রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

ভুলে থাকা মন -২২

ভুলে থাকা মন -২২

অনেক দিন পরে আজ তোর কাছে এসেছি রে মন। কেমন আছিস? অভিমান করেছিস? তাও তো তোর অভিমান করলে আমি আছি মান ভাঙানোর জন্য। আমার যে তাও নেই, অভিমান করতেই ভুলে গেছি। অথচ দেখ কি ভীষণ অভিমানী ছিলাম আমি। দাদু কিছু বললেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকতাম, যতক্ষণ না দাদু কথা বলবে ততক্ষণ অভিমান করে থাকতাম। আর যেই দাদু এসে ডাকতো ‘আমার বড়দিদি কি রাগ করে আছে?’ ওমনি অভিমান গলে জল। রেগে যে ছিলাম তাই ভুলে যেতাম। কি অদ্ভূত না! জানিস তো ভালোবাসা নামক পোশাক জীবন থেকে খুলে রেখেছি। এক জীবনে সব পাওয়া যায় বল? তবুও দেখ কি অক্লেশে বলি আমার তো সবই আছে। কোথাও কিছু কমতি পড়েনি। এই ছাপোষা জীবনের হিসেব আর মেলাতে যাই না। আমাকে যে ভালোবাসা যায় না আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তবে করুণা করিস না কখনও মন। ভালোবাসতে না পারিস অন্তত করুণা করিস না। এ আমার সইবে না রে।

এক ফালি মেটে রঙ রেখেছি, গ্রামের রাস্তা আঁকবো। ইচ্ছেঘুড়ি গুছিয়ে রেখেছি ঝিকিমিকি রোদ্দুরের মাঝে। চোখ আয়নায় মনখারাপিয়া রঙ। আমি চাইনা তবুও মনখারাপেরা যখন তখন আসে। জানিস মন, এইতো সেদিন এক বয়োঃজ্যেষ্ঠ, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষের কাছে আমার প্রশংসা শুনলাম। তুই শুনবি? আচ্ছা শোন তবে -একদিন আমি একদম মন খারাপ করে আছি, আজও মন খারাপ হলে চুপচাপ হয়ে যাই। তাঁর সাথে হঠাৎই দেখা, আমাকে দেখেই তিনি বললেন মন খারাপ কেন? তারপর একথা সে কথার পরে তিনি বললেন “আমার বয়স অনেক বেশি, পৃথিবী তোমার থেকে বেশি দেখেছি। অভিজ্ঞতা তাই বেশি। একটা কথা বলি শোনো – মানুষ দু ধরনের হয়। class আর mass এর অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ মানুষ এই mass এর মধ্যেই থাকে। থাকতে ভালোবাসে। আর হাতেগোনা কিছু মানুষ class এর অন্তর্ভুক্ত। আর তুমি তাদের একজন। যেমন ধরো এক জায়গায় ভীষণ ভীড়, সবাই ঠেলাঠেলি করছে ইঁদুর দৌড়ে। আর দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে একা, যে তার বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে, তার বিভিন্ন গুণাবলী দিয়ে জায়গাটা আলো করে রেখেছে, ওই মেয়েটাই হলে তুমি। যারা তোমায় চিনবে তারা জানবে এই ভীড়ে থেকেও তুমি কতো আলাদা”।জানিস মন এইসব শুনলে ভয় হয়। নিজের প্রশংসা খুব বেশি শুনিনি তো কখনো।

অনেকগুলো ছবি, অনেক গুলো বছর, তোর সাথে, এক সাথে মিলেমিশে আছি। এই শীতের কাঁচা মিঠে রোদের মতো ভালো থাক। ভালো থাক নীল আকাশের মতো , ভালো থাক শিশির হতে চাওয়া এক ফোঁটা হিমের মতো। চোখে এক ফোঁটা জল যদি জমে, নদী থেকে গড়ে নিস। অনেকগুলো ছবি, অনেক গুলো বছর, তোর সাথে, এক সাথে মিলেমিশে আছি। এই শীতের কাঁচা মিঠে রোদের মতো ভালো থাক। ভালো থাক নীল আকাশের মতো, ভালো থাক শিশির হতে চাওয়া এক ফোঁটা হিমের মতো। চোখে এক ফোঁটা জল যদি জমে, নদী থেকে গড়ে নিস। ছিঁড়ে গেছে সমস্ত আঁকার খাতা, ছিঁড়ে গেছে পুতুলের জামা, ছিঁড়ে গেছে ভেলভেট টুপি, ঝলমলে আহ্লাদি ছবি।কিছু জিনিস জমা হয় রোজ, কিছু মুছে দিতে হয়। আর থেকে যাস তুই শুধু সবখানে। গাছেদের কোটরের কোণ ঘেঁষে। কথা যত তোর সাথে আমারই, আর কেউ জানবেনা সত্যি। টেলিপ্যাথি হোক চুপিচুপি, ফিসফাস আবডালে হরদম। এইখানে আছি আমি, আর, তুই শুধু জল-ছায়াতে। খুব ভালো থেকে যাব আমি। তুই ভালো থাক।ভালো থাক ঘর-বাড়ি, ভালো থাক লোক-জন, ভালো থাক কাজ কাজ খেলারা, ভালো থাক ভালোভাবে থাকারা। ভালো থাক একটুক থেকে যাওয়া।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

পাঁচ ফোড়ন

পাঁচ ফোড়ন

যীশুর নামে যুদ্ধের ট্যাঙ্ক
বুদ্ধ হেসে ওঠে পোখরানে।
গঙ্গায় নামে রক্তস্রোত।

ঈশ্বর! তুমি নতুন উপন্যাস লেখ।

একটা নারীকে আবিষ্কার করা
নতুন দেশের আবিষ্কারের মতোই।
ইচ্ছেমত তুমিও হতে পারো
কলম্বাস বা মার্কো পোলো।

সম্পর্কের মাঝে খুব সাবধানে
ছোট্ট একটা হাইফেন রেখো
কারণ হাইফেন একটু বড় হলেই
শূন্যস্থান হয়ে যাবে।

বিষণ্ন মুখ মাঝরাতের ছবি
লক্ষ্য সঠিক তীরন্দাজের।
মুছোনা মুখের বিন্দু বিন্দু ঘাম।
একদিনের জন্য হলেও
হেঁটেছিলে আমার পথে..
ওইটুকুই সঞ্চয় আমার।

ছিন্ন ভিন্ন ছড়িয়ে শব্দেরা
দেখেছি রাতের অন্ধকারে
সাড়ে তিনহাত বুঝে নিলেই
ঘরের মধ্যেই ঘর।

______________________
(‘প্রেমিকের নাম আগুন’ বই থেকে )

হিম হিম সকাল

হিম হিম সকাল

অনেক দিন পরে সকাল এসেছে খুব শান্ত হয়ে, প্রাচীন বটের মতোই ছায়া পেতে দিয়ে। এই হৈমন্তিক কুয়াশা ঘেরা স্নিগ্ধ সকালে সোহাগে বেহাগে আলতোভাবে জড়িয়েছে আমায়। ঘুম মাখা আধা আধি চোখে তাকিয়েছি। হিমে ওমে মাখামাখি গালিচার মতো তুলোট সকালে, চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থেকেছি সোনালি ভোরের দিকে। মনে মনে বলেছি আজকে আবার ভোর মেখেছি হিমেল ছোঁয়াতে। মন তার দরজা খোলে অতি ধীরে।

এখন এই হিম হিম সকাল বেলায় অলিতে, গলিতে, মাঠে, ঘাটের আনাচে, কানাচে ঘাসেরা সব বিছিয়ে নেবে শিরশিরিয়া চাদর। মায়ের কোলে ওম নেবে পাখির ছানারা। পরিযায়ী পাখিরা ডানায় ডানায় বয়ে আনবে পশমিনা সকাল। বালির কোল থেকে পিঁপড়েরা বয়ে আনবে মিঠে সাগর। সূর্য্যের অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা। আর ঠিক তখন এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবো ইচ্ছে-বেলুন।

কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে মন খারাপি নদীর সাঁকো। হীরের দানার মতন টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে শিশির। জানলা খুলে বুকে ভরে নেবো মাটির আতর।

