যুনাইদ এর সকল পোস্ট

যুনাইদ সম্পর্কে

আমি গল্প লিখতে ভালোবাসি।

শবনম – আমার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস

একুশে বইমেলা ২০২০তে প্রকাশিত হচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস – শবনম। বিশেষ একটি ব্লগের বহুল আলোচিত এবং সর্বোচ্চ পঠিত গল্পের সিরিজ এক মলাটে পড়ার আমন্ত্রণ রেখে গেলাম।

বইয়ের নামঃ শবনম
বইয়ের ধরনঃ উপন্যাস
প্রচ্ছদ পরিকল্পনাঃ মোজাদ্দেদ আল ফেসানী জাদিদ
শবনমের ছবিঃ শায়মা হক
প্রকাশনীঃঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
বইমেলা ২০২০ স্টল নংঃ ৫৮৭

শবনম ফার্সি শব্দ। সুদূর পারস্য ভাষা থেকে আগত এই শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ভোরের শিশির। এর সমার্থক শব্দগুলির অর্থ হচ্ছে ক্ষনস্থায়ী, স্বল্পস্থায়ী বা অল্পতেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। প্রতিটা মানুষের এই নশ্বর জীবনের সাথে এই নামের অর্থের কতই না মিল!

ছোট্ট এই জীবনে মানুষ কত কিছুর স্বপ্নই না দেখে, কত কিছুরই প্রত্যাশা করে, হৃদয়ের গহীনে নিরন্তর বানিয়ে যায় একের পর এক আশার বালুচর। হয়তো কিছু পায়, কিছু পায় না। যা পায় না সেটা পাবার জন্য মরিয়া হতেও কেউ কেউ পিছ’পা হয় না। আশা আর আশাভঙ্গের খেলা নিয়েই চলে নিরন্তর এই জীবনের পথচলা। জীবনের এই পথচলা কখন সোজা আর সহজ রাস্তায় হয় না।

শবনম হলো ভোরের শিশির যা প্রকৃতির অমোঘ বিধানে সূর্যের প্রথম আলোকচ্ছটায় হারিয়ে ফেলে তার অস্তিত্ব।

কেউ কী পারবে নিয়তি’কে পাশ কাটিয়ে ভোরের শিশির’কে জীবনের সাঁঝবেলা পর্যন্ত একান্ত করে ধরে রাখতে?

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের জীবনই একটা করে মহাকাব্য। আর এই মহাকাব্যের সব স্তবকই কিন্তু ছন্দ মিলিয়ে লেখা হয় না। কিছু কিছু জায়গায় তাকদীরের রহস্যময় খেলায় অছন্দের কারূকাজ না চাইতেও লেখা হয়ে যায়। কল্পনাতীত অবাধ্য এই কারূকাজ ঠেকিয়ে রাখে সেই সাধ্য কার?

জীবন নামের এই মহাকাব্যের কিছু ছন্দ আর অছন্দের কারূকাজ পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।

ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইলো।

কবিতাঃ আজকাল চুপচাপ শুধু দেখেই যায়…………

আজকাল ডাস্টবিনগুলি চুপচাপ শুধু দেখেই যায়-
প্রতিনিয়ত বাড়ছে সেখানে অপাংক্তদের চাপ,
যেখানে থাকার কথা উচ্ছিষ্ট আর ময়লা পঁচা গন্ধ
সেখানে পরে থাকে এখন সদ্য নাড়ীকাটা নবজাতক
লাল টুকটুকে রক্তের দাগে ভেসে যায় বিষন্ন মানবতা।
.
.
আজকাল আস্তাকুঁড়গুলি নিঃশব্দে শুধু দেখেই যায়-
নিজের বিষাক্ত বীর্য্যের প্রতি যুক্তিহীন ঘৃণায়, কিংবা
ক্রোধোন্মত্ত তামাশায় জন্মের পরেই ছুড়ে ফেলে দেয়া
সদ্য ভুমিষ্ঠ অবুঝ শিশুটি আজ কত অসহায়!
.
.
আজকাল ভাগাড়েগুলি নিঃস্তব্ধ হয়ে শুধু দেখেই যায়-
পাপিষ্ঠ দেহের ক্রমাগত অনৈতিক জৈবিক চাহিদা শেষে
ব্যালকনি কিংবা জানালার গ্রীলের ফাঁকফোকড়ে মাঝে
মানবতার গলায় পা দিয়ে অসীম শক্তিতে বলীয়ান হয়ে
ছুড়ে ফেলে দেয় অপ্রয়োজনীয় জীবন্ত মাংশপিন্ড।
.
.
রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে সারমেয়রা অপেক্ষায় বসে দেখে-
আজকালের ডিজিটাল ভালোবাসার ক্লেদাক্ত পরিনতি,
না দেখা অগুনিত অতৃপ্ত কামনার সব এইচ ডি মুভি ক্লীপের
নিষ্ঠুর পরিসমাপ্তি হয় সদ্য জন্মানো মানবশিশুর
প্যাকেটে ভরে রাস্তায় ফেলে অগোচরে পালিয়ে যাওয়ায়।
.
.
ভাষাহীন নির্বাক চোখে ময়লা ফেলার গাড়িগুলি-
টেনে নিয়ে যায় অবাঞ্চিত রক্তাক্ত মানবতা
মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায় অবৈধ সম্পর্কের ক্রমাগত আস্ফালনে,
দশমাস বিরক্তকর গর্ভধারণের তিক্ততায়
নরম তুলতুলে শরীরটার শেষ আশ্রয় হয়
পীচ ঢালা রাস্তা কিংবা গলির মোড়ের নোংরা ডাস্টবিন!
.
.
শিয়াল কুকুর ইঁদুরের এখন মহাউৎসব চলে অহরহ
দূঃসহ খাদ্যসংকট কেটে গেছে না চাইতেও
নরম তুলতুলে শরীর দিয়ে হয় অপ্রত্যাশিত ডিনার।
.
.
বেহায়া মানবতা আর মনুষ্যত্বের সামাজিক কৌষ্ঠকাঠিন্যের আবর্তে
অবৈধ সম্পর্কে জন্ম নেয়া এইসব আপদ
নিঃস্তব্ধ সদ্য নাড়ীকাটা শিশুরা এভাবেই বিদায় নেয়
নিরবে একদম নিভৃতেই!
.
.
ছবিঃ দৈনিক পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত, ইচ্ছে করেই ছবি কিছুটা ঘোলাটে করে দেয়া হয়েছে।

@ যুনাইদ

আবার ফিরে এলাম!!!

শব্দ নীড় ব্লগের শ্রদ্ধেয় মুরব্বী ভাই সহ সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।

চাকুরীগত ব্যস্ততার সাথে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা মিলে প্রায় বেশ কিছুদিন শব্দ নীড় থেকে দূরেই ছিলাম।

এর সাথেই ছিল আসন্ন বইমেলা উপলক্ষে পান্ডুলিপির কাজ শেষ করার প্রকাশকের ভয়ংকর ডেডলাইন!!!

