রোমেল আজিজ এর সকল পোস্ট

রোমেল আজিজ সম্পর্কে

শখের বশে কবিতা লেখা শুরু, কিন্তু নিজেকে কবি বলে পরিচয় দেন না। প্রচুর বই পড়েন, বই পড়া পছন্দ করেন, শুধুমাত্র কবিতার বই নয় যেকোন বই। আর মাঝে মধ্যে টুকিটাক লেখালেখি। বর্তমানে শখের বশেই সম্পাদনার সাথে যুক্ত আছেন "দ্বিপ্রহর" কবিতা ও গল্প সংকলন এবং "দ্বিপ্রহর" ম্যাগাজিনের সাথে। প্রিয় কবি জীবননান্দ দাশ, এছাড়া রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, হেলাল হাফিজ, শামসুর রাহমান, সুনীল, আবুল হাসানের কবিতাও প্রিয়। প্রিয় উপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পড়ালেখা ছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, পছন্দ করেন একা একা বেড়াতে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ঘুম আর অপ্রিয় জিনিস ধর্মীয় তর্ক....

নক্ষত্রের পতন

fall-1024x576

অহংকারী নক্ষত্রেরও পতন হবে
এমন অচেনা এক চাঁদনী রাতে।

মৃত নক্ষত্রের চারিধারে
উড়তে থাকা ধূলিকণা গুলো তখন,
স্বার্থপরের মত পথ বদল করে-
খুঁজে নিবে নতুন কোন নক্ষত্রকে।

আজ শুক্লপক্ষের এই দ্বাদশ রাতে
জেগে থাকে কত যে চোখ,
নক্ষত্রের রাজত্ব হারানোর
ব্যাথা নিয়ে বুকে।

এমন রাতেই আবার
ছিঁড়ে যাবে কত সুতো,
ছুটে যাবে কত হাত
নীল নক্ষত্র পতনের আড়ালে—-

খুনী কাঠপুতুল

বিষণ্ণ মেঘদল ছুটে চলে
অনিশ্চিত অন্ধকারের পথে,
ধূসর মরুর খুনী কাঠ পুতুলগুলোর
মিথ্যে অহমিকা গুড়িয়ে দিয়ে।

অচেনা নক্ষত্রের আলোয়
ভেসে যায় সব
মিথ্যা প্রণয়ের গান,
তবু কাঁচপোকা হয়ে
থেকে যায় কিছু ভুল,
দিতে নিষ্পাপ শিশুর
এক সমুদ্র খুনের* মাশুল।

মায়াজাল

প্রাচীন নক্ষত্রের আলো
স্পর্শ করতো আমায়,
লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ
দূর হতে এসে।

চাঁদের শীতল আলো
পূর্ণ করতো আমার,
স্বপ্নের অবগাহন
এক সময়।

হারিয়ে যেতাম তখন আমি,
আমার আপন সত্ত্বায়।
যেখানে গৃহ ছিল আমার
পুরো পৃথিবী,
আর আকাশ ছিল
সেই উন্মুক্ত গৃহের ছাদ।

এখন এক অদ্ভুদ মায়াজালে
নিঝুম মহাশূন্যের মাঝে,
নেমে আসে গভীর রাত।
যেখানে এক শব্দহীন
মহাসমুদ্রের অন্তহীনতায়
ম্লান হয়ে যায়,
এ পৃথিবীতে আমার
বেঁচে থাকার আস্বাদ।

নিঃশাব্দিক প্রতিশোধ

এখন তো নয় সময়
বিচার চাওয়ার,
এখন তো নেই সময়
বিচার পাওয়ার।
.
এখন তো নেই আর সময়
নিষ্ফল প্রতিবাদ, ধিক্কার
কিংবা খোলা রাস্তায় দাড়িয়ে
নিঃস্ব প্রতিবাদ জানাবার।
.
এখন তো শুধুই সময়
বদলা নেওয়া রক্তের,
এখন তো সময় শুধুই
নিঃশব্দে প্রতিশোধের …

হিমু হতে চেয়েছিলাম একদিন

SignBo

হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে
চটের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে,
কুয়াশায় ডুবে থাকা
পৌষের শেষ রাতে,
আবার চৈত্রের দুপুরে
রাস্তায় পিচ গলা রোদে,
হাঁটতাম কত যে একা একা
খালি পায়ে অজানার পথে।

তখন-
ছিল না পকেট
ছিল না টাকা,
ফাঁকা রাস্তায়
আমি একা।
ছিল না দুঃখ
কাটতো সময়,
অযত্ন আর অবহেলায়।
স্বপ্নে বিভোর
আমি তখন,
চাইতাম হিমু হতে!

