আবু মকসুদ এর সকল পোস্ট

গোলমাল_কমিটি_১

আমরা গোলমাল কমিটি। বয়স দশ সাড়ে দশ। মসজিদের বাগান আমাদের প্রিয়, একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে সব ফুল সাবাড়। মসজিদের ফুল গেছে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। মসজিদের গা ঘেষে রাস্তা গেছে কোর্টের দিকে মুসল্লিরা আসরের নামাজ পড়ছেন। গতকালের হায়ার করা ভিডিওতে দেখা মোগলে আযমের মধুবালায় মনমগজ আচ্ছন্ন গলা খুলে গাইছি, “পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া”। আমাদের কোরাস গানের তালে ইমামের নামাজ ছুটে গেছে, রুকু বাকী রেখেই সেজদায়। পেছনের মুসল্লিরা বেজায় খ্যাপা।

এই বিচ্ছুদের গতি করতে হবে ভেবে মসজিদ কমিটি মিটিং এ বসেছে, দেখা গেল মসজিদের সেক্রেটারির ছেলেই পালের গোঁদা। প্রতিটি বাসায় অভিভাবক কতৃক ভাল করে ধোলাই খাওয়ার পরে গোলমাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিল পাল্টা আঘাত হানতে হবে। জুম্মায় আমরা মিনারে উঠে নামাজ পড়ি, এক জুম্মায় সবাই যখন প্রথম সেজদায় গেছে আমরা আগুন আগুন বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। নামাজ বাকী রেখে মুসল্লিরা যে যেদিকে পারে দৌড়, সে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থা।

আগুন তদন্ত কমিটি আগুন খুঁজে পেল না কিন্তু গোলমাল কমিটির প্রতিটি সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি হিসাবে এক মাসের জন্য মসজিদ থেকে নির্বাসন দেয়া হল।

মসজিদের পুকুর গোলমাল কমিটির রাজত্ব, গোলমাল কমিটি ছাড়া অন্য কোন রাজাধিরাজ নাই। এক মাসের নির্বাসন কাটানো কঠিন ছিল, তবু শাস্তি শেষের প্রথম প্রহরেই রাজ্য পুনরুদ্ধারে মরিয়া গোলমাল কমিটি পুকুরে হাজির। অজুরত মুসল্লিরা প্রমাদ গুনলেন, আমাদের হাতে রাজ্য সমর্পন করে মানে মানে কেটে পড়লেন।

শবে বরাতের রাতে আগন্তুক এক মৌলানার ওয়াজ মনে ভয় ধরিয়ে দিল, মসজিদের এবং মুসল্লিদের সাথে বেয়াদবির শাস্তি কি বর্ণনা করতে করতে একেবারে কাঁদিয়ে ছাড়লেন। ভীত আমরা মসজিদ কেন্দ্রিক রাজত্ব গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলাম।

দীর্ঘদিন আমাদের দেখা নাই, গোলমাল কমিটি নামকরণ করা মসজিদের মুয়াজ্জিন এলেন আমাদের খোঁজে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে মসজিদে ফিরতে বললেন, মসজিদে ফিরলাম কিন্তু গোলমালে ফিরলাম না।

আমাদের তখন নতুন উন্মাদনায় পেয়েছে। নিজেরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে একতা সাহিত্য ক্রীড়া সংগঠন নামে সংগঠন গড়েছি। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে ফুটবলের মহাযুদ্ধ, যুদ্ধে আমাদের ক্লান্তি নাই। বিজয়ে ক্লান্তি নাই, একের পর এক বিজয় আমাদের যুদ্ধবাজে পরিণত করছে। আমরা হয়ে উঠছি আমাদের কালের পেলে, ম্যারাডোনা।

বন্ধুর_জন্মদিনে

1658072

আমি বাংলাদেশের সমান, বয়সে। দুই চার মাস এদিক সেদিক হতে পারে। বাংলাদেশ এবং আমি একসাথে বড় হয়েছি। ৫০ বছরে দু’জনের তুলনা করলে দেখি আমাদের বড় হওয়া প্রায় অভিন্ন।

আমাদের জীবনে ঘাত প্রতিঘাত এসেছে, ঝড়, ঝঞ্ঝা এসেছে আবার আলো ঝলমলে অসংখ্য দিন একসাথে পার করেছি। ৫০ বছর পিছনে তাকালে দেখি আমরা বেশ সফল, প্রথম প্রথম অন্যের মুখাপেক্ষী থাকলেও সামলে উঠেছি, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছি।

