সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

নির্যাতন

নির্যাতন

সমাজে সর্বস্তরে নির্যাতিত আজ নারী
জীবনখানি তোমার, পেলে যার হাত ধরি।
গর্ব, দর্প আরও তোমার যে অহংকার
ছিলে বোবা নির্বোধ ঘুচিয়েছে সে আঁধার।

কি ছিলো তোমার মেটাবে তৃষ্ণা ক্ষুধা
কত মমতা তার, বুক থেকে করেনি জুদা।
শিখলে হাটতে জীবনের যে পথখানি
সেতো নারী, বিনিময়ে পেলো শুধুই গ্লানি।

তুমিই বাপের বেটা, অতি দুরন্ত দুর্বার
করো দুর্জয় জয় সাধ্য যেন তোমার একার;
যৌতুকে লোভ, চাও অর্থ, বাড়ি গাড়ি
জীবন রণ করে বড় হও সেই তো বাহাদুরি।

এসিড নিক্ষেপ, নয়ত তার অঙ্গ হানি
কাটা হয় গলা, না হয় তুলে নেয় চক্ষু মনি;
সংসার গড়া, স্বপ্ন আশার এ কারবার
তুমি যে অথর্ব,অকর্মণ্য, জানা ছিলো কার।

দুশ্চিন্তা পিতামাতার লোকে তাই বলে
একটি মেয়ে পারে, কই পারে দশটি ছেলে।
কথাটি যেন মোটেই তবে অসত্য নয়
পরের ধনে বড় হলে, বড় তারে কে কয় ?

___________________________
আন্তর্জাতিক নির্যাতন দিবসে
নভেম্বর ২৫, ২০১৫

লিমেরিক – ১

লিমেরিক – ১

পাথরের কান্নায়
পাথরের কান্নায় তাঁর হৃদয়ে দ্যাখি মমতার ঢেউ
তাই তো ফুটায় ধুতুরা ফুল তার বুকে হাসে সেও;
আমরা মানুষ, পেয়েছি অমূল্য হৃদয়
গলা কাটি মানুষের, কি পাষণ্ড নির্দয়
রক্ত চুষে হিংসা ঢেলে, জান্নাত খুঁজি কেউ কেউ।

সতত তুমি পাশে থেকো

সতত তুমি পাশে থেকো

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
এবার পেলাম তোমায় বৃষ্টি মুখর বেশে;
পেঁজা পেঁজা মেঘগুলো রয় আকাশে ভেসে
ঝলমলে দিনও ফিঁকে হয় কুয়াশার মলিন পরশে।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
তুমি এলে কষ্টের ক্ষণ ছোট হয়ে আসে
দ্রুত সন্ধ্যা হয় যন্ত্রণা পালিয়ে আঁধারে মিশে
নির্মম শীতও কষ্ট দিতে ভয় পায় তুমি যদি পাশে।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
রোদ হয় আড়াল শহরের দালান কোঠায়
হেলে পড়ে রবি স্নিগ্ধ আলো পড়ে ধরণীর গায়
মায়াবী আলোরা মিশে যায় যেন নিসর্গের ছায়ায়।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
দুরন্ত অনুভব জেগে উঠে হৃদয় কোণে
মধুময় ভালো লাগা যেন ঢেউ খেলে মনে
তুলোর মত শুভ্র মিহি কেশর ঝরে যেন কাশবনে।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
বৃষ্টি ও বন্যায় কৃষাণের বেজার মুখখান
হাসিতে ভরে যেই দ্যাখে মাঠে পাকা ধান
শান্তির স্রোতে ভাসে প্রাণ, ভুলে অতীত অভিমান।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
প্রাতে দলবেঁধে যখন নেমে আসে শিশির
ঘাসের ডগায় দ্যাখি যেন মতি সোনার ভিড়
হাঁটি মেঠোপথে ভিজাও পা দু’টো লাগে শিরশির।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
নগর বন্দরে বা গলির মোড়ে মোড়ে
ভরে যায় অল্পপুঁজির ফেড়িওয়াদের ভিড়ে
চালের গুঁড়িতে নানান পিঠা তখনই চোখে পড়ে।