এখন-
বন্দী আমি
কর্পোরেট কারাগারে,
আটটা সাতটার চক্রে পড়ে
দিন গুলি আমার,
যায় হারিয়ে।
অলস সময়
থাকে না এখন আর,
অবিনাশী স্বপ্ন আঁকার,
কল্পলোকের গল্পে ভেসে
মধ্যরাতে জোছনা দেখার।

এখন শুধুই ভাবি আমি
একটা সময়ে মানুষ ছিলাম,
যে সময় গুলোতে আমি
হিমু হতে চেয়েছিলাম।

গল্পটা অসমাপ্ত থেকে যায়

কালচে সবুজ একটা রঙ
উড়ছে নীলের রাজত্বে,
আগুন্তক ডাকাতের মতন।

তীব্র ভয়ের নীল স্রোত
সবুজ হয়ে গেছে আজকাল,
প্রণয় এখন প্রলয় হয়ে আসে
সবুজ ওই আগুন্তুকের মতন,
ভেঙে দিয়ে হৃদয়
যায় উড়ে দূর দেশে,
যেখানে আছে নিষিদ্ধ আগুন।

এভাবে সময় গড়ায়,
সবুজ আগুন্তক হানা দেয়
আবার নতুন কোন জীবনে,
একসময় শব্দ ফুরায় কিন্তুু
গল্পটা অসমাপ্ত থেকে যায়।

কাঁচপোকাদের অজানা কথা

এক শুদ্ধ কাঁচপোকা হারানোর কষ্ট
জমাট বেঁধে থাকে কিছু বুকে,
মৃত উল্কাপিন্ড যখন ঝরে পড়ে
মধ্য রাতে দক্ষিণ আকাশে,
তখন হারানো সময় গুলোর দুঃখ
পানি হয়ে জমে ক্লান্ত চোখ গুলোতে।

পাওয়া না পাওয়ার জটিল সমীকরণ
বুঝেনা ক্ষুধার্ত উদর,
ছল ছলে চোখ গুলোর ভাষা বুঝে না
শহুরে রাক্ষসী অতৃপ্ত আত্মাগুলো।

তাই দিন শেষ নিজেকে বিকায়
জীবন যুদ্ধে টিকে যাওয়া কাঁচপোকারা,
কসাইয়ের দোকানের ঝুলে থাকা
নির্জীব মাংসপিন্ডের মতন।

নক্ষত্রেরা জেগে রয়

মৃত্যুকে মৃত্যু দিয়ে হত্যা করে
ছুটে চলছি নীল জোছনায় অবিরাম,
দিন গুলি আর ফিরে আসবেনা জানি
হারিয়ে যাচ্ছি তাই এই রূপালী বন্যায়।

নক্ষত্রেরা জেগে রয় দীপ জ্বেলে
তাহাদের ফিরে আসার অপেক্ষায়…

এদিক সেদিক…

এদিক সেদিক চলতে চলতে
উদ্ভ্রান্ত আমি, না না দিকভ্রান্ত;
চলতে চলতে, এদিক সেদিক…

জলে জল খুঁজতে খুঁজতে
ডুবছি আমি, না না ডুবছে তরী;
খুঁজতে খুঁজতে, এদিক সেদিক…

মেঘে মেঘ দেখতে দেখতে
ভিজছি আমি, না না ভিজছো তুমি;
দেখতে দেখতে, এদিক সেদিক…

যাপিত জীবন

Death

সে দিন হয়তোবা অসময়ে
গাইছিলো ভুল পাখিটা,
যদিও শরতের জোছনা রাত ছিল
তবুও ছিল কালপুরুষ।
জানি না কার বিহনে
জেগে থাকে নীল মেঘ,
কোন স্রোতে যায় ভেসে
আনমনা গাংচিল।
.
সেদিনও সোনা ঝড়া রোদ ছিল,
ছিল রাতে বারবনিতার চুড়ি।
তোর সেই চিরচেনা
শহুরে রাস্তায় ছিল
সারাদিন অলস ট্রাফিক।
.
ছিল কুকুর ডাস্টবিনের ধারে,
ছিল ছিন্নমূল শিশু
মানবিকতার আস্তাকুরে ……