সব মিলিয়ে গত বছরের শেষ কয়েকটা মাস খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে কাটাতে হয়েছে।

প্রিয় ব্লগটাকে সময় না দেবার ব্যর্থতার পুরো দায়ভার মাথায় চেপে নিয়ে আবারও ফিরে এসেছি নিজের লেখার ঘরে।

ইনশা-আল্লাহ এখন থেকে শব্দ নীড় ব্লগে আবারও নিয়মিত লেখালিখিতে ব্যস্ত থাকবো।

সবাই’কে ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইলো।

কবিতাঃ পূর্ণতা!

উদ্দেশ্যহীন যাত্রায় হাঁটছিলাম পথে একা
হঠাৎ অনাগত প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়ালাম,
পথ জানতে চাইল, কোথায় যাবে পথিক?
জানি না, কেন জানি না, তাও জানি না।
পথকে শুধালাম, তুমি যাচ্ছ কোথায়?
যেখানে নেই কোন পথিক!
অবাক আমি! পথিক না থাকলে পথ হয়?
পথই পথিক নিয়ে আসে, জানাল পথ।
উৎসুক আমি, পথকে শুধালাম,
পথের এই নিরন্তর ছুটে চলার শেষ কোথায়?
-অনন্তে…
-অনন্ত কোথায়?
যেখানে সব শেষ হয় এক নতুন শুরুর প্রত্যাশায়!

শুরু হলো পথের সাথে একাকী পথ চলা……
পথ জানতে চাইল আবার, পথিক তুমি কি রিক্ত?
ফেলে আসা জীবনের সব চাওয়া পাওয়াগুলি
মেপে মেপে গুনলাম সময়ের দাড়িপাল্লায়
আসলে পূর্ণতা কি মানুষ কখনও পায়?

লেখার সময়কালঃ ২০-০৫-২০০৭

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

কবিতাঃ কবি

দিন শেষে মেয়েরা তার প্রেমিকের কাছেই ফিরে যায়
ব্যর্থ পুরুষরা কবি হয়ে আকাশের বুকে কবিতা লেখে,
হয়তো রাতে বালতি দিয়ে জোছনা ধরে, কিংবা
বিছানার চাদর দিয়ে অব্যক্ত স্বপ্ন গুলিকে বাধে।

হারিয়ে ফেলা প্রেমিকার সিঁথির মাঝে
খুঁজে ফেরে চতুর্দশপদী কবিতা,
ছন্দের জাদুকর হয়ে উঠে
হঠাৎ, ব্যাকরনহীন পুরুষ।

নিকষ কালো নিঃসঙ্গতা যেন
আশ্রয় পায় বিমূর্ত পদ্যে,
কিংবা কিংবদন্তি রঙতুলি তে
এঁকে ফেলে এক জলজান্ত পোট্রেট।

কাঁধে ঝোলান চটের ব্যাগে উঁকি দেয়
হাতে লেখা কিছু অসম্পুর্ন কবিতা,
অধোয়া পাঞ্জাবীতে লাগে না
কখনও লাল লিপষ্টিকের দাগ।

অটোগ্রাফের সময় বই মেলায় আলতো হাতের ছোঁয়া
কবির বুকে ঝড় তুলে অনবদ্য শিহরণ,
কাঁচের চুড়ির রিন ঝিন হয়ে উঠে
বিটোভেনের সপ্তম সিমফোনী।

কিন্তু, মেলা শেষে মেয়েরা প্রেমিকের কাছেই ফিরে যায়
দিবা স্বপ্নে বিভোর কবি ছন্দপতন হয় গদ্যে,
ছেড়া মশারি বেধে রাখতে পারে না সুপ্ত কামনা
নির্ঘুম রাত কাটে নিষ্পাপ প্রেমের অসহ্য ভালোবাসায়।

পূর্ব কথাঃ সামু ব্লগে একবার বেশ কয়েকজন ব্লগার আমাকে কবি বলে সম্মোধন করলে বেশ লজ্জায় পড়ে যাই আমি। কি ছাইপাশ লিখি আমি! ক্ষিপ্ত হয়ে শেষমেষ কবিদের উপরই….

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

গল্পঃ ভালোবাসার মরণ!

-কি দাদা, খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে? হন্তদন্ত হয়ে সারা অফিসে ছুটে বেড়াচ্ছেন?
-সে আর বলতে! ছুটতে ছুটতে আপনার কাছেও চলে এসেছি।

দুলালবাবু হাসিমাখা মুখে কথাটা বলেই দুইহাত তুলে প্রণাম করে আমার দিকে ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিলেন। খুলে দেখলাম, বিয়ের কার্ড।
-বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছি সবাইকে। আমার ছোট ভাইয়ের। আগামী পরশুদিন রাতে কোষ্ঠীতে লগন মিলে গেছে। ছোটটা থাকে ইতালীতে। মাত্র কয়েকদিনের ছুটিতে এসেছে। এত অল্পসময়ে সবকিছু ম্যানেজ করতে যেয়ে আমার বারোটা বেজে গেছে। তাও ভগবানের কৃপায় সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হলেই আমি খুশি।
-মেয়ে কি করে?
-লালমাটিয়া কলেজ থেকে এবার অর্নাস ফাইনাল দিল ইকোনমিক্সে।

দুলাল বাবু অফিসে আমার উল্টোদিকের টেবিলে বসেন। সরকারী অফিস। কাজের চাপ কম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সুখদুঃখের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভালোই আড্ডা দেয়া হয়। দাদা আর বৌদি দুইজনের সাথেই খুব ভালো সম্পর্ক আমার। দাদা আমার পাশে বসে মেয়ের পরিবারের বিয়ে বিষয়ক সবকিছু গড়গড় করে বলতে লাগল। এখনও বিয়েই করিনি, আর তাই বিয়ে বিষয়ক কথাবার্তা শুনতে এখন বেশ ভালোই লাগছে। তাই দারুন আগ্রহ নিয়ে সব শুনছি। সবকিছু বলা শেষ হলে মেয়ের ছবি মোবাইলে বের করতে করতে বললেনঃ
-মেয়ে তো নয় যেন প্রতিমা, সাক্ষাৎ দেবী দূর্গা। একবার দেখলেই চোখ ফেরানো যায় না। এই দেখুন প্রদীপ বাবু!

