আহমাদ মাগফুর এর সকল পোস্ট

আহমাদ মাগফুর সম্পর্কে

আমি অতি ক্ষুদ্র এক মানবসন্তান। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। তবুও খুঁজি....। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেলে লিখতে বসি। পাশে যারা থাকেন তারা সেই লেখাকে কবিতা বলে, আবার কেও বলে গল্প। কিন্তু আমার কাছে ওই স-ব কিছুই কেবল নিজের কথা...., আমার মনের কথা। তবে কেও চাইলে সেগুলোকে বকা ঝকাও বলতে পারেন! আমি কিচ্ছু মনে করবো না। কারন আমার মত মানুষের মনে করবার মত কিছুই থাকে না। :)

হেফজখানা জীবনের এক রাতের কথা

79a06e

তখন হেফজখানায় পড়ি। সাত – আট সিপারা মুখস্থ করেছি মাত্র। সিপারার সাথে বয়সের তফাৎটাও খুব বেশি না। তো একদিন রাতের কথা। শীতের রাত। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমার ঘুম আসছে না। ঘুম আসছে না মূলত খিদের কারনে। এশার নামাজের পর আরও কিছুক্ষণ পড়তে হতো। তারপরই ছিল খাবারের সময়। আমার তখন খেতে ইচ্ছে করেনি। এখন সবাই ডালভাত খেয়ে ভরপেটে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু আমি খিদের চোটে ঘুমুতে পারছি না।
বোর্ডিং ছিল দূরে। খাবারের সময় খাবার আসতো। খাবারের সময় শেষ হলে সাথেসাথে বাসনপত্র ধুয়ে রেখে দেয়া হত। সুতরাং এত রাতে ভাত পাবার কোন আশা তো নেই। ট্রাঙ্কে অবশ্য বিস্কুট আছে। কিন্তু শীতের এমন নিশ্চুপ রাতে কিছুতেই ট্রাঙ্ক খুলবার সাহস হচ্ছিল না।

অনেকটা সময় এভাবেই কেটে যাবার পরও যখন দেখি ঘুম আসছে না তখন উঠে বসলাম। ডিমলাইটের মিহিন আলোতে দুরুদুরু বুকে ট্রাঙ্কের কাছে গেলাম। খুব ধীরেসুস্থে ট্রাঙ্ক খুলে বিস্কুটের পট থেকে বিস্কুট বেরকরে যেই খেতে যাবো তখনই ট্রাঙ্কের ডালাটা সশব্দে পড়ে গেল। ভয় পেয়ে হাত থেকে বিস্কুটের দূরে ছিটকে পড়ল। সব মিলিয়ে বিরাট রকমের একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গেল।
পাশ থেকে পর্দা সরিয়ে হুজুর ডাক দিলেন, ‘কে রে এতো রাতে, এই দিকে আয়, আয় বলছি এই দিকে!’
বেশ কয়েকজন ছাত্রও শোয়া থেকে উঠে বসলো তখন। আমি প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে হুজুরের কাছে গেলাম। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, এত রাতে ট্রাঙ্ক খুলে কী করোস?। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সামনে কঠিন পরিণাম ভেবে আমি ভয়ে কাট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

হুজুর অন্য এক ছাত্রকে বল্ল, ‘দেখ্ তো অয় ট্রাঙ্কে কী করতাসিলো’!
তুলনামূলক বড় একজন ছাত্র তখন লাইট জ্বেলে ট্রাঙ্কের বাইরে পড়ে থাকা বিস্কুটের পটটা নিয়ে হুজুরের কাছে আসলো। হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘রাইতে ভাত খাস নাই?’, আমি নিচ দিকে তাকিয়ে ডানেবামে দুইবার মাথা নাড়ালাম শুধু। কথা বলার সাহস সাহস পেলাম না। হুজুর সেই ছাত্রকে কাছে ডাকলো। ভাবলাম বেত আনতে পাঠাবে। এত রাতে সকলের ঘুম নষ্ট করার অপরাধে আমি শাস্তি পাব। কিন্তু
হুজুর তখন ওই ছাত্রটিকে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দিলো – খাবার আছে কি না দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর সে শুধু এক প্লেট ভাত নিয়ে এসে জানালো ডাল তরকারি কিছুই পাওয়া যায়নি। তখন হুজুর আমাকে বসিয়ে বল্লেন,
‘পানি আর লবন দিয়া মাখাইয়া সবগুলো ভাত খা’! আমি চুপচাপ হুজুরের আদেশ পালন করলাম।

স্বাদহীন সেই পানিভাত বা নুনভাত খেয়ে আমার সেদিন এতোটাই ভালো লেগেছিলো যে খেয়েদেয়ে বিছানায় যাবার পরও আরও অনেকটা সময় আমি জেগেছিলাম শুধু অপার্থিব এক ভালো লাগায়, নির্মোহ এক স্নেহের উপলব্ধিতে। কী ঘটে গেল, এটা ভেবে ভেবে আমার মুখে কেবল একটা তৃপ্তির হাসি লেগে ছিল…
আমি জানি না, সেই হুজুর এখন কোথায় আছেন। কেমন আছেন। দেশে আছেন না বিদেশে। ইহকালে না পরকালে। যেখানেই থাকেন, আল্লাহ যেন তাকে সদাসর্বদা হাসিখুশিই রাখেন!
____________________
আহমাদ মাগফুর,
লাখনৌ, ভারত

