এস কে দোয়েল এর সকল পোস্ট

এস কে দোয়েল সম্পর্কে

২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল। প্রথম শব্দনীড় ব্লগের মাধ্যমে অনলাইনে লেখালেখির যাত্রা শুরু হয়। তবে লেখালেখির বয়স আজ দেড় যুগ। মনের টানে লেখালেখি করি। জাতীয় পত্রিকাগুলোতে নানান বিষয়ের ওপর লিখি।

শাড়ী পড়ে এসো ফাল্গুনে

149

ঝরা বসন্তে ফুটেছে অগণিত ফুল। ফুল দিব দিব বলেই আর সাহস হয়নি। চুপে চাপে কেটে গেল কতগুলি বসন্ত। থাক সংখ্যাটা বলতে চাই না। তোমরা মেয়েরা যেভাবে বয়স লুকিয়ে রাখো, আমি না হয় আমার পেরোনো বসন্তের অংকটাও লুকিয়ে রাখি। আজ ফুল ফোটা বসন্ত। তার মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবস সম্পর্কে ধারণা, প্রাক ইতিহাস তোমার জানা। তা আর নতুন করে বলতে চাই না। ভালোবাসা তো প্রতিদিনই হওয়া দরকার। বছরের একটি দিন ঘটা করে, ধুমধাম করে পালন করে যাব, এটা আমার কাছে বড্ড বেমানানই লাগে।

যাই হোক, আজ নদীর তীরে বসে বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে। হয়তো বলবে, গোলাপ না দিয়েই বাদামের কথা বলছি। আজ ৩৬৫ গ্রাম বাদাম কিনবো। তারপর সেই বাদাম নিয়ে নদীর কিনারে বসে চার পা নদীর জলে রেখে সিক্ত হব। আর বাদাম খেতে থাকবো। প্রয়োজনে আবারও ৩৬৫ গ্রাম বাদাম কিনবো। এভাবে প্রতিবারই ৩৬৫ গ্রাম। হয়তো দোকানদার বিরক্তই হবেন, কিন্তু ইচ্ছে চাওয়ার কাছে কিছু করার নাই। আর গোলাপের কথা তুমি ভেবো না। তোমার পছন্দ আমি বুঝতে পারি। হয়তো সাহস করেই এতোদিন কাছাকাছি আসা হয়নি। এখন মেয়েরাই আগেভাগে লাভ ইউ বলে ফেলে। এখন আর বুক ফাটে, মুখ ফোটে না’এরকম অবস্থা নেই। এই দেখ, তোমার কথাই বলি, প্রথম তুমিই আমাকে প্রোপোজ করলে। আমি তো লজ্জাতেই বলতে পারিনি,তবে মনের ভেতর একটা সাহস তৈরি হলেও সেটা উদগীরণ করা সম্ভব হয়নি।

তুমি এই বসন্তে শাড়ি-ব্লাউজসহ সব ম্যাচিং করেই এসো। তোমার দেয়া পাঞ্জাবিটাও পড়বো আজ। যদিও লাজুক ছেলেটা আজ সাহসী হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। সেই সাহসের দূর্বার প্রতীক তুমি। তোমার সেদিনের আলতো স্পর্শ আমাকে উন্মাদ করে ফেলেছিল ভেতরে ভেতরে। বৈবাহিক সম্পর্ক থাকলে হয়তো ফুলশয্যা হয়ে উঠতো সেদিনের পূর্ণিমার রাতে। ভাগ্যিস লাজুক ছিলাম বলেই, কিন্তু তুমি তো রেগেই গিয়েছিলে। এযুগে এরকমটা হয় নাকি। গত ফাল্গুনের আগে জিন্স-টিশার্ট পড়ে এসে হাজির হলে তুমি। উদাম বুক। কামশ্রিত মুখ। এতে কিন্তু আমার মধ্যে আকর্ষিত হয়নি। তোমাকে শাড়িতেই বেশ মানায়। সব কিছু। এজন্যই এই ফাল্গুনের বসন্তে শাড়ি পড়তে বলছি। কেমন যেন বাংলার নারীর পুরো রূপ-যৌবন শাড়ীতেই ফোটে উঠে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আদলে প্যান্ট-টিশার্টৈ দেখতে মন চায় না তোমাকে। নদীর বুকে খোলা হাওয়া নেয়ার পর আমরা ফুলবনে যাব। কথাটা চেপে রাখতেই চেয়েছিলাম, তোমাকে সারপ্রাইজ দিব বলে। কিন্তু পারলাম না, আজ যেন ঝরণা ফোয়ারার মতো মন থেকে ভালোবাসা কথাগুলো বের হতে চাইছে। তাই বলেই ফেলি। এখন তো আর আগের মতো কাগজে-কলমে লিখতে হয় না। হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক/টুইটার, ম্যাসেঞ্জার, মেইল, কত অগণিত সোস্যাল নেটওয়ার্ক। তাই হাতের টাচেই লিখছি। তুমি আমাকে প্রায়ই চিঠি লিখতে বলতে। লিখতামও।

এখন প্রযুক্তির যুগ, ফেসবুক মেসেঞ্জারেই কত কথা হয়। প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই এই মেসেঞ্জারে ডুবে আছে গোটা বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষ। আমরা দুজনেও তেমনটা ব্যতিক্রম নই। তবে আমাদের কথা একটু কমই হয়। কম লেখা তোমার পছন্দ হয় না, যে কথাটাই লিখি না ক্যান, সেটা তোমার বড় হওয়া চাই, শিল্প থাকা চাই। তাই মাঝে মধ্যেই চিঠি লিখতে হয়। রাত পোহাবার কত দেরি-পাঞ্জেরির কবিতাটা মনে পড়ছে বারবার। রাতটা দীর্ঘ মনে হচ্ছে। কখন শেষ হবে এ অপেক্ষার দীর্ঘ রাত। কখন আমরা মিলিত হব, হাতে হাতে গোলাপ নিয়ে সামনে এসে বলবো-হ্যাপি ভ্যালেনটাইন ডে। আরো কত কিছু…।

ভোরের ট্রেনেই তুমি নেমে যাবে। তারপর একটি লোকাল বাসে চলে এসে ফোন দিবে। তোমার জন্য সবকিছু রেডি করে রেখেছি। জার্নিতে কত ক্লান্তি, তারপরেও আসছো আমাকে ভালোবাস বলে। ভালোবাসা সেটাই, যেটা কঠিনকেও জয় করে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তো তুমি ভোরের ট্রেনে আসছো, ভেবেই চোখে ঘুম আসছে না। প্রিয় মানুষের জন্য রাত জাগাটাও স্বর্গ হয়ে উঠে। তুমি সেই প্রেম স্বর্গ। থাক আর কথা বাড়াবো না।

অনেকদিন পর আবার লিখলাম। ভেবেছিলাম আরো কিছু লিখবো। সেই ধৈর্য আর কুলাচ্ছে না। প্রযুক্তি যুগে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে লিখতে লিখতে সেই কাগজ কলমে লেখার বিশুদ্ধতা যেন আমরা হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়তই। তো পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা নিও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তোমাকে কাছে পেয়ে বলে যাব জমাটবাঁধা সেই ভালোবাসার গল্প। তুমি শুনতে শুনতে হয়তো খেই হারিয়ে ফেলবে। তবুও বলতে থাকবো, যতোদিন না আবার ৩৬৫ দিন ঘুরে আসে। #

কাব্যগল্প : শ্রাবন্তির উতলা ঊনিশ

আচ্ছা আপনি কি চা খান?
লাল চা, আদা, লবঙ্গ মিকচার
বুঝছি
কী,
করোনার ভয়! দুধ চা খান না কেন?
আমার ভালো লাগে না
তাহলে কী আপনি দুধ পছন্দ করেন না?
কেন?
দুধ চায়ের মতো চায়ের স্বাদ আছে নাকী?
তাহলে আপনি খান
আসুন সিগারেট টানি, কি সিগারেন খান?
আমি সিগারেট টানি না
কেন, আপনি না লেখক, আবার তো সাংবাদিকও!
নিন মাথা চাঙ্গা হবে
হরহর করে আসবে চিন্তা
আমার এই মুহুর্তে চিন্তার প্রয়োজন নেই
কেন;চিন্তা ছাড়া কোন সৃষ্টি হয় নাকি?

আমি এবার অন্যদিকে তাকাই
আবার সে হাসি টেনে বলে, কিছু তো খান
নাহ খাবো না
কেন খাবেন না, আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন না?
জ্বি, অপছন্দও করি না
একটা কবিতা বলবেন?
কেন?
আমার না কবিতা ভীষণ ভালো লাগে!
আমি করি না
আচ্ছা আপনি রসালো আম পছন্দ করেন?
করি
আমার দুটি রসালো আম আছে খাবেন,
কোথায়?
কেন গাছে, আম বনে
সেটা কোথায়?
আমার সাজানো বেড রুমে!