অসম সমীকরণ

শুক্লপক্ষের দ্বাদশ তিথির চাঁদটা
যতোই জোছনা ঝরাক না কেন
তোর শহরে এই রাত্রি দ্বিপ্রহরে,
তবুও জেগে থাকে অসময়ে
এক অভিশপ্ত ক্লান্ত হৃদয়
পুরনো ব্যাথা গুলো বয়ে।

অভিশাপ দিলেও
তবুও যে জীবন যায় কেটে,
জীবনের অসম সমীকরণে।

অনল ও অন্ধকার

indexy

অন্ধকার রাত্রিরও,
ভয় থাকে মানুষের।
সে তো জানে –
আদিম মানুষের হাতেই,
পরাজিত হয়েছিল –
তার পূর্বসূরী একদিন।

পাথুরে প্রকোষ্ঠের বৃত্তে বন্দী
আদিম মানুষের ভয় গুলো,
গিয়েছিল মুছে সেদিন ;
যেদিন এসেছিল অনল
সভ্যতাহীন যাযাবর সমাজে।

এ অনলের হাত ধরেই
একদিন এসেছিল সভ্যতা,
এসেছিল একদিন
নাগরিক জীবনের নামে
অলীক অধুনিকতা।

সেই অনলেই এখন আবার
পুড়ছে আমার স্বদেশ,
পড়ে রেষারেষিতে
কিছু ক্ষমতালোভী কাপুরুষের।

আঁধারকে ভালোবেসে

আঁধারকে ভালোবেসে
জেগে থাকে সারা রাত্রি, 
নিঃসঙ্গ তারা একাকী। 

সুহাসিনীর মুছে যাওয়া হাসি
সরে যায় দূর থেকে দূরে,
ঝড়ো জলে নেভে বাতি
তপোবনে হারায় জোনাকি।
তবুও সুহাসিনীরা থাকে জেগে –
অন্ধকারে সারা রাত্রি
নিঃসঙ্গ একাকী, শুধুই
আঁধারকে ভালোবেসে…

মাঝি ভালোবাসিস না

842785_n

মাঝি ভুল করিস না…
দুপুরের গায়ে অন্তহীন কুয়াশার চাদর ঢেকে দিলেও
সুসান দুপুরই থাকে,
তা কখনো স্নিগ্ধ সকাল হয় না।
.
মাঝি পথ হারাস না…
অমাবশ্যার আকাশে হাজার জোনাকি সেলাই করে দিলেও
আঁধার রাতই থাকে, 
তা কখনো রংধনু মাখা বিকেল হয় না।
.
মাঝি তার হাত ধরিস না…
হাত বদলিয়ে মধুর মোহে
উড়ে যে ভ্রমর আপন ধ্যানে,
কাছে থেকেও সে
অচেনা দূরের মানুষই থাকে,
মাঝি তারে ভালোবাসিস না…

দূর কোথাও

মধ্যরাতে দক্ষিণ জানালা
হয়ে যায় কালের আয়না,
রাস্তা নেড়ি কুকুরের গর্জনে
ঢেকে যায় লঞ্চের হুইসেল।

জ্বলে লাল নীল হলুদ বাতি
রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, 
পাওয়ার হাউজের উপর।

ম্রিয়মান উদাস তারা ভাসে, 
সপ্তর্ষিহীন আঁধার আকাশে। 
গলায় নামে তরল আগুন
রক্ত রংয়ে মগজ ঘোলাটে
ফুসফুস ভরা ধোঁয়ার বিষে,
মাথার ভিতর ঘুরছে যেন –
দূর কোথাও 
কে হাসে, কে হাসে…