আবু মকসুদ এর সকল পোস্ট

সত্যি ভূতের গল্প

মোকাম্মিল বলল সে ভূত দেখেছে; আমরা অবাক চোখে তাকালাম। সে বলল গতরাত বাথরুমে যাওয়ার জন্য যেই উঠানে পা রেখেছে অমনি একটা ভূত টান দিয়ে লুঙ্গি খুলে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। আমি বললাম ‘লুঙ্গি খুলে ফেলেছে, নিশ্চয় মেয়ে ভুত’! ফজল বলল ‘তুই ভূতের চেহারা দেখেছিস’? মোকাম্মিল বলল চেহারা ঠাওর করার আগেই পালিয়ে গেল।
বাবুল বলল ‘তুই ভয় পাসনি’?
‘না, আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিয়েছি ভয় পাইনি’।
আক্কাস বলল ‘ভূত কি তোকে ছুঁয়েছে’? ‘
ছুঁয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না।
যদি ছুঁত তুইও ভুত হয়ে যেতি, তোর উপর ভূতের আছর পড়তো।
তাহলে বোধহয় ছোঁয়নি, আমি তো ভূত না। আমি মোকাম্মিল।

জমে উঠলো ভূতের গল্প কে ভূত দেখেছে। ভূতের কাছাকাছি এসেছে বলতে সবাই উদগ্রীব হয়ে উঠলো।

ফজলের গল্প এরকম- খালার বাড়িতে বেড়াতে গেছে, সন্ধ্যা হয় হয়। খেলার মাঠ থেকে ফিরে পুকুরে গেছে হাত পা ধুতে, হাত পা ধুয়ে যেই ফিরে আসবে অমনি কে তাকে ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে দিল। কে ধাক্কা দিয়েছে কিছু ঠাওর করতে পারল না। ভিজা কাপড় নিয়ে পুনরায় উঠে আসবে অমনি আবার ধাক্কা। তৃতীয়বারও সেই একই ঘটনা। খালু মাগরিবের নামাজ পড়ে ফিরছিলেন তিনি এসে তাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করলেন। খালা তাকে সন্ধ্যার দিকে পুকুরে যেতে বারণ করলেন। খালাত বড় ভাইয়ের সাথে রাতে বিষয়ে আলাপ করলে তিনি জানালেন এ নিশ্চয়ই আব্দুলের ভূত বেশ কয়েকমাস আগে এক সন্ধ্যায় এই পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছিল।

বাবুলের গল্পটা আরেকটু বিচিত্র। সে যে ভূত কে চিনে, সে বড় মায়াবী। মায়া কাড়া চেহারা তার। সে কাউকে ভয় দেখায় না, লুঙ্গি খুলে না, ধাক্কা দেয় না। বরং ফুল ছড়িয়ে দেয়। সে এলে ফুলের গন্ধে বাড়ি মৌ মৌ করে ওঠে। ঘটনা এরকম অনেকদিন আগে বাবুলের আম্মা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান, জ্ঞান ফিরলে তিনি বলতে থাকেন, রাবেয়া কে দেখেছেন। রাবেয়া তাকে অনেকগুলো ফুল দিয়ে গেছে। রাবেয়া বাবুলের বোন, অনেকদিন আগে হঠাৎ জ্বরে মারা গেছে। বাবুলের আম্মা ঘনঘন রাবেয়াকে দেখতে থাকলেন। আম্মার দেখাদেখি বাবুলও একদিন রাবেয়াকে দেখতে পেল। তাদের পাক ঘরের জানালার ওপাশে মান্দার গাছে বসে আছে। সে রাবেয়া বলে ডাক দিলে জানলা দিয়ে অনেকগুলো ফুল ছুড়ে দিল। বাবুল এখন প্রায়ই রাবেয়াকে দেখে।

আক্কাস বলল তার উপর ভূতের আছর আছে। তাদের বাড়ির পিছনে তেঁতুলগাছ। একদিন দুপুরে গাছে নীচে পাটি পেতে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখল তেঁতুল গাছ দুলছে। গাছের দিকে তাকালে দেখল দৈত্যের মত একটা জন্তু গাছে পিঠ চুলকাচ্ছে। তার বিকট চেহারা, মুখ থেকে হাতির মত দাঁত বেরিয়ে এসেছে, রঙ কয়লার চেয়েও কালো। তার কপালে একটাই চোখ। সে বাবাগো বলে দৌড় লাগালে সেই বিকট জন্তু হাত লম্বা করা তাকে থামাল। বলল ঘাড় মটকে খাবে সে চিৎকার করে কান্না শুরু দৌড়ে এল তাদের পোষা কুকুর ভুলু। কুকুর দেখে ভূতটা পালিয়ে গেল।

