কাজী জুবেরি মোস্তাক এর সকল পোস্ট

জয়বার্তা আসবেই

চারিদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে
আর ওরা গোলাবারুদের উপরে দাঁড়িয়ে,
আর ছায়াগুলো মিলেমিশে একত্র হচ্ছে ।

এ জনপদ আজকে জনশুন্য হয়ে যাচ্ছে
শহর বন্দরগুলোও ঢেকে যাচ্ছে মুখোশে,
মানবতা সেও যেন ‍নির্বাসনে চলে যাচ্ছে ।

আজ পৃথিবীর সমস্ত অলিগলিতে জুড়ে
আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে,
উশৃঙ্খল ; সুদীর্ঘ তপ্ত দুপুরের মতো করে।

মনুষ্যত্বহীনতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ শহরে
অলিতগলিতে মাদকের আড্ডাও বসছে,
মশা মাছির মতোই সন্ত্রাসী বাড়ছে শহরে ।

নির্জাতিত ধুলোর মতো দু’পায়ে জড়িয়ে
পড়ে থাকা নিথর সেই দেহগুলো ডিঙিয়ে,
একদিন প্রত্যাশিত বিজয় ঠিক ধরা দিবে ।

রক্তগুলো পিচঢালা পথে শিকড় ছড়াচ্ছে
সারিবদ্ধ লাশগুলো পথ রোধ করে থেকে,
মৃত্যুকে অস্বীকার জয়বার্তা বয়ে আনছে ।

মমতাময়ী মা; প্রিয়তমা স্ত্রী ;আদরের পুত্র
তোমরা আজ শোকবস্ত্র খুলে ফেলে দাও,
প্রতিটি অশ্রু দিয়ে তৈরি করো ক্ষীপ্র অস্ত্র ।

জীবনের গল্প

উর্ধমুখে বয়ে চলা যান্ত্রিক নগরীতে
সবকিছু আজ ছুটে চলে উর্ধে মুখে ,
একই স্বপ্ন রোজ উল্টেপাল্টে দেখি
আর হতাশা মেকি হাসি দিয়ে ঢাঁকি ৷

কিছু স্বপ্ন জানি কভু পুরন হবার না
তবুও এ’মন কখনো বারন শোনেনা ,
খরচাপাতির ফর্দ বড় থেকে হয় বড়
আর স্নায়ুচাপে আমিও জড়োসড়ো ৷

রোজগারও তাই আছে যেমন ছিলো
সাধের প্রেমটাও অন্যের হয়ে গেলো ,
গায়ে আমার জমা মর্ত্যের সব ধুলো
আর সুখের ভাঁজে যন্ত্রণা লুকোনো ৷

ভরসা আর আস্থার এই চেনা শহরে
ডাক পিয়নও ভুলেছে সু-খবর দিতে ,
হাহুতাশ নিয়মিত দুয়ারে কড়া নাড়ে
বাস্তবতাও রোজ’ই চপেটাঘাত করে ৷

সঞ্চয়ের খাতায় শুধুই দীর্ঘশ্বাস জমা
ব্যর্থতা যেনো আজ এক বিষ ফোঁড়া ,
সবল যারা তারাই এসমাজে উর্ধমুখী
আর দূর্বলরা সমাজে মূল্যহীন প্রাণী ৷

নব প্রত্যয়

প্রতিটি বর্ণমালাতে উঠে আসুক প্রতিবাদের ঝড়
বিদ্রোহী শ্লোগান প্রকাশিত হোক প্রতি পঙতিতে ,
প্রতিটি কলম যেনো হয়ে ওঠে সাহসী ও দূর্ণীবার
এ ফরিয়াদ হোক আজ প্রতি ওয়াক্তে প্রার্থনাতে।

প্রতিটি শোক হোক আজ রুখে দাঁড়ানোর শক্তি
মহাপ্রলয় হয়ে আজকে আছড়ে পড়ুক প্রতিবাদ ,
দূর্বলতাও আজ বলীয়ান হয়ে ছড়িয়ে দিক দ্যুতি
ঘুঁচে যাক আজ আছে যতো গ্লানি আর অপবাদ।

প্রতিটি পঙতিতে বেঁচে থাক নির্জাতিতের কান্না
সে কান্নাই হোক আজকে সমবেত এক কোরাস ,
সব হারানো বেদনা থেকে খুঁজে নিয়ে সমবেদনা
ভুলে যাও আজ বুকে জমানো সকল হা-হুতাস ।

