সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

তুমি তো চলে যাবে

তুমি তো চলে যাবে,
যাবার আগে আর কিছুক্ষণ
থেকে যাও…

যেমন করে থেকে যায়
ভোরের শিশির ঘাসের শরীরে শরীর মেখে।
তেমন করে থেকে যাও কিছুক্ষণ।

তুমি তো চলে যাবে,
যাবার আগে আর কিছুক্ষণ
কথা বলো…

যেমন করে রাতের বকুল
আর ভোরের শিউলি ঝরে পড়ে আমার উঠোনে।
তেমন করে তুমিও ঝরে পড়ো আমার ভিতরে।

তুমি তো চলে যাবে,
যাবার আগে আর কিছুক্ষণ
স্মিত হাসি হেসে যাও…

যেমন করে হাসে থুরথুরে বৃদ্ধ
মাঘের শীতে ভোরের সূর্য দেখে ওলের চাদরের
ভিতরে।

সৌদামিনি, আপনার অপেক্ষায়

All-focus

সৌদামিনি কেমন আছেন ?
আমি ভালো নেই আপনাকে ভেবে।
অনেক দিনই ত গত হলো
কই আপনার দেখা পেলাম না।
কোথায় আছেন, কেমন আছেন
এই ভাবনায় দিন কাটে না আমার।

আপনার যা গত হয়েছে প্রায় চার যুগ আগে,
আমার কাছে সেটা বর্তমান !
আমি এখনও নিরব চিৎকার শুনি বুকের মাঝে,
এখনও ভয়ে কাটে আমার নির্ঘুম দীর্ঘ প্রতি রাত।

আপনার জন্য অপেক্ষা করছি প্রায় চার যুগ ধরে।
কই একবারের জন্যও ত আসলেন না আপনি ?
আপনি বলেছিলেন দেখে নিস ‘বিন্দু’ আমি আসব …
ঠিক আসবো,কোন এক ভোরে সূর্য উদয়ের পথে।

আজ এতটা সময়ের ব্যবচ্ছেদে আমার বুকটা
এক বন্ধ্যা মরুভূমি। সূর্য দেখলেই ভয় লাগে।
এই বাংলার আকাশ-বাতাস, আলো-ছায়া– হ্যাঁ সব…
আজও আপনার অপেক্ষায় আছে।

এই বাংলার প্রতিটি ঘরে এক জোড়া চোখ নিয়ত
চেয়ে থাকে আপনার পথের দিকে।
এই বুঝি আপনি আসছেন দুরন্ত উল্লাসে হেসে হেসে।
সৌদামিনি,
আপনি আসছেন তো– আমি এবং আমরা সবাই
আপনার অপেক্ষায় আছি …

থাকবো যতদিন এই বাংলা আছে,
আছে এই লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

কবিতা

তুমি চলে যাবার আগে
বলে যেও…!
আমার থেকে দূরে কোথায় যাবে
সেই ঠিকানা দিও…!

একটি দিন
হাজার দিনের সমা।
একটি রাত
হাজার রাতের সমান।

এইটুকু স্মৃতি আমার কাছে
রেখে যেও..!

আর কিছু হই বা না হই

3109

পরের জন্মে আমি আয়না হবো,
তোমার ঘরের আয়না হবো।
কাজল দেবার ছল্ করে চোখে চোখ রেখে
চুপটি করে দেখবো তোমায়।

আর কিছু হই বা না হই,
পরের জন্মে ঠিকই আমি তোমার কপালে টিপ হবো।
মাতাল ওই ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক হবো।

আর কিছু হই বা না হই,
পরের জন্মে ঠিকই আমি তোমার হবো।
এ জন্মের দুঃখটা পরের জন্মে ঘুচিয়ে দিবো।
পরের জন্মে আমি শুধু তোমার হবো।

আর কিছু হই বা না হই –
তোমার চোখের কাজল হবো, পায়ে পায়েল হবো।
বৃষ্টি সুরে সুরে গান শোনাবো।

আর কিছু হই বা না হই –
তোমার কানের দুল হবো, খোঁপায় গাঁথা বেলি হবো।
বাদল দিনের কদম হবো।
আর কিছু হই বা না হই–
তোমার ঘরের আয়না হবো, অপলকে তোমায় দেখবো।