সতত তুমি পাশে থেকো হে হেমন্ত
তোমার তুলিতে আঁক অপূর্ব ছবি কত
ফুটে উঠে গাঁদা কলি, সাজাও মনের মত
লাবণ্য ছোঁয়ায় প্রকৃতি কি সুন্দর দেখায়, বিস্মিত।

যেই হই বড়

যেই হই বড়

ভাঙ্গা আমার কুঁড়েঘরে ছনের চালা
যেথা দিনাতিপাত অণুক্ষণ;
পাশেই সুরম্য অট্টালিকা দশ তালা
দ্যাখি অপলক সারাটিক্ষণ।

দৃষ্টি তখন তার সতত শুধু উর্ধপানে
মাটিকে যেন বড় অবহেলা;
আর রয় না কোমলতা পাথর প্রাণে
ফুরিয়ে যায় যেন কষ্ট জ্বালা।

বন্ধুত্ব তার তাই শুধু আকাশের সনে
রক্ত মিশে নেই হৃদয় ভাঁজে;
গায়ে লেগে আছে ঘাম নেই তা মনে
কি গর্ব তার অপরূপ সাজে।

টবে সাজানো রঙ ফুলে উঠোন ভরা
রস নেই খাদ্য নেই উপোস ;
মৌ-দলের তবু আনাগোনা ঘুরাফিরা
বিস্মিত নেত্রেও আমরা মানুষ।

মাটির সনে বাঁধা শুধু গরিবেরই প্রাণ
ভরণ পোষণও তারই বুকে;
যেই হই বড় লাগে বিস্বাদ মাটির ঘ্রাণ
দৃষ্টি তখন আকাশের দিকে।

জীবন

জীবন

ঘুম থেকে সতত জেগে উঠো
সেই কাক ডাকা ভোরে;
সকাল বিকেল, অচেনা পথে
হাঁটো কি দারুণ ভীড়ে।

নির্মম বিষয়ী কত উৎপাতে
হৃদয়খানি তোমার ক্লান্ত;
মন, মগজখানি বড্ড বিধ্বস্ত
তবু কই, হও না ক্ষান্ত।

সারাটা দিন কিসের সন্ধানে
স্বপ্ন কাঁধে চল দিগন্তে;
হাড় ভাঙ্গা শ্রমেও নও ভীত
উদ্যমী একনিষ্ঠ ব্রতে।

হয়ত চকিতেই তোমার হৃদয়
ফুলে উঠবে তুমি হাসবে;
সাধনার ফল পাবেই সে অমৃত
সুধা, ভরা স্নিগ্ধ সৌরভে।

লিমেরিক ১৩

লিমেরিক ১৩

তবু দ্যাখো হাসে খিল খিল

কখনো কি ভেবেছো আকাশখানি কেন ঘন নীল
লুকায় ভয়ে, যেই আসে কালো আঁধার অনাবিল;
রাতের নীরব কান্না শুনেছো কখনো
বাতাসেও বাজে, বাতাস বিষাক্ত যেন
অসহ যন্ত্রণায় মানুষ তবু দ্যাখো হাসে খিল খিল।

অধিকার

অধিকার

‘জীবন যুদ্ধ’ তবে এরই নাম
খুঁজে বেড়ায় অন্ন ঐ ডাস্টবিনে;
কি রাত আর দিন ঝরায় ঘাম
চলে না জীবন শত ঘানি টেনে।

সোনার এ ফসল ফলালো যারা
টাকার সে পাহাড় গড়লো কে বা;
মূল্য পায় না বোকা কৃষক তারা
না ফসলের দাম, নিজের সেবা।

ঘুরায় মিলের চাকা শ্রম দিয়ে
জ্বলে না চুলা, শূন্য তাদের হাঁড়ি;
না পায় কিছু ঘামের বিনিময়ে
মালিকের তবে হয় গাড়ি বাড়ি।

যারা নেতা রাতারাতি পেলো ধন
ভাসলো দীন দুখী চোখের জলে;
‘গণতন্ত্র চাই’ চেঁচায় জনগণ
ওরা পেল ধন কোন্ তন্ত্র ছলে ?

