ট্যাগ আর্কাইভঃ চারু মান্নানের কবিতা

-সেই মাপন টা

-সেই মাপন টা

নিত্য নতুন মাপন গুনে
মাপা যায় কত কি!
চাওয়াটা বা কিসে মাপে?
রাত্রি দিন হিসেব কসে।

কালের খাতায় হিসাব জমে
নন্দন পুরাণ। কালের কাল।
সে তো গেল আদি অন্ত।
নতুন করে কি আকাশ রং ছড়ায়?
না কি একই পটে নিত্য নতুন?
ভবের তরে সঙ সাজা।
সেই সঙ রঙ্গ জোড়া।
মাতাল করা রুপে হরা।
জীবন বলে যৌবন তুই।
এমনি করে হাসা কাঁদা।

হারিয়ে গেল সেই মাপন টা
পায়ে হেঁটে পথিক পথ।
সেই তো ছিল ভালো। সোনাতন মর্ম।
খুঁজিতে তারে অপূর্ণ জীবনভর।

দৃশ্য পটে ঘন্টা

দৃশ্য পটে ঘন্টা

দৃশ্য পটে ঘন্টা বাজে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
কারে সুধায় এমন ধারা প্রতি পলে পলে?
চোখ খুলেলেই প্রকৃতি সব চেয়ে চেয়ে দেখে
মনের খিরকি আঁটা খিলে কে বা টোকা মারে?

দেখবার অবসরে নিত্য পুড়ি
কাগজ পোড়ার মতো;
কারে সুধাই ,কেন যে পুড়ি এমন করে?
না দেখলেও মন যে পুড়ে
দিগন্তে ঐ মরিচীকার মতো;
হাত বাড়ালেই পালিয়ে যায় দূরে
দৃশ্য পটে ছবি আঁকে কে বা?
মন জুরানো হাজার স্বপ্ন গাঁথা;
তাইতে মন ক্ষেপা বাউল ছুটে পথে পথে

দৃশ্যমান কে বা তারে ধরে?
ঘন্টা বাজিয়ে ক্ষণে ক্ষণে কি সে জানান দেয়?
সেই দৃশ্য বোনা পট যে তার আচমকা মিথ বুনে যায়
মিলিয়ে যায় হারিয়ে যায় মেইয়ে যায়,,,,

নন্দন মেলা

নন্দন মেলা

নাটাই ঘুড়ির রং ছড়ানো
রোদ্র তাপের খেলা
মেঠো পথের সবুজ ঘাসে
বসেছে নন্দন মেলা।

তাল পাতার ঐ বাঁশি বাজে
চরকি ঘুরার গান
না না রং এর বেলুন উড়ে
ঝিলেপি ভাজার ঘ্রাণ।

ভুতু সোনা আলতা পায়ে
পড়েছে লাল শাড়ী
কাঁচের চুড়ির ঝনঝনাঝন
ফিরেছে সাঁঝে বাড়ী।

ভুতু গিয়েছিল মেলায়

ভুতু গিয়েছিল মেলায়
বাবার কাঁধে চড়ে
মেলা যে ঐ বসেছিল দূরে
সন্ধ্যাবতী গাঁওটার পরে।

সেথায় ছিল তাল পুকুর
কালো জলে ভরা
তার পাড়েই বসেছে মেলা
পোড়া মাটির খেলনা।

গজা হাতির বরফি সাজা
মুড়ি মুরকি নাড়ু
তাল পাতার রাঙা পাখা
তেলে পাঁপর ভাঁজা।

১৪২৫/০২ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

জবুথবু শীতে আমার সন্ধ্যাবতী

জবুথবু শীতে আমার সন্ধ্যাবতী

জবুথবু শীতে আমার সন্ধ্যাবতী
কুয়াশায় ঢাকা শরীর; শিশির ঝরে ঝর ঝর
যেন কুয়াশার মৌ বন।

লাউ পাতা কাঁপে
কাঁপে সজনে পাতা; আঁচলে তার শিশির মাখা
তাল পাতা কাঁপে
কাঁপে টলটলে জল ঢেউযে; মুখে তার কুয়াশা মাখে
লজ্জাবতীর পাতা কাঁপে
কাঁপে বাবুই পাখির বাসা; দুহাতে তার ওম ধরে খাসা।

ঘরের চালের টুই চুঁইয়ে পরে
টপ টুপ টপ টুপ শিশিরে ঘ্রাণ; আমলকি বনে তারই
পৌষের হিমে জবুথবু শীতের হাওয়া।

এ কোন সন্ধ্যাবতী আমার?

