মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন এর সকল পোস্ট

স্বজাতির ভুলে প্রতিশোধের মালা আমারই গলে-

দেবদারু তলায় প্রায় দেখা হতো এক বৈষ্ণবীর সনে
ব্রত ছিল তার মজিবে না আর কোন পুরুষ প্রেমে;
ছিল এক বামন ঠাকুর; কেঁড়ে নিল তার সব জীবন-যৌবন
সে হতে বৈষ্ণবী; ঘুরে দেশে দেশে, নিয়ে সন্ন্যাসি মন ।

ভাঙতে বৈষ্ণবীর ভ্রম, সেজেছিলাম সাধুজন
ব্রত নিয়েছিলাম কভু হানিবো না আঘাত, হবো বিশ্বাসী জন
কাজে-অকাজে ছুটে যেতাম দেবদারু তলে
প্রায়শ দেখা হয়ে যেত বৈষ্ণবীর সনে ।

জানি না কীসের ছলে, এ পথকেই সে নিল আপন করে
আমার আসতে হতো দেরি; তবু বৈষ্ণবী থাকতো অপেক্ষাতে,
যবে বৈষ্ণবী বুঝে নিয়েছে পুরোপুরি আমি মজেছি তার প্রেমে
তখনি কেটে পড়েছে; বামন ঠাকুরের প্রতিশোধ আমাকে দিয়ে নেবে বলে !

অনন্ত পথের সন্ধানে-

হবো এবার বিসুভিয়াসের অগ্নি উদগিরিনী বান
পুড়ে যাবে যত জ্বালা যন্ত্রণা; হবো অনির্বান-
কুইনান গিলে নেবো, অমৃত সুধা মেলেনি যখন;
নিরন্তর মরুর বুকে হেটে চলি উদ্ভ্রান্ত পথিক যেমন।

সীমাহীন অনন্ত পথে হতে পারিনি অসীম
আটকে গেছি তোমার মায়া জালে, পরিসর অতি সসীম
আমার আমি হতে পারিনি আমার মত করে,
আমি যে আবদ্ধ আজ তোমার সংকীর্ণ বাহুডোরে।

খুলে দাও বাহুডোর, মেলিবো ডানা; মুক্ত আকাশে
পাড়ি দেবো অসীম পাথারে, নিজেকে ভালোবেসে-
নীল তিমি যেমন পাড়ি দেয় এক সাগর থেকে অন্য সাগরে
ধেয়ে চলে অনন্ত পথে স্বাধীন চিত্তের পরিচয়ে।

আমার আমি আজ হবো প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের মত
লন্ডভন্ড হয়ে যাবে যাক ভীতু দুর্বল যত!
সমুদ্রের তলদেশের কম্পনে, মিশে যাক পাথর দেয়াল
বিলীন হয়ে যাক অনিয়মে গড়ে ওঠা শত বেড়া জাল।

মহাযাত্রার যাত্রী হবো না আমি আজ; যাত্রার মাঝ পথে
আমি যে নেমেছি অনন্ত পথে, দেখে যেতে চাই কি আছে পথের শেষে!

এসো তারুণ্যের চেতনায় গড়ি বাংলাদেশ

এসো আবার তারুণ্য দীপ্তকণ্ঠে করি উচ্চারণ-
এই মাটি আমার
এই ভূখন্ড আমাদের চেতনার দামে কেনা
প্রতিটি ইঞ্চির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে হবে আমাদের।
চাই না কোন সান্ত্রি কাপুরুষের আস্ফালন-
কান পেতে আজো শুনতে পাই, নুরলদিনের আর্তচিৎকার ‘জাগো বাহে…’
চোখ বুজলেই দেখতে পাই আসাদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ
ভেসে ওঠে চোখের সামনে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তস্নান করা পবিত্র বাংলাদেশ।

মেঘে মেঘে আজ হয়েছে অনেক বেলা
এসো আবার মিলিত হই তারুণ্যের মোহনায়।
ডাকছে তোমায় নুরলদিন, শোনো সম্ভ্রম হারানো মায়ের আর্তচিৎকার
চেয়ে দেখো, আকাশে আজো দুলছে আসাদের রক্তমাখা সেই জামা!
হাতছানিতে বলছে নবপ্রজন্ম, শান্তির নীড় চাই, শান্তির নীড়;
অর্থনৈতিক মুক্তি চাই; অর্থনৈতিক মুক্তি
স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই; স্বাভাবিক মৃত্যুর।