আক্কাসের গল্প অদ্ভুত লাগছে। প্রথমত দিনের বেলা ভূত দেখা সম্ভব না। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কেউ দিনে ভুত দেখেছে বলে শোনা যায়নি। দ্বিতীয়ত একটা পুচকে কুকুরকে দেখে দানবের মত ভূত পালিয়ে গেল ব্যাপারটা বিশ্বাস যোগ্য না। আক্কাসকে বললাম তুই মিথ্যা বলছিস, সে আল্লাহর নামে কিরা কাটলো। তাতেও যখন বিশ্বাস করছি না তখন বলল ভুলুকে জিজ্ঞেস করে দেখ। ভুলুকে সাক্ষী মানলে আমাদের কিছু করার থাকে না, সে অতি অনুগত, বিশ্বস্ত কুকুর। আমাদের খুব ভালো বন্ধু।

তার কথা বিশ্বাস করা ছাড়া কোন উপায় থাকলো না, তবু একবার বলেছিলাম তুই নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছিস। সে এমন রাগ করল যে তা দেখে ভুলুও ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। আমি আর কথা বাড়ালাম না।

সবাই এবার আমার দিকে তাকালো, আমার ভূতাভিজ্ঞতা জানতে চাইলো। আমার কথা শুনে তারা নিরাশ হলো। আমি এখনো কোন ভূতের পাল্লায় পড়িনি। তারা আমার দিকে অবজ্ঞার চোখে চাইল। তাদের চোখ দেখে বুঝতে পারলাম ভূত দেখিনি অর্থাৎ আমার জীবন ষোল আনাই মিছে।

তাদের সবাই ভূতের অভিজ্ঞতা আছে আমার নেই, এই প্রথম বন্ধুদের কাছে আমার মাথা হেঁট হলো। জীবন অসার লাগলো। বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা হল। এগারো বছর বয়সেও ভূতের অভিজ্ঞতা হয়নি; এটাকে কি জীবন বলে!

যে করেই হোক ভূতাভিজ্ঞতা আমার হতে হবে। শুনেছি ভূত রাতের বেলা খাটের নিচে থাকে, আড়াই ফুটি পেত্নীকে কখনো-সখনো বাথরুমে দেখা যায়। এসডিও বাংলার দেয়াল ঘেঁষে যে বটগাছ তার ডালে ডালে নাকি ভূতের বাস। ভূতের খুঁজে সম্ভাব্য সব জায়গায় রাতে-বিরাতে হানা দেওয়া হল, ফলাফল শূন্য। ভূতের দেখা মিলল না, ভূত আমার সাথে মোলাকাতে রাজি হলো না।

আমি ঠিক করেছি ভূতাভিজ্ঞতা না নিয়ে বন্ধুদের কাছে যাব না। কিন্তু কিভাবে অভিজ্ঞতা হবে ভেবে কোন কুল পাচ্ছি না। কার কাছে একবার শুনেছিলাম গোরস্থান ভূতের বাড়ি, ভাবলাম গোরস্থানে গেলে নিশ্চিত ভূত পাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

একদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে দরজা খুলে গোরস্থানের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। আধা মাইল দূরের গোরস্থানে পৌঁছে দেখলাম শুধুই অন্ধকার। কোথাও কোনো ভূত নেই, নিরাশ হয়ে ফিরে আসবো এমন সময় দেখলাম একটা কবরের কাছে আলো জ্বলছে আর নিভছে। হঠাৎ আলোয় দেখলাম ধোঁয়া উড়ছে। আলো লক্ষ করে কাছে পৌঁছালে দেখলাম চারজন লোক গোল হয়ে বসে তামাকের মত কি একটা টানছে, বাতাসে বদ গন্ধ। আমি যে তাদের এত কাছে চলে গেছি কেউ খেয়াল করলো না, আমি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম এই তোরা কি ভূত। আমাকে দেখে তারা ভূত দেখার মত চমকে উঠলো, তারপর যে যেদিকে পারে দৌড়।

ভূতের দেখা না পেয়ে ফিরে আসছি, হঠাৎ এক কবরে আমার পা আটকে গেলো। যতই উঠাতে চাই ততই দেবে যায়, শেষমেষ হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ল। আমি ভীতু না, খুব কম ভয় পাই কিন্তু কবরে ঢুকে ভীষণ ভয় পেলাম। কবর অবশ্য খালি কয়েকটা হাড় ছাড়া আর কিছুই নাই। অনেক চেষ্টা করেও উপরে উঠতে পারলাম না। কান্নাকাটি চিৎকার-চেচামেচি করেও কোন ফল হলো না। শেষমেষ হাড় গুলো একপাশে সরিয়ে ওখানেই শুয়ে পড়লাম।

