হামিদুর রহমান পলাশ এর সকল পোস্ট

দেবী… ০২

27615

তুমি সন্ধ্য্যারও মেঘ মালা
তুমি আমারও সাধেরও সাধনা।
মম অসীমও গগনও বিহারী
আমি আপনও মনেরও মাধুরী মিশায়ে –
তোমারে করেছি রচনা।
তুমি আমারী তুমি আমারী!!

অপেক্ষাতেই নাকি প্রেমের সম্পর্ক বেশী গাঢ় হয়। সে প্রেম শাশ্বত, দেহজ কামনা বাসনার বাইরে, শুধু শারীরিক প্রেম নয়। যা ব্যক্তিমানুষের শারীরিক বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি মনে হাহাকার আর আত্ম সাধনার জন্মই দেয়। নশ্বর বিশ্ব চরাচরে শরীরের মত প্রেমেও ক্ষয় আছে এবং সে ক্ষয় কালক্রমে অনুতাপ ও পাপবোধের জন্ম দেয়। যেটা কারো কাম্য নয়। প্রতিটি অপেক্ষমান বিরহী আত্মা প্রেমকে দেখে নারীর সহমর্মিতা, সমবেদনা, পুরুষের আত্মনিবেদনের ভেতর দিয়ে। আমিও সেটার বাইরের কেউ নই। বরং যাপিত জীবনের যে সুবর্ণ সঞ্চয়, সেখানে যে বাঁক ও তার ঢেউ তাকে আমার জীবনের এক ক্রান্তিলগ্নে এসে উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত হই যে, সময় এবং যৌবন আসলে মানবজীবনের এক পরাক্রমী ক্ষয়িষ্ণু অধ্যায়ের নাম। যেখানে তার অযত্ন ও অবহেলা সেখানে তার রুদ্রমূর্তি। যেখানে তার সযত্ন আসন পাতা সেখানে সে প্রাণবন্ত ও সৌন্দর্য্যের স্মারক। আসলে কোন বস্তু মানুষের কাছাকাছি থাকলে তার প্রয়োজনটা বুঝা যায় না। সে যখন দূরে থাকে তখন তার প্রয়োজনটা অতি জরুরী হয়ে পড়ে। নিত্য কাজের ভীড়ে সমাজ সংসার ও মানুষ গড়ার দায়িত্ব ও কর্তব্যের অবসরে আমার ভাবনাও তোমাকে তাড়িত করে। তাইতো আমার জীবনে-

প্রেম, প্রাপ্তি আর বিরহের চিরন্তন রূপ তুমি
তোমার প্রেমে মাতোয়ারা আমার এ আমূল বদলে যাওয়া।
তোমার অকৃত্রিম প্রেমমোহে আমার দুঃসাহসিক অভিযাত্রা।
তোমার অপরূপ রূপলাবণ্যে অভিভূত আমি।
তাইতো তোমার প্রেমে নেশাতুর আমার হিয়া;
তোমার অদৃশ্য মোহনীয় সুতোয় জড়িয়ে-
তোমার আত্মায় আছি আমি।
তোমার হৃদয়ের কুসুম সরোবরে;
নিত্য মোর আসা যাওয়া।
তাইতো তোমার প্রেম,
নিতান্ত মানবিক অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ।
তাই তুমি পার্থিব নও, দৈবিক।

———
১৯/০৩/২০২২
পলাশ
দোহা, কাতার।।

আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ

ভিখেরী দুয়ারে খাড়া
ভিক্ষা দিয়া বিদায় কর –
ও আমার ঘরের মালিকরে ….
ক্ষুধায় ভিখেরী মরলে কলঙ্ক তোর। ( উকিল মুন্সি)

জন্ম, মৃত্যু বিয়ে এই তিন অবধারিত সত্য। তবুও আমরা এগুলোকে অতিক্রম করতে চাই। ছোট ছোট সুখ দুঃখের সমষ্টিই জীবন। আশা আর হতাশার সংমিশ্রণই জীবনের সব আবেদন। আশার সাথে হতাশার আজীবন বন্ধুত্ব। তবে আমি হতাশ নই। জীবনে পেয়েছি অনেক হারিয়েছি খুব কম। যা হারিয়েছি তা ও ইচ্ছাকৃত। তাই দুঃখবোধ নেই। সংসার তো মায়াময় মোহ।এই মোহের ঘোরেই তো প্রতিটি জীবন দিনাতিপাত করছে। জীবন সব সময় জীবনের নিয়মে চলে কি? তাই এখন অন্তর্দহনে মর্মমূলেই নিজেকে খোজার চেষ্টা করছি। তাই হয়তো একটু অমনোযোগী নিয়মিত গণ্ডি থেকে। যা আপন ভেবেছি তা কি সত্যিই আমার আপন ? নাকি আমিই আমার নই ? তাই তো সাধকের বাণীতে নিজেকে খুঁজি ………

“তুমি আমার আমি তোমার
ভেবেছিলাম অন্তরে –
কেন ভালবেসে ছেড়ে গেলে আমারে
সোনা বন্ধুরে।
তুমি বন্ধু সুখে থাক এই মিনতি করি
নিদান কালে কে হবে মোর পাড়ের কাণ্ডারী” ?
( আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ)
———-

পলাশ
১১/০৩/২০২২
দোহা, কাতার।

অদৃশ্য অনুভবে …

275179

“প্রেম প্রেয়সী খুব রূপসী দিলে তালা মনের ঘরে
কেমন করে খুব আঁধারে
মনের ঘরে এই আমারে
রূপ সুহাসী প্রেম পিয়াসী নিলে তুমি আপন করে।”
প্রেম প্রকৃতির মাঝে আত্মভাবের বিস্তার এবং একই সাথে প্রকৃতির উপাদান সান্নিধ্যে অন্তর ভাবনার এক রোমান্টিক উন্মোচন এক যুগের পথ চলা।

রাতের গভীরতায় নিদ্রাহীন দু’চোখ চেয়ে থাকে দূর দিগন্তের দিকে-
দৃষ্টিভ্রম ধ্যান ভাবনার অথৈই কালো আঁধারের গহীনে তলিয়ে যায়।
আমার এই এলোমেলো বেখেয়ালী মন সত্য মিথ্যার বেড়াজালে –
হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে বিষাদে কাটিয়ে দিয়েছি।

অজস্র বেদনার রঙিন খামের ভেতরে বন্দী করে রেখেছি যন্ত্রণা;
এক পেয়ালা বিষ আর বিষাদের আগুনে জ্বলন্ত অক্ষর আকৃতির বাঁকানো চাঁদের জোছনা ধোঁয়ায় হারিয়ে ফেলি নিজের অস্তিত্বটাকে।
আপন মনে ভোরের রবি উঠে যখন নদীর অপর পাড়ে- একাকি প্রাণে বিষাদ তখন কেবল আরো বেড়ে উঠে বুকের ভেতর!
আর কতোটা রক্তাক্ত প্রান্তর পাড়ি দিবো আর কতো অশ্রু জড়াবো নয়নের জলে।
মিথ্যা অনুভূতি দিয়ে আর কতো কাঁদাবে নোনাজলে!
চোখের কার্নিশে, পাঁজর ভাঙ্গা বুকে ব্যথার অগ্নির সাথে ?

