মামুন এর সকল পোস্ট

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

নীরার ক্লান্ত দুপুর

অনেকদিন পর, নতুন করে আবারও লেখালেখিতে ফিরে যাবার চেষ্টা। কিন্তু মনে যেভাবে লেখাগুলো এলো, অক্ষরে সেভাবে রুপ দেয়া গেলো না। না লিখতে লিখতে, শব্দেরা আগের মত ধরা দিতে চাইলো না। তারপরও… নতুনভাবে আরো একবার শুরু হলো গল্প লেখা…

_____________
এক ভাতঘুমে ঢলে পড়া ক্লান্ত দুপুরে, এলোমেলো ভাবছিলো নীরা। ভাবনাগুলো ওকে কষ্ট দিচ্ছিলো। আবার কষ্টের ভিতরে কিছু সুখও ছিলো। সুখগুলো কষ্ট হয়ে পরক্ষণেই আবার কষ্টগুলো সুখে রুপান্তরিত হচ্ছিলো। হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠে লুকিয়ে থাকা প্রেম কতটুকু পুষ্টি পেয়েছে, সেই দুপুরে এমনটাই অনুভব করতে চাইলো নীরা।

অবাক হয় নীরা! কষ্টের অনুভুতি অনুভব করার পাশাপাশি কষ্টের রঙকেও দেখতে পায় সে! নীল জোছনা!!

নীল এর কথায় আরও একদিনের কথা মনে পড়ে। দিনটি ছিল অষ্ট প্রহরব্যাপী নীলাভ জোছনায় ঢাকা। হৃদয়ের দু’কূল প্লাবিত মৌণতায় ভেসে থাকা চাঁদের কণাগুলোও যেন নিঃসঙ্গতার তুলির ছোঁয়ায় আঁকা! এমন দিনে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে, অকপটে মনের কথা বলতে, পিচ ঢালা জোছনাক্লান্ত পথ ধরে সেই বিবর্ণ নগরের দিকে পা বাড়িয়েছিলো নীরা। সঙ্গীহীন, বিবর্ণ ও বিষণ্ণ নীরা, সেদিন সময়ের তালে তালে হেঁটেছিলো পথ নিঝুম নিমগ্ন সুখে!

সেই ছেলেটি, যে ওকে জোছনা দেখাবে বলেছিল একদিন, সে ঐ শহরে থাকে। কাছে-দূরে করে করে বেলা বয়ে গেছে শুধু, নীরার- কিছুই বলা হয়নি তাকে। সেদিন শেষ প্রহরে, নীল জোছনায় ভিজে ভিজে, নীরা ছেলেটির বাড়ীর সামনে গিয়েও ফিরে এসেছিলো। সে আরেক গল্প.. ক্লান্ত দুপুরের এক নষ্ট গল্প।

ভালোবাসা হলো মনের মিলন। বাবা-মেয়ে, ছেলে-মা কিংবা বাবা-ছেলে কিংবা মেয়ে-মা এদের ভিতরে রয়েছে মন ও আত্মার সম্পর্ক। এখানে দেহের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর প্রেম হলো, ভালোবাসা সহ শারিরীক ও জৈবিক সম্পৃক্ততা।

সেই ছেলেটি ভালোবাসা ছাড়াই কেবল প্রেম করতে চাইলে, সেই ক্লান্ত দুপুরে, ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম না হয়ে, দাবানল হয়ে শরীর পুড়িয়েছিলো শুধু।

আরেক ক্লান্ত দুপুরে, হৃদয়ের দু’পিঠে তন্নতন্ন করে সুখগুলোকে খুঁজে ফিরে ভাবে নীরা,
– কতটা ভালোবাসি এখনও ওকে, বলা-ই হলো না তাকে!

_____________________________
#নীরার_ক্লান্ত_দুপুর_মামুনের_অণুগল্প_৫৪৮

জোড়া অণুগল্প

জোড়া অণুগল্প
**
আমি যেখানে বসা আছি, সেখান থেকে একদিন নিজেকে দেখার চেষ্টা করি এক নিরব প্ল্যাটফরমে, ওয়েটিং পিলারের সাথে হেলান দিয়ে বসে।

একটা অপেক্ষমাণ ট্রেন আর আমার ছায়া নিয়ে আমি এক উল্টাপাল্টা জীবনের অধিবাসী হয়ে বসে আছি, নিজেকে দেখবার ব্যাকুলতা মনে।

থার্ড ক্লাস সিটিজেনের ছায়ারও কায়া থাকে, আমার কায়া কোথায়.. সবাই আমার যে ছায়া দেখে ওটাই কি আমি?

এই দেশে আমি নাগরিকদের কোনো শ্রেণিতেই পড়ি না।

#শ্রেণিহীন_অণুগল্প_৪৮৮

**
মেইন রোডের সাথে অফিসের মোড়ে এসে প্রচন্ড জ্যামের কারণে ইমরুলকে নিয়ে আসা মাইক্রোবাসটি অনেক্ষণ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আরো অনেক অফিসগামী মাইক্রোবাস, মালামাল ও যাত্রী নিয়ে ট্রাক-বাস-টেম্পু আর ম্যাক্সির ভিড়ে, ইমরুলের অফিসের নীল মাইক্রোটিকে আলাদা করা যাচ্ছে না। সাথের অন্য কলিগেরা প্রায় সবাই-ই ঘুমে। দু’একজনের নাক ডাকছে। স্মিত হেসে ভাবে ইমরুল, রাতের বেলাটা এরা বাসায় কি করে? ঘুমায় না নাকি?

জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। লাইন ধরে পথের ভাঙ্গাচুরা অংশ দিয়ে যার যার কর্মক্ষেত্রে চলে যাচ্ছে সেলাই দিদিমনিরা। সেলাই বন্ধুরা। কত রঙ বে রঙ এর পোশাক পরণে তাদের। কিন্তু জীবনটা কি ওদের পরিধানের পরিচ্ছদের মত-ই বর্ণীল?

হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটি পড়ছিল। মোবাইলে পিডিএফ ফাইলগুলি অফিসে আসা-যাওয়ার সময়গুলোতে ইমরুলের বিশ্বস্ত সঙ্গী। কোনাবাড়ি থেকে অফিস শেষে ঢাকায় নিজের বাসায় পৌঁছাতে, দুর্বিষহ বেশ কয়েকটি জ্যামের কবলে পড়তে হয়। নাগরিক বিড়ম্বনা। সেই সময়গুলিতে পিডিএফ গুলোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে।

সামনের মাইক্রোটির টেইল লাইট জ্বলে উঠতেই ইমরুলদের গাড়ির ড্রাইভার বাসেত তৎপর হয়। কে কার আগে যাবে তার-ই এক দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইমরুল। কেউ-ই আইন মেনে চলতে চায় না।

মোড় ঘুরে মেইন রোড থেকে শাখা রোডে ঢুকতেই ওদের কারখানাটিকে দেখতে পায় সে। চকিতে একটু আগে পড়া গোর্কির লাইনটা মনে পড়ে-‘কারখানার উঁচু উঁচু পাথুরে খুপরিগুলো ওদেরই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার আত্মপ্রত্যয়ে।’

হ্যা! যদিও দুই দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্নতায় আবহাওয়া উপযোগী ইমারত নির্মাণের কারণে, ইমরুলের কাছে নিজেদের কারখানাটি উপন্যাসে বর্ণিত হুবহু অনুভব আনে না; কিন্তু সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই বিশাল কংক্রিট- কাঠামো যে ওদেরকে গিলে খেতেই অপেক্ষায় রয়েছে, সেটা ভেবেই নিজের অজান্তে মনটা একটু দমে যায়। দীর্ঘশ্বাসগুলোও কেন জানি মহানগরের ভিতরের ছোট্ট এই নগরের প্রাচীরে বাঁধা পেয়ে ফিরে ফিরে আসে।

ওখানে দীর্ঘশ্বাসগুলির জন্ম হয় বলেই কি?

#একদিন_প্রতিদিন_অণুগল্প_৪৮৯

মিথিলা কারোর নয়

মিথিলাকে প্রথম যেদিন দেখি
আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল প্রচুর
কর্দমাক্ত একটি রাস্তার ডান পাশ ঘেষে হেঁটে আসছিল সে
অতি সন্তর্পনে পা ফেলছিলো
যেন এলোমেলো ইটের উপর পা পড়ে
তলার কাঁদাপানি ওকে বিড়ম্বনায় না ফেলে দেয়।
অফিস যাবার তাড়া ছিল তার..

প্রতিদিন একই সময়ে সে বাসস্টপে হেঁটে আসতো
রাস্তার ওপারের ফলের দোকানের সেই বৃদ্ধ দোকানি আর আমি
প্রতিদিনই দূর থেকে নীরব হাসিতে অভ্যর্থনা জানাতাম তাকে।
সে নিরবে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতো..

ওকে নিতে আসা মাইক্রোবাসটি ছিল কালো রঙের ‘হাইয়েস’
দূর থেকে গাড়িটি দেখা যেত না
কেমন ভুতের মত আচমকা এসে হাজির হতো!
সে একবার ঘাড় বেঁকিয়ে আমার পানে চেয়ে নীরবে চলে যেতো।
আমি ভাবতাম আবোলতাবোল নিজের মনে একা একা..

এভাবে একজন সম্পর্কহীনা
প্রতিদিনের অপেক্ষার কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে করে
চেনা-অচেনার গণ্ডী পার হয়ে কিভাবে যে আমার কাছে চলে আসলো
সে এক ভিন্ন ইতিহাস।
অন্য কোনও সময় বলা যাবে..

একদিন হরতালের দিনে
প্রতিদিনের মতো অপেক্ষায় আমি
পিকেটাররা তখনো বের হয়নি
কাঁধের ব্যাগটি মিথিলার অবহেলায় এদিক সেদিক দুলছিল সেদিন
চিন্তিত মিথিলা পাশে এসে বলে,
– আজ গাড়ি আসবে না। কি করি বলুন তো?
আমার অবাক হওয়া চাহনি দেখে মৃদু হেসে বললো,
– এই যে মিস্টার! আপনাকেই বলছি আমি।

আমি তখন ওর ঠোঁটের আলোড়ন কিভাবে শব্দকে মধুর করে তোলে
সেই বিশ্লেষণে বিভোর ছিলাম ওরই পানে চেয়ে!
আমার বালক মনের নাবালক চোখের অপার বিস্ময়
সেদিন ওর চোখের তারায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল!
কেমন শান্তিপ্রদ তেজ সেই আগুনের
শীতের নরম রোদের মত মায়াবী কোমল!