অভিবাদন হে প্রেমের বেদনা

2021
[কবি পারভীন শাকির]

অভিবাদন তোমায় হে প্রেমের বেদনা
আহমাদ মাগফুর

কখনো থেমেছি কখনো চলেছি
হারিয়েছি কভু পথ
এভাবেই হায় কেটেছে জীবন
সয়ে শত যুলমত।

স্বপনে বা জেগে যেখানেই তার
হয়ে গেছি মুখোমুখি
দুচোখ নামিয়ে চুপচাপ আমি
পাশ কেটে চলে গেছি।

আমার বইয়ের প্রিয় কবিতারা
হারিয়েছে আজ সব
তোমার চোখের, চুলের, রূপের-
স্তুতি করে কলরব।

মনেপড়ে কভু ছিলো কেউ হায়
আজ আমি বড় একা
বিচ্ছেদে আমি পুড়ে গেছি, আর
তুমি হয়ে গেছো তারা।

শূন্যে, যমিনে, কাছে- বহুদূরে
যেখানেই আজ চলি
‘প্রেমের বেদনা’ তোমাকে আমার
শুকরিয়া শুধু বলি।।

মূ ল ঊ র্দু ক বি তা . . .

غمِ عاشقی تیرا شکریہ
پروین شاکر

کبھی رُک گئے کبھی چل دئیے
کبھی چلتے چلتے بھٹک گئے
یونہی عمر ساری گزار دی
یونہی زندگی کے ستم سہے

کبھی نیند میں کبھی ہوش میں
تُو جہاں ملا تجھے دیکھ کر
نہ نظر ملی نہ زباں ہلی
یونہی سر جھکا کے گزر گئے

کبھی زلف پر کبھی چشم پر
کبھی تیرے حسیں وجود پر
جو پسند تھے میری کتاب میں
وہ شعر سارے بکھر گئے

مجھے یاد ہے کبھی ایک تھے
مگر آج ہم ہیں جدا جدا
وہ جدا ہوئے تو سنور گئے
ہم جدا ہوئے تو بکھر گئے

کبھی عرش پر کبھی فرش پر
کبھی اُن کے در کبھی در بدر
غمِ عاشقی تیرا شکریہ
ہم کہاں کہاں سے گزر گئے

না দেখা একুশ

images-2021-

ক’দিন আগেই আমি পা রেখেছি বিশে’র ঘরে
জানি এর সাথে আর এক যোগ করলে একুশই হবে।

তবুও বড় আফসোস!
সত্যিকারের একুশ দেখা হয়নি বলে, কারন
বিধাতা আমার চক্ষুদ্বয়কে স্বর্গীয় করে রেখেছিলো তখন
তাই যাওয়া হয়নি সেই অধিকার আদায়ের মিছিলে

একদিন চক্ষু পেলাম, পেলাম তার মাঝে আলো
শুরু হলো আলোর পথিক হয়ে পথ চলা
খুঁজে পেয়েছি তখন ইশকুলঘর, আর চোখ মেলে দেখেছি কালো কাঠের ফলকে
সুজন স্যারের সুনিপুন হস্তে অঙ্কিত শুভ্র চকের আভরনে ক খ অ আ

কালো রাত্রির পিঠে ঐ চাঁদের অক্ষরগুলো
অন্তরে আমার বুনে দিয়েছিলো মায়াবতী এক জাল,
কার, অথবা কিসের মায়া?
সেটা বুঝবার প্রচেষ্টায় ঘেমে উঠেছিলো আমার শিশু-কপাল

তারপর ক্ষণে ক্ষণে শুনেছি আর জেনেছি!
অক্ষরসমূহের করুণ ব্যথার বিজয় ইতিহাস,
তখন দেখি রক্তের স্রোতে ভেসে যেতে চাইছে আমার
প্রাণোদ্যানের ঘুমিয়ে থাকা চারু সবুজের ঘন ঘাস

এরপর মিনারের সিঁড়িতে যখন দেখেছি
পড়ন্ত বেলার লাল সূর্যের রক্তিম আভা,
আর তার সাথে খুব মিল ঐ কৃষ্ণচূড়ার ডালের,
তখন ঠিক বুঝে নিয়েছি ,
এই স-ব কিছুই বেদনামুখর তৃপ্তির হাসি –
রফিক, জব্বার, বরকত আর সালামের

অক্ষরগুলোকে ঘিরে হওয়া রহস্য-রাত্রির
আজ হলো ঠিক প্রত্যুষ,
তবুও মন ভেজা স্বরে বলে ওঠে উফ্!
দেখা হলো না বায়ান্নের একুশ।।
_________________________
ফেব্রুয়ারি ২০১৪, কল্যাণপুর