প্রতিটি শব্দ আজ একেকটা টর্ণেডো হয়ে উঠুক
লন্ডভন্ড করে দিক আজ পরিত্যাক্ত এই সমাজ ,
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়েই জেগে উঠুক সবার বুক
মানুষ এবং মনুষ্যত্ব হয়ে যাক পুনরুদ্যমে সজাগ।

পৃথিবীর দেয়ালে ঝলসে উঠুক জীবন্ত গ্রাফিতি
পালিয়ে যাক সমাজ থেকে সন্ত্রাসী;দূর্নীতিবাজ ,
ব্যথাতুর মনও আজ ভুলে যাক দূঃসহ সব স্মৃতি
প্রতিটা কলমের আঁচরে বদলে যাক এই সমাজ।

বাবা তো বাবাই

ছোটবেলায় একটি আতংকের শব্দ বাবা
যখন বড় হলাম,
বুঝলাম আস্থার প্রতীক মানে বাবা
মা আমায় দশমাস দশদিন রেখেছিলো গর্ভে
আর বাবা!
সুস্থভাবে আলো দেখা নিশ্চিত করেছে ৷

হাতে হাত রেখে অভয় দিয়ে যিনি শিখিয়েছিলেন হাঁটা,
তিনি কিন্তু আর কেউ নয় তিনি হলেন বাবা ৷
যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৌড়াতে শিখেছি,
কিন্তু !
পিছু ফিরে কখনো বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়নি,
বরং অতিরিক্ত দুরন্তপনার জন্য যখন রুষ্ট হতেন তিনি,
মনে হত তখন,পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ মানুষ তিনি ৷

আর এই খারাপ মানুষটিই যে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী
তখন কিন্তু বুঝিনি,
বুঝিনি কেনো আমার কাছে তিনি খারাপ হয়েছিলেন ?
কারনটা আজ বুঝি,যেনো আমি ভালোভাবে চলতে শিখি।

পড়ালেখার জন্য বাবার হাতে মার খেয়েছি আর ভেবেছি,
নিজের সন্তানের উপর এতটা নির্দয় হয় কেমনে করে?
তখন হয়তোবা খেয়াল করিনি,
তবে আজ কিন্তু আমি নিশ্চিত
মার খেয়ে যখন কান্না করে ঘুমাতাম
নিঃশব্দে বাবা নিশ্চয় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।

আমার জন্মদাত্রী হলেন আমার মা,
কিন্তু আমার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ আমায়
ভালোভাবে বড় হয়ে উঠার পরিবেশ দিয়েছেন
তিনি তো আর কেউ নয় তিনি হলেন বাবা।

কখনও আমার চিন্তা করতে হয়নি
বাসায় গিয়ে কি খাব? টিউশন ফি কে দেবে?
বাসা ভাড়া কিভাবে দিতে হয় ?

অথচ আমরা চিন্তা করি হিউস কেন ইনজুরিতে?
কে সেরা?
মেসি না রোনালদো?
বিশ্বকাপটা সন্ধ্যায় হলে কি হত?
শুধু কি তাই ?

কলেজে পড়ার সময়ও বাবার সাথে মতের অমিল
তখন ভাবতাম , অনেকের বাবাই তো অসুস্থ হয়,
কেনো আমার বাবা অসুস্থ হয় না ?
আজ বুঝি, বাবারা অসুস্থ হওয়া মানে কি?
বাবা না থাকার মানে কি ?

বাবারা হলেন মাথার উপর ছাদের মতো
যার মাথার উপর ছাদ নেই, সেই জানে এর মর্মার্থ কি।
বাবা হলেন অদৃশ্য একটা দেয়াল
যিনি না থাকলে হয়তোবা অনেক আগেই
আমি ভেঙ্গেচুড়ে গুঁড়িয়ে রাস্তায় মিশে যেতাম ৷

যে পথ আমার

যে পথে আমি যাইনি
যে পথ আমি আজও চিনিনি ;
অথচ সে পথের ওপারেই সফলতা ছিলো।

যে পথে আজ চলছি
সে পথেই পথ হারিয়ে ফেলেছি ;
কারন এই পথটা কখনোই আমার ছিলনা।

যে পথে যাবো ভেবেছি
কাঁটা দেখে ফিরে চলে এসেছি ;
অথচ সে কাটা আমার জন্য আশীর্বাদ ছিলো।