অগ্রজ বীরপুরুষ আমাদের দিয়েছে ভিটে মাটির স্বাধীনতা
এসো তরুণ, আমরা আজ ছিনিয়ে আনিব শান্তির বারতা ।

বন্ধুত্ব-

তুই কি আমায় বাসবি ভালো শর্ত ছেড়ে মুক্ত মনে
তুই কি আমার সঙ্গী হবি দুর্যোগে আর জলোচ্ছ্বাসে
হৃদয়ে জমিন বিছিয়ে দিবি; স্বর্গ সুখে ঘুমিয়ে নিতে
আমার চাওয়া, তোর চাওয়াতে মিলে মিশে পথ দেখাবে।

বন্ধু, আমি ডাকছি তোমায়-
বাধার দেয়াল ছিন্ন করে আয় ছুটে আয়,
ছুটবো দুজন উল্কা বেগে; অতৃপ্তিকে পেছনে ফেলে
স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ফুঁড়ে, দেখবো সজীব পৃথিবীকে।

বন্ধু, আমি বিজন রাতে ডাকবো তোমায় সংগোপনে
সময়ের যতি ভুলে গিয়ে আসবি ছুটে, ক্লান্তি ভুলে
দেখবে জগৎ অবাক চোখে দুটো আত্মা এক সাগরে
সুখের নদে কাটছে সাঁতার যন্ত্রণাকে ভুলে গিয়ে।

বন্ধু আমরা এক কামনাতে বসত করবো এক নগরে
মতের অমিল বিসর্জনে অমর হবো পৃথিবীতে
তোর আত্মাতে আমার তবে বসত হবে
সুখে দুখে এক আত্মাতে পাড়ি দেব ওপারেতে।

অম্লান ক্যানভাস

ইদানিং ঘুমের ঘোরে জেগে উঠি বার বার
আধো আলো-ছায়ায় ভেসে কিছুটা অন্ধকার;
মোহ নয়, সে তো ভালোবাসা শুধুই বন্ধুত্বের
সেই সোনালি দিনে ফিরে যেতে চাই আবার।

ফিরে এসো বন্ধু ছিন্ন করি রূঢ় বাস্তবতার শিকল
যন্ত্রদানবের যান্ত্রিকতা ভেঙে দিতে হই সবল,
চেয়ে দেখো ঘাসফড়িং এখনো খুঁজে কচি কিশলয়
মোহমুগ্ধ বিমোহিত শ্বেত বলাকা নিমজ্জিত নয় হতাশায়।

আমাদের রেখে যাওয়া শালিক যুগল এখনো প্রতীক্ষায়
আসবে সোনালি ভোর, নিয়ে কোন নতুন বারতায়
পশ্চিম থেকে পূবে ঘুরেছি অহর্নিশ স্বপ্ন ঘোরে
কোথাও পায়নি দেখা সখা কিংবা সখি তোমার মত করে।

চেয়ে দেখো সেই সোনালি ভোর, এখনো রঙিন; অমলিন আভায়
কাটা পাহাড়ের সেই সরু পথ এখনো ডাকছে তোমায় আয় ফিরে আয়!

আনন্দভূমে-

ইদানিং হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করে-
লোকালয় থেকে অনেক দূরে, দৃষ্টি সীমার ওপারে
যেথায় লোভ নেই, দ্বেষ নেই; নেই স্বার্থের হানাহানি
মরীচিকা নেই, নির্ঝর থেকে নেমে আসে স্বচ্ছ জলরাশি।

আঁধার রাতে জ্বলে জোনাকির আলো
ঝিঁঝির ডাকে সুরের মূর্ছনায় সন্ধ্যা এলো
বাতায়ন পাশে বন্য হরিণ খেলা করে আপন সুখে
শিকারি নেই এখানে; হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশে।

হিজল তমালের ডাল বেয়ে ঝরে পড়ে শিশির ফোটা
মেঘ বালিকারা নৃত্যেরত পদ্মপাতায় সদ্যফোটা
বিজলির মত এখানে নেই বারুদ বোমায় আতঙ্কময়
অরোণোদয় হয় নাটার রঙের শোভায় দ্যুতিময়।

সেখানে কেউ জেতে না, তোমাকে হারিয়ে
জয়ের নেশায় ছুটে না মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে
সেখানে নেই কোন সন্ন্যাসী; হয় না কেউ পথের বিবাগী
পথই তাকে বুকে টেনে নেয়, আছে যত জগৎ অভিমানী।