নারীদের পোশাকের ইতিহাস

নারীদের পোশাকের ইতিহাস

শাড়ী নিয়ে জানার প্রথমেই জানা দরকার এই শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে… “শাড়ী” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “শাটি” হতে যার অর্থ “এক ফালি কাপড়”। পরবর্তীতে প্রাকৃত এর বিবর্তনের কারণে “শাডি” বা “সাত্তিকা” শব্দ হতে শাড়ী শব্দে পরিণত হয়েছে… শাড়ীর উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সুদূর অতীতে। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। শুরুতে নারীরা ছিলেন স্বল্পবসনা। ছিলো শুধু দু টুকরা কাপড়ে নিজেদের শরীর ঢাকতো। মৌর্য এবং সুঙ্গ যুগে নারী ও পুরুষেরা চারকোনা কাপড় পরতো। শরীরের নিচের দিকে কাপড়কে বলতো অন্তরীয় এর উপরের অংশকে উত্তরীয়। পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য দেখেই তা অনুমান করা যায়। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রচলিত পোশাক। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ আদিম কালে ছিল না। এই সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র পুরুষের ক্ষেত্রে “ধুতি” এবং মেয়েদের বেলায় “শাড়ি” নামে অভিহিত হয়। বয়ন শিল্পের উৎপত্তির সঙ্গে শাড়ির সংযোগ রয়েছে। তখন যেহেতু সেলাই করার কৌশল জানা ছিল না তাই সেলাই ছাড়া টুকরা কাপড় পরাই ছিল শাস্ত্রীয় বিধান।

কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’-এ শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। ইলোরা অজন্তা গুহার প্রাচীন চিত্রাবলি বলে দেয়, খ্রিস্টাব্দ শুরুর সময়ে শাড়ির অস্তিত্ব ছিল। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের নারীরা শাড়িকেই প্রধান বস্ত্র বানিয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার ভাস্কর্যে পুরোহিতদের শাড়ীকেই ধুতির মতো পরিহিত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং মনে করা হয় ধুতিই শাড়ী প্রচলনের ভিত্তি। অন্য আরেকটি মতবাদে বলা হয়ে থাকে, ভারতবর্ষের কেরালা প্রদেশে ব্যবহৃত দুই প্রস্থের পোশাক “মান্দাম নারিয়াথাম” হতে শাড়ীর উৎপত্তি। মোঘলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় শাড়িতেও মোঘলাই আভিজাত্যের সংযোজন। মোঘলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত অন্দর মহলে। মোঘলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হত। তবে সেসময় শাড়ি পড়া হত এক প্যাঁচে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একেক রকমের কাপড় পরতো। দক্ষিণ ভারতে, এমনকি ঔপনিবেশিক আমলেও, কোনো কোনো নারী তাদের শরীরের ওপরের অংশ ঢেকে রাখতো না। ১৫শ শতাব্দীর পরে পোশাক আশাকে গ্রিক, রোমান, আরব এবং চীনা প্রভাব পড়তে শুরু করল। কি ধরনের কাপড় পরতে হবে তার লিখিত কোনো নির্দেশনা ছিলো না। তবে মুসলিম নারীরা সাধারণত নিজেদেরকে ঢেকে রাখতো। সেজন্যে তারা আলাদা আলাদা কয়েকটি কাপড় পরতো যেখানে থেকে সালওয়ার কামিজের জন্ম। ভিক্টোরিয়ান যুগে ব্লাউজের প্রচলন শুরু হলো। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জনদানন্দিনী দেবী আজকে যেভাবে ব্লাউজ পরা হয় তার ধারণা তৈরি করেন, কারণ শাড়ির নিচে নগ্ন বক্ষের কারণে তাকে ব্রিটিশ রাজের আমলে তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকেই আজকের ব্লাউজের সূচনা। মূলত শেরশাহর আমলে এক টুকরো কাপড় বুকে বেঁধে রাখা হতো। সে-সময় একে কাঁচুলি বলো হতো। আবার অনেকে বক্ষবন্ধনীও বলতেন। চোলি, উত্তরীয়া, স্তান্নাপাতা, কুরপুশিকা প্রভৃতি নামেরও উল্লেখ আছে অনেক স্থানে।

পেটিকোটের প্রচলন শুরু হয় মুসলমানদের আগমনের সাথে, তারাই ঘাগরা/ পেটিকোট পোশাকের ব্যবহার শুরু করে ভারতবর্ষে এবং শাড়ীতে সেলাইয়ের ব্যপারটি তারাই আরম্ভ করেন। পূর্বে কাপড়ে সেলাইয়ের প্রথাতো ছিলই না বরং কাপড়ে সেলাই কে অপবিত্র মনে করা হত। এভাবেই বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে আজকের শাড়ী, ব্লাউজ,পেটিকোট তার নিজ রূপ ধারণ করেছে।

আংশিক তথ্য স্বীকার :

শুভ জন্মদিন হে মহাকবি…

শুভ জন্মদিন হে মহাকবি…

প্রথমে আসাদ নামে কবিতা লিখতেন, পরে গালিব নাম ধারণ করেন। ১১ বছর বয়স থেকে ফার্সি ও উর্দু ভাষায় গজল লিখেছেন। ভারতের উর্দু কবিদের অন্যতম শিরোমণি। জন্ম আগ্রায়। দিল্লিতে স্থায়ী বসবাস। শেষদিকে বাহাদুর শাহ জাফরের সভাকবি ছিলেন। প্রেম, বিশ্বাস, সুর, সুরা, অবক্ষয়, হাহাকার, জরা প্রভৃতি তাঁর কবিতায় সার্থক রূপায়ণ করেছেন। মৃত্যু নিঃসঙ্গ করুণভাবে দিল্লিতেই। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ানে গালিব’। দাস্তাম্বু’ তাঁর সিপাহি বিপ্লবের রোজনামচা নির্ভর একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। আমি এমনি এমনিই তাঁর প্রেমে বিভোর নই, তাঁর শের, শায়েরী, গজল এইসব পড়লে, আমি নিশ্চিত আপনারাও তাঁকে ভালোবেসে ফেলবেন। আজ এই ঈশ্বরের জন্মদিন। তাঁর কিছু শায়েরী …

১. হ্যায় অউর ভি দুনিয়া মে সুখনবর বহত আচ্ছে,
ক্যহতে হ্যায় কি গালিব কা হ্যায় আন্দাজ-এ বায়াঁ অউর,

২. আদায়ে খবাস সে গালিব হুয়া হ্যায় মুখ্তসর,
সালায়ে আ-ম হ্যায় ইয়ারা-এ নুক্তা দাঁ কে লিয়ে!

৩. ইয়ে মাসায়িল-এ তাসাউফ ইয়ে তেরা বায়াঁ গালিব,
তুঝে হাম ওলি সামাঝতে জো না বাদাখবার হোতা,

৪. হাথো কে লাকিড়োঁ পে মত্ যা এ গালীব ,
নসীব উনকে ভী হোতে হয়্ জিনকে হাত নেহি হোতে।

৫. গালীব শরাব পীনে দে মসজিদ মে বৈঠ কর,
ইয়া ওহ জগাহ বাতা জাহাঁ খুদা নেহি।

৬. হাজারোঁ খোয়াইশ এ্যয়সে কে হর খোয়াইশপে দম নিকলে,
বহত নিকলে মেরে আরমাঁন লেকিন ফির ভি কম নিকলে!

হ্যাপী কাওয়াজা

হ্যাপী কাওয়াজা

“La célébration annuelle de Kwanzaa Célébrée du 26 décembre au 1er janvier, Kwanzaa est une fête familiale, culturelle, spirituelle et historique des Africains et Afrodescendants. Elle a pour but de réaffirmer les liens indestructibles entre l’Afrique et toute sa diaspora à travers le monde.”