চলমান কষ্টের হিসেব নিকেশ

খুব ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ফিলিস্তিন একদম ভাল নেই। তার কদিন পরই শুনলাম অনেক কষ্টের পর সামান্য সুখ অর্জন করেও নাকি আবার হারিয়ে ফেলেছে আফগান। এরপর ইরাককেও তো আর হাসতে দেখেনি বেশিদিন। আরাকানের কান্না তো এখনও গাল বেয়ে গড়িয়েই যাচ্ছে। সিরিয়ার আকাশে আগুনের ধোঁয়া তো আজও উড়েই বেড়াচ্ছে। আবার এদিকে কাশ্মীরকেও অনেক ছিঁড়েখুঁড়ে শেষমেশ একেবারে গিলেই ফেললো ভূতে।

সে যাই হোক, পৃথিবীর বড় একটা সুখি অংশ নিয়ে আমি কিন্তু বেশ ভালোই ছিলাম। এতটাই ‘ভাল’ ছিলাম যে ওসব দুঃখিত ভূখণ্ডের দুর্দশা কখনোই আমাকে খুব একটা দুঃখ দিতে পারেনি। ওসব ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু মানুষের কষ্ট আমাকে নিত্যনতুন সুখ অর্জনে কখনও কোনরকম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তাদের কান্নার আওয়াজ আমার রাতের ঘুমকে কোনদিন একটু হালকাও করতে পারেনি। আমি যে বড় ‘ব্যস্ত’ মানুষ। জীবন সাজাতে আমার যে ছিল অনেক কাজ। ওসব ভাবার সময় কী আমার ছিল! বলুন!!

কিন্তু আজ পুরো পৃথিবীটাই থমকে গেছে। উহান থেকে রোম, রোম থেকে মাদ্রিদ এমন কি প্যারিস, লন্ডন আর নিউওয়ার্কের মত ব্যতিব্যস্ত শহরগুলোও হঠাৎ কেমন ঝিমিয়ে পড়েছে। মক্কার শূন্য মাতাফের উপর হাহাকার করে তাওয়াফ করে বেড়াচ্ছে মুক্ত পাখির ঝাঁক। দিল্লির ট্রেনগুলো ছুটছে না, ঢাকার বাসগুলোও চলছে না। বন্ধ ওয়েডিং প্যালেসের ধুলো বালিতে আজ ঢেকে পড়েছে আমার সকল আনন্দের আয়োজন। উঁকি দিয়ে দিয়ে কেবল বেড়েই যাচ্ছে একটি চিন্তা আর একটিই ভয়। আমার জমিয়ে রাখা সুখগুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। আমি যেকোনো সময় মরে যেতে পারি।

মৃত্যুর এই চিন্তা আমাকে আজ খুব কষ্টে ফেলে দিয়েছে। আমার সকল ব্যস্ততা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। ঘুমটাও ঠিক আসছে না সময়মত। অসময়ে ঘুমালেও গলা শুকিয়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কী যেন হারিয়ে ফেলার আতঙ্কে। গলাটা ভেজাতে কাঁপাকাঁপা হাতে আমি পানি খাচ্ছি আর খুব অনুভব করছি আমার কষ্টটাকে। স্পষ্টই বুঝতে পারছি আজ দুঃখের কেমন ব্যথা আর কষ্টের কেমন যাতনা।

রাতজেগে আজ নিজের দুঃখ কষ্টের হিসেব করতে করতেই মনে পড়ল কিছুদিন আগের কথা এবং অনেকদিন আগের কথা। কিছু দেশের ধ্বংসের কথা আর অনেক মানুষের মৃত্যুর কথা। কত মায়ের আহাজারির কথা আর কত শিশুর কান্নার কথা। বিধবার দুঃখের কথা আর অনাহারীর কষ্টের কথা। হায়, এতদিন নিজের কী এমন ব্যস্ততায় তাদেরকে দেখেও আমি দেখিনি! হায়, কী নেশায় মত্ত হয়ে এতদিন তাদের কান্না শুনেও আমি শুনিনি!!

ভাবছি,
যদি তখন তাদের দুঃখের ভাগি হতাম তবে তাদের দুঃখ কিছুটাও বোধহয় কমাতে পারতাম! যদি সেদিন তাদের কষ্টের অংশিদার হতাম তবে আজকের কষ্ট থেকে হয়ত বাঁচলে বেঁচেও যেতে পারতাম!!
_________________________________
Magfur, 9 April 2020 Thursday
Nadwatul Ulama, Lucnow. UP

স্বাগতম

আফিফা নুসরাত নুহা

জীবনের প্রথম শিক্ষাবর্ষ হিসেবে নুহা এবার ক্লাস কেজিতে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং গড় অনুপাতে ২০ রোল নিয়ে সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তিও হয়েছে। এ কান্ডটা যেদিনই ঘটেছে সেদিন থেকেই তার সাথে শিক্ষা সম্বন্ধীয় কোন কথা বলতে গেলেই একরকম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বড় মামার সাথে প্রায়ই ভিডিও কনফারেন্সে নুহার বাতচিত হয়। তো সেই বাতচিতের ফাঁকে ধরুন তার মামা তার কাছে জানতে চায় যে, নুহা আজ পড়তে বসেছে কি না, স্কুলে গিয়েছিল কি না বা স্কুলে আজ কী কী পড়িয়েছে অথবা আগামী কালকের পড়া সে মুখস্থ করেছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। তো পড়ালেখা বিষয়ক এমন সকল প্রশ্নেই সে আজকাল কেবলমাত্র একটাই উত্তর দিচ্ছে।