দুলাল বাবু বেশ আগ্রহ নিয়ে মোবাইলটা আমার হাতে দিয়ে বলল, পানচিনির অনুষ্ঠানে বৌদি নিজের হাতেই তুলেছেন। মেয়ের ছবি দেখেই চমকে উঠে দাদার কাছে মেয়ের নাম জানতে চাইলাম।
-পরমা। ভালো নাম শ্রীমতি পরমা মুখার্জি।

হায় ভগবান! নামটা শুনেই আমার মাথা খারাপ অবস্থা! দ্রুতই মোবাইলে বাকি ছবিগুলিও ভালো করে দেখতে শুরু করলাম। হাত ইতিমধ্যেই কাঁপতে শুরু করেছে। পরমাকে নিয়ে আমার হৃদয়ে জমানো সব স্বপ্নগুলো যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো হয়ে গেল। সমুদ্রের ঢেউগুলো যেমন সৈকতে আসার আগেই নিঃশেষিত বেগে বিলীন হয়ে যায়, তেমনি আজ নিষ্ঠুর এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেই স্বপ্নগুলোও যেন হুট করেই অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলল। এর পরের চারটা ছবি দেখার পর মুহুর্তেই হারিয়ে গেলাম ফেলে আসা মাত্র একমাস আগের এক ভালোলাগাময় স্মৃতিতে……

এক
সাদা জমিনের উপর লাল সবুজ জামদানীর কারুকাজ করা লাল পাড়ের শাড়িতে মেয়েটাকে দেখতে কি যে সুন্দর লাগছে! লম্বা হাতাওয়ালা কুঁচি দেওয়া বাহারি লাল ব্লাউজটা যেন অন্যরকম একটা সৌন্দর্য্য এনে দিয়েছে শাড়ির সাথে। বড় করে সাজানো খোঁপাটা গাজরা ফুলের মালা দিয়ে আরও চমৎকার করে সাঁজিয়ে রেখেছে। কানের পাশে গুঁজে দিয়েছে কয়েকটা রক্তলাল গোলাপফুল। দূর থেকে মনে হলো কানে আর গলায় অ্যান্টিক ধাঁচের গয়নাও পড়েছে। এই তো সেদিন অফিসের এক সদ্য বিবাহিত কলিগ একঘন্টা মোবাইলে ছবি সহকারে এই বিষয় ব্যাপক জ্ঞান দান করল। তখন বেশ বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝলাম জ্ঞান বেশ ভালোই অর্জন করেছি। একটু দূর থেকেও প্রায় সবকিছুই চিনতে পারছি। অফিসে যেয়েই দাদাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিয়ে এককাপ চা খাওয়াতে হবে। মেয়েটা চপলা হরিনীর মতো আমার চোখের সামনেই সবজায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে দেবরাজ ইন্দ্র বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যেমন অপ্সরা মেনকা’কে পাঠিয়েছিলন, ঠিক তেমনি আমার নিরানন্দময় এই নিঃসঙ্গ জীবনেও যে বৈচিত্র্য আনা দরকার সেটা বুঝানোর জন্যই ভগবান একে আমার সামনে পাঠিয়েছেন।

আজ দূর্গাপূজার মহানবমী। আমি এসেছি বাসা থেকে একটু দূরের একটা বড় মন্দিরে পূজার মন্ডপে পূজা দিতে। দূর্গাপূজায় কোন অবিবাহিত ছেলেমেয়েই শুধু পূজা দিতে আসে না। আর তাই মন্ডপের কাছে একে দেখার পরেই মনে হলো কিসের পূজা আর কিসের কি? মেয়ের কাছ থেকে তো আমি এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাতে পারছি না। একবার দেখেই বুকের ভিতর ঢাক গুরগুর অবস্থা! গুরগুর বেড়ে গেলে পরিচিত বেশ কয়েকজনকে ডেকে এনে মেয়েটাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেসও করলাম, কেউ চিনে না। এতদিন তো জানতাম সরস্বতী পূজায় প্রণয়ের হাওয়া লাগে গায়ে, কিন্তু এবার তো দেখি দূর্গাপূজায় আমার মরি মরি অবস্থা! গায়ে পড়ে প্রথমেই কথা বলতে ঠিক সাহসও পাচ্ছি না। হাত দুইটা ভালো মতো আগে দেখে নেই। শাঁখা পড়া থাকলে সাড়ে সর্বনাশ! সাতপাকের এই বাঁধন আমি শত সহস্র বার চেস্টা করলেও ভগবান নিশ্চয়ই খুলতে দেবেন না…..

সাহস করে একবার সামনে এগিয়ে যেয়ে মেয়ের দুইহাত খুব ভালো করে দেখে নিলাম। স্বস্তির নিঃশ্বাসটা বড় হয়ে বের হয়ে যেতেই বুক থেকে পাষান পাথরটাও নেমে গেল। যাক বাবা, ভগবান অন্ততঃ এইবারের জন্য হলেও আমাকে কৃপা করেছেন। ফর্সা দুইহাতে শুধুই এক গোছা করে লাল কাঁচের চূড়িগুলি যেন ওর হাত দুইটার সাথে আমার মনটাও রাঙ্গায়িত করে তুলল। মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে, অতি দ্রুত, কিন্তু কিভাবে? ভেবে কোন কূলকিনারই করতে পারছি না। এতগুলি লোকজনের মধ্যে ডেকে যে আনব নামটাও তো জানি না। কাছে যেয়ে ডাক দিয়ে আসতে বলার পর যদি সবার সামনেই মুখের উপর না বলে দেয়, তখন পরিচিতদের কাছে মুখ দেখাব কিভাবে? কিন্তু আমি নিজেও আছি মহা বিপদে। ঠিক যেমন একদিন পরেই মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দেবীদুর্গা, আজকেও পূজা শেষে এই অচেনা মেয়েও চলে যাবে একবারে। আজকের মধ্যে যদি এই মেয়ের ব্যাপারে আমি কিছু না করতে পারি, তাহলে দশমীর বিসর্জনের পর ভক্তদের যে অবস্থা হয়, আমারও সেই একই হাল হবে!

পূজা মন্ডপে অগণিত পুণ্যার্থীর উপস্থিতি। বিরামহীন ভাবে ঢাকঢোল বেজে চলছে। আর সাথে শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে ঘণ্টা, কাঁসার শব্দ আর উলুধ্বনি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত আর আমি আছি আমার অপ্সরা’কে নিয়ে। কি করব ভাবতে ভাবতেই দেখি ছয় কিংবা সাত বছরের একটা বাচ্চাছেলে এসে এইমেয়ের হাত ধরে টান দিয়ে কিছু বলার চেস্টা করছে। দ্রুতই কাছে যেয়ে এদের কথোপোকথন মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। অতল গহবরে আশার আলোর মশাল হয়ে যেন বাচ্চাটা এলো, মেয়ের ছোট ভাই। দ্রুতপায়ে সাথে সাথেই মন্দির থেকে বের হয়ে আসলাম, এই সুযোগ হাতছাড়া করা একদম ঠিক হবে না।

মন্ডপের ভিতরেই বাকি বাচ্চাদের সাথে খেলছিল ছেলেটা। আস্ত দুইটা বড় বড় ক্যাডবেরি চকলেটের প্যাকেটেই কাজ হয়ে গেল। বোনের নাম বের করে ফেললাম, পরমা। পরমা তো আসলেও পরমা সুন্দরী। এক বোন এক ভাই। ছোট বাচ্চাটা বাসার ঠিকানাটা বলতে পারল না। মা আর বোনের সাথে এসেছে। এবার শুরু করতে হবে আসল কাজ!

