মোঃ সফি উদ্দীন এর সকল পোস্ট

ভালোবাসার কাব্য – বাইশ

শিপ্রা, কোনদিন যদি দেখা হয়ে যায়
শপিং কমপ্লেক্সে, বাসে-ট্রেনে, বই মেলায়,
কিম্বা আশুলিয়ায় বটবৃক্ষ ছায়ায়,
সেদিন আদৌ চিনবে কি আমায়!

শিপ্রা, কোনদিন যদি দেখা হয়ে যায়
লন্ডন, টরন্টো, ক্যালিফোর্নিয়ায়,
উইন্ডসর, ওয়াটারলু কিম্বা ভার্জিনিয়ায়,
সেদিন আদৌ চিনবে কি আমায়!

শিপ্রা, কোনদিন যদি দেখা হয়ে যায়
শ্রাবণধারায় বৃষ্টির অঝর কান্নায়,
কিম্বা চৈত্রের খরতাপে আজন্ম তৃষ্ণায়
সেদিন আদৌ চিনবে কি আমায়!

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – একুশ

শিপ্রা, এইখানে
বুকের ঠিক বামদিকটাতে
একটু রাখো হাত-
টের পাচ্ছো
এইখানে একটি হৃদয়
তোমার জন্যে তুমিময়।
শিপ্রা, এইখানে
বুকের ঠিক বামদিকটাতে
একটু পাতো কান-
শুনতে পাচ্ছো
এইখানে একটি হৃদয়
শুধু তোমারি কথা কয়।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – বিশ

গ্রীষ্মের খর তাপে
পাঠালাম তৃষ্ণা অন্তহারা,
তুমি তারে দিয়ো
বুকের ঝরনা ধারা।

বরষার শ্যামল মেঘে
পাঠালাম বুকের কান্না,
তুমি তারে দিয়ো
চোখের প্রিয় আঙিনা।

শরতের শান্ত জ্যোৎস্নায়
পাঠালাম হৃদয়ের উষ্ণতা,
তুমি তারে দিয়ো
ঠোঁটের মধুর মৌনতা।

হেমন্তের মৃদুমন্দ বায়
পাঠালাম নবযৌবনের আহবান,
তুমি তারে দিয়ো
কণ্ঠের সকল প্রিয়তান।

শীতের ঘন কুয়াশায়
পাঠালাম বিষন্ন অভিমান,
তুমি তারে দিয়ো
অনুরাগের কিছু গান।

বসন্তের সোনালি রোদে
পাঠালাম একটু ভালোবাসা,
তুমি তারে দিয়ো
মৃত্যুঞ্জয়ীর চিরঞ্জীব ভাষা।

ভালোবাসার কাব্য – ঊনিশ

আজ রাতে আমি কোথাও যাবো না
শুধু তোমার দুঃখগুলো ছুঁয়ে থাকবো।

আজ রাতে তোমার দুঃখগুলো
যদি চোখের নদী হয়ে যায়,
আমি সেই নদী ছুঁয়ে থাকবো
কফিনের নীরব নিথর শূন্যতায়।

আজ রাতে তোমার দুঃখগুলো
যদি অধরের জড়তা হয়ে যায়
আমি সেই জড়তা ছুঁয়ে থাকবো
কফিনের নীরব নিথর শূন্যতায়।

আজ রাতে তোমার দুঃখগুলো
যদি হৃদয়ের স্থবিরতা হয়ে যায়
আমি সেই স্থবিরতা ছুঁয়ে থাকবো
কফিনের নীরব নিথর শূন্যতায়।

আজ রাতে তোমার দুঃখগুলো
যদি স্তনের বিষণ্নতা হয়ে যায়
আমি সেই বিষণ্নতা ছুঁয়ে থাকবো
কফিনের নীরব নিথর শূন্যতায়।

আজ রাতে তোমার দুঃখগুলো
যদি যোনির অন্ধকার হয়ে যায়,
আমি সেই অন্ধকার ছুঁয়ে থাকবো
কফিনের নীরব নিথর শূন্যতায়।

আজ রাতে আমি কোথাও যাবো না
শুধু তোমার দুঃখগুলো ছুঁয়ে থাকবো।

ভালোবাসার কাব্য – আঠারো

চোখের দর্পণে দেখি-
ভেঙে যাচ্ছে বিশ্ববিধাত্রী,
মুছে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ,
গলে যাচ্ছে নীলিমার শান্তিঃ
আদিগন্ত প্রলয়ের মাঝে
জেগে থেকে শিপ্রার মুখ
দুঃখভরা শীর্ণ বুকে
ছড়ায় নীল জোস্নার সুখ।