যে পথ আমার যোগ্য না
সে পথটাই আজ আমার চেনা ;
কিন্তু সেই চেনা পথই আমাকে দিকভ্রান্ত করছে।

হারিয়ে গেছে (২)

এই যে দাদা ভাই এরা শুনছেন ?
জ্বী বলেন
আমি হারিয়ে ফেলেছি একজনকে
আপনারা কি দেখেছেন তাকে ?
কি নাম তার ?
বিবেক ৷
বিবেক !
হ্যাঁ বিবেক,
আসলে অনেক দিন হলো দেখিনা তাকে
এই আসলাম একটু আপনাদের শহরে
তাই ভাবলাম খোঁজ নিয়ে যাই কেমন আছে ৷
তাকে অনেক খোঁজাখুজি করলাম
সরু গোলি শহর বন্দর সব খুজলাম
কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে না পেলাম
দাদা ভাই আপনারা কি দেখেছেন তাকে
এক পৃথিবী মুখোশের ভীরে যদি কভু দেখা মিলে
প্লিজ একটু বলবেন ওর ভাই মনুষত্ব মারা গেছে ৷

অভাগা সমাজ

সভ্যতার বাগানে ওরা অসভ্য কীট
অথচ ওরাই আজ এ সমাজে ফিট,
পরিবেশ বুঝেই তালে তাল মিলিয়ে
গিরগিটির মতোই রং পাল্টে ফেলে ৷

সভ্য এ শহরে অসভ্য নাগরিক ওরা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা,
সভ্যতার মুখোশে ঢাঁকে মানুষগুলো
ওরাই দেখি আজ আছে বেশ ভালো ৷

মিথ্যারা দেখি আতশবাজি ফোটায়
আর সত্য আজ কপাটে মুখ লুকায়,
ওরা আজ মিথ্যা বলছে বুক ফুলিয়ে
অথচ সত্যবাদীরা থাকে মুখ লুকিয়ে ৷

এসমাজে হচ্ছে আজ অন্যায়ের চাষ
অথচ ন্যায়ের গলায় প্রতিনিয়ত ফাঁস,
মাদকে সমারহে ভরপুর আজ সমাজ
সাথে আছে আরো সন্ত্রাসীদের রাজ ৷

হায়রে অভাগা নগরী হায়রে সমাজ
কতোকাল আর হয়ে রবে ক্রীতদাস,
যতদিন রবে নীতিহীনদের রাজনীতি
ততদিন হবে অভাগা সমাজের ক্ষতি ৷

শহরটা ভালো নেই

বিশ্বাস করুন আমরা ভালো নেই আজকে এ শহরে;
মৃত্যু যেনো প্রতিনিয়ত ওত পেতে আছে শহর জুড়ে,
স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনই গ্যারান্টি নেই আজ শহরে।

এ শহরের বাতাসেও আজ লাশের গন্ধ ছেয়ে গেছে;
এ শহর আজ যেনো লাশের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে,
মানুষগুলো এখানে নিয়মিত ঠিক অপঘাতে মরছে।

শহরের প্রচ্ছদ জুড়ে মৃত্যুর নগ্ন উল্লাস বয়েই চলছে;
নতুন মলাটে পুরনো শহরের সিলেবাস একই আছে,
কখনো সড়কে কখনো আগুনে মানুষ ঠিকই মরছে।

এ শহরে আজ মৃত্যু মানেই আগুনে পুড়ে পুড়ে মরা;
নয়তো কোন সড়কে গাড়ি চাপা খেয়ে মরে যাওয়া,
মৃত্যু যেনো এ শহরে আজ পানির দামে কিনে নেয়া।

এ শহরটাই আজ যেনো এক বিশালাকার মৃত্যুপুরী;
সড়ক আর অট্টালিকার ভাঁজেই নিজের গোর খুঁড়ি,
সড়কে যদিবা বেঁচে ফিরি আগুনে ঠিকই পুড়ে মরি।

শ্রমিক কেনো মূল্যহীন

আমার ঘামে ভিজে আছে তোমার পদতল
আমাদের রক্ত ঝড়েছে তাইতো তুমি সচল,
আমি শ্রমিক রক্ত,ঘাম ঝড়িয়ে আজ দূর্বল
আর আমাকে শোষণ করে সেজেছো সবল ৷