এ পর্যন্ত পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে অনেক, আমাদের সবসময় তাড়া করেছে অসংখ্য শত্রু। বাইরের পরিচিত শত্রুর মোকাবেলা কঠিন ছিল না কিন্তু ঘরের গুপ্ত ঘাতক অনেক সময় পীড়ার কারণ হয়েছে তবু আমরা লক্ষ্যচ্যুত হই নি।

জন্মের প্রারম্ভকালে দরিদ্রতা আমাদের আঁকড়ে ধরেছে, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। দীর্ঘদিন না খেয়ে, আধবেলা খেয়ে পার করেছি। খিদের জ্বালায় অনেক রাত ঘুমোতে পারিনি, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারেও ধর্ণা দিতে হয়েছে।

অনেকে অবহেলা, অবজ্ঞা করেছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য দেখিয়েছে তবুও হার মানিনি। নিজের সম্মান বিসর্জন না দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। চেষ্টার কাছে সময় পরাভূত হয় এর সাক্ষ্য আমাদের চেয়ে কেউ বেশি দিতে পারবে না।

যারা একদিন অবজ্ঞা করত, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য দেখাতো তারা এখন যেচে আত্মীয়তা পাতাতে চায়, আমাদের নজর কাড়তে তারা এখন হ্যাংলামি করে।

আমি এবং বাংলাদেশ এখন গর্বে সিনা টান করতে পারি, অখ্যাত অচ্ছুৎ থেকে নিজের চেষ্টায় আমরা এ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।

আমি ভাগ্যবান বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে পঞ্চাশ পূর্ণ করেছি, বাংলাদেশ আমার ল্যাংগুটে বন্ধু। বন্ধুর জন্মদিনে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই, আমি নিশ্চিত আমার বন্ধুও আমার জন্য একই রকম শুভকামনা পোষণ করে।

নরকের_যাত্রী

পৃথক চিন্তায় বেড়ে ওঠা দু’জন দু’দিকে গেছে
একজন আলো অভিমুখে হেঁটে হয়ে উঠেছে আলোকিত
অন্যজন বিপরীত আলোয় কোথায় যে তলিয়ে গেছে।

পুনরায় মিলনের সম্ভাবনা নেই, যদিও মিলে
আলোকিত জনের আলো অন্ধকার মিটাতে পারবে না
মনের গভীরে ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ, কোন আলো ভেদ করা
অসম্ভব।

আলোর কারবারি অহেতুক আলো ছড়ানোর চেষ্টা করে
যাদের মনে অন্ধকারের স্থায়ী আসন, তাদের বোধে
সত্য পৌঁছানোর চেষ্টা পণ্ডশ্রম।

রাজাকারদের পোষ্যদের মুজিব আলোর সাথে পরিচয়ের চেষ্টা
না করানোই ভালো, এদের মন-মগজ মুজিব ধারণে অক্ষম
সত্য, আলো এরা সহ্য করতে পারে না।

যাদের পথ অন্ধকারে নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের পিছনে
আলো নিয়ে হাঁটা নিরর্থক। যে নরকে যেতে চায়
তাকে যেতে দাও, নরক এড়ানোর কাঙ্ক্ষা যার আছে
তার দিকে হাত বাড়াও।

২৬শে মার্চ

এইদিন আমাদের দিয়েছিল সূর্য
অধিকার আদায়ের সেই রণতূর্য
বেজেছিল এইদিন
অধিকারে সংগ্রামে আমরাই এইদিনে
নিজস্ব স্বত্বা নিজেকেই নেই চিনে
আঁধার মাড়িয়ে যেতে
আমরা দাঁড়িয়ে যাই
আমাদের স্বাধিকার আমরাই নেই কিনে।

এইদিনে পরিচয় করি উন্মুক্ত
ডুব দেই পুনরায় শিকড়ের গভীরে
এইদিনে দিক-ভুলা সেই সব পাখিরা
পুনরায় এঁকে যায় মানুষের ছবিরে।

এইদিন পিতা তাঁর তর্জনী দেখালে
সবুজের মাঠ ভরে মানুষের রক্তে
রক্তের নদীতে উর্বরা হলে মাঠ
মরা লাগে হানাদার ইবলিসি তক্তে।

এইদিন বাঙালি রাস্তায় নামল
এইদিনে দেশ আর পতাকারে কিনল
শ্বাপদের দাপটেও ডরে না যে বাঙালি
এইদিনে হানাদার বাঙালি চিনল।

বৃক্ষের সজীবতা এইদিনে পেয়েছি
এইদিনে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র
এইদিনে পতাকায় উড়িয়েছি নিজেকে
এইদিনে সুখী হয় বাঙালির অন্ত্র।

নদী

নদীর লোভে এতদূর এলাম
এতো দেখি ঘিঞ্জি গলি
মানুষের মাথায় মানুষের পা
এখানে নদী কই!