চোখের তারায় আকাশ আঁকবো।
আর কিছু হই বা না হই –
তোমার নাকের নোলক হবো, শ্বাস প্রশ্বাসে ছোঁয়া পাবো।
এ জন্মের দূরত্বটা এক নিমিষেই ভুলে যাবো।

মৃত্যু এবং আমি

প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি আমি !
অথচ, আমি যেভাবে মৃত্যু চেয়েছি,
যে ভাবে আমাকে চেয়েছি, সেভাবে নয়।
একটি বর্ণহীন আলো আসে – চোখে মুখে লাগে।
তারপর দ্রুত চলে যায়।

গ্রীষ্মকাল কিংবা বর্ষাকাল,
এই শরতের অনাহত পারাপার কিংবা হেমন্তের দিন যাপন।
একটি ছায়া অদৃশ্য হয়ে যায় – যে তুমি চাও, সেভাবে নয়।
দিন ছোট হয়, রাত দীর্ঘ হয়
যেন পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্ষয়ে যাওয়া নিশ্বাসে।

তারপর,
রাত গভীর হলে আমি শুনতে পাই ভূতের বিলাপ।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে কানে ভেসে আসে –
“তাহলে তুমি ঈশ্বরের কাছে তোমার জীবন উৎসর্গ করেছ।”

কিন্তু,
প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি আমি
অথচ,
যে আমি আমাকে চেয়েছি, সেভাবে নয়।

বাংলাদেশ

3084

কখনো কখনো আমি হয়ে যাই
এই ল্যান্ডস্কেপের উপর
একটি সাদা রাজহাঁস।
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন;
কখনো কখনো হয়ে যাই আমি।

দু’পা সাঁতরিয়ে খুঁজে ফিরি,
আগামীর সব স্বপ্ন মানুষ !
যাদের হাতে আছে আমার
অঙ্কুরিত একটি স্বপ্ন বীজ !

কখনো কখনো মানুষ খুঁজে ফিরি,
এই মানুষের ভিড়ে— সত্য মানুষ !
এই নির্জন পার্ক থেকে নির্জন তীরে।

কখনো কখনো খুঁজে ফিরি আমি,
পাশাপাশি পথ চলায়
তোমার আঙুলের ফাঁকে
সম্ভাবনাময় একটি লাল সবুজের খাম।

এখনো আমি খুঁজে ফিরি দু’চোখ মেলে,
এই বিস্তৃত ভূ-খণ্ডে,
লাল-সবুজের দেশ, গর্বিত বাংলাদেশ !

যাবার তাড়া

309

যাবার যখন এতই ছিল তাড়া
আসলে কেন বাঁধার পথ মাড়িয়ে
আপন করে নিবার ছলে তুমি
শূন্যে বুকে কেন দিলে তাড়িয়ে।

নিথর হৃদয় ছুঁয়ে গেলে তুমি
দূর আকাশের অচিন কোনো পথে
চোখের মাঝে চোখ বসিয়ে শুধু
একলা আমি তোমার অপেক্ষাতে।

হৃদয় খাঁচায় কষ্ট বিলাস-গীতি
শূন্য এখন বুক জমিনের ছোট্ট ঘর
মেঘের পাড় ভেঙে বৃষ্টি নামে
জানালা দিয়ে আসে স্মৃতি নামের ঝড়।

মনের দুয়ারে আগল দিয়ে চুপিচুপি
জ্বাললে কেন এমন প্রেমের আলো
স্বপ্নে বাঁধানো আকাশ ছেড়ে তুমি
যাবেই যদি তবে বাসলে কেন ভালো।

সময়

30

এই জানালা সব সময় দেখি,
বাইরের ঐ সবুজ দিগন্ত তাও।

এই ঘর, এই বারান্দা সব কিছুই,
যখনই সময় পাই, তখনই দেখি।

এখানে একটি আশার আলো আছে,
আছে স্বর্গীয় এক অনুভূতি।

অনেক দিন হলো জানালা দেখি না,
ঐ ঘর, ঐ বারান্দা কিছুই না।

এখন সময় গুলোতে সময় জমেছে,
সেই সময়ে অন্য সময় ভর করেছে।

কথিকা ০৯

ঘাসের ডগায় শিশির কণা সূর্য হয়ে হাসে
মনের যত দুঃখ স্মৃতি খেয়ার স্রোতে ভাসে।

জোছনা মাখা রুপালী চাঁদ হাত বাড়িয়ে ডাকে
কি হবে সুখ-স্মৃতি খুঁড়ে, দুঃখ নদীর বাঁকে।