‘মামা, এখন তো আমি আর কেজিতে না, এখন তো আমি ক্লাস ওয়ানে, ওয়ানে’ (২বার)।

তার মা জানালো যে, শুধু আমাকেই নয়, পড়াশোনা বিষয়ক যে কোন প্রশ্নেরই এই এক উত্তর নাকি সে আজকাল ঘরেবাইরে, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন সবাইকেই দিচ্ছে। শুধু কি তাই, তার রুলনম্বর ২০ হওয়ায় প্রতিবেশী তার যে সহপাঠিনী রোল ২ নিয়ে ভর্তি হয়েছে তাকে নিয়েও নাকি সে হাসিহাসি করছে, বলছে ‘আমার রুল বিশ আর ও মাত্র দুই! – হাহা হিহি’।

নুহার এই অগ্রযাত্রার অনাবিল আনন্দ আর শিশুমনে ফুলের মত ভুল হিসেব নিকেশ করে নিজেকে এগিয়ে রাখার এমন বাঁধভাঙা উচ্ছাস দেখে তার বড়মামা আজ সহস্র মাইল দূরে বসে হাসে আর ভাবে; এই তো, সেদিনই না নুহাটা পৃথিবীতে এলো?

শীতের ‘সেই’ বিকেলে তার মামা তাকে দেখতে গেল! দেখল; জ্বলজ্বলে জোনাকের মত ছোটছোট দুটি চোখ, ভোরের নতুন গোলাপের মত তার মুখ আর মোমের মত মোলায়েম একটা নতুন শিশু। সেই নতুন শিশুটিই কি আজকের নুহা! সিএমএইচের বেবি ওয়ার্ডে নানুর কোলে শুয়ে থাকা সেই তুলতুলে বেবিটাই কি আজ বিএফ শাহিনের কেজি উত্তীর্ণ ক্লাস ওয়ানের ছাত্রি!!! আহা, ভাবতেই বিস্ময় লাগে, বড় ভাল লাগে।

নুহার জন্মদিনে তার বড়মামা তাকে আর যাই কিছু দিক না দিক একটি ছড়াকবিতা অন্তত দিয়ে থাকে। মজার বিষয় হল নুহাকে নিয়ে লেখা সেই ছড়াকবিতা সমূহ নুহা মুখস্থও করেছে। শুধু তাই নয়, অপরিচিত কাউকে কাউকে সে এসব ছড়াকবিতা শুনিয়ে তাক লাগিয়ে তার কাছ থেকে উপহার ছিনিয়ে নেবার মত গল্পও নাকি সে রচনা করে ফেলেছে। বুঝলেন তো কান্ড!

তবে আশা করা যায় যে, খুব বেশিদিন আর তাকে নিয়ে তার বড়মামার এই ছড়াকর্ম সাধন করে যেতে হবে না। এখন নুহা পড়তে শিখছে, লিখতে জানছে। আগামী কোন এক জন্মদিন থেকে হয়ত নুহা নিজেই তার বড়মামা সহ সকলের জন্য নিয়মকরে ছড়াকবিতা লিখতে শুরু করবে। তেমন একটা দিনের স্বপ্ন বুকে নিয়েই তার বড়মামা নুহাকে তার জীবনের এই সপ্তম বছরে স্বাগতম জানিয়েছে…

[ সাতে স্বাগতম ]

দিন ডুবে যায় রাতের ভেতর
রাত মুছে যায় প্রাতে
দেখতে দেখতে গুনতে গুনতে
আজকে নুহা সাতে।

সাত মানে তো অনেক বড়
দেখো না চোখ মেলে
সাতটা আকাশ সাতটা জমিন
এমন কিছুই বলে!

তোমার বলায় তোমার চলায়
সাতটাকে আজ ধরো
খোদার নামে নতুন দমে
নিজেকে আজ গড়ো।

বিশের চেয়ে দুই তো ছোট
তবুও হিসেব করো
রোলের খাতায় দুই কেন ফের
বিশের চেয়েও বড়!

অনেক পড়ো অনেক লেখো
অনেককিছু শেখো
মন্দ ভালোর ফারাক জেনে
সাবধানে পা রেখো!