কাওয়ানজা একটি অ্যাফ্রো আমেরিকান উৎসব। যা প্রতি বছর উদযাপন করা হয় ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১লা জানুয়ারী পর্যন্ত। কাওয়ানজা আফ্রিকান এবং আফরোডিসেন্ডেন্টদের পরিবার, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক উদযাপন। কাওয়ানজা একটি সোয়াহিলি ‘mutunda ya Kwanzaa’ শব্দ যার অর্থ “প্রথম ফল”। কাওয়ানজা মূলত কৃষি উৎসবকে ঘিরে এবং পরিবার পুনর্মিলন, পূর্বপুরুষদের স্মৃতি, মৌলিক ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির প্রকাশকে বাড়ায়। অনেকটা আমাদের নবান্ন উৎসবের মতো।

দক্ষিণ আফ্রিকায় southern solstice এর সময় first fruits festival উৎসব হয়। মৌলানা কারেঙ্গা একজন আমেরিকান black power activists and secular humanist. তাকে Ronald McKinley Everett হিসেবেও জানা যায়। মৌলানা কারেঙ্গা ১৯৬৬/৬৭ সালে এই উৎসবের সূচনা করেন। যেটা আফ্রিকান আমেরিকান ছুটির দিন হিসেবে পালন হয়। কারেঙ্গা কিছুটা first fruits festival থেকে উৎসাহিত হয়েছিলেন। কারেঙ্গা তখনই এই উৎসব নিয়ে আগ্রহ দেখায় যখন তিনি জুলু উৎসব ‘Umkhisi Wokweshwama’ সম্বন্ধে পড়েন। যেটা একটি বার্ষিক harvest festival জুলু সম্প্রদায় এর মধ্যে।

তারপর থেকে এটি নিয়মিত পালন করা হয়। সাতটি মোমবাতি একটি ‘কিনারার’ মধ্যে সাজানো হয়। এই উৎসব এর সাতটি নীতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।তিনটে লাল মোমবাতি ‘কিনারার ‘ বাঁ দিকে থাকবে, তিনটে সবুজ ডানদিকে আর মাঝে একটা কালো মোমবাতি থাকবে। ‘kinara’ একটি সোয়াহিলি শব্দ যার অর্থ মোমদানী। এই সপ্তাহে প্রতিদিন একটা করে নতুন মোমবাতি জ্বালানো হয়। কালো রঙের মোমবাতি দিয়ে শুরু হয়, তারপর বাঁ দিক থেকে ডানদিকে এক একদিন এক একটা মোমবাতি জ্বালানো হয়। কালো রঙের মোমবাতি আফ্রিকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। লাল রঙের মোমবাতি প্রতিনিধিত্ব করে ওদের জীবন সংগ্রাম। আর সবুজ রঙের মোমবাতি প্রতিনিধিত্ব করে ওদের ভবিষ্যত ও আশা যা সেই সংগ্রাম থেকে তারা পেয়েছে।

সাতটি মৌলিক নীতিকে কেন্দ্র করে এই উৎসব গড়ে উঠে যাকে সোয়াহিলি ভাষায় Nguzo Saba বলা হয়; এই নীতিগুলি হল:

১. উমজা বা ইউনিটি – এই নীতিটি পরিবার, সম্প্রদায় এবং জাতির মধ্যে ঐক্য তৈরি এবং বজায় রাখতে আমন্ত্রণ জানায়।

২. কুজিচাগুলিয়া বা আত্মনিরূপণ : এই নীতি অপরিহার্য; সবাইকে সংজ্ঞায়িত করা এবং নিজেদের জন্য কথা বলার সমস্ত সাহস, নিজেদের জন্য ভাল বা মন্দ বলার অধিকার বোঝায়।

৩. উজিমা (যৌথ কাজ ও দায়িত্ব) : ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায় গড়ে তুলতে এবং বজায় রাখা শিখতে সাহায্য করে; ভাই ও বোনদের সমস্যাগুলো নিজেদের সমস্যা মনে করে সমাধান করা।

৪. উজামা (অর্থনৈতিক সহযোগিতা) : এই নীতিটি মৌলিক কারণ নিজেদের ব্যবসা, বাজার গড়ে একসাথে গড়ে তোলা এবং সেখান থেকে লাভ করা; অর্থাৎ যৌথ অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করা সমগ্র সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য।

৫. নিয়া (লক্ষ্য ) : পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা। এটি সম্প্রদায়ের সবার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এবং এই মিশনটি সমগ্র সম্প্রদায়কে কীভাবে উপকৃত হবে তা নির্ধারণ করা।

৬. কুম্বা (সৃজনশীলতা) : সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃ‌ষ্টিশীল কাজ, সৌন্দর্য এবং সম্পদ নির্মাণের জন্য যে ব্যক্তিগত প্রতিভা এবং কল্পনা তা সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করা।

৭. ইমানি (বিশ্বাস) : সকল বাধাবোধ, সমস্যা, সত্ত্বেও সবাইকে হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করা। বাবা মা, শিক্ষক শিক্ষিকা, নেতা নেত্রী, অর্থাৎ সবাইকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করা, তাদের জীবন সংগ্রাম থেকে জয়ী হওয়াকে বিশ্বাস করতে শেখায়।

কোয়ানজাকে যে যে সিম্বল ব্যবহার করা হয়, তা হলো –
১. Mkeka অর্থাৎ মাদুর। যার ওপরে বাকি সিম্বলগুলো রাখা হয়।
২. Kinara অর্থাৎ মোমদানী
৩. Mishumaa Saba অর্থাৎ সাতটি মোমবাতি
৪. Mazao অর্থাৎ ফসল
৫. Muhindi অর্থাৎ ভুট্টা যে প্রাথমিক সিম্বল খাবার সাজানোর জন্য।
৬. a Kikombe cha Umoja অর্থাৎ ঐক্য কাপ, যা কিনা স্মরণ করতে সাহায্য করে এবং shukrani বা ধন্যবাদ জানানোর জন্য আফ্রিকান পূর্বপুরুষদের।
৭. Zawadi অর্থাৎ উপহার।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

বিখ্যাত ব্যাক্তিদের পছন্দের জলখাবার

বিখ্যাত ব্যাক্তিদের পছন্দের জলখাবার

১৬৬২ সালের আগে ইংরেজরা চা পান করত না। রাজা দ্বিতীয় চার্লসের স্ত্রী ক্যাথেরিন ডি ব্রাগ্যাঞ্জা ব্রিটেনে চায়ের প্রচলন ঘটান। পর্তুগালের মেয়ে ক্যাথেরিনের ছিল চায়ের নেশা। পর্তুগালের রাজদরবারেও চা ছিল প্রিয় পানীয়। সে যাই হোক রানীর চা পানের খবর সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই ব্রিটেনেও চায়ের প্রচলন শুরু হয়।

লেখক চার্লস ডিকেন্সের জলখাবারে পছন্দের আইটেম ছিল ক্রিম দেয়া দুই টেবিল চামচ রাম। এছাড়া কেটলি থেকে ঢালা ধোঁয়া ওঠা গরম চা তাঁর প্রিয় ছিল।

চতুর্থ এডওয়ার্ড জলখাবার খেতেন কেবল কর্নফ্লেক্স দিয়ে। রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড আবার জলখাবারে পছন্দ করতেন পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা মুরগির কলিজা, ক্রিম আর ব্রান্ডি। এছাড়া দিনে ২০টি সিগারেট আর ১২টি চুরুট লাগত তাঁর। এত বেশি ধূমপান করার পরও ৬৪ বছর বাঁচে এডওয়ার্ড।

১৯৫৪ সালের কথা। বিমানে ভ্রমণ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টোন চার্চিল। জলখাবারের জন্য তাকে মেন্যু পছন্দ করতে বললে তিনি কি বলেছিলেন কাদাখোঁচা পাখির মাংস। অনেকে মনে করতে পারে, তিনি মজা করেছিলেন। আসলে তিনি সত্যি সত্যিই কাদাখোঁচার মাংস পছন্দ করতেন। দিনের প্রথম খাবারটা তিনি শুরু করতেন নিজের পছন্দের বিশেষ মেন্যু দিয়ে। কয়েক বছর আগে তার হাতে লেখা খাবার মেন্যু নিলামে ওঠার পর ভোজন রসিক চার্চিলের সকালের খাবারের তালিকা দেখে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হয়। কাদাখোঁচার মাংস তো কেবল শুরু! দুটি আলাদা আলাদা ট্রেতে সাজানো থাকত নানা পদের জিভে জল আসা খাবার প্রথম দফায় থাকত ডিম পোচ, টোস্ট, মাখন, জ্যাম আর মাংস। দ্বিতীয় দফায় থাকত পাকা আঙ্গুর, এক বাটি মিষ্টি, হুইস্কি, সোডা আর প্রিয় সিগারেট।

