ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসিয়াকের কবিতা

অবলম্বন

চোখের কাজল দেয়া সেই কবে ছেড়ে দিলে খেয়াল ই করিনি ।
ইদানিং তুমি আর অভিযোগ করোনা ।
সংসারের ঝঞ্ঝাটে সব স্বপ্নের জলছাপ মন থেকে মুছে গেছে মনে হয় ।
ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবার প্রস্তুতি নয়তো ?

সন্তানদের স্বপ্ন হয়ে উঠলো প্রতি পলে আমাদের স্বপ্ন
যথারীতি ,
সবার স্বপ্ন পূরণের পর নিজেরা দুঃস্বপ্নে পতিত হলাম মহাকালের আবর্তে ।।

ঝগড়া ছেড়েছো বহুদিন আগে!!
আজকাল আমার খোঁজ খবর একটু বেশি বেশি রাখছো কি ?
কারণে অকারণে টুকটাক কাজের ভিড়ে উঁকি দেয়া মনের দরজায়…..।
ছোটোখাটো ছেলেমানুষী!!

অতীত ভাবলে হাসি পায় এখনো..।
উত্তাল প্রেমের দিনগুলোতে…
সব কথার ছলে বা কাজে জানিয়ে দিতে তোমায় ভালবাসি ।
এখন স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে সুখ খোঁজার ভিড়ে ।
আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে ..।

সুমনের সেই বিখ্যাত গানটা কিন্তু খুব করে কানে লেগে আছে……
হাল ছেড়োনা বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে ……।
দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে ।।

প্রিয়তমা তোমার ভালোবাসার স্বপ্নটাকে রেখো বুকের মাঝে ।
এই বয়সে বেঁচে থাকার স্বপ্নটাকে জাপটে ধরতে ভালো লাগে ।
অকারণে কেনো জানি মনে পড়ে বসন্ত দিনের কথা ,
শরতকালে কাশের বনে শিউলির মালা গাঁথা……
মনে মনে কবে কবে হারিয়ে গেল সুসময়গুলি …..।

দয়া করে হাজার দুঃখের ভীড়ে ভালোবাসার স্বপ্নটাকে হারিয়ে ফেলো না
ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন কিন্তু আমার এখনও গেল না ।

মনে রেখো ,
সন্তানেরা যে যার মতো শুধু তুমি আর আমি দুজন ।
শেষ বেলাতে অসহায় দুই মানব মানবীর ভালোবাসাই একমাত্র অবলম্বন।

চন্দ্রাবতী

চন্দ্রাবতী অনেক তো হলো পেঁয়াজ পান্তা খাওয়া…
এবার তাহলে এসো জলে দেই ডুব।
দুষ্টু স্রোতে আব্রু হারালো যৌবন।
চকমকি পাথর তোমার ভালোবাসা।
রক্তমাখা ললাট তোমার বিমূর্ত চিত্র,
আমায় কেবলি উতলা সুখ দেয়।

চন্দ্রাবতী এসো তাহলে ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে,
উছলে ওঠা যৌবনের প্রেম পরশে,
ভিনদেশী সুগন্ধ সৌরভে,
এসো দুজন জলকেলিতে ব্যস্ত সময় কাটাই।
ঠোঁটে ঠোঁট ৱেখে ভেজা পাখা দুটো ঝাপটাই…।
এসো অলীক সুখ স্বপ্নে মাতি এসো।

চন্দ্রাবতী রক্তের কাফনে মোড়া তোমার সারা শরীর!!!!
রাতঘুমের শেষে স্বপ্ন মাখা ভোরে,
দুঃস্বপ্নের এক ঘোর যে এসে লাগে……..।
ঘুমভাঙা এক তীব্র ঘামের ঘোরে ….
তোমায় শুধু হাতড়ে খুঁজে ফেরা।
আমি তোমার নিস্পাপ শরীরে কেবলি হাত বুলাই…
ভরসাস্থল হারাতে কখনো না চাই।

