ট্যাগ আর্কাইভঃ জাহিদ অনিকের কবিতা

আমি:

আমি:
সেইসব ভ্রম, যা তুমি দেখতে পাও আধো আলোতে
আমি:
সেই নুড়ি পাথর,
তুলবে তুলবে করেও কুড়াও নি যা’কে
চুলে ঠেলে উদম পিঠে হেঁটে গেছ বেসামাল বাতাসে।
আমি:
সেই বালুকাবেলা-
যেখানে ডুবেছে সূর্য-চাঁদ রোজ-
মৈথুন হয়েছে ফেনীল মোহনার!
কেবল ডুবে নি টিপে টিপে হাঁটা বুড়ো আঙুল।
আমি:
এতটাই ছোটলোক
নিজের মত ছোটলোক কক্ষনও দেখনি আগে।
26/2/2020

আজ একাদশী তিথি

বুধ থেকে শুক্র, রবি থেকে মঙ্গল-
আজ দেখা পাইনি তোমার।
আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা খাইনি কিছু;
আজ দেখা পাইনি তোমার
আজ শনি, আজ একাদশী তিথি।

ঘুমুচ্ছো তুমি-
রেগে নেই, ক্রোধে নেই-
অল্প একটু ভালো নেই,
ঘুমন্ত মানুষের উপর রেগে থাকতে নেই।

বুকের মধ্যে মাটি-
যার বুকে মাটি তার বুকে কথা গাছ।
আমি মরে যাব কথা না বলে-
আমি মরে যাব তোমাকে না দেখে-
আজ দেখা পাইনি তোমার
আজ শনি, আজ নির্জলা একাদশী তিথি।

অটোপসি

যে পাহাড়ে যাব যাব করে মনে মনে ব্যাগ গুছিয়েছি অন্তত চব্বিশবার-
একবার অটোপসি টেবিলে শুয়ে নেই-
পাহার, ঝর্ণা, জংগলের গাছ, গাছের বুড়ো শিকড়- শেকড়ের কোটরে পাখির বাসা;
সবকিছু বেরিয়ে আসবে শরীরের ভেতর থেকে,
বুকের মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসবে হামিংবার্ড আর রক্তে সাঁতরে বেড়াবে ডলফিন পরিবার।

একবার অটোপসি টেবিলে শুয়ে নেই –
গলগল করে পেট থেকে-
গলার নালী পুড়ে পুড়ে মুখ দিয়ে
বেরিয়ে আসবেঃ
অতি সতর্ক থিসিস পেপার, যত্নের প্রেমিকাকে লেখা চিঠিপত্র, দুমড়ে যাওয়া বাজারের ফর্দ, কবিতার খসড়া, পুণ্যবতী চাঁদ, পায়ে না লাগানো সমুদ্রের জল-বেলাভূমি, আর সতেরো ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র।

একবার আসুক অটোপসি রিপোর্ট-
মর্গের ডোম জানবে নিশ্চয়ই;
হৃদপিণ্ডের কোণ প্রকোষ্ঠে সঞ্চিত রক্ত আর কোণ প্রকোষ্ঠে ভালোবাসা!
ভালোবাসা ব্যাপারটা ও’ বুঝেছে, অলিন্দ নিলয় কেটে-কুটে।
কারণটা জানা দরকার খুব,
ঠিক কীভাবে মরবো সে ব্যাপারে কিছুই ভেবে উঠতে পারি নাই এখনো।

পরবর্তী প্রেমিকা আমার

পরবর্তী প্রেমিকা আমার,
খুব সৌভাগ্যবতী, খুব কপালী আর পয়মন্ত হবে।
পরবর্তী প্রেমিকা’কে খুব করব নিপীড়ন আর স্বৈরশাসন –
নির্যাতন করব – শাসন করব
বারণ করব – হরণ করব।

মারাঠি নথ আর ঘুঙুর বেঁধে
বন্দি করব রুদ্ধ প্রেমে;
মেদ গলা দুপুর গরমে-
তক্কে তক্কে তাকে শেখাবো রক্তক্ষরণ।

পরবর্তী প্রেমিকা’কে খুব জ্বালাবো- খুব কাঁদাবো,
বুকের মধ্যে হূল হুল ফোটাবো –
চোখের মধ্যে সুই ফোটাবো;
প্যারাফিন মোম ঢালব নাসারন্ধ্রে
পেট্রোলিয়াম জেলি ঢালব অন্তঃকর্ণে ,
পায়ের তলায় ফোটাবো সেফটিপিন।

