আবু মকসুদ এর সকল পোস্ট

অ্যালার্ম

নির্ভার ছিলাম, পিছুটান প্রায়
ভুলতে বসেছিলাম।

মায়া জগত তাড়িয়ে তাড়িয়ে
মোহের খোয়াবে ব্যস্ত রেখেছিল।

বিপণীবিতান চোখ ধাঁধানো আলোয়
উৎস থেকে ক্রমশ দূরে ঠেলছিল।

ফিরতে হবে এমন ভাবনা মনে
জাগরূক হলে, আমুদে ঘুম

আরো কিছুক্ষণ মায়া বিশ্রামের
প্ররোচনা দিচ্ছিল।

ফিরতে হবে না, এমন চিন্তা যখন
মস্তিষ্কে স্থায়ী আসন গাড়ছে

তখন ঘড়ির কাটা টিক টিক
করে গন্তব্যে হাঁটছিল।

ঘুমকাতুরে আয়েশের ঘুমে তলিয়ে
গেলেও অ্যালার্মের ঘড়ি দায়িত্ব ভুলেনা।

পথিক যতই মায়ায় জড়াও, যতই
নিয়ন আলোর নীচে নিজেকে

অখণ্ড ভাবো, দিনের আলো নিভে গেলে
তোমাকে ফিরতেই হবে, অন্ধকার কবরে।

ভালবাসা

এই যে আমি মারা যাচ্ছি
এই যে ফুলের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ
আমার নাকে সুবাস পৌঁছাচ্ছে না
ইতোমধ্যে মারা গেছি।

ফুল নিয়ে আসবে
জানতে পারলে আরো কিচ্ছুক্ষণ
যুদ্ধ করতাম। আমার জন্য কারো
বুকের অতলে কান্না আছে
এই বোধ যুদ্ধের শক্তি যোগাত।

তোমার কান্না অসময়ে এল
অহেতুক খরচ হল কিছু কড়ি,
পুষ্প বিলাস কোন কাজে আসলো না।

সময়ের কাজ সময়ে কেন যে
করতে পারিনা, সঠিক সময়ে
বলতে পারিনা ভালবাসি।

মরিচঝাপি

বাদুর বেলায়
আমরা খেলি মরিচঝাপি খেলা।

সিক্ত গুহায় মাগুরের ঘাই
নোনাস্বাদ জল সাঁতরে পরিশ্রান্ত।

দীর্ঘ রাতের পরে বসন্তবিহার
ধবল ভোরে উঠোনে জবাফুল।

হামাগুড়ি শেষে হাঁটিহাঁটি পা পা
পূর্ণ জীবনে জবাগন্ধ ছাড়াও

বেঁচে থাকে আশা প্রত্যাশা
আশা প্রত্যাশায় থাকে মরিচঝাপি।

পাঠক

বইয়ে ডুবে যাওয়ার আগে
ঘরের তাপমাত্রা পুনরায় দেখে নিলাম
শীতল মেজাজের বই
পুরোপুরি জমে না যাই,
আগাম সর্তকতা।

ধূমায়িত চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু করলে
গা শিউরে উঠে, শুধু শীতল
মেজাজ নয় ভয়ানক করুণ
রসে ঠাসা। মুহূর্তেই কাপের চা
জমে গেল। জমে গেলাম আমিও।

হাত পায়ের রক্ত সঞ্চালন ঠিক
আছে কিনা পরখ করতে
গিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম
পৌনে চার ঘণ্টা গত হয়েছে।

বুকের মধ্যে ঈর্ষা জেগে উঠলো
পৌনে চারঘন্টা নিবিড় পাঠ
যে বই দাবি করতে পারে,
সে বইয়ের লেখকের জন্য
ঈর্ষিত হতে থাকলাম।

লেখকের নাম না জেনে
শুরু করেছিলাম পাঠ,
জেনে গর্বিত হলাম
বইয়ের প্রতিটি অক্ষরে
জ্বলজ্বল করছে নিজ নাম।

টিভি_ভিক্ষুক

যদি শায়েস্তা খাঁর আমলের এক টাকা থাকতো
সাত মণ চাল কিনতাম, সাত মণ নিজের প্রয়োজনের
তুলনায় বেশি; কিছু টিভি ভিক্ষুকদের দিয়ে দিতাম…

