আরিফা তাজরিমিন এর সকল পোস্ট

আরিফা তাজরিমিন সম্পর্কে

আমি তো শুধু মানুষ দেখি, মানুষের ভিতরের মানুষ।

এই রাত সেই রাত

এই রাত সেই রাত

আজও রাত আসে ফি-রাতের মতো। আসে জ্যোৎস্না আসে পূর্নিমা। তবে আজ আর আমি কোন রাত জাগা পাখি নই। রাতভর চলে না কপোত-কপোতীর কথোপকথন। স্বপ্নরা আর প্রজাপতির পাখায় রং ছড়ায় না। ঘাস ফড়িং মন আর হারিয়ে যায়না অজানা স্বপ্নের দেশে। স্বপ্নের নির্মাণ-বিনির্মাণ চলে না মানসলোকে। কোন এক অজানা পথিকের বাঁশির সুর আঁধারের প্রাচীর পেরিয়ে শ্রবণ ইন্দ্রীয়ে সাড়া জাগায় না আর। রাত আসে। তমসা ভরা রাত। পাখির গান, প্রজাপতির রং, বাঁশির সুর সব চাপা পড়ে তমসার ঘন আঁধারে।

অথচ এই ফি-রাতগুলো ছিলো নতুন নতুন রুপের। ছিলো নিত্য আয়োজনের। পূর্ণিমা মানেই হাত বাড়িয়ে একমুঠো জোস্না ধরে আনা। বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়ার রাত। বৃষ্টি মানেই রিনিঝিনি শব্দে মধ্যরাতে এককাপ কফি আর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ। ছিলো বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়ার রাত। আর রাতের নির্জনে কবিতা পড়ার প্রহর। নিত্য রাতের নিত্য নতুন রুপ। কত কত শীতের রাত গেছে স্বপ্ন নির্মাণ-বিনির্মাণ এর খুনসুটিতে।

আজও রাত আসে ফি-রাতের মতোই। শুধু বদলে যাওয়া অনুভূতিরা সঙ্গী হয় তার। আসে নিস্তব্ধ রাত্রি। রাত্রির গভীরতা বাড়ে। বাড়ে চিন্তার গভীরতাও। জীবন অনুভূতি যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। পাওয়া না পাওয়ার হিসাবগুলো তাড়া করে ফেরে। শীতের হিমশীতল পরশ যতটা না শরীরের কাঁপন তোলে, জানা-অজানা আশঙ্কা মনকে কাঁপিয়ে তোলে তার চেয়ে বহুগুণ। এতটুকু উষ্ণ পরশ এর খোঁজে অতীতের স্মৃতি আর ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভবনা গুলোকে হাতড়ে মরে স্বাপ্নিক মন। তমসা তমসা আর তমসা। ভগ্ন হৃদয় আর মৃতপ্রায় অনুভূতিগুলো স্তব্ধ হয় ক্ষণিক কাল। মুহুর্তের স্তব্ধতা নিস্তব্ধ রাত্রির গভীরতা কে করে গভীর থেকে গভীরতর।

( আহা! প্রথমবার মা হবার জার্নিটা আচমকাই থেমে গিয়েছিলো। ২০১০ সাল। এটা সেই সময়গুনোতে লেখা। পেইন।)

নাটাই

নাটাই

তার ঘুড়ি হবার সাধ ছিল। অসীম সীমানায় ভেসে বেড়ানো নানান রঙের ঘুড়ি। কেবলই হাওয়ায় ভাসা। কেবলই হারিয়ে যাওয়া।

ঘুড়ির নাটাই তার ভীষণ অপছন্দ ছিল কি রকম অহেতুক নিয়ন্ত্রণ।

ইদানিং তার নাটাই হবার সাধ। যত অসীমের কাছে যাক নাটাইয়ে সুতোয় টান পড়লে ঘুড়ি ঠিক ফেরে তার আসল ঠিকানায়…

নিশুতি রাতের ইতিকথা ১৩

নিশুতি রাতের ইতিকথা ১৩

বিশুদ্ধতার নগরীতে তোমাকে আরও একবার স্বাগতম
যেখানে সুকান্ত রুদ্র সুনীল তোমার ফেরার অধীর অপেক্ষায়।