তাকে বলব-
রক্ত হও- ক্ষার হও
লবণ হও- ঘাম হও
জল হও- জ্বর হও।
তাকে বলব,
দগ্ধ হও- শুদ্ধ হও
আরাধ্য হও- ঋদ্ধ হও।

পোড়ামুখী,
তোকে দেব কাটা-ছেঁড়া, রক্ত মাংস প্রেম
তোকে দেব গজ ব্যান্ডেজ আর সেলাই প্রেম
তোকে দেব ভায়োডিন আর ন্যাপথালিন প্রেম।

দুপুরের মতন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকা পথে-
বুধবার বলে আসব না শনিবারেও,
ভুলে যাব জন্মদিন, চন্দ্র-দিন।
চিঠি লিখব না, পাঠাবো না পত্র –
লিখব না স্মারকলিপি, লিখব না কবিতা।

পরবর্তী প্রেমিকা,
তোমাকে দেব দুঃখ কষ্ট আর অনাদর প্রেম-
তোমাকে দেব এক মুঠো চাল- দো’চালা ঘর
তোমাকে দেব পোড়া মরিচ, পিঁয়াজ সানকির প্রেম।
তোমাকে দেব শাপ- অভিসম্পাত;
তোমাকে অভিশাপ নারী,
পরবর্তী প্রেমিক তোমার কবি’ই হোক।

মানচিত্রের মতন- পৃথিবী আমার

বরফ দেশের পেঙ্গুইন বাচ্চাদের উচ্ছ্বাসের মতন-
তোমার কপালের ‘পর
সকালে প্রথম চুমু খায় এন্টার্কটিকা।
পেটের উপর ভূ-মধ্যসাগর, আল্পস আন্দিজ;
সূতা ভিজে যাওয়া লবণ ঘামে-
আফ্রিকা-ব্রাজিল রেইন ফরেস্ট।
দুপুরের ডিহাইড্রেশনে-
বুকের উপর মিশরীয় সভ্যতা।

তপ্ত রোদে- হৃদয়ে যখন রক্তারক্তি
তুমি তখন, ক্ষত বিক্ষত ইরাক সিরিয়া-
প্যালেস্টাইন- জেরুজালেম।

সকালে আটলান্টিক, কুইন্সল্যান্ড-
বিকেলে উত্তর কোলকাতা, শিলং – দার্জিলিং।
পাহাড়িয়া রাস্তা, সাঁওতাল গাঁ-
ঠিক যেন, কপালের দু’পাশ থেকে বেয়ে নামা আসা পার্সি নারীদের জুলফি।

সন্ধ্যায় –
পায়ের উপর জল এসে চুমু খেতে খেতে
নখের ডগা বদলে গেছে প্রবাল প্রাচীরে।
লোমকূপে জমা সামুদ্রিক লবণ
চুল উড়ে যাওয়া বেতাল বাতাসে-
তুমি তখন
উত্তর আমেরিকান ওশেনগার্ল কিংবা বাংলাদেশে ‘সমুদ্রকন্যা’।

দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে –
আন্দামান নিকোবর- ধন-মানিক দ্বীপপুঞ্জে
গলদা চিংড়ির লার্ভার মতন থলথলে
কখনওবা ইলিশ ডিমের মতন দাঁতের নিচে ঝুড়ি-ভাঙা জীবন।

স্বাধীনের আগে – পরে
পাক-মোটর – বাংলামোটর
স্থল বন্দর, সমুদ্র বন্দর-
মংলা- ভেনিস- বিশাখাপত্তনম- চিটাগাং;
এত বৈচিত্র্য
এত জীবন
পৃথিবীর মতন –
প্রেমিকার মতন,
ক্ষত চিহ্নের মতন
করে যাচ্ছ ধারণ শরীরে তোমার,
জন্ম দাগের মতন তেতিয়ে ওঠা সীমান্ত রেখা।

শরীর মানচিত্রের মতন-
ছোট বড় অসংখ্য দাগে সয়লাব;
বিভাজন রেখা জমে জমে সাত সাতটি মহাদেশ নিয়ে
তুমি হয়ে গেছ দ্বাবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী আমার।

প্রেমিকার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী প্রেমিকের প্রতি–

শোনো ছেলে, শোনো গুম হয়ে যাওয়া প্রেমিক- তোমাকেই বলছি,
আমার প্রেমিকাটিকে বড্ড ভালোবাসি আমি
– কীভাবে বুঝাই কতটা ভালোবাসি!
পার্থিব দুনিয়ার অপার্থিব কিছু উদাহরণ দেই- যদি বুঝতে পারো!