এবার চুপসে যাই, আবছা অন্ধকার
সামনে বকুল গাছ, ঝিরঝির করে ঝরছে ফুল
জোনাকিদেরও আনাগোনা
মেঘের ভাজে ভাজে বের হয়ে আসছে চাঁদ
সামনে সে দাঁড়ানো অপেক্ষামান
সাদা স্যালোয়ারে,
প্রথম ভেবেছিলাম কোন উন্মাদ হয়তো!
এখন দেখছি ঊনিশে উত্লা হয়ে আছে শ্রাবন্তি
এতোক্ষণে রংচা চলে এসেছে টি-টেবিলে
মাথাটা রিমঝিম করছে
শরীর ঘামছে
বাড়ছে দেহের তাপমাত্রা
চা চমুক দিতে যাই
এবার সে পিছন থেকে টেনে বলে,
এখন গরম চায়ে ঠোট-জিহবা স্পর্শ নয়!
এখন আপনার রসালো আম খাওয়ার সময়
এবার চোখ উপরে উঠে
সে টেনে নিতে উদ্ধত হয় তার আম্রকাননের দিকে…

১ জুন/২০২০

রিপোর্টারের ডায়েরী : ব্লগার থেকে সংবাদকর্মী

প্রত্যেক সাফল্যের একটা লক্ষ্য থাকে। আমারও ছিল। তবে কখনোই সংবাদমাধ্যমে কাজের লক্ষ্য ছিল না তখন। ২০০৪ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ (পাঠক ফোরাম) ও যুগান্তরের স্বজন সমাবেশে লিখি। স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়ার। এ সময় হতেই নিয়মিত পত্রিকায় লিখতে থাকি।

২০০৪ সাল হতেই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ছাড়াও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায় সাহিত্য নিয়ে লেখালিখি করি। কলাম ও চিঠিপত্র বিভাগেও লিখি। যদিও লেখালেখি শুরু হয় আরো পাঁচ বছর আগে। সে সময় অনেকেই বলতেন, পত্রিকায় লিখি, সাংবাদিকতায় আসি না কেন, সাংবাদিক হতে চাই না কেন। কেন যেন একটা অনীহা ছিল এ পেশায়। বলতাম, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

তাই জাতীয় পত্রিকাগুলোতে সাহিত্য নিয়ে লিখলেও ৮ বছর পর সংবাদমাধ্যমে আসি। আসার কথাও ছিল না। ২০১১ সালে ব্লগিং লেখা শুরু করি। এর ফাঁকে দু’তিনটা ম্যাগাজিনও বের করি। ব্লগ ও ফেসবুকে প্রথম আইডি খুলে দেন সীমান্ত পথিক। তাকে আমরা ঢাকা হুজুর বলে জানি। সর্বপ্রথম শব্দনীড়, পরে প্রথম আলো ব্লগ, বদলে যাও বদলে দাও আইডি খুলে লিখতে শুরু করে। পরে আরো এক ডজন ব্লগে লিখি। চলতে থাকে ব্লগিং। বাড়তে থাকে ভার্চুয়াল পরিচিতি। এসময় অনেক নামি-দামী লেখকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে না হয় আরেকটি পর্বে তাদের নামসহ আপডেট করবো।

এরই মধ্যে খাদেমুল ভাই (সাংবাদিক) আমার কম্পিউটার ব্যবহার করে নিয়মিত পত্রিকায় নিউজ পাঠান। বাংলাবাজার পত্রিকায় লিখেন ওই সময়। সাংবাদিকতা পেশায় আসবো না ভেবেই নিউজ লেখা তেমন ভালো লাগতো না আমার। সে সময় তেঁতুলিয়ার অনেকেই আমার এখান থেকে পত্রিকায় নিউজ পাঠান। সাহিত্যে অত্যাধিক ঝোঁক থাকায় সাংবাদিকতা পেশাটাকে সেভাবে পছন্দ হয়নি। পছন্দ না হওয়ারও অনেক কারণ ছিল। সেটা না বলি। কিন্তু খাদেমুল ভাই নাছোর বান্দা। আমাকে শেষ পর্যন্ নিউজ লেখানো ও শেখানোর উঠে পড়ে গেলেন। সৃজনশীল হওয়াতে বেশি দিন লাগলো না নিউজ লিখতে।

আর যখনই সাংবাদিকতার পেশায় পা বাড়ালাম, তখন দেখি প্রতিদ্বন্ধী ভেবে অনেকেই হিংসায় জ্বলতে শুরু করলেন। সামান্য ভুল করলেই তীব্র অপমান করতে শুরু করলেন। চলতে ফিরতে যেন কেটে ফেলবেন। নয়তো ল্যাং মেরে ফেলে আহত করবেন। যেখানে সেখানে তাও। যেকোন অনুষ্ঠানে গেলে তিরস্কার স্বরে বলতেন, ও তো ফেসবুকে লিখে। ব্লগার। কিসের সাংবাদিক? কোন কাগজ আছে? ভাবলাম, এজন্য কী এ পেশা আমার পছন্দ ছিল না। এতে আমার মনে একটা ক্ষোভ তৈরি হলো। প্রতিদ্বন্ধীর সাথে লড়তে হলে তো লড়াই করার সাহসও লাগে। হাল ছাড়লাম না। ধীরে ধীরে লেখার হাত শক্ত হতে লাগলো। চর্চা বাড়াতে লাগলাম।

পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। হয়তো বড় কিছু হওয়া সম্ভব হয়নি। সামান্য একটি বালুকণা হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করেছি মাত্র। সমুদ্রে কতো রাশি রাশি বালুকণা। হতে পারি আমি তার চেয়েও নগণ্য। তবুও তো চেষ্টা করতে পেরেছি। ইচ্ছার প্রতি ফলন ঘটাতে পেরেছি।

আজ খাদেমুল ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যার হাত ধরে সাংবাদিকতা শেখা। আর প্রিয় বন্ধুবর সীমান্ত পথিকের প্রতি ভালোবাসার মাত্রা তো সীমাহীন। আর যারা সেদিন আর আজও আমাকে সহ্য করতে পারেন না তাদের প্রতিও সম্মান ও ভালোবাসা দুটোই। কারণ নেতিবাচক ব্যক্তি ছাড়া পজিটিভের গুরুত্ব বুঝা যায় না।

কাব্যগল্প : মধ্যরাতের জোছনা আজ আমার উঠোনে…

মধ্যরাতের জোছনা রুপালি স্নিগ্ধ আলো;
কবির উঠোনে চুয়ে চুয়ে পড়ছে,
জোছনার শিশির বিন্দুর রুপচ্ছটা।
উঠোনের এক কোণে বকুল গাছটির,
পাতায় পাতায় বকুলের মাতাল গন্ধ;
স্নিগ্ধ জোছনার সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়া- মিশে একাকার হয়ে ,
রুপ দিয়েছে ছন্দময় রাত,
এই জোষ্ঠ মাসে এরকম চন্দ্রিমার মায়াবি রুপালি জোছনা
আকাশ ও প্রকৃতির বুককে এক অনাবিল স্বর্গীয় পরিবেশে,
রুপান্তরিত করে তুলবে;
এমন প্রত্যাশাও ছিল না কবির।

কবি বসে আছে উঠোনের ইজি চেয়ারটায় বেশ আরাম করে;
সামনে টি-টুলে সেদিনের সদ্য মুখ খোলা বেনসন প্যাকেটটা,
আর কিছু আঙুর,আপেল ও কিছু পিরিচে রাখা নোনটা বিস্কুত,
আর ফ্লাক্সে করা লাল চা;
কফি বানানো হয়নি, রিভার থাকলে-
এই মধ্যরাতের জোছনাটা আরও আয়োজন করে উপভোগ করা যেত;
ও আজ নেই,তাই নিরিবিলিতে নির্জনে বসে,
এ মধ্যরাতের প্রকৃতি রাঙা শ্বেত জোছনা,
উপভোগ করতে হবে একান্ত চিত্তে নির্জন অনুভবে।