সকালে আমাদের বাসায় হুলুস্থুল অবস্থা। ছেলে চুরি হয়ে গেছে, আম্মা ভাই-বোনদের কান্না শুনে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই হাজির, তারপর খোঁজ খোঁজ খোঁজ। কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য পাওয়া গেল, প্রাতঃভ্রমণে বেরোনো একজন কবর থেকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলেন। পরবর্তী কয়েক দিন বিড়ম্বনার মাঝে কাটল। বাসার দরজার লক বদলে গেল, চাবি চলে গেল আম্মার বালিশের নীচে। যে কোন দিন শাসন করার চিন্তাও করেনি আমার তিন বছরের ছোট ভাই সেও আমাকে শাষন করে গেল। এত ঝামেলার পরেও আমার ভূতাভিজ্ঞতা হল না, আফসোস…

শুদ্ধ মানুষের গান

ভুলের পৃথিবী ডাক দিয়ে বলে
তুই একবার শুদ্ধ ছিলি…

ফিরে যা জ্যৈষ্ঠের গনগনে দুপুরে
তপ্ত মাঠের সেই ধুলা ওড়া বালি
পানিশূন্য বুক; তৃষ্ণার হাপর উঠে।
বুকের বোতাম খুলে তবু তুই
মুঠিবদ্ধ হাতে দৌড় দিয়েছিলি।

তোর পায়ের ভারে পদানত
হানাদার দাঁড়াতে পারেনি। ছিল না
মামুলি কোন অস্ত্র, তবু
আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে
ভস্ম করেছিলি
সেইসব বেজন্মা বেহায়াদের।

অন্য কিছুই তোকে বিচ্যুত করতে
পারেনি। তারা; লোভের পসরা
সাজিয়ে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে।
অঢেল কড়ির বিনিময়ে করতে
চেয়েছে খরিদ। সব তুচ্ছ করে
তুই শুধু জপে গেছিস শীতল
ছায়া। কোমল মায়ার চেয়ে
প্রিয় কিছু তোর মাথায় আসেনি।

লক্ষ্যে অটুট থাকলে কিছুই
অজেয় থাকে না। শ্যামল সবুজ
লক্ষ্য ছিল বলেই তুই জয়ী
হয়েছিস। তুই সেই শুদ্ধ মানুষ
যাকে পাওয়ার জন্য দেবতাও
হাপিত্যেশ করতো। তোকে একবার
ছুঁয়ে দিতে সারিবদ্ধ মানুষ
ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো।

আমরা দেখেছি পুষ্প বৃষ্টি
মঙ্গলধ্বনি আর আনন্দাশ্রু।
আমরা জানতাম তুই সেই শুদ্ধ মানুষ
যার পায়ের কাছে পৃথিবীর
যাবতীয় পবিত্রতা গড়াগড়ি খায়…

সেই মহাপুরুষ

নগরের মানুষের ব্যস্ততা বড় বেশি
তারা এদিক যায়; সেদিকে যায়
অকারণ দিক-বিদিক ঘুরে বেড়ায়।
তাদের হাতে অফুরন্ত সময়
তারা গল্পগুজব, আড্ডায়
সময়কে অসময়ে পর্যবসিত করে।

নগরের মানুষেরা গায়ে হাওয়া
লাগিয়ে বেড়ায়। বাজারে, চায়ের
দোকানে; অহেতুক হাওয়া কথা বলে
বাতাস উত্তপ্ত করে। ঈশানের কোনে
কালো মেঘ জমা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে
ঝড়ের আলামত। নগরের মানুষেরা
উদাসীন; সমূহ বিপদ বিচলিত করছে না।

নগরের মানুষেরা মত্ত নিজেদের নিয়ে
সার্টের বোতামে, হাতের তালুতে,
পাজামার ফিতায় তারা জপে যায়
নিজস্ব গুণগান। তাদের অগোচরে
সাপ বলশালী হচ্ছে, প্রবল তেজে
উঁচিয়ে ফণা তেড়ে আসছে।
আজদাহা আসছে বিষাক্ত শ্বাসে
তছনছ করতে জনপদ।

নগরের মানুষেরা বড় বেশি অগোছালো
তারা দিক নির্দেশনা হীন।
তারা কোন স্বপ্ন দেখে না
শুষ্ক বিছানায় মৃতবৎ পড়ে থাকে।

নগরে যখন কোনো আশার আলো বাকি নেই
চারিদিকে যখন ক্ষুধার্ত শকুন
তখন তিনি এসে দাঁড়ালেন