একজন বাবা যেরকম ভালোবাসে তার কন্যাসন্তান’কে,
কিংবা ধরো একজন কবি যেভাবে ভালোবাসে কবিতা,
ধরো এতটা ভালোবাসি যে, কখনো কখনো মন চায়-
একটা ‘নিষিদ্ধ আপেল’ ভাগাভাগি করে খেয়ে নিতে পারলে ভাল হত।

শোনো-
পূর্ববর্তী প্রেমিক-
আমার প্রেমিকা’কে তুমি ভালোবাসা দিতে পেরেছিলে অল্প বিস্তর কিছু-
তোমার নাম এখনো রূপকথার মত শুনতে পাই তার মুখে মুখে,
যেন তুমি ছিলে সিন্ধু’র বুকে হরোপ্পা মহেঞ্জোদারো’র মতন।

তুমি তাকে যৎকিঞ্চিত আদর আর আহ্লাদ দিয়েছিলে-
কিন্তু বুকের উপরে ঢেউ হয়ে যেতে পারো নি।
তুমি ভালো প্রেমিক ছিলে না, প্রেমিক হিসেবে বড্ড আনাড়ি ছিলে তুমি।
তুমি জানবে,
আনাড়ি ছিলে বলেই একজন ‘নারী’ তোমাকে ভালোবেসেছিল।

যেসব চিঠিপত্র তুমি লিখেছিলে আমার বর্তমান প্রেমিকাকে-
আমি আজও সেসব চিঠি পড়তে পারি আমার বর্তমান প্রেমিকার চোখে।
বুঝতেই পারছ – আমি সাটলিপি জানি, ব্রেইল জানি।

থাক-
তোমার প্রেমের আর মাহাত্ম্য বাড়িয়ে কাজ নেই
অতটা ভালো প্রেমিক তুমি ছিলে না।
বরং তোমার প্রতি আমার কথা বলি,

তুমি তোমার প্রেমিকাকে যে নামটা দিয়েছিলে-
তুমি কি জানো সেই নামটা কত প্রিয় তার?
তাই আমিও সে নামেই তাকে ডাকি-
যদিও কষ্ট হয় আমার, খুব কষ্ট হয়।

তোমার মত এত গভীরে আমি যেতে পারব না আমি জানি,
বড্ড কাচা বয়সের প্রেমিক ছিলে তুমি-
বড্ড ভুল করা প্রেমিক ছিলে-
জানবে ছেলে,
এসব ভুল ভ্রান্তি করেছিলে বলেই তোমাকে ভালোবেসেছিল একজন ‘অ-নারী’।

যতই তোমাকে আমার ঈর্ষা হোক-
তোমার কথা শুনলে যতই আমার বুকে মেঘ জমুক-
তুমি জানবে,
তোমার প্রতি রয়ে গেছে আমার দুঃসম্পর্কের ঋণ-
তোমার প্রতি রয়ে গেছে আমার না চুকানো দায়।

আমার অবর্তমানে –
আমার বালিকা প্রেমিকাটিকে বড্ড যত্নে রেখেছিলে তুমি-
কিছুটা ভালো রাখার দায়িত্ব তুমিও নিয়েছিলে।

কষ্টগুলোও তাকে তুমি দিয়েছিলে বড্ড আদরে আদরে-
তোমার দেয়া কষ্টগুলো আমাকে বলতে গেলে আজও সে তুলোর মতন নুইয়ে পড়ে-
আমি আজও তোমার পুরুষত্বের জল পিইয়ে খাই ও’র চোখ থেকে।

তাই!
হে পুরুষ –
তুমি জানবে ইহ-জাগতিক এই ঋণ আমি শোধ করব না,
তোমার কাছে এইটুকু ঋণী আমি থেকে যাব;
তবুও পালিয়ে যাব না, ঋণখেলাপী হব না।