মেঘ ছুঁয়েছে মনের কথা আকাশ ছুঁয়েছে মন

মেঘ ছুঁয়েছে মনের কথা আকাশ ছুঁয়েছে মন
কিভাবে তোমার পড়লাম প্রেমে, জানিনা কখন।।
বাতাস সম চাই ভাসতে, ঝড়ের মতো যাই উড়ি
তুমি আমি দুজন মিলে স্বপ্নে ঘোরাঘুরি।।

জল চলেছে, জল বলেছে, এদিক পানে আসো
রোদের শোভা অঙ্গে মেখে ঝলমলিয়ে হাসো।।
আমি তো নই জলকন্যা, আমি তো নই জল,
কেমনে আমি সূূর্য স্নানে করবো টলমল।।

যদি আমি প্রপাত হতাম, সপাৎ ধরণী তল
ঠিকঠাক খুঁজে পেতাম তোমার মনের অতল।।

সাঁঝবেলাতে হাওয়ার দোলায় ফুলকলিরা হাসে
সুগন্ধ তার উপচে পড়ে মধুর পরশে।।
মেঘ ছুঁয়েছে মনের কথা আকাশ ছুঁয়েছে মন
তোমার প্রেমেতে মগ্নতা চাই সারাটা জীবন।।

ব্যাঙের বিয়ে

কোলা ব্যাঙের বিয়ে হবে
চলছে আয়োজন।
শত শত ব্যাঙ ব্যাঙাচি
পেলো নিমন্ত্রণ।

ব্যাঙ বাবাজী খুব তো রাজী,
বসলো বিয়ের পিঁড়িতে
ব্যাঙের ভাইটি হোঁচট খেলো,
নামতে গিয়ে সিড়িতে।

কনে ব্যাঙটি দেখতে দারুণ
গহনা আর লাল শাড়ীতে।
ব্যাঙের বাবা বড্ড খুশি,
হাত বুলাচ্ছে দাড়িতে।

মা ব্যাঙটি পরেছে দেখো
ছোটো খাটো টপ স্কার্ট,
এই পোষাকে তাকে নাকি
দেখায় দারুণ স্মার্ট।

সানাই বাজছে বাজছে ঢোল,
নাচছে সবাই তা ধিন তা।
কব্জি ডুবিয়ে খাবে সবাই
নেই তো কোন চিন্তা।

দারুণ হল্লা চিল্লা পাল্লা
চলল সারা দিন রাত্রি।
বাজি পটকা ফুটলো অনেক
নাচলো বিয়ের পাত্র পাত্রী।

আলো ঝলমল চারদিকেতে
আনন্দ খুশির উল্লাসে।
ব্যাঙ সমাজে খুশির আলো
ঝলমলিয়ে উঠলো হেসে।

সুখী হোক ব্যাঙ বাবাজী
সুখী হোক কনে ব্যাঙ।
মনের সুখে বর্ষার দিনে
করুক তারা ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

দুই বিড়ালের কথোপকথন

ওহে মাসি…
আজ তুমি কেন এতো খুশি?
মালিক যে আমার নাম রেখেছে
লক্ষীসোনা পুষি!!
যত্ন খাতির অনেক পেলাম
খেলাম কত রকমারি ,
পরেছি দেখ এই শীতে
কোট বং বাহারি।।

এই তো সবে এলাম আমি
পোষ্য হিসাবে
দেখ কেমন কাটাই জীবন
বিত্ত আর বৈভবে।।
বিড়াল ভাগ্য তোমার দেখছি
অনেকটা সার্থক
কত মানুষ কষ্ট করে
অনাহারে, শীতে মরে নিরর্থক।।

দেখ তো ওই রাস্তার পাশের
বস্তির ছেলেটি,
শীতে কাঁপতে কাঁপতে তার
দাঁত লাগছে কপাটি।।
হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো বটে তাতো বটে ,
বড় মানুষের আহ্লাদি বলে কথা
কত সুখ সোহাগের গল্প হবে
হবে নতুন রূপকথা।।

ছিলাম রাস্তায়, পেল সস্তায়
ধনীরও দুলাল
কত সহজে বদলে গেল
আমার ভবিষ্যত কাল।।
আসলে সেটাই চোখে
পড়াটাই আসল ব্যাপার,
অনেক প্রতিভা প্রস্ফুটিত হয় না
মূল্যায়ন হয় না তার।।

