ট্যাগ আর্কাইভঃ মুক্তিযুদ্ধের কবিতা

আঁধার ভাঙা সূর্য [১৯৭১ এর কবিতা]

আঁধার ভেঙে দেখা দিলো নতুন আলোর রবি।
শোষণের মাঝে লুকিয়ে ছিলো স্বাধীনতার ছবি।

বহু দিনের অপমানের আর শোষনের বঞ্চনা।
ক্রমে ক্রমে রুপান্তরিত হলো মুক্তির চেতনা।

সীমার বাঁধন অতিক্রমে গর্জে উঠলো জাতি।
বাঁধার বিন্ধ্যাচল পেরিয়ে এলো, নতুন প্রভাতি।

লড়াই হলো রক্ত নিলো পাক সেনাদের দল।
বুকের মাঝে বইলো ব্যথা চোখে অশ্রুজল।

সেই রক্ত জলে শপথ নিলো, দৃপ্ত তরুনেরা,
সর্বোচ্চ ত্যাগে জীবন দিলো বীর মুক্তিসেনা।

লক্ষ মা বোনের অপমানের অসহ্য শোকগাঁথা ,
শুনতে লাগে বুঝি এ এক অবাস্তব রূপকথা।

রূপকথা নয় রূপকথা নয় এই তো স্বাধীনতা
বাংলা মায়ের জন্মকালীন কষ্টের শোক গাঁথা।

প্রদোষকাল[ ১৯৭১ এর কবিতা]

ঘনান্ধকার আঁধার নক্তে।
অপ্রার্থিত অশনি নিনাদ,
আসুরিক আর্তচিৎকারে অকস্মাৎ প্রকম্পিত ব্রহ্মাণ্ড ।
অপ্রত্যাশিত,অনাকাঙ্খিত
পাকসেনারা এলো ছুটে…..।

অজ্ঞাত অবিদিত আক্রোশে
অত্যাচারীর বুটের উদ্ঘাতে,
অশ্রাব্য গালি…..।
গুলিতে রক্তে বারুদের ঝাঁঝালো দুর্গন্ধে
ছিন্ন বিছিন্ন মানুষ এবং মানবতা।
হায়েনার হিংস্র ছোবলে
অবিলম্বে
রক্তাক্ত হলো মা মাটি দেশ
আমাদের সম্মান , আমাদের গৌরব
আমাদের সমুদয় অহংবোধ।

দেশ ভাগের সূচনা হতে উপারম্ভ
যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা সমূহ।
তারই পরম্পরাগত ঘটনা।
সেই অপ্রত্যশিত তিমির রাতে
কেড়ে নিলো আমাদের সকল অধিকার
হিংস্র নরপিশাচের দল……।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা এলো অবিলম্বে……
যার নাম
“বাংলাদেশ”

আমি বীরাঙ্গনা বলছি

এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।
এখনো চামড়ার বেল্টের বীভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় বার বার।
এখনো চাপ চাপ ব্যথা আমার হাড়ে মাংসে, অস্থি মজ্জায়, প্রতিটি গিরায় গিরায়।

ওরা আমায়! ওরা আমায়!!
জানো তো, আমি ওদের ভাই ডেকেছিলাম।
তারপরে বাবাও ডেকেছি!
দাদুও ডেকেছি হয়তো তীব্র অশালীন ব্যথার ঘোরে!!
মনে নেই।
মনে নেই! মনে নেই!! মনে নেই!!!
আমি অনেক কিছুই চাইনি। চাইনি মনে রাখতে।
চাইনি ! চাইনি!! চাইনি!!!
আমি এসব কিছুই চাইনি।
এতটা পাশবিক, বীভৎস কি করে হয় মানুষ।
ওরা কি কোন মায়ের সন্তান নয়?
আমার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে কি মনে পড়েনি?
নিজের মা বা বোনের কথা।
অথবা মেয়ের কথা?
ছি! ওয়াক থুহ!!
নরপিশাচের দল।
ওরা নাকি আমার ধর্মের ভাই!!
ধর্ম ? হায় ধর্ম!!
ধর্মে আমার আর বিশ্বাস নাই।
ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হলো দেশ।
লক্ষ কোটি মানুষ হলো নিঃস্ব, অসহায় ভিক্ষুক।
ভিটামাটি হারা।
ধর্মের নামে চলে হত্যা খুন পাশবিক অত্যাচার।
এত পাপ তুমি কি করে সইলে বিধাতা!
এত পাপ তুমি কি করে সও?
দেশ তো স্বাধীন হলো।
তুমি কি আমায় বলতে পারো ? আমি এখন কোথায় যাবো?
কার কাছে যাবো?