দুই
-আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেন?
অপেক্ষা করছিলাম আমি। সামনে এসে দাড়াতেই দুইহাত তুলে প্রণাম করে হাসিমুখে বললামঃ
-আপনার সাথে কথা বলার জন্য।
-আপনাকে তো আমি চিনিই না। আপনার সাথে কি কথা বলব আমি? আর আমার ছোটটাকে চকলেট দিয়েছেন কেন?

কিছুসময়ে সত্যের কোন বিকল্পই নেই। কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললামঃ
-আপনাকে ডেকে আনার জন্য। আপনার সাথে কথা বলার জন্য। আমার মতো অসহায় মানুষের জন্য এছাড়া আর কি উপায় আছে বলুন?

আমার সহজসরল স্বীকারোক্তি শুনে পরমা হেসে ফেলল। ওর চোখেমুখে দুস্টামির ছায়া দেখতে পেলাম।
-কি কথা বলতে চাচ্ছেন তাড়াতাড়ি বলুন!
-এত তাড়াহুড়া করছেন কেন? আগে আপনার সাথে ভালো করে পরিচিত হয়ে নেই!

পরবর্তি কিছুসময় ধরে আমার পরিচয় দিয়ে যখন ওকে খুব করে আমার ভালোলাগার কথাগুলি বললাম, ওর ফর্সামুখটা সহসাই লজ্জার আবীরে রক্তিম হয়ে উঠল। লজ্জাবনত মুখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুলে শাড়ির আঁচলের একটা অংশ পেচাচ্ছে। মুখে কিছুই বলছে না দেখে পরমাকে আবারও আমার পছন্দের কথা বলে ওর মতামত জানতে চাইলাম।
-অপরিচিত কারও সাথে কথা বলছি দেখলে মা খুবই রাগ করবে। আমি এখন যাই।

কি সর্বনাশা কথা? এই মেয়ে বলে কি? চলে যাবে মানে? এটা কোন কথা হলো?

-ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক? আরও কিছুক্ষন কথা বলি!
-না আমি যাই। ঐ যে মা আসছেন। অপরিচিত কারও সাথে দেখলে অনেক বকা দিবে।
-আপনার মোবাইল নাম্বারটা কি আমাকে দেয়া যাবে?

পরমা দুস্টামির হাসি দিয়ে দুইপাশে মাথা নেড়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল নাম্বার দেয়া যাবে না। তারপর কিছু বুঝার আগেই আমার সামনে থেকে চলে গেল। হঠাৎ কি হলো সেটা দেখার জন্য পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম একজন মহিলা আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। ও আচ্ছা! কিন্তু এভাবে তো আমার হৃদয়ের সংহারিকা’কে চলে যেতে দেয়া যায় না। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী! যা থাকে কপালে, সোজা মন্ডপের প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে ঢুকে পরলাম। বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকার পর, নবমীর দিনে যেমন রাম খুঁজে পেয়েছিলেন সীতা’কে আর আমি আজ খুঁজে পেলাম আমার বুকের ঢাক গুরগুরের অপ্সরা’কে। মন্ডপের একেবারে সামনে চন্দ্রামিত নেবার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ ধাক্কাধাক্কি করে ওর পাশে যেয়ে দাড়াতেই হাসির আওয়াজ শুনে চারপাশে তাকিয়ে বুঝলাম বড়সড় অঘটন ঘটিয়েছি, মেয়েদের লাইনে এসে দাড়িয়ে গেছি! পরমা আমার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ! এখানে আর বেশীক্ষন থাকা যাবে না, চুপচাপ লাইন থেকে বের হয়ে আসলাম। একটু দুরেই দাড়ালাম তবে পরমা’কে এবার আর আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে দিলাম না। এখন ও যা ইচ্ছে করুক, হারানো ভয় আর থাকলো না। পরমাও দেখলাম মাঝে মাঝে উঁকিঝুকি মেরে আমাকে দেখল।

অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি সুযোগের অপেক্ষায়। মন্ডপের সামনে থেকে সবাই এক এক করে অঞ্জলী দিয়ে চলে যাচ্ছে। পরমা’কে এগুতে দেখেই আমিও এগিয়ে গেলাম। পরমা’র অঞ্জলী দেয়া শেষ হয়ে ফিরে আসতেই ওর সামনে যেয়ে পথ আটকে দাড়ালাম।
-পরমা, আমি আপনার সাথে আরও দেখা করতে চাই, আরও কথা বলতে চাই!
-কেন?
-কারন আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কি যে সুন্দর লাগছে আজকে আপনাকে? একটা ছবি তোলা যাবে?
-এখনও তুলেন নি?
-তুলতে পারতাম, অন্যকোন মেয়ে হলে হয়তো এতক্ষনে তুলেও ফেলতাম। কিন্তু আপনারটা লুকিয়ে তুলতে মনে সায় দিল না!
-কেন আমি কি বিশেষ কেউ?
-আগে ছিলেন না তবে আজকে হয়েছেন। আর আজীবন আমার হৃদয়ে থাকবেন।

আমার কথা শুনে ওর ফর্সামুখটা আবার লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল। লজ্জাবনত মুখে নীচে তাকিয়ে আছে। নিরবতা মৌন সম্মতির লক্ষ্যনং! মোবাইল বের করে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। পরমা আমার এইকান্ড দেখে কিছুই বলল না, মিটমিট করে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার সাহস আরও বেড়ে গেল। এগিয়ে এসে ওর ডানহাতটা ধরে সেখানে ছোট একটা ভাঁজ করা কাগজ ওর মুঠির মধ্যে দিলাম।

তোমাকে দেখলেই হৃদয় জাগে অজানা শিহরতা
আবেগ এনে দেয় রক্তকোষে অছন্দের মাদকতা
আমার হৃদয়ের বর্ণিল প্রণয়ের সুতীব্র আকুতি
তোমার স্পর্শেই এনে দেয় অতলান্তিক প্রশান্তি!

আমার একবুক ভরা নিস্তব্ধ ভালোলাগা
বিমূঢ় নির্বাক হয়ে রয় তোমার পথ চেয়ে,
থাক না এলোমেলো, কিংবা অগুছালো
বেহিসেবী শিহরিত হয়ে সদ্যচেনা তোমার হৃদয়ে!