শোনো পরবর্তী প্রেমিক- শোনো দুধ-দাঁতের ছেলে,
যে মেয়েটিকে তুমি ভালোবাসতে চাইছ-
যা’কে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছ- তাকে চাইবার আগে-
এসো বাঁধো তোমার টাই নট বাঁধন,
হালকা মদ্যপান করতে করতে দু’জন সভ্য মানুষ যেভাবে খোলামেলা আলোচনা করে-
ঠিক সেরকম পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত দ্বিপক্ষীয় একটা মিটিং করে নেই।

যে নারীটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ আকাশ খোলা রাস্তায়
সানরুফ গাড়িতে করে ভেসে বেড়াচ্ছ চাঁদের জ্যোৎস্নায়-
তাকে নিয়ে কিছু কথা আমাকে জানিয়ে যাও।

আমাকে বলে দাও –
এই মেয়েটিকে তুমি এতটা ভালোবাসা দেবে যে
আমাকে সে ভুলে যাবে,
বলও, তুমি এতটা প্রেম তাকে দেখাবে-
যাতে সে আমাকে ভাবতে পারে প্রতারক!
বল,
তাকে ভালোবাসবে কারণ, তুমি ভালোবাসা জানো সেটা নয়।
তাকে তুমি ভালোবাসবে কারণ,
তুমি জানবে- ভালোবাসা পাওয়ার মত কিছু নয়।
তাকে তুমি ক্ষমা করে দেবে অসীম অক্ষমতায়ও- কারণ, তুমি মহত্তম নয়
কারণ তুমি জানবে,
তুমিও আমার মতন এই মেয়েটির প্রেমিক-পিতা হতে চাইছ।

বলো এসব ভালোবাসা তাকে তুমি দেবে?
কেবল তাকে তুমি ভালোবাসাই দেবে, দুঃখ দেবে না।
কেননা, দুঃখ সবাই দিতে পারে-
সমান্তরালে ভালোবাসা দিতে অনেকেই পারে না।

এসব প্রতিজ্ঞা আমায় তুমি দেবে বলো?
তোমাকে তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিতে হবে না-
তোমাকে ভাবতে হবে না – সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা-
শুধু বলো? যা যা বলেছি তার জন্য, এটুকু তুমি করবে?

সত্যি বলতে-
আমার প্রেমিকাকে ভালোবাসার জন্য আমার অনুমতি তোমার নিতে হবে না,
বুঝতেই পারছ এতক্ষণে –
আমি কেবল তাকে প্রেমিকের মতই ভালোবাসিনি-
ভালোবেসেছি পিতার মত।
তাই তাকে তোমার হাতে তুলে দিতে কিছুটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে,
ঠিক কন্যা বিদায় দেয়া পিতার মত আমার বুকেও করুন সুর বাজবে।

শোনো,
প্রিয়তম! মাই লাভ!
আমার আশীর্বাদ লেপ্টে আছে তোমার কপালে চুম্বনের মতন-
তোমার পরবর্তী প্রেমিক শুদ্ধ হবে, ঋদ্ধ হবে।
তবু,
তোমার পরবর্তী প্রেমিক’কে আমার কথা বলো না।
পরবর্তী প্রেমিক’টি তোমার কবি না হোক-
আমি নিয়েছি সয়ে শ’য়ে শ’য়ে; সেও কি পারবে?
একজন পুরুষ হৃদয়ের অনুকম্পন একজন সমমনা পুরুষ ছাড়া খোদাও বুঝেন না।

পরাধীনতা?

একই ভুলে;
একই কারণে
বিধিনিষেধ মেনে চলে-
থেকে যাওয়া আজীবন যেভাবে ছিলাম।

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল প্রেমিকা,
দর-কষাকষি করে কতটা প্রেম তুমি নিজে পাবে
আমাকেই বা কী দেবে?

সংগ্রামে না হয় স্বাধীনতা আদায় করে নেয়া যায়,
কিন্তু পরাধীনতা? তা’কে কীভাবে করব আদায়?