ঐ দূরের নক্ষত্র দক্ষিণা বারান্দা নিঃসঙ্গ কফি মগ তোমার ফেরার ব্যাকুল প্রতিক্ষায়।

আজ রাতজাগা পাখি জেগে আছে তার নিশুতি রাতের ইতিকথা নিয়ে।

কবিতা ভুলে যাওয়া সময় পেরিয়ে
ফড়িং আর দোয়েলের জীবনে তোমাকে আরও একবার স্বাগতম।

মেঘ রোদ্দুর স্বপ্ন

মেঘ রোদ্দুর স্বপ্ন

১.
সেদিন আমাদের এলোচুল স্বপ্নরা উড়তে উড়তে আটকে পড়েছিলো পাহাড় চূডায়। ঠিক যেমন পাহাড় চূড়ায় আটকে পড়ে মেঘেরা। আমার তোমার আমাদের স্বপ্নরা। রবির প্রথম কিরণের পরশে সে স্বপ্নরা হয়েছিলো স্বর্ণরঙা। আমি হেঁয়ালি মনে পাঁচতারকা হোটেল কক্ষে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমাদের সেই সোনারঙা স্বপ্নের বিচ্ছুরণ দেখছিলাম। একবার কি মনে হলো জানালার কাঁচ সরিয়ে হাত বাড়ালাম স্বপ্ন ছোঁয়ার সাধে। তোমার আমার আমাদের স্বপ্নরা। সোনালি রোদ্দুর স্বপ্নরা।

২.

কোন এক বৃষ্টিভেজা সাঁঝবেলায় ক্ষণিকের পাশাপাশি পথচলায় খুব সন্তর্পণে বলেছিলে বৃষ্টি তোমার ভীষণ ভালোলাগার। আমার যে কি হলো, সেই থেকে বৃষ্টি ভালোবেসে ফেললাম। এখন তোমার সেই বৃষ্টিভেজা নির্ঘুম রাত আমাকে ভীষণ নির্ঘুম রাখে।

৩.

তিমির রাত্রি। আঁধারের বুক চিরে বৃষ্টি নামে। আজ আমাদের পাহাড় চূডার স্বপ্নরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁই, স্বপ্ন ছুঁই। অধরা স্বপ্নরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে। তোমার আমার আমাদের স্বপ্নরা। আমাদের অধরা স্বপ্নরা ।

শৈশব বাক্সঃ ৪

বাবার চিঠি

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটা সময় প্রতিমাসে একটা করে চিঠি আসতো। বাবার চিঠি। আর্থিক বিষয়াদি প্রধান সে চিঠি। সাথে কিছু উপদেশ আর তথ্য। অভিযোগ অনুযোগ আর উপদেশের পরিমাণ বেশী বেড়ে গেলে মা ও এগিয়ে আসতেন বাবার হাত বাটতে। দেড় দশক আগের এই সব চিঠি।।

শৈশব বাক্সঃ ৩ অটোগ্রাফঃ

সেলেব্রেটিদের সাথে ফটোগ্রাফ বা অটোগ্রাফ কোনটাতেই কোন কালে কোন আগ্রহ ছিল না। এখনও নেই। নাক উঁচু মেয়েদের এসবে আগ্রহ থাকে না।

বিষয় সেটা না। বিষয় হলো- তখন রীতিমতো সুনীল সমরেশ আর শীর্ষেন্দুর যুগ চলছে। সুনীল বাবু এসেছেন জাতীয় কবিতা উৎসবের অতিথি হিসেবে। এক আপুর তার অটোগ্রাফ চাই-ই চাই। আমাকে সাথে নিয়ে গেলেন। আমি একটু দূরে একটা গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ শিকারীদের কাণ্ডটা দেখছি। হঠাৎ লেখক গাড়ীর দিকে এগুতে লাগলেন, বুঝলাম লেখকের গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। যেমনি সরে যেতে নিয়েছি অমনি শুনতে পেলাম – ওই মেয়েটিকে আসতে দাও। আমি ‘হা’ হয়ে গেলাম এবং ‘হা’ হয়েই তার দিকে এগিয়ে গেলাম। নাম-টাম জিজ্ঞেস করে হাত বাড়ালেন আমি ‘হা’ হয়েই ব্যাগ থেকে একখানা নোট প্যাড তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

জীবনের একমাত্র ও শেষমাত্র অটোগ্রাফ।

(পুনঃশ্চ জীবনে একটা অটোগ্রাফ নেবার ইচ্ছে ছিল এবং এখনো আছে। শচীন টেন্ডুলকারের।)