আশ্বিনের সকাল

308

কতদিন দেখি না তোমায়
কতদিন কথা বলি না তোমার সাথে
হিসেব নেই – নেই কোনো ছেঁড়া ডায়েরির পাতাও।

তবুও যেন মনে হয় রোজ দেখি তোমায়
আর রোজ কথা বলি তোমার সাথে৷

এই যে এখানে সীমাহীন আকাশ
স্নিগ্ধ ভালোবাসা অবিরাম বিলায় আর হাত বাড়িয়ে
কাছে ডাকে আমায় একটি অস্ফুট ফুলের কুঁড়িতে
মায়ায় বাঁধা বিষণ্ণ অতীতে।

তবুও তাকে ভুলে থাকি এই আশ্বিনের দিনে
ঘাসের ডগায় শিশিরের ফোঁটায় জ্বলন্ত চাঁদের মতন
এক বিন্দু সকাল দেখে।

তবুও জীবন

3051

তবুও জীবন– চলবে তা আজীবন
তবুও জীবন–ইতিআন্তে শুধু মরণ!

তবুও জীবন–মরণে করে সন্ধি
তবুও জীবন–বয়স ফ্রেমে বন্ধি!

তবুও জীবন–অচল টুকরো মন
তবুও জীবন–প্রেমচিত্তে মলিন!

তবুও জীবন–বিরহে রাগ অনুরাগ
তবুও জীবন–কষ্ট ভুলা অনুযোগ!

তবুও জীবন–বাস্তব বলে বাস্তবতা
তবুও জীবন–ছোট্ট ভুলেই ব্যর্থতা!

তবুও জীবন–জন্ম থেকে জন্মাত্তর
তবুও জীবন–ভালো মন্দ নিরন্তর!

তবুও জীবন–প্রেমশ্লোকে বিরহগাঁথা
তবুও জীবন–সত্য মিথ্যে একআত্না!

তবুও জীবন–চলবে তা আজীবন
তবুও জীবন–ইতিআন্তে শুধু মরণ!

অতঃপর তোমায় ছোঁব

পউষের সন্ধ্যা নিবিড় অন্ধকার,
শিরীষের ডালে দেখেছি শিঙের
মতন বাঁকা চাঁদ
নক্ষত্র পথে।

ফাল্গুনী রাত্রে কুয়াশার পাখনায়
শব্দহীন পায়ে, জোনাক দীপ জ্বেলে
বিলুপ্ত নগরীর পথে
হেঁটেছো তুমি।

বসন্ত দিনে সুগন্ধী ঘাসফুল কিংবা;
পলাশ বনে, দেখেছি তোমায় সেইখানে
যূথির শুভ্র পালকে
রোজ ঝরতে।

অতঃপর একদিন স্পর্শসুখে লেখা হবে
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব হাতের মুঠোয়;
তারপর কেটে যাবে
সহস্র জীবন।

ভালোবাসি তোমায়

2994

আর একটি বার
যদি তোমার দেখা পাই
বলেই দেবো আমি বলেই দেবো
ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়।

সেই হঠাৎ দেখার একটু চাওয়া
ভুলিনি আজও আমি
এই শহর নগর খুঁজে চলি, জানিনা
কোথায় আছো তুমি।।

থেকো না তুমি আর আড়ালে
চলে এসো এই মনের মোহনায়।

বলেই দেবো আমি বলেই দেবো
ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়।

এই হৃদয়ে আছো তুমি সারাক্ষণ
চোখে রেখে চোখ
এই শ্রাবণে এসো বন্ধু তুমি আমি
কিছু কথা হোক।

তুমি আমার নীল আকাশে স্বপ্ন ঘুড়ি
আমার হাতে নাটাই।
বলেই দেবো আমি বলেই দেবো
ভালোবাসি,ভালোবাসি তোমায়।

আমাদের একদিন দেখা হোক

তারপর একদিন আমাদের দেখা হোক,
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকুক এই শহর,
নির্জন কোনো চায়ের টঙে একান্ত কিছু কথা হোক।

হঠাৎই আমাদের একদিন দেখা হোক
প্রচন্ড ভিড়ের ভিতর, ঘামে ছুপছুপে শরীরে।

তোমার বাড়ি ফেরার তাড়া থাকুক।
তবু আমার পথে তোমার আঁচল মায়াবী আগল দিক।।

আমাদের একদিন দেখা হোক।