তর্জনী উঁচিয়ে বললেন ‘ভায়েরা আমার’
তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানালেন
তাঁর ডাকে অগোছালো মানুষ সারিবদ্ধ হল।
তিনি তাদের নিয়ে পৌঁছুলেন।

পৌঁছুলেন সবুজের পাড়ে
তিনি এসেছিলেন বলে আমরা কণ্ঠ পেয়েছি
তিনি এসেছিলেন বলেই গলা খুলে গাইতে পারছি
‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায়…’

রঙ নাম্বার

ঝিলের ধারে বসে ছিলাম
মুখটা করে ভার
হঠাৎ কেঁপে উঠল মোবাইল
অচেনা নাম্বার

ধরব কি না ধরব দ্বিধায়
হচ্ছে সময় ক্ষয়
শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল
কৌতূহলের জয়

অপর প্রান্তে সুরেলা এক
কণ্ঠ শুনা গেলে
আমার মনের পায়রা গুলো
আবার ডানা মেলে

সুরের জাদু কণ্ঠে রেখে
অচেনা নাম্বার
বলতে থাকে নড়ে গেছে
তার হৃদয়ের পাড়

তার পুকুরে ঢেউ উঠেছে
আমার ছুড়া ঢিলে
ঢিলের ব্যাপার জানি না তো
কেমনে এটা মিলে

বলি আমি ভুল করছেন
আমি তো সে নই
কণ্ঠ বলে আমার হৃদয়
আপনি নিশ্চয়ই

কি আর করা মেনে নিয়ে
হাঁটি প্রেমের পাড়
যদিও জানি মোবাইল আমার
বড় ভাইয়ার

প্রেমালাপে কাটছে সময়
লাগছে ভাল বেশ
ভুল হলেও পাচ্ছি খানিক
সত্যি প্রেমের রেশ

ভাইয়ের কথা পরলে মনে
খেয়ে ফেলি খাবি
মুখ ফসকে বলেই ফেলি
আপনি আমার ভাবী

যেই বলেছি ঐ পাড়েতে
নামলো নীরবতা
মোবাইল দিয়ে ঘসতে থাকি
আমার কপাল যথা…

খালকাটা

(কাল্পনিক; বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই)

জুলেখার পুত্র লায়েক হয়ে গেছে; সে এখন নিজের মতামত দিতে চায়; মাকে প্রভাবিত করতে চায়। জুলেখা নিরুপায়; পুত্রের অযাচিত উপদ্রব মেনে নেয়া ছাড়া কিছু করার নেই। তার চারপাশে অবিশ্বাসী মুখ, কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যাকেই বিশ্বাস করেছে, সময়-সুযোগের সেই তাকে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। জুলেখা ঠেকে শিখেছে কিন্তু পুত্রের ব্যাপারে সে অসহায়।

জুলেখার রাজ্যের নাম ‘খালকাটা’ তার স্বামী কুমিরের চাষ করবে বলে এমন রাজ্যের পত্তন করেছিল। এই কুমির জুলেখার জন্য কাল হয়েছে, তার চারপাশে শুধুই কুমির। হা করা মুখ গিলে খাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

জুলেখা কিছুদিন ধরে অসুস্থ। কুমির সম্প্রদায় প্রায়ই তার অসুস্থতাকে উৎসব হিসাবে পালন করে। জুলেখার অসুস্থতার সুযোগে তার পুত্র সর্বেসর্বা বনে গেছে। কিন্তু তাকে কেউ পছন্দ করেনা। সে কুমির শ্রেষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।

সে জানে কেউ তাকে পছন্দ করে না তবু মাকে ব্যবহার করে সে তার আখের গোছাতে ব্যস্ত। মায়ের অসুস্থতা তার জন্য এনে দিয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারে উদাসীন, সুস্থ মায়ের চেয়ে অসুস্থ মা তার কাছে লোভনীয়। মায়ের অসুস্থতা বাইরে বিক্রি করে সে তার কর্ম ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পারছে।

জুলেখার অসুস্থতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কাউকে পাচ্ছে না যে একটু পাশে বসে মাথায় বুলিয়ে দেবে মমতার হাত। যারাই আসছে স্বার্থ নিয়ে আসছে। তাদের মুখ হাঁ করা; সুযোগ পেলেই গিলে ফেলবে।

জুলেখা নীরবে অশ্রু ফেলে আর ভাবে, স্বামীর ‘খালকাটা’র প্রায়শ্চিত্ত তাকে করতে হচ্ছে। স্বামীর অসংখ্য কুমির উৎপাদনের খেসারত এখন তাকে দিতে হচ্ছে। স্বামী যদি বুঝতো কিংবা জুলেখা যদি স্বামীকে বুঝাতে পারত কুমিরের চাষ করতে নেই তারা বিশ্বাসী হয় না তাহলে নিজের পুত্র হয়তো কুমির হতো না। পুত্র কুলাঙ্গারে পরিণত হতো না। স্বামীর কর্ম তাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