আজকে তুমি ঈশ্বর আমার বুকেই দাড়িয়ে
বেমালুম ভুলে গেছো কাকে যাচ্ছো মারিয়ে,
যেই ঘামে আর রক্তে গড়া তোমার সাম্রাজ্য
অথচ প্রতিপদে পদে তাকেই করো অগ্রাহ্য ৷

আজকে আমি শ্রমিক তাইতো তুমি মহাজন
তবুও দেখাও তুমি তোমার ব্যক্তিত্বের ওজন,
আমার স্বপ্ন ভেঙে গড়ে দিয়েছি তোমার স্বপ্ন
তবুও কেনো শ্রমের মূল্য দিতে করো কার্পণ্য ?

আজকে তুমি সভ্য মানুষ যে সমাজে দাড়িয়ে
সে সমাজের ইট,পাথরে আমার ঘাম জড়িয়ে,
আমার রক্ত শুষেই গড়েছো তোমার সাম্রাজ্য
সেই শ্রমিকেরে মূল্য দিতে কেনোইবা অগ্রাহ্য ?

হতভাগা সভ্যতা

সভ্যতা নামক খোলসে বন্দী করে নিজেকে
প্রতিক্ষণেই সামনে আসি মুখোশটাকে খুলে,
কখনো আশার বাণী শোনাই দরদীয়া কণ্ঠে
কখনো আবার ক্রোধটা দেখাই বিশ্রি ভাবে ৷

সভ্যতা এ যেনো আজ আজব রকম খেলা
মনুষ্যত্ব দিয়ে বিসর্জন ভাসাই মেকির ভেলা,
মানুষ নামের মুখোশ পড়ে সভ্য সারাবেলা
আসল রুপে ফিরি আবার হলে সন্ধ্যাবেলা ৷

মনুষ্যত্ব বিকিয়ে আবার কিসের তুমি সভ্য
ভাতৃত্ববোধ ভুলে আজ সম্পর্ক শুধুই তিক্ত,
সভ্যতার মুখোশ পড়ে দিব্যি আছে অসভ্য
মিথ্যার কাছে প্রতিপদে পরাজিত হয় সত্য ৷

বিবেকটাকে বন্দী করে মনের জেলখানাতে
তেল মারতে ব্যস্ত সবাই সকাল থেকে রাতে,
অন্য কারো ক্ষতি হলে কি আসে যায় তাতে
আপন স্বার্থ হাসিল করেই ক্ষ্যাত দেয় তাতে ৷

অসভ্যদের সমাজে আজকে দূর্বল সু-সভ্যতা
অযোগ্যরা চেয়ারে বসে প্রমাণ করে যোগ্যতা,
অথচ সেখানে যোগ্য ব্যক্তি ধরে রাখছে ছাতা
হায়রে আমরা সভ্য সমাজের সু-সভ্য জনতা ৷

মানুষ এক জাত

তোমরা তো বলো ওরা নাকি হিন্দু-মুসলমান
আমিতো দেখি মানুষ ওরা জাতে সবাই সমান,
মানুষের মাঝেই বাস করে খোদা আর ভগবান
খুঁজে দেখ ঐ বাইবেল, গীতা আর কুরআন।

হয়তো ওরা বিধর্মী নাস্তিক তোমার দৃষ্টিতে
কেমন আস্তিক তুমি হে মানুষকে হত্যা করে?
মানুষ হয়ে মানুষ হত্যা এ মহাপাপ সব কিতাবে বলে
এমন কিতাব আছে নাকি যেথায় হত্যা করতে বলে?

সৃষ্টির সেরা জাত আজ তুমি বলছো গলা বাজিয়ে
আর জিহাদের নামে হত্যা করছো সেই মানবতাকে,
কোন সে জাত চেনাও আজ তুমি মানুষ হত্যা করে
মানুষ হয়ে মানুষ হত্যা এ মহাপাপ সব ধর্মেই বলে।

খোদা ভগবান ঈশ্বর বলে ডাকছো তুমি যাকে
সেই কিন্তু বিরাজ করছে তোমার-আমার মাঝে,
সৃষ্টিকর্তা একজনই আর প্রথম আদম, হাওয়া
কোন সে জাত ছিলো তখন মানুষ জাত ছাড়া।