সেদিনের নদী মহানন্দায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যায়;
নীল শাড়ী পরা ওই ভদ্রমহিলার সাথে দেখা হওয়া,
তি-চার বছরের পৃথিবীর অনন্য সুন্দর স্বর্গীয় শিশু,
কবিকে আব্বু আব্বু বলে জড়িয়ে ধরে-
কি বিব্রতবোধ-ই না করে তুলে ছিল?
তারপরেও বুকের ভিতর কী প্রশান্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।
ওই শিশুটিকে মনে হয়েছিল যেন কবিরই মেয়ে!
এমন একটা অনুভূতি কবির মনকে করেছিল-
আবেগের বর্ষার শ্রাবণের জলধারার মত।
আচ্ছা ওই ভদ্র মহিলাকে এত চেনা চেনা মনে হয়েছিল কেন?
শুধু এতোটুকুই বলেছিল সে-
কেমন আছেন কবি সাহেব?
নিবিষ্ট চোখে মায়াবি হরিণী ডাগর রাঙা দৃষ্টিতে;
তাকিয়েছিল দীর্ঘক্ষণ ভদ্র মহিলা;
তার চোখ দুটো যেন মনের সমস্ত কথাগুলো বলতেছিল;
আচ্ছা কি বলতেছিল তার ওই মায়াবি দুটো চোখ যে,
তাকে প্রাণের চেয়েও কাছের,অতি কাছের অস্তিত্ব মনে হয়েছিল!
মনে হয়েছিল কোন স্বপ্ন জগতে তার সাথে,
সুখী এক দাম্পত্য জীবন গড়ে উঠেছিল।
নইলে এতটা আপন মনে হবে কেন?
আর ওই তিন-চার বছর বয়েসের স্বর্গীয় শিশু,
কেন আব্বু আব্বু ডাকছিল?
কি এর রহস্য!
আর ওই ভদ্র মহিলা ফেরার মুহুর্তে কেন শুধু মোবাইল নাম্বারটা চেয়ে বসল?
কবির কাছে সেদিন কাগজ ছিল না;
তাই ডান হাতের তালুতে নাম্বারটা লিখে দিয়েছিল!
এরপর বাসায় এসে আর স্থির থাকতে পারে নি;
সারাক্ষণ কানে বেজে উঠেছে শিশুটির আব্বু আব্বু ডাক;
আর ভদ্র মহিলার মায়াভরা শ্বেত জোছনার মত লাবণ্য মুখ,
এখনো কানে বাজছে, চোখে ভাসছে শিশুটির মুখচ্ছবি।

কবি ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে কাপে নিয়ে মুখে তুলে নিবে,
সহসাই মনে হলো পাজ্ঞাবির পকেটে রাখা চিঠিটার কথা;
চিঠিটা পকেটে পুরে দিয়েছিল শিশুটি মেয়েটি,
দেওয়ার সময় বলেছিল আব্বু এটা বাসায় গিয়ে দেখ;
তাই খোলা হয়নি বাসায় এসেও একবারেও মনে পড়েনি,
চিঠিটির কথা, শুধু মনে পড়েছে শিশুটি ও তার মায়ের কথা;
আচ্ছা কি লেখা রয়েছে ওই চিঠিটাতে?
কবি উঠে রুমের দিকে পা বাড়ায় চিঠিটা আনতে;
কাপটায় চা ঠান্ডা হতে থাকে পূর্বালীর মৃদু হাওয়ায়।
খানিকক্ষণ ফিরে আসে কবি চিঠিটা হাতে নিয়ে;
আবেগের ঘোরে পাগলের মত্ততায় কবি চিঠির মুখ খোলে,
এমনি কি লেখা রয়েছে যে এটায় পাগলামী মত্ততা আছে?

কবি চিঠি খুলে,মধ্যরাতের জোছনার কিরণ চিঠিটায় এসে পড়ে,
স্পষ্ট পড়া যায় আজ চতুর্দশী যৌবনা চাঁদের আলোয়-
অবিভূত হওয়া চিঠিটি; তাতে লেখা আছে-
‘প্রিয় লেখক সাহেব গত পরশু তিন্নির চতুর্থ জন্ম দিন,
তুমি এসো নইলে তিন্নি কেক কাটবে না’
-ইতি তিন্নির আম্মু তামান্না রহমান লিপি
কবি চিঠি পড়ে চমকে যায় মাত্র তিন লাইন!
আরও কিছু তো লিখতে পার তো! লিখেনি কেন?

কবি উঠে দাঁড়ায় মনটা কেমন যেন ক্রমশ: অস্থির হয়ে উঠছে;
বুকের ভিতর কিসের এত টান টান অনুভূতি সারা শরীরকে উতলা করে তুলছে, আর-
মাঝে মাঝে ঝাকিয়ে তুলছে পুরো শরীরটা অদ্ভূত শিহরণে?

মধ্যরাতের জোছনা-সেই কখন শেষ রাতের জোৎস্নায় পরিণত হয়েছে,
গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদ-জোছনা বেরিয়ে আসতে চাইছে কবির উঠোনে,
গাছের পাতার ছায়ায় বিন্দু বিন্দু চাঁদের আলোক রশ্মি;
কবির উঠোন ঝিলমিল ঝিলমিল করে তুলছে আরেক স্বপ্নের মোহ;
কবির SYMPHONY-D70 মডেল মোবাইলটা ইজি চেয়ারের সামনে-
টি টেবিলটায় নীরব হয়ে আছে,
রিভারও কেমন জানি ফোন করলো না;
আজ মধ্যরাতের স্বপ্নিল সোনালী রাঙা জোৎস্নায়,
তাহলে কি ওঁর উঠোনে;
আকাশ ভরা পূর্ণিমা জোছনা বাসার আঙিনায় পড়েনি?
আর ওই ভদ্রমহিলা চিঠিতে এ কি লিখল!
‘তুমি না আসলে তিন্নি কেক কাটবে না’
আমি কি তার ‘হাজব্যান্ড’ নাকি যে…….?
কবি ভাবছে আর উঠোন জুড়ে পায়চারি করছে;
হটাৎ বকুল গাছটির অদূরেই আলো-ছায়ায় দেখা যাচ্ছে-
কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে,
তার সামনে-পাশে হাসনাহেনা ফুলেরা ফোটে;
সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে কবির বাড়ীর পুরো আশপাশ,
সত্যিই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে-কবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,
পড়নে তার রাত্রিকার পোশাক সাদা মিহি গাউন,
মাথার চুলগুলো খোঁপা বেঁধে গেথেছে হাসনাহেনা ফুল
১০গছ দূর থেকে গাছের পাতার ফাঁক ভেদ করে মাধবী জোছনার আলোয়;
বেশ ওই দাড়িয়ে থাকা কেউ একজনকে মায়াবি পরী বলে মনে হচ্ছে কবির,
কবি পা বাড়ায় সেই দাঁড়িয়ে থাকা পরীর দিকে,
পিছনে টি-টিবিলের রাখা মোবাইলটা বেজে উঠে,
এই ফোনটা ধরো না..২..৩..৪ আশ্চর্য…….।

কাব্যগল্পঃ দেয়ালে ঝুলানো ফ্রেমে বাঁধা বাবার ছবিটা

দেখতে দেখতেই ১৯টি বছর কেটে গেছে কেমন করে যেন,
চোখের পাতা ফেলতে ফেলতেই;
৬ বছরের শিশুটি আজ ২৫ বছরের যুবক, বিয়ে সংসার,
বাবা হতে চলেছে সেও প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম ধারাতেই
অদ্ভুত কালের চক্র ঘূর্ণ্যমান সময়ের পাক পরিবর্তন
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঘুরে ফিরে দেখায় সময়ের রুপালী পর্দায়
যাপিত জীবনের রঙিন-বেরঙিন ঘটনাগুলো।

১৯টি বছর ধরেই দেয়ালে ঝুলছে ফ্রেমে বাঁধা বাবার হাসিঝরা ছবিটা
চোখের পাতা পড়ে না এক মুহূর্তের জন্য, নির্বাক চাহনি
সারাটা সময়ই নিষ্পলক দৃষ্টি নিয়ে জেগে থাকেন
ফ্রেমের ভিতর থেকে ছবির ভাষায় কথা বলে যান বাবা
বুঝিনা সেই নিঃশব্দ বাক্যচারণ, শুধু দেখি বাবা অপলক চেয়ে আছে
১৯ বছর ধরেই।

পৃথিবীর বুকে রাত্রি নেমে আসলেই এখন বাবার বিছানাতেই ঘুমাই
কিন্তু বাবার সান্নিধ্য নেই, কয়েক বছর একেবারে পরিত্যক্ত ছিল ঘরটি
ঘর জুড়ে বাবাহীন এক শব্দহীন শূন্যস্থানের আর্তনাদ
ঘরের দেয়ালে শেষ পর্যন্ত জায়গা হয়েছে ফ্রেমের ভিতর,
বিয়ের পূর্বে তোলা চাকরি জীবনের টাই পরা ছবিটা।