ভেসে বেড়াবে তুমি স্বপ্নরথে; আনন্দ কোলাহল
মরীচিকার মিথ্যে আস্ফালনের নেই ধুম্রজাল
আছে শুধু স্বপ্নপিয়াসীর স্বপ্নের আবাহন
আনন্দময়ীর আগমনে হবে আনন্দময় ত্রিভূবন।

প্রতিজ্ঞাপত্র

জগৎ ভুলে যায় যাক; কিছুই যায় আসে না তাতে
জ্যোতিময় চাঁদনি রাতে আসুক ঝড়; আকাশ-পাতাল ভেঙে
ধরণী কেঁপে ওঠুক রিক্টার স্কেলের সর্বোচ্চ মাত্রা ছুঁয়ে
ধ্বংস হয়ে যাক ত্রিভূবন প্রকৃতির নিয়মে!
নদী হারিয়ে যাক সাগর মায়ায়, বিসর্জনে হোক স্বধর্মচ্যুত
চিরহরিৎ অরণ্যে অগ্নিশিখায় হোক ভস্মিভূত
বৈশাখি ঝড়ের তান্ডবে ভেঙে পডুক সপ্ত আসমান
রাত্রির নীরবতা ভেঙে শকুনের পাল ছিঁড়ে খাক; আমার হৃদয়ের জমিন
হন্তারকের বারুদে বন্দুকে আমি হয়ে যেতে পারি নিষ্প্রাণ
নেই তবু অতৃপ্তি! যদি তুমি তোমার কথা রাখ; আমি লুটে নেব নতুন জীবন।

আমি অগ্নিগিরির মুখ থেকে পূনর্জন্ম নিয়ে আসবো ফিরে
খেয়ালের ভুলে আর হবো না পথের বিবাগী নিমিষে
হন্তারকের বারুদে বন্দুকের আমি হবো প্রথম প্রতিবাদী
শেফালি ফুলের মালা গেঁথে অধীর অপেক্ষায় থাকবো নিরবধি
যে ভুলে তুমি আমায় দন্ড দিয়েছিলো সে পথ মাড়াবো না আর
যদি তুমি তোমার কথা রাখ; আমি সুপুরুষ হবো তোমার ।

বিদ্যুৎ বেগে শব্দ তরঙ্গকে পেছনে ফেলে আমি ছুটে আসবো আবার
পাথারেরর সুগভীর থেকে মুক্তোর মালা হাতে তুমি দেখিবে পাশে তোমার
ডাক দাও, ভালোবেসে; আমি পাষাণ স্তর ভেদ করে ছুটে আসবো
নাশিয়া তিমির রাত, উল্কার চেয়ে দ্রুত বেগ; অরুণ কিরণের মতো
যদি তুমি কথা রাখ; আমি আসবো ফিরে বিজয়ীর বেশে প্রতিনিয়ত।

চারিদিকে ওঠবে বেজে তান সপ্ত সুরের
পাখিদের কলকাকলিতে সাগরে আসুক জোয়ার
মধ্য গগনের রবি হয়ে যাক স্থির চতুর্দিকে আলোর বিকিরণ
কেটে যাক অমাবস্যার রাত জ্যোৎস্নায় পুলকিত উচ্ছ্বলতার বান
আমি তোমার বাহুমূলে মাথা রেখে রচিবো স্বপ্নের বাসর সমহিমায়
নরকের দুয়ারে এঁটে দেব তালা পরিপূর্ণ তৃপ্তির বাসনায়।

বিমূর্ত

রক্তজবার মতো যতটা বর্ণিল ততটা নও কোমল
ইথারের ওপারের শব্দ তরঙ্গের মত বুনো স্বপ্নজাল
মোহান্ধ হয়ে ডুব দাও; তলদেশে পাথারের প্রান্ত সীমায়
অন্তহীন ভালোবাসায় খুঁজে ফেরো কোন এক অজানায়।

অলস তন্দ্রায় স্বপ্নালোকের অভিনয়ে হয়ে মত্ত
জীবন তরী বেয়ে চলি; সুখের খোঁজে ডাকি তারে উদাত্ত
মুখোশ আড়ালে লুকিয়েছি দেহ-মন; মুখোশের মাঝে সুখ
জীবন গঙ্গায় ঝড় এলো, তবু মলিন করিনি মুখ।