দেবী

27436

”নিত্য তোমাকে চিত্ত ভরিয়া স্মরণ করি
বিশ্ব বিহীন বিজনে বসিয়া বরণ করি –
তুমি আছো মোর হৃদয় মন হরণ করি।”

তোমার হৃদয়ের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মনের বিস্তৃত আঙ্গিনা পেরিয়ে ভালবাসার স্রোতে বিবর্তনের ধারায় বিবর্তিত হয়ে তরী ভিড়িয়েছি তোমার কুলে। শূন্য তরী ভরিয়ে দিলে ভালবাসায় কানায় কানায়, কোন কিছু দাবী না করতেই উজাড় করে দিলে দু’হাত ভরে। ঋণী হবার সুযোগ না দিয়ে চির জীবনের জন্য ঋণী করলে হৃদয়ের বন্ধনে মনো মন্দিরে। মোমের আলোয় আলোকিত করে তুললে অবেলায়। ভোরের আলোয় আলোকিত করছো এখনও আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ। ভালবাসায় বন্ধুত্বে অদৃশ্যে পাশাপাশি অবস্থান করছো সযত্নে। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ ভালবাসা ও বন্ধুত্বের কাঙাল। প্রতিটি মানুষই বন্ধুত্ব চায়। দুটি মানুষের মধ্যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করার অকৃত্রিম সম্পর্কের নাম ভালবাসা ও বন্ধুত্ব। যে মানুষটাকে ভালোবাসি, তাকে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে। আমাদের ভালোবাসা যদি হয় কেবল কাউকে দখল করে রাখার কোন চাওয়া, তাহলে তা ভালোবাসা নয়। আমরা যদি শুধু আমাদেরকে নিয়ে চিন্তা করি, শুধু আমাদের প্রয়োজনগুলোই বুঝি এবং অন্যদের প্রয়োজনকে এড়িয়ে যাই, তাহলে আমরা কখনই ভালোবাসতে পারবো না। যাদের ভালোবাসি তাদের প্রয়োজন, চাওয়া, ভালোলাগা এবং কষ্টগুলো আমাদেরকে অবশ্যই গভীরভাবে খেয়াল করতে হবে এটাই প্রকৃত ভালোবাসার পথ। আমরা যখন কাউকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারব, তখন তাকে ক্রমাগত ভালোবেসে যাওয়া থেকে নিজেকে ঠেকাতে পারব না। আমাদের জীবন জীবনের মতই সুন্দর, এই সৌন্দর্যকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা অর্থহীন কারণ যার সাথে তুলনা করা হয় তা কখনই জীবনের মত বৈচিত্র্যময় নয়। এই বৈচিত্রময়তার জন্যই জীবন মূল্যবান যার জন্য বেঁচে থাকতে ভালো লাগে, অর্থহীন মনে হয় হাজারটা প্রত্যাদেশ।

তারপরও ……
“মাঝে মাঝে হৃদয় জগতে উত্থান-পতন শুরু হয়
পেয়ে হারানোর বেদনার হাহাকারে।
সাধ জাগে ভালোবেসে আবার নতুন করে জীবনটাকে ভরিয়ে তোলার।
কৈশোরের সেই অনুভূতি আবার জাগিয়ে তোলে অবেলায়।
হৃদয় আপ্লুত হয় নতুন ভালবাসার আহ্বানে;
তারপরও সমাজ সংসারের ভয়ে থাকে আত্মগোপনে।
সময়ের মর্মমূলে বিরূপতা যে রক্তাক্ত ছাপ ফেলেছে
তা আজও অন্তর্গত বেদনাকে ধারণ করে আছে হৃদয়ের গভীরে।
তার অদৃশ্য স্পর্শ, নবসৃষ্ট স্মৃতির ঘ্রাণ স্মৃতিকাতর করে তুলে নির্জন প্রবাসে।

স্মৃতিলোকে বার বার ফিরে আসে তার ছবির মায়াবী চোখের করুণ চাহনি।
যৌবনের প্রণয়িনী জ্যোতি এখনও ভাসে তার চোখের তারায়।
যে কিনা আমার সব উপেক্ষা অগ্রাহ্য করেও সর্বস্ব দিয়েছে।
শাড়ির আঁচল উড়িয়ে বাহুডোরে আবদ্ধ হতে –
স্মৃতির বীণায় আজও সুর তোলে ঝঙ্কারের অপেক্ষায়।
নস্টালজিক অনুভূতির অপরিহার্য মানবিক মূল্যবোধের খোঁজে।
ভোতা অনুভূতিগুলোর পুনঃ পুনঃ রোমন্থন করার প্রয়োজনে” নিজকে বিলায় স্বযতনে।

=======
লেখকঃ কাতার প্রবাসী।

বন্ধুর শূন্যতায়…….

মন আজ ‘বিয়োগান্ত’ বেদনায় মলিন।
হারিয়েছে ছন্দ, হারিয়ে সুর, তাল লয়
হারিয়েছে হৃদয়ের যত ভাব ভালবাসা
হারিয়েছে সুখ স্বপ্ন, হারিয়েছে আশা।
আজ কোন সুসংবাদ নেই
আছে দুঃসংবাদ।
প্রেম কিছুটা মধুর, কিছুটা বেদনা বিধুর।
কিছুটা কাল্পনিক, কিছুটা বাস্তব।
কিছুটা হতাশার, কিছুটা আশার।
এগুলো নিয়েই তো জীবন।
তারপরও বন্ধুর শূন্যতা মাঝে মাঝে মনকে-
নাড়া দেয় অব্যক্ত বেদনায়……………….।

বন্ধুত্ব, সে অনেকটাই আদিম প্রবৃত্তি। একমাত্র সম্পর্ক যার নেপথ্যে কোনও কারণ নেই। মানুষের পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়েও যে ছিল, আছে এবং থেকেও যাবে।
“বন্ধু মানে মেঘলা দুপুর শিশির ভেজা ভোর
বন্ধু মানে মনের মাঝে অনেকখানি জোর
বন্ধু মানে ভীষন কষ্ট একটু অভিমান
মনের মাঝে কোথায় যেন অনেকখানি টান . . . . . . . . . ।”

এক অকারণ অনুভূতির নাম বন্ধুত্ব? হাতে হাত রেখে পাশাপাশি চলাটাই বন্ধুত্ব? বন্ধুত্ব মানে বয়সের সাথে বয়সের মিল নয়, বন্ধুত্ব মানে মনের সাথে মনের, গোপনে হয়ে যাওয়া পরিচয়…..বন্ধুদের। জীবনের সংকটে বন্ধুই ছুটে যান বন্ধুদের কাছে। আবার আনন্দ, উল্লাস কিংবা দিন শেষের অবসরেও এরা ভালোবাসেন বন্ধুত্বের কলতান শুনতে। বন্ধুত্বের পরিপূরক সম্পর্কের মাঝে এরা খুঁজে পান জীবনযাপনের ভিন্ন রস। সেই অকৃত্রিম বন্ধু যেন অকালে হারিয়ে না যায় সেই কামনাই করি। কারন বন্ধুত্ব মানে দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, সমালোচনা করা অপমান বা কটাক্ষ করার মানসিকতা না। একেবারে আলাদা মর্যাদা, আলাদা একটা আবেদন। বন্ধুত্ব এমন একটা সম্পর্ক যার সাথে কোন সম্পর্কের তুলনা হয় না।

প্রেম প্রবঞ্চিতকে কী দেয় ?