আমি ফিরে যাবো ভেবে
তোমার ছলছলানো চোখে
দেখলাম প্রবাহিত নদী
এই নদী কিভাবে এড়াই!

তবু পৃথিবী মানবিক

Untitled-1-c

করোনাকাল একদিন অস্ত যাবে। অন্ধকার ভেদ করে ফুটবে আলো। ‘পাখি সব করে রব’ রাত্রি পোহাবে। রাখাল আবার মাঠে যাবে, আর শিশুরা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে নিজ নিজ পাঠে মনোনিবেশ করবে। তাদের মনোনিবেশ আঁধারের ওপারে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবে। করোনার বিসদৃশ সময়ের পরে পৃথিবী আবার পয়মন্তকালে পৌঁছাবে। পরিচিত পৃথিবী ফিরে আসবে। করোনার ছোবল চিহ্ন মুছে যাবে। ফিরে আসবে প্রাণময় পৃথিবী। করোনায় বিপর্যস্ত মানুষ আবার খুলে দেবে বুকের বোতাম। বন্দি জীবনের পাঠ শেষে গলা খুলে গাইবে মুক্তির গান, জীবনের গান। জীবনের নীচতা, ক্ষুদ্রতা, সংশয় পুনঃবিচার্য হবে। মানুষ ফিরবে হৃদয়ের কাছে। বিভ্রান্ত মানুষ হৃদয়ের ডাক শোনার চেষ্টা করবে। কারণ, যত যা-ই হোক না কেন, তবু পৃথিবী মানবিক।

মানুষ সব সময়ই মানবিক। মানুষের মাঝে মঙ্গলের আকুতি শতভাগ। শতভাগ মানুষ স্বচ্ছ এবং নির্মল। স্রষ্টা মানুষকে সদগুণে সৃষ্টি করেছেন। তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন মঙ্গলমন্ত্র। একে অপরের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা, মমতা দেখানো মানুষের ধর্ম। সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ তাই করে আসছে। মানুষের এ পর্যন্ত পৌঁছানোর মূলে আছে এসব গুণ। না হলে মানব ইতিহাসের এত বড় পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো না। করোনা-উত্তর যে পৃথিবী, তার মূলে থাকবে মানুষের মঙ্গল আকুতি আর ভালোবাসা।

করোনাকালও আমাদের সেই দিকেই ধাবিত করছে, ক্ষণিকের বিভ্রান্ত মানুষ ফিরে আসছে মানবিক পাঠে। যদিও তাৎক্ষণিক ধারণায় কিছু বিপরীত চিত্র পাই কিন্তু এসব চিত্র সামগ্রিকতা ধারণ করে না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে মানুষের মানবিকতা মাপা যায় না, মাপা উচিত না। কাচের ভাঙা টুকরায় প্রতিফলিত হয় না মানুষের প্রকৃত মুখ, মুখের প্রতিফলনের জন্য চাই সামগ্রিক আয়না। সময় ও সমাজকে বিচার কর‍তে চাইলে বিচ্ছিন্নতার ওপর ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, পূর্ণাঙ্গ ছবির প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। সমুদ্রে হাঙর থাকে কিন্তু সমুদ্র মানেই হাঙ্গর না। আমাদের সমগ্র সমুদ্রকে বিবেচনায় নিতে হবে।

করোনার সময়ে কিছু অমানবিক চিত্র আমাদের সম্মুখে হাজির হয়েছে, কিছু কিছু ঘটনা মনোবেদনার কারণ হয়েছে। কিন্তু এসবের বিপরীতে যেসব ঘটনা, আমাদের মনযোগ, সেসবের প্রতি বেশি করে আলোকপাত করতে হবে।

যদিও সৃষ্টি মানুষের মানবিকতায় বিশ্বাসী তবু কিছুটা বৈচিত্র্য সে এড়াতে পারে না, সৃষ্টির সৌন্দর্যের জন্য কিছুটা ভিন্নতা দরকার হয়ে পড়ে। শুধু ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টিকে পরিমাপ করা ঠিক না, করলে অন্যায় হবে।

মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা না বললেও হয়তো তেমনই থাকতো, নাড়ির বন্ধন থেকে কেউ নিশ্চয় মুক্তি চাইতো না। মা এবং সন্তানের মধ্যে ভালোবাসা ব্যাখ্যাতীত, কোনো হিসাবপত্র বা বাটখারায় মাপজোখ করার সুযোগ নেই। এই ভালোবাসায় সংশয়, ঈর্ষা, দ্বেষের কোনো স্থান নেই। স্বর্ণকার যদি শতভাগ সৎ থেকে খাঁটি সোনার অলংকার তৈরি করেন, তবুও তাতে কিছু খাদ থাকে। সোনার ধর্ম হচ্ছে খাদের, কারো সাথে মিশ্রণ ছাড়া সোনা অলংকারে রূপ নেয় না। পক্ষান্তরে মা ও সন্তানের ভালোবাসা অকৃত্রিম ও খাঁটি, বিন্দুমাত্র খাদ মেশানোর সুযোগ নেই।

করোনায় আক্রান্ত মাকে যখন তার নাড়িছেঁড়া সন্তান জঙ্গলে ফেলে যায় আমরা আঁতকে উঠি, অমানবিকতার চরম প্রকাশে দিশেহারা হয়ে যাই। করোনায় আক্রান্ত বাবার লাশ গ্রহণে সন্তান অসম্মতি জানালে আমরা বিমূঢ় হয়ে যাই, আমাদের বোধ বাইরে চলে যায়। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে যখন চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়, হত বিহবল আমরা অবিশ্বাসে নিজের আঙুল কামড়ে ধরি।

করোনায় আক্রান্ত একজন রোগী যখন স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে অন্যকে আক্রান্ত করার পরিকল্পনা করে, আমরা অবাক হই। এমন অমানবিকতা আমাদের বিশ্বাসকে দোদুল্যমান করে ফেলে, আমরা ভাবি এমন মানব জন্মের সত্যিই কি কোনো প্রয়োজন আছে!

মানুষের অমানবিকতা আমাদের আহত করে, যে বিশ্বাসে আমরা জীবনধারণ করছি সে বিশ্বাসের মূলে আঘাত করে। বিশ্বাসকে দুমড়েমুচড়ে দেয়। তবে জীবন পাঠে এমন ঘটনা যে দুর্লভ হবে না, সৃষ্টি আমাদের আগেই জানিয়ে দেয়। সৃষ্টি নিজেকে পরখ করার সুযোগ দেয়, আয়নায় নিজের প্রতিকৃতি দেখার সুযোগ দেয়।

মাকে ফেলে দেওয়া, বাবার লাশ গ্রহণে অসম্মত সন্তান কিংবা বাসভর্তি বিভ্রান্ত যাত্রীই একমাত্র সত্য নয়, সত্যের জন্য বিপরীতেও তাকাতে হবে। দৃষ্টি প্রসারিত করে সৃষ্টির খেলাকে আত্মস্থ করতে হবে। সময়ের সঠিক পরিমাপের জন্য অপেক্ষা করে সময়কে ধরতে হবে, বুঝতে হবে। সময় নিঙড়ে নির্যাসটুকু গ্রহণ করতে পারলে সময় সহায় হয়ে উঠবে। সময়ের পরিপূর্ণ চিত্র দৃশ্যমান হবে।

কোনো কিছুই সৃষ্টির কাছে অপূর্ণ থাকে না, সবকিছু সে পুশিয়ে দেয়। অমানবিকতার বিপরীতে সে এমন সব মানবিক দৃশ্য আমাদের সামনে হাজির করে যে আমরা চিৎকার করে বলে উঠি আমরা মানুষ, মানবিকতা আমাদের ধর্ম। এসব মানবিক দৃশ্য দেখে আমরা চিত্তানন্দে নেচে উঠি।

জঙ্গলে ফেলে যাওয়া মায়ের সন্তানের অভাব হয় না, অসংখ্য মানুষ পরম যত্নে মা’কে কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। করোনার ভয় তাদের দমাতে পারে না, মায়ের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয় তারা। নিজ সন্তানের কৃত অপরাধের জন্য মায়ের কাছে ক্ষমা চায়। অশ্রুঝরা মায়ের সামনে দাঁড়ানো হাজার সন্তান, এমন মাতৃভক্ত সন্তান যার আছে, করোনা তাকে কিভাবে পরাস্ত করবে? মা তার আশীর্বাদের হাত সন্তানদের মাথায় বুলিয়ে দেন।