পথ কিংবা পথিকের গল্প

যোগ, বিয়োগ, সরল কোনটাতেই সে দক্ষ ছিল না। তার অংক মানেই ভুলে ভরা। সঙ্গত কারণেই জীবনে যখনি হিসাব মেলাতে গিয়েছে হিসাব মেলাতে পারেনি। তাই সে সেই ভুলে ভরা যোগ বিয়োগের হিসাবের অভ্যাসটা ছেড়েছে বহুদিনে।

একবার সে মনোবিদ্যায় আগ্রহী হয়েছিলো। জানতে গিয়ে দেখেছিলো শরীরচর্চাটা ততদিনে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এগিয়েছে বেশ। তাই মনোবিদ্যাটা আর মনে ধরেনি সেভাবে।

পরে একদিন সে কবি হতে চেয়েছিল ‘তার’ জন্য কবিতা লিখবে বলে। অ থেকে চন্দ্রবিন্দু সব বর্ণমালায় তার স্তুতিও করেছিলো। কবিতা বিনির্মাণ হয়েছিলো তাতে। তবে যার জন্য এই এতো এতো আয়োজন, কবি কিংবা কবিতা কোনটাতেই তার আকর্ষণ ছিল না কখনো।

অনেক পথের শেষে সে অভিনয়টা শিখে গিয়েছিলো বেশ। শেষে সে একজন অভিনেতা হয়েছিলো। একজন সফল অভিনেতা।

নিশুতি রাতের ইতিকথা- ২

মধ্যরাত্রি
নিশ্চুপ পৃথিবী
নিঃসঙ্গ আমি, খানিক ভেবে
টুপ করে ঢুকে পড়ি নিজের পৃথিবীটাতে
সেথায় যথাযথ পূর্বানুমান বিরাজমান।

দেখি ভালোবাসাদের খুনসুটি জমেছে বেশ
স্বপ্নরা পেখম মেলেছে ময়ূরের বর্ণিল আভায়
স্নেহ মায়া মমতা জড়াজড়ি করে আছে, দেখে
মুচকি হাসছে দুষ্টুমিরা।
আস্থা আর বিশ্বাস ঘুমিয়ে পড়েছে পরম নিশ্চিন্তে।

দেখে, আমিও নিশ্চিত হই
ঘুন পোকা বসত গড়েনি তাতে।
সমস্ত অনুভূতিরা আজও সোচ্চার
এরা, আমার অস্তিত্ব জাগানিয়া অনুভূতিরা
একান্তই আমার,
এই পৃথিবী
কিংবা এই আমার আমি।

এই রাত সেই রাত

আজও রাত আসে ফি-রাতের মতো। আসে জ্যোৎস্না আসে পূর্নিমা। তবে আজ আর আমি কোন রাত জাগা পাখি নই। রাতভর চলে না কপোত-কপোতীর কথোপকথন। স্বপ্নরা আর প্রজাপতির পাখায় রং ছড়ায় না। ঘাস ফড়িং মন আর হারিয়ে যায়না অজানা স্বপ্নের দেশে। স্বপ্নের নির্মাণ-বিনির্মাণ চলে না মানসলোকে। কোন এক অজানা পথিকের বাঁশির সুর আঁধারের প্রাচীর পেরিয়ে শ্রবণ ইন্দ্রীয়ে সাড়া জাগায় না আর। রাত আসে। তমসা ভরা রাত। পাখির গান, প্রজাপতির রং, বাঁশির সুর সব চাপা পড়ে তমসার ঘন আঁধারে।

অথচ এই ফি-রাতগুলো ছিলো নতুন নতুন রুপের। ছিলো নিত্য আয়োজনের। পূর্ণিমা মানেই হাত বাড়িয়ে একমুঠো জোস্না ধরে আনা। বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়ার রাত। বৃষ্টি মানেই রিনিঝিনি শব্দে মধ্যরাতে এককাপ কফি আর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ। ছিলো বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়ার রাত। আর রাতের নির্জনে কবিতা পড়ার প্রহর। নিত্য রাতের নিত্য নতুন রুপ। কত কত শীতের রাত গেছে স্বপ্ন নির্মাণ-বিনির্মাণ এর খুনসুটিতে।