কথায় না আজ কাজেও তোমার
জানুক সকল জনে
এখন তুমি ‘কেজি’তে নও
পড়ছো যে ক্লাস ওয়ানে।
_

আহমাদ মাগফুর – ০২।০২।২০২০
নদওয়াতুল উলামা, লাখনৌ

হারিয়ে তোমায় ভালবাসি আজ

হারিয়ে তোমায় ভালবাসি আজ

তুমি যে কী ছিলে আমার
ওগো বুঝে এল ঠিক তোমাকে
হুটকরে ছেড়ে আসবার পর,
দরিদ্র অভাবী তোমার বুকেই যে
রয়ে গেছে আমার ফেলে আসা
ঘোরলাগা স্বপ্নের সোনালী শহর

শহরের চিরচেনা পথঘাট সেই পুরনো
গলি, গলির মাথার মসজিদ আর
তার পাশে সাদা ধবধবে চুনমাখা বাড়ি,
বাড়ি ভরা মানুষের কলরব, আব্বার
ধমক আম্মার আদর, ভাইবোনের খুনসুটি
রিক্সার টুংটাং আর কিছু ফেরিওয়ালার গাড়ি

প্রেমিকার যে এলাকা, সেও তো ছেড়ে গেছি
তোমারই কোলে, তোমার মাটিতেই তো সে
হাঁটছে কিংবা ঘাসের উপর বসছে, শীতের
এমন ভূমিকা স্বরূপ আজ নামল যে কুয়াশা
হেমন্তের বাতাসে, কে জানে তার ভেজা আবেশে
অনিচ্ছায় সে আমায় নিয়ে কী কথা ভাবছে

আজও হয়ত তোমার ভোরেই জেগে ওঠছে
অনভিজ্ঞ আরো কোটি প্রাণ, তারা জাগছে আর
ভাবছে তুমি নিরীহ অসহায়, অনেক হয়েছে
আর নয় এবার যেতে হবে ‘তোমাকে’ ছেড়ে,
কেবল দূরের সকালে আমিই জানছি তুমি
নাই, তাই পুরান সুখেরা ডাকে শুধু হাত নেড়ে

যখন ছিলাম তখন তোমায় আমিও তো করেছি
হেলা, চোখ তুলে দেখেনি তোমায় জেনেছি তুচ্ছ
ভেবেছি অজ্ঞানে মহাবিশ্বে তুমি কেবলই ‘আনাড়ি’, আজ শত সহস্র দূরে এসে একাএকা বসে কী যে মনোরম লাগে দেখে তোমার গাঢ় সবুজের জমিনে লাল রক্তের বৃত্ত এঁকে উড়তে থাকা সেই শাড়ী

তোমাকে ছেড়ে এসেই মূলত আজ তোমার প্রকৃত প্রেমে পড়ে গেছি, ভুলে গেছি অতীতের সব পাওয়া না পাওয়ার দুঃখ আর পুরনো যতসব হিসেব নিকেশ,
তোমাকে দূরে রেখে খোদার কসম
আজ মন ভাল নেই প্রিয় বাংলাদেশ।

‘আম্মা, আমার জ্বর আসছে’

পৃথিবীর যেখানেই তুমি থাকো, জ্বর এলে তোমার ঠিক একই রকম অনুভূতি হবে। যে অনুভূতি তোমার বেশ পুরনো। যে অনুভূতি তোমার খুবই পরিচিত। চুলোর উপরে ফুটতে থাকা ভাতের পাতিলের ঢাকনা কাঁপতে কাঁপতে তার ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বাষ্পের মত মনে হতে থাকবে তোমার প্রতিটি শ্বাস নিঃশ্বাস। যে খাবারই মুখে নেবে তুমি মনে হবে লবনটা খানিক বেশি হয়ে গেছে বোধহয়, কিংবা লবন দিতেই ভুলে গেছে সারাদিন সংসার গুছানো আম্মাটা।

চোখ মেলে যাই দেখবে তুমি তার উপর ছড়িয়ে থাকবে মিহিন একটা হলদে রঙের আভা। পুরোটা ঘর, জানালার ওপারের আকাশ আর সমস্ত গাছগাছালি ছেয়ে থাকবে সেই মিহিন হলুদের আলো। বেলকনির গ্রীল ছুঁয়ে আসা বাতাস কিংবা মাথার উপর ঘুরতে থাকা একঘেয়ে পাখার বাতাসটাও মনে হবে ফ্রীজের বরফ ভেঙে ভেঙে তোমার মুখের উপর অসহনীয় হয়ে ঝড়ে পড়ছে।

আর অতীতের সকল জ্বরের দিনগুলো একে একে তোমার মনে পড়তে থাকবে। মনে পড়তে থাকবে মাগরীবের পর একদিন সবাই সবক মুখস্ত করছিল আর তুমি এক পাশে একটা তোষকের উপর শুয়েছিলে। তোমার জ্বরাক্রান্ত গরম চোখের পানিতে গাল ভাসিয়ে তুমি সেই হেফজখানার সন্ধ্যায় ভাবছিলে মূলত তোমার আম্মার কথা। মনে পড়বে তোমার এক জ্বরের রাতে তোমার মামা তোমার জন্য সন্দেশ নিয়ে এসেছিলো একটা বাদামী রঙের ঠোঙ্গায় করে। মনে পড়বে জ্বরে ভরা এক বর্ষার মধ্যরাতে তোমার বড়কাকা; যাকে তুমি খুব ভয় করতে তার কাঁধেই মাথা রেখে নেতিয়ে পড়ে ছিলে তুমি। আর উঠানের পাশে আসা বর্ষার পানিতে বড়কাকা তোমাকে টর্চ জ্বেলে দেখাচ্ছিল মাছ কী করে ঘুমায়।