দীর্ঘশ্বাস

দীর্ঘশ্বাস

ভেবেছিলাম বড়ো হবো অনেক
দূরের ঐ আকাশটা পারব ছুঁতে
জীবনের হাল ধরবো শক্ত হাতে
পারলাম কই, কামড়ায় বিবেক।

হলো অর্জন বহু সনদ বহু চিঠি
কাজ হয় নি কেউ দেয় নি দাম
নেপথ্যে তোমরা, ফেললে ঘাম
স্বপ্ন দাঁড়াবো পাশে সেও মাটি।

হারাতে বসেছি, বিশ্বাস আশ্বাস
কোন মুখে দাঁড়াই লজ্জা লাগে
পেলামই শুধু ঢেলে দিলে ত্যাগে
বেঁচে আছি সাথি তবে দীর্ঘশ্বাস।

দেরী কত মুক্তি পেতে

দেরী কত মুক্তি পেতে

তোমরা মারছো যাদের পুড়িয়ে
পাবে নাকো কিছু গা ঝলসিয়ে;
সঙ্গী সাথি ওদের, শুধু যে কষ্ট
বারোমাস দুঃখ জ্বালায় আড়ষ্ট।

নিঃসঙ্গ ওরা রাস্তায় কাটে জীবন
কি বা আছে করতে এলে হনন;
ওরা তো পান করে বিষ সতত
থাকে বুভুক্ষু নির্বাক পিপাসার্ত।

ওদের কাছে কখনো নেই সুখ
কই পাবে বিত্তদের মত ভোগ;
ওরা নিঃস্ব, কিছু নেই ঝুলিতে
ভাবনা, দেরী কত মুক্তি পেতে।

একদিন পাশেই তো ছিলে

একদিন পাশেই তো ছিলে

অবরুদ্ধ আমি বন্দী আমি তবু নই একা
খুঁজে ফিরি আলো ভরা নক্ষত্রের দেশে;
অথচ পাশেই তো তুমি, পাই না দেখা
সতত ডাক গাও গান কত ভালোবেসে।

সতত ভাবি, পেয়েছি যে অমূল্য জীবন
ব্যর্থতায় ডুবে গেছি, কি সে অপরাধে;
তুমিই তো ছিলে ঘরে, পাশে প্রতিদিন
তবুও জড়িয়ে কেন ভুলে বিপদে ফাঁদে।

জানি চলে যাবে তুমি, তারা ভরা নীলে
বিশাল প্রান্তরে ভাসবো একা অশ্রুজলে;
সান্ত্বনা তবে একদিন পাশেই তো ছিলে
হবো যে হিম, ঝরে যাবো তিলে তিলে।

প্রতিবিম্ব তুমি

প্রতিবিম্ব তুমি

ভেসে ভেসে চলছি বাতাসে
ছুটছি, কখনো বা ঐ সে আকাশ পথে;
তুমি যেন আমার পাশাপাশি
বড় কাছাকাছি আমার প্রতিটি গ্রন্থিতে;

খুব ভালোবাসো আমাকে তুমি
কখনো মনে হয় সত্যি কি ভালোবাসো;
হয়তঃ বা নিতান্ত গবেট ভাবো
করো উপহাস, কখনো বা শুধুই হাসো;

অভিমানে চলে যেতে চাও দূরে
সাধ্য নেই তোমার, কোথাও পালাবার;
যেন রেগে আছো বড্ড চুপচাপ
তবুও দাঁড়িয়ে মুখোমুখি ভয় হারাবার।

তপ্ত ঐ দুপুরে খেটে মরি মাঠে
অভুক্ত ঘর্মাক্ত, কখনো বা ঝড় আসে;
চেয়ে দ্যাখি তুমিও কি অবসন্ন
অবনত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আমার পাশে।

কাটছি সাঁতার এ জীবন সমুদ্রে
তুমিও দিয়েছ যেন একই সাথে ঝাঁপ;
ছেড়ে যেতে হবে একদা পৃথিবী
তুমিও কি সঙ্গী হবে ছুঁড়ে ফেলে সবি ?