নানা পদ দিয়ে জলখাবার পছন্দ করতেন বিখ্যাত পপ গায়ক এলভিস প্রিসলি। মাখন আর অতিরিক্ত লবণ দিয়ে রান্না করা ছয়টি ডিম, এক পাউন্ড বেকন, আধা পাউন্ড সসেজ বা পিনাট বাটার আর ব্যানানা স্যান্ডউইচ ছিল তার সকালের খাবারের নির্ধারিত মেন্যু।

ফুড জার্নালিস্ট সেভ এমিনা তার ‘দ্য ব্রেকফাস্ট বাইবেল’ গ্রন্থে এই সব তথ্য তুলে ধরেছেন। বইটিতে নানান বিখ্যাত ব্যক্তিদের পছন্দের জলখাবারের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

অন্যভাবে ক্লিওপেট্রা …

অন্যভাবে ক্লিওপেট্রা …

হেনরি হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রায় ফুটে উঠেছে ক্লিওপেট্রার ব্যক্তিত্ব, উচ্চাভিলাষ আর কিছুটা নারীসুলভ অসহায়তা। এ ছাড়াও ক্লিওপেট্রার চরিত্র নিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ড্রাইডেন প্লুটার্ক, ড্যানিয়েল প্রমুখ। যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের নারী হলেও বিশ্বজুড়ে আজও তাঁকে নিয়ে কৌতূহলের কোনো কমতি নেই। রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রার প্রসঙ্গ আসলেই প্রাচীন মিশর আর রোম সভ্যতার কথা অনিবার্যভাবে ওঠে আসবেই।

সপ্তম ক্লিওপেট্রা সারা বিশ্বের আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা হয়েছে কালজয়ী উপাখ্যান। জর্জ বার্নড শ’ লিখেছেন সিজার ক্লিওপেট্রা, এতে প্রাধান্য পেয়েছেন রোমান্টিসিজিম। শেক্সপিয়র লিখেছেন অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা। এটিতেও প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আর সেই সঙ্গে তিনি আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন ক্লিওপেট্রার রূপের।

এই রূপসী ও তরুণীকে নিয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক কল্পকাহিনী আর কিংবদন্তি। মিশর ছিল তখন সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ। রোমের দৃষ্টি প্রায় সর্বদাই নিবদ্ধ থাকত সেদিকে, খাদ্য বা অন্য প্রয়োজনে।

ক্লিওপেট্রা একজন মিশরীয় ফারাও। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের সর্বশেষ ফারাও। তাঁর মৃত্যুর পর মিশর রোমান প্রদেশের আওতাধীন হয়। ক্লিওপেট্রা ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় টলেমিক বংশের সদস্য। মহামতি আলেকজান্ডারের একজন সেনাপতি আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর মিশরে কর্তৃত্ব দখল করেন ও টলেমিক বংশের গোড়াপত্তন করেন। এই বংশের বেশিরভাগ সদস্য গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন, এবং তাঁরা মিশরীয় ভাষা শিখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ক্লিওপেট্রা মিশরীয় ভাষা শিখেছিলেন এবং নিজেকে একজন মিশরীয় দেবীর পরবর্তী জন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৮ বছর বয়সে মিশরের সম্রাজ্ঞী হলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা। মিশরীয় নিয়ম অনুযায়ী অষ্টাদর্শী ক্লিওপেট্রা (ফিলোপেটর) তার ছোট ভাই ১০ বছর বয়সী ত্রয়োদশ টলেমিকে বিয়ে করে মিশরের রানী হন। কিন্তু তাঁদের দুজনের মধ্যে ছিল বিরোধ। তখনকার মিশরীয় আইন অনুসারে দ্বৈত শাসনের নিয়মে রানী ক্লিওপেট্রার একজন নিজস্ব সঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কাজেই ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করতে হয় তারই ছোটভাই টলেমি-১৩কে, যখন তার বয়স ১২ বছর। তখনকার মিশরীয় আইনে ক্লিওপেট্রার একজন আপন সঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল যে কিনা স্বামী, ভাই বা পুত্র যে কেউ হলেই চলতো। ইতিহাসে ক্লিওপেট্রার জীবনে বহু পুরুষের আগমন ঘটেছে, তাদের মধ্যে রোমান বীর জুলিয়াস সিজার, এন্টোনি, হার্মাসীস উল্লেখযোগ্য। ক্লিওপেট্রা নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য নিজের রূপ-কে কাজে লাগিয়েছেন বারংবার। ক্লিওপেট্রা রূপেও ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী।

অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক। ১৬২৩ সালের ফার্স্ট ফোলিওতে প্রথম এই নাটকটি মুদ্রিত হয়। এই নাটকে পার্থিয়ান যুদ্ধ থেকে ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যা পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ রয়েছে। মার্ক অ্যান্টনি মিশরে ক্লিওপেট্রাকে আক্রমণ করতে আসেন এবং তিনি ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়েন। তাদের যমজ সন্তান হয়। এদের একজন আলেকজান্ডার হেলিয়স ও অন্যজন ক্লিওপেট্রা সেলেনি। মিশরের সিংহাসন লাভের জন্য অ্যান্টনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৬ অব্দে ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করেন। কিন্তু অ্যান্টনি ছিলেন বিবাহিত, তার স্ত্রী ছিলেন সিজারের উত্তরাধিকারী অক্টাভিয়াসের বোন। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর তার পুত্র সিজারিয়নকে কতিপয় রোমান সিনেটরের ইঙ্গিতে গলাটিপে হত্যা করা হয়, যখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর।

হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা মিশর সাম্রাজ্যের টলেমি বংশের শেষ সম্রাজ্ঞী ছিলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর। দ্বাদশ টলেমির (নিয়োজ ডায়োনিসাস) তৃতীয় কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অতি বুদ্ধিমতী ও বিদ্বান তবে শিথিল নৈতিকতাসম্পন্ন নারী। তার শরীরে ছিল গ্রিক রক্ত। মিসরের টলেমি বংশে ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার প্রথম মিশরে আধিপত্য স্থাপন করেন আর তার ইতি টানলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রাচীন মিশরীয় ফারাও যুগের অবসান ঘটে যদিও তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ান। মিশরে রোমান শাসনকাল শুরু হয়। টলেমীয়রা মেসিডোনিয়ান হয়েও মিশর শাসন করেন। আর ক্লিওপেট্রা ছিলেন সর্বশেষ ফারাও। অসীম সুন্দরী ক্লিওপেট্রা ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত এক রমণী। তার অনেক গুণের মধ্যে ছিল প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। আচার-আচরণের দিক থেকে ক্লিওপেট্রা ছিলেন অনেকটাই সহজ-সরল প্রকৃতির। ক্লিওপেট্রা নয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। শুধু তাই নয়, তিনি একজন গণিতজ্ঞ ও ভালো ব্যবসায়ীও ছিলেন। অন্যকে আকর্ষণ করার মতো সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল ক্লিওপেট্রার। জন্মগতভাবেই তিনি ছিলেন নেতৃত্ব গুণের অধিকারী।

৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা যখন রোমে অবস্থান করছিলেন আর একজন রানী হয়ে তারই অধস্তন এক জেনারেলের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে একত্রে বসবাসের কারণে চারদিকে কানাঘুঁষা শুরু হলো। এর মধ্যেই ঘটে গেলো আরেক আশ্চর্য ঘটনা। ক্লিওপেট্রার একটি পুত্রসন্তান হলো। আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীরা তার নাম দিল সিজারিঅন। ক্লিওপেট্রা বলতেন, টলেমি সিজার। কিন্তু সিজারের আইনসম্মত উত্তরাধিকারী এবং ভাগ্নে অক্টোভিয়ান এটা মেনে নিলেন না। সিজার অবশ্য প্রকাশ্যেই বলে বেড়াতে লাগলেন যে, সিজারিঅন তারই সন্তান। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুগের মমি ও নানা প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে ইতিহাসের নানা অজানা অধ্যায়ও। কিন্তু রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা যেন রহস্যের আধার হয়েই থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বোধ হয় সেই রহস্যের জাল ছিন্ন হতে চলেছে। মিশরে টাপোসিরিস ম্যাগনা উপাসনালয়েই মিসরের সর্বশেষ ফারাও শাসক ক্লিওপেট্রার সমাধি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এন্টনির মৃত্যুর পর একা হয়ে পড়লেন ক্লিওপেট্রা। কিছুদিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রাকে অক্টোভিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে অক্টোভিয়ান নিজের বিজয়ে ক্লিওপেট্রার ভূমিকা অনেকটাই হাল্কা করে দিলেন। তিনি বলেন, মিশরের রানীর সঙ্গে তার কোনোরূপ সম্পর্ক, সমঝোতা বা বোঝাপড়ার কোনো বিষয় নেই। ক্লিওপেট্রার শাসনকাল শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকে ক্রীতদাসী হিসেবে শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রদর্শন করা হবে। তবে এরকম কিছু ঘটার আগেই ক্লিওপেট্রাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হলো। ক্লিওপেট্রাকে মারার জন্য আনা হলো চরম বিষাক্ত সাপ ‘অ্যাসপ’ (মিসরীয় কোবরা। একে জীবন-মৃত্যুর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়) ফলের ঝুড়িতে লুকিয়ে সেই কোবরাকে আনা হলো ক্লিওপেট্রার সামনে। এই সাপের কামড়েই ৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ১২ আগস্ট ক্লিওপেট্রা মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর। মিশরীয় ধর্মমতে সর্পদংশনে মৃত ব্যক্তিরা হবেন অমর। আর এভাবেই ক্লিওপেট্রা মৃত্যুকালীন ইচ্ছা পূরণ করলেন, যা কেউ কোনোদিন ভুলে যাবে না। আবার আরেকটি মতানুসারে পরাজয়, প্রেমিক এবং রাজ্য হারানোর শোকে ক্লিওপেট্রা তার ব্যক্তিগত কক্ষে একটি সাপ আনিয়ে আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে তার সঙ্গে দুই সহচরও আত্মহত্যা করেন। ইতিহাস বলে, ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তার দুজন সখী বা সহচরীও মারা যান। কিন্তু একটি সাপই যে তিনজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী বা সেখানে তিনটি সাপ আনা হয়েছিল কিনা সেটাও চিন্তার বিষয় ? এমনও সন্দেহ ওঠে, সেই সাপটি আসলেই বিষাক্ত ছিলো কিনা, আর সাপরে কামড়েই যে তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে সেটাই বা নিশ্চিত করা গেলো কিভাবে ? তাছাড়া যে সাপটির কথা ইতিহাসে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে অ্যাসপ বা মিশরীয় গোখরো সাপের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়, যা সাধারণত ৬ ফিট লম্বা হয়ে থাকে ? এ ধরনের একটি সাপকে সেই কক্ষে আনা হলেও তার জন্য যে ধরনের বড় ঝুড়ি বা জলের জগের প্রয়োজন হয় তা সেখানে ছিল না।

মার্টিনেজ বলেন, তিনি ১৪ বছর ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন এবং তার বিশ্বাস, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু ছিল একটি ধর্মীয় ঘটনা এবং ভাইপার জাতের ক্ষুদ্র বিষধর সাপের দংশনে তিনি মারা গিয়েছিলেন। এছাড়া তাকে এই মন্দিরেই সমাহিত করা হয়েছিল। রোমান ঐতিহাসিক প্লুটার্কের লেখাতেও এটা রয়েছে, যে ক্লিওপেট্রাকে এন্থনির সঙ্গেই সমাহিত করা হয়েছিল। তবে সত্যি তারা এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। যদি সত্যি তাই হয় তাহলে এই টাপোসিরিস ম্যাগনা সারাবিশ্বের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। সেই সঙ্গে ক্লিওপেট্রার রহস্যময় জীবন আর তাকে নিয়ে রটনা-ঘটনারও অনেক সত্য প্রমাণ বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

ক্লিওপেট্রার এই ব্যক্তিত্ব, রূপ, গুণাবলীর কাহিনী সমগ্র আফ্রিকা, মধ্যএশিয়া ও ইউরোপজুড়ে বিগত দুই হাজারেরও বেশি বছর যাবত ঘরে ঘরে আলোচনার বিষয় হয়ে আছে। নাটক, থিয়েটার, গল্প, উপন্যাস, মডেলিং, চলচ্চিত্র এমনকি মেয়েদের ব্যক্তিগত স্টাইল ও রূপচর্চ্চার ক্ষেত্র পর্যন্ত দখল করে আছে ক্লিওপেট্রা। আর এভাবেই ক্লিওপেট্রা সর্বকালের সৌন্দর্য্যের শ্রেষ্ঠতম প্রতীক হয়ে রইলেন।

আপনার নাম আপনার সম্বন্ধে ঠিক কী বলছে দেখে নিন

আপনার নাম আপনার সম্বন্ধে ঠিক কী বলছে দেখে নিন

নিউমেরলজি’র কথা হয়ত সকলেই শুনেছেন। অনেকেই এই বিদ্যাকে বিশ্বাস করেন। আবার অনেকেই মনে করেন যত সব ভুল ভাল কথা। কিন্তু সব থেকে বড় কথা হল বিশ্বাস না থাকলে যে কোনও কাজই সঠিকভাবে করা যায় না। শুধুমাত্র নিউমেরলজির ক্ষেত্রেই নয়। জীবনের প্রতিটা পরীক্ষাতেই যদি আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস না থাকে তাহলে সেই কাজে সফল হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ধরুণ আপনি চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, তখন নিশ্চয়ই বেরনোর সময় বাবা-মায়ের আশির্বাদ অবশ্যই নেবেন। কারণ আপনি জানেন এই আশির্বাদের প্রতি আপনার বিশ্বাস আছে। আবার ঠিক তেমন ভাবেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার দিনটি কেমন যাবে। সেটাও আগের দিন ইন্টারনেট থেকে পাওয়া সহজলভ্য জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন সাইট থেকে দেখে নেন অনেকেই।
এবার দেখে নিন ঠিক কীভাবে গণনাটি করা হয়ে থাকে…
ধরুন আপনার নাম হল ARUN
A=১, R=২, U=৬, N=৫

এবার এই সংখ্যাগুলিকে যোগ করতে হবে, ১+২+৬+৫= ১৪
যোগফল দুই সংখ্যার হলে তাকে আবার যোগ করতে হবে। যেমন ১+৪=৫। তাহলে আপনার নামের সংখ্যাটি হল ৫।
এবার দেখে নিন নিউমেরলজি আপনার নাম সম্পর্কে ঠিক কি বলছে…

নামের সংখ্যা ১ হলে
খুবই উচ্চাকাঙ্খী হলেন আপনি। চলতে গিয়ে আপনাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়ে হয়। কিন্তু আপনার মধ্যে সেই বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল ক্ষমতা বর্তমান। যাতে কেউই আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারে না।

নামের সংখ্যা ২ হলে
আপনাকে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অনেক সময় আপনি নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। যার ফলে আপনাকে কাজের ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

নামের সংখ্যা ৩ হলে
কাজও যেমন করেন, তেমন সফলতাকে উদযাপনও করেন সফলভাবে। অন্যদের থেকে তাড়াতাড়ি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার এক অদ্ভুত দক্ষতা আছে আপনার মধ্যে।

নামের সংখ্যা ৪ হলে
আপনি চট জলদি কাউকে আপনার বন্ধু বানান না। কিন্তু যখন কাউকে আপনি নিজের বন্ধু বানিয়ে ফেলেন তার জন্য জীবনও দিতে পারেন আপনি।

নামের সংখ্যা ৫ হলে
আপনি খুবই বুদ্ধিমান এবং সমস্ত কাজ খুব চট জলদি করে ফেলতে পারেন। যে সব কাজ করতে খুব বেশি সময় লাগে, সেই কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতেই বেশি পছন্দ করেন আপনি।

নামের সংখ্যা ৬ হলে
আপনার আশে পাশের সকলের থেকেই সম্মান পেতে চান আপনি। আবার অনেক সময় সেই সম্মান খুইয়ে ফেলার মতো কাজও করেন। উচ্চাভিলাষী হওয়ার জন্য প্রচুর অপব্যয়ও করে ফেলেন।

নামের সংখ্যা ৭ হলে
আপনার উদ্ভাবনী শক্তি প্রবল। তবে শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ সব থেকে বেশি। কিন্তু পুরনো পন্থাকে অবলম্বন করে চলতে প্রবল দ্বিধা আপনার।

নামের সংখ্যা ৮ হলে
আধ্যাত্মিকতার প্রতি অদ্ভুত ইচ্ছা আছে আপনার। এছাড়া যেকোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজকে সুদক্ষভাবে করে তুলতে পারেন আপনি।