আশাহত হয়েও রচি আশার গীতি; আশাই জীবন পণ
অভিনয়ে মত্ত জগত সংসার, অভিনয়ে সঁপি দেহ মন
স্বপ্ন রাজ্যের জাল পেতেছি; যেন পড়েছে স্বপ্ন কুড়াবার ধুম
দেখেনি কেউ আমায়, দেখাতে চাইনি কভু; যেমন কাটে অহর্নিশ নির্ঘুম।

সেই সোনালি ভোরের প্রতীক্ষায়-

আমি যদি হতাম হংসবলাকা; এ লোকালয় ছেড়ে চলে যেতাম দূরে
অনেক দূরে! যেথায় রাশি রাশি কাশফুল দুলছে আপন তালে
শুভ্র মেঘের ভেলায়; শিশির ভেজা ভোরের হিরণ্ময় দ্যুতি
আজও যেন আমায় ডাকছে নাশিয়া অন্ধকারের দুর্গতি।

ওগো জলদ, তুমি আবার অবতীর্ণ হও এই ধরাধামে
মুছে দাও আমাদের যত কলঙ্ক রেখা; মম অন্তর হতে
আমি আবার জন্মাতে চাই; নিখাত পৃথিবীতে তোমারি জঠরে
যদি তোমার সন্তানে মনুষ্যত্ববোধের চেতনায় দূরে ঠেলে দেয় তার পাপাত্মাকে।

জানি আমি, আবার আসিবে সেই সোনালি দিন; কোন এক রাঙা প্রভাতে
সেইদিন তুমিই হবে তোমার বিচারক, দগ্ধ হবে আপনি আপনাতে;
হংসবলাকারা মেলিবে পাখা অসীম আকাশে বিশুদ্ধ শুভ্র রঙে
দ্বেষ নয়, শান্তির কপোত রচিবে নীড় সবার অন্তরে।

সনাতনী

নৈরাশ্যবাদ আমায় ছোঁয় না, যদিও আশার পথ রুদ্ধ
বক্র পথে হই না আগুয়ান; সরল পথে চলে যুদ্ধ,
সনাতনী ঠিকানা আজো ভুলিনি,
তন্দ্রা চোখে ছুটে চলি, তারই অলিগলি।

জীবন যুদ্ধে হয়েছি কি জয়ী; ভাবিনি কোনদিন
কর্মই ধর্ম ব্রত মেনে চলেছি, নিদ্রাহীন
আজন্ম স্বীয় বিশ্বাসে; প্রত্যয়ের দৃঢ়তায়
দুরন্ত পথের পথিক হয়েছি কোন এক বিমুগ্ধতায়।

মোহ নয়, নয় কোন লালসা; হয়তো আমি রূপসনাতন
যাই ভাবি, তাই করি; হোক জীবনের ছন্দ পতন
বহুগামী হইনি কভু; বিচিত্র সুন্দর দেখেও
দর্শনচারী আমি; তাতেই তৃপ্ত, না পেয়েও।

নৈসর্গপ্রেম-

সন্ধ্যার আহ্বানে আলো-আঁধারি রাতে
আমার চেতনার জগৎ মিতালিতে বসে অধরার সাথে
লোকালয় থেকে দূরে মালয় সাগরের ওপারে বিমূর্ত নগরিতে
প্রতীক্ষার প্রহর গুণে প্রেয়সি মধুর আলিঙ্গনের স্বপ্নতে।

আমি চিতা বাঘের চেয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলি
তোমার লোকালয় মিথ্যে বৈভব নশ্বর পৃথিবী দিয়ে জলাঞ্জলি
আমার চেতনার রঙ আরো উজ্জ্বল হয় সুন্দরের আশায়
হিংস্র দানবের আস্ফালনে চেয়ে গেছে এই বসুন্ধরায়।

আমি ছুটছি মুক্তির নেশায়, আমি ছুটছি আনন্দ ভোগের আশায়
আমার স্বপ্নের রাজ্যে ডানাকাটা পরীরা করেনা মিথ্যা অভিনয়
স্বার্থের টানে হটে না পিছু, তোমার অপার ভালোবাসায় এঁকে পদ চিহ্ন!
হৃদয়ে স্বচ্ছ দর্পণে আঁকে আমারই প্রিয় মুখখানি; থাকে না আর কিছু, ভালোবাসা ভিন্ন।