প্রেম আপন গভীরতায় নিজের মধ্যে একটি মোহাবেশ রচনা করে। সেই মোহের দ্বারা যাকে ভালোবাসি আমরা তাকে নিজের মনে মনে মনোমত গঠন করি। যে সৌন্দর্য তার নেই, সে সৌন্দর্য তাতে আরোপ করি। যে গুণ তার নেই, সে গুণ তার কল্পনা করি। সে তো বিধাতার সৃষ্ট কোনো ব্যক্তি নয়, সে আমাদের নিজ মানসোদ্ভূত এক নতুন সৃষ্টি। তাই কুরূপা নারীর জন্য রূপবান, বিত্তবান তরুণেরা যখন সর্বস্ব ত্যাগ করে, অপর লোকেরা অবাক হয়ে ভাবে, “কী আছে ঐ মেয়েতে, কী দেখে ভুললো?” যা আছে তা তো ঐ মেয়েতে নয়– যে ভুলেছে তার বিমুগ্ধ মনের সৃজনশীল কল্পনায়। আছে তার প্রণয়াঞ্জনলিপ্ত নয়নের দৃষ্টিতে। সে যে আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তাহারে করেছে রচনা। জগতে মূর্খরাই তো জীবনকে করেছে বিচিত্র; সুখে দুখে অনন্ত মিশ্রিত। যুগে যুগে এই নির্বোধ হতভাগ্যের দল ভুল করেছে, ভালোবেসেছে, তারপর সারা জীবন ভোর কেঁদেছে। হৃদয় নিংড়ানো অশ্রুধারায় সংসারকে করেছে রসঘন, পৃথিবীকে করেছে কমনীয়। এদের ভুল, ত্রুটি, বুদ্ধিহীনতা নিয়ে কবি রচনা করেছেন কাব্য, সাধক বেঁধেছেন গানচিত্র, ভাষ্কর পাষাণ-খণ্ডে উৎকীর্ণ করেছেন অপূর্ব সুষমা।

জগতে বুদ্ধিমানেরা করবে চাকরি, বিবাহ, ব্যাংকে জমাবে টাকা, স্যাকরার দোকানে গড়াবে গহনা; স্ত্রী, পুত্র, স্বামী, কন্যা নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন করবে সচ্ছন্দ সচ্ছলতায়। তবু মেধাহীনের দল একথা কোনদিনই মানবে না যে, সংসারে যে বঞ্চনা করল, হৃদয় নিয়ে করল ব্যঙ্গ, দুধ বলে দিল পিটুলী– তারই হলো জিত, আর ঠকল সে, যে উপহাসের পরিবর্তে দিল প্রেম। অতি দুর্বল সান্ত্বনা। বুদ্ধি দিয়ে, রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে বলা সহজ–

জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা
ধূলায় তাদের যত হোক অবহেলা।

কিন্তু জীবন তো মানুষের সম্পর্ক বিবর্জিত একটা নিছক তর্ক মাত্র নয়। শুধু কথা গেঁথে গেঁথে ছন্দ রচনা করা যায়, জীবন ধারণ করা যায় না।যে নারী, প্রেম তার পক্ষে একটা সাধারণ ঘটনা মাত্র। আবিষ্কার নয়, যেমন পুরুষের কাছে। মেয়েরা স্বভাবত সাবধানী, তাই প্রেমে পড়ে তারা ঘর বাঁধে। ছেলেরা স্বভাবতই বেপরোয়া, তাই প্রেমে পড়ে তারা ঘর ভাঙ্গে। প্রেম মেয়েদের কাছে একটা প্রয়োজন, সেটা আটপৌরে শাড়ির মতই নিতান্ত সাধারণ। তাতে না আছে উল্লাস, না আছে বিষ্ময়, না আছে উচ্ছ্বলতা। ছেলেদের পক্ষে প্রেম জীবনের দুর্লভ বিলাস, গরীবের ঘরে ঘরে বেনারসী শাড়ির মতো ঐশ্বর্যময়, যে পায় সে অনেক দাম দিয়েই পায়। তাই প্রেমে পড়ে একমাত্র পুরুষেরাই করতে পারে দুরূহ ত্যাগ এবং দুঃসাধ্যসাধন।জগতে যুগে যুগে কিং এডওয়ার্ডেরাই করেছে মিসেস সিম্পসনের জন্য রাজ্য বর্জন, প্রিন্সেস এলিজাবেথরা করেনি কোনো জন, স্মিথ বা ম্যাকেঞ্জির জন্য সামান্য ত্যাগ। বিবাহিতা নারীকে ভালোবেসে সর্বদেশে সর্বকালে আজীবন নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছে একাধিক পুরুষ; পরের স্বামীর প্রেমে পড়ে জীবনে কোনদিন কোনো নারী রয়নি চিরকুমারী। এমন প্রেমিকের জন্য কোন দিন সন্ধ্যাবেলায় তার কুশল কামনা করে তুলসীমঞ্চে কেউ জ্বালাবে না দীপ, কোন নারী সীমন্তে ধরবে না তার কল্যাণ কামনায় সিদুরচিহ্ন, প্রবাসে অদর্শনবেদনায় কোন চিত্ত হবে না উদাস উতল। রোগশয্যায় ললাটে ঘটবে না কারও উদ্বেগকাতর হস্তের সুখস্পর্শ, কোনো কপোল থেকে গড়িয়ে পড়বে না নয়নের উদ্বেল অশ্রুবিন্দু। সংসার থেকে যেদিন হবে অপসৃত, কোন পীড়িত হৃদয়ে বাজবে না এতটুকু ব্যথা, কোনো মনে রইবে না ক্ষীণতম স্মৃতি।

প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয়না অথচ দহন করে।সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দাহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন বহু কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য পুরুষ।। (দৃষ্টিপাত)

=====
লেখকঃ কাতার প্রবাসী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী।

শিরোনামহীন … অভিমানী

তোমায় খুঁজি রাতের নিঃসীম আকাশের অজস্র তারার ভিড়ে,
নিঝুম রাতের শেষ প্রহরে নিঃশব্দ নিরবতায় ।
বৃষ্টির নির্ঝর মূর্ছনায় ভালোলাগার আবেশে –
দিশেহারা মন যখন আকুল হয় ভালবাসার ছন্দে।
ঘাসের ডগায় ভোরের স্নিগ্ধ শিশির বিন্দুর পবিত্রতায়
কোমল হাতে ছুঁয়ে যাওয়া সোনালী রবির শুভ্রতায়।
খুঁজি তোমায় ভোর উপভোগ করা চারপাশের পাখিদের কলকাকলীতে:
কোলাহল মুখরিত দুপুরে বিরহী ঘুঘুর ডাকের গভীরে।
শেষ বিকেলের গোধুলী লগ্নে নীড়ে ফেরা পাখিদের ভিড়ে-
উদাস করা নীল আকাশে খন্ড খন্ড সিদুর রাঙ্গা মেঘের ভেলায়।
স্মৃতির ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলির তুলির ভাঁজে,এলোমেলো হাওয়ায়
খুঁজি তোমায় তারাভরা রাতে মায়াবী আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা-
হারানো সূরের মূর্ছনায় বিরহী গায়কের ছুঁয়ে যাওয়া বেহালায়।
কোন এক ঝুমঝুম বৃষ্টির রাতে বৃষ্টির জলের ফোঁটায়।
ব্যস্ত শহরে প্রিয় মানুষ গুলোর ভিড়ে চোখের তারায়।