এক ঝাঁক হাইকু ৩৬

এক ঝাঁক হাইকু ৩৬
(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ জাপানি কবিতা)

এক
কই মানুষ
শুনে না কারো চিক
যেন বেহুঁশ।

দুই
সেই তো ধনী
হৃদয় মাঠখানি
মমতা খনি।

তিন
যেই ঐ শীত
নামে এই ভূতলে
পিঠার গীত।

চার
মন তোমার
বড় রহস্যে ঘেরা
তুমি যে কার।

পাঁচ
ফুটছে ফুল
পুলকিত কানন
চিনতে ভুল।

ছয়
স্বর্গ নরক
দ্যাখি কত জীবন
মিষ্টি ও টক।

তুমি যে অধীশ্বর

তুমি যে অধীশ্বর

কত না লক্ষ সৃষ্টির তুমি সৃষ্টিকারী
এক বা বহুকোষী,মানুষ পশু পাখি;
এ মনুষ্যে করলে ভেদ নর ও নারী
পাঠালে ভূতলে হাতে নিয়ন্ত্রণ রাখি।
প্রাণীদের কেউ বা নম্র, কেউ শালীন
কেউ বা রুক্ষ, জালিম কঠিন নির্মম;
কেউ হাসি খুশী কারো মুখ যে মলিন
দাও কষ্ট, কাউকে দাও সুখ পরম।

শুনি নর সৃষ্টি তব খেয়ালের বশে
বৃক্ষ পত্র যদিও মেতে গুন কীর্তনে;
নারী করেছো সৃষ্টি যদিও ভালোবেসে
কেন পায় স্বর্গ কেউ পুড়ে সে আগুনে ?
সকল ক্ষমতার তুমি যে অধীশ্বর
নিপুণ ব্যবস্থাপক, দক্ষ কারিগর।

চতুর্দশপদী কবিতা।

শারদীয় দুর্গোৎসব

শারদীয় দুর্গোৎসব

শারদীয় দুর্গোৎসবে লক্ষ মণ্ডপে
যেন শুধু খুশীর আমেজে ভূলোকে;
সর্বত্র ভরা দেবী মা’র ঐশী আলোকে
আকাশ বাতাস মর্ত্য যেন ঝকঝকে।

রাণী শরতের এ অমাবস্যা তিথিতে
দুর্গা মার পদার্পণ স্বর্ণ পালকিতে;
আর এ শারদীয় পূজোর ঐ সে অন্তে
নেবেন বিদায় চড়ে মা’, মস্ত হাতীতে।

ষষ্ঠীতে হয় যে দুর্গা মায়ের বোধন
হয় অধিবাস আর মা’র আমন্ত্রণ;
বন্দনাতে হবে যে মা’র নিদ্রা ভাঙ্গন
বিজয়া দশমীতে মা’র যে বিসর্জন!

মণ্ডপে মণ্ডপে হয় পূজোর অঞ্জলি
কত নৃত্য, বাজে বাদ্য সঙ্গীত সুরেলী;
প্রসাদ ভোগ আরো কত আনন্দ কেলী
বিশ্ব ব্যাপী যেন এক সে খুশীর হোলি।

যতই আসছে ঘনিয়ে বিদায় বেলা
আঁখি ভরে জলে, বাড়ছে অন্তর জ্বালা;
যদিও কামনা মা’র সুজলা সুফলা
হবে বসুন্ধরা, শুভেচ্ছাও প্রাণঢালা।

সর্বত্র বাজছে সে শাঁখ সানাই ঢোল
বর্ণাঢ্য এ চারিদিক, সবাই ব্যাকুল;
এ বিদায় ক্ষণে নিতে মা’র পদধূল
যাবেন যে তিনি, ছাড়ি এ ধরাকুল।

সেহি মা

সেহি মা

দশটি মাস পেলো যে জঠর যন্ত্রণা,
কষ্ট, তবু হাসিমুখ, গর্ব অহংকার;
মমতা ভালোবাসায় বড় করে সোনা
মিলে প্রশান্তি ধরাকে দিয়ে উপহার।
তবু যেন মা, সতত পায় অবহেলা
তাঁরই আঁচল তলে, যে পায় পৃথিবী;
স্নেহ মাখা হাত ধরে, পা পা পথচলা
বিনিময়ে মা, তাচ্ছিল্য সহে নিরবধি।

জীবদ্দশায়, বার্ধক্যে উপনীত যেই
তখনো চিন্তন শুধু, সন্তানের ভালো;
কই ভাবি তা, ঈশ্বর প্রতিমা তো সেই
সেহি মা, এই জগত ও জাতির আলো।
ব্যথা পেয়েছিলে তুমি,কেঁদেছিলেন মা
জগতে কে তেমন, ঐ মায়ের উপমা।

চতুর্দশপদী কবিতা