বাবা মাঝে মাঝেই আমার ঘুম স্বপ্নে এসে আকস্মিক হাজির হয়েই বলেন-
খোকা,এই খোকা কিরে এভাবে ঘুমালে চলবে
ওই দেখ ফজরের আযান হচ্ছে উঠে নামায পড়, কুরআন তেলোওয়াত কর
আমাকে দেখছি একেবারেই ভুলেই গেছিস,
চোখ মেলে দেখ আমি তোর বাবা, তোর শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
এই দেখো, ছেলে আমার কত বড় হয়ে গেছে,
কিন্তু ঘুম কাতুরের অভ্যাসটা ছাড়েনি।

ঘুমের ঘোরেই আরেকটা চমৎকার জগত আছে- স্বপ্ন জগত
বাবার মুখটি অনেক দিন পর হাসি টানা ঠোঁটে বিবর্ণ চেহারায় দেখলাম
চোখ দুটো দেবে গেছে নিচের দিকে, চোখের কোঠরে ছোপ ছোপ কালো দাগ
মুখে ব্রণ ছিলনা, এখন আছে খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে বাবাকে
কোথা হতে যেন দু’দুটি আপেল আর কমলা নিয়ে এসেছেন,
মৃত্যুপুরীতে যে এসব আবাদ হয় তা আমার জানা ছিল না।

বাবা আপেল কাটেন, কাটার শব্দ শুনি খচকচ খচকচ…
ছোট ছোট টুকুরো করে একটি করে মুখে তুলে দেন সেই ৬বছরের,
কল্পনা করা শিশুকে এই ২৫ বছরের যুবকের মুখে,
আনন্দে খাই, ফের চোখের ভিতর ১৯ বছরের বাবা হারা জমিয়ে রাখা
শিলা খণ্ডের মত জমাটবাধা কান্নার প্রস্তর,
হঠাৎ করেই তুষার পাতের মত গলতে গলতে ঝর্ণায় উথলিত হতে থাকে
চোখের কিনার দিয়ে নদী হয়ে স্রোতের মত বইতে থাকে আনন্দ-বেদনার জল।

বাবা বিস্মিত হোন আমার চোখের কিনার দিয়ে কান্নার প্লবন দেখে
পকেটে রাখা ময়লাযুক্ত সাদা রুমালটা বের করে শুষে নেন কান্নার সমস্ত জল
কাঁদছিস কেন, পাগল কোথাকার;
আমি তোর মাঝেই জেগে আছি, জেগে থাকব
বাবা!
হ্যাঁ খোকা, মাঝে মাঝেই ছুটে আসি তোকে দেখতে,দেখে চলে যাই
নিঃসঙ্গ কবরে অন্ধকার সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে শুয়ে থাকতে ভাল লাগেনা
তাই ছুটে আসি পৃথিবীর বুকে খানিক মুক্ত বাতাস উপভোগ করতে..।

আমি অবাক হই, মরলেও মুক্ত বিহঙ্গের মত পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানো যায়!
বাবা তুমি চলে এসো তো; কবরে শুয়ে থেকে কোন কাজও পাওনা তুমি?
এই বিছানাতে ফের ১৯ বছর আগের মত ঘুমাতে শুরু করো,
আমার এক বছরে ছেলে নিশাত, তোমার নাতি,ওকে নিয়েই খেলাধুলা করবে
দেখ পাগল ছেলে কি বলে?
যে পৃথিবী থেকে একবার বিদায় নিয়েছে সে কি কখনো ফিরে?
যাই রে খোকা সময় হয়ে এলো, ফিরে যেতে হবে যেখান থেকে এসেছি
সময় হয়ে গেল মানে বলো কি বাবা! তোমার তো বাবা অফুরন্ত সময়
না-পাগল, জগতের প্রত্যেকটি সৃষ্টিতেই এক একটি ধারা রয়েছে।

বাবা চলে যেতে থাকেন, পরনে তার সাদা কাফনের ঢিলেঢালা গাউন
পিছন থেকে ডাকতে থাকি বাবা বাবা………বাবা
বধির বাবা, আমার এ আর্তচিৎকার ডাক শুনে না সে,
হঠাৎ চোখের পাতা পরতেই দেখি বাবা নেই, সাদা আলোয় অদৃশ্য
চিৎকার করে কাঁদতে থাকি বাবা দাঁড়াও আমি আসছি
বাবার হদিস নেই, ঘর জুড়ে রাতের অন্ধকার
ঘুম ভাঙতেই দেখি সুবহে সাদিক ভোর
আবছা অন্ধকারে ড্রিম লাইটের নীল আলোয় দেখা যাচ্ছে
দেয়ালে ঝুলছে প্রতিদিনকার মত বাবার হাসিমাখা ফ্রেমে বাঁধা জীবন্ত ছবিটা।

কাব্যগল্পঃ সেই অথর্ব এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার

ছেলেটির পা নেই
দু’টো পা-ই নেই তার
পা দু’টো হারিয়েছে সে শিশু বয়েসেই
একটি গাড়ী এক্সিডেন্টে
তখন সে ক্লাশ থ্রীতে পড়ত।
একদিন কথা হলো তার সাথে আমার
বলল তার পা-না থাকার কষ্টের কথা
বললাম-কিভাবে চল ?
ক্রাচে ভর করে।
পঙ্গু জীবনে এ এক অধ্যায়
আমি ভাবতে লাগলাম–।পরে জিজ্ঞেস করলাম,
লেখাপড়া কর ?
হ্যাঁ করি, এবার এসএসসি জিপিএ-৪.৬৫ নিয়ে পাশ করেছি।
কলেজে ভর্তি হব ভাবছি, কিন্ত্ত টাকা নেই,
কলেজে ভর্তি হব কি করে ?
কথাটা শুনে কষ্টই অনুভব হলো-
পঙ্গু জীবনে রোজগার কোথায়?
যে সংসার তার অভাবের দৈন্যশালা!

আমি পড়তে চাই,
প্রথম শ্রেণীর একজন অফিসার হতে চাই,
গভীর স্বপ্ন নিয়ে বলে ছেলেটি।
আসলেই কি সম্ভব! তবু আমি তাকে উৎসাহ দিতে-
হ্যাঁ, তুমি পারবে, তোমার মধ্যে অদম্য ইচ্ছা-শক্তি আছে,
তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে পার,অথর্ব (ছেলেটির নাম)
কোন বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে ভাল হয়,বলতে পারেন?
কম্পিউটার সায়েন্স-এ
কম্পিউটার! কম্পিউটার!!
ছেলেটি বিস্ময়ে বলে উঠলো।

হ্যাঁ,কম্পিউটার।
কিন্তু টাকা পাব কোথায় স্যার?
টাকা তোমার হবে অথর্ব, সাহস যুগিয়ে বলি।
কেমন করে স্যার?
তুমি পার্ট জব করবে, আমি ব্যবস্থা করে দেই।
পার্ট জব!
হ্যাঁ পার্ট জব, এতে তোমার রোজগারও হবে
লেখাপড়া হয়ে যাবে তোমার।

ছেলেটি চিৎকার করে বলে উঠলো-
আমি পথ পেয়ে গেছি,
আমি এখন আমাকে নতুন করে আবিস্কার করব
সম্পূর্ণ রুপে নিজেকে গড়ে তুলব আমি
আমি হব সেরা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যতম
পঙ্গু জীবনে ভিক্ষাবৃত্তি ভাল নয়,
ভাল নয় জীবনে অভিসাপ নিয়ে বেচেঁ থাকার
আমার পা নেই তাতে কোন দুঃখ নেই
দুটি হাত আর সুস্থ-সুন্দর মস্তিস্ক তো আছে
আমি এ দুটোকে কাজে লাগিয়ে
কাংখিত স্বপ্নকে জয় করবই আমি।

ছেলেটি পার্ট জব-এ কাজ নেয় কম্পিউটার সেন্টারে
অবশ্য পূর্বে তার কম্পিউটার ধারনাটা ছিল
এসএসসি তে কম্পিউটার বিষয়টিও ছিল।
এতে তার বুঝতে সহজ হয়েছে,আর
আগ্রহ জন্মেছে তার প্রবল,
তাই সে গভীর রাত পর্যন্ত পাঠ্যবাসে মগ্ন থাকে
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েই।
তার পা নেই, এতে তার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই,
প্রখর মেধাবী হওয়ায়,
তার কলেজের বন্ধুরা তাকে সহযোগিতা করে,
শিক্ষকদের বেশ অনুপ্রেরণাও পায় সে,
এতে সে আস্তে আস্তে পার করে কলেজের এক একটি অধ্যায়
তার প্রবল ইচ্ছা-শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যায়,
সাফল্যের সোনালী জীবনে।

একদিন তার সাথে দেখা হল আমার
যার দুটি পা নেই, ক্রাচে ভর করে হাটে।
১১ বৎসর পর তার সাথে দেখা হয় আমার
গায়ে কোর্ট-টাই আর মাথায় ঝাকরা চুল
চোখে কালো সান গ্লাস
অফিস থেকে বের হয়ে আসছিল সে
কালো পাজেরো গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার ড্রাইভার,
ওই মুহুর্তে তার অফিসে ঢোকার সময় দেখা হয়,
তার সাথে আমার,
ক্রাচে ভর করে দিয়ে আসছিল সে,
সে বেশ হ্যান্ডসাম ও মাথায় ঝাকরা চুল থাকায়
আমি চিনতে পারিনি প্রথমে তাকে-
সেই আমাকে চিনতে পেরে
কাছে এসে শ্রদ্ধায় সালাম করে বলল-
আনন্দানু চোখে
স্যার এতোদিন কোথায় ছিলেন?