সেদিনই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে একই রিক্সায় পাশাপাশি
সেদিনই প্রথম নিজের ভেতর থেকে নিজেকে বের করে আনা
চেতন অবচেতনে সেদিনই বালক থেকে প্রথম পুরুষ হয়ে ওঠা
আর ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম হওয়া ক্ষণে
সেই-ই প্রথম দু’জনায় কাছাকাছি!

দুরন্ত বাতাস মিথিলার অবাধ্য চুল আমার দিকে ঠেলে দিয়ে হাসছিলো
আমার আর ওর শরীর ছুঁয়ে যাওয়া মাতাল সমীর
উষ্ণতর এক কাঁপন হয়ে আমায় গ্রাস করছিলো
আর আমি ভেসে যাচ্ছিলাম ফেনা হয়ে, ওর নি:শ্বাসের ছোঁয়ায়!

অনেক দিন, অনেকগুলো ঘন্টা
একত্রে কাটিয়েছিলাম আমি মিথিলার সাথে
হ্যা! ওটাই নাম ছিল তার
বলেছি বোধহয় আগেও একবার।
শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত আর ভরা বাদলের দিনে
ভেজা শালবনের ভেতর দিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম দু’জনে!

যেদিন ওর অসুখ থাকতো
কিংবা কোনো কারণে দেখা হতো না আমাদের
বড্ড মরে যেতে ইচ্ছে করতো সেদিন
বারবার ওকে দেখতে ইচ্ছে হতো!
ওর চলার পথগুলিতে তখন হেঁটে বেড়াতাম আমি পাগলের মতো
মিথিলার ঘ্রাণ অনুভব করতে চাইতাম পথের বুকে, আকাশে-বাতাসে, মাটির সোঁদা গন্ধে!

সেই মিথিলাকে শেষবার দেখি এক আলোকোজ্জ্বল রাতে
অপ্সরী সেজেছিল সে!
দেখেছিলেম তাকে সানাইয়ের সুরে সুরে চলে যেতে
একবারও পিছু ফিরে তাকালো না সে আমার দিকে!

মিথিলারা কখনো পিছু ফিরে তাকায় না!
মিথিলারা কখনোই কারো হয় না।।
______________________

.
মিথিলা কারোর নয়। গ্রন্থ : শেষ তৈলচিত্র।

ব্যালকনির_মানুষ_মামুনের_অণুগল্প

পাশাপাশি দু’টি বিল্ডিং। ছ’তলা। নির্বিকার দাঁড়িয়ে। পথ চলতি মানুষের বিস্ময় উদ্রেককারী না হলেও, ভবন দুটির মুখ দেখতে তাদের ঘাড় ভেঙ্গে যাবার আশংকায় তারা উপর দিকে তাকায় না। নগর জীবনের ভেতর আরেক নগর যেন। গল্প সমৃদ্ধ জীবনের প্ল্যাটফর্ম।

দক্ষিণের ছ’তলার ব্যালকনিওয়ালা রুমটিতে তিনি থাকেন। একা। পাশের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। পরিবার ভিন্ন এক শহরে থাকে। তিনি একা এই শহরে।

এখন অনেক রাত। গ্রিলের ওপারে নিচের জীবন অনেক জটিল। নিচু সামাজিক পদমর্যাদাধারীদের সাময়িক আবাসভূমি বলেই কি? উঁচুমনের উঁচুতলার মানুষেরা এই যে এদেরকে ‘নিচুতলার মানুষ’ তকমা এঁটে দিয়েছেন, দিচ্ছেন! তবে কে নিচু মনের? তিনি বিব্রত হন।

সিগ্রেট বাদ দিয়েছিলেন। এই বদ অভ্যাসটি আবার শুরু হয়েছে। তবে তা রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে। চোরের মত সংলগ্ন ওপাশের ব্যালকনির দিকে তাকান। নাহ! কেউ নাই। এতো রাতে অবশ্য থাকার কথাও না কারও।

এখন রাত দেড়টা।
সামনের বিল্ডিংটির দিকে তাকান। তখুনি মেঘ সরে যায়। চাঁদের রুপালি স্রোতে ভেসে যায় চরাচর। নারী তার এলোচুলে আঁধারের আড়াল নিয়ে নিজের অতি স্বাভাবিক পরিচ্ছদে-নিজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। নিজের ভুবনে একা। কোথায়ও হারিয়ে যাচ্ছিল আনমনে। রুপালী ঝলকে ওপাশের তিনি বেশ স্পষ্ট হতেই, নারীর মনে পড়ে তিনি আলুথালু বেশে আছেন। কিছু পরিচ্ছদ গরমে খুলে এসেছেন, রেখেছেন গোপন জায়গায়। চোখের আড়ালে। তিনি যে আলোয় প্রতিভাত সাময়িক নিঃসঙ্গ মানুষটার কাছে- ‘কাছের নারী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, নারী তা জানেন না। যেমন পুরুষ তিনি জানেন না, পাশের নারীর মনে তিনি ‘ব্যালকনির মানুষটা’ হিসেবে পরিচিত ছাপ ফেলে চলেছেন।

পাশের নারী গরম সহ্য করতে পারেন না। আর রাত বাড়তেই তিনি ক্রমশঃ যুবতী হতে থাকেন। গরম হন। তৃষ্ণা জাগে। নিজের মানুষটা তাঁর দূরের শহরে থাকে। তাই ‘ব্যালকনির মানুষটা’ ‘দুরের মানুষ হয়ে’ পাশের নারীর হৃদয় ছুঁয়ে থাকেন। অনুভবে- কল্পনায়! যেমন থাকে ব্যালকনির মানুষটার ভিন্ন এক দূরের শহরে- ‘দূরের নারী’ হয়ে তারও প্রিয় একজন! অর্ধাঙ্গিনী। ইদানিং ছায়াসংগী?