চলবে ……..
০১.০৫.২০২০ ইং
দোহা, কাতার।

মানুষ, মনুষত্ব ও বিবেক

আমরা নিজেদের মানুষ বলে গর্ববোধ করি। কিন্তু কোন কারণে নিজেদের মানুষ বলে দাবী করি ? মানুষ বলতে কেবল দুই হাত, দুই পা, দুই চোখ, নাক, মুখ আছে বলেই কোন প্রাণী মানুষ নয়। মানুষ হল তার স্বভাব, তার আচরন, তার কর্ম, সব কিছুর সমষ্টি। আর একজন মানুষের সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় তার মনুষ্যত্ব বা বিবেক দ্বারা। হাত, পা, চোখ, কান, মুখ এসব অন্য প্রাণীদের মাঝেও আছে, কিন্তু তাদের মানুষ বলি না, কারণ তাদের মাঝে এই বিবেক বোধটা নাই। যে কারণে মানুষকে মানুষ বলা হয়, ঠিক সেই কারণটাই হল মনুষ্যত্ব বোধ, বিবেক বোধ, যা একমাত্র মানুষ ব্যতিত অন্য কোন প্রাণীর মাঝে নেই। মানুষের আরেকটি বিশেষ পরিচয় তার কর্মে। কেননা, মানুষের কর্ম তার বিবেক বোধ দ্বারা পরিচালিত। প্রত্যেকটি মানুষের চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি ভিন্ন বলেই, প্রত্যেকের মাঝেই ভিন্ন ভিন্ন গুন- বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও অতি সামান্য কোন না কোন বিষয়ে একটু হলেও সবার মাঝেই মিল রয়েছে। কোথায় সে মিল?

প্রকৃত অর্থে মানুষ বলতে কি বোঝায় ? যদি প্রত্যেকটি মানুষের আচরণ ও গুন বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য খুঁজতে যাওয়া হয়, তবে বেশ কিছু গুন বৈশিষ্ট্যের মাঝে, একটি প্রধান গুন বৈশিষ্ট্যের মিল সবার মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে। তা হল বিবেক। প্রত্যেকটি মানুষই, এই বিবেকের নিকট কম বেশি পরাধীন। কেননা, বিবেক যতক্ষণ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত প্রদান না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষ কর্ম সম্পাদনের লক্ষে নিজেকে নিয়োজিত করে না। বিবেকহীন কোন মানুষই হয় না। শুধু মাত্র কোন মানুষের বিবেক হয়তো ভালো কাজে সম্মতি প্রকাশ করে, আবার কিছু মানুষের বিবেক খারাপ কাজে সম্মতি প্রকাশ করে, যা হয়তো মানুষ হয়ে করা উচিত নয়, আর এজন্যই ওই সব মানুষদের বিভিন্ন প্রাণীর আচরণের সাথে মিল রেখে, বিভিন্ন নামে প্রকাশ করি।

চলবে …………………

বন্ধু ও বন্ধুত্ব আছে নির্ভরতা আর বিশ্বাসে

বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেছেন, ‘একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না।’ তার মানে, এই আয়নাতে প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও। বন্ধুত্বটা হওয়া চাই হাত আর চোখের সম্পর্কের মতো। হাতে ব্যথা লাগলে চোখে জল আসে। আর চোখে যদি জল ঝরে, তবে হাত এগিয়ে যায় তা মুছে দিতে। বন্ধু শব্দের মাঝে মিশে আছে নির্ভরতা আর বিশ্বাস। বন্ধু আর বন্ধন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বন্ধুত্ব মানেই যেন হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, ভালোবাসা দিয়ে মন খুলে জমানো কথা বলা। বন্ধুর জন্য গেয়ে ওঠা- হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্যদিনের ভোরে।
অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য সুপরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের মতে, `একজন ব্যক্তির জীবনের ভালো দিকটা গড়ে ওঠে তার বন্ধুত্ব দিয়ে।` অনুভূতির যত রঙিন জানালা আছে তার মধ্যে বন্ধুত্বের জায়গাটি সবচেয়ে উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ। বন্ধুকে পাশে রেখে চলা যায় সীমাহীন পথ। বন্ধু বয়স ও শ্রেণি মানে না। বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে, মায়ের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে, ভাইয়ের সঙ্গে, বোনের সঙ্গে। সহপাঠী হোক, হোক সমবয়সী। কোনো তফাৎ সেই বন্ধুত্বের গভীরতায় যদি কোনো খাদ না থাকে। জীবনে প্রথম বন্ধু গড়ে ওঠার স্মৃতি থাকে অমলিন। সময়ের প্রয়োজনে কোনো বন্ধু দূরে সরে যেতে পারে কিন্তু মনের দূরত্ব কখনই তৈরি হয় না। বন্ধুর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই অমূল্য। যাদের বন্ধু নেই তারা বিষন্নতায় ভোগে, একাকিত্ব তাকে গ্রাস করে নেয়। ছন্দহীন জীবনে ছন্দ, নিরানন্দ জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতে বন্ধুর জুড়ি নেই। বন্ধুত্বকে কোনো পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় না। মাপার দরকারও নেই। কিন্তু ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়। সবাই ভালো বন্ধু হতেও পারে না। বন্ধু যেহেতু আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, তাই বন্ধু নির্বাচনে একটু সচেতন হতে হয়। বন্ধুত্বে হাত বাড়ানো অন্যায় নয়। তবে ভুল মানুষকে না বুঝেই বন্ধু বানিয়ে ফেলা ঠিক না। বন্ধু নির্বাচনের আগে কয়েকটি মানবিক গুণ তার মধ্যে খুঁজে নেওয়া উচিত। সৎ ও সত্যবাদী মানুষ ভালো বন্ধু হতে পারে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগৎ। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর, প্রেম, বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগৎ।’ বন্ধুকে অনেকে প্রেমের সঙ্গে অথবা ভালোবাসার সঙ্গে এক করে ফেলেন। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ইহা ছাড়া আর একটা কথা আছে প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ বাস্তবিক অর্থে, একেক বন্ধু আমাদের মধ্যে একেকটা দুনিয়ার প্রতিফলন ঘটায়। বন্ধু এমন একজন মানুষ যার কাছে মনের কথা খুলে বলা যায় অবলীলায়। জীবনে চলার পথে অনেক রকমের বন্ধুর দেখা মিলবে। ভুল মানুষকে এড়িয়ে চলুন। নইলে জীবনে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। বন্ধুকে সঙ্গী করে জীবনের অমূল্য সময়টুকু করে তুলুন রঙিন।
নিজের ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করতে বন্ধুত্বের মত পবিত্র বন্ধনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কতটা যুক্তি সংগত প্রশ্ন রেখে গেলাম ???
**************
লেখক: কাতার প্রবাসী সাংবাদিক।
উৎসগ: সৌদি প্রবাসী বন্ধু গোলাম মোস্তফা খবিরকে। যার কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি বন্ধু ও বন্ধুত্বের অনুভুতি। যার বন্ধুত্বের প্রতিদান আমার শরীরের অঙ্গের বিনিময়েও পরিশোধযোগ্য নয়।

আমি কে ?