মাতৃত্ব

এই যে তোমাকে ছুঁয়ে আমার নতুন জন্ম হয় রোজ রোজ, তুমি মায়ের মত এক নারী;
এ তোমার নব-মাতৃত্ব!
যুগপৎ এই জন্ম আমার, এ জন্ম তোমার।

তুমি এক প্রেমিকা মাতৃ-জন্ম নাও,
আমি নেই সেই মানবজন্ম; যা পূর্ণ করে তোমার মাতৃ-প্রকৃতি,
যুগপৎ এ মাতৃত্ব তোমার, এ মাতৃত্ব আমার।

(মে ১২, ২০১৯)

অধঃপতন

কখনো দিনের শেষে যখন মনে হয় এসেছে উপযুক্ত সন্ধ্যা –
অসীমে তাকাতে ইচ্ছে হলে চোখ লেগে থাকে আকাশের নীলে;
সমগ্র নীল যেন শোষণ করে নেই নিজের অভ্যন্তরে
যেন নেভী ব্লু জামা গায়ে বহুদিন পরে কেউ এসেছে স্কুলে হাজিরা দিতে।

হঠাৎ তারা খসে যেতে দেখলে-
বুকে হাত চেপে, আঙুল দিয়ে কাটাকুটি করে;
নিপাতিত হওয়া তারার কাছে চাইতে ইচ্ছে করে একটা দুইটা অপূর্ণ চাওয়া;
ইচ্ছে করে কিছু ফরিয়াদ জানাই!
অথচ হায়! দেখ নিয়তি!
কার কাছে চাইব? কোন্ তারার কাছে? যে নিজেই সামলাতে পারে না নিজেকে!

আকাশ হতে অসীম বেগে যে তারাটি আছড়ে পড়ে মর্তের বুকে –
তা’কে দেখে নিজের কথাই ভাবতে বসি;
কী তফাত ও’র আর আমার?
পৃথিবীর বুকে একজনের কেবল হচ্ছে পতন –
আর আমি; নক্ষত্রের’ই সন্তান –
সেই কত আগে আমারও হয়েছে অধঃপতন।

তবুও এমন উপযুক্ত সন্ধ্যাবেলায়-
আরতি থাকে, ধূপের কড়া গন্ধ থাকে-
কাঁসার থালায় বেল পাতা’তে আত্মশুদ্ধির শঙ্কা থাকে।

অস্তিত্ব

মেয়ে আমি তোমার তেমন প্রেমিক নই
যার কাঁধে তুমি হাত রেখে পাবে নির্ভরতা।
আমি তোমার সেই ভালোবাসা নই
যার বুকে মাথা এলিয়ে পাবে পরম প্রশান্তি।
একই মায়ের গর্ভ ভাগাভাগি করে নেয়া আমি তোমার ভাই নই
যা’র সাথে তোমার নাড়ীর বাঁধন।
আমি তোমার পিতার মত নই-
যা’র আঙুল ধরে বেড়ে উঠেছ -পেরিয়েছ ভীত কৈশোর।

আমি তোমার দুঃসময়ের বন্ধু নই
প্রভুর মত স্বামী নই;
তোমার কোমল বাহুতে বাঁধা, মোমে বদ্ধ রূপার রক্ষাকবচ নই-
ভিড়ের মধ্যে আমি তোমার তেমন কেউ নই
যে তোমাকে আগলে রাখবে পাহাড়ের মত;
এমন কোনো শক্তি আমি নই, যে ফেরাবে সব ঝড়-জলোচ্ছ্বাস।

আমি তোমার এমন কেউ-
যা স্পর্শকাতর; যা’কে রেখেছ গোপনে- গভীর সঙ্গোপনে।
আমি সেই দমকা বাতাস-
যা’কে নিয়েছ বুকের প্রকোষ্ঠে নিশ্বাসের সাথে।
আমি তোমার এমন কেউ-
যে চাইবে,
একটা কাঁটা আমার যদি বিঁধে – তোমার পায়েও কিছু রক্ত ঝরুক।

বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত মুহূর্তে পাশাপাশি দাঁড়ানো আমি কোনো রাত্রি নই-
আমি সেই সন্ধ্যা-
যখন একাকী ভেবেছ একান্তে নিজের কথা।
আমি সেই অনড় সত্তা;
যা মিশেছে তোমার অস্তিত্বে, যা বড় হয় তোমার শিরা ধমনীতে-
আমি তোমার তেমন কিছু- যা রোজ বড় হয় তোমার অস্থিমজ্জায়;
বলতে পারো, আমি তোমার অনাগত সন্তানের মত-
যে মিশেছে তোমার সত্তায়; যে করেছে পূর্ণ তোমাকে।

০৩ রা মে, ২০১৯