মৃধা মোহাম্মাদ বেলাল এর সকল পোস্ট

মৃধা মোহাম্মাদ বেলাল সম্পর্কে

মৃধা মোহাম্মাদ বেলাল তরুণ লেখক ও কবি। জন্ম ১৯৯৬ সালে ৫ই জুন, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার দক্ষিণ কোদালপুর গ্রামে। পিতা- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক মৃধা, মাতা- গৃহিণী হোসনেয়ারা বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই জ্যেষ্ঠ। লেখালেখির অভ্যাস নবম শ্রেণি থেকে। তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন কবিতা, কলাম ও ফিচার। তার লেখায় ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকারের বহু মাত্রিক দিক এবং প্রেম-বিরহ-প্রণয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।

পরনারী

পরনারী

ঋতুর আবর্তনে সবুজ পাতাদের দল
পৃথিবীর মৃত্তিকাকে ছুঁয়ে যাবে বলে
কেমন করুণ মৃত্যু বেছে নিয়েছে!
অতঃপর ঝরাপাতা!

বাতাসের ভেতরের প্রাণ কিংবা
সূর্যের অপরাজেয় শৌর্যকে উপেক্ষা করে;
শক্তিমান ডালপালার ঘরে
সহোদরের সাথে;
বৈশাখের ঝড়ের রাত্রি কেটেছে বহুদিন।
তবুও সেইসব মুহূর্তকে ভুলে
কেবলই পাতার টান মৃত্তিকারই সাথে,
কেবলই ভালোবাসা পাতার মৃত্তিকারই সাথে।
অপেক্ষা কেবলই ঋতুর আবর্তনের;
অতঃপর মৃত্তিকার বুকে নির্বাণ—মাটির গন্ধের ভেতরে শেষে!

তুমিও কি তাই, পরনারী?
ঝরাপাতার মতন!
অষ্টাদশী যৌবনের গাঢ় আকাঙ্ক্ষা জিইয়ে রেখে
কেবলই অপেক্ষা—ঋতুর আবর্তনের।
আমিও তো বুকের ভেতরে হৃদয় পুষে রয়েছি,
রন্ধ্রের ভেতর থেকে ভেতরে তুমি নির্বাণ নিবে বলে।

অন্ধকারে

অন্ধকারে

পৃথিবীর মৃত্যু হয় অন্ধকারে!
অশ্রুর নির্জন সমুদ্রে ডুবতে ডুবতে
লোনা-শ্যাওলায় জেগে ওঠা দ্বীপে
মৃত্যু আমারো হয় অন্ধকারে!

হাঁসফাঁস করে সূর্য যখন নুয়ে পড়ে বিকেলের দিগন্তে,
পদত্যাগ করে দীর্ঘশ্বাসে পৃথিবীকে রেখে একপাশে অন্ধকারে,
সহসা নির্লজ্জ পৃথিবী হেঁটে হেঁটে যায় অন্ধকার বুকে।
কোন অচেনা এক অন্ধকারে চুরি হয়ে যায় আমারো গন্তব্য,
হারিয়ে-ফেলা-পথ হেঁটে হেঁটে যায় অন্ধকার গুহাতে,
আমি জানি।

তবুও,
যেতে যেতে ক্লান্ত পথিকের মতো
চাই দিকপাল হোক দূরের রূপোলি চাঁদ,
চাই তালপাখা হাতে দাঁড়িয়ে কোন এক নারী,
চাই একটা নৌকো হতে চেয়ে মাঝী,
চাই একটা হ্রদ অথবা নদী।

জল আলাপ

জল আলাপ

– জেগেছে?
: কী?
– ঘুম!
: হুম।
– তাহলে চলো।
: কোথায়?
– ঘাসফুলের বিছানায়!
: কতোকাল?
– অনন্তকাল!