“বাবা”

“বাবা” তো এক মহাসমুদ্রের নাম।
জন্মাতেই তাতে আমি নাম লেখালাম।
বাবা, আজো আমি কাঁদি শুধু তোমার জন্য।
তোমার ভালোবাসা ছাড়া জীবন পুরোটাই অপূর্ণ।
তুমি আমায় বুকে নিয়ে কাটিয়েছো কত সোহাগ মাখা রাত।
তোমার কোলে – পিঠে কেটেছে আমার হাজারটা সোনালী প্রভাত।
তোমার ভালোবাসার চাদরে ঢাকা আমার সেই সে সুখের দিনগুলি।
দিনের শুরু হতো আমার, নিয়ে তোমার পদধুলি।
অনেক পরিশ্রম করে তুমি ফিরতে বাড়ি যখন …।
আলো ঝলমল করতো তোমার ক্লান্ত মুখটি তখন।
আবার, তোমার সাথে হাঁটতাম আমি অনেকটা পথ যখন …
ক্লান্ত হরে ঘুমিয়ে নিতাম তোমার কোলে জানিনা কখন।
কষ্ট যখন হতো আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে।
কি যে উতলা হতে তুমি আমায় নিয়ে …

চলতে চলতে অনেকটাপথ অনেকটা দিন ঘুরে।
জানিনা কবে কখন তোমার ছেলে চলে এলো দূরে।
এখন আমার নিজের ঘর এখন আমি বাবা।
তোমাদের ছেড়ে এলাম চলে, তাছাড়া করতাম ই বা কিবা।
সংসার নামে জেলখানায় আমি হলাম বন্দী
গৃহ বিবাদ ঠেকাতে করলাম অসম সন্ধি।
ইচ্ছা আমার ছিলো খুব তোমার সাথে থাকি
পরিস্থিতি বদলে গেলো ছিড়লো সম্পর্কের রাখি।
তোমার বৃদ্ধ নিঃশ্বাস এখন অসহায় শ্বাস ছাড়ে।
সংসারের টানাপোড়েনে হৃদয় পাথর চাঁপা পড়ে।
বাবা তুমি ক্ষমা করো আমায়, একদিন আমিও আসবো নিশ্চয় ফিরে।
তোমার আমার সাজানো সংসারে, সুখ দুঃখের ছোট্ট নীড়ে।।

পাগল

শহরের বুকে বিষণ্ন প্রহর,
উপরে নীল আকাশ।
ছেড়া কাপড়ে অতি মলিন,
জ্যান্ত ভুখা লাশ।

বাসি খাবার একটু পানি,
জোটেনি একটু তার।
মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি,
এ কেমন ব্যবহার !!

তার চোখের আর্তনাদ গুলি,
দেখেনি কেউতো চেয়ে।
সহায়তার দুটি হাত,
কেউ দেয়নি বাড়িয়ে।

অবহেলায় আর অনাদরে
কাটছে তার জীবন।
স্বার্থের এই পৃথিবীটায়
কেউ হয়নি তার আপন !!!

কেউ কেউ তারে মারে ঢিল,
কেউ মারে ছুড়ে ইট।
কখনো কখনো কেটে যায় তার,
কালো নাঙ্গা পিঠ।

সবাই তারে দূর ছাই করে,
একটুতে করে আঘাত।
রাস্তার পাশে ঠাই হয় তার,
হোক দিন কি রাত !!

বিত্তবানেরা কুকুর পোষে,
খাতির যত্নের নাই শেষ।
তাদের জন্য কত আয়োজন,
কত উন্নত পরিবেশ!!

পশু প্রেম সেটা ভালো,
এই পাগলটাও তো মানুষ !!
যদি কোনদিন তোমার অবস্থা হয়,
এমন দোষে দোষ।

পশুপ্রেমে দেখাও তুমি,
সর্বোৎকৃষ্ট মানবতা।
পড়তে ব্যর্থ এই পাগলের চোখে
বিষণ্ন ভরা আকুলতা।

আরো কত অনিয়ম আর
পাপে ভরা এ সমাজ।
মানবতা সর্বত্র পদে পদে
ভূলুণ্ঠিত আজ।