এভাবেই তোমার মনে পড়তে থাকবে আরও অনেককিছু। এগুলো ভাবতে ভাবতেই তুমি হঠাৎ খুব বিরক্ত হয়ে উঠবে তোমার নিকটবর্তী কোন শব্দের যন্ত্রণায়। কারন আশে পাশের খুব ছোটছোট শব্দ গুলোও তোমার কানে এসে অহরহ বারি খেয়ে যেতে থাকবে। কেউ কাউকে ডাকার শব্দ, থালাবাসন রাখার শব্দ, কিংবা রাস্তায় চলাচল করা রিক্সার টুংটাং বেল কিংবা প্রতিবেশীদের হাসিহাসির আওয়াজগুলোও খুব সূক্ষ্ম সূচের মত তোমার কানের পর্দায় এসে বিঁধতে থাকবে। এই সচরাচর আর অতি সাধারণ আওয়াজগুলোও তোমাকে বড্ড যন্ত্রণা দেবে। কারন এসব কোন আওয়াজের সাথেই তুমি প্রতিদিনকার মত আজ আর মিশে যেতে পারছো না। এলোমেলো বাসি বিছানাটা তোমাকে কেমন যেন কারাগারের মতই আটকে রেখেছে। এই কারাগারে কোন তালা নেই তবুও কেন যেন তুমি বেরিয়ে পড়তে পারছো না। মুক্ত এই কারাগারের জীবনটা তালাবদ্ধ কারাগারের চেয়েও কঠিন মনে হতে থাকবে। সময়টাকে মনে হতে থাকবে কেবলই করুণ একটা মহাকাল। বিছানার পাশের রুটির প্যাকেট, ফলের বাটি আর দুধের গ্লাসটা তোমাকে আরও যেন বিষণ্ণ করে তুলবে। প্যারাসিটামলের পাতাটাকে মনে হবে বিষণ্ণতা পেরোনোর ভাঙাচোরা কিন্তু প্রয়োজনীয় একটা মই।

তখন জ্বরের সময়। তখন কিছুই আর ভাল লাগবে না তোমার। নিত্যদিনের পরিচিত পুরো পৃথিবীটাকেই কেবল প্রতিপক্ষ মনে হতে থাকবে। তখন ভালো লাগবে শুধু তোমার গরম কপালে প্রিয় জনের ঠান্ডা একটা হাত। ঘোরলাগা জ্বরের হলুদ পৃথিবীতে শুধু তোমারই জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া একটা মুখ। যেই হাতটা তোমার আম্মার। যেই মুখটা তোমার আব্বার। তোমার বোনের, তোমার ভায়ের কিংবা আরও কোন প্রিয় জনের…

একজন নিজাম ভাই এবং আমার খিদের গল্প

ছবিতে আহমাদ মাগফুর।নজরুল মঞ্চে ২০১৫ এর বইমেলায়। আফসার নিজামের তোলা।

অতীতের অসংখ্য গাঢ়তর বিষয়কেও বর্তমানে এসে অনেকের কাছে হালকা লাগতে পারে। তবে সত্য হল, আজকের এই হালকা বিষয়টাই অতীতের সেই উপস্থিত সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই অতীত আমার কাছে বরাবরই উৎসাহের বিষয়। দিনের পর দিন যায়, তবুও এই উৎসাহ আমার কমে না। বর্তমানের চেয়েও আড়ম্বরপূর্ণ এক অনন্য আবহে, ভেতরে আমার বেঁচে থাকে শুধু অতীত, অতীতের সব ছবি।

উন্মেষ আমার জীবনে তেমনই এক দারুণ অতীত। ভাবতেই অবাক লাগে সেই সময়টার কথা। চার পাঁচটা তরুণ। যারা সদ্য মাত্র কৈশর পেরিয়েছে। তারা একটি সাহিত্যের লিটলম্যাগ বের করছে। প্রথমটা হাতে লিখে বেরিয়েছে। দ্বিতীয়টা কম্পোজ আর ফটোস্ট্যাট। তৃতীয়টাই প্রেসের ঝকঝকে ছাপায়। পত্রিকাটাই যে শুধু তরতর করে এগিয়ে গেছে তাই নয়। এগিয়ে গেছে রাতজাগা অসংখ্য আলাপ, আড্ডা, গল্প, কবিতা আরও কত কত স্বপ্ন!