যেন গোমটায় চাদর টেনে
অভিমানে নিঃস্ব; কুয়াশার লেপের আবিরে
এ কোন সন্ধ্যাবতী আমার?
পথ তার ঢেকে রাখে ঘন কুয়াশায়
পথিক বিমুঢ় কাঁপা ঠোঁটে কথা সরে না
পথিক আজ বড়ই অচেনা তার
কোলাহলে মাতে না
লুকিয়ে থাকে ডাহুক ডাহুকি
চুপি চুপি পায়ে সন্ধ্যাবতীর রাত আসে।
ফাটা ঠোঁটে জুড়ে সিক্ত রোদন
ভুলেছে পৌষ হিম; কদাচিত কাদাখচা ডোবার কাদায়
পায়ের ছাপ আঁকে সন্ধ্যা ঘোরে
পালক ফুলায়ে তালগাছের পাতায় বসে শঙ্খচিল
বাতাস দোলায় কুয়াশা ভেজায়।

১৪২৪/২৫ পৌষ/শীতকাল।

ভালোবাসার সর্বনাশ

ভালোবাসার সর্বনাশ

কালে কালে মহাকাল
যেন বালুয়ারি বায়ু; এই তো সে দিন বয়ে গেল
স্মৃতির উল্কি এঁকে।

তুমি ফিরে আসবে বলে
কথা দিয়ে ছিলে; অষ্ট প্রহর গুনে গুনে
কালের পাহার গড়ে।
এখন তোমায় প্রশ্ন করাই সার
আসবে না আর ফিরে; পালিয়ে গেলে সাত সমুদ্র পাড়
চাঁদের প্রহরগুলো যায় মিছে ক্ষয়ে।

সুবোধ সময় নাই আর বোধে
মৃত্তিকা ক্ষয়ে বাঁচে; কোথায় তুমি রইলে পরে?
বুকে ধরে, ভালোবাসার সর্বনাশ।

ভালোবাসা সেই সোনাতন

সব কিছু বাড়ে কমে। ক্ষয়ে যায় নিঃশেষ হয়। ভালোবাসা সেই সোনাতন। সময় খসে পরে। চাঁদের পাহাড় ভাঙ্গে গড়ে। পুরাতন পথ হারিয়ে যায়। নতুন নুতন পথ উঁকি দেয়। কিন্তু ভালোবাসা কি বলে দেখ? ভালোবাসা সেই একই রসে ডুব সাঁতারে ভাসে। সময় ক্ষয়ে যায়। কালে কালের বিবর্তন। তুবও অমরাবতীর প্রেম মুছে না। জলাঙ্গির জলজ ঘ্রাণ।
বুকের পাঁজরে রয় জনমভর চুপটি করে।

তুমি তো চেয়ে ছিলে

তুমি তো চেয়ে ছিলে
বাসবে না ভালো কোন কালেই?
তার মুন্ডুপাত করতে কি পেরেছিলে?
না কি তারে ছুঁতেই জানপ্রাণ?
জেঁকে বসা আঁধারের মতো আষ্টেপিষ্টে
বাঁধতে চেয়ে ছিলে জনম ধরে।

ক্ষয়ে ক্ষয়ে চাঁদ বাড়ে আবার পূর্ণতার লোভে
প্রিয় ছিল তোমার তুমি যৌবনের স্বপ্নবান।

তোমার তরে তুমি
খসে পরা শূন্য আঁধার
আমলকি বনে
ঝিরঝিরে পাতা ঝরা পৌষ
তুমি চেয়ে ছিলে বলে।

১৪২৪/১৮ পৌষ/শীতকাল।

আজকের দিনে মা যে আমার

আজকের দিনে মা যে আমার

আজকের দিনে মা যে আমার
হারিয়ে গেল কোন সুদূরে?
বাতাস তোরা জানিস নাকি?
সব খানে যে তাঁরেই খুঁজি
আকাশ কি তোর শুন্য নীলে?
আমার মাকে লুকিয়ে নিলি
দিগন্তের ঐ কোন সে দূরে?
মা যে আমার রইল পরে।
সাঁঝের মায়া ঐ সন্ধ্যা তারা
মা কি আমার তারার মায়া?
সেই মায়াতেই মা কি আমার?
জনমের মতো হারিয়ে গেল।

রাতের মায়া লক্ষ তারা মিটি মিটি জ্বলে
ঘুম পারানি গানের মায়া শৈশব টেনে আনে।

নন্দ তোমার নদের চাঁদ

সিন্ধু পাড়ের অতল তলে,
আর পাবনা খুঁজে তারে
সাগর জলে গহিন তলে, নিত্য খুঁজি স্বপ্নঘোরে।
বিরহ ব্যথায় কষ্ট হলে,
ঠোঁট কয় যে, ওমা বলে
শান্তি কোথাও না পাই যখন, মা তোমায় মনে পরে।
মা তোমার কত স্মৃতি?
শৈশব কৈশর জীবন বোধি
বয়ে বেড়াই অষ্ট প্রহর, নন্দ তোমার নদের চাঁদ।