যন্ত্রের কোলাহল ছেড়ে, বিত্ত-বৈভবের অদম্য নেশা পেছনে ফেলে
বন্ধু, একবার অতিথি হও; শ্যামলিমার মধুর কোলাহলে
দেখবে সেথায় বিহঙ্গ ডাকিছে তোমায় পরম মমতা ভরে
অলিদের মধুর গুঞ্জনে অপ্রাপ্তির বেদনা ভুলে মজেছ সুরে সুরে।

প্রতীক্ষা

কুয়াশার উত্তরীতে ঢেকে দিয়ে যায় আমার স্বপ্নপ্রহর, বিষন্নতার স্রোতে
বিপন্ন কোন এক সন্ধ্যার অবকাশে আমি যদি হারিয়ে যাই মেঘদূতের সাথে
লোকালয় থেকে অনেক দূরে পাথারের ওপারে মেঘ বালিকার প্রণয় আশ্বাসে
তুমি কি পথ চেয়ে বসে থাকবে, কাটিয়ে রাত্রির অষ্টপ্রহর; উদাসী আবেশে!

আমার ফেরার আশায় অবসাদ যদি না আসে তোমার তনু-মনে
মনে রেখো আমাকে আসতেই হবে তোমার অনুচ্চারিত শব্দের আহ্বানে
হরিৎপত্র আজ ক্ষয়ে যাক ধূসরতার আবাহনে, রিক্তার মহাপ্রলয়ে
তবুও আমি আসবো ফিরে দেশ-কাল-সময়ের ব্যবধান ভুলে।

অরণ্যের মোহে মেঘবালিকা যদি ছুটে আসতে পারে পাথারের ওপার হতে
ভালোবাসার ধূসর আঙিনা সিক্ত করে দিয়ে পাষানে ফুল ফোটাতে-
কেন আমি আসবো না ফিরে; জোনাকির আলোর মশাল হাতে
তোমার হৃদয় আঙিনায় জ্বালাতে প্রেমের বাতি, কোন এক শুভ প্রভাতে।

কঠিন পাষান ভেদিয়া তরুরাজি উঁকি দেয় অরণ্যপ্রেমে
নির্ঝর বয়ে চলে সাগরের টানে প্রতিকূল আবহে নিঃশেষ করে নিজেকে
অরুণ আলোয় আলোকিত এ পৃথিবী জানিয়ে দেয় প্রেমের আকুতি
মোহের টানে জগৎ ব্যকুল বিসর্জনেও হটেনা পিছু চিরন্তন রীতি।

আবার আমি আসিবো ফিরে কচি কিশলয়ের তনু মন নিয়ে; বিসর্জন দিয়ে দেশ-কাল জাতি
দুর্গম করে নেব সুগম; প্রলয়ের রাতে বিভ্রাট হবে না পথে, তোমার প্রেমের আলোই হবে পথের জ্যোতি।

এসো বন্ধু হরবেলায়-

জীবন সঙ্গী হতে ডাকিনি তোমায়; কোন এক মিথ্যে আশ্বাসে
তোমায় নিয়ে দেব পাড়ি অথৈ সাগর দুর্যোগে আর জলোচ্ছ্বাসে
হৃদয়ের কপাট খুলে দেবে, ঘুমিয়ে নেব চরম সুখে
অনুসূয়া হবে তুমি আমার, হিংসা বিদ্বেষ দূরে রেখে।

যে কথা হয়নি বলা জগৎ মাঝে দ্বিতীয়জনে
সে কথারই ফুল ফোটাবো তুমি আমি সংগোপনে
তোমার আমার অভিধানে অনেক শব্দ যোজন হবে
স্বপ্ন দেখার আঙিনাতে, না শব্দটি মুছে যাবে।

আমার সুখের আঙিনাতে; তোর অধিকার সবার আগে
পুরো সুখের অধিকার চাইলেও নিতে পারিস নির্দ্বিধাতে
কাল বৈশাখির ঝড়ের রাতে সঙ্গে পাবি তুই আমাকে
তিমির রাতে আলোর দ্যুতি জ্বালাবো আমরা দুজন মিলে।

দুর্গম পথের যাত্রী হবো তোর হাতে হাত রেখে
মিথ্যে ছলনায় ভুলবো না আজ প্রেয়সির কোন মিথ্যে আশে
তুষার পাতের ঝড়ের রাতে কেউ রইবো না পিছে পড়ে
বন্ধুর হাতে হাত রেখে আজ পাড়ি দেব নীল সাগরে।