ছেলেরা বাবার লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে হাসপাতালে হাজির হয় অসংখ্য ছেলে। তারা নিজ কাঁধে বাবার লাশ বহন করে গোরস্থানে নিয়ে যায় পূর্ণ সম্মান এবং মর্যাদায়। দাফন বাবার লাশ। করোনা আতঙ্ক তাদের বিন্দুমাত্র ভাবিত করে না। যদিও এই ছেলেরা বাবার ঔরশজাত নয়, তবু বাবার শেষকৃত্যে কোনো কমতি রাখে না। এসব ছেলেরা বাবার যোগ্য সন্তান হয়ে উঠে। মৃত্যুপারে বাবা নিশ্চয় এমন ছেলেদের জন্য গর্বিত হচ্ছেন, ছেলেদের মঙ্গলের জন্য নিশ্চয়ই তার প্রার্থনার হাত উঠেছে।

বাসের সেই যাত্রী যখন অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অবিশ্বাসের চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে, তখন এগিয়ে আসে পথিক। যাত্রীর অসহায়ত্বের কথা শুনে তার হৃদয় কেঁদে উঠে। নিজ উদ্যোগে অন্য গাড়ি যোগাড় করে, নিজে সহযাত্রী হয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। করোনার ভয় সে পরোয়া করে না, মানুষের বিপদে সাড়া দিয়ে সে মনুষ্যত্বের দায়িত্ব পালন করে।

বাসের করোনা-ভীত যাত্রীরা নয়, এই পথিক আমাদের চিহ্ন। বাবার ঔরশজাত সন্তান বিভ্রান্ত হলেও হাসপাতালে হাজির হওয়া সন্তান আমাদের চিহ্ন। মায়ের ফেলে যাওয়া সন্তান অভাগা হলেও কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়া সন্তানেরা মানবিকতার চিহ্ন।

আমরা এমন এক মানবিক পৃথিবীতে আছি যে পৃথিবী নিয়ে গর্ব কর‍তে পারি। ৮৫ বছরের পিটার যখন ভেন্টিলেটরের স্বপ্লতা উপলব্ধি করে নিজের ভেন্টিলেটর ২৭ বছরের টমাসকে দিয়ে দেয় তখন আমাদের আকাশে মানবিক চাঁদ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। পিটারের স্বেচ্ছা মৃত্যু ব্যথিত করলেও তার মানবিক প্রাণ আমাদের উজ্জীবিত করে।

দীর্ঘ দুই বছর ধরে ঘর মেরামতের জন্য তিল তিল করে জমানো দশ হাজার টাকা যখন একজন ভিখারি মানবতার সেবায় দান করে দেন, তখন অশ্রু আটকানো যায় না, আমরা দেখি অন্ধকার ভেদ করে আসছে আলো। তাতে আলোকিত হচ্ছে মানুষের আকাশ। সেখানে ভাসছে এক মানবিক মানুষের মুখ। আমরা ভুলে যাই ভিখারির বুকেও একজন মানুষ থাকে, তিনি আমাদের ভুল ভাঙাতে মানুষ হয়ে দেখা দেন, তার মানবিকতায় মানুষের শির উঁচুতে পৌঁছায়।

মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও যে চিকিৎস, নার্স সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের চিহ্ন। চালের বস্তা মাথায় করে যে জেলা প্রশাসক অসহায় মানুষের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি আমাদের চিহ্ন। মানুষের অসহায়ত্বে যে কোটিপতি নিজের লকার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তিনি আমাদের চিহ্ন। অসহায় মানুষের অভাব দেখে যে জনপ্রতিনিধি রাতের আঁধারে কোনো ধরনের প্রচার না করে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি আমাদের চিহ্ন। প্যান্ট গুটিয়ে গায়ে কাঁদা মেখে যে চেয়ারম্যান কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন তিনি আমাদের চিহ্ন। নিজের নিরাপত্তা পরোয়া না করে যে পুলিশ, আর্মি ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন তারা আমাদের চিহ্ন। আমাদের চিহ্ন পাড়ায় সেই সব স্বেচ্ছাসেবক যারা অনিরাপদ জেনেও প্রতি ঘরে গিয়ে অভুক্ত মানুষের খোঁজ করছেন, প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। যে সিএনজি ড্রাইভার এক মাস কর্মহীন থাকার পরেও নিজের বরাদ্দ ত্রাণ অন্যকে দিয়ে দিচ্ছেন তিনি আমাদের চিহ্ন।

