বিভাগের আর্কাইভঃ অণুগল্প

ধারাবাহিক গল্পঃ তিনি একজন মফস্বল সাংবাদিক

ধারাবাহিক গল্পঃ তিনি একজন মফস্বল সাংবাদিক // পর্বঃ ৩।।

মাঝে মাঝে আমাকে শয়তানে টোকা দেয়। অবশ্য হাত দিয়ে শরীরে না, ব্রেইনে আমার।

একজন মফস্বল সাংবাদিক হবার আগে থেকেই টুকটাক লেখালেখি করে আসছিলাম। একটা প্লট নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছিলাম। সেখানের মূল চরিত্রটি ছিল একজন চোরের। ওর বন্ধু ছিল একজন পকেটমার। তাই বাস্তবে একজন পকেটমার এবং ছিচকে চোরের ইন্টারভিউ নেবার ইচ্ছে হল। কিন্তু আমার বসবাসের এলাকা এবং কর্মক্ষেত্রে থাকাকালীন, কিভাবে যেন এটা হয়ে উঠলো না।

সময় বয়ে গেলো…
এর ভিতর, বেশ কিছু বছর পরে ঈদ করতে চিটাগং গেলাম। নিজের বেড়ে ওঠার একসময়ের প্রিয় শহরে নিছক একাকী ঘুরে বেড়াতে রাত বারটার পরে চট্টগ্রামের বাসা থেকে বের হলাম। বটতলী পুরনো রেলস্টেশনে অবস্থান নিলাম। যে সময়ের কথা বলছি, তখন রাস্তার সামনে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রী করা হয়। আর পাইপের ভিতরে (বিশাল সাইজের পাইপ) ভ্রাম্যমান পতিতারা তাদের বাসস্থান বানিয়েছে। এটা এই ধরণের লোকদের (পকেটমার /চোর ) আদর্শ জায়গা হবে ভাবলাম।

এসময় লেখকের পাশাপাশি অবস্থান করা একজন মফস্বল সাংবাদিক প্রকট হলেন। একজন মানুষের ভিতরে আরো কয়েকজন অবস্থান করেন। আমার ভিতরের জনদেরকে আমি অনুভব করি। যাইহোক, মফস্বল সাংবাদিকের কিছু কিছু ভাবনা ব্রেইণে শয়তানের টোকা দেবার মত। কারণ এরুপ আসা ছাড়া তাদের করারও কিছু থাকে না।

ভাবনা-চিন্তায় শয়তানের টোকা না থাকলে এইসময়ে কেউ দক্ষ মফস্বল সাংবাদিক হতে পারেন না।

যাইহোক, লেখকের প্লট কে সামনে রেখে তিনি ‘ধান্ধা’ করার অভিপ্রায় জানালেন। টুইন ওয়ান। রথ দেখা, কলা বিক্রি- দু’টোই হলো। শহরের অন্ধকার জগত নিয়ে একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে। মাদক এবং ছিনতাইকারী চক্র। কিন্তু আমি দেখতে চাইলাম, আমার ভিতরের মফস্বল সাংবাদিকের ব্রেইণে প্যারালাল আর কি ভাবনা চলছে। তিনি আসলেই কি ভাবছেন? শ্রেফ জনকল্যাণে প্রশাসন সহ সাধারণ জনগণকে সচেতন করতেই এই প্রতিবেদন? নাকি কিছু টাকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা যা এই ‘ধান্ধা’ শব্দটির মাঝে লুকিয়ে আছে?

টিকে থাকতে একজন মফস্বল সাংবাদিককে ধান্ধা করতেই হয়। আছে কোনো বিকল্প? বেতন পায় না তারা। একটা পত্রিকায় ঢুকতে প্রথমেই তাদেরকে রেফারেন্স সহ এককালীন বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এরপর নিজের উপজেলায় প্রতিদিন সংবাদের পিছু ধেয়ে দিন-রাত ছুটতে হয়। যাতায়াত ভাড়া সহ চা-নাস্তা, সামাজিকতায় দিন দিন প্রতিদিন টাকা ব্যয় হয়। ভালো অংকেরই। নিজের পরিবারের সদস্যদের পিছনে আছে ব্যয়। এরপর মাস গেলে বাড়ি ভাড়া, মুদি দোকান, মাছ বিক্রেতা, মুরগীর দোকান সব জায়গায়ই খরচ। এসবের মিলিত যোগফল আর মাস শেষে তাঁর আয়ের মিলিত যোগফল কেমন? যেখানে পেশা হিসেবে ‘বেতন নাই কোনো’ লাইনটি প্রযোজ্য। আয় শূণ্য।

ঋণাত্বক জীবনযাপনকারী একজন মফস্বল সাংবাদিকের সাথে তাই ‘ধান্ধা’ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। তাদেরকে ঘৃণা করার কিছু নাই। আপনার নাক কুঁচকে গেলে দয়া করে স্বাভাবিক অবস্থায় আনুন। নাহলে মফস্বল সাংবাদিকের পায়ে যে জুতো জোড়া, সেটা পায়ে দিয়ে তার জায়গায় এসে হাঁটুন।

যাইহোক, কোথায় যেন ছিলাম?
চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়াকালীন এই স্টেশনটি নিজের বাসার থেকেও বেশী পরিচিত ছিল। ওখানে ‘গুজাইয়্যা’ নামের একজন গাঁজা বিক্রী করতো। ওর সাথে আমার (নাকি আমার সাথে ওর?) বেশ পরিচয় ছিল। এই ‘চোর’ প্রজেক্টে’ ওর হেল্প নেবার কথা মনে হল। সেজন্য প্রথমেই ওকে খুঁজে বের করলাম।

প্রায় ১০ বছর পরে গুজাইয়্যার সাথে দেখা হল। ছবিতে আমাকে যে লেবাসে আর অবয়বে দেখা যাচ্ছে, তাতে এতো রাতে অন্য কেউ দেখলে আমাকেই চোর মনে করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। :) কয়েকদিনের শেভবিহীন চেহারা, টানা দশ ঘন্টা বাস জার্ণি করে নেমেই, লুংগি পরে বের হয়েছিলাম। চাঁটগার প্রাণকেন্দ্রে।

আমি দেখলাম গুজাইয়্যা ভ্রাম্যমান গাঁজা বিক্রেতা থেকে মেইন রোডের সাথেই একটা হোটেল দিয়েছে। সেখানে ভাত-তরকারির সাথে চা এবং অন্যান্য সবকিছুই পাওয়া যায়। আমি ভিতরে ঢুকে ওকে ডাকলাম। দেখলাম সে এখন বিশাল এক চেয়ারে বসে ক্যাশ সামলায়।

আমাকে দেখে ও ভাবল এই ১০ বছরে আমার ভীষণ সামাজিক স্ট্যাটাসের অবনতি হয়েছে। তাই আমি কি করি এটাই প্রথমে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু আমি কেমন আছি এটাই প্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল ওর। যাইহোক, আমি বললাম কিছুই করি না। সে শুধু ‘ও’ বলে অন্য এক কাষ্টমারের দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

অনেকক্ষণ পরে সে ফ্রি (!?) হলে আমি আমার ইচ্ছার কথাটি বললাম। খুবই স্বাভাবিক ভাবে সে ব্যাপারটি নিলো এবং একজনকে ‘সবুরের’ কাছে আমাকে নিয়ে যেতে বলল। ওকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি ওর দেখানো লোকটির (আসলে পিচ্চি এক ছেলে ছিল সে) পিছনে রওয়ানা হলাম। ছেলেটি আমাকে আমার বসে থাকা ছবির পাশে যে শুয়ে আছে, তাঁকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল।

সবুর নামের ঐ চোর বা পকেটমারের সাথে আর কথা বলা সেই রাতে আমার হয় নাই। কারন ততোক্ষণে রাত ১টা বেজে গেছে… বাসা থেকে বউ আর শাশুড়ি আম্মার বার বার ফোন আসছে। আর পাইপের ভিতর থেকে একজন মেয়ে বের হয়ে একবার আমার পাশ দিয়ে ঘুরে যেতেই, আমি সেখানে আর থাকাটা নিরাপদ মনে করলাম না।

লেখকের সেই ইন্টারভিউটিও নেয়া হলো না, তাই সেই লেখাটি লেখাও হল না। আর মফস্বল সাংবাদিকের সে রাতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা হলো না। এজন্য চিন্তার সমান্তরালে বয়ে যাওয়া ভিন্ন আর একটি কাজও হলো না।

কখনও কখনও মফস্বল সাংবাদিকদের কিছু ইচ্ছা অপূর্ণও থেকে যায়। সব পূর্ণ হয়ে যায়, এমন মানুষেরা সাধারণত মফস্বল সাংবাদিকতায় আসেন না।

(ক্রমশঃ)

#তিনি_একজন_মফস্বল_সাংবাদিক_মামুনের_ধারাবাহিক_গল্প_পর্ব_৩

মামুনের_৫০০ তম_অণুগল্প : একটু_একটু_বেঁচে_আছি

লিখতে লিখতে আজ এই গল্পটির সাথে আমার ৫০০তম অণুগল্পটিও লেখা হয়ে গেলো। ‘মামুনের এক হাজার অণুগল্প’ নামে একটি বিশাল গল্পগ্রন্থের জন্য টার্গেট করেছিলাম ২০১৮ ইং সালটিকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হলাম। এক হাজার পূর্ণ হলো না, অর্ধেক হলো। যাইহোক, গল্পগ্রন্থটি ২০২০ এর গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করা যেতে পারে, তবে সেজন্য আরো ৫০০টি অণুগল্প লিখতে হবে।

কোনো ব্যাপার? মনে হয় না। লেখা হয়েই যাবে।

লেখক হিসেবে আমার ৫০০ টি অণুগল্প আমার জন্য একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট লাভ করার মতই আনন্দদায়ক মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে!

লেট’স সেলিব্রেট #মামুনের_অণুগল্প_৫০০
——————————————————–

বন্ধু!
তুই কেমন আছিস?
আগেরবার আমাকে লিখেছিলি, ‘আমার যা নেবার তোর কাছ থেকে নিয়ে নিতে। তোর পুকুরে ঝাঁপ দিতে বলেছিলি… তুই নাকি সবই আমাকে দিবি? ‘

আজ এ প্রসংগেই লিখছি তোকে।

তোকে আমার যে ক্লাশমেটের কথা বলতে শুরু করেছিলাম, তার সাথে শেষ পর্যন্ত আমার ধোঁয়াটে একটা ভালোলাগার সম্পর্ক হয়েছিল, যা খুব স্বাভাবিক ভাবেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। প্রেম হয়নি, তবে
অদ্ভুত একটা ব্যাপার কিন্তু অভিজ্ঞতায় আসলো। মনে পড়ে তোর, এর আগে মোবাইলে একদিন বলেছিলি, ‘তুই কি জানিস- প্রেম কি? প্রেম করতে হৃদয় লাগে যা তোর নেই। তুই তো হৃদয়হীনা!’

তবে বন্ধু, প্রেম বলতে আমি যা বুঝি তা হয়নি। আমার যা নেই তার জন্য আমি দু:খিত। আমার আরো অনেক কিছুই নেই। সবকিছুর জন্যই আমি দু:খিত।

এ কথা শুনে তুই বলেছিলি, ‘তোর দু:খ পাবার কিছু নেই। হয়তো তুই এমনই।’

হ্যা, হয়তো বা! ছেলেটার কথা বলি?