আপন স্বার্থে করেছো তোমরা মানবজাত বিভক্ত
হিন্দু, মুসলিম নামে ডাকো তাকে হাসিল করতে স্বার্থ
অন্তরালে হাসছো অট্টহাসি আজ দেখে মানুষের রক্ত
মানুষে মানুষে একজাত হবে সে আশা আজ বিলুপ্ত।

অবহেলা

পিতার প্রতি সন্তানের অবহেলা সহ্য হলোনা তোমার সেই শোক সইতে না পেরে তুমিও চলে গেলে আমাকে আরো অন্ধকারের অতল গহবরে রেখে ৷ এখন আমার সময় কাটে ৫’×৪’ ফুটের একটা ছোট্ট ঘরে যা কিনা তোমার আদরের সন্তানদের ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই অযত্নে অবহেলায় পরে থাকে আমিওতো এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তোমার আদরের খোকার এই সংসারে অপ্রয়োজনীয় তাই আমারও জায়গা এই ষ্টোর রুমে ৷ খোকার মা তুমি তো মরে বেঁচে গেছো কিন্তু আমি? আমিতো আর পারছিনা মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে বুকটাতে হাহাকার এসে ভীড় করে যে সন্তান কে বড় করতে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে দিনরাত সব একাকার করে হার ভাঙা পরিশ্রম করে তিলে তিলে বড় করে তুলেছিলাম দুজনে মিলে ৷ আমার বুকে না শুলে যার ঘুমই আসতো না ক্লান্ত শ্রান্ত সেই আমি বিরক্ত না হয়ে বরং আদর করে বুকে রেখে ঘুম পারাতাম মাঝে মাঝে তুমি রাগ করতে খোকাকে বকাঝকা করতে বলতে তোমার বাবা ক্লান্ত তাকে বিরক্ত করোনা সেই খোকা কিনা আজ বড় হয়েছে মস্ত অফিসার হয়েছে, খোকার মা জানো তোমার আদরের সেই দাদুমনিও আজ খোকার মতো জেদ করে খোকার বুকে ঘুমানোর জন্য তখন আমার চোখ বেয়ে একাই পানি চলে আসে এই দেখ তুমি যেনো আবার কেঁদোনা আমার কথা শুনে, তুমি চলে যাওয়ার পরতো আরো একা হয়ে গেছি কারো সংগে কথা বলতে পারিনাতো তাই লিখছি খোকার মা আমি কিসে লিখছি তুমি জানো? দাদুভাইয়ের পুরোনো বাতিল খাতায় যেখানে তোমার দাদুভাইয়ের লেখা আছে তার উপর দিয়েই লিখছি সেদিন বউমাকে বললাম বউমা একটা পুরোনো কলম দিতে পারো? বউমা কি বললো জানো? কলম কিনতে টাকা লাগে কলম নষ্ট করার জন্যে না তোমার দাদুভাই চুরি করে একটা কলম দিয়ে গেছে আর তাতেই আমার না বলা কথাগুলো তোমাকে বলতে পারছি ৷ খোকার মা একবার ভেবে দেখেছো নিজেদের সব শখ আহ্লাদ জলাঞ্জলী দিয়ে যে খোকাকে বড় করলাম সেই খোকা কিনা ! যাকগে বাদ দাও , খোকার মা কষ্ট লাগে কখন জানো যখন দেখি তোমার চলে যাওয়ার দিনটাও তোমার খোকার মনে নেই বরং সেদিন বাড়িতে আরো হৈ হুল্লোর করে পার্টি করে আর আমি তোমার শোকে একা একাই কাঁদি ৷ আচ্ছা খোকার মা আমরা কি খুব বড় কোন পাপ করেছিলাম? তা না হলে এই শেষ বয়সে কেনো এরকম ভাবে কাঁদতে হবে বলোতো ৷ খোকার মা আমাকে কেনো এই কষ্ট আর অবহেলার নদীতে একা ফেলে গেলে ? তুমি যেনো আবার খোকাকে কোন অভিশাপ করোনা আমিও করবোনা বরং দোয়া করো যেনো খোকা আরো বড় হয় , আর দোয়া করো আল্লাহ যেনো আমাকে তারাতারি মৃত্যু দিয়ে এই অবহেলা থেকে মুক্তি দেয় ৷

বৈশাখ আসছে

সাঁঝের আকাশ পিচকালো করে
গুরুগুরু মেঘের গর্জনে ভর করে,
ঝড়ের তান্ডব সাথে বৈশাখ দুয়ারে ৷