এমন মানুষের জন্য পৃথিবী। তাদের জন্যই পৃথিবীটা মানবিকও সুন্দর। আমরা সেই পৃথিবীর বাসিন্দা। ক্ষণিকের অন্ধকার আমাদের ভিন্ন দৃশ্যায়নে নিয়ে গেলেও মানবিক মানুষেরা আলোর সন্ধান দেয়। তাদের অনুসরণ করলে আলোকিত হওয়ার পথ পাওয়া যায়। সেই পথ ধরে পাওয়া যাবে মানবিকতার পৃথিবী।

শেখ মুজিব…

162329875_

জলের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে সে হয় দক্ষ সাঁতারু, জল
ছাপিয়ে পৌঁছাতে পারে মাছের বাড়ি
ডুব দিতে পারে জলের গভীরে।

গাছের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে সবুজের অভাবে কখনও
মিইয়ে যায় না, ফুসফুস দিয়ে যায়
অক্সিজেনের অবিরাম সরবরাহ।

বাতাসের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে দিগন্ত তাঁর কাছে তুচ্ছ
তেজী ঘোড়ার মত দাপিয়ে সে জানায়
দিগন্ত বিজয় কোন ব্যাপার না।

আকাশের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে নীলিমার রঙে অভিভূত হয়
অসীমের সীমানায় সে হয় অসীম
আকাশ তাঁর কাছেই পরাভূত হয়।

আলোর ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে জগত আলোকিত হয়
উৎসের সন্ধানে হেঁটে জানতে পারে
মূলে যার আলো সে আলো ছড়াবেই।

চাঁদের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে সেই হয় জ্যোৎস্নার ফুল
উছলে পরা জ্যোৎস্নার আনন্দে
পাড়ি দিতে পারে অমাবস্যার পথ।

সময়ের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে সময় তার হয়ে যায়
করায়ত্ত সময়ের পারে দাড়িয়ে জানায়
স্পৃহা থাকলে মহাকাল মাড়ানো যায়।

মানুষের ভাষা সবাই পড়তে পারে না
যে পারে সে হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ
তাঁর তর্জনীতে উদ্বেলিত হয় মানুষের হৃদয়
মানুষজন্মে সে-ই হয় শেখ মুজিব…

আমি

আমি ইদানীং মার্কা মারা হয়ে যাচ্ছি
কোন বিচিত্র নাই, নাই নতুন কোন চিন্তা।

মুখ খুললেই সবাই বুঝে নেয়
কি বলতে চাচ্ছি। হাত উঠালেই
বুঝে নেয় কোথায় আনুগত্য।
নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে যাচ্ছে
অভ্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

অথচ প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলাম
তেজি ঘোড়ার দাপট ছিল শরীরে।

বদলে দেয়ার স্পৃহা, সবকিছু
নতুন করে শুরু করব বলে
দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম।

কিছুই বদলানো হলো না, পরিপাশ
আমাকেই বদলে ফেলল।

আমি ইদানিং প্রচণ্ড আমিময় হয়ে যাচ্ছি,
বিদ্রোহের যে আগুন মনে ছিল
সে আগুন নিঃশেষ হয়ে গেছে,
আপোষহীন এই আমি
আজ আপসকামী হিসেবে চিহ্নিত।

আজ আমি একেবারেই সাধারণ হয়ে গেছি
আজ আমাকে কেউ আর পুছে না।

একদিন

এই নৃত্যগীত একদিন থেমে যাবে
বেসুরো সুরের দাপটে
ছিঁড়ে যাবে সেতারের তার।
একদিন খিলখিল হাসি
বেদনায় মোড় নেবে। একদিন
বুকের পাঁজরে জমানো ব্যথা
অন্যের ঘরনি হবে, একদিন
একান্ত মাঝির কাছে বলা
গুপ্তকথা বাজারে চাউর হবে।

অবিশ্বাসী ঘুড়ির কারণে একদিন
বিশ্বাস উড়বে না। ছল করে
ফেলে যাওয়া জলে
আশ্বাস পা পিছলাবে।
দিগন্তের ঘাসে ওড়া ফড়িং
একদিন ভুলে যাবে সবুজ,
ধুসর রমণীর মত প্রহেলিকায়
আচ্ছন্ন হবে মগজের কোষ।

একদিন মনুর জলে ভিজবে
না হৃদয়ের পাড়, পায়ের ছাপ
বিঁধবে না পলির বুকে।
একদিন হাত ফসকে গেলে
বাজারের ব্যাগ থেকে
ছিটকে বেরুবে উজানের কৈ।
অবিশ্বস্ত যন্ত্রণায় তড়পাবে
পাখি, একদিন পাখি উড়ে যাবে।
একদিন অন্ত হবে দাপুটে দেহের
একদিন ঘুমিয়ে যাবে একাকী কবর।