কতটা জিঘাংসা নিয়ে এই পাথর জীবন সব কাছের সম্পর্ক গুলিকে একাধারে কাছে-দূরের অনুভূতিতে আনা- নেওয়া করে চলেছে! হায়! কেউ জানতে চায়?
নাহ!

পাশের নারী এখন যুবতী। ব্যালকনির পিছনের তিনি তখন যুবক। যার যার দূরের প্রিয় মানুষ দু’জনও যুবক-যুবতী। মনে কষ্ট। শরীরে জ্বালা। সমাজ ভ্রষ্ট। এ অনুভব-শরীরের যন্ত্রণার। এক চরম নষ্ট কষ্ট। সব ভুলিয়ে দিতেই বুঝি বয়ে চলা বাতাস, পাশের নারীর দেহে পরম তৃপ্তির সুখানুভূতি এনে দিয়ে যায়। তিনি শীতল হন। ঘেমে যাওয়া তপ্ত শরীর জুড়িয়ে যায়। নিজের দেহের পরিচিত সৌরভ প্রিয় দূরের মানুষটার কথা মনে করিয়ে দেয়। মানুষটা তার দেহের এই ঘ্রাণ পছন্দ করে। রাতের গভীরে সময় গড়ায়- তপ্ততা বাড়ে- ঘ্রাণ বাতাসে মিলায়। ভালোবাসা বাড়ায়।

আজ তিনি কেন জানি বড্ড অস্থির। ভিতরে কোথাও আগুন লেগেছে। ফায়ারব্রিগেড এসেও নেভাতে পারবে না। এমন আগুন! প্রচুর বৃষ্টি দরকার। ভালোবাসার ঝিরঝিরে বর্ষণ। দূরের নারীর কথা মনে পড়ে তাঁর। কাছের নারী দূরের নারীতে পরিণত হন। এক নিষিদ্ধ লোবান!

নগর জীবনে দুটি ভিন্ন পাথরজীবন, কাছে-দূরের তীব্রানুভূতিতে বিলীন হয়ে কখন যে এক হয় নিজেরাও ওনারা জানতে পারেন না। অনুভবে একে অন্যের খোলস খুলে ভিতরের সুখগুলোকে অনুভবের চেষ্টা করেন।

সুখ তো ওখানে থাকে না।
ওরা ওখানে কেন ‘সুখের সন্ধানে’ ধায়!
সুখ কোথায়?

দুইটি অণুগল্প

এক.
বারো ঘন্টা কঠিন ডিউটি করে কাপড় পাল্টানোর মেলে না অবকাশ। ম্যাসেঞ্জারে মৃদু আওয়াজ। আমান ডিভাইস হাতে নেয়। সদ্য বন্ধু হওয়া এক নারীর মুখ ডিসপ্লেতে গোলাকার।

আয়নায় বিস্মৃত বন্ধুর মুখ? স্মৃতির প্ল্যাটফর্মে ঘুরে আসা ..পলকেই! নাহ! এই মুখ কষ্ট দেয়নি আগে।

অচেনা নারী শুধায় কালো অক্ষরে আলো জ্বেলে,
– কেমন আছ?

পরিচিত কোনো টোন কি ছুঁয়ে যেতে চায় আমানকে?
নাহ! এই টোন আগে কখনো কষ্ট দেয়নি আমানকে।
নির্জলা সত্যি বের হয় আমানের বুক চিরে,
– খুব খারাপ আছি। তুমি কে?

ওপাশে নীরব নারী।
জানার তীব্রতা মানুষেরই থাকে। একজন নামানুষ হয়েও এই আকাংখাটা আমানেরও বড্ড তীব্র। তাই কি ব্যাকুল হওয়া?
– বললে না, কে তুমি?
– বললাম তো ফেসবুক বন্ধু।

সরব হয় নারী।

– তা তো জানি। তুমি দেখতে নারীর মতো- বলছ বন্ধু। আসলেই কি তুমি তাই? তুমি কি নারীর আদলে সত্যিই নারী?
– হ্যা!
– শুনে খুশী হলাম। বন্ধু বুঝে আসে? না এমনিতেই বলছ ‘বন্ধু’?
– বুঝিনি তোমার কথা। কি করছ এখন?
– এক অচেনা নারী যে বলছে বন্ধু, কিন্তু বন্ধু তার বুঝে আসে না, তাকে নিয়ে অণুগল্প লিখছি। বলতো, নারী বন্ধু হতে পারে? না বন্ধু কখনো নারী হয়?
– বুঝি না আমি।
– হ্যা! এটা সত্য বলেছ। কখনোই বুঝ নি তুমি! বুঝলেও বুঝার মাঝে কিছু বাকি রয়ে যায় তোমার। নও রহস্যময়ী তবু ভান কর যেন রহস্যময়ী। তোমার কোন কোন রহস্যটা বুঝতে বাকি রয়েছে, বলতো আমায়?