জুলেখা অশ্রু ফেলে আর ভাবে…

তিতলি ও তার মা

তিতলির বাবা মারা যাওয়ার তিন দিন পরে তিতলি পালিয়ে যায়, অথচ এর প্রয়োজন ছিল না। রাহুলের সাথে তার সম্পর্কের বাধা বাবাই ছিলেন, মায়ের অমত ছিল না। এখন তাদের সম্পর্ক নির্বিঘ্নে বিয়ের দিকে গড়াতে পারতো। মৃত্যুর তিন দিন পরে পালিয়ে যাওয়া একটা বিরাট ধাঁধা হয়ে দেখা দিয়েছে। একদিকে স্বামীর শোক অন্যদিকে মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার কলঙ্ক, দিশেহারা তিতলির মা।

পালিয়ে যাওয়ার একুশ দিন পরে তিতলি ফিরেছে, কিন্তু বিধ্বস্ত হয়ে ফিরেছে। রাহুলের সাথে যে স্বপ্ন দেখেছিল; সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রেমিক রাহুলের সাথে বর্তমান রাহুলকে তিতলি মিলাতে পারছে না। তিতলি বুঝতে পেরেছে বাকিজীবন রাহুলের সাথে কাটানো অসম্ভব, সে ফিরে এসেছে।

মায়ের সাথে তিতলির সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল, মা-মেয়ে জমতো বেশ কিন্তু পালিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার পরে সম্পর্ক আগের পর্যায়ে নেই। তিতলি অনুশোচনায় পুড়ছে, মায়ের কাছে অনেকবার মাফ চেয়েছে। মায়ের রাগ কমছে না, তিতলি না ফিরলেই যেন ভালো হতো।

তিতলির বাবার মৃত্যুর আড়াই মাস পরে মায়ের বিয়ে হয়, তিতলির অমতেই হয়। তার মতের তোয়াক্কা কেউ করেনি। তিতলির পছন্দের মত মায়েরও পছন্দ ছিল, বাবার মৃত্যু মায়ের পছন্দকে সহজ পরিনাম দিয়েছে।

তিতলি মায়ের সাথেই থাকে কিন্তু এ থাকা মায়ের পছন্দ নয় সে অন্য আবাসনের খোঁজ নিচ্ছে।

তিতলির বাবার মৃত্যুর চার মাস সতের দিন পরে পুলিশ তাদের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। তিতলি এবং তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছে, তারা খবর পেয়েছে তিতলির বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তারা কোর্টের অনুমতি নিয়ে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করবে।

তিতলি ভয়ে কাঁপছে, বাবার মৃত্যুতে তার হাত আছে। তিতলির মাও ভয়ে কাঁপছে স্বামীর মৃত্যুতে তার হাত আছে। মা মেয়ের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব ছিল, এই দূরত্ব এখন নাই। দুজন এক হয়ে পরামর্শ করছে কিভাবে খুনের মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ডিম ভাজি

তিন তেরো আটত্রিশ হলে সমস্যা কি ছিল বুঝতে পারছি না, উনচল্লিশই হতে হবে কেন।

প্রায় অর্ধ ঘন্টা ধরে নীল ডাউন হয়ে আছি তাও আবার ক্লাসের বাইরে, নীল ডাউনে অসুবিধা না; অসুবিধা হল ডানা নামের যে মেয়েটার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছি সে মেয়েটা দেখে ফেলেছে আমি নীল ডাউন হয়ে আছি। দারুণ লজ্জার ব্যাপার। ইজ্জত পুরো পাংচার।

গতকাল ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অনেক কিছু বলেছি; আমি ক্লাসের প্রথম ছাত্র, লেখাপড়া আমার জন্য ডালভাত। আমি প্রথম এটা ঠিক তবে শেষ দিক থেকে প্রথম, আর প্রায়ই ডালভাত ছাড়া খাবারের কিছু জুটে না।

মেয়েটা নতুন এসেছে। একে সুন্দরী তাও আবার ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে। আমার মত এলেবেলে ছেলের সাথে কথা বলার গরজ নেই। তাই নিজেকে হাজির করতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক কিছু বলেছি।

কতটুকু প্রভাবিত হয়েছে বলতে পারছি না কিন্তু সকালে দেখা হলে আমার দিকে চেয়ে হেসেছে, তার হাসি আমার কাছে ধনাত্মক মনে হয়েছে।