আজও রাত আসে ফি-রাতের মতোই। শুধু বদলে যাওয়া অনুভূতিরা সঙ্গী হয় তার। আসে নিস্তব্ধ রাত্রি। রাত্রির গভীরতা বাড়ে। বাড়ে চিন্তার গভীরতাও। জীবন অনুভূতি যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। পাওয়া না পাওয়ার হিসাবগুলো তাড়া করে ফেরে। শীতের হিমশীতল পরশ যতটা না শরীরের কাঁপন তোলে, জানা-অজানা আশঙ্কা মনকে কাঁপিয়ে তোলে তার চেয়ে বহুগুণ। এতটুকু উষ্ণ পরশ এর খোঁজে অতীতের স্মৃতি আর ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভবনা গুলোকে হাতড়ে মরে স্বাপ্নিক মন। তমসা তমসা আর তমসা। ভগ্ন হৃদয় আর মৃতপ্রায় অনুভূতিগুলো স্তব্ধ হয় ক্ষণিক কাল। মুহুর্তের স্তব্ধতা নিস্তব্ধ রাত্রির গভীরতা কে করে গভীর থেকে গভীরতর।

(২০১০)

নিশুতি রাতের ইতিকথা

ফি-রাতে,
রাত গভীর হলে কি এক নেশা পেয়ে বসে আজকাল
আমার ‘আমি’ তে ফেরার নেশা।

প্রহরে প্রহরে রাত তার রূপ বদলায়,আমিও নেমে পড়ি
বদলে যাওয়া ‘আমি’ গুলোকে পরখ করতে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত
কত কত অচেনা ‘আমি’রা সামনে এসে দাঁড়ায়
আমি হারিয়ে যাওয়া আমিটা কে ফ্রেমে ফেলে তার সাথে মেলাতে ব্যাকুল হয়ে উঠি।
ইতিউতি আতিপাতি হাতড়ে ফেরা
হাতড়াতে হাতড়াতে রাত পেরিয়ে নতুন একটি ভোর আসে। আবারও আমি এসে দাঁড়াই কালকের সেই এক-ই ‘আমি’ তে।

আমার আর ‘আমার আমি’ তে ফেরা হয় না।

যাপিত জীবন কথন

এক

দক্ষতা যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা বা সৌন্দর্য নয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়াটাই মুখ্য।

দুই

আপনি গুনী ভালো কথা, তবে সেই সিদ্ধান্তটা অন্যদের নিতে দিন।

তিন

আপনি যদি সোজা ভাবে সোজা পথে চলতে অভ্যস্ত হন অনেকের জন্য সেটা অস্বস্তিকর হতে পারে তারপরও দু-চারজন ঠিক সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং এরাই আপনার প্রকৃতজন।

ঈশ্বর অথবা মানবীর গল্প

কোথাও একটা ভুল হলো বুঝি। ভুল কিংবা ভুল বোঝাবুঝি আরকি।

মানবীর সবকিছুতেই ভীষণ তাড়া। তাড়াহুড়ো কিংবা তড়িঘড়ি। কথা বলবে তো তাড়া, হড়বড়িয়ে কথা বলা যাকে বলে। চলবে তরতরিয়ে। কোনকিছু চাই তো এক্ষুণি চাই যেনো অপেক্ষার সময় নেই তার।

সেবার এক আত্নীয় এলো দেখে বললোঃ মেয়ে মুটিয়ে যাচ্ছ আজকাল, বাড়ীর কাছে অফিস একটু হেটে গেলেইতো পারো। মানবী হাসে, বলেঃ আমিতো হেটে যাইনা দৌড়ায় দৌড়ায় যাই। তারপর দুজনের হাসি চলে কতক্ষণ।

ঈশ্বরও হাসেন। এই তরতরিয়ে চলা হড়বড়িয়ে বলা বলা মানবীকে দেখে হাসেন। তার নিজস্ব হিসেবে হাসেন। তারপর খুব ধীরে ধীরে সেই তড়িঘড়ি মানবীর জীবন সুতোটায় টান দেন। খুব হিসাব করে পূর্ব ও পূর্ণ পরিকল্পনায়।

ঈশ্বরের পরিকল্পনা সম্পর্কে মানবী জানান পায় ডাক্তারী পরীক্ষায়। কিন্তু তার তো কোন তাড়া ছিলোনা ফেরার, সত্য ছিল না। বেহিসাবী মানবীর হিসাব মেলেনা। ভাবে হে ঈশ্বর কোথাও একটা ভুল হলো বুঝি। ভুল কিংবা ভুল বোঝাবুঝি আরকি।

মানবী ভুলে যায়, ঈশ্বর কখনো ভুল করেননা। ঈশ্বর সব করেন পূর্ব ও পূর্ণ পরিকল্পনায়।