একটা জরুরী ব্যাপারে তার সাথে কথা বলছিলাম মুখোমুখি বসে। জীবনে খুব কম ছেলেরই পাশে বসেছি। বিয়ের পর বিপদ আপদ ছাড়া এই অভ্যাসটা একেবারেই চলে গিয়েছিলো। কথা বলতে বলতে হঠাৎ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেলাম। খুব অপ্রস্তুত হয়ে আবিষ্কার করলাম, এমন কিছু ফিলিংস নি:শব্দে শেয়ার করে ফেলেছি যা নিয়ে আমরা কখনো কথা বলিনি। তার কাছে ব্যাপারটা কী ছিল জানা আমার জরুরী ছিল না। সেই মুহুর্তটা আরেকবার পাওয়ার প্রয়োজনটা প্রচন্ড ভাবে বোধ করতে লাগলাম।

এর আগেই তার দুর্বলতা বুঝতে পেরে একটা ইন্ডাইরেক্ট না-বোধক চিঠি লিখেছিলাম ওকে। আরও সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সে চিঠির ভাষায় মুগ্ধ হয়ে মূল কথাটা আর মাথায় রাখল না।

আবার এখন এই অবস্থা। তোর সাথে!

আমাদের দু’জনের একজন কমন ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল।তারা পুরনো বন্ধু। আমি নতুন। জ্ঞানী এই বন্ধু সব জানল। সে তার বন্ধুকে জটিল এই সম্পর্কটা থেকে বাঁচানোর জন্য আমার সাথে আমার বিভিন্ন বাপারে কথা বলতে শুরু করলো।

কখনো আমরা দু’জন
কখনো তারা দুজন… কথা হতে থাকলো।
আমি নির্ভর করার মত একজনকে পেলাম।

এখন এই বন্ধুই আমার মনযোগের কেন্দ্রে। আমার মন বলছিল, প্রেম নয়- আমার বন্ধুই দরকার। প্রাণ খুলে কথা বলার জন্য, সুখ দু:খ ভাগাভাগির জন্য, আপদে বিপদে পাশে পাওয়ার জন্য……।

ইতোমধ্যে সে নিজের অপারগতা বুঝে সরে গেছে। পিছু ডাকার মন ছিল না আমার। আমি কিছু কাজ বেছে নিলাম। পছন্দের কাজ। একটা চাকরি নিলাম। মন প্রাণ সঁপে কাজ করতে লাগলাম। বন্ধুর সাথে অল্প যোগাযোগ রইলো। বছরে অন্তত একবার দেখা হত।

সংসারে ফাটলটা এক সময় বেশ দেখা যেতে লাগলো।
এক সময় সইতে না পেরে যখন তখন সেই বন্ধুর বাসায় গিয়ে সব শেয়ার করতে শুরু করলাম। সে প্রায় সময় বলতে গেলে একাই থাকতো। কিন্তু শান্ত, সৌম্য এই বন্ধুটাকে এতোটাই বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিলো যে কোনো সন্দেহ আমার মনের কিনারায় ও আসলো না। অনেকটা বেপরোয়া ভালোবাসতে শুরু করলাম তাকে! আমার মনে সুখ ফিরল।

কাজের ভিতর থেকে কাজ খুঁজে বের করতে থাকলাম। ব্যস্ত থাকলাম। সেই ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও এক সময় বন্ধুটাকে দেখার একটা তৃষ্ণা পেয়ে বসলো একদিন। সামান্য সূত্র ছিল, তাই নিয়ে খুঁজে পেতে ওকে বের করলাম। সীমাহীন অবাক হলো সে। আমি অবাক হলাম এর অনেক পর।

একদিন ও আমাকে একটা প্রায় অন্ধকার রেস্টুরেন্টে দাওয়াত করলো। আমার আলোর ভিতর চলাফেরার অভ্যাস। কেমন অস্বস্তি লাগলো। আরো অস্বস্তি লাগলো যখন দেখলাম পাশাপাশি ছাড়া বসার জায়গা নাই। এসব রেস্টুরেন্ট এর খোপে খোপে স্কুলের মেয়েদেরকে নিয়ে মাস্তান চেহারার মানুষকে ঢুকতে দেখেছি পরে। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠেছি কখনো কখনো।

প্রথম সেই বিকেলে, বাইরে যখন সোনালি রোদ, ওখানে তখন ঘোর অন্ধকার। আমাদের মনেও এই অন্ধকার জমা হচ্ছিলো, খেয়াল করতাম যদি!

বসার প্রায় সাথে সাথেই দেখি একটা বড় তেলাপোকা টেবিলের অন্য কিনারা বেয়ে চলে গেলো। আমি কেন সাথে সাথে বের হয়ে আসলাম না, এখনো জানি না।

সেদিন আমার হাত ধরে, আমার এতো প্রিয় বন্ধুটা শব্দ করে কেঁদে ফেলল, ‘আমি আর পারি না, কি করবো তুমি বল!’

আমি আর কি বলবো?
কিছুক্ষণ বাজ পড়া মানুষের মত বসে থেকে শেষে কোনমতে বললাম, ‘তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেল।’ ও নার্ভাস হয়ে হাসতে শুরু করলো। আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। চিন্তা লাগলো খুব। কী হল এটা?

রিক্সায় ফেরার পথে সে খুব আস্তে তার একটা ইচ্ছা জানালো। আমি প্রচন্ড রাগ চেপে বাসায় ফিরলাম।এখান থেকেও ফিরতে পারতাম। পারলাম না।

নিজের উপর থেকে ধীরে ধীরে সবটুকু কন্ট্রোল চলে গেলো। আমার পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করা মুশকিল হয়ে গেলো। তার মৃদু কন্ঠ, দুই একটুকরা কথা মনের ভিতর দিয়ে সারা গায়ে ছড়িয়ে গেলো। আমার মনে হতে- একদিন তুই যখন সাপের কথা বললি, আমার সেই বিষাক্ত দিনগুলি মনে পড়লো।

আমি কি তোর কাছে এসব কিছু চেয়েছিলাম? তোকে কেন এই সাপ ছোবল দিলো? আমার ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়।

আজ বল, কে তোর প্রতারক বন্ধু, আমি? পৃথিবীতে তোর জানা সবগুলি গালি দিচ্ছিস আমাকে। আমি কেমন আছি, জানিস তুই?

তবে, তোর চিন্তাগুলি সরল। আমার জীবন অনেক জটিল। তোকে যা কিছু কথা- না বুঝে, ভুল বুঝে দিয়েছি- সব ফেরত নিচ্ছি। আর এইসব কথা তোকে যত যন্ত্রণায় ফেলেছে, তার জন্য সারা জীবন গালি দিস। তবে আমার সামনে কিংবা নিজের মনের আংগিনায় দিস। মানুষের সামনে দিস না। অনেক প্রশ্ন জন্মায় মানুষের মনে। কেন লজ্জা দিবি?

একটু আগে যে সাপটার কথা বললাম, তার পরিণতি বলি। একদিন দুপুরে খুব সংক্ষেপে আমি আমার সেই বন্ধুর দাবী পূরণ করলাম। আসলে এসব সম্পর্কের ভিতরে বাহিরে ঘৃণা আর আক্রোশ ছাড়া কিছুই থাকে না। মানুষ অসহায় হয়ে এই সব সম্পর্কের কাছে হার স্বীকার করে। এখানে ভালো কিছুই নাই। ঘৃণা আর আক্রোশই ছিল সেই সম্পর্কটার পরিণতি। এখনো, চিরকালের জন্য তাই আছে, থাকবে। ক্ষমাও আছে। সবটুকু কেন যেন করা যায় না, তাকেও না, আমাকেও না, পৃথিবীকেও না।

তুইও আমাকে বাকি জীবন ঘৃণা করে যা।
শুভেচ্ছা রইলো।
অনেক।
স্যরি।

আমার এই লেখা পড়ে, হয়ত মনে মনে বলছিস, ‘তুই একটা পাগলি আছিস বড়! … তোকে অনেক ভালোবাসি… অনেক অনেক অনেক অনেক… তোর সব কষ্ট এই ভালোবাসায় ধুয়ে যাবে… দেখিস একদিন!’

আমি জানিই তো – তুই এ রকমই। এটাই বলবি!

আমার সাথে পৃথিবীর আর কারো কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক নাই। কিছুর সাথে নাই। আমি এক সম্পর্কহীনা! এক হৃদয়হীনা!!! কিছু একটা করে বেঁচে থাকতে হয়।

ভালোবাসিস না। আমিও কাউকে ভালোবাসি না। শুধু বেঁচে থাকি। আমার হাসি কান্নার কোনো অর্থ নাই। কোনো কথার কোনো অর্থ নাই। মনে রাখিস না।
স্যরি! …

_________________________________
#একটু_একটু_বেঁচে_আছি_মামুনের_অণুগল্প_৫০০

মামুনের_অণুগল্প : তিনি_একজন_উর্ধতন_কর্মকর্তা

শুক্রবার, ডিসেম্বর একুশ।

আমি পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত একটি গ্রুপের স্টোরটা দেখে থাকি। আমি ‘ম্যানেজার’ নই। সামান্য একজন ‘সিনিয়র অফিসার’। এটা না বলে ‘উর্ধতন কর্মকর্তা ‘ বললে কি একটু ভালো শুনায়? অনেকেরই তো অন্য আরো কিছুর মত, শোনার ব্যাপারেও ‘এলার্জি’ থাকে।

আমি গ্রুপের স্টোরটা চালাই। আমার উপর অনেক চাপ। আমি সপ্তাহে ছয়দিন ‘প্রবল চাপাক্রান্ত’ একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। এইটা আমার অন্য এক চরিত্র। অনেকগুলি চরিত্রে অভিনয় করি আমি।

আমার নিয়ন্ত্রণে আরো কিছু মানুষ রয়েছেন। আমরা প্রতিদিন গড়ে দশ ঘন্টা একসাথে থাকি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মান-অভিমান, হাসি-আনন্দ, দু:খ- বেদনা আমাদেরও আছে। এখানেও বস হিসাবে আলাদা চাপে থাকি। ওদেরকে রাখি। আমাকে রাখেন আমার বস।

আমাকে লিখতে হয়। একটু একটু লিখতে শিখেছি যে। একটা তাড়না আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়। অনেক কষ্ট। লিখতে। চরিত্রগুলোর হৃদয়কে নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। কষ্টগুলো নিজের অন্যান্য কষ্টগুলোকে নিয়ে দল ভারি করে। আমার কষ্ট বাড়ে।

একটা বই বের হয়েছে। আরো তিনটি গ্রন্থের কাজ শেষ করেছি এই দেড় মাসে। পাচ ফর্মার আরো তিনটি বই। কতটা চাপ গেছে আমার ওপর দিয়ে, পাঠক- আপনি কি অনুভব করেন?