নামের সংখ্যা ৯ হলে
রাগ যেন আপনার ঠিক নাকের ডগায় থাকে। আবার খুব তাড়াতাড়ি রাগ ভেঙেও যায়। যতই রাগ করুন না কেন যে কোনও কাজকে সঠিক সময় শেষ করার জন্য আলাদা একটা খ্যাতি আছে আপনার।

তাহলে এবার দেখে নিন ঠিক কীভাবে নিউমেরলজিতে হিসেব করা হয়। এখানে কোন বর্ণমালার সঙ্গে কোন সংখ্যা যায় তার লিস্ট দেওয়া হল…

_____________
তথ্য সুত্র : ২৪ ঘন্টা

স্মৃতি

স্মৃতি _______

আমার দাদুর তিন ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। জমিদারি সুত্রে আমাদের দুটো উপাধি আর পদবীতো একটাই হয়। বাবা একটা উপাধি ব্যাবহার করেন। আমিও “চক্রবর্তী” ব্যাবহার করি লেখালেখির ক্ষেত্রে। আর একমাত্র জেঠু তিনটেই ব্যাবহার করেন। জেঠুর থেকে বাবা দশ বছরের ছোট। বাবার থেকে কাকাই পাঁচ বছরের ছোট। তারও অনেক পরে বাড়িতে প্রথম মেয়ে হলাম আমি। বলাই বাহুল্য কাকা, দাদু, জেঠুর ভীষণ আদরের।

জেঠুর যখন বিয়ে হয় কাকাই তখন বেশ ছোট। বড়মা ভাত খাইয়ে দিতো কাকাইকে। সন্তানের মতো করে বড় করেছে। কাকাই আর আমার মা একেবারে বন্ধুর মতো ছিলো। আমাদের যৌথ পরিবার। বাড়ির প্রধান ব্যাক্তি আমার দাদু। সংসারের সব খুটিনাটি হিসেব দাদুর কাছেই থাকতো। তাছাড়া বড় দুই দাদা সংসারের চাপ কাকাইয়ের ওপর দিতো না, কাকাই এর বিয়ের পরেও না। কাকাই এর সাথে আমিও বড় হচ্ছি। ছোটবেলায় কাকাই ছিলো আমার চোখে শ্রেষ্ঠ। কাকাই ফুটবল খেলতো দুর্দান্ত। মাছ ধরা ছিলো নেশার মতো। যতদিন পড়াশোনা করেছি, কোনোদিন একটাও পেন কিনিনি। যদিও পেন আমার ভীষণ পছন্দের। কাকাই গোছা গোছা নানান ধরনের ফাউন্টেন পেন এনে আমার পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখতো।

আমাদের একটা রেকর্ড প্লেয়ার ছিলো। প্রতিদিন বিকেলে খেলে এসে কাকাই স্নান সেরে চা, জলখাবার খেতে খেতে ওই রেকর্ড প্লেয়ার চালিয়ে নাচানাচি করতো। কাকাই এর কাছেই প্রথম শুনি এলভিস প্রিসলি। কাকাই যা করে আমিও তাই করি। কাকাই নাচলে আমিও নাচি। কাকাই হাঁচলে আমিও হাঁচি। আসলে কাকাই এর কপিক্যাট ছিলাম আমি। কাকাই সাদা রঙের জামা পরলে আমিও সাদা পরি। পৈতের সময় কাকাই ন্যাড়া হলে আমিও ন্যাড়া হই। মোট কথা কাকাই তখন হিরো, সে যা করবে আমিও তাই করবো। আর অসম্ভব ভালোবাসতো আমার জেঠুর ছেলেকে।

বাবা, জেঠু, কাকাই এর মধ্যে অসম্ভব মিলমিশ। কাকাই এর যত দুষ্টুমি বাবা আর জেঠু সামলেছেন, দাদু পর্যন্ত যায় নি সেইসব কথা। যখন বাবা অসুস্থ হলো, জেঠু ভীষণ কান্নাকাটি করেছে,বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পরেই জেঠু অসুস্থ হয়ে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হসপিটালে ভর্তি করা হলো। জেঠু সুস্থ হয়ে আসার চারদিনের মাথায় কাকাই এর সেরিব্রাল এটাক। যেখানে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে অপারেশন করতেই হবে। গতকাল অপারেশন হলো। অতো ছটফটে মানুষকে এইভাবে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে মন কিছুতেই মানছে না। শত শত স্মৃতি ভীড় করে আসছে।

মাছ ধরা

মাছ ধরা

বাড়িটা ছিলো ভীষণ disciplined। সবকিছু নিয়মের মধ্যে। দুপুর একটার মধ্যে বাড়ির সবার খাওয়া হয়ে যেতো, ঠিক চারটের সময়ে চা পর্ব। আর প্রতিদিন এই সময়ে দাদুর বন্ধুরা আসতেন। তাদের সাথে চলতো দাদুর সংস্কৃত পর্ব। দ্বিতীয় ছাদে। প্রথম ছাদে ঠাম্মার বন্ধুরা। কারণ ঠাম্মার বন্ধুরা লোহার ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবেন না। আর আমি তখন আমার বন্ধুদের সাথে বাড়ির পাশের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। নীচের ঘর থেকে পড়তে পড়তে কাকাই একবার খেয়াল রাখছে আর ছাদ থেকে দাদু। আর আমি তখন ডাংগুলি খেলতে ব্যস্ত। নাহলে ক্রিকেট, কিংবা কুমির ডাঙ্গা। আমার খেলার সময় ছিলো চারটে থেকে ছটা।

বাড়ি মানুষগুলো ছিলো ভীষণ হুজুগে। যখন যেটা হুজুগ হবে তখনই সেটা করতে হবে। হঠাৎ একদিন মা আর বড়মার ইচ্ছে হল সিনেমা দেখতে যাবে, কিন্তু নিয়ে যাবে কে? অতএব ধরা হল জেঠুকে। নিয়ে গেলো জেঠু। একদিন মেমদাদুর ফোন এলো বাড়িতে, তার পুকুরের মাছ বড় হয়েছে। অতএব মাছ ধরা হবে। মেমদাদু ছিলেন আমার ঠাম্মার ছোট ভাই, তখনকার বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার। আর তিনি যাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের মানুষ। তাই আমি ডাকতাম মেমদাদু আর মেমদিদা। মেমদিদা পরিষ্কার বাংলা বলতেন, সুন্দর করে শাড়িও পরতেন। ভীষণ সুন্দরী ছিলেন। ব্যস ফোন আসার সাথে সাথেই দাদু জানিয়ে দিলেন আগামী রবিবার মাছ ধরতে যাওয়া হবে। ছোটকার বাড়ি। মেমদাদুকে দাদু ছোটকা বলে ডাকতেন।

যথাযথ ভাবে দিন গড়িয়ে রবিবার এসে গেলো। আর বাড়ি জুড়ে সাজসাজ রব। মাছের চার বানানো হচ্ছে, কাকাই বানাচ্ছে। ছিপ দেখে নেওয়া হচ্ছে, চাকাও। সাঙ্ঘাতিক ব্যস্ত কাকাই, কারণ কাকাইও পছন্দ করে মাছ ধরতে। আমার জন্যও একটা ছোট ছিপ আনা হয়েছে, কাকাই এনেছে। না আনলে তো আমি ভীষণ বায়না শুরু করবো তাই। কাকাই আগে থেকেই এইসব ব্যবস্থা করে রেখেছে। দাদু ধুতি আর বাংলা শার্ট পড়তেন। সাদা ছাড়া অন্য রং পড়তে দেখিনি কখনো। ঠাম্মা একটা চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি, আজ একটু বেশিই গয়না পড়েছেন। যেহেতু ভাইয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। শম্ভু দাদু আমাদের গাড়ি চালাতেন। দাদুর বয়সী তাই দাদু বলতাম। কাকাই ও জামা প্যান্ট পড়ে তৈরি হাতে একটা প্যাকেট। মেমদাদুর বাড়ির জন্য গিফট, ঠাম্মা কিনেছেন। সাজুগুজু করে আমরা রওনা দিলাম। গাড়িতে বসে হাতটা জানলার একটু বাইরে রেখে ছিপগুলো শক্ত করে ধরে রেখেছি। যেহেতু এপাড়া আর ওপাড়া তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। মেমদাদুর বাড়ির পেছনের দিকে একটা পুকুর করেছিলেন শুধু মাছ ধরবেন বলে।