শুধুমাত্র একের জন্য মার খেয়ে গেলাম, তিন তেরো আটত্রিশ অনেকক্ষণ হিসাব করে বের করেছিলাম, কিন্তু স্যার যখন আমাকে গর্দভ বলে নীল ডাউনের শাস্তি দিলেন তখন বুঝলাম কোনো গলদ রয়ে গেছে।

অর্ধ ঘন্টা ধরে নিল ডাউনে থাকতে থাকতে তেরো নামতা পুনরায় স্মরণ করতে গিয়ে মনে হল আমি মাত্র এক নাম্বার থেকে দূরে ছিলাম।

আমার ক্ষেত্রে প্রায় এমন হয় সামান্যের জন্য কাঙ্খিত কিছুই পাওয়া হয়না। যেমন গত কাল ডিম ভাজি ছিল, আমি স্কুল থেকে ফিরতে দেরি করায় আমার ছোট ভাই; আমার অংশের ডিম ভাজিও খেয়ে ফেলল।

অথচ আমি যদি বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে সময়মতো বাড়ি ফিরতাম ডিম ভাজি অবশ্যই খেতাম।

স্যারের শাস্তি সমাপ্ত হয়েছে, টিফিনে ছোট একটা সিঙ্গারা মিলেছে। সিঙ্গারা খেয়ে চাপকলের পানি পর্যাপ্ত পান করেছি।

ডানা মেয়েটা দুইবার আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে, দুবারই চোখাচোখি হয়েছে। তার মুখে হাসি ছিল, আমার নীলডাউন তাকে খুব একটা প্রভাবিত করে নি। ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলে, আমিও একদিন ডিম ভাজি খাব।

চাই কি ম্যাজিস্ট্রেটের বাসায়ও খেতে পারি, শুনেছি সুস্বাদু খাবারের অভাব তাদের নেই। নিয়মিত কিছু প্রোটিন খেতে পারলে আমার স্মরণশক্তি আরো উন্নত হবে, ডাক্তারের কথা; মিথ্যা বলছি না।

স্মরণশক্তির উন্নতি হলে মাত্র একের জন্য ক্লাসের বাইরে আর নীলডাউন করতে হবে না।

সীতেশের প্রেমিকা সমাচার

সীতেশ যখন বলল আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমি বললাম ‘যা ব্যাটা ঝুলে পড়’। সে অবিশ্বাসের চোখে তাকালো, আমি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু; কোথায় সমবেদনা দেখাব উল্টা আত্মহত্যার উস্কানি দিচ্ছি।
আমি বললাম ‘তুই মরে যা’, ‘ব্যাটা লাড়কি তোকে ছেড়ে অন্যের গলে মালা পড়িয়েছে তোর মরে যাওয়া উচিৎ’।

শিখার সাথে সাড়ে উনচল্লিশ দিনের প্রেম শেষমেশ বিয়েতে গড়াল, অবশ্য সীতেশের সাথে নয় নিতাইয়ের সাথে। বিয়ের আগ পর্যন্ত সীতেশ জানতো না শিখা দুই ডাল থেকেই পেড়ে খাচ্ছে। নিতাই জুয়েলারির মালিক; গয়নার কমতি রাখবে না বলে ওয়াদা করেছে, শিখা তাতেই কুপোকাত।

সীতেশের আত্মহত্যার খায়েশ নতুন নয় শিখার আগে যার সাথে প্রেম ছিল সে ছেড়ে যাওয়ায়ও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। সেই মেয়ের নাম ছিল নুপুর। বলাবাহুল্য নুপুর এখন আমার প্রেমিকা, সীতেশের এটা অজানা। নুপুরের আগে দীপা, দীপার আগে টিঙ্কু।

সীতেশের প্রেমিকা বেশিদিন টেকে না তাতে কি; ছেড়ে গেলে কিছুদিন মনমরা থাকে ঠিক কিন্তু নতুন জোসে প্রেমিকা যোগারে লেগে যায়। শিখার বিয়ের তৃতীয় দিনই সীতেশ নতুন প্রেমিকা যোগার করে ফেললো।

আমার কাছে নতুন প্রেমিকার গুণগান করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে, আমি বললাম ‘তুই না শিখার জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলি’। সেই কথায় আমার উপর কি রাগ, জীবনে আর মুখ দর্শন করবে না।

তেরোদিন পরে পুনরায়; দোস্ত এবার সত্যি সত্যি মরে যাব, বুঝলাম এই প্রেমিকাও তাকে ডাম্প করেছে।

রাফখাতা

আট ক্লাসে রাফখাতায়
পেন্সিল দিয়ে একটি নাম লিখেছিলাম।

টিউশন মাস্টারের দ্বিতীয় মেয়ের নাম একই
আমার অজানা ছিল
তবুও মাস্টারের অভিযোগে
পিতার কাছে তিরস্কৃত হতে হলো।