আমি সুন্দরী বাবু ও জ্ঞানী বাবুর পাপাও। একজন ‘কালার ব্লাইন্ড’ পাপা। বাবুদের মনের থই পাওয়া বড্ড কঠিন। ওদের নির্দিষ্ট কোনো ‘টাইপ’ নাই। এ অর্থে তারা নিজেদের যাপিত জীবনে ‘টাইপড’ না। চিন্তা-ভাবনায় কোনো ট্রেইল ছেড়ে যায় না। তাই একজন দক্ষ ট্রাকারের ভূমিকায়ও অভিনয় করি আমি বাস্তবে। অনেক চাপ। বাবা হওয়া চাট্টিখানি কথা না। যারা বাবা তারা অনুভব করবেন।

এক আগুন রাংগা বউ আমার জন্য অপেক্ষা করে। রহস্যময়ী। নারী। প্রেমিকা। ম্যাডাম। প্রচন্ড দু:সময়ে পাশে কেউ নাই, সে আছে। বিভিন্ন রুপে অপরুপা এই নারীর রহস্যের অবগুন্ঠন খুলতে খুলতে আমি ক্লান্ত। তবুও কত রুপ রয়ে যায় দেখা বাকী। একজন জামাইবন্ধু হিসাবেও আমার অনেক চাপ।

তিন যুবকের বড় ভাই আমি। আত্মায় হরিহর হয়েও বিচ্ছিন্ন আমরা। কষ্টকর একটা চাপ এখানে অহর্ণিশি বুকে বিধে থাকে আমাদের। আমরা হাসি সবাইকে নিয়ে। কান্না করি নির্জনে। একা একা একা।

আমার বাবা নেই। মা রয়েছেন। আমার সন্তানের ভূমিকায়ও অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু আমি জীবনযুদ্ধে হারার অপরাধে আজীবন কারাদন্ড পেয়েছি। তাই সন্তান হতে পারিনি। এখানে চাপ নেই। আমার বাবা মা আমাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসায় পেলেছেন যে, আমি সন্তান না হতে পেরে যেন চাপ বা গ্লানিতে না ভুগি, এজন্য সবসময় আমাকে চাপমুক্ত রেখেছেন। আমার বিশ্রামের প্রয়োজন। মায়ের কাছে থাকা প্রয়োজন। আমি বাড়ি ফিরতে চাই। এখন ‘বাসায়’ আবদ্ধ আমি এক ইটপাথরের নগরে।

আমি একজন চরম অসামাজিক লোক। তাই সমাজের থেকে আমার কোনো চাপ নেই।

একজন মানুষ আমি ঠিক এরকমই।

শুভরাত্রি।

________________________________
#তিনি_একজন_উর্ধতন_কর্মকর্তা_অণুগল্প_৫২১
#মামুনের_অণুগল্প

পারফিউম_মামুনের_অণুগল্প

বন্ধ পেলেই ঘুরে বেড়ানো শিহাবের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। দিনভর। আজ যেমন গেলো জাহাংগীরনগর ভার্সিটিতে।

রঙ বে-রঙ এর পোশাকধারী নারী পুরুষ। রঙ কি শুধুই পরিচ্ছদে! মনে নয়? মন যাদের অন্য মনের কয়েদী, তাদের কথা বাদ। মুক্ত মনওয়ালাদের কথাই ভাবছে সে।

কলতানের সামনের রাস্তাটি ধরে হেঁটে আসছে। পথ চলতি আনন্দমমূখর মানুষের ভিতরের একজন মনে হচ্ছে নিজেকে।

বেশ তো! ভালোই লাগছে।

এক নারী ওকে পাশ কাঁটালো। রাস্তা জুড়ে তার ছড়িয়ে যাওয়া সৌরভ! অতিপরিচিত। শিহাবের দেহমন চনমনে আমেজে জেগে উঠলো। উষ্ণ রক্তস্রোত দুর্দম্য হয়ে উঠলো পলকের তরে। সময়ের ঘ্রাণে আপ্লুত হয়ে উঠে শিহাব হাসে নিজের মনে। পারু এই ‘পারফিউম’ ভালোবাসতো!

শিহাবকে নয়! বিষণ্ন হেসে ভাবে সে,
– পারুর একটা ‘পারফিউম’ ও হতে পারলাম না আমি!

এক বিষণ্ন সাঁঝে, এক ছায়ামানব পাশের এক অচেনা নারীর রেখে যাওয়া সৌরভের ট্রেইল ধরে, দূরের এক চেনা নারীর পরিচিত দেহমনের সুগন্ধি পেতে চায়!

হায় প্রেম! নিষ্ঠুর। বড্ড বেশী।।

_______________________
#পারফিউম_মামুনের_অণুগল্প_৫১৬

মামুনের_অণুগল্প_রঙ_ঢং

নিজেদের আঠারোতম বিবাহ বার্ষিকী কিভাবে উদযাপন করবে, ভেবে ভেবে দিশেহারা শিহাব। আগামি কাল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। আজ ঘন্টা দুই বাকি থাকতেই বাসায় চলে এলো। কণাকে বেশ সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।

নিজের ফ্ল্যাটে উঠার সময় সিঁড়ি দরোজায় একটু থামে। ঠোটের কোণে রহস্যময় হাসি ঝুলে থাকে। মনের ভিতরেও কেমন এক প্রফুল্লতা! আজকাল এই বাজারে কোটি টাকা দিয়েও কি একে কেনা যায়? তারপর ও কিভাবে যেন ওগুলি বিরাজ করে।

কণাকে যখন বলে,
– এবারে চলো ম্যারিজ ডে টা থার্টি ফাস্টে সবার সাথেই মিলে ‘সেলিব্রেট’ করি!

কণা শিহাবকে দেখে। ওর দৃষ্টিতে কাকচক্ষু জলের ছায়া দেখতে পায় শিহাব। আরো কি কি যেন রয়েছে। অবোধ্য কিছু অনুভবের মাঝে দাঁড়িয়ে শিহাব কণার উত্তরের প্রতীক্ষায়। হাল্কা পাতা ঝরার শব্দের সাথে একটু উষ্ণ কিছু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শিহাবের কাছে এমনই মনে হয়।

কণা কি দীর্ঘশ্বাস গোপন করার চেষ্টা করলো। নি:শ্বাস দূরত্ব দু’জনের মাঝে। কণার কথাগুলো যেন দূর নক্ষত্রের বুকের গভীর থেকে ভেসে এলো,
– আমার এতো রং লাগে নাই মনে। ঢং করার সময়ও নাই। কিছুই করা লাগবে না। তোমার অফিস আছে না?

ধাক্কা খায় শিহাব। ভিতরে বাহিরে। মনের গভীরে যে মন থাকে, সেখানেও। নিজের সব থেকে কাছের মানুষের কাছ থেকে, নিজেদের বিশেষ এই দিনটি নিয়ে- এমন নিঃস্পৃহ জবাব আশা করে নাই সে। একটু ব্যথিত হয়। কণাও শিহাবের মিইয়ে যাওয়া চেহারা দেখে। ভিতরে বাহিরে সে ও ভাংতে থাকে। অবশ্য এই আঠারো বছরে অনেক কিছু নিয়ে ভেংগে ভেংগে যদি মনটার অবশিষ্ট কিছু এখনো থেকে থাকে।

নিজের রুমে কাপড় পাল্টানোর সময় শিহাব কণার এই ব্যবহার নিয়ে ভাবে। বেশী কি দেরী হয়ে গেছে? আঠারো বছর তো কম দীর্ঘ নয়। কতটা দীর্ঘ? দূরত্ব হবার মত কি?

নিজের প্রিয় নারীর রহস্যময়তার অবগুন্ঠন অন্য সময়ে চোখে ধরা না পড়লেও, আজ স্ফটিক স্বচ্ছ হয়ে শিহাবের চোখে ধরা দেয়। পিছনের সময় ওর সামনে দৃশ্যমান হয়। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত শিহাব… একা কণা দিনের পর দিন, রাতের বুকে দীর্ঘ রাত, নি:সংগ ভোরে শিশিরের উপর কণার একার পদচিহ্ন… হাত ধরার ইচ্ছে হলেও কণার ধরবার মত একমাত্র হাতওয়ালা মানুষটি তখন নিজের হাত নিয়ে বড্ড ব্যস্ত!

তবে কণা একা ছিল সময়ের প্রয়োজনে। আজ যখন সেই প্রয়োজন মিটিয়ে শিহাব একটু সুস্থির- কর্পোরেট জীবন থেকে সময় বের করার মত যোগ্যতার অধিকারী- ধরবার মত হাত দুটি কেন যেন বড্ড নিস্পৃহ!

অনেক দেরী হয়ে গেলো.. জীবনের রং ঢং কি নির্দিষ্ট সময়কে ঘিরে করতে হয়?

জানা নেই শিহাবের।

অনেক দেরি হয়ে গেছে একজন শিহাবের.. একজন কণার কাছে আসতে। কিন্তু একেবারেই কি শেষ হয়ে গেছে? জীবন তো এখনো আছে। আর যতক্ষন জীবন- ততোক্ষণ রং ঢং করার সুযোগ।

মরে গেলে করবার মতো কি থাকে আর?

পায়ে পায়ে কণার কাছে আগায় শিহাব। নারীর হৃদয়! যতই ভাংগুক, আবার জোড়া লাগেই। ভালোবাসার প্রলেপ সকল দাগ মুছে ফেলে।

শিহাবের এই জিনিসটার কোনো কমতি নাই। ভালোবাসায় কানায় কানায় পুর্ণ এক পলাতক হৃদয়, রং ঢং করার জন্য ওর অভিমানী হৃদয়ের বড্ড কাছে চলে আসে…।।

#মামুনের_অণুগল্প_রঙ_ঢং

সংকোচ_মামুনের_অণুগল্প_৫১৭

একটা সময় আমার নাকটা নিয়ে আমার নিজেরই অভিযোগের অন্ত ছিল না। আয়নায় দেখে, ছবি তুলে কিংবা শান্ত পুকুরে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে কত কষ্ট পেয়েছি। বন্ধুরা ও বলতো, ‘তোর নাকটা বেশী লম্বা রে’।
বাসায় এসে আম্মাকে বলতাম, কেন আমার নাকটা এতো বড় হল? আরো একটু ছোট নাকওয়ালা বাবু আনলে কি হতো?