কন্টকপথের যাত্রী হতে আয় ছুটে আয় বন্ধুর বেশে
লোভ লালসা দূরে ঠেলে ক্যাকটাস প্রেমের ভালোবেসে
রক্ত গোলাপ ফুটবে পথে, জ্বলবে আলো দিকে দিকে
আলোর মশালে তিমির রাতে দুঃখ যাবে দূরে সরে।

হৃদ জমিন খুলে দেবে দ্বার, মুছে দিয়ে মিথ্যে অহঙ্কার
জগৎ মাঝারে বন্ধু তুমি; মহাকাব্যের তুমিই অলঙ্কার।

বাংলার মুখ

আমার ভাবনার আকাশে ঘুরে ফিরে; দল বেঁধে ফিরে আসে শ্বেত বলাকার দল
চিরহরিৎ বাংলার আকাশে কী অপরূপ মহিমায় উঁড়ে যায় আমার স্বপ্নেরা দল বেঁধে
তৃষ্ণার্ত পথিক কোথাও যখন এক ফোটা জল খঁজে পায় না, ছুটে চাতক পাখির মত
আমি তখনও সুখ নিদ্রায় স্বপ্নদেবীর কোলে মাথা রেখে, অঘোর ঘুমে তোমার ছোঁয়ায়।

আমার কর্ম-ক্লান্তিতে ঘুম আসে ঝিঝির সুরে অনির্বচণীয় রূপের মায়ায়
শিশিরের জল পতনের শব্দ আমায় নিয়ে যায় অন্তহীন ভাবনার মসৃণ অনুভবে
আমি ভেসে যাই নির্ঝরের বুকে ভর দিয়ে দেশ হতে দেশান্তরে অকূল পাথারে
রাশি রাশি সবুজের মেলা; ধূসর পৃথিবীর রং আমার মাঝে হাহাকারের ঝড় তুলেনি কভু!

আমার চোখে ভাসে আজো মাঠে মাঠে সোনালি ধানের রূপের বাহার
চড়ুই পাখিরদল কিচিরমিচির সুরে গান রচিছে মনের সুখে নির্ভাবনায়
শেফালিরা ফুটেছে বনে বনে অনাদর অবহেলায়; তবুও নেই রূপের অভাব
বাংলা মায়ের মুখ বিধাতার অপরূপ সৃজনে ঘাটতি খুঁজে পায় নি, কোন এক নিন্দুক।

সাহারার বুকে একফোটা জল হয় সোনার হরিণ, পথিক আত্ম বিসর্জন দেয় মরীচিকার ফাঁদে
তখনো দুগ্ধস্রোত বয়ে যায় তটিনীর বুকে, দুকুল ভেসে যায় আনন্দের বন্যায়
কোথাও তুমি যখন খুঁজে পাবেনা শান্তির কোমল পরশ
আপন বিশ্বাসে ফিরে এসো বাংলায়; খুঁজে পাবে প্রিয়তমার স্নিগ্ধ মুখ অপরূপ মহিমায়।

হৃদরাজ্য

কী বিচিত্র এই পৃথিবী-
আমারই রাজ্যে, আমার নেই প্রবেশাধিকার
অধিকার শুধু তোরই বসতি গড়ার!
যতটুকু স্থান জুড়ে তোমার বসতি-
দেখতিস যদি চেয়ে, পেয়ে যেতাম জীবন থেকে নিষ্কৃতি।

সুনীল ছুটেছিলো নীলপদ্ম হাতে রাশিরাশি
হেলেনের জন্য ধ্বংস হয়ে গেল ট্রয় নগরীর সুখ্যাতি
আদি হতে উত্তোরাধুনিক তোর প্রেমে মত্ত প্রেমিকবর
তোর জন্যই রচে যায় অথৈ প্রেমের সরোবর।

তোর জন্য যতটুকু সময় দিয়েছি বিসর্জন!
তার সিকিভাগ নিজের তরে ব্যয়ে হয়ে যেতাম মহিয়ান,
কত কেটেছে বিনিদ্র রজনী প্রহর
ভাবি যদি বসে সামনে শুধু ভেসে আসে নিঝুম আঁধার।

তোর অধিকারের সে রাজ্যে আজ দেখি বেহুলার বাসর
তার তানে ওঠেনা বিরহ ব্যথা ভিন্ন অন্য কোন স্বর!