: বড্ড ভয় করে যে!
– দ্যাখো, সাক্ষী রূপোলি চাঁদ, ভেসে বেড়ানো মেঘেদের পালকি, দলবেঁধে কতো জোনাকির খে…..
: বেশ হয়েছে! আর পটাতে হবে না!
– তাহলে ভাসাও, যে জলের কোন কিনার নেই।
: আজ আমি-ই জল!

অপ্রকাশিত নোটিশ

অপ্রকাশিত নোটিশ

প্রেমিকার চুলের ঘ্রাণে বিবর্তন ঘটেছে
বিবর্তন ঘটেছে এক বালিশে রাত্রির স্পর্শে
শাড়ীর ভেতর জীবিত সুগন্ধীর গন্ধে- বিবর্তন ঘটেছে।

প্রেম-মহব্বতী-আশিকী-পেয়ারী হতে পারে ব্যক্তির সম্বোধন।
শতাব্দী পাল্টে গেছে ভেবে দুঃখ নেই;
সত্তার ভেতর স্বত্বাধিকারীর প্রবেশ সীমালঙ্ঘন- অপ্রকাশিত নোটিশে তাই লেখা।

নারী তুমি বিজয়িনী

নারী তুমি বিজয়িনী

সেই পাথর যুগের জীবিকা অন্বেষণে শিকার ও সংগ্রহ থেকে শুরু করে নব্যপ্রস্তর যুগে উৎপাদনের সূচনায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে নারীর সাহিত্যচর্চা, যোদ্ধা এবং রাজ্য বা সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনায়ও নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ও নারী পিছিয়ে ছিল না। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ, রাষ্ট্র পরিচালনা, মহাকাশ ভ্রমণ ও গবেষণা, সাহিত্যচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারী গৌরবের রেখা টেনে চলেছে। তবে এই অর্জন খুব সহজেই অর্জিত হয় নি। শত বাধা ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। যা এখনো বিদ্যমান। একজন নারীরও সমতার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার ও উন্নয়নে অংশীদারিত্বের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যারাই পেয়েছেন তারাই আজ স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।

শত বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিকে হার মানিয়ে অনেক নারীই ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরিত হয়ে আছেন। তাঁরা সমকালীন গণ্ডী ছাপিয়ে গিয়ে সমাজকে দেখিয়েছেন উন্নয়ন ও কল্যাণের পথ। নিজ দক্ষতা ও কর্মগুণে আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-

১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মুসলিম ভারতের তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজিয়াই একমাত্র নারী, যিনি দিল্লির সিংহাসনে প্রথম উপবেশন এবং রাজদন্ড ধারণ করে প্রবল প্রতাপে শাসন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ, যিনি দাস বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।

ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর নারীবিদ্বেষী আমির-ওমরাহগণ সুলতান রাজিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন। তাঁদের যুক্তি হল যে, ইলতুৎমিশের পুত্র থাকার কারনে কন্যা উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এই রাজমহীয়সী ছিলেন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ন, দয়াশীল, সুবিচারক, বিদ্যোৎসাহী, প্রজাবৎসল, সমরকুশল এবং রাজোচিত বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। শৈশব থেকেই রাজিয়া ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি এবং পিতা সুলতান ইলতুৎমিশের শাসনকার্য লক্ষ করতেন। তিনি অস্ত্রচালনা, অশ্বারোহণ ও রাজনীতিতে ক্রমশ দক্ষ হয়ে উঠতে থাকেন। রাজিয়ার রাজোচিত গুণাবলি দেখে সুলতান ইলতুৎমিশ তাঁর পুত্রদের পরিবর্তে কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করেন! সুলতান রাজিয়া দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন এবং বর্ম ও শিরস্ত্রাণ পরে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু রক্ষণশীল আমিরগণ সুলতান রাজিয়ার খোলামেলা রাজকীয় আচার-আচরণ মোটেই পছন্দ করতেন না। অতঃপর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে এক যুদ্ধে এই রাজমহীয়সী সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়!

ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসংস্কারক এবং নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও তিনি বড় ভাইয়ের নিকট ঘরেই গোপনে মোমবাতির আলোয় বাংলা ও ইংরেজি শিখেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পদে পদে গঞ্জনা সত্যেও তিনি জ্ঞানার্জনে অবিচল ছিলেন। তাঁর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনেও রোকেয়াকে শিক্ষার্জন ও লেখালেখি করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে মেয়েদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিরূপ সমালোচনা ও নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সে যুগের মুসলমান মেয়েদের শিক্ষালাভের অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন।

রোকেয়ার সমগ্র সাহিত্যকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কুসংস্কার ও অবরোধ প্রথার কুফল, নারীশিক্ষার পক্ষে তাঁর নিজস্ব মতামত, নারীদের প্রতি সামাজিক অবমাননা এবং নারীর অধিকার ও নারী জাগরণ সম্পর্কে তাঁর প্রাগ্রসর ধ্যানধারণা। শিক্ষা ব্যতীত নারীজাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয়, এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা ও শিক্ষাবিস্তার এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসেন এবং স্থাপন করেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

একবিংশ শতকে এসে বাংলাদেশী প্রথম নারী পর্বতারোহী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে নিশাত মজুমদার। এরপরেই রয়েছে সেভেন সামিট বিজয়ী ও দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী পর্বতারোহী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরীনের নাম। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যোগ দিতে কঙ্গো গিয়েছে বিমানবাহিনীর দুই নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী।

নারীদের এই বিশ্ব জয়ের ভূমিকা যতটা আনন্দের ততটাই গৌরবের। দেশের জন্য নিজ মেধায় গতানুগতিক পেশার বাইরেও নারীরা চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় সফলভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর কল্যাণে নারীর যে অর্ধেক অবদান তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। তবে নারীর এই মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে কতটুকু কাঠখড় পোড়াতে হয় এবং তার কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় তা ভাববার বিষয়! উন্নয়ন ও কল্যাণে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব কোন ভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

রাষ্ট্র তবে কি জানে?

রাষ্ট্র তবে কি জানে?
কাঁটাতারে ঝুলন্ত নিষ্প্রাণ দেহের আত্মকথন!
পঁচে-গলে-ক্ষয়ে পড়া লাশের গন্ধ চারদিক,
ক্ষোভ ঝেড়ে ঝেড়ে যার মৃত্যু!
বেঁচে থাকার বয়স তখনো ফুরোয়নি,
অথচ প্রাণে বহমান নিঃশ্বাস
এখন তা অ-নে-ক অ-তী-ত নিঃশেষ।

রাষ্ট্র তবে কি জানে?
বাংলার বুকে অদ্যাবধি পাকিস্তানি বীভৎস আত্মা
এখনো হেঁটে বেড়ায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া!
ওরা, বেঁচে থাকে আমাদের মৃত্যু দেখবে বলে;
অর্জিত স্বাধীনতা বহু ত্যাগে-
এখানে ওদের বিচরণে শেকল পড়ুক পদে পদে।

রাষ্ট্র তবে কি জানে?
জাতির মাথা কেটে ফেলার নৃশংস ছকে
বহু পায়ের পায়তারা ভিন্ন ভিন্নরূপে অবিরত!
আরো একটি ১৪ই ডিসেম্বর ধীরে ধীরে
মুক্ত-বিবেকের গলা কেটে-
মস্তক বিহীন দেশ তাদের নকশা।

রাষ্ট্র তবে কি জানে?
কাঁদানে গ্যাসের শেলে নিষ্প্রভ চোখের বেদনা!
প্রখর সূর্যরশ্মির যন্ত্র যখন কালো সানগ্লাস,
সকল বেলার আলো এখন ঘন কালো।
দৃষ্টির দৃশ্য এখন সত্য অদৃষ্ট,
অনুভূতির জগৎ ছুঁয়ে যার মিথ্যা বসবাস।

রাষ্ট্র তবে কি জানে না?
নাগরিক বিবেক ফাঁকি, সংবিধানে নেই!
চোখের কর্ণিয়ায় জমতে থাকে ঘটনা,
প্রতি পাতায় ক্লিকে ক্লিকে আটকে যায় দৃশ্য।

ভালোবেসে দ্যাখো

ভালোবেসে দ্যাখো-
মস্ত বড় আকাশ দেবো
উড়বে হাজার পাখি,
মন ভোলানো মুগ্ধ হবে
এক পলকে তোমার আঁখি!