কোলাহলে মেঘ ভেসে যায়
বাতাস বনে চুপি চুপি দেখলে চেয়ে একটুখানি
সন্তান তোমার কেমন আছে? পৃথিবী নামের আজব ভূমে।

মা যে তোমায় মনে পড়ে

উবু হয়ে, চিৎ হয়ে, রইছি শুধু ঘুমে ঘুমে। মায়ের দুধের বাটটি চেঁপে শৈশব কাটে হেসে হেসে। মায়ের বুকে বসে কত হাসি? কাতু কুতু খুনসুঁটি, সে তো ইশারাতে। হাসতে হাসতে মায়ের আদর সোনা মুখে হাজার হাজার। কইতে কথা একটু একটু? পা টলে যায় হাঁটতে বলা। মা বলে উঠলে ডেকে, আদর সোনার যায় যে বেড়ে। আঁচল টেনে বায়না কবে? মা যে তোমায় মনে পড়ে।

১৪২৪/১৯ পৌষ/শীতকাল।

ভালোবাসার মিশেল কিছু

ভালোবাসার মিশেল কিছু

ভালোবাসার মিশেল কিছু
পাঁচফোঁড়নের ধরন মসলার গুনাগুন; তাতেই থাকে নানান চমক
যেন স্বপ্নের ফুল ঝুরি।

কেউ বা কাঁদে আকাশ চেয়ে চেয়ে
কেউ বা ধুলায় নিত্য গরাগরি; সে না কি মস্ত পাগল?
কাল সিন্ধুর যৌবন গেল ভাটি।
যৌবন গেল খরায় খরায়
কেউ বা বাসি চিঠি লিখে লিখে; পিছন ফিরে যেই তাকিয়ে
আঁধার দ্যাখে স্বপ্নঘোরে।

এমনি তবে ভালোবাসার খরায় পোড়া
রুপ পিয়াসী যৌবন বলে; কোথায় গেল সপ্ত তারা?
বিরহে পোড়া ভালোবাসার মিশেল খানিক।

চোখের পরে চোখের মায়া

সেই তো তবে, বহুদূর গেনু। তুই তো গেলি কোন সে গাও? যুগ পেরুলো। তুবও মন মুছে না তায়। তুই ছিলি পদ্ম দিঘী। জোছনার রোসনাই। তাইতো তুই হারিয়ে গেলি কোন সে ভিন গাও? সেই গাও এ পদ্ম বাথান, স্বর্ণমোচায় ফোটে, সন্ধ্যা রাগে একটু কি মনটা পিছু টানে? চোখের পরে চোখের মায়া। জ্বল জ্বল তারায় ভাসে।

স্বপ্ন ডানায় ভাসে

কত কথার কিচির মিচির? চড়ুই ঠোঁটে বাজে
কোথায় রইল প্রাণসখা? এমন হিমেল শীতে
কোন সে পথে পথিক হাঁটে? বিরহ মঙ্গল গানে
কোন সুদূরে দিগন্তের ঐ? স্বপ্ন পাখির ডানা
কেমন করে পাখির পথ আঁকা? মন বীণায় মনের টান

কোন সুদুরে মেঘের পাহার? বিস্ময় ডালা মেলে
সেথায় নাকি উর্বসি ঐ? স্বপ্ন ডানায় ভাসে

জলছবির করিডোরে

ডাক দিয়ে যায় শিশি উন্মূখ, হলদে সর্ষের দল
তোমায় নাকি রোদ সকালে? খুঁজে ফিরে খালি পায়।
শিউলী ঝরা সবুজ ঘাস, শিশির ভেজা স্বপ্ন আঁকে
তুমি নাকি কোন বিহানে? শিউলি তলায় কৈশর কাঁদে।

উ্ত্তরের বায় বাশবনে, পাতা কাঁপিয়ে শিশির ঝরে
তুমি নাকি চাঁদর গায়ে? হালকা রোদে দাঁড়িয়ে ছিলে।
সেই তো হাওয়া পুকুরের জলে, ঢেউ চলে বিলিকেটে
সেথায় তুমি নাকি দাঁড়িয়েছিলে? জলছবির করিডোরে।

তোমায় দেখব বলে

আমায় তুমি নাই বা নিলে সাথে। তোমার স্বপ্ন আঁকা পথে। ঐ পথে যে তুমি একা, মন কি তোমার যাচে? তাই তো বলি হাতে রাখ হাত। মনের দ্বিধা ঝেরে। তোমার একলা পথে আমায় সাথি করে। এ তো তোমায় বলল কথা বাতাস কানে কানে। তবু তুমি দেখলে না পিছন ফিরে, একলা পথে হাঁটিছি আমি, তোমায় দেখব বলে।

১৪২৪/১২ পৌষ/শীতকাল।

কোথায় কি করে খুঁজি তোমায়

কোথায় কি করে খুঁজি তোমায়?