তোমার আঁচলের জড়ানো মধুর নিক্কনে
বারবার আমি ফিরে আসি প্রণয়ের আকুলতায়,
কম্পিত হৃদয়ে তোমাকে জড়িয়ে রাখব
সাতসাগর আর তেরনদীর সমান ভালোবাসায়!

কবিতাটা এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই ছোট কাগজটাতেই লিখেছিলাম। কাগজটাতে লেখার শেষে আমার মোবাইল নাম্বার আর সাথে অফিসের ভিজিটিং কার্ডও দিয়ে দিলাম। পরমা কাগজের ভাঁজ খুলে সবগুলি বের করে এক এক করে দেখল। কবিতাটা পরমা মনোযোগ দিয়ে পড়া শেষ করতেই পিছন থেকে কে যেন ওর নাম ধরে ডাক দিল শুনলাম।
-মা ডাকছেন, একক্ষন না গেলে অনেক রেগে যাবেন!
-চলে গেল যে আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাবে!
-যাই
-না, না, না।

যেতে যেন না পারে সেজন্য আমি ওর ডানহাতটা ধরে রাখলাম। পরমা হালকা করে আমার হাত ছুটানোর চেস্টা করছে।
-যেতে দিবেন না আমাকে?
-না। কক্ষনো না।
-প্লীজ, অবুঝ হবে না। মা অনেক বকা দিবে। আপনি কি চান আমি আপনার জন্য বকা খাই?
-তাহলে ভগবানের নামে শপথ করে কথা দিন আমাকে বাসায় যেয়েই ফোন দিবেন?
-আচ্ছা ঠিক আছে, ভগবানের নামেই শপথ করে বলছি আপনাকে আমি নিজেই ফোন দেব। বাসায় যেয়ে আগে কবিতাটা আবার পড়ব, তারপর। কবিতাটা ঐখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লিখেছেন, তাইনা? আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি!
-আপনাকে নিয়ে আরও লিখব। ভালোবেসে সারাজীবন আপনাকে নিয়ে হৃদয়ের সব গোপন কথাগুলি লিখে যাব!

পরমা আমার দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর করে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিল আর তারপর নিজের ডানহাত আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কানের পাশ থেকে একটা রক্তলাল গোলাপ খুলে আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বারবার ফিরে আমার দিকে তাকালো। আর আমি চন্দ্রাহতের মতো বিমুগ্ধ হয়ে ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম………

তিন
-কি প্রদীপ বাবু, কি চিন্তা করছেন? মেয়ে কেমন লাগল দেখতে?

দুলাল বাবু’র প্রশ্নগুলি শোনার পর সহসাই ফিরে এলাম বর্তমানে। জীবনের চরমতম নিষ্ঠুর বাস্তবতার আজ মুখোমুখি হয়ে। এই নশ্বর জীবনে কত যে ভয়ংকর সব কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিতে হয়, কিংবা না চাইলেও মানিয়ে নিতে হয়! কি সুতীব্র বেদনার কালবৈশাখী ঝড় আমার হৃদয়টাকে এখন উলট পালট করে দিচ্ছে সেটা মনে হয় খোদ ভগবানও পুরোপুরি টের পাচ্ছেন না! তারপরও বুকে একটা মস্ত বড় পাথর চাপা দিয়ে বললামঃ
-জী দাদা, ভালো।
-দেখলেন? বলেছিলাম আপনাকে, মেয়ে একবার দেখলেই চোখ সরানো যায় না।

পরমা’কে নিয়ে এই নিষ্ঠুরতম সত্য কথা আমার চেয়ে ভালো আর কেই বা জানে এই পৃথিবীতে? বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যথা শুরু হয়েছে। কোন সুযোগ কি আছে এখনও আমার? শেষ একবার চেস্টা কি করা যাবে?

-বিয়ের কথাবার্তা কতদূর এগিয়েছে, দাদা?
-লগ্নপত্র, পানচিনি, আশির্বাদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু আগামী পরশুদিন গাত্র হরিদ্রার পর সাতপাকে দুইজনকে বেঁধে দিতে পারলেই আমার কাজ শেষ!

প্রতিটা পর্বের নামগুলি যেন এক এক করে বিষ্ফোরিত হলো আমার হৃদয়ে। ওহ ভগবান, আর কতটা কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করলে তোমার কৃপা হবে! আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। মোবাইলটা দাদা’র হাতে ফিরত দিয়ে বাথরুমে যাবার নাম করে টেবিল থেকে উঠে আসলাম।

কেন যেন খুব করে কান্না পাচ্ছে! শূন্যতা, হাহাকার, নাকি নিঃসঙ্গতার জন্য, ঠিক জানি না। শুধু বুঝতে পারছি বুকের ভিতরে লুকানো অসহ্য কষ্টগুলি একদলা অভিমান হয়ে প্রচন্ড স্রোতে দু’চোখ ফেটে বের হয়ে আসার জন্য ছটফট করছে।

চোখে মুখে ভালো করে জল দেবার পরও চোখ জ্বলাটা কমল না। খুব অস্থির অস্থির লাগছে। ভগবান এত নিষ্ঠুর কেন? আমার মতো সামান্য একজনের মনের মন্দির ভেঙে কি লাভ হলো ভগবানের?

পরমা, তুমি আমার প্রণয়ের মন্দিরে শুধু পূজার ফুল হয়েই রয়ে গেল, ভালোবেসে পূজা করতে দিলে না। নিজের অজান্তেই বুকের গহীন থেকে ভেসে আসছে…
“যদেতত হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।”

আমার এই অসহায় হৃদয় তোমার হৃদয়ে এতটুকু জায়গা না পেলেও, আমার হৃদয়ে তুমি প্রথম প্রেমের স্মৃতি হয়ে চিরকালই রয়ে যাবে। বুকের ভিতর এই বিদগ্ধ হৃদয় শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবে, আর কোন কিছুর প্রত্যাশা না করেই…………

ভিজে উঠা চোখের পাতাগুলি মুছে ফেলে চুপিচুপি আমি পরমা’র সামনের দিনগুলির শুভ কামনা করে আমার অসহায় ভালোবাসার জীবন্ত সমাধি দিয়ে দিলাম। নশ্বর এই পৃথিবীর কেউ জানলোই না, গভীর আবেগের একটা প্রচন্ড ভালোবাসার মরণ হলো একদম নিভৃতেই!

পুনশ্চঃ হঠাৎ ছয়মাস পরে একদিন মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলে রিসিভ করার পর পরমা’র কন্ঠ শুনে আমি বেশ বিব্রত হলাম। পরমা জানালো সেদিন বাসায় যাবার সময় রাস্তায় ওর মা ওর কাছ থেকে আমার কাগজটা কেড়ে নিয়েছিল। এতদিন ধরে ও শুধুই পাগলের মতো এই কাগজটা খুঁজে ফিরছিল। আজকে একটু আগে পেয়েই ফোন দিয়ে সজোরে কান্না করতে করতে ওর ব্যর্থতার জন্য বারবার ক্ষমা চাইলো! নিঃশব্দে ভালোবাসার কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল আমার চোখ থেকে। পরমা’কে নিয়ে যে ভুল আমি বুঝেছিলাম সেটা ভেঙ্গে দেবার জন্য এতকিছুর পরেও ওকে খুব করে ধন্যবাদ দিলাম। আর বুঝলাম ভগবান শেষ পর্যন্ত আমাকে কৃপা করেন নি!