টিভি ভিক্ষুক চাল, গম, রুটি চায় না
তারা কড়কড়া নোটের সাথে সঙ্গম করে।

সিরাজউদ্দৌলার রাজ্য হারানোয় আমি ব্যথিত
মীরজাফরের উত্থান খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে,
তাদের দৌরাত্ম্যে টেলিভিশনে কান পাতা দায়।

সেই যুগে যারা এক টাকার মালিক ছিল
আজ তাদের কোমরে হাজার কোটির বান্ডিল
দুর্ভাগাদের শায়েস্তা যুগে ছিল না; এখনো নাই।

টিভি ভিক্ষুক চারকোণায় বেহেশত বিক্রি করে
আমার এক টাকা না থাকায় বেহেশত বঞ্চিত হই।

কৃপণ

তিন মিনিটের বিলম্বে এত রাগ
বাবার নাম ভুলিয়ে দিচ্ছ
অথচ নিজের বেলা
তেরো মাস ঝুলিয়ে রেখেছ!

বেশি কিছু চাইনি, শুধু একটা চুম্বন
তাই বলে তেরো মাস!

আমার কী রাগ করতে নেই,
আমি কী চিৎকার করে
তোমার কৃপণতা জাহির করতে
পারি না, অবশ্যই পারি!
নিতান্তই ভদ্র ঘরের ছেলে বলে…

মানুষ

প্রতিদিন সকালের আয়নায় যাকে
দেখি, মানুষই মনে হয়
দিন যত দীর্ঘ হতে থাকে
সে হতে থাকে ক্ষুদ্র।

মধ্য দুপুরে সে বামনে পরিণত হয়
তার চিন্তা ক্ষুদ্র, ভাবনা ক্ষুদ্র
পরিধেয় পোষাকে তাকে
মানুষ বলতে দ্বিধা হয়।

বিকেলের আড্ডায় যখন
রাজা-উজির মারে
নিজেকে সাফল্যের গালিভার ভেবে
ক্ষুদ্র মানুষদের করুণার চোখে দেখে
তখন তাকে দানব মনে হয়।

টলতে টলতে ভীরু পায়ে
যখন দরোজায় টোকা দেয়
ভীরু চাহনিতে যখন, আশপাশ দেখে,
দিনের সব ভ্রান্তির জন্য
লজ্জিত হয় তখন তাকে
কিছু মানুষ মনে হয়,
বিছানায় অনুতপ্ত মানুষে
কিছু মানুষ পাওয়া যায়।

সকালের আয়নায়
দেখা মানুষ ঘরের বাইরে পা ফেলতেই
গা থেকে খসে পড়তে থাকে
মানুষের চিহ্ন, কখনো সে বামন
কখনো সে দানব, তখন
তার ভিতরে মানুষ পাওয়া যায় না।

মুক্ত_পাখি

Galib_1.jp
আহা, সুলেখা তোমাকেই খুঁজছিলাম
চারপাশে এত বেশি ইতর
দু’দণ্ড কথা বলার জন্য
প্রাণ ধরফর করছিল।

সুলেখা, ওই যে পাখি দেখছো
মুক্ত আকাশকে ঘর বানিয়ে নিয়েছে
ইতরের পাল্লায় পড়লে
পাগলা গারদে বন্দী জীবন কাটাতো।

সুলেখা, পাখির কি কোন দল হয়; না থাকা উচিত
ডানায় কি আনুগত্যের ছাপ মারা থাকবে
যদি সেও পোষা তোতা হয়ে যায়
আকাশকে ঘর ভাবার অধিকার কি থাকবে!