আট ক্লাসেই প্রেমের চিন্তা
অকালপক্ক ভেবে কড়া নজরদারি।

অকালপক্ক ছিলাম বটে, নামটিও ছিল
প্রেমিকার; তবে তখনো প্রেমিকা ছিলো না।

জীবনানন্দের বনলতা পড়ে ভেবেছিলাম
ওইভাবে কেউ যদি বসে থাকতো
‘সমস্ত দিনের শেষে’ ক্লান্তি উজার করে

কেউ বলত ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’,
রাফখাতার নামটি কবিতা প্রেমের ছিল।

টিউশন মাস্টার কিংবা পিতা
আমার ব্যাখ্যা বিশ্বাস করল না
শেষমেষ নামটি মুছে দিয়েছিলাম।

মুছে যাওয়া প্রেমিকা এখনো হানা দেয়
এখনো ডেকে বলে ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’।

উল্লুক

স্যার আমাকে উল্লুক বলতেন
উল্লুক বস্তুটার সাথে তখন পরিচয় ছিল না
পরে জেনেছিলাম উল্লুক বানরের ভ্রাতা।

ততদিনে বিবর্তন তত্ত্বের কারণে
জেনে গিয়েছিলাম স্যারও উল্লুক।
স্যারের পিতার সাথে একদিন আলাপে
সত্যতা পেয়েছিলাম, বলেছিলেন
তার পুত্রও পুত্র বয়সে উল্লুক ছিল।

স্কুলে আমার স্বভাব ছিল উল্লুকের মতো
এ ডাল থেকে ও ডাল, স্থির হয়ে
দাঁড়ানো কিংবা বসা কোনটাই হত না।

আমাকে পাকড়াও করতে জাল ফেলা
হতো, জাল ফস্কে অনেকবার বেরিয়ে গেছি।

এখন আমি উল্লুক নই, এখন অনেকটাই শান্ত
স্যারের কবরে ঘাসের পুরুত্ব বেড়েছে।

আশেপাশে অনেক উল্লুক দেখি
নিজের দিকে তাকাই; স্যারের কথা ভাবি
আমি কবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি,
স্যারের কবর আগাছায় ছেয়ে গেছে।

তবু কিছু বেদনা

রাস্তায় নামতেই ক্ষুদ্র এক পাথরে ধাক্কা খেলাম
প্রতিদিনের রাস্তা, প্রতিদিনের পাথর। ফুটপাতে
উই’র টিবির মতো পাথর সযত্নে এড়িয়ে চলি।
আজ মনসংযোগে ব্যাঘাত হচ্ছে, বাঁধতে ভুলে
গেছি টাইয়ের নট। গতকাল শিমুলের ডালে যে
সংসারী শালিক কে উৎফুল্ল দেখেছিলাম, আজ
শিমুলের গোড়ায় তার নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে আছে।

টকটকে লাল শিমুল ফুলে বাদুড়ের বিষ্ঠা, সাজানো
সংসারে গ্রহণ লেগেছে। উই’রটিবি থেকে বেরুচ্ছে
বিষাক্ত আজদাহা। বিছানার তক্তপোশে খাটমল
লুকিয়ে ছিল বুঝতে পারিনি। চাদরে রক্তের দাগে
টের পেলাম; দেরী হয়ে গেছে। দুই পাশে নদী রেখে
মৌন মাঝি। ফুরিয়ে গেছে আজ পারাপারের কাজ।
কিছু স্মৃতি তবু বাকি আছে, কিছু বেদনা রয়ে গেছে।

জানাজা

প্রতিটি জানাজায় গেলে মনে হয়
লাশের পাশে ঘুমিয়ে আছি।

প্রতিটি কবর আমাকে আবাসনের
লোভ দেখায়। ঘরের বারান্দায় যখন
সূর্য নামে দূরে চিলের সাথে ঘুড়ির
মিতালি সাঙ্গ হয়; নাটাই গুটিয়ে নিলে
একলা আকাশ শূন্যতায় গ্রাস করে।

বৃদ্ধের মুখে শেষ বিকেলের ছায়া
যখন দেখি, ভাবি; সন্ধ্যার বুঝি
দেরি নেই। আঁধার ঘনিয়ে আসছে;
যেতে হবে শেষ ঘুমে। ফজরের
আযানের শব্দে হয়তো জাগবো না।