আমার বিয়ের বছরে বউকে যেদিন প্রথম দেখতে গেলাম (আমি দেখলাম না আমাকে দেখলো বুঝি নাই), সংকোচ হচ্ছিল সেই নাককে নিয়েই। এর আগে আম্মাকে বলেছিলাম, আমার নাককে প্লাস্টিক সার্জারী করে একটু ছোট করে নিতে চাই। আম্মা শুধু হেসেছিলেন…

একই রকম সংকোচ ছিল বড় চোখের জন্য, অনেকের ভাষায় ‘গরুর চোখ’। আর ছিপছিপে শরীরের জন্য কোনো ড্রেস ‘ইন’ করে পরতে পারতাম না। সবাই কি সুন্দর মাঞ্জা মেরে চলতো। আমি কোনোভাবেই সন্তষ্ট ছিলাম না নিজেকে নিয়ে। এর ভিতরে প্রেমে পড়ে গেলাম!! আমার বউকে দেখে। তখনো কথা বার্তা পাকা হয়নি। নিজেকে কীভাবে সুন্দর দেখানো যায় সেদিকে মন দিলাম…

আকদ হয়ে গেল।

৬ মাস পরে..
বিয়ের অনুষ্ঠান হলো। দিনের বেলা আমার কাজিন মেজর শরীফ এসে বলে, ‘তোকে কালো দেখা যাচ্ছে। চল একটু ফর্সা করে নিয়ে আসি।’ আরো দুই কাজিনের চাপাচাপিতে আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার ক্যাফে নেওয়াজের সাথের সেলুনে গেলাম। আমাকে ব্লিচ করে টারমারিক ক্রীম সহ আরো কি কি যেন মুখে লাগালো। কিন্তু গর্দভগুলো হলুদের সাথে কিসের যেন বিক্রিয়া করে ফেলায় আমার মুখের চামড়া পুড়িয়ে ফেললো। প্রচন্ড জ্বলে যাচ্ছিল…।

রাতের অনুষ্ঠান শেষে বউ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার মামী একবার স্টেজে এসে আমাকে দেখে বলেছিলেন যে আমাকে নাকি কালো দেখা যাচ্ছে। পরে ছবিতে দেখেছি। আসলেই কালো করে ফেলেছিলো।

বিয়ের পরে এক ফুরফুরে ভাললাগার বাসন্তী হাওয়ায় উড়ে চলছিলাম… বউকে নিয়ে। তখন বাবার হোটেলে… ‘আনন্দ কি আনন্দ এসে গেছে কোকাকোলা’ টাইপের ফুর্তি নিয়ে সারা চিটাগং শহর মাতিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার বাসা হালিশহর কে-ব্লকের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে… বউয়ের আব্বা-আম্মা তখন সিজিএস কলোনীতে থাকেন। আমার যত বন্ধু-বান্ধব সব সেই কলোনীতে। ওদের সাথে আনন্দে ফুরফুরে সময়ে ব্যস্ত থাকতাম।

বউ এসে ‘আমার মনে ফাগুন রাঙ্গালো’। আমার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বেশ-ভুষায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলো। সবার আগেই আমার গোঁফ গায়েব হয়ে গেলো … ইন করে মাঞ্জা দেয়া শিখলাম… প্যান্টের সাথে ম্যাচিং করে শার্ট পরা শুরু করলাম… আরও অনেক কিছু করা শিখলাম।

নিভৃতে আমার বউ আমাকে বলল আমার নাক এবং চোখ দুটোই নাকি ওর কাছে সব থেকে বেশী ভাল লাগে। 😀
আর আমি কিনা…।

১৮ বছর পর…
এখন ভুড়িটা এতো বেশী স্ফীত যে সেই বিয়ের আগের মতো আবার ইন ছাড়া চলা শুরু করেছি… আবার সংকোচ!

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

#সংকোচ_মামুনের_অণুগল্প_৫১৭

মামুনের_গল্প_ভালোবাসা_বর্ণহীন

[অণুগল্প লিখতে লিখতে এখন আর টানা পড়ে যাবার মত বড় গল্প লিখতে পারিনা। আর না পারতে পারতে লেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছি। নিচের গল্পটি অনেক আগের লেখা আমার। আবারও শেয়ার করলাম। ]

১.
পাহাড়ের (আসলে মাটির টিলা) যেখানটিতে আমি বসে আছি, তার চারিদিকে হাজারো অচেনা শব্দ এক সাথে ভেসে আসছে। কিন্তু তারপরও এক অভাবনীয় নৈঃশব্দ্য বিরাজ করছে। ঘরে ফেরা পাখীদের ডাক, বুনো প্রান্তরের লুক্কায়িত কীট-পতঙ্গের আওয়াজ-এ সবকিছুকে ছাপিয়ে সমুদ্রের গর্জন আর সামুদ্রিক বাতাস ঝাউবনের ভিতর দিয়ে যাবার শো শো শব্দ… আমার চেতনাকে ফ্রেমে বন্দী করে রেখেছে।
হীমছড়ির এই টিলাগুলি, আদিগন্ত বিস্তৃত ঐ সমুদ্র এবং ওর বেলাভূমি- এসবের সাথে আমার সেই ছেলেবেলা থেকে গভীর সম্পর্ক। এখানেই আমার জন্ম এবং স্কুল জীবনটা এখানেই কাটিয়েছি। কলেজ ও ভার্সিটির সময়টা চাটগাঁতে।

ওর গ্রামের বাড়ীও এই কাছে।
তবে ভার্সিটিতেই ওর সাথে পরিচয়। পরিচয় থেকে জানাশোনা, বন্ধুত্ব এবং… এবং প্রেম? আসলে একে প্রেম বলা যায় কিনা তাতে সন্দেহ আছে। ওকে বোঝাটাই খুব ‘টাফ’। ভীষণ ‘মুডি’ মেয়ে। চির-চঞ্চলা হরিনী যেন! মনের গতিবিধি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়। আগাম পুর্বাভাষ দেবার কোনো নিয়ম নেই।
এমন এক ‘ও’কে ভালবাসলাম।
নাম নাইবা জানালাম।
বললেও কি তোমরা চিনবে?

দু’বছর ধরে ওর সাথে ছায়ায়-কায়ায় মিলে মিশে আছি।
এখনো পর্যন্ত শুধু ওর ডান হাত ধরতে পেরেছি। তাও কয়েক মুহুর্তের জন্য। যখনই হাতে হাত রেখে কিছু আবেগী মুহুর্তকে স্মৃতির মণিকোঠায় ঠাই দেবার ইচ্ছে পোষণ করেছি, কোনো না কোনো এক অনিচ্ছাকৃত পূর্ব ভুলের ফিরিস্তি অতীতের রথে করে সে নিয়ে এসেছে। আর তারপর আমার হাতকে ‘ডিটেনশনে’ পাঠানো হয়েছে কিছুদিনের জন্য।

এরকম একজনকে নিয়ে আমার স্বপ্নের জাল বোনা হয়তো সেই কবেই বন্ধ হয়ে যেত। যদি না… যদি না নিজের ‘অপারগ দিল’ একটু বেশীই ওর জন্য কেমন দুর্বল হয়ে পড়ত। আর আমার সাথে ঝগড়ার সময়ে তীব্র উত্তেজনায় ওর নাকের নীচের বিন্দু বিন্দু জলকনা যা আলোকরশ্মির প্রতিফলনে আমার হার্টবীটকে আরো দ্রুততর করে দেয়। সামান্য চাহনি-ভ্রুকুটি অথবা রাগে চীৎকার করে আমাকে গালিগালাজের সাথে চিতার হিংস্রতায় নখের বিদীর্নকরণ… এসব কিছু মিলিয়েই আমি ওর জন্য পাগল!

ও যা করে আমি তাতেই মুগ্ধ হই!
কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও ওর মনের মুগ্ধতার দৃষ্টির ত্রি-সীমানায় নিজেকে কখনো দাঁড় করাতে পারি নাই! আসলে ওর ভালবাসার যোগ্যতার মাপকাঠিতে হয়তো আমি ফেল করেছি।
হয়ত কেন, অবশ্যই করেছি।

ফ্লাক্স থেকে এক ঢোক চা খেয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ আগে কোকের বোতলে লুকিয়ে থাকা রেন পুল্যাক কোম্পানির কফ সিরাপ অনেকটা খেয়েছি। পরে কয়েক কাপ দুধ চা আর সিগ্রেটে ভরা গাঁজা টানাতে সারা শরীরে চিনচিনে এক অসম ভাললাগার অনুভুতি! এজন্যই মনে হয়েছিল চেতনা ফ্রেমে বন্দী হয়ে আছে যেন।
গাঁজা সেবনের কথা এরকম খোলাখুলি বললাম বলে কি আমাকে খারাপ ভাবছ? এই জিনিসগুলি দেশে ঢুকছে কিভাবে? না পেলে তো আমি সেবন করতাম না। বলতে পারো- ‘তুমি না খেলেই তো এ জিনিস দেশে এলেও লাভ নেই।‘ হ্যা, তবে এগুলোকে প্রতিরোধ করার দায়িত্ব যাদেরকে দেয়া হয়েছে, আগে তাদের কাজ। আমারটা পরে। আর এর নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার জন্য দেখছ না, কেমন লোকালয় ছেড়ে এই এতো দূর নির্জন পাহাড়ের উপর বসে আছি। আইনকে সম্মান জানাচ্ছি। আইন… হাহ!

বেলাভূমিতে কয়েকজন উচ্ছল তরুন-তরুনী মন্থর হেঁটে হেঁটে জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাচ্ছে। অথচ আমি নিজে এই টিলার উপরে একজন ‘সলিটারি লাভার’ হয়ে ত্রি-ফলা নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছি। বুকের ভিতরের জমাট বাঁধা কিছু আক্ষেপকে উড়িয়ে নিয়ে দূর সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এলো সামুদ্রিক বাতাস। তবে ফিরতি পথে নিয়ে এলো আরো অনেক বেশী তরল কষ্টকে… যা শিরায় শিরায় রক্তের নাচনকে উদ্বেলিত করবে মুহুর্মুহু!

২.

হিটলারের নাৎসি সেনাদের মতো লাইন ধরে মার্চ করে চলেছে লাল কাঁকড়ার দল। সবার পিছনে সাদা শার্ট ও ব্লু জীনস পড়ে ওদের পিছু পিছু আরো একজন মুগ্ধ হয়ে অনুসরণ করছে। ছোট ছোট লাল রঙের এই কীটগুলো পুরো সমুদ্র সৈকতকে একেবারে লাল করে রেখেছে। সাদা ফেনার নীল সমুদ্রের পাড়ে চিকচিকে বালির উপরে চলন্ত লালের এই কম্বিনেশন!
‘ওয়াও’!
পড়ন্ত বিকেলের মোলায়েম রোদ বাতাসের ছোঁয়ায় আরো তাপ হারিয়ে শরীর-মন দুইকেই প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। মেয়েটি কাঁকড়াগুলোকে অনুসরণ করে অনেক দূরে চলে এসেছে। ওর মটর বাইকটি রাস্তার পাশে যেখানে রেখে এসেছে, সেটা এখান থেকে প্রায় চার পাঁচশ’ গজ তো হবেই। এই মেয়েটিই পাহাড়ের উপরে একা বসে থাকা সেই ‘সলিটারি লাভার’ বয় এর ‘লাভার গার্ল’।

সে এতটা সুন্দর… মোহনীয় এবং নরম যে সকলের পরম আরাধ্য! ওর উপরের ঠোঁটের সামান্য ওপরে একটি তিল… এই ‘বিউটি স্পটটি’ তাঁর চেহারাকে আরো আকর্ষনীয় করেছে। অন্যরা যখন তাঁকে দেখে, চোখ-ঠোঁট হয়ে তাঁদের দৃষ্টি ঐ তিলের উপরে নিবিষ্ট হয়। আর কেন জানি তাঁদের হৃদয়ের গোপন প্রকোষ্ঠে ওখানে কামড়ে দেবার দুষ্ট ইচ্ছেটা জেগে উঠে। যদি কোনোভাবে এই ‘লাভার গার্ল’ ওদের মনের খবর জানত। তবে একেবারে খবর করে ছেড়ে দিত। এমনই বেপরোয়া মেয়ে সে।