মানুষের আমিত্ববোধ যত আদিম ও প্রবল তত আর কিছুই নয়। আমি সুখী, আমি দুঃখী, আমি দেখতেছি, আমি শুনতেছি, আমি বেঁচে আছি, আমি মরব ইত্যাদি হাজার হাজার রূপে আমি আমাকে উপলব্ধি করতেছি। কিন্তু যথার্থ “আমি”- এই রক্ত-মাংস, অস্থি, মেদ-মজ্জা-গঠিত দেহটাই কি “আমি” ? তাই যদি হয়, তবে মৃত্যুর পরে যখন দেহের উপাদান সমূহ পচে-গলে অর্থাৎ রাসায়নিক পরিবর্তনে কতগুলি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থে রূপান্তরিত হবে, তখন কি আমার আমিত্ব থাকবে না ? যদি না-ই থাকে, তবে স্বর্গ-নরকের সুখ-দুঃখ ভোগ করবে কে? নতুবা “আমি” কি আত্মা ?

যদি তাই হয়, তবে আত্মাকে “আমি” না বলে “আমার”, এটা বলা হয় কেন? যখন কেহ দাবী করে যে, দেহ আমার, প্রাণ আমার এবং মন আমার, জগত সংসারে যা কিছু আছে সবই আমার হয় তবে আমি কার ?

তখন দাবীদারটা কে ?

প্রবাসের শূন্যতায়

প্রবাসের শূন্যতায়

“মন আজ ‘বিয়োগান্ত’ বেদনায় মলিন।
হারিয়েছে ছন্দ, হারিয়ে সুর, তাল লয়
হারিয়েছে হৃদয়ের যত ভাব ভালবাসা
হারিয়েছে সুখ স্বপ্ন, হারিয়েছে আশা।
আজ কোন সুসংবাদ নেই
আছে দুঃসংবাদ।
প্রেম কিছুটা মধুর, কিছুটা বেদনা বিধুর।
কিছুটা কাল্পনিক, কিছুটা বাস্তব।
কিছুটা হতাশার, কিছুটা আশার।
এগুলো নিয়েই তো জীবন।”

সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল নাকো চাঁদ! জীবনের প্রথম প্রবাস গমন, সাময়িক কিছু আনন্দ থাকলেও বেদনার যেন কোনও কমতি ছিল না। তখন শীতকাল। প্রচণ্ড শীত কুয়াশার চাদর দিয়ে ডেকে রেখেছিল গোটা পৃথিবীটাকে। আকাশের সূর্যের সঙ্গে সেদিন পৃথিবীর কোনও মিলন ঘটেনি। ঠিক ওদের মানসিক অবস্থা আর আমার মানসিক অবস্থার মধ্যে কোনও দূরত্ব ছিল না। বিদায় যে বড় কঠিন, বড় নির্মম সেদিন তা অনুভব করেছিলাম হাড়ে হাড়ে।

দেশপ্রেম কি, বন্ধুত্ব কি, আত্মার সম্পর্ক কি? ভালবাসা কি? ভালবাসার রূপ, রঙ, গন্ধ, বর্ণ সবকিছু সেদিন মন অনুভব করেছিল একান্ত করে। সেদিন অনেকেই বোবা কান্নায় কেঁদেছিল। সবচেয়ে বড় একা হয়ে গিয়েছিল আমার সন্তান আমার দ্বিতীয় আত্মা। সে আমার কোলে আমার গলা ধরে সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে আমার গালে চুমু দিচ্ছিল। আর আমি যেন অনেকটা বোবা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন বিদায়ের বাঁশির সকরুণ সুর আজও আমাকে নীরবে কাঁদায়। আমি হারিয়ে যেতে থাকি ভাবনার অতল গভীরে। আমার স্মৃতিমাখা সে দিনগুলো যেন আজও স্মৃতি হয়ে ভেসে বেড়ায় মনের জানালায়।

তবে সেদিন সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আনন্দ পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, একটু সুখের আশায়, একটু শান্তির অন্নেষণে মা-বাবা ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে পারব। আমার ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবন কেটেছে বেশিটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে। ছুটি কাটাতে যখন গ্রামের বাড়ীতে আসতাম তখন গ্রামের পুরনো বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম পদ্মার তীরে। সেখানে আড্ডা চলত মাঝ রাত পর্যন্ত। জানি না আজ আর সে আড্ডা জমে কিনা, আমার জানা নেই হয়তোবা জমে নয়তোবা নয়। হয়তোবা বন্ধুরা আমার শূন্যতা অনুভব করে, নয়তো নয়!

কিন্তু আমি আজও অতীতের সেই সোনাঝরা দিনগুলো হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে কিছুতেই মুছতে পারিনি। কর্মব্যস্ততার এই প্রবাসে মানুষের জীবনে অবসরের বড় অভাব। তবুও প্রতিদিন জীবনের এই পথ চলতে গিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোনো না কোনো সময় মন ছুটে যায় কোনো স্মৃতির পাতায়_ যা সীমাবদ্ধ থাকে না কোনো একটি মধুর বা বেদনাবিধুর স্মৃতিতে। কোন দিবস এলে সেটা আরো ভারাক্রান্ত করে এ হৃদয়কে। আসলে আমাদের জীবনে এমন পূর্ণ অবসর নেই তাই চিন্তাধারাগুলো এখন আর একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না।

এক বর্ষণমুখর দিনে সোনার হরিনের আশায় দেশ ত্যাগ করি। এই প্রবাসে যখন কোন দিবসের অবসরের স্বাদ নিতে চাই তখনই ফেলে আসা অতীতের কিছু মুখ ভেসে ওঠে স্মৃতির আয়নায়। একদিন যার কথা শুনতে চাইনি, আজ তাদের মধুর স্মৃতি বেশী মনে পড়ে। পড়ন্ত বিকেলে যখন আরব সাগরের তীরে গিয়ে দাঁড়াই, রাতের আঁধারে যখন ছোটখাটো অবসরগুলো কাটে তখন সেই সুখস্মৃতিগুলোই যেন স্থান করে নেয় সমস্ত মনজুড়ে। মনে পড়ে, সেই অগোছালো জীবনে ছিলো না কোন স্থিরতা। পরিচিত হলো দুটো মন সময়ের পথ ধরে এগিয়ে চললো তারই ধারাবাহিকতা। ওই মধুর স্মৃতি, সে আসবে বলে কত স্বপ্ন এঁকেছি জীবনের বাঁকে বাঁকে।

এখনও যেন সেই স্বপ্নের রাজ্যে আছি …

শেখ মুজিব একটি নাম, একটি ইতিহাস

মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে ভালবাসা । আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালবাসা সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হওয়া উচিত মাতৃভূমির জন্য । যে মাতৃভূমিকে ভালবাসতে পারে না কোন কিছুকেই তার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । আমাদের এই ছোট্ট সোনার বাংলাদেশ, যার রয়েছে বীরত্বপূর্ণ গৌরব গাঁথা ইতিহাস । আর এই সাফল্যগাঁথা ইতিহাসের পিছনে রয়েছেন কয়েকজন মহানায়ক।যাদের ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না ।তাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।যার জন্ম না হলে এই বাংলাদেশ হত না । যার জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক কোন দেশের নাম থাকতো না । এই বাংলাদেশ, এই মায়ের সৃষ্টির জনক হচ্ছে আমাদের জাতীয় পিতা শেখ মুজিবুর রহমান । এই সুন্দর বাতাস, এই সুন্দর নদী, এই স্বাধীনতা যাকে ছাড়া সম্ভব ছিল না তিনি হলেন আমাদের জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যার কথা আজো আমাদের বুক নাড়িয়ে দেয়, আমাদের বাহুতে শক্তি এনে দেয় তিনি হচ্ছে আমাদের পরম বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।কিন্তু এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে কিছু কিছু কুলাঙ্গার এই নেতার বিরুদ্ধে কথা বলে । জাতীয় পিতার গৌরব গাথা ইতিহাস ম্লান করে দিতে চায় । তার ইতিহাস মুছে দিতে চায় ।এই বাংলার মানুষ কি এতই নিমকহারাম যে মাত্র ৪৭ বছর আগের ইতিহাস ভুলে যাবে? জাতির পিতার মহান অবদান অস্বীকার করবে?
‘তবু তোমার বুকেই গুলির পর গুলি চালালো ওরা
তুমি কি তাই টলতে টলতে বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে সিঁড়ির ওপর পড়ে গিয়েছিলে?’