নিন্দিত ইতর কিছুই বুঝে না
তারা চায় পোষা তোতা, নিজেদের খাঁচা জীবনে
সবাই বন্দী হউক এটাই তাদের চাওয়া
খাঁচাকে তারা বিশ্ব ভাবে, এত ক্ষুদ্র তাদের জীবন।

সুলেখা, তুমি পাখি হয়ে থেকো, মুক্ত পাখি
ইতর সম্প্রদায় যতই নিন্দা ছড়াক
নিজেকে মুক্ত রেখ, তোমার জন্য ফুলের সুবাস
নিজেদের মলে ইতরের খাঁচাবন্দি জীবন।

মানুষের_খবর

নাঙ্গা তলোয়ার হাতে খণ্ড-বিখণ্ড শুধু নয়
মলমের মানুষের খবর আমরা জানি
রাস্তায় পড়ে থাকা নিরন্ন মানুষের
জলের ছটফটানি মিটাতে
জলাধার খুঁড়ে আনা মানুষের খবর আমরা জানি।

এমন মানুষের খবর আমরা জানি
যার চোখে পৈতাকে হিন্দু লাগেনা
টুপি দেখে কাউকে মুসলমান ঠাওরে নেয় না
গির্জার ঘণ্টা বাজায় যে জন সে শুধু খ্রিস্টান নয়
তাদের মানুষ ভাবতে পারা মানুষের খবর আমরা জানি।

অসাম্প্রদায়িকতা কোন মিথ নয়, গুহার গভীরে
অনাবিষ্কৃত সাংকেতিক চিহ্ন নয়
বিদ্যাগজ কারো উচ্চতর ডিগ্রির অভিসন্দর্ভ নয়
নেতার প্রলাপি বক্তৃতার চাতুরতা নয়
প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক মানুষের খবর আমরা জানি।

মানুষ শুধু হতাশার নাম নয়, মানুষ শুধু
পরাজয়ের নাম নয়, আশাবাদী মানুষের খবর
আমরা জানি, মানুষকে বিজয়ী
ভাবতে পারা মানুষের খবর আমরা জানি।

পশ্চাৎ

পথে হাঁটতে নেমেও কেউ পশ্চাৎ যায়,
দেখছি অহরহ। যে বালক বুকের বোতাম খুলে
দৌড়ে ফড়িং ধরবে; সে মক্তবে মুফতির
পাঠ নেয়। যে বালিকা বেণী দুলানো
হাসিতে জানাবে চাঁদের নিমন্ত্রণ; সে
আপাদমস্তক অন্ধকারে নিজেকে সুরক্ষিত ভাবে।

গতকাল যার টগবগানো রক্তে বিপ্লব সমাগত
ছিল আজ সে ক্ষমতার জুতো শুঁকে।
যার সৌম্যমূর্তি স্মরণে অনেক অন্যায় করা
হয়নি; দুর্নীতির দায়ে সে আজ জেলে।

মানুষের ইতিহাস লিখতে হবে বলে যে
আমাদের ডাক দিয়েছিল; সে আজ মানুষ বিমুখ,
সে আজ অমানুষ দলের সর্দার।

যাবো না গোঁ ধরে বসে থাকলে ঠেলে ঠেলে
যে আমাদের এখানে এনেছিল; সে ফিরে গেছে
অনর্থক পরিশ্রমের জন্য আফসোস করছে।

হাঁটতে নেমে অনেকেই পশ্চাৎ যায়, অথবা
পশ্চাৎ মনের অনেকেই অহেতুক হাঁটার ভান করে।

নির্দয়

নির্দয় মানুষের মনে কী
কান্না থাকে! খরার
চৌচির মাঠের গভীরে
জলের নহর থাকে জানি।

নির্দয় ভেবে এই যে
ফেলে চলে গেলে, যদি
ফিরে তাকাতে; দেখতে
আকাশ ভেঙ্গে ঝরছে জল।
দেখতে; উপচানো জলে
তলিয়ে যাচ্ছে নদী,
দেখতে; হাবুডুবু খেতে থাকা
নদী প্রাণপণ চেষ্টা করছে,
ভেসে থাকার চেষ্টা করছে।

নির্দয়ের হৃদয়েও থাকে জল
অনুভবের স্পর্শে সে জল
অবিরল ঝরতে পারে।

কাউকে বাতিল করা আগে
একবার হৃদয়ের খোঁজ নিও
পেয়ে যেতে পারো অমূল্য রতন!

দ্রাক্ষার_রস_টক

দ্রাক্ষার রস টক আমিও
কী জেনেছিলাম!