টেকনাফে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ করছে এমন একটি বেসরকারী সংস্থায় জব করে। নিজেই মটর বাইক ড্রাইভ করে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে। কক্সবাজারের মেয়ে সে। এই সাগর পাড়ের আলো-বাতাস ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং সকল প্রতিকূলতার ভিতর দিয়েই বড় হয়েছে। শখের বশে হলেও আন-আর্মড কম্ব্যাটে ব্ল্যাক বেল্টধারী। কালো দীঘল কোঁকড়ানো চুল আর কমনীয় মুখশ্রী বাদে আর সব কিছুই কেমন যেন রুক্ষতায় ভরা। ওকে এই মুহুর্তে দেখলে মনে হবে, সাদা আর নীলে আবৃতা এক কালোকেশী। লাল কাঁকড়ার পিছু ধেয়ে ধেয়ে অস্তগামী সুর্যের রক্তিম আভা হৃদয়ে ধারণে ব্যতিব্যস্ত এক সাগরকন্যা! যে কিনা আপাদমস্তক রুক্ষতার খোলসে নিজেকে ঢেকে রাখে… তবে খুব সুন্দর এবং সাগরসম ভালোবাসা নিয়ে এই খোলসের ভিতরেই একটি চমৎকার হৃদয় লুকিয়ে আছে যা কেউ জানতে পারে না।
রুক্ষ হৃদয়ের ভিতরে অন্য এক কোমল হৃদয়!
হৃদয় মাঝে আর এক হৃদয়!
সে জানতে দিতে ও চায় না কাউকে।
শুধুমাত্র একজনকে ছাড়া…
যে ঐ টিলাগুলোর যে কোনো একটির উপরে বসে নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। আর এই মুহুর্তে ঠিক ওকে নিয়েই ভাবছে। ভাবছে… চিন্তার জাল বুনছে। কিন্তু ওটা ঐ চিন্তার ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তার সামনে এলেই সে কেমন করে যেন বোবা প্রাণীতে পরিণত হয়। ইচ্ছে আছে কিন্তু সাহসে কুলায় না।

ফিরিতি পথ ধরে বাইকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ধীরে ধীরে ওর আর স্লথ গতিবেগের সেই লাল বাহিনীর মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ভাবে, সেও কি ‘লাভার বয়’ এর সাথে একটু বেশীই রুক্ষ ব্যবহার করছে না? ওদের মাঝের এই দেয়াল তো তাঁর নিজেরই তৈরী করা? সে কেন ‘ও’কে নিজের বেশী কাছে আসতে দিতে চায় না।
পরক্ষনেই চোয়াল দৃঢ় হয়।

না, ‘লাভার বয়’ ললিপপ টাইপের হোক তা সে চায় না। ওকে একজন সত্যিকারের পুরুষে রূপ দেবার জন্যই তো ওর এই খোলস ধারণ করা। না হলে প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে কোনো এক বৃষ্টির রাতে, বিছানায় জড় পদার্থের মত পড়ে থেকে ওর ও তো মন চায় ‘সে’ আসুক। এসে শুধু ডান হাত নয়, শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে ভালবাসার আগুন জ্বালিয়ে যাক!

নিজেকে ‘লাভার বয়’ এর হাতে স্বেচ্ছায় সমর্পণ করতে এক ভীরু পাখির মত অসহায় হয়ে অপেক্ষা করে সে। হৃদয়ের ভিতরে ঝড় বয়ে যায়… প্রতিটি রোমকূপ তৃষ্ণায় জেগে উঠে… একসময় অতৃপ্তির মাঝে লীন হতে হতে আবার সেগুলো নিস্তেজ হয়। এভাবেই রাত ভোর হয়… দিন থেকে সন্ধ্যা… রাত… আবার ভোর।
জীবন কেটে যায় পা পা করে।

বলাকারা ফিরে যাচ্ছে… বেলাশেষে ভানু ও নিজেকে অস্তগামী করাতে ব্যস্ত। এরই মাঝে রহস্যময় এক রাত নামবে। গৃবা উঁচু করে হেঁটে যাওয়া এক এলোকেশীর জীবনে সেটা নতুন কোনো কিছু এনে দিবে কি?

পাহাড়ের উপরে বসেই ‘লাভার বয়’ তাঁর ‘ও’কে বাইক চালিয়ে চলে যেতে দেখে। সামুদ্রিক বাতাসের উপরে তাঁর প্রচন্ড হিংসে হয় এই মুহুর্তে। ‘ও’র চুলগুলোকে নিয়ে ইচ্ছেমত খেলা করছে বাতাস! যা সে অনেক চেয়েও একটু ছুঁয়ে দেখতে পারেনি! মোবাইল হাতে নিয়ে ‘ও’র নাম্বারটি বের করে।
কিন্তু কল করা হয়না…
হয় না মনের না বলা কথাগুলো তাঁকে বলা।
যদিও প্রকৃতি আজ তাঁদের দুজনের জন্য সব আয়োজনই করে রেখেছিল!!

৩.

লাবনি পয়েন্টের সাথেই হোটেল কল্লোল। এর রিসেপশন থেকে বের হয়ে এলাম।
ছুটির দিনের এক অলস বিকেল।
‘ও’ ফোন করেছে। দেখা করতে যাচ্ছি। সাধারণত এমনটি কদাচিৎ হয়। আমার প্রয়োজনে আমিই ওকে ডাকি। ও ধরা দেয় না। দূরে দূরে থাকে। আজ নিজে যেচে আমাকে ডাকল!
‘তোমায় আমি ডেকেছিলেম ছুটির নিমন্ত্রণে’!!
ওর নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করা আমার পক্ষে কি সম্ভব?

চারিদিকে মোটামুটি ভীড়। এখন ‘সিজন’ না হলেও কক্সবাজার সারা বছরই ইদানিং জমজমাট থাকে। ফুচকার দোকানটি পার হয়ে যাবার সময় ছোট একটি পরিবার চোখে পড়ল। স্বামী- স্ত্রী এবং দু’টি বাচ্চা। বাচ্চা দুটি ‘ফ্রিসবি’ নিয়ে বালির উপরে দুরন্তপনায় ব্যস্ত। আর মা বাবা দুজন চোখে সীমাহীন মায়া নিয়ে তাই দেখছে। হৃদয়ের ভালোবাসা ওদের দৃষ্টি থেকে উপচে পড়ছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
আমার বুকের ভিতর একটু বেদনা জেগে উঠল।
এই বেদনার উৎস কি? বোঝার চেষ্টায় হাঁটতে হাঁটতে কখন যে মানুষের ভীড় ছাড়িয়ে চলে এলাম বুঝতে পারিনি। সমুদ্রের গর্জন এবং ঢেউ এর তীরে এসে ভেঙ্গে পড়া আর ভালবাসার নোনা স্বাদের বাতাস, আমাকে নেশাবিহীন অবস্থায়ই এক ঘোরের ভিতর নিয়ে গেলো।

আমার ফেভারিট কালারের শাড়ী পরা কেউ একজন তট রেখা ধরে একাকী হেঁটে চলেছে। এখনো অনেকটা দূরে। তাই দূর থেকে শুধু আকাশী রং দেখতে পাচ্ছি… এক নারী নীলাকাশের নীচে নীলাম্বরী হয়ে নীল জলের পটভুমিতে আঁকা ছবির মতো চোখে ধরা দিলো।
শুধু শুধু মন খারাপ হল। আজকাল কঠিন সৌন্দর্য আমাকে বেদনাক্রান্ত করে তোলে। ঐ নারী যদি আমার “ও’ হতো! এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এরকম ড্রেসে সে কখনোই এই পাবলিক প্লেসে আসবে না। ওর চিরাচরিত সেই নীল জিন্স ও সাদা শার্ট এর বাইরে সে যাবে না।
একটা নাম না জানা পাখীর কর্কশ চীৎকারে বাস্তবে ফিরে এলাম।
এবং মেয়েটিকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম… আরো একটু কাছে আসতেই বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ‘ও’কে আবিষ্কার করলাম। সেই তিল… চেনা প্রিয় মুখ… যা আমাকে রাতের পর রাত জাগিয়ে রেখেছে!… দিনের অসহ্য ঘন্টাগুলোতে বেদনাকে জাগিয়ে তুলেছে! হাসিমুখে এগিয়ে আসা আমার প্রিয়তমা কি এক রহস্য মদিরতায় ভিতরে ভিতরে জ্বলে উঠার অপেক্ষায়।
আমার বিস্ময়টুকু সে বেশ উপভোগ করল। নীরবে… কথা না বলে ঝাউ গাছগুলোর একটু সামনে বালিয়াড়ির মতো দেখে সেখানে বসলাম। দুজনে… পাশাপাশি। এরকম রোমান্টিক পরিবেশে মনে হল ‘ও’কে নিয়ে এই প্রথম। আগেও ওকে নিয়ে এখানে অনেক হেঁটেছি। কিন্তু সেই ‘ও’ আর আজকের ‘ও’র মাঝে অনেক ব্যবধান মনে হচ্ছে।

চুপচাপ অনেকক্ষণ কাটালাম। সমদ্রের ঢেউ এবং দূরে যতদূর চোখ যায় আমরা অর্থহীন দেখার চেষ্টায় সময়ক্ষেপন করলাম। মাঝে মাঝে কয়েকবার চোরা দৃষ্টিতে ওকে দেখছিলাম। সে ও মনে হয় এটা অনুভব করল। বাতাসে আমার এবং ওর চুলগুলো নিয়ন্ত্রণহীন উড়ছিল। কয়েকবার ওর অবাধ্য চুল আমার মুখের উপর হাল্কাভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলো। ও কখনো পারফিউম ইউজ করেনা। ও নিজেই তো এক তাজা পারফিউম! আমার মন-প্রাণকে সতেজ করে দেয়া ভালবাসার আবেশ এনে দেয়া সুগন্ধি এক নারী! হ্যা আজ ওকে বড্ড বেশী নারী মনে হচ্ছে। এটাকি ওর ‘গেটআপ’ পরিবর্তন করাতে? না এর ভিতরে আরো গভীর কিছু একটা রয়ে গেছে।
– এভাবে চোরের মতো দেখছ কেন?
ওর কথায় নীলজলরাশির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু কয়েক পলক তাকিয়েই ওর ধারালো সৌন্দর্য সহ্য করতে না পেরে দৃষ্টি আপনা থেকে নত হয়ে এলো। আসলে ও কি বলেছে আমার কানে তা কিছুই যায়নি। আমি শুধু কিছু শব্দ শুনলাম। তাই আবারও আমাকে ওর বলতে হল,
– এদিকে তাকাও, চোরের মত আমাকে দেখছিলে কেন?
: চোর না হয়ে উপায় আছে? তুমি কি কখনো ভালভাবে দেখতে দাও?