সব রাত্রিই সকাল হয়। সব গল্পই ফুরায়। সব স্বপ্নও তাই ভেঙে যায়। যেতে হয়। এই নিয়ম মেনেই বোধকরি উন্মেষ একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত এক মহাবিরতির স্টেশানে ঘুমিয়ে পড়ে। সবাই এই ঘুমকে মৃত্যু বলতে চাইলেও আমি মনেমনে মানতে পারিনি। তাই উন্মেষ’র এই ঘুম ভাঙাতে আমি আমার সবটুকু সুর দিয়ে ঘুমভাঙানির গান গাইতে চেয়েছি। উন্মেষকে জাগাতে চেয়েছি। ঘুম যখন ভাঙলই না, তখন মনকে বলেছি; থাক, ঘুমিয়েছে ঘুমোক, ছেড়ে দিলাম। তাকে মহা বিরতি দিলাম। তবুও মৃত বলতে রাজি হলাম না।

উন্মেষ’কে নিয়ে যখন একা হয়ে পড়েছিলাম, তখনকার সময়ের ছোট্ট একটা গল্প। নিজাম ভাইয়ের গল্প। খিদের গল্প।

আল কাউসারে ছিল আমাদের মাসিক ছুটি। দুইদিন। এই ছোট্ট ছুটিতেই পত্রিকার সবটুকু কাজ করতে হত। তেমনি এক মাসিক ছুটির দুপুরবেলা কাজে বেরোতে যাবো। তখনই একজন শিক্ষক ডেকে নিয়ে তাঁর ব্যাঙ্কের কিছু কাজ দিয়ে দিলেন। সেই কাজ শেষ করতে করতে আমার সারাটা দুপুর চলে গেল। খিদায় পেট লেগে যাচ্ছে। এদিকে পত্রিকার কাজও কিছু হয়নি। কোন কাজটা করবো! বিজ্ঞাপন নাকি মেকআপ! নাকি প্রুফ? নাকি বাসায় চলে যাব, কিছুই বুঝে আসছে না।

এমনই যখন অবস্থা। তখন কী মনে করে যেন হাঁটা দিলাম নিজাম ভাইয়ের অফিসের দিকে। যেতে যেতে ভাবলাম; তিনি যদি পত্রিকার কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, বিজ্ঞাপন/লেখা/ছাপাখানার খোঁজ, যেকোনো একটা হলেই হল।

নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই বল্লাম; আজ তো বৃহস্পতিবার না, বিপরীত’র আড্ডাও নাই, তবুও চলে আসলাম। নিজাম ভাই অভিযোগের স্বরে বললেন, আরে, তোমার সাথে কি আমার আড্ডার সম্পর্ক নাকি, তুমি যেকোনো দিন, যখন ইচ্ছা আসবা। সাথে সাথেই জানতে চাইলেন, দুপুরে খেয়েছি কি না। আমি হালকা করে মাথা নেড়ে প্রসঙ্গ পালটাতে গিয়ে বললাম, নিজাম ভাই, পত্রিকার কাজের বিষয়ে আসছিলাম। তিনি নরম করে ধমক দিয়ে বললেন, চলো চলো, আগে খাবা। কাজ টাজ কী আছে সব পরে হবে।

অসম্ভব খিদে ছিলো। ক্যান্টিনে বসে তারপর আমি রুই মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছি। নিজাম ভাই বসে আছেন আমার মুখোমুখি। তিনি দুপুরের খাবার অনেক আগেই সেরেছেন। এখন বসে আছেন আমাকে সঙ্গ দিতে। আমি যেন অস্বস্তিতে না পড়ি তাই তিনি নিজের জন্য চা’য়ের অর্ডার করেছেন। চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার সঙ্গে টুকটাক গল্প করছেন। তার দিকে চোখ তুলতেই তিনি জানতে চাইলেন, আর কিছু লাগবে কি না। আমি বললাম, না। কিন্তু মনেমনে বললাম, লাগবে। অবশ্যই লাগবে। শুধু প্রিয়জন নয়, প্রিয়জনের খিদে অনুভব করার মত জগতে আপনার মত অসংখ্য আফসার নিজাম লাগবে।

আজ বিশ’ই ফেব্রুয়ারি। আফসার নিজাম ভাইয়ের জন্মদিন। সারাদিন অসংখ্য মানুষ তাকে নানান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এখন এই শেষবেলা এসে আমি সেসব পড়ছি। আর ভাবছি; শুভেচ্ছা আর কী জানাবো, কৃতজ্ঞতাই তো কত জানানোর বাকি। দুয়া করি, নিজাম ভাই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। তার পরবর্তী প্রজন্মও ভালোবাসা আর আদর্শিকতায় তাকে ছাড়িয়ে যাক। তার মত আরও অসংখ্য ‘নিজাম’ এর হাত ধরে পৃথিবীটা ভালবাসার পথে এগিয়ে যাক!

পুনশ্চ :
খাবার শেষ করেই নিজাম ভাই সেদিন আমাকে ছেড়ে দেন নি। পত্রিকার জন্য তিনি আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। প্রুফ, মেকাপ, কভার থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন কি রাত জেগে উন্মেষের বর্তমান অসাধারণ লোগোটিও তিনি আমাদের জন্য করে দিয়েছিলেন।

ছবি :
দুই বছর ধরে বইমেলায় যাই না। পনের’র বই মেলায় নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে গিয়ে তিনি বললেন, বন্ধুর (নজরুলের) গলায় হাত রেখে দাঁড়াও তো, দুজনের একটা ছবি তুলে দিই!