কোথায় কি করে খুঁজি তোমায়?
সময়ের কড়ি গুনে গুনে; যা ইচ্ছা তাই এখন
সময় মাপে না আর কোন কিছুতেই।

তবে দায় শুধুই একার
এতে তোমার কোন ক্ষ্যাত নেই? এমন তো ছিলে না তুমি
অন্যের ঘারে ভাঙ্গবে কাঁঠাল।
‌সইবে না কাঁঠাল আঠার যাতনা
কলঙ্ক মাগবে না গায়; শুদ্ধ মেঘ হয়েই রইবে
জনারন্যে জল দিয়েই সারা।

তাই যদি হয় নিশি জাগবে
কেন এত নন্দন যাতনা? সয়ে সয়ে জোনাক পুড়ে
প্রেম কি তব নিঃস্ব বিরহ জঁপে?

জোছনা ছিল শুধু তোমার

একদিন আঁচলে ছিল সিদ্ধ হরিনী কোলাহল। ভুল করেও করোনি কোন প্রতিবাদ, একটু চাইলেও । সেই সময় টা বেশ রাশভারি। সিনগ্ধ শিশির দানায় হাত ছুঁয়ে দেবার অপূর্ব সুখ। এক অযাচিত মোহের আবেশ ঢেকে ছিল তোমায়, যেন রাত পাহারায় থাকে ঘন আঁধার। জোছনা আবেশ মাখে না। জোছনা ছিল শুধু তোমার, একছত্র অধিকারে।

১৪২৪/৯ পৌষ/শীতাকাল।

বেলা পরলেই নগর

পৌষ শীতের হাওয়া

নগর জুড়ে জানান দেয়
পৌষ শীতের হাওয়া; ওম জেগেছে ওম ঝরে
নিশি রাতে ধুঁয়া উড়ে।

কুয়াশার ধুঁয়া নগর জুড়ে
সাঁঝ বেলাতেই উড়ে; শিশির পরে শিশির ঝরে
ইট সুরকির পথর পরে।

সুরম্য এই নগর পাড়ায়
শীতের যেন প্রলেপ মাখে; কুয়াশা পরে কুয়াশা ঝরে
নগর গায়ে যেন ভুতুরে সাজ।

নন্দন পাড়ায় নদের চাঁদ

নন্দন পাড়ায় চকচকে ফুটপাত
রাতে শিশিরে ভিজে খানিক।
নেংটি দুধের শিশুটি ছেঁড়া সুঁয়েটার গায়
শিশির মাখা ফুটপাতে গড়াগড়ি খায়।

নন্দন পাড়ায় নদের চাঁদ
পলিথিনের ঘরে থাকে
সোদা মাটির গন্ধ শুকে
মায়ের বুকে কুসুম ওমে।

পৌষের চাঁদ হাসে মিটি মিটি
সোডিয়াম বাতি নিয়েছে ছুটি
পলিথিনের ঘর করে ঝিকি মিকি
রাত গভীরে কুকুরের কান্না ঘেউ ঘিনি।

বেলা পরলেই নগর

বেলা পরলেই নগর। এ ব্লক, ও ব্লক, পৌষের হিম চোখে পড়ে। চকচকে হলুদ দেয়ালে ধুলোর প্রলেপ। একটু কালচে রং দেয়ালকে বদলে দেয় পৌষের শিশির। দেরাজের মুখে ছোট্ট ফুলের বাগান বেশ শুভ্র সবুজ। পৌষ এসেছে তাই। কাঠবাতাবির গাছগুলোর সবুজ পাতার সে কি বাহার? সবুজ পাতার ছাদে শিশির চকচক করে। নিয়ন আলোয়। মৃদু উত্তরের শীতল ক্ষেপ পাতাগুলো সমান তালে দোলায়। এদিকে ইটের ফাঁকে খাঁজে আগাছা গুলোর গায়ে, বেশ ধুলো জমে ছিল। রাতভর শিশির তা ধুয়ে দেয়।

১৪২৪/৬ পৌষ/শীতকাল।

অভিমান

অভিমান

এক সময় খুব অভিমান জমে ছিল; সহসা চাওয়ার প্রসন্ন বিস্তার
তুমি ভালোবাসলে না বলে; নক্ষত্রে আলো ঝুলে থাকার মতো
আবার এমনটাও হল; নিজের উপরও মেঘের ছায়ার মতো অভিমান
মেঘ দৌড় খিলখিলিয়ে হাসে; তোমারই চঞ্চলতার আঁকিবুকি আঁকে
সে তো ছিল ভাবনা উর্বসী; অভিমান তার শিকড় গেড়ে বসে ছিল
কত কথাই তো হয় চোখে চোখে আদি মোহ নেশা? স্বপ্ন পোড়া দিশা সময় ধরে

তবু একচিলতে অভিমান ছিল চাওয়ায়; কলঙ্ক বুকে চাঁদ এখনও পুড়ে
শুধু খুঁজলে না তুমি পিছন ফিরে; ঐ তো ঐ পথেই ছিল আরন্যক জোনাক বেদী।

আসনি ফিরে

কথা দিয়ে ছিলে তবু আসনি ফিরে
টলটলে জলে জলছবি দেখে; ভেবে ছিলে কি কিছু?
হেলেঞ্চার লতানো ডগায় অতীত কেন তন্দ্রা টুটে যায়?