১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মর্মস্পর্শী দৃশ্যপট এভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে কবিতায়। সেই রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট জাতি দু’দিন পর পালন করবে, শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আঁধার রাতের রূপকল্প কেবল কবিতায় নয়, গানের কলিতেও প্রকাশ পেয়েছে_ ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ’। প্রবীণরা বলেন, সেই রাতে ঢাকার আকাশে কালো মেঘ ছিল, ছিল না বৃষ্টি, ছিল না আঁধার বিদীর্ণ করা নীল জ্যোৎস্না। শ্রাবণের আঁধারে ডুব দিয়েছিল বৃষ্টিহীন রুক্ষরাত। আর এই অমানিশার অন্ধকারে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। রাজধানীর আকাশে-বাতাসে তখনো ছড়ায়নি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে আজানের সুরেলা ধ্বনি। ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘোর কৃষ্ণপ্রহরে হায়েনার দল বেরিয়ে আসে। নিদ্রাচ্ছন্ন নগরীর নীরবতাকে ট্যাঙ্ক-মেশিনগানের গর্জনে ছিন্নভিন্ন করে ওরা সংহার করে তাঁকে_ ‘লোকটির নাম বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমান।’স্বাধীনতার মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্কের চির উদাহরণ কোনোভাবেই কাটবে না অমাবস্যার ঘোর কৃষ্ণপ্রহর কোনো কিছুতেই ঘটবে না এর অপরাধমোচন।’৪২ বছর আগে শেষ শ্রাবণের সেই মর্মন্তুদ দিনে বিশ্বাসঘাতকরা যাকে বিনাশ করতে চেয়েছিল সেই মুজিব মরেননি, বাঙালির হৃদয়-মননে অবিনাশী হয়ে রয়েছেন_

‘ওই তাকে দেখা যায়।
দেখা যায় ওই দিনের রৌদ্রে, রাতের পূর্ণিমায়।
মুজিব! মুজিব!

জনকের নাম এত সহজেই মোছা যায়!’বঙ্গবন্ধুর জলদগম্ভীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল তা বাঙালির শিরায় শিরায় এখনো শিহরণ তোলে। সেই আহ্বান বাক্সময় হয়ে আছে কবিতায়_
‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’বাংলাদেশের হৃদয়সম এ মানুষটির অমরত্বের কথা_
‘সহসা দেখি আমার ছোট্ট ঘরখানির দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব;/গায়ে বাংলাদেশের মাটির ছোপ লাগানো পাঞ্জাবি হাতে সেই অভ্যস্ত পুরনো পাইপ চোখে বাংলার জন্য সজল ব্যাকুলতা’

কাগজ ছিঁড়ে যায়, পাথর ক্ষয়ে যায়, কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যায়। সেই নাম শেখ মুজিব।ইতিহাসই তার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। ‘তার জন্ম একটি জাতির উন্মেষ, নতুন দেশের অভ্যুদয় তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্ক, এক করুণ ট্র্যাজেডি বঙ্গোপসাগর শোভিত ব-দ্বীপে জ্বলজ্বল তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি কোনো বিশেষ দলের নন, দল-মত নির্বিশেষে সমগ্র জাতির। তার মর্যাদা সর্বজনীন।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী
ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি
হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা
এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।

—-‘ডাকিছে তোমারে / কবি সুফিয়া কামাল

যতকাল রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

—-কবি অন্নদাশংকর রায়

১৫ই আগষ্ট। জাতীর জন্য এক কলঙ্কময় দিন। জাতীয় শোক দিবস। ৪৩ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপদগামী পাক হায়েনাদের প্রেতাত্মা তথা সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র সপরিবারে হত্যা করে বাঙালী জাতীর জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালী জাতীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বার বার ফিরে এসেছিলেন, ৭১-এ পাকিস্তানী হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ওরা মানুষ নামের হায়েনার দল, ওরা শয়তানের প্রেতাত্মা। ওরা জঘন্য। ওরা বিপদগামী হিংস্র জানোয়ারের দল।একদিন যে অঙ্গুলী উচিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” সেই স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর অঙ্গুলি চিরদিনের জন্য নিস্তেজ করে দেয় ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক সেই বাড়িতে। আর কোনদিন ঐ অঙ্গুলি আমাদেরকে প্রেরণা দিতে আসবেনা, দিবেনা মুক্তির বারতা। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি মৃত্যুহীন। প্রাণী হিসেবে মানুষ মরণশীল বলে সবারই একটি মৃত্যুদিন থাকে। তবে কোনো কোনো মানুষের শুধু দেহাবসানই ঘটে, মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যিনি আমাদের জাতীর পিতা, তার কি মৃত্যু হতে পারে ? না তিনি মৃত্যুহীন। চির অমর।

১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও তাদের দোসররা আজও সক্রিয়। আজ ২০১৮ সালের ১৫ আগষ্ট। জাতীর জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী। তিনি ও তার পুরো পরিবার এখনও সেই ১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও দোসরদের কাছ থেকে নিয়মিত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের নায়কদের উত্তরসুরিরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। এভাবে কয়েকবার তারা বোমা হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।গুলশানে জঙ্গী হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে তৎপর এখনও পচাত্তরের খুনিরা। আজ তারা সংবিধান সংশোধন করা নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আর একটি ১৫ আগষ্টেরও হুমকি দিয়েছে। তাহলে সত্যিই শেখ হাসিনাকে বা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও ঐ ১৫ আগষ্টের মত নির্মম হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ? সাম্প্রতিক ঘটনায়ও তাই পরিলক্ষিত হয়। আমরা কি দেশে আর একটি ১৫ আগষ্ট চাই বা কামনা করি ? জাতির বিবেক কী বলে ?

************
লেখক: কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক।

আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে এগুলি কিসের আলামত ???

জয়বাংলা শ্লোগান, গলায় নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষে সিল মারা, আমার দেশ পত্রিকার বির্তকিত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর আদালত চত্বরে হামলা, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর একই মালিকের তিনটি গাড়ির বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থী হত্যা, কোমলমতি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে পুলিশের কলার ধরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ন প্রতিবাদকে ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা আসলে কিসের আলামত ?