আমাকে চিনতে পারছেন না, আমি সেই অথর্ব
সেই ছেলেটি যার দুটো পা ছিল না,
আজ আমি সফল একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।

আজ আমার কোনকিছুর অভাব নেই,
অভাব নেই অর্থের,
আমি আমার জমানো তহবিল থেকে,
পঙ্গুদের সাহাযার্থে অর্ধেক-ই ব্যয় করি।
আমিও কেদেঁ ফেলি গভীর অপ্রকাশিত আনন্দে
১১বছর আগে কেমন দেখেছিলাম অথর্বকে?

আজ আমার সামনে সে কোর্ট-টাই পড়া
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
আমি অবিভূত হই তার অসম্ভবকে জয় করে
আজকের এই সফল্য ব্যক্তিতে পৌছতে পারায়।
আমি জিজ্ঞেস করি, অথর্ব তুমি কি বিয়ে করেছ?
জ্বী স্যার,আমার সংসারে দুটি ছেলে-মেয়ে
তারা আজ প্রাইমারিতে পড়ছে
আমার স্ত্রী মোহনা কলেজের বাংলা লেকচারার।
চলেন স্যার ?
কোথায় অথর্ব ?
আজ নয় অথর্ব, অন্যদিন না হয় সময় করে যাব।
প্লিজ স্যার,না করবেন না,
আজ ১১ বছর পর আপনার দেখা পেয়েছি,
ওই দেখেন স্যার,কালো পাজেরো আমার
এসে দেখেন স্যার–।
আমি যেন আনন্দে বাকশক্তি হারিয় ফেলি,
অথর্বের চোখ-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখে।
আমি আর না করতে পারি না,
বাধ্য হয়েই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাজেরো গাড়ীতে
বসতে হলো অথর্বের পাশে।
মনে হলো অথর্ব আজ আমাকে পেয়ে,
তার বাবাকে কাছে পাওয়ার আনন্দটা প্রফুল্ল চিত্তে অনুভব করছে।

গাড়ী চলতে থাকে বনানীর রাস্তা ধরে তার বাসার দিকে
রাজধানীর সব ব্যস্ততম মানুষগুলো ছাড়িয়ে,
আমি ভাবতে থাকি সেই দু-পা হীন পঙ্গু ছেলেটা
আজ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সাফল্যের সোনার হরিণটা ধরতে পেরেছে।

প্রতীক্ষা

এঁকে দিব মিষ্টি চুম্বন
যদি একাকী নির্জনে এসে দাঁড়াও
আমার বারান্দার বাগানে রক্ত গোলাপের
গাছটার সামনে, এঁকে দিব মিষ্টি আদর
এই স্বপ্ন দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো
তেরোটি শীত-বসন্তের কামনার সময়!

তুমি আসবে বলেই অপেক্ষার প্রহরে
দরজায় দাঁড়িয়েই থেকেছি তেরোটি বছর
চোখের সামন দিয়ে হেটে গেল মধুপূর্ণিমা রাত
নিশিথ অমাবশ্যায় জোনাকির আলো
শুধুই তোমার প্রতীক্ষায় চোখের পাতা
এক করা হয়নি!

তুমিহীন নিরব যন্ত্রনার দহন সইতে সইতে
সতেজ যৌবনও জলের অভাবে
শুস্ক মরিচিকায় কেমন বিবর্ণ মলিন
আজ ঝরা বসন্তে নির্জনে চোখ ভেসে
প্রবাহিত নদীর নিরব বেদনা
কার কি এসে যায়!

তোমার ওই উষ্ণ ঠোটে ঠোট রেখে
আমার লিপিস্টিক রাঙা দুটি মিষ্টি চুম্বন
কিছু সময় চেয়েছিলাম
যদি সময় হয় এসো অবেলায়
তবুও এঁকে দিব জমাটবদ্ধ চুম্বন
ভালবেসেই তোমায় কথা দিয়েছিলাম!!
১৯ নভেম্বর/১৮

এখানে কেউ নেই…বলেছিল ছায়ানীল

এখানে কেউ নেই বলে উঠে কেউ একজন
শুনে অবাক হই;
এই মাত্রই তো দেখলাম একটা নীলছায়াকে
এখানে কেউ নেই তো বলে উঠে আবার কেউ
ঠিক আছে, বলে হাটতে থাকি-
ভূতরের পথ ধরে, জোসনাহীন রাত
হাটতে থাকি দিগন্ত জোড়া পথ
এই যে শুনুন নারীর কোমল কন্ঠ;
পথ থমকে দাঁড়াই—
লাটিমের মতো চোখ ঘুরিয়ে দেখি কেউ নেই,
নিস্তব্ধ পরিবেশ ছাড়া
কে ডাকে? অদ্ভূত ব্যাপার!
কে বলছেন–জিজ্ঞেস করি
কেউ না………আপনি চলে যান? অদৃশ্য আওয়াজ
আবার পথ চলতে শুরু করি,পায়ের আওয়াজে শুনি নুপুরের ঝনঝনানির মৃদু শব্দ
কেউ একজন আমার পাশ ধরেছে বুঝতে পারি, কিন্তু কে?
কেউ নয় আমি ছায়ানীল,
ছায়ানীল!
কেন অবাক হচ্ছেন?
জ্বি-কে আপনি?
বললাম তো ছায়ানীল। হাটতেছেন হাটতে থাকুন-
ঠিক আছে তাহলে যাত্রাপথে বাঁধা সৃষ্টি করবেন না, চলি—বলে আবার হাটতে থাকি।

নি:সঙ্গ যাত্রা, পথ চলছি মাইলের পর মাইল,
নিদ্রাহীন রাত, ভিখেরীর ছদ্মবেশ চলছি একটা জটিল কেস নিয়ে
সামনেই গন্তব্য স্থল,
একটু পরেই জীবন্ত লাশের কবরটা খুড়াখুড়ি করবো
২১ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ করে পুতে রাখা হয়েছে
এমনি এমনই এক গোপন সংবাদ জেনেছি আমি,
এখনো আইনের হাতকড়ায় পরেনি ধর্ষকদের হাত
এবার আমার আইনেই আমি, ধর্ষকদের ধরে কি করবো সেটা আমিই জানি
এই তো এসে গেলাম, নিস্তব্ধ একটা বাঁশঝাড়! থমথমে শিউরে উঠা ভূতুরে পরিবেশ!
দূর থেকে টর্চ লাইট মেরে হেটে আসছে কেউ, আমি আড়াল হই
এই কেউ আছে ওখানে? দূর থেকে আওয়াজ তুলে অন্য কেউ
না এখানে কেউ নেই; চলে আসছি বলে লোকটি চলে যায়।
আমি আড়াল থেকে বের হয়ে এসে কবরের পাশে দাঁড়াই, কয়েকদিন আগের কবর,
এখনো আতর-গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছে, অথচ কবরটি লতাপাতা দিয়ে ঢাকা
আমি উবু হই ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য………..সাবধান ওখানে মুখ দিবেনা বলে উঠে কেউ
আমি চমকে উঠি, চোখ মেলে চারদিকে একবার দেখি—দেখি কেউ নেই,তাহলে কে?
ছায়ানীল—বলেছিলাম না? আবার সেই নারীর কন্ঠ? আপনি দাঁড়ান আমি আসছি
কী আশ্চর্য্যর ভিতর এখন আমি, অথচ অদৃশ্য ছায়ানীল ছাড়া কেউ নেই!