চির দুখিনী মা

জয় বাংলার হলো,
বলো বাংলার জয়।
বাঁধ ভাঙা আনন্দে,
জনতা স্লোগান দেয়।

সবার ই কেউ না কেউ ফিরলো
মায়ের ফিরলো না যে কেউ!
বিজয়ের আনন্দে বুকের মাঝে ,
কষ্ট ব্যথার ঢেউ।

যুদ্ধে গেছে তার প্রাণপ্রিয় ছেলে,
মেয়ে এখন বীরাঙ্গনা।
প্রতি পল যেন তাঁর জীবনে,
হাহাকার ভরা বেদনা।

স্বামী ছিলো বুদ্ধিজীবী,
তুলে নিয়ে গেলো আল বদরে ।
লাশটুকু ও পাইনি দেখতে,
প্রাণ কাঁদে হাহাকারে।

যুদ্ধ শেষে আশা ছিলো,
ফিরবে খোকা কোলে।
ডাকবে আবার আগের মতো,
মা, মাগো বলে।

সবার ই তো সবাই ফিরলো,
মায়ের ফিরলো না যে কেউ!
কি করে কাটাবো বাকী জীবন,
কষ্ট ব্যথার ঢেউ!!

ফিরে দেখা একাত্তর

মহাবিদ্রোহের পথ ধরে
বাংলার আকাশে আজ মেঘের ঘনঘটা।
তীব্র বারুদ স্ফুলিঙ্গ ঠিকরে পড়ে যেন,
প্রতিটি বাঙালির চোখে মুখে সাথে আত্মবিশ্বাস।

রক্তাক্ত পিচঢালা পথ।
বাতাসে টাটকা বারুদের গন্ধ,
রক্তে মুজিবের দুর্দমনীয় ভাষণ।
যেন খেলা করে সর্বদা
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,
জয়বাংলা জয়বাংলা
নতুন পতাকা। আমার পতাকা।
মিটিং, মিছিল, অসহযোগ……
চারদিক ফিসফাস,
সন্দেহ, অবিশ্বাস….।
ভাঙনের শব্দ,
স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর।
নবযৌবন হতে উৎসারিত সদ্যোজাত শিশুর আগমনী ধ্বনি সর্বত্র।

অপর দিকে
পাকি নরপশুদের তীব্র নিষ্ঠুর পাশবিক হুঙ্কার,
বর্বরোচিত অত্যাচার, হামলা, অমানবিক নির্লজ্জ আচরণ,
গুলি বেয়নেট….
অসহায় বাঙালির তীব্র আর্তচিৎকার,
আমার বোনের তীব্র কষ্টের চিৎকারে ভারী বাতাস,
অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি।
সাথে বেইমান
বর্বর রাজাকার আলবদর আল শামস নামের
দেশীয়
হায়েনারা বেহায়া হাসিতে আকাশ বিদীর্ণ…।
লুটপাট, নির্লজ্জ বেহায়াপনা, মিথ্যাচার
তবু ও
বাঙালি দামাল ছেলেরা রক্ত শপথে আজ দৃপ্ত।
মৃত্যুকে তারা করেছে জয়।
আমার বোনেরাও আজ তৈরি অগ্নি শপথে।

মায়ের চোখে নেই কোন জল
আছে শুধু ঘৃণা….. চাই প্রতিশোধ, প্রতিশোধ, প্রতিশোধ।
চলবে লড়াই
লড়াই লড়াই
মাতৃভূমি কে মুক্ত করার অভিপ্রায়ে ……

চব্বিশ বছরের শৃঙ্খল
ভাঙার অঙ্গীকার আজ সর্বত্র
মাতৃভাষার রক্ষার সুচনা থেকে যার উৎপত্তি
শকুনীর ব্যবচ্ছেদে আজ আর ভয় নাই
দিতে পারে লক্ষ প্রাণ দেশ মাতৃকার চরণে …..।
নিঃশেষে প্রাণ করিলে দান ভয় আর কি !