উৎর্সগঃ
শ্রদ্ধেয় সহ-ব্লগার এবং আমার অকৃত্রিম ব্লগীয় বন্ধু পদাতিক চৌধুরীকে। এই গল্পটা উনাকে উৎর্সগ করার জন্য লিখা হয়েছে! গল্পের প্লটটা তৈরী হবার পরই এবার চরম একটা দুঃসাহসিক কাজ করলাম। প্রথমবারের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে লিখলাম। ধর্মীয় কোন বিষয়ে ভুল লিখলে ঠিক করিয়ে দেবার জন্য সবাইকে অনুরোধ রইল। আমি আপ্রান চেস্টা করেছি যতটুকু সম্ভব শুদ্ধভাবে লেখার। একজন গল্পকারের কোন বিষয়েই লেখার সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়। ইচ্ছে আছে এদের সামাজিক আচার আর বিশ্বাস নিয়ে আরও লিখার……

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ২

১। ‘How to change your life’ বইটি একবার দ্বিতীয় সংস্করণে নামের বানান ভুল করে ‘How to change your wife’ হয়ে বের হয়েছিলো, তারপর সেটা সাথে সাথেই বেস্ট সেলার! পরে সেটা তারা কারেকশন করেছিল। তাতে কি? ব্যাপক বিক্রিই প্রমান করে সবাই এরকম একটা বই অনেক দিন থেকে খুঁজছিল।

>আহা এরকম যদি সত্যি একটা বই থাকত!

২। কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার নাসির আর তার প্রেমিকা শোভার অডিওর কয়েকটা ভার্সন রিলিজ পেয়েছিল। বিশেষ করে শোভার কিছু অডিও। যারা বাংলা ভাষার সব ধরনের গালগালীর সংকলন চান তাদের জন্য আমি এটা চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করলাম। একবার শুনলে আপনার মনে হবে বাংলা ভাষার সব ধরনের গালীর উপর PhD করে ফেলেছেন। YouTube এ আছে।

>কষ্ট করে খুঁজে নিন। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না! আর এই কেষ্ট যা তা কেষ্ট না।

৩। আপনি কি জানেন গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!! তাই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!! মেয়ের বাবা-মা সাধারনত এই কাজের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন!! মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেটও দেয়!!

>সেইদিন খুব ইয়ার দোস্ত টাইপের একজন উপরের নিউজটা শেয়ার করে খুব দুঃখ করে আমাকে বললঃ কেন যে এই দেশে জন্ম নিলাম! এত দিন কি সব উল্টা পাল্টা চাকরী করছি! আমি এর আক্ষেপ শুনে একদম বাক্যহারা!

৪। বর্তমানে আমরা কেবল পোশাকে আধুনিক হচ্ছি, মানসিকতায় না। মেয়েদের স্লিভলেস পরা, সর্ট ড্রেস পরা বা স্কুটি চালানোই কেবল যদি আধুনিকতা হয় তবে সেটা ভুল, অবশ্যি ভূল। আমরা অনুকরণ করেই দ্রুত বড় হতে চাই, একবারে গাছের মগডালে ওঠার স্বপ্নের মতো, সিড়ি বাদ দিয়ে লিফটে উঠার মতো! এদিকে যে পাছার কাপড় খুলে কখন সবার অজান্তেই পড়ে গেছে সেদিকে কোন খবর নাই। আধুনিক হবেন সমস্যা নেই, বেঁচে থাকতে হলে আধুনিক হতে হবে এটা কে আপনাকে বলল?

>আপনি এই অদ্ভুত ধ্যান ধারনা নিয়ে আধুনিক না হয়ে আদিম হয়ে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের ন্যাংটো সংস্কৃতি আমাদের এত সুন্দর সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে এটাকে আরও ন্যাংটো করে দিয়েছেন, সেটা কি জানেন?

৫। সেদিন যেন কোথায় ইন্টারনেটে পড়েছিলাম, এয়ারটেলের অ্যাড দেখে বন্ধুত্ব শিখো না, তাহসান এর নাটক দেখে প্রেম শিখো না। এগুলোতে হাজারটা জ্ঞানের কথা থাকতে পারে, তবে সবার অভিভাবক টাকা কিংবা অবস্থানের কথা কখনো লেখা থাকে না।

বাস্তবতা হলো, তোমার কাছে যখন মধু থাকবে তখন অসংখ্য শুভাকাংখী তোমার খোঁজ খবর নিবে, ভালো মন্দ জানতে চাইবে। এগুলোর অ্যাটিওলজী তুমি না, তোমার কাছে থাকা মধুটা। তাই নিজের কাছে থাকা এই মধুর ডিব্বাটার যত্ন নিও। মনে রেখ, ভোমরার অভাব না থাকতে পারে পৃথিবীতে, মধূ কিন্তু সবার কাছে থাকে না। কষ্ট করলে ঐ মধু সংগ্রহের জন্য করো, আশে পাশের ভোমরা গুলাকে আটঁকে রাখতে করো না।

>কথাটা দারুন বাস্তব এবং সত্য মনে হলো আমার কাছে । আপনার কি মনে হয়?

৬। অবশেষে সিভিতেও…সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরি খোঁজা একটা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই অফিস ঐ অফিস ঘুরে ঘুরে সিভি ড্রপ আর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে এখন আমি বেশ বিরক্ত। গতকাল এক অফিসে গেলাম সিভি জমা দিতে, সেখানে এক আপুর সিভি নিয়ে একটা কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। উনার মতে আমার দেয়া সিভি সেক্সি না। এখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে… আপা সিভি সেক্সি হয় কেমনে? সিভিতে দেয়া ছবিতে ক্লিভেজ দেখায়, নাকি লিখাগুলোয় আমার চাকরীর এক্সপেরিন্সের বদলে কারো সাথে শুয়ে জব পাওয়ায় পার্রদশী কিনা তা দেখিয়ে? অবাক লাগে যখন প্রফেশনাল কোনো সিভির বদলে আজকাল মানুষ সেক্সি সিভি খুঁজে। হায়রে মানুষ!! এখন সিভিকেও সেক্সি হতে হবে!!! নাহলে জব কাছে আসবে না!’

>ভাষাটা সুমধুর হলেও যা লিখেছে সেটা পড়ার পর থেকে আমি বাক্যহারা। এই বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না। আপনাদের কি মন্তব্য?