ওপাশে শ্মশান নীরবতায় অচেনা নারীর নীরব প্রস্থান। আমান কি ব্যথিত হয়?
নাহ! ব্যথাগুলি তো সেই কবে পারুকে খুঁজতে চলে গেছে.. পারুর পিছুপিছু। ফিরেনি আজো।
তাই ব্যথা নাই।
বোধ নাই.. কিছুই নেই এখন আর।।

#নারী_রহস্যময়ী_মামুনের_অণুগল্প
______________________

দুই.
কাছে ঘেষত না সে, সব সময় শিহাবের থেকে দূরে দূরে। বিষাক্ত প্রাণীর সতর্কতা অবলম্বন করত পারু শিহাবের কাছে এলে। শিহাব যেন অমৃত বিষে পূর্ণ নীলকন্ঠ।

‘খবরদার শরীরে হাত দিবি না’
– নাহ, যা ভাবছেন তা নয়। কাছে থাকার সময়ের কথা না এটা। নিভৃতে ফোনালাপের সময়েই এই নিষেধাজ্ঞার বেড়ি।

দূরালাপনীতে পারুর সাথে কথা বলার সময়েও শিহাবকে, আরো অনেক কিছুর মত হাতের ব্যবহারেও সংযত হতে হতো। অনুভবে এক অদৃশ্য বেড়ি থেকেই যায়! নারীর পক্ষ থেকে পুরুষের প্রতি.. সবসময়।।

#বেড়ি_মামুনের_অণুগল্প

মামুনের ছোটগল্প: লেট দেয়ার বি লাইট

পুকুর পাড় ঘেষে পায়ে চলা দুটি মেঠো পথ চলে গেছে। ডানদিকেরটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজের সামনে দিয়ে পিচের পথে গিয়ে মিশেছে। বামেরটি দু’পাশে নাম না জানা ঝোপকে পাশ কাটিয়ে ঘন জঙ্গলের ভেতর সামান্য এক না দেখা রেখা রেখে আঁধারে হারিয়েছে।

এই বেলা শেষের অবেলায় আহসান সেই আঁধারের পথ ধরে হেঁটে চলেছে। দুর্ভেদ্য মানবমনকে সাথে নিয়ে এক নামানুষ নিজের একচিলতে আলো বিসর্জন দিতে চলেছে। এভাবেই প্রতিদিন… জীবনের দিনগুলো, দিন দিন প্রতিদিন, এভাবেই চলছে। তবে তার বিসর্জনের সময় কোনো সন্ধ্যা আরতির সুর ভেসে আসে না। থাকে না কোনো উলু ধ্বনি কিংবা বিষণ্ণ নারীদের চোখের চকমকে আভা।

এই জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ওদের আড্ডা। আড্ডা না বলে কয়েকজন অন্ধকারের জীবদের পারষ্পরিক মন্দ-লাগার অনুভবে প্রগলভ হয়ে ওঠা। কিংবা কিছু কর্কশ ক্ষণকে উপভোগ করার কথা বললে কিছুটা সত্য বলা হবে।

আজকাল সত্য কতটা সত্যি হয়ে প্রকট হয়? নিজের মনে ভাবনার এই অংশে এসেই অদূরে মাচার ওপর রায়হানকে দেখতে পায় আহসান। হৃদয়ে এক ভালোলাগা জেগে ওঠে। এই আঁধারে ওরা সাতজন জীব। যাদেরকে আশেপাশের সবাই এই ‘জীব’ই মনে করে। মানুষ হতে পারেনি ওরা কেউই এখনো। তাই মানুষের সমাজে থেকেও নিজেদের জন্য ওরা বেছে নিয়েছে এক ছায়াজীবন।

– কিরে বাইঞ্চোত! আমার আগেই চলে এলি?
আহসানের কথার উত্তরে ওর দিকে তাকায় রায়হান। প্রিয় বন্ধুকে দেখে। ওর মনেও ভালোলাগা দোলা দেয়। দাঁত না দেখিয়ে নিঃশব্দে হাসে।

উত্তরে ওর ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ এভাবেই বের হয়,
– হুম। ..গির পোলা তোর না আমার আগে আসার কথা। ফোন দিবি বলছিলি, দিছিস?
– স্যরি দোস্ত! আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না।
– কবেই বা তোর ছিল?

দু’বন্ধু মাচার নিচে বেঞ্চের মত করে বানানো বাঁশের মাচায় বসে। উপরে-নিচে এরকম বসার জায়গা বানানো। তিনটা আম গাছকে ঘিরে এই আড্ডাস্থল। নিজেদেরই বানানো। এই সাতজন ভিন্ন বয়সী নামানুষের ভেতর একজন রয়েছে, সে কাঠের কাজ জানে। সেই বানিয়েছে।

আহসান পাশে বসতেই রায়হান জিজ্ঞেস করে,
– মাল কার কাছে?
– জাহিদের আনার কথা আজ।

একটু বিরক্ত হয় রায়হান। ওর ভ্রু’র কোঁচকানো দেখে আহসান। একটু হাসে নিরবে। ওর এই বন্ধুটি অপেক্ষা করতে একটুও পছন্দ করে না। আর আজ এই জিনিসটাই অনেক্ষণ থেকে করতে হচ্ছে তাকে।

প্রসঙ্গ ঘোরাতে রায়হানের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
– নারিকেলের ছুবা তোর আনার কথা ছিল। এনেছিস?