আমার এই কথায় কিছুটা অবাক হল সে, ওর চোখে বেদনা ও কি জেগে উঠল একপলকের জন্য? বসা থেকে সোজা উঠে দাঁড়ালো সে। আমি একটু ভয় পেলাম। এখন কি জানি কি করে বসে। ওর আকাশী শাড়ী ওকে সম্পুর্ণ ঢেকে দিতে পারেনি। পাতলা শাড়ী ওর সুন্দর নাভীকে একটা পর্দার আড়াল থেকে দেখার মত করে আমার চোখকে দেখালো। আমি মুগ্ধতার গলা টিপে ধরে উঠে দাঁড়ালাম। ওর সাদা ব্লাউজের নীচে থাকা হৃদয় মনে হয় দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছিল। বুকের উঠানামা দেখেই আমি টের পেলাম। আমার নিজেরও কি তা হচ্ছিল না! আমার চোখে ওর পুর্ণ দৃষ্টি মেলে বলল,
– আমি বিড়াল প্রেমিক পছন্দ করি না। আমার সামনে কেউ সারাজীবন মিউ মিউ করুক সেটাও চাইনা।
: বুঝলাম না?
– ভালোবাস আমাকে?
একটা ঢোক গিলে বললাম,
: হ্যা!
– আমাকে ছুঁতে চাও? আদর করতে চাও?

কি বলব আমি? আমি তো সেটাই চাই… তবে এভাবে না। মানে ও আমাকে এই কথাটা এভাবে সরাসরি বলবে তা ভাবিনি কখনো। ভালবাসার একটা পর্যায়ে শরীর কেন চলে আসে? তবে কি আমার ভালোবাসা শুধুই শরীরকেন্দ্রিক? হঠাৎ একটা তীব্র না পাওয়ার বেদনা কোথা থেকে এসে আমাকে টলিয়ে দিয়ে যেতে চাইলো। আমি এক মুহুর্তের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। আমি কে, কোথায় আছি তা বিস্মৃত হলাম। আমার নীরবতাকে সে আমার দুর্বলতা ভেবে বসল। কাঁধের উপর থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে দিলো। আমার অবাক চোখের সামনে আমার হাতটি ধরে ওর বুকের ওপর ধরে রেখে বললো,
-নাও, যা ইচ্ছে তাই করো।

আমি একটা বিস্ফোরনোম্মুখ আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হলাম। মুহুর্তের ভিতরে মনে হল ফেটে চৌচির হয়ে যাব। একটা অপার্থিব অনুভুতি আমাকে তীব্রভাবে ঊত্তপ্ত করে… আমি আমার ভিতরে নতুন এক ‘আমার’ উপস্থিতি টের পাই। আশ্চর্যজনক ভাবে আমি ক্রমে শীতল হই… আমার ভিতরের জড়তা,নমনীয়তা ঝেড়ে ফেলে আমি বিড়াল থেকে চিতায় পরিণত হলাম। ওর শরীরের নরম ও কোমল আগুন আমাকে পোড়াতে পারেনা। আমার মনের ভিতরে কোনো সাপ জাগে না। আমি হাত সরিয়ে নেই আলতো করে।
দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকি।
সময় স্থির… সবকিছু নীরব! ভালবাসার স্বরূপ উদঘাটনে ব্যস্ত দুই হৃদয় হঠাৎ করে নিজেদেরকে ফিরে পায়। ওর ঠোঁটের তিল আমাকে আকর্ষণ করে। আমি দুহাতে ওর মুখ ধরে নিজের কাছে টানি… ও চোখ বন্ধ করে অতৃপ্ত ঠোঁট একটু মেলে ধরে। কিন্তু আমি ওর কপালে হাল্কা করে চুমো দেই। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়।
একটু হাসে।
আমি ওর কোমর ধরে পাশাপাশি হাঁটতে থাকি। নিজেকে খুব নির্ভার মনে হয়। ও যখন ওর বুকে আমার হাত তুলে নিয়ে গেলো, আমি ঠিক সেই সময়েই নিজের ভিতর থেকে নিজকে উত্তরণে ব্যস্ত ছিলাম। আমার সুনীলের সেই কবিতাটির ঐ লাইনগুলো মনে পড়ছিল,

… বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে
বরুনা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!…

আজ আমি আমার বরুনার বুকে মাংসের গন্ধের পরিবর্তে সেই আতরের গন্ধই পেয়েছি! আজ সে কোনো নারী না হয়ে আমার ‘ও’ হয়েই আমার কাছে ধরা দিয়েছে। সত্যিকারের শরীরহীন ভালবাসার জন্যই এটা সম্ভব হলো। জীবনটা ছেলেখেলা নয়। দুটো হাত এক হবার আগে সারাজীবন হাতে হাত রেখে চলার মতো ভালোবাসা অর্জন করে নিতে হয়। অনাগত দিনগুলোর জন্য একে অপরের প্রতি আত্মবিশ্বাস- দুজনের পারষ্পরিক বোঝাপড়া আগেই বুঝে নিয়ে তবেই পথ চলার শুরুটা করা ভালো।

এই গল্প আমার আর ‘ও’র। আমাদের সবার।
আমরা যারা সংসার নামের এই রঙ্গমঞ্চে ‘আমি’ এবং ‘তুমি’র ভুমিকায় অভিনয় করছি তাঁদের সবার।

শেষ বিকেলের আলোয় বেলাভুমিতে দুটো ছায়া হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অনেক দীর্ঘ সেই ছায়া! একটু আগে ভালবাসা নামের অদৃশ্য এক শক্তি ওদেরকে অনেক কাছে এনে দিয়েছে। এতোটা কাছে মনে হয়না কখনো আর ওরা দূরে চলে যেতে পারবে। লাল কাঁকড়াদের ফেলে আসা ট্রেইল ধরে ওরা দুজন জীবনকে রাঙানোর জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রঙিন এই ভূবনে টিকে থাকতে অনেক রঙের প্রয়োজন।

আচ্ছা ভালবাসার রং কি?

#মামুনের_গল্প_ভালোবাসা_বর্ণহীন।

কোথায়_তুমি_মামুনের_অণুগল্প

{}
নতুন বছরে বাবার দেয়া নতুন ডাইরি খুলে প্রথম পাতায় বাবার লেখাগুলো পড়ে ফোরে পড়ুয়া বাবুটার ছোট্ট হৃদয়ের বাবু চিন্তাগুলো এলোমেলো ধাপ হেলায় অতিক্রম করে তাকে হাসায়!

‘বাবাটা যে কি! ডাইরিতে পড়ালেখার কথা না লিখে গল্প- কবিতা লিখতে বলেছে.. তাও লাল বল পেন দিয়ে :) … আবার তিনচুলওয়ালা একটা বাবুও একে দিয়েছে .. বাবাও কি একটা বাবু?’

বাবুটা কি কখনো জানবে ওর বাবাও তাঁর আম্মুটার একটা বাবু ছিল? ছিল তাঁর মায়ের আঁচলের নরম আদর? ওর বাবু মনটাকে এই নগরজীবনে মাটি এনে দিতে দিতে কতদিন এই বুড়ো বাবুটা সেই আঁচলের নরম রোদগুলোর কোমল ছায়ায় মন জুড়াতে পারে না! কখনো কি বুঝবে এই বিবর্ণ বাবার কায়া হারানোর ইতিহাস?

#দুই_বাবু_মামুনের_অণুগল্প_৫১৩

অন্য সুর

{}
শিহাব নিজের বউয়ের সাথে কথার এক পর্যায়ে ওর প্রকাশিত বই সংশ্লিষ্ট ভালোবাসার একজনের সাথে গতরাতের কৃত কষ্ট দেওয়া প্রসংগটি তুললে বউ বলে,
– তুমি তো পারো কেবলি কষ্ট দিতে সবাইকে! কেন এমন কর?

মূহুর্তে শিহাব এক আদিগন্ত ভাবনা-চিন্তায় প্রগলভ হয়.. কষ্ট পায়.. নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয় ওর। আজকাল কেন সবসময় ভুলগুলি বড্ড প্রকট হয়?

একই সময়ে সাথে থাকা বউটির কথার ভিতরের অন্য একটি সুরও আজ বড্ড নগ্ন হয়ে সামনে আসে, ‘পারো কেবলি কষ্ট দিতে সবাইকে’। বউও কি সেই সবার ভিতরে?

#অন্য_সুর_মামুনের_অণুগল্প_৫১৪

{}
জীবনের প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে সেই আয়তাকার ফ্রোজেন জীবনে একা শিহাব। কাছের মানুষ কাছে থেকে, দূরের জনেরা দূরে থেকে, সবাই যার যার মতো ভালোবাসা জানিয়েছে।

অথচ কাছে-দূরের অনুভবে ভালোবাসাগুলো সব চুরি করে নিয়ে, সাগরসম ভালোবাসায় পূর্ণ কেউ একজন, এই মাহেন্দ্রক্ষণেও বরাবরের মত নিশ্চুপ থাকবে ভাবে নাই সে।

‘গোপনে আর কত কষ্ট দেবে.. জানি তুমি আছ.. আশে পাশে.. মাঝরাতের মত নিশ্চুপ.. কিছুই কি বলবে না?’

শিহাবের হৃদয় চিরে হাহাকারগুলো রাতের আঁধারকে বিদীর্ণ করে জানতে চায়,
– কোথায় তুমি?

#কোথায়_তুমি_মামুনের_অণুগল্প_৫১৫

মামুনের_অণুগল্পঃ এক_পলকের_আশায়

মেয়েটি আজও রিক্সা থেকে নেমে এল, বাতাসে ছিল ভেজা কদমের মৃদু মাতাল গন্ধ!

সে মনে মনে ভাবল, ‘মানব মন বড়ই বিচিত্র.. অনেক কিছুই সেখানে থাকতে পারে, যা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না।’

এই জায়গায় কী রয়েছে তা একমাত্র সে নিজেই জানে, এখানেই সে প্রথমবার নারী হয়েছিল.. এই ফুল গাছ আর ঐ লতানো ঝোপ এক জোড়া মানুষের আদিম ভালবাসায় বিস্মিত হতে হতে, পরের জনমে মানুষ হবার প্রার্থনায় আকুল হয়েছিল।।

#মামুনের_অণুগল্প_৫০১_তাঁর_জন্মদিন

★★
সেদিন ছিল মেঘে ঢাকা এক বিষণ্ন বিকাল। ক্যাম্পাসের জারুলতলায় আমি আর মিলি। সময় বয়ে চলে.. ধীরে ধীরে সন্ধ্যা হয়। আমি উঠতে চাইছিলাম না। মিলির তাড়ায় উঠতে হল।

দু’জনে হাত ধরে পিচের রাস্তায় হেঁটে চলেছি। হৃদয়ে ভাললাগার আসা যাওয়ায় আজ আর কোনো বাঁধা নেই। বর্ডার ফ্রি আজ। আমি থেমে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,
– কেন যে সন্ধ্যা হয়? বিকেলগুলি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না!
– কেন, সন্ধ্যা হলে কি তুমি খুশী নও?
– না, সন্ধ্যা হলেই সেই মেসের জীবনের শুরু। ওখানে ফিরে যেতে ভাল লাগে না আমার।
– মেস জীবন কি খুবই কষ্টের?
– হ্যা। যখন আঁধার নামে, মেসের দরজা আমার জন্য উন্মুক্ত হয়। রাত আমার জন্য আনন্দময় নয়। কাঠের চৌকি আর স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ.. ছারপোকারা আমাকে কুরে কুরে খায়। রাতের অন্ধকারে ইঁদুর দৌড়ে যায়। আমি ইঁদুরের শরীরের ঘ্রাণ পাই। অন্য রুমমেটদের নাক ডাকার শব্দে আমার ঘুম আসে না। এক টুকরা বেলকনিতে গিয়ে সারা রাত পায়চারী করি। এবার বল, সন্ধ্যা আমার জন্য আনন্দময়?