সরকারের উর্ধ্বতন মহলসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারী কুচক্র মহলের কোন ষড়যন্ত্র কিনা ? আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য আগষ্ট মাসেই বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদের উপর বাস তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যা, সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপদানের লক্ষ্যে বিরোধীদের তৎপরতা কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ষড়যন্ত্র ? নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ঘরের শত্রুদের কোন গভীর ষড়যন্ত্রের তৎপরতার জানান নয় তো? বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টারত। এই আগষ্ট মাসেই জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলা হয়েছে তাকে মেরে ফেলার যা এখনও চলমান। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে জানা যায় জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বর্তমানে আওয়ামী লীগে প্রধান দুটি সমস্যা হলো— অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে বিরোধী মতাদর্শীদের দলে অনুপ্রবেশ।

বাস চাপায় ছাত্র হত্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আসলে এটা কি একই মালিকের তিনটি বাসের রেষারেষি নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি সরকার বিরোধী আন্দোলন সৃষ্টির ইস্যু তৈরীর কোন ষড়যন্ত্র কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। যে বাস গুলির রেষারেষিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, যেটা চালাতেন মাসুম। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি চালাতেন জুবায়ের অপরটি ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০, এটা চালাতেন সোহাগ। এরমধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। মাসুম বিল্লাহর বাসের রেজিস্ট্রেশন আর ফিটনেস ঠিক থাকলেও রুট পারমিটের মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। আর সোহাগ আলির বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০ জুন। রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ মার্চ। আর জুবায়েরের চালানো বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৮ মে। রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৯ মে। রাস্তায় চলার অনুমোদনহীন বাসের চাপায় ছাত্র হত্যা কেমন যেন রহস্যাবৃত। আবার পরিবহন শ্রমিক সংগঠন নামধারী কিছু মোড়লের গোষ্ঠীস্বার্থের আধিপত্যও সড়কে অরাজকতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ‘দুর্ঘটনার নামে মানুষ হত্যা, আহত শিক্ষার্থীকে আবার পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা, ফুটপাতের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীর ওপর বাস তুলে দেয়া- এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।’

আমাদের নীতিহীনতা, বিবেকহীনতার গা শিউরে ওঠা উদাহারণ সামনে আসছে একের পর এক। অথচ আমরা নিশ্চুপ! নিশ্চুপ মন্ত্রী সকল, নিশ্চুপ নাগরিক সমাজ। অদ্ভুত এক নির্লজ্জতা গ্রাস করেছে আমাদের ! এভাবেই জাতির সামনে ভবিষ্যতের অন্ধকার সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে; অথচ দেশের কর্ণধারদের কোনো বিকার নেই।

আমাদের বিবেক আর কত নিচে নামলে আমরা প্রকৃত বিবেকবান হবো ?

নারী তুমি এমন কেন ? – ০২

চির সৌন্দর্যের কবি জন কিটস বলেছেন:
‘Anything of beauty is always fun:
Its beauty increases;
This is never lost in void. ‘

যে সৌন্দর্য ভাল না বাসে, হয় তার রুচিতে সমস্যা আছে কিংবা হয়তো জীবনে সে কখনো সৌন্দর্য দেখেনি। সৌন্দর্যের প্রতি ভাল লাগা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। একজন মানুষের ভিতরগত রূপটি দেখার জন্য তার কাছাকাছি অবস্থান করা, তাকে প্রতিক্ষেত্রে পর্যবেক্ষন করা অতি জরুরী হয়ে পড়ে। নিখুঁত পর্যবেক্ষন শক্তিই একজন অতি কাছের মানুষকেও চিনতে সহায়তা করে। আজ আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা আমার মনোজগতকে সাময়িকভাবে নাড়া দিয়েছে। একজন মানুষ কিভাবে এতকিছু করতে পারে ? এত ধৈর্য, এত ইচ্ছা শক্তি কিভাবে সে ধারন করে ? এ নারী প্রায়ই বলে প্রচুর অর্থ সম্পদ আর টাকা থাকলেই মানুষের মন বড় হয় না বা মানুষ সুখী হয় না দুঃখকে অতিক্রম করেই সুখকে স্পর্শ করতে হয়। আবার মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখমিশ্রিত। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই। তারপরও কোনো কোনো দুঃখ, বিরহ লক্ষ্য করা যায়। তবে এসব কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সেটা জীবনেরই অংশ। জীবন যে সব মিলিয়ে সামনে চলার। তাই সব রকম চিত্রই কম বেশি সব সময় দেখা যায়। জীবনের মধ্যেই তা ধরা দেয়। বড় মনের পরিচয় প্রকাশ পায় তার ব্যবহার আর আচার আচরনের মাধ্যমে। যে মানুষ অন্য মানুষের প্রাপ্ত অধিকারকে পাশ কাটিয়ে নিজের বুঝটা পুরোপুরি বুঝে তাকে কি মানুষ হিসাবে গন্য করা যায় ? নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে অন্যের যে সামান্যতম উপকারে আসে সেই তো প্রকৃত মানুষ।

মাঝে মাঝে আমি নিজেই নিজেকে চিনতে চেষ্টা করি। মনে করি এটা আমার জীবনের পরীক্ষা ক্ষেত্র। কিন্তু সবগুলো জিনিস কেমন যেন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে আমাকে। হতবুদ্ধি হয়ে কঠিন সময়কে আমি কেবল আলিঙ্গন করে চলেছি। কোথায় চলছি তা জানিনা।এমন কিছু মানুষ থাকে পৃথিবীতে যারা কাছে এলে অন্য সব ভুলে যেতে চায় মন। জীবনের এই শেষ বেলায়, যখন আকাশে অস্তরাগ আর ছায়া দ্রুত নেমে আসছে আবাদভূমিতে, যখন গাছের ডালে পাখিরা শেষ বেলার কথাগুলি বলে নিচ্ছে, তখনও এ নারীর সন্দর্শনে মন পাগল হয়ে যায়। আর এভাবেই জীবন চলে যাবে নদীতে ভেসে ভেসে যাওয়া ডিঙ্গি নৌকার মতো। তারপরও তাকে পরিপূর্ণ ভাবে দেবার বাসনা শেষ হবে না। কান্না নাকি মানুষের মানবিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ কোন কোন বেদনা ও অপমান একে অন্যের সাথে ভাগ করে নেয়। এ কেবল তাদেরই উপলদ্বির বিষয়। সেইসব বেদনায় এক নারীর অশ্রু অন্য নারীর চোখকে আর্দ্র করে। এ এক অনিবার্য ভাগাভাগি, অন্যরূপ সহমর্মিতা। কিন্তু এ নারীর বেলায় নয় কেন ? এ নারী কি শুধু দিয়েই যাবে ? কিছু কি পাবে না অন্যের কাছ থেকে ? এ কেমন বিচার ? কিছুই কি চাইবার নাই তার ?

তার যুক্তি দুঃখ মানুষের ছায়ার মতো। অন্ধকারে মিশিয়ে থাকে কেবল। আলো পেলেই ফুটে বেরোয়। ভাবনায় তুমি জগৎ সংসার ত্যাগ করতে পারো, কিন্তু জগৎ সংসার তোমাকে ছাড়বে না। আমৃত্যু তুমি সকল দুঃখ-কষ্টে, রোগে-শোকে জড়িয়ে থাকবে। নানান ভুল-ত্রুটি, মর্যাদা-অমর্যাদা তোমাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এর পরও তোমাকে সকলকে নিয়ে সামনে এগুতে হবে। এত কিছুর পরও এ নারীকে আমি কিছুই দিতে পারিনি, শুধুই নিয়েছি। তারপরও আমার ভালবাসার কোন কমতি নেই তার জন্য আমিও মনপ্রান উজার করে ভালবাসি। আরো ভালবাসতে চাই। তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আমার প্রিয় শিল্পী মানবেন্দ্র এর বিখ্যাত গান দিয়ে আমার ভালবাসার, শ্রদ্ধার বর্হিপ্রকাশ করতে চাই …

“আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি
তবু এ যেন গো কিছু নয়,
কেন আরো ভালবেসে যেতে পারে না হৃদয়” ?