সেই সোনাতন মুগ্ধতা নিয়ে
এখনও রয়ে গেলে অপঃরাহ্নের নরম আলো মতো; দিগন্ত বিহারে
একদল অভিমান লুকোচুরি খেলে।

ওরা খেলে খেলে ক্লান্ত হয়নি কখনও
জোনাক পোড়ার বেদীতেও; বেশ মুখচোরা অভিমানি তুমি
নিবে শতগুনে দিবে না মোটেও।

মুগ্ধতার আকর

তুমি তো ছিলে মুগ্ধতার আকর। ভালোবাসা বুঝলে না কি? শুধু পাতা ঝরার সিক্ততা শুনে ছিলে, শোনলে না মৌনতা বিবর। নীল জুড়ে স্বপ্ন নিলে, নিলে না নীল ঘন আঁধারে যাতনা লীন। তৃঞ্চা টেনে বৃষ্টি চাইলে, চাইলে না মেঘ অভিমান। পদ্যে পদ্যে প্রেম চাইলে, চাইলে না বিরহ যাতনা ঘোর।

অভিমান তোমায়

অভিমানে রইলে পরে
কোন সে সাগর পাড়ে?
কত জলের মেঘ ভেসে যায়?
তৃঞ্চা শুধু বাড়ে।

আদি অন্ত না জেনে
পথিক পথ চলে
অভিমান তোমায় তেমনি পোড়ায়
ভালোবেসে ছিলে বলে।

পাতার বাঁশি বাতাস বীণা
জল তরঙ্গ নাচে
ভাসান ভেলায় বেহুলা কান্দে
যদি ভালোবাসা ফিরে।

১৪২৪/৫ পৌষ/শীতকাল।

মৃত্যু সুধা পানে মানব জনম

মৃত্যু সুধা পানে মানব জনম

মৃত‌্যু সুধা পানে মানব জনম। মৃত্যু নামের সুধা পান অপরিহার্য্য মানব জনমে। এ থেকে কারো মুক্তি নেই। এ সুধা কেহ পান করিতে চাহে না। এমন মোহের ধরাধাম ছেড়ে। একটা সময় সুধা পানে বাধ্য করা হয়। তখন এই অবনীর যতই ক্ষমতাধর যতই শক্তির আঁধার হউক না কেন, সেই পানে বাধ্য থাকে। তা হলে এ জনম কার? শরীর গুনে যার যার প্রত্যয় তার তার। মৃক্তিকা সম এই ভূঙ্কুর মানব শরীর, কার অধিকারে রয়?

সফেদ শুভ্র বসন

সফেদ শুভ্র বসন
কখন, কবে, কার, পরনে জুটে; কেবা কার, মনে লয়?
ভবের ক্ষুধায় আদি অন্ত ভুলে রয়।

শৈশব কৈশর রয় পরে
দুরন্ত যৌবন অমানিশা; খোঁজ করতে ভুলে রয়
মানব জনমে মানব রতন।

সেই রতন যে কষ্টি পাথস
হেলায় ফেলে ভাটির কাল; পথিক তই চিনলে না পথ
ক্ষয়ে যায়রে শ্রেষ্ঠ বেলা।

মৃত্তিকা

মৃত্যুতে শরীর নাকি বাঁচে?
লাশ নামের আবহে
অগ্নী জল বায়ু সুধা সনে মৃত্তিকা অভিমানে
শুষে গলে আদি অন্ত কি তারই কোলে?
ভাবতে ভাবতে মৃত্তিকা হেসে বলে
কোথায় হে নস্বর শরীর? লাশ বুনে গেলে
এসো আমার চাতাল তলে।

আমার বুকে রইবে তুমি
হার মজ্জা ক্ষয়ে ক্ষয়ে
কত অব্যক্ত প্রাণীর ক্ষুধার আহার
আমার শরীর তলে।