মিলি থেমে দাঁড়িয়ে আছে। আমার হাত ধরা.. ওর দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে। ধীরে ধীরে সে আমার আরো কাছে আসে। এতটা কাছে যে আমাদের দু’জনের নাকে নাক লেগে যায়! জীবনে এই প্রথম কেউ আমার ঠোঁটে তার ঠোট ছোঁয়ায়!! আমি সাড়া দিতে বাধ্য হই!!!
সেদিন ছিল ভ্যালেন্টাইনস ডে!

আর কোনো ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে মিলি আমার সাথে ছিল না। ওটাই ছিল আমাদের লাস্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে!

এখনো প্রতিটি ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে আমি সেই জারুলতলায় যাই.. এক পলকের আশায়!

আজো সেখানে অবস্থানকালে আমি অনুভব করি, এক নারী আমার ঠোঁটে শত সহস্রবার ভালবাসার চুম্বনলিপি এঁকে যাচ্ছে।

মিলি কোথায় এখন?

_______________________________
#মামুনের_অণুগল্প_৫০২_এক_পলকের_আশায়

মামুনের_অণুগল্পঃ চলো_না_ঘুরে_আসি

প্রায় দুই যুগ ধরে আমি একা পথ চলতে পারি না। নিঃসংগ পথ চলায় আমার আনন্দ নেই। আর ফেলে আসা যে সময়ের কথা বললাম, তখন বউয়ের হাত ধরে হাঁটার তীব্র আনন্দ রোগে ভুগছিলাম আমি।

যদিও এই রোগটি দান করে বিরল সুখের অনুভব, যারা ওভাবে ভাবেন, উপলব্ধি করছেন। আমিও ঐ ‘বিরল শ্রেণীর তীব্র আনন্দ উপভোগকারীদের’ একজন বলে দাবী করতে পারি।

প্রিয় মানুষের হাত ধরে পথ চলায় অনেক বিড়ম্বনাও আছে। সহজে এটা সবার পাওয়া হয় না। সবচেয়ে আসল বিষয়টি হলো, একজন মানুষ ‘প্রিয় হয়ে ওঠা’। আর এই হওয়াটা এক পক্ষের না। ‘প্রিয়’ শব্দটি ন্যূন্যতম ‘একাধিক’ পক্ষের সাথে জড়িত।

একটু জ্ঞান দেবার চেষ্টা করলাম বলে কি মনে হচ্ছে? ওরকম মনে এলে ভুল ভাবছেন ভেবে নিন।

আমার প্রিয় মানুষ একজন নারী। নারীর মন নাকি শত সহস্র বছরের সাধনার ধন। আমাদের গড় আয়ু কত হবে? ৫৫/৬০…? এতো সময় নষ্ট করে মনের খোঁজ না নিয়ে, অনেক চিন্তা করে ওদের হাত ধরে জীবনের বাকী পথটা পাড়ি দেবার কথা ভাবলাম। হেঁটে হেঁটেই মনে প্রবেশের রাস্তা পাওয়াই যাবে। তাই হাঁটা শুরু করলাম।

আমার প্রিয় মানুষের সাথে পথ চলার প্রথমদিকে, আমার কাছে ওর হাতের আঙ্গুলের সাথে আমার হাতের ছুঁয়ে দেয়াটা, অনেক বিরাট পাওয়া মনে হতো! ঐ সময়ে, আমাদের হাতের আংগুলেরা কীভাবে যেন একে অপরকে কাছে টেনে নিতো। মনে হতো যেন বিশ্বজয় করে এসেছি!

এরপর বিশ্বজয় করে করে কীভাবে যেন বছরগুলি ঘুরে গেলো। টের পেলাম না। শুভ্র কেশের উপস্থিতি যদিও অনেক বেলা হবার জানান দিচ্ছিল, ওদিকে লক্ষ্য করার সময় ছিলো না। বেপরোয়া পথ চলায় মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম।

পার করা সময়গুলিতে, নিরবচ্ছিন্ন তাঁর সাথে থাকতে পারিনি। ‘চাকুরি এবং অন্যান্য’ কারণে’ মেয়াদী বিচ্ছিন্নতা’ কাজ করেছে। চাকুরিকালীন ভিন্ন শহরে বসবাস করায় হাত ধরতে পারিনি। ঐ সময়ে বৃহস্পতিবার রাতটা শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যেত… শুক্রবারটা ঘোড়ার পিঠে করে চলে গিয়ে রাত সাড়ে চারটায় জেগে ওঠার অ্যালার্ম বাজিয়ে আমাকে বউয়ের থেকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিত। পৌনঃপুনিক এভাবে সপ্তাহগুলো কেটে গেছে.. অনেক বছর।

তবে ঐ একদিনের শুক্রবারটায়ও হাত ধরার সুযোগটা এক আধবার এসে যেত। যখন ওকে নিয়ে বাসা থেকে কোথায়ও বের হতাম, তখন। দু’জন যখন রাস্তাটা পার হতে যেতাম, পাশাপাশি দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ই বউ আমার হাত পরম নির্ভরতায় ধরে ফেলতো। আমাকে কিছু বলা লাগত না যে ‘হাত ধরো’, কিংবা সে একবার তাকিয়েও দেখতো না আমার হাতটা কোথায় আছে। জাস্ট একবারেই ধরে ফেলতো…।

এখনো সুযোগটা আসছে। ওকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে কিংবা কোনো ‘টেস্ট’ করাতে যেতে হবে, এসব উপলক্ষ্যে। বাকী সময়টা শুয়ে থাকতে হয় তাকে। রাস্তাটা তো সেই একই আছে। পার হবার ব্যাপারটিও প্রতিবারের মতো একইরকম। তবে এবার সে ধরার আগেই আমি খুব সাবধানে ওর হাতটা দেখে নিয়ে ধরি।

আমার এখনকার এবং আগেকার – এই দুই সময়ের ধরার অনুভবের তারতম্য বউ বুঝে কি? আমি নিজেও কি অনুভব করি? কতটুকু? অক্ষরে প্রকাশ করতে পারবো?

ভালোবাসাগুলি কোথায় ছিলো? নিজেদেরকে এখন এত তীব্রভাবে কেন আমাকে অনুভব করায়? এতো ভালো লাগছে কেন ওকে?

অনেক ভালোবাসি… তাই?

মামুনের_অণুগল্পঃ ব্যাপক_বিনোদন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিনোদন! ফরম পূরণে ব্যর্থতায় মনোনয়ন ফরম বাতিল। উত্তাল যোগাযোগ মাধ্যম। এ নিয়ে পোষ্টের ছড়াছড়ি। গণনা মাধ্যমগুলিও পিছিয়ে নেই এসংক্রান্ত খবর প্রকাশে।

ক্ষমতাসীন সমর্থকদের হাসিমুখের মন্তব্য, ‘সঠিকভাবে পূরণে ব্যর্থ! এরাই ভবিষ্যৎ আইনপ্রণেতা? হাস্যকর ভুল, পড়তে জানেনা নাকি?’

বিরোধীদের ভ্রুকুঁঞ্চিত চেহারায় ক্রোধ, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যে কতটুকু লেভেল বুঝা গেলো। নীলনকশা? এজন্যই তো মনোনয়ন বাতিল।’

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। কে সঠিক?

এক ওভারব্রিজের নিচে, চা’র কাপ হাতে, একা একা ভাবে শিহাব। নির্বাচন এলেই বিনোদন। সরকারি-বিরোধী উভয়ে শিবির থেকেই আমজনতার জন্য এটা উপহার। অন্যান্য অনেক কিছুর মতো বাংগালী ভাঁড়ামিতেও সিদ্ধহস্ত।

পান মুখে ছাগলা দাড়ি চা’র দোকানদারের স্বগতোক্তি,
– নির্বাচনে টাহার ছড়াছড়ি। হ্যাতেগো পকেট ভারী। মোরা সাধারণ মানু, প্যাডের ক্ষুধায় মরি।

চা’র কাপ রেখে বিল মেটায় শিহাব। যাবার আগে বলে,
– মরাই পছন্দ তোদের। মরা আর মারা খাওয়া, এই দুইয়ের বাইরে কখনও ভাবতে শিখেছিস?

অবাক চা’র দোকানদার! নির্লিপ্ত চেয়ে রয় চলে যাওয়া শিহাবের পিঠের দিকে। কায়া আর ছায়া। কে বড়? লম্বা পিচের রাস্তায়, এক মধ্য দুপুরে, ছায়ারা ক্রমশঃ বিস্তৃত হয়।

ক্ষুদ্রতর কায়াদের বুকে জড়িয়ে চলা নতজানু এ এক বিধস্ত জনপদ। যেখানে প্রতি পাঁচ বছর শেষ হলেই আলো আঁধারের বুকে লুকায়। এরপর ক্রমশঃ ম্লান হতে হতে একসময় মিলিয়ে যায় নতুন করে জ্বলে ওঠবার আশায়।

দূর থেকে হুজুরদের মিছিল আসতে দেখে শিহাব। রাজপথ জুড়ে উত্তাল স্রোতের মতো এগিয়ে আসছে। তাবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হলো সেদিন, একজন নাকি মারাও গেছে। কে যেন বললো, ‘নির্বাচনের এই সময় হুজুরদের এই এক্টিভিটিজ ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট।’

ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট হোক আর যাইহোক, শিহাবের কাছে হুজুরদের এই মুভমেন্টও, নতজানু বাংগালী জীবনে বিনোদনের উপকরণ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

________________________
#মামুনের_অণুগল্প_ব্যাপক_বিনোদন

হারিয়ে_গেছে_অণুগল্প_৫০৭

ফজরের আজান শেষ। চোখ খোলে কণা। ডানে তাকায়। দেখে, শিহাব নেই। শূণ্য বিছানা। তারপরও ছুঁয়ে দেয়। শিহাবের জায়গাটায়। বেশ উষ্ণ। এইমাত্র উঠল বোধহয়।

সময় কেটে যায়…

পূবের জানালায়। কারও ছায়া পড়ে। সেদিকে তাকায়। ভেজা চুলের শিহাব। চা’র কাপ হাতে। জগিং শেষ। আজকাল এটাই রুটিন। সাথে টুকটাক কাজ। টেক কেয়ার? নাকি ‘শো-অফ’?

শিহাবকে দূর্বোধ্য লাগে। কণার কাছে আজকাল।

দূর্বোধ্য মানুষটা সামনে। ভূবন ভোলানো হাসি! মুগ্ধ হয় কণা। সময় গড়ায়। মুগ্ধতা বাড়ে। একসময়। দূর্বোধ্যতা মিলিয়ে যায়। শিহাব সহজ হয়। এভাবেই কাটছে জীবন। কোমলে কঠোরে মিলানো। দূর্বোধ্য শহুরে জীবন।

কণার নিজের বিছানায়। মন খারাপের সকালবেলায়। হঠাৎ উপলব্ধি আসে,
– শিহাব!
– বড্ড ভালবাসতো আমায়!