চলবে ……

নারী তুমি এমন কেন ?

“ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে ভালবাসা”।

‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ বইয়ের উৎসর্গপত্রে হুমায়ন আহমেদ গুলতেকিনকে লিখেছিলেন এসব কথা। বাদল দিনের সে কদম ফুল এক সময় বাসি হয়ে যায়। সময়ের স্রোতে ভালবাসার মানুষ একসময় পর হয়ে যায়।স্বার্থ পূরন হলে ভালবাসায় চিড় ধরে, ক্লান্তি আসে। যে জীবন জীবনের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করে; সেই জীবন হারিয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক বড় ঘটনা বোধকরি আর নাই। আপন-পর, আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিতের গন্ডি এক্ষেত্রে থাকে না। শোক সাগরে সকল মানুষকেই ভাসায়।এখন আমি ক্লান্ত , অবসন্ন। নিঃসঙ্গতা আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। একটা নীরব আত্মবিশ্বস্ত নৈকট্য ছিল আমাদের দুজনের মধ্যে সেটা কেন যেন আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। হয়তো এটা আমার ব্যর্থতা, না হয় অবহেলা। কিন্তু তার কর্তব্য সে পালন করে যাচ্ছে কোন কিছু দাবী না করে। জানিনা কেন ? হয়তো এটা তার দায়বদ্ধতা। কে যাবে ব্যাখ্যা করতে নিজের ভেতরের অবস্থানটিকে ? আমার অবস্থান আমার ভিতরই থাক। কেন অন্যের কাছে নিজের টোটাল সত্তার স্বরূপকে নগ্নভাবে উৎঘাটন করতে যাব ? কী দায়ে ? কিসের প্রয়োজনে ? সব দায় আর প্রযোজন তো আজ প্রায় শেষ। তবে কেন নিজকে বড় করে জাহির করা ? নিজের রুচি ও চরিত্রের বাইরে জীবনে কখনো কিছু করিনি। করার চেষ্টাও করিনি, করতে গিয়েও করতে পারিনি। সব সময় নিজের কথা না ভেবে পরিবারের শক্ত অবস্থান দাড় করাতে নিজকে নিজের স্ত্রী সন্তানকে অধিকার বঞ্চিত করেছি। রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরী করেছি কিন্তু সেটা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারিনি। রাজনৈতিক সুফল আমি ভোগ করতে পারিনি। যারা আমার খ্যাতি যশ ব্যবহার করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তারা আমাকে আজ কেউ চিনতে চায় না।অবিশ্বাস্য খ্যাতি ও ব্যস্ততা আমাকে আমার স্ত্রী সন্তানদের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আমার স্বভাবগত উদ্যোগহীনতাও একটা কারণ বটে। আমি নিজকে আমার পরিবারের মধ্যে কখনোই সীমাবদ্ধ রাখিনি। তাই বার বার পরিবার থেকে কষ্ট পেয়েছি।শত কষ্টের মাঝে একজন আমাকে আগলে রেখেছে তার প্রেমময়ী স্পর্শ আমার মৃত্যুমুহূর্তকে পুষ্পময় করে রেখেছে। খুব কম মানুষের জীবনে এ দুর্লভ সৌভাগ্য জোটে। এ নারী আমাকে দুই হাত ভরে দিয়েছে তার সমস্ত কিছু উজার করে। চিরকাঙ্ক্ষিত অনুভূতি কখনো ব্যক্ত করেনি, আমিও বুঝার চেষ্টা করিনি। এত অঢেল পাওয়া ক’জন এর নসিবে জোটে ?

ভালবাসার অপূর্ব অনুভূতি কখনো বুঝতে পারিনি। রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পাড় করতে গিয়ে নারীর চিরন্তন ভালবাসা কখনো বুঝা হয়নি, তবে কাউকে যে ভাল লাগেনি তা নয়, ভাল লাগলেও রাজনীতির ক্যারিয়ার নষ্ট হবে বিধায় সেভাবে কাউকে জীবনে জড়াতে পারিনি। এ নারীকে না পেলে বোধহয় জীবনের খানিকটা অপূর্ণতা রয়েই যেত। আমার স্ত্রী কর্মাসের ছাত্রী তাই অঙ্কে ভাল ছিল কিন্তু মাঝ বয়সে এসে তার জীবনের জটিল অঙ্ক মেলাতে পারছে না। জন্ম মুহূর্ত থেকে একটা মেয়ে অবচেতন মনে বুঝতে শুরু করে সে মেয়ে মানুষ। সে অপরের অধীন। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার তার নেই। জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো বাবা-ভাই, স্বামী নয়তো ছেলে। এ পরাধীনতার অন্তরালে থাকতে থাকতে একসময় নিজের বিবেকের স্বাধীনতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলে। জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। কিন্তু নারী সংসারে, সমাজে যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।কখনো নিজের ইচ্ছায়, কখনো পরিবারের চাপে, কখনো সমাজের নিষ্পেষণে। এটা প্রত্যেক নারীর একটা অপ্রাপ্তি।সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা আমাকে সাহায্য করার কথা ছিল, দুঃসময়ে আমার পাশে থাকার কথা ছিল, আমার বাচ্চাদের মাথায় ভরসা আর নির্ভরতার হাত রাখার কথা ছিল, স্বার্থের টানাপড়েনে তারা নিজেদের রং বদলিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।তারপরও আমি নিজেকে ভাগ্যবঞ্চিত মনে করি না। আমি এখনও সুস্থ আছি, এখনো বেঁচে আছি। এ জীবনে আমার পাওয়া অনেক। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা, কষ্টের সময় পাশে থাকা, কজনের ভাগ্যে জোটে। তাই পৃথিবীর কাছে আমার কোনো অনুযোগ নেই, আক্ষেপ নেই। প্রকৃতির নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। এ নিয়মের আবর্তেই হয়তো কাছের মানুষ দূরে চলে যায় আর দূরের মানুষ কাছে। আমি একা একা বসে আছি। কিছুক্ষন আগে ইফতার করেছি, নামাজ পড়ার পর শরীরটা ক্লান্ত লাগায় অফিসে যাওয়া হলো না।ভাবনার কক্ষ পথে কেবল এ নারীর মুখ ভেসে উঠতে লাগল।

এক জীবনে মানুষ অনেক কিছুই পারে না। কিন্তু এ নারী তা পারছে এবং করছেও তিনি স্নেহময়ী বধূ, মমতাময়ী মা, দায়িত্বশীর শিক্ষাগুরু, স্বামীর প্রতি দায়িত্বপালনকারী সফল স্ত্রী। সে আমার প্রেমময়ী, প্রেরণাদায়িনী, শক্তিদায়িনী। এ নারী আমার কতটা প্রভাব ও কর্মকৌশলতার সাথী তা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা আমার পক্ষে সত্যিই দুরহ। এ নারী আমার জীবনে এসে আমার পরিবার, সংসার এবং আমার গৃহাভ্যন্তরে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করে রাখছে যার উপর নির্ভর করে দুর্গমগিরি, দুস্তর পারাবার পাড়ি দিতে পারা যায়।

চলবে ……..