মানব শরীর অতঃপর আত্মা

শরীর যখন মৃত। সাদা কফিন। লাশ বহমান। তখন শ্বাস বিহীন। শরীর নামের শুন্য খাঁচা। সেখানটায় আর নাই, শ্রবণ শক্তি, কর্মশক্তি, দেখার শক্তি, কথা বলার শক্তি। নেই লোভ, ভালোবাসা, হিংসা দ্বেষ। এই যে ছিল বেঁচে থাকার শক্তি, তারা এখন কোন খানে লুকিয়ে?
বাঁচার শক্তির আঁধার আত্মা; মানব জনমের আত্মীয় সজ্জন ছিল একদিন। সে কোথায় যায়? কোন খানে পালাইল? এমন মানব শরীর ছেড়ে। তারে একা নিঃস্ব করে, মৃক্তিকা দহনে পোড়াইল।

মানব জনম

মানব জনমের চির ভাস্মর, আত্মার কথা কই
সেই তো ছিল শরীর জুড়ে, আদি অন্ত সব জানে।
যদি পথিক হাঁটে ভুল পথে, কার বা আসে যায়
আগল খোলা শরীর খাঁচা, দ্বারের চাবি খুলরে ভবে।
নইলে জনম বৃথা যে তোর, লোভ লালশায় যায়রে বেলা
সময় হাতে মুক্তির পথে, শুদ্ধ রসে শরীর বাঁচা।

শরীর বাঁচলে শুদ্ধ রসে, আত্মা হবে চরাচরে
আত্মা যে তো খাঁচার মালিক, কেমনে তারে ভুলে থাকিস?

১৪২৪/৩০ অগ্রহায়ণ/হেমন্তকাল

মোহ যাপনে মনের সাধ

মোহ যাপনে মনের সাধ

মোহ যাপনে মনের সাধ
প্রত্যয় নাহি চেনে; যা ই্চছা তাই নেশার টানে ছুটে
মোহ নয় তো সুবোধ ঘোড়া
হুরকো বাতাসা যেন; বোধের হাঁড়ি যায় ভেঙ্গে।

মোহ এর সাথে স্বপ্নযোগ
তন্দ্রা টুটে বিষম রাগে মজে; যেন মোহএর স্বপ্নঘোর
আকাশ নীলে বাতাস সনে
মোহ এর উল্লাস রাঙা ঘুড়ি; নাটাই বিনে মুক্ত মুক্ত পাখি।

মনের ঘরে

এমনি করে মোহ এর বিলাপ মনের ঘরে। মন কি তারে পুষে রাখে? মন কি তারে বাঁধতে পারে? না কি যার শরীরে তার বাস তারে শুধু মোহ টানে? মনের সাথে কেমনে থাকে? নাকি মোহ মনের প্রতিবেশী? একই শরীরে বাস যখন, মনের সাথে দ্বন্দ্ব কি সে? মোহ তবে লুকিয়ে লুকিয়ে শরীর থেকে বেড়িয়ে পরে। তারই নেশায় শরীর ছুটে।

কারসাজি

মোহ না কি মনের সাথে
ইচ্ছা নামের কারসাজিতে
চুপটি করে ঢুকে পরে।

ইচ্ছার সাথে হাত মিলিয়ে
সাধ পূরণে মেতে উঠে
সাধের মাত্রা বেড়ে গেলে
নেশায় তখন আপনা টলে।

রৌদ্র জলের মাখা মাখি
মেঘ নাচে দ্যাখো বাতাস তালে
মোহ এর টান এমন নেশা
তাই তে বোধ হয় বৃষ্টি ঝরে।

ভাল মন্দ মনুষ্য প্রাণ

মনের সাথে মোহ দুলে, রং ছড়ালে একটু সাধ। তবেই নাকি ইচ্ছাপূরন? মন মোহালে চাঁদের হাট। স্বভাব গুনে মোহের টান। ভাল মন্দ মনুষ্য প্রাণ। আকল খোলা স্বচ্ছ স্বাধীন। পথিক বলে কোন পথে যাই? সুবোধ স্বপ্ন সুবোধ মোহ। নেশার মোহ নষ্ট আকর। পথ সে তো অতি ভঙ্কুর দিশা তারে নাই বা চেনে। তাই তো পথিক মোহ ছুঁড়ে পথ চিনে লও।

শরীর খাঁচা

পথিক হাঁটে পথে। তার সাথে সাথে যাচ্ছে হেঁটে, শরীর খাঁচা। সেই খাঁচাতে থাকে বসে, মন, বাসনা, মোহ, যাতনা। ক্ষুধা তৃঞ্চা শরীর জানে। শরীর জানে না কোন সে দিশা? যে দিশায় হৃদয় উজালা। ক্ষুধা তৃঞ্চা শরীরে খরা, তারে বিনে কেমনে চলা। মন বাসনার কোন কে ক্ষুধা? কেমনে ওদের তৃঞ্চা মিটে।