হারাধন

প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে যায়
গত বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীর উপহার
হাতঘড়ি, সময়ের বেখেয়ালে
কোথায় যে হারিয়ে গেল।
ঘড়ির জন্য কাতর ছিলাম
তবু স্ত্রীর তীর্যক তীর থেকে
রক্ষা পেলাম না। অবহেলা।
তার, তার উপহারের প্রতি
ব্যাপক অবহেলা।

জন্মদিনে মেয়ে ছাতা উপহার
দিয়েছিল, বাবার মাথায় বৃষ্টির
ফোটা দাপট দেখায়। তীব্র রোদে
চামড়া ফেটে যায়। বাবার
বিড়ম্বনায় মেয়ের মায়ার উপহার
সেও হারিয়ে যায়। যত বলি
নিয়ে যাইনি ঘরে কোথাও আছে।
বিশ্বাস করে না, হারানো বাতিকের জন্য
বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যের কোঠায়।

ছেলেকে নিয়ে চার লাইনের পদ্য
লিখেছিলাম, খুশি হয়েছিল।
প্রথম রোজগারে লেখক বাবার জন্য
কলম কিনেছিল, দামি কলম।
লেখকের জন্য গৌরবের উপহার
কলম কপালের ফেরে হারিয়ে যায়।
ছেলের কাছে মুখ দেখাতেও
লজ্জা লাগে। ছেলে অবশ্য মহৎপ্রাণ
পুনরায় লেখক বাবার মর্যাদা
রক্ষায় অবতীর্ণ, পুনরায় দামি কলম।

প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে যায়
তেরশ কবিতার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে।
রবীঠাকুর, জীবনবাবুর পরে জানান দিতে
তৈরি পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে। পাড়ার
সাহিত্য আড্ডায় পঠিত হবে বলে
নিয়ে গিয়েছিলাম, প্রশংসা উত্তর
বেলুনের মত ফুলতে ফুলতে ঘরে
ফিরে দেখি পাণ্ডুলিপি হাপিস।
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও হদিস পাইনি।

পাড়ায় নতুন কবি আবির্ভূত হয়েছে
নতুন ধারার কবিতা প্রসব করে সবার
নজর কাড়ছে। পড়ে মনে হয়
কবিতা গুলো আমার লিখনি।
প্রমাণের অভাবে হাত কামড়ানো
ছাড়া কিছুই করতে পারি না।

প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে যায়
হারিয়ে ফেলেছি বেদনার কবি জীবন।

অর্ধাঙ্গিনী

কাঁঠালের বিচি চেনাবে বলে
সেকি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা,
উনপঞ্চাশ নামতা শেখাতে
ক্লান্তি নাই। জল পড়ে টুপটুপ,
স্নাত না হওয়া পর্যন্ত
মিলত না নিস্তার।

বাজারের ফর্দ ভুলে না যাই
ঘন ঘন মুঠোফোনের তাড়া
বেখেয়ালি জুতার ফিতা
দুর্ঘটনার কারন হবে
ভেবে নিচু হয়ে…

পাশের জমি অভুক্ত পড়ে আছে
ধনেপাতার আঁচড়ে
দুমুঠো বেশি খাওয়া যাবে।
সার্টের গায়ে হলদে দাগ
মুখ মলিন, একটু বেশি ডিটারজেন্ট
শুভ্রতা ফিরিয়ে দেয়।

জীবিকার প্রয়োজনে ঘর বাহির,
চেয়ারে এলিয়ে দেওয়া
চোখে ক্লান্তি নামলে
হাতপাখা বাতাস ক্লান্তি তাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত পরিশ্রমে অনীহা ছিল
অল্পে তুষ্ট, প্রয়োজনের পরিধি বাড়িয়ে
অহেতুক অশান্তি চাইতে না।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমিও কিছু চাইনি।

জীবনকে জীবনের
মাপে মাপতে চেয়েছি।
কাঁঠালের বিচির চাটনি প্রিয় খাবার
অনর্গল আওড়ে যেতে পারি
পঞ্চাশের নামতা
আদিগন্ত বৃষ্টিতে ভিজে বিরহী কোকিল।

ফর্দ বুকে সেঁটে বাজারে যাই,
ফিতা বাধতে ভুল করি না।
অবসর এখন ধনেপাতার
পড়শি। ধোপাদুরস্ত সার্টে মুছি মলিনতা।

অখণ্ড অবসর ফ্যানের বাতাসে
ক্লান্তির গান গায়। পরিশ্রম দিয়েছে মুক্তি।
তোমার চাহিদা পূর্ণতা
দিয়েছে, তুমি শুধু পাশে নাই!