অপেক্ষার সময় কেটেছে পনের মিনিট, আমি এবার কবর খুঁড়ার জন্য প্রস্তুত হই
লতাপাতা সরাই, আস্তে আস্তে মাটি সরাতে থাকি……….ঘ্রাণ বাড়তে থাকে
অবাক হই অদ্ভূত এ ঘ্রাণে, মেয়েরা যেভাবে পারফিউম মেখে ঘ্রাণ সুন্দরীরুপে সাজে
তের বছর আগে আমার ইয়েও সুগন্ধি মেখে আমার জন্য বিশেষ সময়গুলোতে অপেক্ষায় থাকত
আজ সেই ঘ্রাণের মতো ঘ্রাণ পাচ্ছি……….মাটি খুড়ছি আমার ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছি
এই কবর খুঁড়বে না! আবার সেই অদৃশ্য কন্ঠ ছায়ানীল বলে উঠে,
কেন?
খুঁড়ে লাভ নেই; এই কবরে কেউ নেই,
কারণ?
এই কবরের মেয়েটি আমিই ছায়ানীল, ক’দিন আগে আমাকে দূর্বৃত্তরা গণধর্ষণে মেরে ফেলেছে
শুধু মেরেও ক্ষান্ত হয়নি তারা, টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে রেখেছিল ফেলে
মসজিদের ইমামের চোখে পড়েছিল আমার টুকরো টুকরো লাশ, উনিই এখানে কবর দিয়েছিলেন
মাঝে মাঝে কবর থেকে বের হয়ে খুঁজে বেড়াই ওই দুর্বৃত্তদের, কয়েকজনকে পেয়েও গেছি
ওদের এখন রাতের বেলায় ভয় দেখাই,পুলিশ-র‌্যাবের রুপ ধরে আকস্মিক সামনে দাঁড় হই
ওরা ভয় পায়, প্রচন্ড ভয়ে কুঁকুড়ে যায়–ঢোক ঢোক গিলে গ্লাসের পর গ্লাসের পানি
আমি অট্টহাসিতে তখন নিজেকে শ্বান্তনা দিতে চেষ্টা করি, চলে যান কাব্যগল্পকার!
কাব্যগল্পকার! আপনি আমাকে চিনেন কি করে?
চিনি কবি সাহেব। চলে যান……..সামনে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন-
এখানে কেউ নেই………..।
২২.০২.১৩

শব্দ বাক্যের চরিত্রহীনতা

থার্ড ক্লাশ!
শব্দের বিচরণে ঘুরে ফিরে আসে
এমন কিছু অসভ্য শ্রেণির মানুষ!
একেবারেই নিম্ন শ্রেণির!
বেহেয়া প্রকৃতির
লজ্জাহীন!
ঠিক কুকুর, বানর আর ধূর্তবাজ শেয়াল!

বয়সই হয়নি! দেখছেন না কী বেয়াদব
বাপ-মা কী কিছুই শেখায়নি
বড়-ছোট কাউকে মানছে না
রাবিশ কোথাকার!
বদমাশ,
চরিত্রহীন
কী নিকৃষ্ট জানোয়ার হয়েই জন্মেছে যেন!!

শয়তান!
এখন দেখে আর অবাক হই না
চরম মিথ্যাবাদী
কথায় কথায় আল্লাহর কসম!
অবাক হওয়ার কিছু নেই
এরকমই তো দেখে আসছি
লজ্জাহীনদের আবার চরিত্র কিসের!!

৭ নভেম্বর@২০১৮

ফেসবুকে কী লিখবেন কী লিখবেন না

শেষ পর্বঃ
যা লিখবেন নাঃ
ফেসবুকে যেমন আপনার লেখার স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি এমন কিছু না লেখারও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চান না তার কোন ইউজার পোস্ট করে বিপদে পড়ুক। শুধু ফেসবুক কেন, কেউ চান না আপনি বিপদে পড়ুন। কারণ আপনার একটি পোস্ট বা লেখা সর্বাধিক মানুষের যেমন উপকার হতে পারে, আবার তার বিপরীতে চরম বিপদও ডেকে আনতে পারে। রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী, কটূক্তি, নগ্ন ছবি প্রকাশ, ব্যক্তিগত আক্রোশ, আবেগতাড়িত কোন পোস্ট, মিথ্যা প্ররোচনা, তথ্য বিম্ভ্রাট জাতীয় কোন পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করবেন না।

সতর্ক থাকতে অনুভূতি প্রকাশেঃ
হয়তো মনে হতে পারে ফেসবুকে আবার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কেন সতর্ক থাকতে হবে? প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে আইন রয়েছে। সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে যেমন ধারণা থাকতে হবে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তি আইন সম্পর্কেও আপনাকে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। তা নাহলে আপনাকে যেকোন সময় বিপদে পড়তে হতে পারে। ফেসবুকে যে আপনি কমেন্ট, লাইক, শেয়ার, রিয়েক্ট বাটন ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, অন্যের পোস্টে কমেন্ট, লাইক, শেয়ার ও রিয়েক্ট এর মাধ্যমে আপনার রূচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। কোন ধরণের পোস্ট বা লেখা আপনি পছন্দ করেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোন বিতর্কিত পোস্ট আপনি লাইক,শেয়ার কিংবা রিয়েক্ট দিয়ে সমর্থন করলেন। এই পোস্টের সমর্থনের কারণেও আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে।

অসতর্কতায় ফেঁসে যেতে পারেন সাইবার অপরাধেঃ
ফেসবুকে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে একাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, কোন স্টেটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধে ফেঁসে যেতে পারেন। আবার মেসেঞ্জারে মেসেজ, ভিডিও কল, অডিও কলে অশালীন বাক্যালাপ, হুমকি, দেশবিরোধী কোন কিছু করলে, ভাইরাস ছড়ালে সাইবার অপরাধ হতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭ ধারায় বলা আছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোন মিথ্যা, বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃংখলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, তাহলে সাইবার বা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অভিযুক্ত হবে। যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্ব নিম্ন ৭ বছর এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।

কী করবেন সাইবার অপরাধে ফেঁসে গেলেঃ
আপনি যদি সাইবার অপরাধে গুরুতর শিকার হন এবং এর প্রতিকার চান তাহলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আশ্রয় নিতে হবে আপনাকে। এ জন্য আপনাকে আপনার নিকটস্থ থানায় এজাহার/জিডি দায়ের করতে পারেন। আপনার ফেসবুক একাউন্ট কেউ হ্যাক করলে, ফেসবুক কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে হ্যাক হলে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করলে কিংবা অন্য কোন অপরাধের শিকার হলে দেরি না করে নিকটস্থ থানায় জানিয়ে রাখতে হবে। যদি সাইবার অপরাধের অভিযোগে মিথ্যাভাবে ফেঁসে যান, তাহলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝিয়ে বলতে হবে আপনি পরিস্থিতির শিকার। যদি আদালতে আপনাকে প্রেরণ করা হয় তাহলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে যেতে হবে।

ফেসবুকে কী লিখবেন কী লিখবেন না-১ম পর্ব।

ফেসবুকে কী লিখবেন কী লিখবেন না

পর্ব-১।
সময়ের দ্রুতগতির ও শক্তিশালী যোগাযোগমাধ্যম আজ তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষ প্রতিমুহুর্তে জানতে পারছে বিশ্বের সকল খবরাখবর। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সোস্যাল নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশন। যার ফলে মানুষ তার যাপিত জীবনের ঘটে যাওয়া খন্ডখন্ড চিত্র-ঘটনাগুলো অতি সহজে শেয়ার করতে পারছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সোস্যাল নেটওয়ার্ক হিসেবে সারাবিশ্বের মানুষ আজ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, লিংকডিন, হোয়াটঅ্যাপস, ইমো, শেয়ারচ্যাটের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জেনে ও ব্যবহার করে আসছে। এসব সোস্যাল নেটওয়ার্কের মধ্যে ফেসবুকই হচ্ছে সর্বাধিক পরিচিত। সারাবিশ্বের একশো কোটিরও বেশি মানুষ ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক তথা ফেসবুক ব্যবহার করে। চলতি সালে এর সংখ্যা ৩শ কোটিতে পৌছবে এরকম বলা হয়েছে। তাই নীল চোখের এই ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক কেউ জেনে বুঝে ব্যবহার করছে, কেউ না জেনে ব্যবহার করে। ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, এটা আজ বিশাল সংবাদ ও বিজ্ঞাপন মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করে মার্ক জুকারবার্গ। ধীরে ধীরে কমিউনিকেশন বাড়তে থাকলেও ২০১১ সালের হাতে হাতে মোবাইল আসায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই ফেসবুক। এরপর হাতে হাতে স্মার্টফোন চলে আসায় ফেসবুকের অবস্থান এখন শক্তিশালী।