১৪২৪/২৯ অগ্রহায়ণ/ হেমন্তকাল।

স্বপ্নবোনা নাটাই

স্বপ্নবোনা নাটাই

জীবত শরীরেই আত্মার বাস
প্রাণ বিনে কোথায় রয়? আদি অন্ত ভেদ বিচারে
আত্মা সুধা নিষ্ঠা যার।
সেই তো রয় বাসনা কঞ্জু
ধরাধামে প্রাণকূলে; বাসনার খন্ডিত রুপের
দেখভালের সদা প্রত্যয় সুঁপে।

স্বরণ রুপের কল্পলোকের
স্বপ্নবোনার নাটাই তারই হাতে; তাই তে শরীর
আকল খোলা এই অবনী পাড়ে।

কল্পতরুর ডোগা

খেলার ছলে বান ডেকে যায়; কল্পতরুর ডোগা
দিনে দিনে ঐ কুঁড়ি টা; বনে দ্যাখো সবুজ মহীরুহু
আচ্ছাদনের আলো ঢেকে যায়; মেঘ জলের খেলা
সেই জল তো তুলায় উড়ে; ঈশান কোণে দর্প কালো
লুকিয়ে যায় কোথায় বায়ু? পাই না কোন সারা?
কোথা থেকে যে উড়ে আসে? ভাসিয়ে দিবস বেলা
তল খুঁজে না পাই তারে; দিবস রজনী ঘিরে
একটু ছোঁয়া হাওয়া কই তারে; প্রাণজুরানো লীলা ছলে

জীবিতকাল বাসনা সঙ্গ

জীবিতকাল বাসনা সঙ্গ। কিসের সঙ্গ মৃত্তিকা বিবর? যাহাতেই সৃষ্টি। তাহাতেই বিনাশ। কেবা করে তার নিকাশ। কষে কষে হিসেব। পুঁথিপুরাণ নক্ষত্রে ঝুলে। তারায় তারায় আলো ঝকমক রোসনাই অফুরান। ধরিতে তারে আপ্রাণ বেসুমার। কহিতে কথা একটু খানি রসদ ফুরাইল মোর। এবার তারে কেমনে খুঁজিব? রাত্রি এখন আঁধার ঘন ঘোর।

নিত্য চলা চল

সে তো নাকি বুকের খাঁচায়?
নিত্য চলা চল
আসে যায়, যায় আসে
নেই তো কোন কোলাহল?

সে তো তারই মতো চুপি চুপি
সহবাস শরীর মনে;
আক্ষরিক ধরা ধামে তারই নিত্য গুনে
সহবাস শুধু জীবন কালে
সাদা কালো প্রভেদ কি বুঝে?
না কি নিত্য সাদা
শুভ্রবসন, তার প্রিয় বটে
তবে কেন আচম্বীতে? সটকে পরে শেষে
সে কি ভয় পায়? প্রাণের হৃদমাজারে
বুকের খাঁচায় আদি অন্ত জুড়ে
সেই তো থাকে সস্মহনে আত্মজা গুনে।

ঐ যে পথ

মনের দেখা ঐ যে পথ, আঁকল বল কে?
আকাশ নীলে ঐ যে মেঘ, সাজাল বল কে?
আঁধার রাতে আকাশ জুড়ে, নক্ষত্র মেলা বসাল কে?
চাঁদ বুঝি লুকিয়ে আজ, আঁধার ঘনাল কে?
পাহাড় গুলো উঁচু উঁচু, বসিয়ে দিল কে?
সেই পাহাড়েই কাঞ্চজঙ্ঘা, রুপের রসনাই ছড়াল কে?

পৃথিবী শুদ্ধ যামিনী

এত এত রুপ
পৃথিবী শুদ্ধ যামিনী
মনুষ্য প্রাণী ক্ষুদ্র অতি
কেমনে তাতে ধরে রাখে সখা
এই বুক পাঁজরের ছোট্ট খাঁচায়
সেথায় রয় শুধু ইতিহাস ঝরে
মৃত্তিকা রসে তাহা চুঁয়ে চুঁয়ে পরে
কদাচিত বিভ্রুম তরে
স্বপ্ন ঘরে কত নিশি
আচম্বীতে মরে।

কে যে কি কয়?