কথা না বলে নিজের টি-শার্ট ওপরে তুলে দেখায় রায়হান। একপলক দেখে আহসান। এরপর দু’বন্ধু আশপাশের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে খানখান করে দেয় ক্রমশঃ বাড়তে থাকা হাসির এক একটা তীব্র ওয়েভে। রায়হান ওর কোমরে বেল্টের পরিবর্তে নারিকেলের তৈরী দড়ি ব্যবহার করেছে। একই সাথে বেল্ট এবং আগুন ধরাবার কাজে ‘ছুবা’র কাজও করবে।

ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে। এই ঘন জঙ্গলের সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীগুলোও এই সাতজনের শরীরের ঘ্রাণ চিনে। পারতপক্ষে ওগুলিও এই জায়গাটিকে এড়িয়ে চলে। যেভাবে সমাজের ‘ভদ্র মানুষগুলি’ এড়িয়ে চলে সেভাবে নয়। সরীসৃপদের ভেতরে ভয় এবং কিছুটা মমতার মিশেলে দূর্বোধ্য একটা কিছু থাকে। তবে ভদ্র মানুষদের ভেতরে কেবলি ঘৃণা থাকে। তাই এই সাতজন নামানুষ সবসময়েই ভদ্র লোকদের আবাসভূমি এড়িয়ে চলে। যদিও ওদের পরিবারের বাকীরা সেই সমাজে বাস করেন। এরা যার যার পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন..আউটসাইডার! দু’জন অন্ধকারের জীব আরো পাঁচজন জীবের আগমনী বার্তা শুনবার অপেক্ষায় বড্ড উন্মুখ হয়ে থাকে। এদের পরিচয় যথাসময়ে জানা যাবে।

জাহিদ অরুণাপল্লীর একটু উপরের ঢালের কাছে ভ্রাম্যমান পুলিশ দলের চেকিংয়ের সামনে পড়ল। কলমা থেকে রিক্সায় এই পর্যন্ত ভালোই এসেছিল। সি এন্ড বি পার হলেই এমএস হলের সামনের ভার্সিটি গেট দিয়ে ঢুকে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু তার আগেই বিপত্তি। পকেটে জিনিস। ইদানিং এই এলাকায় পুলিশের নজরদারী একটু বাড়াবাড়ি রকমের দৃষ্টিকটু।

দৃষ্টিকটু? হাসি পায় ওর। হ্যা, অন্ধকারের বাসিন্দা সে। ওর কাছে দৃষ্টিকটু বৈকি! ভাবনায় পলকের তরে আশপাশ সহ সবকিছু বিস্মৃত হয় সে। তাই হাবিলদারের প্রশ্ন প্রথমে সে শুনতে পায় না।

পাশ দিয়ে চলে যাওয়া একটা মোটরবাইকের হর্ণের আওয়াজে ওর সম্বিত ফিরে। ওর দিকে তাকিয়ে হাবিলদার দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে,
– আপনাকে নামতে বলেছি আমি।

রিক্সা থেকে নামতে নামতে বলে জাহিদ,
– স্যরি, আমি শুনতে পাইনি।
উত্তরে কিছু না বলে আবারো হাবিলদার জানতে চায়,
– কোত্থেকে আসছেন?

কি বলবে ভাবে জাহিদ। এরা চেক করতে পারে, আবার না ও করতে পারে। তবে সে সত্যি কথাটাই বলবে মনঃস্থির করে। অকপটে জানায়,
– কলমা থেকে আসছি। গাঁজা কিনতে গেছিলাম।

পকেট থেকে নিজেই চারটা পঞ্চাশের ছোট পোটলা বের করে হাবিলদারের দিকে বাড়িয়ে ধরে। টহল পুলিশের বাকী সদস্যরা হাবিলদারের দিকে তাকায়। হাবিলদার একটু ধান্দায় পড়ে যায়। এভাবে সরাসরি কেউ বলে না সাধারণত। সে কি করবে ভাবতে কিছুটা সময় নেয়। পাশ দিকে হেঁটে যাওয়া সাধারণ মানুষ কৌতুহলী হয়ে উঠছে। তবে কেউ থামছে না। এরা এরকমই। দূর থেকে দেখবে, মজা নেবে, তবে কাছে আসবে না। পুলিশ বলে কথা।

হঠাৎ হাবিলদারের মনে হয়, পুলিশ বলে এরা আসে না সেটা ভয়ে না ঘৃণায়? তবে উত্তরটা জানার আগেই তার ভিতরের কর্তব্যবোধ মাথাচাড়া দেয়। আইন বলে একে ছাড়া যাবে না। আবার সে যেখান থেকে পুরিয়াগুলি সংগ্রহ করেছে, সেখানের বিক্রেতাকেও আইনের আওতায় আনতে হয়। কিন্তু সে জানে এটা সম্ভব না। আইনের ফাঁক ফোকর গলে সিস্টেমের ভেতরের অসাধু মনোভাবে লালন হওয়া কিছু কর্তা ব্যাক্তিদের অর্থলিপ্সু মনোভাব আর প্রভাবশালীদের পদলেহন মনোবৃত্তির জন্য অপরাধের মূল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না। বিনাশ তো বহু দূরের কথা। সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র নেতারা তাদের কর্মীদের ব্যাপারে বড্ড সচেতন। এই যুবকটি তাদের কেউ একজন কিনা কে জানে। ধরে নিয়ে গেলে মোবাইলের পর মোবাইল আসবে। অনেক ভেজাল। আবার ছাড়তেও মন চাইছে না। কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া যায়। তবে তাতেও অনেক ভেজাল। নিজের উর্দির ভেতরের সাধারণ মানুষটা আজো মরে নাই।