ঘুমের চেয়ে উত্তম ছিল সবকিছু;
নামাজ ছাড়া, প্রার্থনায় সব আলসেমি।
দৌড়, সিঁড়ি একের পর এক
পাহাড় মাড়ানো। অনেক উঁচুতে উঠেছি
ভেবেছি কেউ ছুঁতে পারবে না।
কিন্তু ঘুম ঠিকই পেচিয়ে নিল
রেহাই পেলাম না, আজীবন যে ঘুম
অস্বীকার করেছি; সেই ঘুম লাশ
বানিয়েছে। পড়ছি নিজের জানাজা।
ফজর এখনো বকেয়া র’য়ে গেল।

ভালোবাসার রকমফের

জিতেনের হয়েছে বড় সমস্যা; রুমকি কে মুখ খুলে বলতে পারছে না। অথচ বললেই ল্যাঠা চুকে যেত।

জিতেন রুমকি কে নয় রুমিকে ভালোবাসে কিন্তু রুমকি জিতেন কে নিজের খরিদ করা মাল ভেবে বসে আছে। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করে।

রুমি জিতেনের চোখাচোখি কয়েকবার হয়েছে, রুমির চোখে প্রণয়ের আভাস আছে। এগোনো যে যাবে সে ব্যাপারে জিতেন নিশ্চিত।

এখন শুধু রুমকি বিপদ পার হওয়া। জিতেন আজ ঠিক করে এসেছে যে ভাবেই হোক সত্য কথা বলে যাবে। রুমকির শাষনে জিতেন অতিষ্ঠ, খোলাশা করা ছাড়া মুক্তি নেই।

রুমকির সাথে রুমিকেও দেখা যাচ্ছে। এদুটি প্রাণী একসাথে ছাড়া চলতে পারে না, এদের গাঁটছড়া জীবন একজনকে টান দিলে অন্যজনও এসে পড়ে। জিতেন ভাবে আজকে রুমির সামনেই রুমকিকে বলে দিতে হবে, ঝামেলা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

পার্কের বেঞ্চে পাশাপাশি তিনটে প্রাণী বসা, এই মুহূর্তে যে আলাপ সম্পন্ন হয়েছে। জিতেনের পক্ষে তা হজম করা মুশকিল হচ্ছে। জিতেন রুমকিকে বলতে পেরেছিল, রুমকি যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। রুমকি বলল ‘অনেকদিন থেকেই তোমাকে এই কথা বলতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার মিল হবে না, আমি রুমিকে ভালোবাসি, আমরা একসাথে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখি’।

জিতেন রুমির মুখের দিকে তাকালো, চোখের দিকে তাকাল সেখানে স্পষ্ট সমর্থনের ইঙ্গিত। অর্থাৎ রুমকির সাথে যৌথ জীবনে রুমির আপত্তি নেই।

জিতেন বিভ্রান্ত, তার মুখে কোন কথা সরলো না। সে কিছুক্ষণ কথা না বলে বসে থাকল তারপর উঠে ধীরে ধীরে চলে গেল। রুমকি রুমি হাত ধরাধরি করে বসে অনেকক্ষণ জিতেন এর চলে যাওয়া দেখল।

তাদের যৌথ জীবন

দেবী দক্ষিণের চরণে অর্ঘ্য ঢেলে
নিঃস্ব হয়েছিল মিস্ত্রাল
তার কি কোন দুঃখ ছিল!
নিজেকে উজাড় করে
ফকির হওয়া, এও কি নিজস্ব বাঞ্ছা!

দক্ষিণের জানালায় যাবতীয় সুখ;
দখিন বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়,
দক্ষিণ প্রতিভাত হলে মিস্ত্রাল জেগে উঠে।
সংসারের একঘেয়েমি মৃত্যু নিয়ে এলে;
দক্ষিণের এক চিলতে হাসি
টেনে নিয়ে যায় জীবনের পারে,
দেবী দক্ষিণ জীবনের গান গায়।

দেবীর পূজায় নিজেকে বিলীন করে
মিস্ত্রাল জয়ী হয়েছিল, পেয়েছিল জীবনের দেখা।

তারপর যৌথ জীবনে মিস্ত্রাল; দেবী দক্ষিণ
চিহ্ন রেখে গেছে, যে চিহ্ন কোনদিন মুছবে না।

সঙ্গম

তিন দিকে জল; এক দিকে মালতি
প্রতিদিন পানিতে ভেলা ভাসিয়ে
মালতি দর্শনে যাই। মালতি প্রেমিকা;
জলের বারান্দা থেকে গ্লাসে
পানি ঢেলে দেয়। আমি তৃষ্ণা জুড়াই।
প্রেমিকার পিতা শঙ্কর মেরে জলে
ভাসিয়ে দিবে বলেছে। মম পিতা আবদাল
বলেছে পানিতে চুবিয়ে মারবে।
মালতি জল পানির দ্বন্দ্বে দিশেহারা।

আমি নাছোড়বান্দা; জল পানির
সঙ্গম না করে ছাড়বো না!