মৃক্তিকা কি হাঁসে কাঁদে? অগ্নী দ্রােহ শুধু উল্লাসে বাঁচে। পৃথিবী ভাসান সাগর জলে। এ কোন মহা লয় মহা শুণ্য আকাশ নীলে? কত রুপে বাতাসা চলা চলে? ভঙ্গুর জড়র সাথে হাওয়ার নিত্য চরচরে। মৃত্তিকা কি কয় শুদ্ধ হও জল? বাতাস কি কয় মুক্ত শুধু চলাচলে।

১৪২৪/২৮, অগ্রহায়ণ/হেমন্তকাল।

আমাতে আমার আমিত্ব

আমাতে আমার আমিত্ব

আমাতে আমার আমিত্ব
সুধাসনে মোহ ঘন আবেগ বাসনা
মৃত্তিকা সুঁপে পাওয়া।

আগুনে পোড়া ছাই
আমিত্বে তারই চিহ্ন সদা পাই
মৃত্তিকা ধুলায় মিশে উড়ে।
জল পরে পাতা নড়ে
আমিত্বে বাসনার উল্কি আঁকে
সদা জলে মৃত্তিকা দহন আকাশ নীলে।

বায়ু জল উড়ে উড়ে
সন্ধির বেবস অবগাহন বিন্দু বিন্দু জমে
মেঘ দর্পণ আমিত্বের লীলা ছলে।

বায়ুতে মগন

আমার আমিত্ব খুঁজতে, যাই মৃত্তিকা পরে। সেথায় শুধু ধুলায় গড়াগড়ি। শৈশব কৈশর পথিক জনম। ওম বিনে জীবন নাকাল, টানে অগ্নিসুধা। আগুন পদ্য জীবনে সদ্য। আমার আমিত্বে জল যায় গড়াগড়ি। বাসনা খুঁজে তৃঞ্চা সরবর। দেহ বসন জলের কারসাজ। আমিত্বে আছে বায়ু চরাচর। নিঃশ্বাস বিনে রহিবে কার শ্বাস। বায়ুতে মগন প্রকৃত সরাচর।

২৭/অগ্রহায়ণ/হেমন্তকাল/১৪২৪

বাসনা কঞ্জু

বাসনা কঞ্জু

মানব জনম যেন প্রেম আতুর ঘর। প্রেম দত্তক পায় বলা চলে। মাতৃকোলে সেই যে প্রেম সুধাপান। সেই সুধায় বেড়ে উঠে। চন্দ্র সূর্য রাত দিনে নিরব অভিমানে। ধরা তলে মায়া বাড়ে। প্রকৃতির সাথে খন্ড খন্ড মায়া। শৈশবের কৈশরের যৌবন মায়া। মানবিক সজ্জন মায়া। আত্মার আত্মীয় মায়া। অভিমান অভিসারের মায়া।

মানব প্রেম

মানব প্রেম সে তো প্রথাগত নিত্য
আলো হাওয়ার মতো সর্ব সহা
কারো গায়ে দোল লাগে তো দোলায়
না লাগলে দুলোনিতে মজে অর্হনিশি।

কদাচিত
কোন পথিক উর্দ্ধে উঠে প্রেম সুঁপে
জঁপে মুক্তির দানা বিলায় সোদা
মানব প্রেম সুধা রসে ভরা
মৃত্তিকা সুধাসনে অনুভূতির চর্চা গরে।

মানব খাঁচা

মানব শরীর খাঁচায়
এ কোন মননে তার বাস? মানব বলে কথা
কেউ বা সুচো কেউ বা পাজি কেই বা হন্তরক।
কেই আবার চালাক অতি
কেই চতুর ধুত্তু যাই বলি না কেন? মানব তো
মানব খাঁচায় একই জলতরঙ্গ ভরা।

তা হলে এত রুপ এক শরীরে
মন আর বাসনার কারুকাজ; না কি এসবের জট ক্ষুধা?
বাঁচার দাগিদে এমনি খন্ড রুপের খেলা।

বাতি ঘর

মানব প্রেম উর্দ্ধে অতি। এ শুধু প্রেমিক প্রেমিকার নয় বটে। সর্বগুনে উর্দ্ধ গগন মাঝে। যেন অবনী তার আর্শ্বিবাদের আলো ছুঁয়ে, ধন্য হয় তেমনি। শত নিষ্টার ক্ষুধার আকর পেরিয়ে যায় অবলীলায়। ক্ষদ্র ক্ষদ্র প্রেম তার মনে নাহি লয়। ধ্রুবতীর নন্দন নেশায় ছুটে। যেমন ছুটে কুস্তরী নাভির হরিণ। এ যে মন আর মননে আলোর বাতিঘর।

বাসনা চির হরিৎ

বাসনা কি ক্ষয়ে যায়?
খসে পরে নোনা ধরা ইট সুরকির মতো; তয় কোথায় বলে
বাসনা একটা সময় মরে যায়।
তাহলে তো শরীরের একটা অংশ
নুয়ে পরার কথা; কই তা তো প্রতিয়মান হয় না?
দেহ কাঠামো তো একই রয়।

এই শরীর খাঁচায় বাসনার জন্ম
আর থাকেও শরীরে মৃত্যুবধি; তাই বাসনা চির হরিৎ
ঢলে পরা সাঁঝেও রাঙা রসে আপ্লুত হয়।

১৪২৪/২৩ অগ্রহায়ণ/ হেমন্তকাল।