নামছে_আঁধার

আঁধার নামছে, ফিকে হয়ে আসছে রঙ।
মনে যে উজ্জলতা একদিন ছিল,
তীব্র রোদে দিন যাপনের যে ইচ্ছা মনে
পোষণ করতাম। ইচ্ছার পূর্ণতা প্রাপ্তি
ঘটলো না, চোখের সামনে
হারিয়ে গেল অবিশ্বস্ত রোদ।

মড়কের আগে
পৌঁছাতে হবে সবুজ মাঠে এই আশায়
সারাজীবন এত যে ছুটাছুটি করলাম
কিছুই কী হাসিল হল! গন্তব্য, গন্তব্য করে
হেঁটেই গেলাম। গন্তব্য নাগালের বাইরে
থেকে গেল। বিশ্বস্ত সৈনিকের মত
যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মুখোমুখি
হয়েছিলাম, বিনা যুদ্ধে
ছাড় দেই নি সূচকে তবু
প্রাপ্তির খাতায় শুধুই শূন্যতা।

উচ্চাশার সলতে জ্বালাতে
ঝরিয়েছি গায়ের ঘাম, তেলের
পিপে নিয়ে অহোরাত্র ছুটাছুটি করেছি।
সব নিষ্ফল, সব অসার। যাবার সময়
হয়ে এসেছে সাড়ে তিন হাত আবাসে
থাকবে না প্রদীপ। নিঃস্ব নাবিকের মত
তলিয়ে যাব, কেউ মনে রাখবে না।

সময়ের_মাপে

এই সত্য একদিন মোড় নেবে
একদিন পরগাছা গাছে পুষ্প ফুটলে
জেনে যাব তোমাদের অবজ্ঞায়
কিছুই যায় আসে না।

ব্যঙ্গ, বিদ্রুপে ক্ষণিকের আত্মতৃপ্তি
পেলে পেতেও পার, বক্রোক্তি
দিতে পারে ক্ষণিকের উল্লাস!
হে নির্বোধ, দিন শেষে তার মুখেই
ফুটবে হাসি যে সত্যনিষ্ঠ ছিল।

তোমাদের উল্লাসে হতাশ নই
বৃক্ষ কর্মে কোন ছেদ পড়ছে না
সময়ের মাপে আমরা পয়মন্ত হব
তোমাদের কোন নাম নিশানা থাকবে না।

বসন্ত

এক বসন্তের চুক্তি,
অন্য বসন্তের আগে বরখেলাফি।
বৃক্ষে বাহারি ফুলের আগমন,
বিভ্রান্ত প্রজাপতি।
বসন্ত বসন্তের গায়ে হেলান দিয়ে
মাঠ পেরোয়, ঘাট পেরোয়
বাট পেরোনোর চেষ্টায় পুনরায়
চোখাচোখি, পুনরায় চুক্তি
এবার শক্ত বাধন, সহজে মুক্তির
সম্ভাবনা কম।
এই যুগলের বসন্ত সার্থক হোক,
তাদের বাসন্তিক শুভেচ্ছা।

.
14 February at 21:42

একুশ

ekush-omor-480x250

নিঃস্ব হতে হতে যে খুঁজে পায় মাটি
তাকে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।
পতনে পতনে যে উত্থানের স্বপ্ন দেখ
তাকে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।

আড়ি দেয়া বালিকা পুনরায় বন্ধুত্বের
আহ্বান জানান। গোস্বার প্রেমিকা
গোধূলি বেলায় পাঠায় নীলখাম। দূর
মাঠের অভিমানী পুত্র ঘরে ফিরবে না
প্রতিজ্ঞা ভুলে ফিরে মায়ের আঁচলে।

ঘরে ফিরে সন্ধ্যার কাক, এঁদো ডোবা থেকে
ফিরে পাতিহাঁস। মুখস্থ পাঠ শেষে
মৌরলা ঝোলে তৃপ্তির ঘুম ডাক দিলে
কাঁথাঘুম ইশারাকে বাংলাদেশ বলে।

ভোরের সমুদ্রে জেগে ওঠে সূর্য, আশার
আলোকে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।
একুশের মাঠে ঝরানো রক্তের নদী
মা ডাক-কে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।