লিখবেনঃ
ফেসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি থাকলে যেকোন তথ্য অতিদ্রুত শেয়ার করা যায়, তাই ভাবতে হবে আপনার ফেসবুকের একটি পোস্ট কতোটা গুরুত্ব বহন করতে পারে। অনেকে মনে করতে পারেন, ফেসবুকে যা ইচ্ছে তাই তো লেখা যায়। আমার অনুভূতি, আমার ঘুরাফেরা, আমার চোখের সামনে যেকোন ঘটনা তো ফেসবুকে শেয়ার করতেই পারি। এতে দোষের কী আছে? আপনার ভাবনা স্বাধীন হলেও ফেসবুক কিন্তু আপনাকে পোস্টের স্বাধীনতা দিলেও পরে আপনার শেয়ারকৃত পোস্টটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ জটিলতার দুর্ভোগ আপনাকেই ভোগ করতে হবে। এমনো হতে পারে এর দহনশীল দুর্ভোগ আপনার পরিবারও পেতে পারে।

কিভাবে লিখবেনঃ
কোথাও ঘুরতে গিয়েছেন, সেখানকার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন। অচেনা-অজানাকে জানাতে পারেন। চোখের সামনে দূর্ঘটনা ঘটে, সে দূর্ঘটনার সংবাদ, আনন্দ সংবাদ, সাফল্য, শিক্ষামূলক, উন্নয়নসহ জনকল্যাণমূলক পোস্ট আপনি দিতে পারেন। তবে আপনি যদি অপরাধ বিষয়ক কোন পোস্ট করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেই অপরাধের সত্যতা জানতে হবে। তথ্য-প্রমান থাকতে হবে। তবে আপনি যদি সংবাদমাধ্যমের কোন ফেসবুক ইউজার হোন, তাহলে সেই অপরাধের সংবাদটি প্রথমত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর তা ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, ফেসবুকে একটি পোস্ট মানেই সেটি মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটার রিফেক্ট বেশি হয়ে থাকে। তাই সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে সচেতনতা থাকতে হবে লেখার মধ্যে যেন অপ্রাসঙ্গিকতা না থাকে। লেখাটি যেন সবার দৃষ্টিগোচরের মধ্যে শিক্ষামূলক, উন্নয়নমূলক এবং সবার কাছে আপনার ব্যক্তিত্বটুকু যেন বিকশিত হয়ে সম্মানজনক হয়।

চলবে…..

মোবাইলেই সম্পাদনা করুন ছবি ও ভিডিও চিত্র

মোবাইল দিয়েই ছবি ও ভিডিও চিত্র সম্পাদনা বা এডিটিং? কথাটা শুনতে অবাক হলেও এখনকার স্মার্টফোনে মিলছে এই কাংখিত সুবিধা। সময়ের প্রয়োজনে হাতের মুঠোফোনকে প্রযুক্তিসম্পন্ন সেবা দিতে উদ্যোক্তা বা কোম্পানীগুলো তৈরি করছেন বিশেষ সফটওয়্যার বা অ্যাপস। কম্পিউটার বা মোবাইল হচ্ছে হার্ডওয়্যার বস্তু। এটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য ইনপুট করতে হয় সফটওয়্যার। তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আরও বিকাশমান করতে মোবাইল ফোনকে কম্পিউটার ভার্সন করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে মাইক্রোসফট মোবাইল পাওয়া যাচ্ছে। এসব মোবাইলে কম্পউটারের মতো উইন্ডোজ ব্যবহার করে করা যাচ্ছে কম্পিউটারের মতোই কাজ। তাই এই অংশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়ে আসলাম কিভাবে মোবাইলে সহজেই ভিডিও ও ছবি এডিটিং করে আকর্ষনীয় রূপ নেয়া যায়। শখের ফটোগ্রাফি কিংবা ভিডিও গ্রাফিই হোক না কেন, তা যদি নিজের মতো করে নিজের হাতেই সম্পাদনা করা যায় সে আনন্দ হয়ে উঠে সীমাহীন।

যারা সংবাদপত্রে বা সাংবাদিকতায় পেশায় নিয়োজিত আছেন, তারা এখন ক্যামেরার স্থলে ভালো মানের মোবাইল অর্থাৎ স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। আপনি কি জানেন? মোবাইলই এখন অল ইন ওয়ান! একের ভিতর অনেক!! মোবাইল ঘিরে আজ জার্নালিজম, ব্যাংকিং, ই-শপ, বিল পেমেন্ট, তথ্য আদান প্রদান, অডিও, ভিডিও, মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারনেট, ইমেল, ভিডিও কনফারেন্স, লাইভ, ইবুক, অনলাইন, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করা হচ্ছে এই মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে।

সংবাদমাধ্যমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ছবি ও ভিডিও সম্পাদনা। ছবি ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শনে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়। তাই প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে মোবাইল জার্নালিজম অর্থাৎ মোবাইল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক ঘটনার ছবি ও ভিডিও মোবাইলে সংগ্রহ করা সম্ভব। সংগৃহিত ছবি বা ভিডিও মোবাইলে ধারণ করা হলেও এটার এডিটিং বা সম্পাদনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন-মোবাইলে তোলা ছবিটির রেজ্যুলেশন, কালার সেটিং, কাটিং ঠিক করতে প্রয়োজন হয় এডিটিং এর। ঠিক এরকম ভিডিও চিত্রের ক্ষেত্রে।

ভিডিওটির কতটুকু অংশ দর্শকের সামনে তুলে ধরা হবে তার সময় নির্ধারণ, ভিডিও করার সময় হয়তো খন্ড খন্ডভাবে ধারণ করা হয়। সেটা কিভাবে এডিটিং এর মাধ্যমে ক্রপ বা কাটিংয়ের মাধ্যমে খন্ডখন্ড অংশগুলো একত্র করে একটি ভিডিও চিত্র করাই হচ্ছে সম্পাদনার কাজ। এক্ষেত্রে যারা মোবাইলে ছবি ও ভিডিও চিত্র করে থাকেন তাদের জন্য সুসংবাদই বলা যায়। আর যারা মোবাইল দিয়েই সংবাদমাধ্যমের কাজ সম্পন্ন করছেন তাদের জন্য এখন স্মার্টফোন বা টার্চ এন্ডুয়েড মোবাইল ফোনগুলোতে ফটোশপ অ্যাপস ব্যবহার করে এসব কাংখিত কাজগুলো করে দ্রুত সংবাদমাধ্যমপ্রেরণ করতে পারবেন এবং কাংখিত প্রয়োজনীয় কাজ করে রাখতে পারবেন।
স্মার্টফোনে ছবি তোলার জন্য যে ক্যামেরা রয়েছে তার চেয়ে অতিরিক্ত হাই রেজু্লেশন ক্যামেরার বিভিন্ন সফটওয়্যার বা অ্যাপস রয়েছে। এসব ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো তাৎক্ষনিকভাবে এডিটিংয়ের মাধ্যমে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়। আসুন দেখা যাক অ্যাপস দিয়ে ভিডিও ও ছবি এডিটিং করার দুটি প্রয়োজনীয় অ্যাপস বা সফটওয়্যার
ভিডিও এডিটর : InShot Inc
ভিডিও এর জন্য ইনশট In Shot Inc নামের একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপসটি চমতকার। অ্যাপসটি দিয়ে Video Editing, Music, Cut, Text, Crop, None Crop, Blur, Emoji ব্যবহার করে ভিডিওটি আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবেন।

Photo Editor New Version 2017
যাঁরা ছবি সম্পাদনা করতে জানেন না বা ফটোশপ শিখতে আগ্রহী তাঁদের জন্য এ অ্যাপটি দারুণ কার্যকর হবে। এই ফটোশপ অ্যাপসটি দিয়ে ফটোশপের চমৎকার কিছু কাজ করা যাবে। অ্যাপসটিতে রয়েছে stickers, effect, enhance, frames, overlays, vignette, crop, focus, orientation, lighting, color, bluch, sharpness, splash, draw, text, redeye, whiten, blemish, and blur, blush, lipstick, concealer, mascara, blusher অনেক কিছু।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.photoeditor.newversionns
এছাড়া এখনকার স্মার্টফোনগুলোতে অটো সিস্টেমের ফটো এডিটর হিসেবে বিউটি প্লাস দেয়া রয়েছে। মোবাইলে ছবি তুলে ছবিটি বিউটিতে ক্লিক করে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়। প্রয়োজনে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে Photo/Image Editor লিখে সার্চ করলে চলে আসবে। এজন্য ইন্টারনেট ডাটা অবশ্যই থাকতে হবে। বিশেষ করে দিন যতই যাচ্ছে ততোই স্মার্টফোনগুলোতে রূপ দেয়া হচ্ছে কম্পিউটার ভার্সন। যার কারণে স্মার্টফোনগুলোকে বলা হচ্ছে মিনি কম্পিউটার।
তবে সংবাদমাধ্যমে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রফেশনাল জার্নালিস্ট হিসেবে কাংখিত ফলাফল উপহার দিবে নিশ্চিত। অল ইন ওয়ান অর্থাৎ যার হাতে একটি স্মার্টফোন রয়েছে তার আর দ্বিতীয় উপাদান হিসেবে ল্যাপ্টপ, ডেক্সটপ ও আলাদা কোন ক্যামেরার প্রয়োজন পড়বে না। যেখানেই ঘটনা, সেখান থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা যাবে যেকোন সংবাদ। আর সে সংবাদ পৌছে দেয়া যাবে কাংখিত স্থানে। আজ মোবাইল দিয়েই কাজ সারা যাচ্ছে সব কিছু।

উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান
মোবাইল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (মোজাব)

কাব্যগল্প : ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখে

ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখে….
কি যেন নাম, প্রায়:ক্ষন বসে থাকে মহানন্দার তীরে
হ্যাঁ-হ্যাঁ ছেলেটি তো অমুকের ছেলে,বলল পাশে আরেক নিন্দুক
বলুন তো দেখি কবিতা লিখে কি হবে,
কবিতা ভাত দিবে?
অর্থের যোগান দিবে?
দেবদাস হয়ে বেঁচে থাকার কোন মানে আছে?
নিশ্চয়ই না,খামাকা নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া।

দেখুন না মাথায় ঝাকরা কুকরানো চুল,
যেন কাজী নজরুল নয়তোবা যৌবনে রবিঠাকুর
মুখ ভর্তি দাঁড়ি কাঁধে ঝুলানো পাটের চটের ব্যাগ,
কি ভাবই না তার, দেখেছেন?
হ্যাঁ,এত খামখেয়ালির কোন মানে নেই,
কি করতে পারবে কবিতা লিখে?
পারবে বিয়ে করে বৌকে তিনবেলা ঠিকমত খাওয়াতে?
পারবে বৌয়ের চাহিদা মিটাতে?
এমন সন্নাসীর ঘরে কে দিবে ভাল মেয়ে বিয়ে?

দিবে, অবশ্যই দিবে,আমার মেয়েটাকেই ওই ছেলেটার কাছে বিয়ে দিব, বলতে বলতে আসলেন এক ভদ্রলোক।
কি বললেন মসাই?
হ্যাঁ দিব, কেন দিব জানেন ,দিব এই কারণে?
কোন কারণে মসাই ?
আমার মেয়েটিও এই সংস্কৃতির, মানে গীতিকার।
গীতিকার! তার মানে সেও কবি?
কবিতা ছাড়া গীতি বা সংগীত হয় নাকি? বললেন নিন্দুক।
আচ্ছা গান শুনেন কেন, বলতে পারেন?
আরে গান তো মনের খোরাক!
একাকিত্বের সূর সঙ্গী।
গান প্রাণের আনন্দ সঞ্চার করে।
কেন বলুন তো, সংগীত ভাললাগে গীতিকারকে ভাললাগেনা কেন?
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’
মধুর সূরে জাতীয় সংগীত গাইতে পারেন, আবার কবিকে নিন্দা করেন?
ওই ছেলেটি তো আর রবিঠাকুর না ? নিন্দুকের প্রশ্ন।
কেন কবি কি আলাদা হয় না কি?
রবি ঠাকুর কাজী নজরুল জীবনান্দের জগত কি আলাদা ছিল?
নিরুত্তুপ!মুখ শুকিয়ে পাংশু হয়ে গেছে নিন্দুকের।

জানেন কবি কেন কবিতা লিখে? ভদ্রলোক আবার বলতে শুরু করলেন-
ওই যে ছেলেটা কবিতা লিখে,যার নিন্দায় এতক্ষণ মশগুল ছিলেন
সে বেড়ে উঠেছে নানা প্রতিকূলতার ঝড়ের মধ্য দিয়ে,
নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে,
জীবনের অভাব কি সে নিজের চোখের দেখেছে আর সয়েছে,
আপনার মত সাধারণ মানুষ এরা নয়!
তাহলে কি মহাপুরুষ জাতীয় কোন মানুষ! নিন্দুক প্রশ্নটা ছুড়ে ফেলে।
হ্যা মহা পুরুষ! এরা সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকে পৃথিবীতে,
যুগযুগ ধরে
এই দেখুন না ইতিহাসের পাতায় আদি কবি হেরোডোটাস এর নামটি,
এরকম বহু মনিষী আছে যারা কবিতা লিখত!
তারা আজ বেঁচে আছে ইতিহাসের পাতায়,
সোনার কলমের কালিতে খোদাই করা কত ভাস্কর্য,
এরা তো মরেও জীবিত, তাদের অমৃত সৃষ্টি আমরা লালন করি,
শিক্ষা অর্জন করি, আমাদের প্রজন্মদের শিক্ষা দেই,
যদি কবিতা ভাল না লাগে তাহলে দেশের শিক্ষামন্ত্রীকে বলে দিন-
জাতীয় কোন পাঠ্যপুস্তকে যেন একটি কবিতাও না থাকে, পারবেন?
নিশ্চুপ। কোন কথা নেই নিন্দুকের মুখে,শুধু চোখে এক হতাশার দৃষ্টি।

ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখছে,
বেরঙ নদীর তীরে বসে;
ওই যে দেখা যায় শিশু গাছ;
এখানে প্রায় প্রায় ছুটে আসে পাগল ছেলেটি
এখানে বেরঙ আর গবরা দু-নদীর মিলনে
এক স্বপ্নীল মোহনা সৃষ্টি হয়েছে।
ওই যে দেখুন না নদীর ধারেই পূর্ব প্রান্তে
ভারতের সবুজ বিছানার মত বিস্তৃত চা-বাগান
এটা দেখতে চলে আসে মাঝে মাঝে ছেলেটি
সূর্য ঢোবার ঠিক ঘন্টাখানিক আগে আগে;
এই শিশু গাছটির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে,
বাম হাতে রাখা প্যাড নোটে কি সব কবিতা খসরা করে,
আর কি যে একটা যন্ত্র টিপাটিপি করে;
ওই ড্রাফট করা কবিতাগুলো গচাগচ টাইপ করে।
ও মনে পড়েছে শুনেছি যন্ত্রটি ল্যাপটপ কম্পিউটার,
ছবি দেখা দেখা যায় ছবি তোলা যায়,
কি অদ্ভূত যন্ত্র রে বাবা!
কথাগুলো বলে যাচ্ছিল তৃতীয় সারির নিন্দুক ফটিক চান মৌল্লা
তবে ততটা নিন্দুক মনের মানুষ নয় সে;
আচ্ছা ছেলেটি কি একেবারেই কাজকর্ম করে না;
নাকি সারাদিন ঘুরে ফিরে আর কবিতা লিখে?
না-না ছেলেটি এমনি ভীষণ স্বভাবের সুন্দর;
তবে চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার;
কিন্তু মাস শেষে ইনকামও করে বেশ,
রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করে; কলম চালালেই টাকা আর টাকা..
কিন্তু কবিতা লিখে কি বাড়িঘর বিল্ডিং দিতে পারবে?
বেঁচে থাকা কবিদের ক’জন মূল্যায়ন করে বলুন?

কেন মরার পর খ্যাতিটা পেলে অসুবিধাটা কোথায়?
অবশ্যই অসুবিধা আছে মশাই;
জীবিতকালে খ্যাতি না পেলে মৃত্যুর পর পেলে;
এই সৃষ্টিশীলতার সার্থকতা কোথায়!
কেন ভুলে যাচ্ছেন ভাই?
কি মশাই?
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে’
মানে?
কেন এর ফলটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মরা ভোগ করতে পারবে;
এটা কি আপনি চান না?
আরে ভাই কবি তো নিজের জন্য লিখে না;
লিখে দেশ-জাতির সকল বিশ্বের জন্য;
তো দাওয়াত নেন ভাই।
কিসের মশাই?
আমার মেয়ে চন্দ্রমল্লিকার বিয়ে?
কার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন মশাই?
কেন ওই ছেলেটির সাথে! ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখে—
কি বলছেন, আপনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রশান্ত বাবু!
তাতে কি, আপনার কি কোন সমস্যা আছে?
না, মানে-বলছিলাম—–
বুঝতে পেরেছি আপনার ঘরেও;
আমার মেয়ে চন্দ্রমল্লিকার মত একটি মেয়ে আছে!
হ্যাঁ—কিন্তু আপনি হিন্দু হয়ে….
প্রয়োজন হলে মেয়ের জন্য আমিও মুসলমান হয়ে যাব।
আমি চলছি ভাই—
আরে কোথায় যাচ্ছেন বাবু প্রশান্ত;
নদী মহানন্দায় ওই ছেলেটির কাছে———
ভদ্রলোক চলছে নদী মহানন্দার দিকে…….
আরে দাঁড়ান মসাই—জোরে জোরে ডাকতে থাকে নিন্দুক….