ভালোবাসার কাব্য – সতেরো

শিপ্রা,
আমার মৃত্যুর পর
আমাকে খুঁজে পাবে না
আমার বর্তমান ঠিকানায়;
ঢাকা, বাংগি বা কোটাকিনাবালু
অথবা ডাবলিন, উইন্ডসর
কিম্বা ওয়াটারলু, কুয়ালালামপুর
কোথাও পাবেনা আমায়।
যদি কখনো সময় হয়
নীরবে খুঁজো আমায়
তোমার চোখের বারান্দায়
কিম্বা বুকের অলিন্দে-
ভালোবাসায়।

ভালোবাসার কাব্য – ষোল

যখন কবিতা লিখতে বসি
খুঁজে ফিরি শব্দ–সুখ
আর ছন্দের পাঁচালী,
তুমি এসে আমার সামনে দাঁড়াওঃ
আমার সমস্ত অস্তিত্বে টের পাই
তোমার নান্দনিক বিচরণ-
এজন্যে যখনি কবিতা লিখতে বসি,
কলম আর কাগজের সঙ্গমে
যে কবিতা জন্ম নেয়,
সে তুমি, শিপ্রা।

ভালোবাসার কাব্য – পনের

শিপ্রা, তুমি কাছে এসো না,
দূরে চলে যাও, দুঃখ দিয়ো না –
তুমি কাছে এলেই আমার শরীর
অপার বিস্ময়ে আর্তনাদ করে উঠে,
সমস্ত বোধ চেতনার সারাৎসারে
খুঁজে ফিরে বেঁচে থাকার মানে।
শিপ্রা, তুমি কাছে এসো না
দূরে চলে যাও, দুঃখ দিয়ো না।

ভালোবাসার কাব্য – চৌদ্দ

সূর্য ডুবে গেলে
অন্ধকারকে থাবার মধ্যে নিয়ে
বিড়াল যেমন সারারাত খেলা করে,
আমারও ইচ্ছে ছিলো
তোমার সঙ্গে তেমনি করে
সমস্ত রাত খেলা করি।

ভালোবাসার কাব্য – তেরো

ভোরের সোনালী রোদে
শালিখের বিবর্ণ ঠোঁট
খুঁজে নেয় কাকে?
জানিবার আকাঙ্খা চোখে নিয়ে
নির্জনে বলেছি তোমায়ঃ
আমারও সাধ হয়
ভোরের সোনালী রোদে
শালিখের মতো হলুদ ঠোঁটে
খুঁজে নেই তোমাকে।

ভালোবাসার কাব্য – এগারো

ভালোবাসা,
তোমার বয়স কত হলো?
কতকাল পেরিয়ে তুমি
ঘুলঘুলির অন্ধকারে
স্তব্ধ হয়ে আছো!
ভালোবাসা,
এখন তুমি কেবলি
সন্ধ্যার শুনশান নীরবতা!
ভালোবাসা,
তোমার বয়স কত হলো?

ভালোবাসার কাব্য – নয়

সূর্য ডুবে গেলে কান্তারে,
চুপি চুপি বলিলাম তাহারেঃ
এবার কী হয়েছে সময়?
পারি কী যেতে পরবাসে
মৃত্যুর সাথে পরম আশ্বাসে?
সে বলিলোঃ কক্ষনো নয়,
সূর্যের মৃত্যু হলে হতে পারে
তবু তুমি জেগে রবে অন্ধকারে।

কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’

অনেক নক্ষত্র ঝরে যায় পৃথিবীর উপত্যকায়,
অনেক মেঘ মরে যায় আকাশের শূন্যতায়;
বুকের গভীরে বাজে শুধু করুন বাঁশি,
কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’।

পথ চলতে চলতে নদীও হয় ক্লান্ত,
কচুরিপানার ভীড়ে জলের গান তাই পরিশ্রান্ত;
কপোলের টোলে আর হাসে না হাসি,
কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’।

বলাকার পালকে হারায় বিকেলের ব্যথিত রোদ,
পাঁজরে পাঁজরে বয়স নিয়েছে নিষ্ঠুর শোধ;
নির্জনে একা একা বসে আজ হতাশায় ভাসি,
কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’।

সুদর্শন নিয়ে যায় সন্ধ্যার সকল সময়,
সাধের এ জীবন পৃথিবীর পথে হয় ক্ষয়;
চোখের কোলে স্বপ্ন ভাঙে দুরন্ত বানভাসি,
কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’।

জ্যোৎস্নায় কাঁদে শিশির ঝরা পাতার গানে,
এ মন উচাটন হারায় জোনাকির প্রাণে;
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ধূসর অন্ধকার সর্বগ্রাসি,
কখনো হলো না বলা তাকে ‘ভালোবাসি’।