বাড়ি থেকে খেয়েই বেড়িয়েছিলাম তাই দুপুরে ওই বাড়ি গিয়েই দাদা, কাকাই, মেমদাদু লেগে গেলেন মাছ ধরার কাজে। আমি ঠাম্মার পাশে বসে মেমদিদাদের জন্য আনা গিফট দেখছি। আর বিরক্ত হচ্ছি ওদের সাংসারিক গল্পে। চিন্তা করছি, ইশ! আমাকে ছাড়ে কাকাই না জানি কত মাছ ধরে নিলো, আবার আমার ছিপও নিশ্চয়ই কাকাই নিয়ে মাছ ধরছে। ঠাম্মার কাছে অনেক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করার পরে পারমিশন পেলাম মাছ ধরার। দৌড়ে গেলাম পুকুর পাড়ে। হুম, যা ভেবেছি ঠিক তাই, আমার ছিপ কাকাই নিয়েছে! যাবার সাথে সাথেই হাতের ইশারায় চুপ করতে বলল। আমি চুপচাপ বাঁধানো বেদীতে বসে রইলাম। আর যেই মাছ উঠছে ওমনি আমি আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠছি। তারপর কি জানি কি ভেবে কাকাই আমাকে ছিপ দিয়ে চুপটি করে বসে মাছ ধরতে বললেন। কাকাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন আমার মাছধরা। উফফ, কি যে ধৈর্যের কাজ মাছ ধরা! এইসব কি আমার পোষায়? আমি তো স্থির হয়ে বসতেই পারছি না। এতো নড়াচড়া করলে কি আর মাছ আসে! অবশেষে কাকাইকে ডেকে বললাম তুমিই ধর মাছ, পছন্দ হয়নি আমার এই খেলা।

সেইদিন অনেক মাছ ধরা হয়েছিল। কিছু মাছ আমরা নিলাম, কিছু মাছ মেমদাদু নিলো, কিছু মাছ শম্ভু দাদুকে দেওয়া হল। কিছু পাড়ার লোককে। সব মাছ ভাগাভাগি করে রাতের বেলায় মেমদাদুর বাড়িতে দারুণ খাওয়া দাওয়া করে মাছ সাথে করে নিয়ে বাড়ি এলাম।

[আমার কাকাই ভালো নেই, ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছেন। কতস্মৃতি ভীড় করে আসছে। আজ এই লেখাটা থাক।]

কৃতজ্ঞতা

কৃতজ্ঞতা

প্রতিনিয়ত আমরা কারো না কারো কাছ থেকে উপকৃত হয়ে থাকি। কেউ আমাদের উপকার করেছে, সেই উপকার সম্পর্কে যে আমরা সচেতন তা ওই ব্যক্তিকে অবহিত করার এবং তাতে আনন্দ প্রকাশ করার একটি উপায় হলো শুকরিয়া আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমরা আমাদের ভাষায় ‘ধন্যবাদ’ বলে থাকি। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় নিজ নিজ ভাষায় উপকারী লোককে ধন্যবাদ বলে।

কৃতজ্ঞ হলো বিশেষণ পদ- যে উপকারীর উপকার মনে রাখে ও স্বীকার করে। বিশেষ্য পদ- কৃতজ্ঞতা।

কৃতজ্ঞতা হিন্দু শাস্ত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। আমাদের সবসময় সব কিছুর জন্যে কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ, কিন্তু কখনই অন্যের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা আশা করা উচিৎ না। নিঃস্বার্থ সেবাই আমাদের মূল ধর্ম।”

ইসলাম যা বলে : আল্লাহ্ আমাদের প্রতি যে নেয়ামত ও কল্যাণ দান করেছেন, তার জন্য শুধু তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের তারিফ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন ওই সমস্ত লোকের কৃতজ্ঞ হতে যারা আমাদের উপকার ও কল্যাণ করবে। একজন বান্দার নিকট যেমন ‘হামদ’ (প্রশংসা) একটি কাম্য, অনুরূপ তার নিকট কাম্য ‘তাশাক্কুর’ (কৃতজ্ঞতা)। ইসলাম ধর্মের নির্দেশ : মানুষ আল্লাহর প্রশংসা (হামদ) করবে এবং মানুষের কৃতজ্ঞ হবে যারা আমাদের কল্যাণ করে।

বাইবেল যা বলে:
বাইবেল আমাদের কৃতজ্ঞতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “কৃতজ্ঞ হও” আর এই ব্যাপারে তিনি নিজে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, অন্যদের রাজ্যের বার্তা জানানোর পর তারা যখন ইতিবাচকভাবে সাড়া দিত, তখন তিনি ‘অবিরত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেন।’ (কলসীয় ৩:১৫; ১ থিষলনীকীয় ২:১৩) স্থায়ী সুখ লাভ করার জন্য কেবল মাঝে মাঝে ধন্যবাদ বলাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আর এই মনোভাব আমাদেরকে স্বেচ্ছাচারিতা, ঈর্ষা ও অসন্তোষ থেকে রক্ষা করবে, যে-বিষয়গুলো লোকেদেরকে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে ও সেইসঙ্গে আমাদের জীবন থেকে আনন্দ কেড়ে নিতে পারে।

কৃতজ্ঞতার মনোভাব আমাদের শরীর ও মনের জন্য উত্তম কিভাবে?

চিকিৎসাবিজ্ঞান যা বলে হার্ভার্ড মেন্টাল হেল্থ লেটার-এর একটা প্রবন্ধ অনুযায়ী “কৃতজ্ঞতার মনোভাব এবং প্রচুর সুখ লাভ করা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃতজ্ঞতার মনোভাব লোকেদেরকে আরও ইতিবাচক হতে, উত্তম অভিজ্ঞতা থেকে আনন্দ লাভ করতে, স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করতে, দুর্দশার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং দৃঢ়বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।”

তামিল ভাষায় লেখা “কুরাল”-এ এক কবি ও দার্শনিক আজ থেকে ১,২০০ বছর আগে দৈনন্দিন জীবনে কৃতজ্ঞতাবোধের গুরুত্ব নিয়ে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকেই একটা অংশ, “একজন মানুষ চেষ্টা করলে তাঁর সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু অকৃতজ্ঞতা মহাপাপ, যার থেকে আজ অবধি কেউ মুক্তি পায়নি।” (রিডিংস ফ্রম তিরুক্কুরাল, জি এন দাস, পৃঃ ৩২)

পরের পর্বে মনোবিজ্ঞান কি বলছে কৃতজ্ঞতা নিয়ে সেটা আলোচনার চেষ্টা করবো।

হানুকা ও আটদিনের উৎসব

হানুকা ও আটদিনের উৎসব

ডিসেম্বর মাসে যেমন বড়দিন বা Jesus christ এর জন্মদিন পালন করা হয় ঠিক তেমনই এই ডিসেম্বরে আরও এক‌টি উৎসব পালিত হয়, তার নাম হানুকা। এটি ইহুদিদের উৎসব। হানুকা শব্দটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ নিজেকে উৎসর্গ করা। এই বছর ২রা ডিসেম্বর এই উৎসব শুরু হয়েছে, চলবে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। আটদিন ধরে এই উৎসব পালিত হয়।

পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে ১৭১ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে সিরিয়া দেশে Antiochus IV Epiphanes নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। রাজাকে ওই সময় অ্যান্টিওকাস এপিফ্যানেস অর্থাৎ দৃশ্যমান ঈশ্বর নামেও ডাকা হতো। তিনি গ্রীক ধর্ম পছন্দ করতেন, তাই তাঁর রাজ্যে গ্রীক ধর্ম প্রচলন করতে চেয়েছিলেন। গ্রীকদের অনেক দেবদেবীর মুর্তি থাকা সত্ত্বেও বারোজন প্রধান দেবতা ছিলেন, এঁরা হলেন- জিউস, হেরা, পোসেইডন, ডিমেটর, এথেনা, অ্যাপোলো, আর্টেমিস, এরিস, অ্যাফ্রোদিতি, হেপাস্টাস, হারমিস, হেস্টিয়া।