কিশোরী মায়ের আঁচলের তলাতে
দুগ্ধপানরত সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে,
ভয় বুকে মা জড়োসড়ো হয়ে আছে ৷

বৃক্ষের নবীন ডালপালাগুলো ভেঙ্গে
মজুরের ঘরের চালা উড়িয়ে নিতে,
মহাব্যাস্ততায় সে আজকে আসছে ৷

মাথা উঁচু করেছে পোয়াতী ফসল
বৈশাখী বাতাস তাতে দিচ্ছে দোল,
কখন যেনো পাল্টে বৈশাখী ভোল ৷

পুরোনো জঞ্জাল সব চুকিয়ে দিতে
স্থাবর অস্থাবর শতো হিসেব নিয়ে,
দোকানী বসেছে হালখাতাটা খুলে ৷

বৈশাখ আসছে ঝড়ো তান্ডব নিয়ে
পুরোনো জঞ্জাল সব উড়িয়ে নিয়ে
এক নব সকালের নব স্বপ্ন দেখাতে ৷

সোমার সাক্ষাতকার

এক জোড়া দূরবীন চোখ তাকিয়ে আছে
ফুটপাতে বেরে ওঠা ঐ টং দোকানের পরে,
পড়নে তার ছেঁড়া প্যান্ট আর ছেঁড়া জামা
বয়সের খাতায় বড়জোর ৫ কি ৬ জমা
হাড্ডিসার দেহতে ক্ষুধার্ত পেটের ওঠানামা
কৌতুহলী মনে জানলাম তার নাম সোমা ৷

কোথায় তার বাবা এটা জানেনাকো সোমা,
কোনো পুরুষের এক রাতের ফসল সোমা
এটাও সে জানেনা লোকমুখে তার শোনা,
স্বামী আসবে এই অাশায় মরেছে সোমার মা ৷

নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে আপন কেউ নাই সোমার
মাথা গুঁজবার এক ইঞ্চিও জায়গা নাই তার,
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা সমাজ কি নিবে ভাড়
প্রশ্ন ভাসছে সে মলিন চোখ, মুখে সোমার ৷

কি ভাবে তুমি জোগাড় করো তোমার আহার ?
মলিন মুখ আরো মলিন হয়ে গেলো সোমার
দূরবীন চোখে তাকালো টং দোকানে আবার
হটাৎ চিলের মতো ছোঁ মেরে ফিরলো আবার,
হাতে একটা শুকনো রুটি দেখলাম সোমার
বললো এই রুটিই তার সারাদিনের আহার
আর মাঝে মাঝে ডাস্টবিনের পঁচা খাবার ৷

জীবন্ত লাশের মর্গ

আজকে সময়ের মতোই সময়ও চলে যাচ্ছে
কপালের চৌকাঠেও ব্যর্থতারা খেলা করেছে ,
স্বপ্নবাজের স্বপ্নরা সব কোণঠাসা হয়ে গেছে
আর মনোবলও ভাটির দিকেই ছুটে চলেছে ৷

এসমাজ আজ যেন এক জীবন্ত লাশের মর্গ
সমাজপতিরা গড়ে মাদক আর সন্ত্রাসের দুর্গ ,
বুদ্ধিহীন করছে টকশো তাতে কত যুক্তিতর্ক
অথচ কতশত বেকার চাকুরী কোঠাতে ব্যর্থ ৷

ব্যর্থতার যত দায়ভার সবটা কপালকে দিয়ে
অর্জিত সার্টিফিকেটগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ,
জীবনের শেষ প্রান্তে আজকে আছি দাঁড়িয়ে
তবু আশাহত আশাগুলো সবই রাখি জিইয়ে ৷

এ সমাজ আজকে যেন পরিত্যাক্ত ডাস্টবিন
কর্পোরেট লোকেজনই নোংরা করে রাতদিন ,
আর আমজনতা তা সাফাই করছে প্রতিদিন
তবু কর্পোরেট মানুষরাই ভদ্র সাজে চিরদিন ৷

দুঃস্বপ্নের ভীরে স্বপ্নেরা আজও হারিয়ে যায়
কষ্টগুলো জড়িয়ে আছে যেন পরম মমতায়
জীবনও তার সব লেনদেনই বুঝে নিতে চায়
ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়েই মরেতে চায় ৷