এভাবেই চিনেছি সময়

এভাবেই চিনেছি সময়

পুবাকাশের নতুন সূর্য
শিউলিময়ী ভোরের,
কাঁচ-গুড়ো মিহি শিশিরের ফোঁটা
নব জাতক কোন ফুলের।

কাঁচা রৌদ্রের মিষ্টি আভাস
ঘুম ভাঙ্গা খোলা জানালার,
দীপ্তির আবেশে স্বপ্নিল আকাশ
খাঁচা ভেঙ্গে উড়া বলাকার।

পূর্বাহ্নের তরুণ রৌদ্র
চির শুভ্রপুষ্প কামিনীর
তাকে ঘেরা নীল অন্তরীক্ষ
শাড়ী হয়ে আছে লাবণীর।

মধ্যবেলার প্রখর সূর্য
অস্থির ছবি সুদানের,
তার থেকে ঝরা গরমের তাপ
ধান শুকাতে দেয়া উঠানের।

ক্লান্ত দুপুরে বটের ছায়া
শ্রান্ত কোন পথিকের
মলিন রোদে-মিনারে রক্তের ছোপ
ভাষা সৈনিক রফিকের।

পড়ন্ত বেলার অগ্নি-বৃত্ত
কপালের টিপ সায়মার,
বিকেলের কড়া লালিমার আভা,
কৃষ্ণচুড়ার প্রশাখার।

লাল সূর্যের ডুবে যাওয়া দৃশ্য
উদাস কোন গোধুলীর,
হবু সন্ধ্যার করুণ চাহনি
চাপা ব্যথা কোন তরুণীর।

আঁধারেতে আলো হারাবার খেলা
লুট হওয়া হিরে-দানি,
ঠিক তখনের ঘরে ফেরা কাক
আঁধারের হাতছানি।

পশ্চিমে জ্বলা শুকতারাটি
দিকহারা কোন নাবিকের,
এরপর বাড়ে আঁধারের জাল
ষড়যন্ত্রের মত নারীদের।

জ্যোৎস্নায় ভরা রেশমের চাঁদ
মায়াভরা কোন রাত্রির,
বাগানেতে ফোটা নব ফুলকলি
নাতি লাগে নয়া পাত্রীর।

মাঝরাতে থামা ঘন নিরবতা
মনে জমা শত দুরাশার,
তার মাঝে বওয়া শীতের বাতাস
ঝরে পড়া জল কুয়াশার।

কালো আকাশেতে তারকার মেলা,
আলো নীল রাশি জোনাকির,
বাঁশঝাড় ওঠা ঝিঁঝিঁর ঐ গান
সুর যেন কোন ধ্রুপদীর।

আঁধারের ছবি বিদায়ের কালে
ছলছল আঁখি নাফিসার,
নিশীথের শেষে মিথ্যের আলো
শেষ লাইন নিশি-কবিতার।
_____________________

জান্নাতী

মাগফুর
আহমাদ মাগফুর এর জান্নাতী

‘জান্নাতী’

তুমি আমার “জান্নাতী” এক নাম
মাটির ধরায় বেহেশতী এক ফুল,
তোমায় ছুঁতে মিটাই কিসের দাম
নামই তোমার স্বর্গ – সমতুল।

জীবন্তিকা হোক না যতই ছোট
মনের ভেতর হাজার দাবিদাওয়া,
তুমি আমার সকল দাবির মাঝে
ঝিনুক ভেঙে নতুন কিছু চাওয়া।

দূরত্ব আর ব্যবধানে থেকেও
বুকে আমার দাগ টেনে যাও খুবি,
ধাপ মেলে না যদিও তোমার সাথে
আমি তবু তোমার জলেই ডুবি।

স্বর্গ-সুখের স্থায়িত্বকাল খুঁজি
উড়াল-তারে যখন তুমি হাসো,
নিরব হলেই অবুঝ লাগে রোজ’ই
কেন্ যে তুমি একলা অমন ভাসো।

শরীর থেকে দূরে আছো, থাকো
হৃদয় ছেড়ে যেয়ো না আর মেয়ে,
তুমি কি আর মনের ভাষা পড়ো
মনটা তোমার শক্ত লোহার চেয়ে।

শিউলিফুলে শিশির পড়ার মত
তোমায় তো খুব যতন করেই চাই,
তুমি দেখাও কৃষ্ণ-কাঁটার পথ
উড়ে যেথায় স্বপ্ন পুড়ার ছাই।

সেই ভাবনায় পাথর হয়ে থাকো
আমিই একা স্বপ্ন-কমল আঁকি,
ভুলেও যদি পুষ্প হয়ে হাসো
আমি কেবল সে আশাতেই থাকি।

প্রতীক্ষাটা যদিও মরুর মত
সেই ভূমিতে ক্যাকটাসও তো থাকে,
বারুদজ্বলা বালুপথের ক্ষতে
কাঁটাগাছও শরাব ধরে রাখে।

তবুও যদি পাথর হয়েই থাকো
আমি হবো নির্ঝরিণী’র ঢল,
সারাটাক্ষণ তোমার উপর ঝরে
গড়বো প্রেমের কুসুম-সমতল।

-রামপুরা ঢাকা
৮ই অগাস্ট ২০১৭