এসব ভেবে হাবিলদার কষ্ট পেতে থাকে। শেষে বলে,
– আপনাকে ধরে নিয়ে যাবার পরে অনেক ফোন আসবে। তার চেয়ে এখনই ফোন করান কাউকে দিয়ে, আপনাকে ছেড়ে দেই।

জাহিদ অবাক হয়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে.. তখনও অবাক ভাবটা কাটে না ওর। ভাবে পুলিশটা কি মজা করছে ওকে নিয়ে।

হলে নিজের রুমে বসে কালকের প্রোগ্রাম নিয়ে ভাবছেন তিনি। সেই সাতজন অন্ধকারের জীবদের ‘ভাই’। বেকার এই ছেলেদেরকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খাটান, কাজে লাগান। তবে নিজের রাজনৈতিক খোলসের বাহিরে বের হলে একজন মানুষ হিসাবে তিনি তার হৃদয়ে ওদের জন্য মমতাও অনুভব করেন।

এদিকে রায়হান আবার ওনার স্যারের ছেলে। ভার্সিটিতে তার শিক্ষক ছিলেন রায়হানের বাবা।

টেবিলের ওপর চার্জে রাখা মোবাইলের রিং টোনের শব্দে বিরক্ত হন। অনিচ্ছা সত্বেও মোবাইল হাতে নেন। চার্জারের পিন আলাদা করতে করতে ভাবেন,
‘ইচ্ছা অনিচ্ছায়ও নেতাদেরকে অনেক কিছু করতে হয়’।

ডিসপ্লেতে জাহিদের নাম দেখে একটু আগের কুঁচকানো ভ্রু আরো বেঁকে যায়, তবে মনটা আনন্দের এক পল্কা হাওয়ায় জুড়িয়ে দিয়ে যায়। নেতারা এমনই। তাদের বুঝা দায়। তারা যেভাবে দেখান, ভেতরে আসলে তেমন তারা নন।

কল রিসিভ করেন। ওপাশের কথা শুনেন। শেষে বলেন,
– তোরা আর শুধরাইলি না। জিনিস কতটুকু?

হাবিলদার কথা শেষ করে জাহিদের হাতে মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয়। মাছি তাড়াবার ভংগিতে জাহিদকে চলে যেতে বলে।

রিক্সায় ওঠে জাহিদ। রিক্সাওয়ালা এতক্ষণ পরে স্বাভাবিক হয়। বিপদ কেটে গেছে টের পায়। নিম্নশ্রেণীর অনেক প্রাণীর মত এই বিত্তহীনেরাও আগাম অনেক কিছু অনুভব করে। সেটা ঐ প্রানীকূলের মত একই ক্লাশের বলেই কি?

টহল পুলিশের যার হাতে পুরিয়া চারটি সে ওদের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করে,
– ওস্তাদ, এগুলা কি করবো?

হাবিলদার জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি আর করবি, যার মাল তাকে দিয়ে দিবি।

বলেই আর দাঁড়ায় না সে। সামনের দিকে হাঁটা দেয়। পুলিশ কন্সটেবলটি পুরিয়াগুলি জাহিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে কঠিন চোখে তাকায়। যেন নিরবে বলতে চায়,
‘নেক্সট টাইম’।

জাহিদ বাংলা পাঁচ এর মত মুখ করে মালগুলি হাতের মুঠোতেই রেখে দেয়। রিক্সা ক্যাম্পাসের দিকে আগায়। জাহিদের একটাই ভাবনা ঠিক এই মুহুর্তে,
‘অনেক দেরী হয়ে গেল, রায়হান এতক্ষণে চেইতে ফায়ার হয়ে আছে। তবে আজ যে মাল সে এনেছে, ঘ্রান শুকলেই রায়হানের সব রাগ পড়ে যাবে।’

জীবনের সময়গুলো এই সাতজনের জন্য এখন কেবলি একটু ভালো গাঁজার সন্ধানে ঘুরে বেড়ানতেই সার্থকতা খুঁজে বেড়ায়। অথচ অন্যরকম ও হতে পারত!

পড়ন্ত বেলায় রিক্সায় বসে নিজের অদৃশ্য ছায়ার পানে তাকিয়ে থেকে এক আঁধারের জীব আরো অন্ধকারের অপেক্ষায় থাকে। রিক্সাটি এমএস হলকে ছাড়িয়ে দু’ পাশের গাছগুলির মাঝ দিয়ে বয়ে চলা কালো পিচের বুকের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়।

রায়হান ক্রমশ: উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। আহসান ওর নাকের ওপরটা লালচে এবং ঘামে ভেজা দেখতে পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে না। ও জানে কি করতে হবে। গাঁজায় যদিও ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ নেই, কিন্তু অনুভূতির গভীরে লুকানো মনের প্রতিদিনের সময়ের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা, এই সিম্পটমের থেকেও ভয়ানক। নিশ্চুপ থাকে আহসান। এই সময়ে নিরবতাই ভালো ফল এনে দেয়।

রায়হান বাবা-মা আর ভাইয়ের সাথে এই পাশেই থাকে। ওর বাবা জঙ্গলের সাথের এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাবার কথা মনে হতেই চোয়ালের দু’পাশ শক্ত হতে থাকে ওর।
জেদ?
জনকের প্রতি অভিমান?