ইহুদিধর্ম গ্রীক ধর্মের থেকে একেবারেই আলাদা এক‌টি ধর্ম। ইহুদীরা বিশ্বাস করেন যিহোভাহ অর্থাৎ ঈশ্বর এক নিরাকার। ঈশ্বর পৃথিবীতে তাঁর দূত বা নবীদের পাঠান তাঁর বাণী প্রচার করতে। এইরকম একজন হলেন মোজেস। ইহুদীরা মনে করেন তিনি ছিলেন মালাশী অর্থাৎ সর্বশেষ নবী। ইহুদী মতে যেহেতু ঈশ্বরকে দেখা যায় না তাই এঁদের মন্দিরে কোনো মূর্তি থাকে না। শুধু ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে বিশেষ এক ধরনের বাতিদানে বাতি জ্বালানো হয়। এই বাতিদানকে menorah বলে।

রাজা Antiochus IV Epiphanes এক যুদ্ধে হেরে গিয়ে পালিয়ে জেরুজালেম শহরে আসেন। শহরটি তখন সিরিয়ার অন্তর্গত ছিলো। বর্তমানে ইজরায়েল দেশের অংশ। যুদ্ধ হেরে যাওয়ার জন্য তিনি বেশ রেগে ছিলেন। জেরুজালেমের মত একটি সাজানো ইহুদি শহর দেখে তাঁর রাগ দ্বিগুণ হলো। তখন তিনি সেনাদের আদেশ দিলেন, জেরুজালেম থেকে ইহুদিধর্ম মুছে গ্রীক ধর্মে অনুসারী হোক সবাই। স্যাবাথ নিষিদ্ধ করা হল। দলে দলে ইহুদিদের জোর করে গ্রীক করা হতে লাগল। যারা রাজী হল না তাদের হয় মেরে ফেলা হলো, না হলে ক্রীতদাস করা হলো। মেনেলাউস হলেন ইহুদিদের প্রধান পুরোহিত, সে ইহুদি কম আর গ্রীক বেশি ছিলো। জেরুজালেমকে গ্রীক জীবনযাত্রা, গ্রীক ভাষা এবং গ্রীক নামে ভরিয়ে দেওয়া হল। ইহুদি ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। ইহুদি মন্দিরে গ্রীক প্রধান দেবতা জিউসের বিরাট মূর্তি বসানো হলো। মূর্তি জিউসের হলেও, মূর্তির মুখটি রাজা অ্যান্টিওকাসের মতো ছিল। জিউসের মূর্তির সামনে উৎসর্গ হিসেবে শুয়োর বলি দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলো। শুয়োর বলি দেওয়ার ফলে ফলে ইহুদিদের মন্দিরটি অপবিত্র হয়ে গেলো।

জেরুজালেমের কাছেই এক গ্রামে ম্যাটাথিয়াস নামে এক ইহুদি ধর্মপ্রাণ পুরোহিত বসবাস করতেন। তিনি জিউসের মূর্তির সামনে শুয়োর বলি দিতে প্রথম অস্বীকার করেন। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং একজন সিরিয় সৈনিককে মেরেও ফেলেন। তবে তিনি বৃদ্ধ ছিলেন এবং এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। তাঁর পাঁচ ছেলে ছিলো। যোহান, সিমন, এলাজার, জোনাথন এবং জুডা। এই পাঁচজন তখন রাজা অ্যান্টিওকাস এবং গ্রীকধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। বিদ্রোহের মূল নেতা ছিলেন ছোটভাই জুডা। তাঁর ডাকনাম ছিল ম্যাকাবি, যার অর্থ হাতুড়ি। তিন বছর ধরে তাঁরা লুকিয়ে চুরিয়ে গ্রীকদের আক্রমণ করতে থাকেন। প্রতিদিনই কিছু ইহুদি লুকিয়ে এসে তাঁর দলে যোগ দিতে লাগল। তিন বছর পর সামনাসামনি যুদ্ধ হলে গ্রীকরা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। ইহুদিরা সবার আগে জিউসের মন্দির দখল করে সেটিকে আবার ইহুদি মন্দির বানান। মন্দিরে ঢুকে তাঁরা অবাক হয়ে দেখেন যে মার্বেলের মেঝে ফেটে গেছে, ধনরত্ন যা ছিলো সবই চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরটি ইহুদি মতানুসারে শুদ্ধ করা হয়।

মন্দিরটি পরিষ্কার করে ইহুদি বিশ্বাসে প্রতি রাতে একটি করে বাতি জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাতি জ্বালাতে ব্যবহার করা যেতো একমাত্র বিশুদ্ধ জলপাইয়ের তেল, যা প্রধান পুরোহিতের অনুমোদিত। একমাত্র সেই তেলেই Menorah জ্বালানোর অনুমতি ছিলো। কিন্তু যুদ্ধের পর অনেক খুঁজেও এক বোতলের বেশি এই তেল পাওয়া গেলো না। এই তেল মাত্র এক রাতের জন্য ছিলো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে আটরাত আটদিন ধরে menorah জ্বলেছিলো। সেই সময়ের মধ্যে ইহুদিরা আরো অনেক তেল বানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। এই আশ্চর্য ঘটনাকে মনে রেখেই আটরাত ধরে হানুকা পালন করা হয়। হানুকার জন্য আলাদাভাবে তৈরি বিশেষ মেনোরার নাম হল হানুকিয়া, অর্থাৎ হিব্রু ভাষায় আটদিন। প্রতি বাতিদানে একটি করে অতিরিক্ত বাতি বা মোমবাতির জায়গা থাকে। তার নাম শামাশ।
ইহুদি ধর্মগ্রন্থ Talmud অনুসারে প্রতি রাতে একটি করে বাতি জ্বালানো হয়। তবে অনেকে একসাথে আটটি বাতিই রোজ রাতে জ্বালান। Christmas এর রঙ বলতে আমরা যেমন লাল আর সবুজ বুঝি, তেমনই হানুকার রঙ হল নীল আর সাদা বা রুপোলী।

ও মেয়ে তুই

মেয়েরে তুই বৃষ্টি হবি
আকাশ ধোয়া আজ শ্রাবণে!
ও মেয়ে তুই লিখবি কাকে
হৃদয় চিঠি আমন্ত্রণের?

মেয়েরে তুই থাকনা ছুঁয়ে
যাপন যত, গোপন জ্বালা!
ও মেয়ে আজ দেখনা চেয়ে
যাপিত এই জীবনমালা।

শোনরে তুই যাস না ভুলে
অতীত যত বিষাদ গাঁথা
বাদল দিনে, শালিক ভেজা
শীত মাখানো নকশীকাঁথা।

ফুলের কাছে শিখতে হবে
কান্না ভেজা, হাসির খেলা
পরাগ ছুঁয়ে প্রজাপতির
পাখনা মেলা রঙিন বেলা

আমার কাছে আয় শিখে নে
স্বপ্নগুলো উড়িয়ে দেওয়া।
একলা চলার মন্ত্র যত
দুঃখ গুলো লুকিয়ে নেওয়া।

জীবনের পরেও জীবন

জীবনের পরেও জীবন

আহা! মৃত্যুও কত রোমাঞ্চকর হতে পারে! রোমাঞ্চকর হতে পারে মৃত্যুর পরেও জীবন! কতটা সবুজ হতে পারে জমানো অভিমান!কতটা নীল হতে পারে শিরায় শিরায় বয়ে যাওয়া যন্ত্রনা! পাতায় পাতায় লিখে রেখে যাবো আমার না বলা যত কথা।

আর শোনো-

আমাকে কেউ আর খুঁজো না কখনো। আমার অস্তিত্বের অংশ গাছের প্রতিটি পাতায় বেঁচে থাকবো। মৃত্যুর কল্পনায় আমি লীন হয়ে আছি।

এই বেশ ভাল আছি-

প্রতিদিনের মৃত্যুতে বড় ক্লান্ত। নরম ঘাসে শুয়ে ধূসর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়বো গভীর অতলে। হারিয়ে যাবো! চিরতরে হারিয়ে যাবো।

আমাকে খুঁজো না আর …

আমি আর কোথাও নেই!

“Bios Urn is a biodegradable urn, designed to turn the ashes of a person or pet into a tree. Thanks to its design and manufacture, the urn provides proper germination and aids in growing a tree with a person or pet’s ashes. In this way, death becomes a transformation and return to life through nature.”

এটা পড়েই লেখাটি এলো।
___________
– রিয়া চক্রবর্তী।