ধরে বসে পড়লো। ইতিমধ্যে সবাই একে অপরের সাথে হাসি মজার গল্প শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপ আর কড়া রৌদ্রে নৌকা চলছে। সকলের শরীর থেকে ঘাম ঝরে ঝরে পড়ছে। “সূর্য যেন লাল টগবগে দৃষ্টিতে শত্রুর মতো তাকিয়ে রয়েছে নদীর দিকে”। যাত্রীরা আকাশপটে তাকিয়ে মিন মিন কি যেন বললো। সবাই আশাতীত একটু বাতাসের! এমনি সময় সূর্য যেন সবাই কে বিদায় জানিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে উধাও হলো। সূর্য চোখের আড়াল হতে না হতেই গুমোট লাগতে লাগলো। গুমোট বাড়তেই থাকলো, “সবাই ক্ষিপ্ত মেজাজে আল্লাহ্‌ ভগবানের মুন্ডপাত করতে থাকল”। সকলের শরীরে যেন ঘামের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকলো। “তারপর হঠাৎ এক কান্ড”! সূর্য বাতাসের সঙ্গে শত্রুতা কিংবা বন্ধুত্ব করলো বোঝা গেলো না। কিছুক্ষণ পর হালকা শির শিরে বাতাসের আবির্ভাব হলো। সবার শরীর শিরশিরে বাতাসের স্পর্শ পেতেই বাজিমাৎ। নতুন কর সবাই আবার জীবন পেলো। বাতাসের কেমন যেন একটা ভাব দেখা দিলো, বাতাস মনে মনে হালকা হাসলো। তারপর আকাশে ঘন মেঘ দেখা দিলো, মেঘের সাথে বাতাসের গোপনে কিযে আলাপ হলো তা বোঝা গেলো না। বাতাসের হাসি বেড়ে গেলো, মেঘ আনন্দে মেতে গর্জন করতে লাগলো।

গর্জন করতে করতে মেঘ সারা বসতি জানিয়ে দিলো ‘তোমরা জাগো’। তখনিই আনন্দে মেতে সারা বসতির মেঘ আরও ঘন কালো হয়ে পুরো আকাশটাকে ছেয়ে ফেললো। যাত্রীদের মনে এবার একটু ভয়ের আশঙ্কা দেখা গেলো। বাতাস ও মেঘের গোপন কথা মেশিন টা একটু একটু বুঝতে পারলো। “কিন্তু আবলা মেশিন কষ্ট করে আপন মনে চলতে থাকলো”। মেশিনের দিকে খেয়াল করে এবার মাঝি আব্দুল ধরে ফেলেছে বাতাসের হাসির কারন। মাঝি হালকা ভাবলো, মনস্থির করলো, কাওকে কিছু না বলে গতি বাড়িয়ে দিকপরিবর্তন না করে চলতে থাকলো।

এরই মধ্যে মেঘ নদীর জলের সাথে বন্ধুত্ব পাতাল। মেঘ কে পেয়ে নদীর জল বিশাল বিশাল ঢেউ তুলতে থাকলো, একদিকে মেঘের গর্জন অন্যদিকে যাত্রীদের হাহাকার, তারা দিশেহারা হয়ে নীরব, ভাবতেও পারেনা তারা কি করবে। এরই মধ্যে বাতাস অন্যরূপ ধারণ করলো। বাতাস আর মেঘ গর্জন করতে করতে ধেয়ে পড়লো নদীর জলে। নদীর জল বাতাস আর মেঘের বন্ধুত্ব পেয়ে ঢেউ এর আকার পাল্টে নিলো। নৌকা টলমল, যাত্রীরা এদিক ওদিক জলে পড়তে শুরু করেছে, পুটী মাছের মতো চুবুক চুবুক করছে, সাঁতার কাটার ক্ষমতা নেই।

বাকিদের কাঁন্নার স্বর উত্তেজিত হলো, মাঝি তখনও অনড় ছিল, আর কোনো আশা নেই, নিরাশায় নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিলো কিনারা পৌঁছানোর উদ্দ্যেসে।

(কালাম হাবিব)