যেদিন চোখের সামনে
আকবরের বাইকে চড়লে, শাঁ করে
উঠে গেলে সদর রাস্তায়,
আকাশে কান্না দেখলাম।

পড়শির অধিকারে
বার বার গিয়েছি উঠানে,
নির্লজ্জ ভিখারির মত
হয়েছি নজরের কাঙ্গাল।
কৃপা পেলে বর্তে যেতাম
হে কৃপাময়ী!

ছেঁড়া ন্যাকড়ার
প্রতি রাজকুমারীর কোন
আসক্তি থাকে না, বড় কষ্টে
জেনেছিলাম। কষ্টে বুক বাঁধি।

দ্রাক্ষার দোকানে ঝুলানো স্বপ্ন
অধরাই থেকে যায়। দ্রাক্ষার রস
টক এইটুক জীবনের শান্তনা।

কৃষক_পুত্র

155281670_10

বাগানে ফুল চর্চা হচ্ছে, নিত্যনতুন
অত্যাচারে মৃত্তিকা ত্যক্ত হচ্ছে কিনা
জানার উপায় নাই। কোদালের আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত মৃত্তিকার রুক্ষ বুক।

আমি মৃত্তিকা বিজ্ঞানী নই, তবে মাটির
সাথে সখ্যতা আছে। কৃষকের সন্তান।
ভাগ্যগুণে কিংবা অভিশাপে পরবাসী।

পরবাসের বন্ধ্যা সময়ে গাঁয়ের জমিন
ডাক দিলে কৃষকের রক্ত নেচে ওঠে,
মনে হয় ধানবীজ হয়ে জমিনে পোঁতে যাই।

কৃষক পিতার উর্বরতা শরীরে বর্তায় নি,
বন্ধ্যা মাটি আমাকে অস্বীকার করে।

অভিশপ্ত জীবনে মাটির সখ্যতা নসিব
হয় না, সৌখিন ফুল অধরা থেকে যায়।

ফুল চর্চায় ক্ষান্ত দিলে কৃষক পিতার
গায়ের গন্ধের জন্য মন আকুলিবিকুলি
করে। অনেকদিন হয় পিতাও পরবাসী,
কান্না ছাড়া কিছু কৃষক পুত্রের নসিবে নাই!

সংসার

আমার আদিগন্ত মাঠে তোমার ঢেউ,
একলা নৈসর্গে উঁকি দিয়ে যাও।

বৈরাগ্য নিয়ে দেখেছি পিছু পিছু
তুমি আছ। জগৎ-সংসার ক্রমেই
তুমিময় হয়ে উঠছে, নিস্তার নেই।

একদা আমার নিজস্ব জীবন ছিল
মাছের স্বাধীনতায় ঘুরে বেরিয়েছি
খাল-বিল। ভাবুক পাখির ডানায়
কতরাত আকাশ ছুঁয়েছি। একলা
জ্যোৎস্নায় মেতেছি ঝিঁঝি খেলায়।

সবকিছুই বিদায় নিয়েছে। বিদায়
নিয়েছে মন খারাপের মেঘ। উদাসী
বাতাস হঠাৎ জেঁকে বসে না।

সবখানেই তোমার দখলত্ব। নিজের
বলে কিছুই রইল না। আফসোস!
না নেই! তোমার সাহচর্যে দিন কাটছে,
মন্দ কাটছে এটা বলা যাবে না।

ঊর্ধ্বগতি

এই যে ছাপিয়ে যাচ্ছেন,
এই যে পিছে পড়ে রয়েছি,
কষ্ট হচ্ছে! মোটেও না!

আপনার অতিক্রমে মোটেও
ব্যথিত নই।

আপনার সামনে প্রশস্ত সিঁড়ি
ফলবান বৃক্ষ আপনার সহোদর।

অভিজাত পাড়ার ললনারা
আপনার সঙ্গ পিয়াসী। উড়ছেন,
আকাশ প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন।

উড়ুন, উড়তে থাকুন,
আপনার ঊর্ধ্বগতি
আমাকে আহত করে না।
শুধু খেয়াল রাখবেন,
ধপাস, পড়ে যাবেন না।
পড়ে গেলে খুব দুঃখ পাবো।