‘এখন বাসে না?’ মন প্রশ্ন করে। নিশ্চুপ কণা জানায়,
– জানি না।

স্ক্যালপেলের তীক্ষ্ণ অগ্রভাগ। শিহাবের হৃদয় চেরে। এরপর খুঁজতে থাকে,
– কোথায়?
– ভালোবাসাগুলো গেলো কোথায়? :(

______________________
#মামুনের_অণুগল্প
#হারিয়ে_গেছে_অণুগল্প_৫০৭

যাও_সুখের_সন্ধানে_ধাও_মামুনের_অণুগল্প

পশ্চিম আকাশ লাল। আবির ছড়ানো আয়তাকার কোমল ‘দৃষ্টিসুখপ্রদ’ ডিসপ্লে’ (Display)। নির্ণিমেশ সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়, এরকম এক সময়ে বিশাল ‘সেন্ট্রাল ফিল্ডের’ এক টুকরা সবুজে বসে আছে সে। একা। কথা বলছে। একার সাথে একা।

প্রকৃতির এই সময়ের ‘কালার কম্বিনেশন’টা কেমন ‘হ্যালুসিনেটেড’! শিহাবকেও উদ্ভ্রান্ত করছে। ড্রাগস বা উত্তেজক কিছু গ্রহন করলে এই ‘উন্মাদনা’ আসে সাধারণত। তবে এই মুহুর্তে ড্রাগ বা মাদক ছাড়াই শিহাবের ‘চিন্তা জট’ পাকিয়েছে।

নির্বাচন। এবারে বেশ আমেজ আছে। উৎসবমূখর। অনুভব করা যায়। শিহাব অনুভব করে। ইদানিং যা দেখে, অনুভবের পথ ধরে সেটা সামনে এসে দাঁড়ায়। চলে অনুভবের ভাংগাচুরা। এভাবেই অনুভূতি রুপ লাভ করে।

অনুভবের ভাংগাচুরা কিভাবে ঘটে? এটা ‘ভিশন’ (Vision) এর সাথে সম্পৃক্ত। বাইরের এবং ভিতরের চোখ দিয়ে একইসাথে দেখবার সময় চলে বিশ্লেষণ। এটাই ভাংগাচুরা।

শিহাবের বসবাসের এলাকায় নানা বর্ণ-পেশার, ভিন্ন মানসিকতার, ইটপাথরের নগরজীবনে অভ্যস্ত এবং অনভ্যস্ত মানুষ। এখানে সবাই সবাইকে অন্তত দেখে। কিন্তু কতটুকু অনুভব করে সেটা কে ভাবে?

নির্বাচনকে ঘিরে এই মানুষগুলি কে কিভাবে কি ভাবে? অবাক হয় শিহাব যখন দেখে, এদের ভিতর অনেকেই গিরগিটির মত রঙ বদলায়। নিজেকে মুহুর্তেই অপর মেরুতে দাঁড় করানোয় বেশ ‘উস্তাদ’। তবে ভয়াবহ ব্যাপারটি হলো, নিজের ন্যুণতম নৈতিকতার ধার না ধারা এই মানুষগুলির লাজশরমেরও বালাই নেই। নির্বিকার মুখ দেখিয়ে যাচ্ছে। নেই কোনো দৃশ্যমান মুখোশও। তবে তাদের অদৃশ্য মুখোশগুলি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। ফ্যাশন সচেতন মুখোশসমৃদ্ধ মানবকূল।

শিহাব দেখতে পেলো, মনোনয়ন ঘোষণার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত উত্তর মেরুতে অবস্থানরত সমর্থকদের অনেকেই, ঘোষণা পরবর্তী সময়েই দক্ষিণ মেরুতে দাঁড়িয়ে হাসছে। নির্লজ্জ। লজ্জাও লাগে না। পল্টিপ্রবণ মন বলে কথা। আর এতদিন যার চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করেছে, মুহুর্তেই সেই লোক ফেরেশতা হয়ে যায় এদের কাছে! চাটুকারিতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন কেউ এদের কাছ থেকে শিখতে পারবে।

ভাবছিলো মানুষের পল্টি দেয়ার প্রবণতা নিয়ে। অন্যভাবে বললে একে ‘ডিগবাজী খাওয়া’ কিংবা নিজের মতের উপর অটল না থাকা- মোটকথা নীতির পরিবর্তন করা। আমাদের ভিতরের অস্থিরতার কারণে এই নীতি মুহুর্তে মুহুর্তে পালটে যায়। যদিও প্রকৃতিগত ভাবেই মানুষ অস্থির, তবে এর ভিতরেও অনেক সুস্থিরতা থাকে। নাহলে মানুষ হওয়া যায় না।

এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই রাজনীতির চর্চাটা বেশী হচ্ছে। দল মনোনয়ন দেবার আগেই, ফেসবুকে মনোনয়নের খবর এসে যায়। আর অধিক উৎসাহী কিছু গণমাধ্যম তা ফলাও করে প্রচার করে। শেষে দেখা যায়, দল ভিন্ন আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। কারও কথার সাথেই কারও ন্যুণতম মিল নেই। সমাজটা চলছে যেন হাওয়ার উপরে।

মুখোশধারী মানুষের এসব কর্মকান্ড দেখে দেখে, সম্পূর্ণ উলংগ হয়ে মহাখালি রেল লাইন ধরে শিহাবের মাঝে মাঝে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। অসভ্য এক সমাজে পোষাক পরার কোনো প্রয়োজন নেই। অধিকাংশই পশুমানব হয়ে জীবন পার করছে।

তবে এভাবে হেঁটে যেতেও সমস্যা। পোষাক পরিহিত পশুমানবদের একদল, উলংগ শিহাবকে দেখে হয় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকবে। নাহয় হাসবে, টিটকারি মারবে এবং এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ভুলে যাবে। তবে শিহাবের পরিবর্তে বিনা কাপড়ে ওর জায়গায় কোনো নারী হেঁটে গেলে? আগ্রহের আর কমতি থাকবে না।

বং উপত্যকায় নির্লিপ্ত থাকার অভিনয়ে পারদর্শী একদল কামুক যান্ত্রিক পশুমানব, তাদের মন ও মননে বেঈমানী, চাটার স্বভাব, পল্টিবাজী ইত্যকার বদগুনে সমৃদ্ধ হয়ে নেতৃত্বের আসনে বসার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। আর নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে চলে এদের প্রতিস্থাপন পর্ব। সেখানে ভিতরের মানুষগুলির কদর্যতা একই থাকলেও, বাইরের পোষাক এবং প্রতীকের ভিন্নতায় আমজনতা তৃপ্তি লাভ করে।

এই উপত্যকায় বড্ড আবেগের ছড়াছড়ি। এখানে আবেগে মেখে মেখে, নির্দিষ্ট মেয়াদী মারা খেতে খেতে নাভিঃশ্বাস ওঠে আমজনতার। তারপরও খুব খুশী তারা। নেতা ছাড়া চলে না তাদের। লৌহমানবের লৌহদন্ড ছাড়া সুখ নাই বোধহয়। তাই তারা সুখের সন্ধানে ধায়।

সুখ পায়?

__________________________________
#যাও_সুখের_সন্ধানে_ধাও_মামুনের_অণুগল্প_৫০৫

মামুনের_অণুগল্প : একদিন_লিখতে_গিয়ে

শাহেদ তুড়ির সাথে হাতের সিগ্রেটের ছাই ফিল্মী কায়দায় ফেলে দিয়ে একবুক ধোঁয়া টেনে নেয়। এরপর স্মার্ট ভঙ্গিতে ধোঁয়ার রিং বানিয়ে শূন্যে ছেড়ে দিতে থাকে।

মুগ্ধ হয়ে মিলি রিংগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। শেষে শাহেদের আরো কাছে এসে বলে,
– দারুণ জিনিস তো শাহেদ ভাই! আমাকে শিখাবেন?

শেষ উড়ে যাওয়া ধোঁয়ার কুণ্ডলির পানে চেয়ে থেকে উত্তর দেয় শাহেদ,
– কেন নয়? এই দেখ…

এই পর্যন্ত লিখতেই ভ্রু কুঁচকে যায় গল্পকারের। ‘নাহ! হলো না… উহু, এভাবে না’- ভাবনাটা আসতেই লেখাগুলি এক টানে কেটে দিয়ে আবার প্রথম থেকে শুরু করেন…

“শাহেদ একটু লুকিয়ে সিগ্রেটটা ধরালো। এখন পাবলিক প্লেসে ধুমপান করা নিষেধ। তারপরও তার মত শিক্ষিত মূর্খরা এখনো প্রকাশ্যে এই আকামটি করে থাকে। মিলির দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। সে আর থাকতে না পেরে কাছে এসে বলে,
– শাহেদ ভাই, সিগ্রেটটা ফেলেন। জানেন না প্রকাশ্যে ধুমপান করা নিষেধ?

– স্যরি, ফেলে দিচ্ছি..

বিব্রত শাহেদ উপস্থিত অন্য সকলের ভ্রুকুটিপূর্ণ চাহনির সামনে চোরের মতো হাসে। জুতোর তলায় পিষ্ট হতে থাকা ‘ক্যান্সার শলাকা’ টি থেকে তখনও একটু একটু কালচে নীল ধোঁয়া বের হচ্ছে।”

‘হুমম… এবার ঠিক আছে’- ভাবেন গল্পকার। আনন্দে চোখ বুজে আসে তার। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য-উভয় চোখ বন্ধ করে গল্পের ক্রম মনে মনে সাজাতে থাকেন। চরিত্রগুলি অক্ষরে রুপ নিতে গিয়ে গল্পকারের ব্রেইণের ইতিবাচক পথটি বেছে নেয়।

#একদিন_লিখতে_গিয়ে_মামুনের_অণুগল্প_৫০৪

দুটি অণুগল্প

ন’টার রঙ চা’র আসরে হারুন সাহেব হেসে হেসে ওনার ডিপার্টমেন্টের বসকে বলেন, ‘রিফাত সাহেবের উইকেট পড়ে গেছে গতকাল, শুনেছেন আপনি, স্যার?’

ঠোঁটের স্পর্শ দূরত্ব অতিক্রম করবে করবে চা’র কাপ, বিস্ময়ে থেমে গিয়ে বস উত্তর দেন অধীনস্থকে,
– গতকাল ৫টার আগেই বেরিয়ে গেছি আমি, কখন ঘটল এটা?

হারুন সাহেব কখনো কি জানবেন, প্রতিটি উইকেটের সাথে রয়েছে, এক একজন বাবার দীর্ঘশ্বাস, বঞ্চনার ইতিহাস আর অনাগত সময়কে ঘিরে অসহ্য মানসিক পীড়ন?

বাবারা উইকেট নন, তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতেও জানেন।।

#বাবা_উইকেট_নন_অণুগল্প_৪৯৮

★★
মৃত্যুর পর প্রথম জেগে ওঠা সুর্যোদয়ে এক সাবেক গোলাম সুর্যের কিরণচ্ছটায় অবাক হয়।

ভাবে, এ কোথায় এলাম!

ইশ্বরের সামনে তাকে হাজির করার মুহুর্তে বেশ আনন্দের সাথে তার মনে পড়ে, ‘আজ অফিস করার ঝামেলা নেই!’

মৃত্যু পরবর্তী এই প্রথম তাঁর মৃত্যু যন্ত্রণার রেশটুকুও এই ভাবনার সাথে সাথেই হারিয়ে যায়।

#প্রথম_সূর্যোদয়_অণুগল্প_৪৯৯