ভালোবেসে দ্যাখো-
পারিজাতের বাগান দেবো
থাকবে রঙিন প্রজাপতি,
যুগল ডানায় ছবি শত
তুমি-ই তার অধিপতি!

ভালোবেসে দ্যাখো-
সন্ধ্যা তারায় সন্ধ্যা দেবো
উড়বে শত ফানুস,
উচ্ছ্বাসেতে স্বপ্ন ছুঁবে
দেখবে সারি মানুষ!

ভালোবেসে দ্যাখো-
শান্ত শীতল রাত্রি দেবো
সাথে নিজুত কোটি জোনাকি,
আলোয় আলোয় ভিন্ন জগত
অবাক চোখে বলবে একি!

ভালোবেসে দ্যাখো-
পূর্ণিমাতে ফোঁটা দেবো
জ্যোত্স্না ভরা চাঁদ,
চন্দ্রকন্যা দেখবে চেয়ে
মাথা রেখে আমার কাঁধ!

ভালোবেসে দ্যাখো-
টারশিয়ারী পাহাড় দেবো
ঝরবে ঝিরি ঝর্ণা,
বিলি কেটে ভিজবে কেশ
মর্মপটের পাহাড় কন্যা!

বাবা

আম্মু দেখে ধোয়ার ক্ষণে,
বলে তখন উদাস মনে—
“শার্টের কলার ক্ষয়ে ঘর্মে,
সুখ যায় উড়ে তবে কর্মে।
আহ! বোতামটা ছিঁড়ে পড়ে;
জুড়ে দিব আজ সোনামুখী সুইফোঁড়ে!”

জুতোর তলা গেছে ফেটে
ধুলি মুছে পলিশ নেটে
মুচি বলে অবাক শত—
“স্যার, আর সেলাই কত?
নতুন একখান কিনুন আবার;
গুনেছি, আজকেসহ সাতাশবার।”

কাজের ফাঁকে ক্লান্ত রোদে
বাবার তখন ভীষণ খিদে
দু’টো সিঙ্গারায় উদর ভরে
সন্ধ্যে হলে ফিরে ঘরে।
আশার আলো চাঁদটা উড়ে
স্বপ্ন একদিন আসবে নীড়ে!

মনোমুগ্ধকর মনোহৃদয়ও উচ্ছ্বাসে

মনোমুগ্ধকর মনো-হৃদয়ও উচ্ছ্বাসে
মেঘের পালকিতে চড়ে আকাশে ভেসে
শিবসা-পাড়ের সবুজ ঘাস আর ঘাসফুলের দলে
শরতের নীড়ে উঁকিঝুঁকি কাশবনের আড়ালে
মাচু পিচু, সিন্ধু এবং পুণ্ড্র নগরীর প্রাচীরে
আলেকজান্দ্রিয়া, পারসেপলিস এবং ঝুলন্ত উদ্যান— মনোরমপুরে
কৃষ্ণ-লোহিত-লৌহিত্যের বন্দর-দ্বীপ-জল-তটে
ভোরের নক্ষত্র পথ দেখায়— স্বরচিত পটে
অন্নপূর্ণা ও পিলাতুসে সাদা বরফ আলো ঝলমলে
রোদের কিনারে ভিড়ে মোমের মতন গলে
শিশির ভেজা চন্দ্র-নিশিত-রজনী গায় মেখে
আমরা গিয়েছি দুজনে হারিয়ে— সবার অলক্ষ্যে
মনোমুগ্ধকর মনো-হৃদয়ও উচ্ছ্বাসে
মেঘের পালকিতে চড়ে আকাশে ভেসে!