৭। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক কিংবা সমালোচনার শেষ নেই। গতবছর ফাইনালের মঞ্চের নাটকীয়তাকে ঘিরে কম বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আর এবার অনুষ্ঠানটির ফাইনাল পর্ব শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইনালিস্টদেরকে নিয়ে। জনপ্রিয় মডেল এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার অভিমত শেয়ার করেছেন। দেশের একটা দৈনিক পত্রিকা এটা তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেনঃ-
“আমরা কেন এই মেয়েগুলাকে নিয়ে হাসতেছি? ওদের কী দোষ। ওরা তো জেনেই আসছে যে ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি নাই দিয়ে থাকে ওদের কী গ্রুমিং করাইছে বা কারা করাইছে যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’ পর্যন্ত বলা শিখাই নাই?
এতো ক্ষ্যাত মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিস্ট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এতো দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতোগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সবসময় ক্ষমারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওইটা জেনেই আসছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়”!

>মেয়েটার কথার খুব যৌক্তিক তাৎপর্য আছে আর তাই এটা এখানে তুলে দিলাম।

৮। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর বুকে হাত দেয়ার জন্য আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি রোববার বিমানে চড়ে হিউস্টন থেকে আল বাকার্কি যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনের সারিতে বসা একজন নারীর বুকে দু’বার হাত দেন। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ব্রুস আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘নারীদের অঙ্গ স্পর্শ করা দোষের কিছু না। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজে এ কথা বলেছেন’। এবিসি নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ঘটনার শিকার নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন প্রথমবার হঠাৎ করেই তার বুকে ব্রুসের হাতের স্পর্শ লেগে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটার সময় বিপত্তি বাধে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাকালীন ওই মহিলার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। তখন ব্রুস আলেকজান্ডার আবার তার বুক স্পর্শ করেন। এ সময় ওই নারী ঘুরে দাঁড়ান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এ কাজ করছেন? এবং তাকে অবশ্যই এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বিমানের স্টুয়ার্ডরা ওই নারীর সিট বদল করে দেন। বিমানটি আলবাকার্কিতে অবতরণের পর পুলিশ ব্রুস আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেন, যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মেয়েদের গোপন স্থানে হাত দিলে কোন দোষ নেই। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে তাকে আদালতে তোলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়ে ছিল যে, সেলেব্রিটিরা চাইলে নারীদের অঙ্গ তাদের অনুমতি ছাড়াই খামচে ধরতে পারে। তার এই মন্তব্যের জন্য তার নিজের দলসহ সারা দেশে প্রবল সমালোচনা হয়।

>লেখাটার পড়ার পর আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কথা কেন যেন খুব করে মনে পড়ে গেল!

বর্তমান এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মতো একজন অতি তুচ্ছ আমজনতা কি ভাবে আর মন কি চায় সেটাই তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পুরো লেখাটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবনের কাছ থেকে যে ঘটনা গুলি দেখে মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে যাব যদি সময় ও সুযোগ থাকে। এই এক্সপেরিমেন্টের এটাই দ্বিতীয় লেখা পোষ্ট। আমার মাথায় সারাক্ষনই এরকম উল্টা পাল্টা লেখা ঘুরে……

এর আগের পর্ব পড়ুন:-
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ১

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

সস্তা ভালোবাসা আর বিকৃত মানসিকতা – ১

প্রেম, ভালোবাসা নামের এখনকার সম্পর্কগুলো বর্তমানে খুব সস্তা, হুটহাট করেই হয়ে যায়। যত্রতত্র প্রথম দেখা, মিষ্টি হাসি দেখেই এই সব শুরু হয়। যদিও পরে মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সামাজিক, পারিবারিক প্রেক্ষাপটের অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যায় এইসব ভালোবাসা জানালা দিয়ে লেজ তুলে পালায়। কারন আর যাই থাক, এতে কোন কমিটমেন্ট থাকে না। আর বিয়ের আগে সব উজাড় করে দেওয়া বালিকারাও জানে না আদৌ সে ছেলেটির সাথেই সংসার পাততে পারবে কিনা? কিংবা এই ছেলেটিই পরে তাকে গ্রহন করবে কিনা? যদি তা না হয় তাহলে ওর ভবিষ্যত কি? পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঘোর অমাবস্যা?

এইসব অনেক গল্পেরই পরের কাহিনী সবার জানা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেগুলি পাওয়া যায় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো কিংবা কিছু নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটে।

আজকাল মর্ডান জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা ফেসিয়াল টিস্যু পেপার চেন্জ করার মতো BF / GF চেন্জ করে। দুধ থেকে সরটা খেয়ে, ছেলেরা ভাগে আর মেয়েরা কাঁদে। ছেলেটা যদি আইটি এক্সপার্ট হয়, তাহলে তো আরো চমৎকার! এক হাজার টাকার মোবাইলেও আজকাল HD ক্যামেরা পাওয়া যায়। “মজাই মজা” শেষ হয়ে গেলে ছেলেরা ব্যস্ত হয় যায় অন্য মেয়ে নিয়ে আর সারা দেশের মানুষ ব্যাপক বিনোদনের ফ্রি সুযোগ পায় ইন্টারনেটে। মোবাইল কম্পানিগুলি তে খোঁজ নিয়ে দেখুন, মোবাইলের ডাটা প্যাক গুলি সব শেষ কি দেখে!

এসব মেয়েরা যে আজন্ম বেকুব তা তারা তাদের নিজেদের কার্যকলাপ দিয়েই প্রমাণ করে। সারাজীবন নিত্য নতুন স্টাইল করে বেড়ান এই সব মেয়েরা পরে দেখা যায় বোরকা পড়ে নাক মুখ ঢেকে সব সময় বাইরে যেতে। আর তাতেও যদি না সামলাতে পারে, তাহলে অবশেষে নিজের গলায় নিজেরই ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শেষ বারের মতো নিজেকে আস্ত বেকুব প্রমান দিয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রের প্রথম পাতার রগরগে নিউজ হতে।

এই সব বদের হাড্ডি ছেলেরা যদি নিত্য জামা বদলানোর মতো নিত্য নতুন নারী সঙ্গী তথা গার্লফ্রেন্ড পেয়ে যায় সবার অগোচরে, তবে সে কেন একটা মেয়েকে মোহরানা দিয়ে সম্মানের সাথে ঘরে তুলে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে! এদের কাছে নারী যদি বিয়ে ছাড়াই এতটাই সহজ লভ্য হয়, তাহলে ঐ ছেলেদের কী দরকার বিয়ে নামের সারা জীবনের রেস্পনন্সিবিলিটির ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর !

এই সব মেয়েদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করেঃ
#মেয়ে, যখন ছেলেবন্ধু তোমার কাছে তোমার হট পিক চায় তখন কি মনে থাকে না কাকে কি দিতে যাচ্ছো? এর ভবিষ্যত পরিনতি কি হতে পারে? শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু এর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্জনে সময় কাটাও, তখন কি একবারের জন্যও মনে থাকে না তুমি কার সম্মান মাঠে নামালে নিজেকে এভাবে খোলা রেখে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু তোমার জামার ভিতর ইচ্ছেমত হাত দেয় তখন কি মনে থাকে না, কার সম্পদ কার জন্য তুমি উন্মুক্ত করে দিলে?
#মেয়ে, যখন তুমি ছেলেবন্ধুর সাথে অমুকের ফ্ল্যাটে গিয়ে দুটি দেহ এক করে শুয়ে থাকো, তখন কি একবারের জন্যও মনে হয় না কার সম্পদ কাকে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিচ্ছো? গভীর আবেগে ভেসে যেয়ে যেসব ভিডিওতে পোজ দেও, শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?

হয়তো শেষ পর্যন্ত এই ছেলেবন্ধুর সাথে তোমার বিয়ে হলোই না, অনেক কারনেই সেটা নাও হতে পারে। তখন কেন আবার সমস্ত অপবাদ ছেলেটাকে দিচ্ছ? ছেলেটা নির্দোষ অবশ্যই নয়, প্রশ্নই উঠে না, কিন্তু তুমি সুযোগ না দিলে এইসব কি হতে পারত? মজা কি শুধু ছেলেটা পেয়েছে, তুমি পাওনি? না পেলে, কি জন্য এভাবে নিজের শরীর বিনামূল্যে বিলিয়ে দিয়েছ? ছেলেটা যেমন একটু সুখের জন্য তোমাকে চেয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও চেয়েছো সে সুখের ভাগীদার হতে। এটা কি ভূল কিছু? আর সেই সুখের ভাগীদার হতে, খুব সহজে নিজেকে শিয়াল কুকুরের মতো জানোয়ার গুলির খাবার বানালে নিজেকে? আরে, নিজের ভালো তো একটা পাগলেও বুঝে!

আমরা যেন জেনেও বার বার ভুলি যাই, আমরা ঢেকে রাখা খাদ্য দ্রব্য সব সময় নিরাপদ মনে করি। কারণ তার ভিতরটা জীবাণু মুক্ত থাকে। আর খোলা জিনিসে মশা, মাছি আর পোকামাকড় এসে ভীড় করে। কখনও কি একবারও ভেবে দেখেছ, যাকে সবকিছু “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব” ভেবে দিয়ে দিলে, তার সাথে যদি তোমার বিয়ে না হয়, তখন ভবিষ্যতে পরের জনকে কি উত্তর দিবে?

এত্ত বড় ভালোবাসা, যেই ভালোবাসার স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে দিতে আংগুল পর্যন্ত ব্যথা করে ফেলতে, সারারাত সুপার এফএনএফে কথা বলতে বলতে কাটিয়ে দিতে, তাকে দিয়ে যাকে বেঁধে রাখতে পার নি, ছোট্ট একটা শরীর দিয়ে কিভাবে সেটা সম্ভব?

ঈদের চাঁদ দেখলে আমরা যতটা খুশি হই, ততটা খুশি ঈদের দিনেও হই না। কারন ঈদের দিন মানে ঈদ শেষ, কিন্তু আর চাঁদ দেখা মানে কাল ঈদ। পার্থক্যটা কি আর ভেঙ্গে বললাম না। যে তোমার সাথে বিয়ের আগেই তোমার সব পেয়ে গেছে, তার আবার কি দরকার তোমাকে বিয়ে করার?

নিজের চরিত্র ভাল থাকলে নারীবাদী হতে হয় না। এই সব অশ্লীল কাজে সমর্থন যারা দেয়, আসলে তারা স্বার্থপর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কারন সুস্থ মস্তিকের বিবেকবান পুরুষ বা মহিলা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া এতে সমর্থন দিতে পারে না। একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কেউ যায় না বা এতে সমর্থনও দিতে পারে না। নিজের জাগতিক ভোগ বিলাসের লোভ যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভয়ের চেয়ে বেশী হয় তখনই মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়।

দোকানে ঢুকে কিছু কিনতে চাইলে সবাই দোকানের স্যাম্পলটা নেড়েচেড়ে ভালোভাবে দেখে নেয়, কেনার সময় কিন্তু নেয় কিন্তু শোকেসের ভিতরের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট। বর্তমানে এইসব মেয়েরা সবাই ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট থেকে বের হয়ে এসে স্যাম্পল হবার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে….

মধু খাওয়া শিখিয়ে ভ্রমরের ডানা গজিয়ে দিয়ে এই সব মেয়েরা আশা করে, ভ্রমর এক ফুলেই, এক স্বাদের মধু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে….…হায়, কি বিচিত্র এদের আশা…..

পূনশ্চঃ এটা একটা জন সচেতনতা মূলক পোষ্ট। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা করার যদি অধিকার থেকে, তবে লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে কিছু সত্য কথা আমি কেন লিখতে বা বলতে পারবো না……..

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

কবিতাঃ প্রণয়ের শিহরন

উর্মির ভাঁজে গুঁড়ো নীল জলবিন্দুর উচ্ছাস
শুন্যে উঠেই একে অন্যের সাথে বিলীন হয়ে যায়,
অপ্রত্যাশিত আবেগের জোয়ার এলে ভালোবাসায়
দুটি হৃদয় মিলিয়ে যায় একে অন্যের অস্তিত্বের সাথে।

ভালবাসার রক্তিম লাভা রেখে যায়
হৃদয়ের আকাশে উদগীরিত আবেগ,
অপ্রত্যাশিত বিচ্ছুরিত প্রেমে
হৃদয় আচ্ছন্ন হয় মোলায়েম জোৎস্নায়।

প্রেমিক প্রেমিকার বুকের অতলান্তিকে
প্রেম যেন আসে স্রোতস্বিনী নদীর বন্যায়,
ফিসফিস করে কথা বলে দুটি হৃদয়ের সাথে
আচ্ছন্ন করে রাখে খুনসুটির মিষ্টি ছায়ায়।

চোখের ভাষায় ভালোবাসার অবুঝ আবদার
উচ্চারিত হয় ষোড়শীর নৃত্যেমত্ত নূপুরের নিক্কনে,
কিংবা কাঁচের কাঁকনের রিনি ঝিনি পদ্যে
স্পর্শের শিহরণে কেঁপে উঠে অনাগত অনুভুতি।

হঠাৎ ভালোলাগার রেশ কেটে গেলে
তবুও হৃদয়ে রয়ে যায় অতৃপ্ত প্রণয়ের শিহরন!!

উৎসর্গঃ প্রিয় কবি মনিরা সুলতানা আপুকে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুন ২০১৯