অতিরিক্ত ভালোমানুষ বাবার নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখে নিজের ভিতরের চাওয়াগুলোর পূরণ না হওয়াতে তৈরী হওয়া ভালোবাসায় মাখামাখি নিরন্ত অভিমানে কুহকী প্রহর গোনা?

সে, আহসান আর জাহিদ, ভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে এখান থেকেই স্নাতোকোত্তর করেছে আজ দু’ বছর হলো!
– ওহ মাই গড!
অস্ফুটে বলেই উঠে দাঁড়ায় রায়হান।
– দুই বছর?

আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে। আহসান অবাক হয় না। হয়.. এরকম প্রায়ই ওদেরকে শুনতে হয়। ওরা বুঝে। তবে বাবা- ছেলের মাঝে কখনো দূরত্ব এনে দেয়, এমন কিছুই এরা করে না, কেবল নিশ্চুপ থাকে। আর তাতেই অনেক কিছু প্রকাশ পায়।

এভাবেই রায়হান কিংবা প্রতিদিন এক একজন রায়হানের জায়গাটা দখল করে। অভিযোগ বুকে নিয়ে পাল্টা অভিযোগগুলিকে ধরাসায়ী করতে এরা বড্ড সিদ্ধহস্ত।

– শালারপুত কি করে এতক্ষণ? হারামি মোবাইলটাও অফ করে রাখছে কেন? এবার আক্ষরিক অর্থেই সে ফেটে পড়ে।

– মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছে মনে হয়।
আহসান উত্তর দেয়। ভ্রু- কুঁচকে রায়হান যখন কথা বলে ওকে বড্ড বাবু বাবু দেখা যায়। আহসান একটা বাবুর প্রতি অপার মায়ায় জড়িয়ে তাকিয়ে থাকে। এই মায়া একদিনে হয়নি। ওরা এই সাতজন নেংটোকালের বন্ধু। সময়ের ঘ্রাণে জড়ানো অনুভূতিতে মেখে মেখে ওরা বন্ধু হয়েছে। একদিন বা কিছু দিনে নয়।

উত্তেজিত রায়হান বলতে থাকে,
– বালের মোবাইল ইউজ কর তোমরা, নাহ? তোমার ব্যালেন্স নিল থাকে সবসময়, আর ঐ শালারপো’র চার্জ থাকে না।’

– ওর না, ওর মোবাইলের।
গম্ভীরভাবে আহসান শুধরে দেয়।

ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে? রায়হানের এমন মনে হয়। আবার বাবার কথায় ফিরে যায় সে। একার সাথে একার কথা বলার এক অদ্ভুত রোগ এই সাতজনের। ব্রেইনের কোষে কোষে অনুভূতিদের নিজেদের ভেতরে যে অনুভব অনুভূত হয়, সেখানে অনেক আলোচনায় অংশ নেয় এরা যার যার মত।

বাবা চাননি এখানে তার পরিচয় ব্যবহার হোক.. তার ছায়ায় ছেলে বড় হোক। বাবা কি চেয়েছিলেন ছেলে নিজের মত করে তার থেকেও বড় হোক? সবসময় বড়-ই বা হতে হবে কেন?

বাবা কোনো সুপারিশ করলেন না কিংবা লাখ দশেক টাকাও দিলেন না। বছরগুলি পিতা-পুত্রের নীরব স্নায়ু যুদ্ধে কেটে গেলো। প্রশাসনিক অফিসারের চাকরিটা হতে পারত.. অতি সহজে। হলোই না। বাবা রাজনীতি পছন্দ করতেন না।

রায়হান সেন্ট্রাল এর ভাইয়ের অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেল। বাবা ধুমপান অপছন্দ করেন। সে নিয়মিত কল্কিসেবী হয়ে পড়ল। বাবার সুনাম নষ্ট করতে করতে রায়হানের আরেক পৃথিবীর বাসিন্দা হবার প্রতিটি পদক্ষেপ কি ওকে কাছের মানুষদের থেকে এক পা করে করে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল না?

সে কি একবারও টের পেল না?
বাবা ও কি বুঝেছিলেন? তিনিও কেন টের পেলেন না?

ওর সাথের অন্য বন্ধুরা তরতর করে উঠে যাচ্ছিল, ওর মনের সেই কষ্টটুকু কেন বাবা অনুভব করতে চাইলেন না?

নাকি বাবা অনুভব করেছিলেন! কিন্তু সে নিজেই বাবার প্রকাশকে বুঝতে পারেনি? বাবা নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু ছেলের জন্য নিজেকে পাল্টান নাই।

– এজন্য তো তোমার বাবার জন্য গর্ব করা উচিত!
ব্রেইনের এক অংশের প্রশ্নের উত্তরে রায়হান আনমনে ‘হুম’ বলে। চেতন মনের অবচেতনে অচেতন খেলায় জড়িয়ে যায় রায়হান। সে আলো হতে পারে নাই। তাই অন্ধকার হয়েছে। ও কিছু হতে পারে নাই দেখে পারুও ছেড়ে চলে গেছে!

– পারু আবার এই মুহুর্তে এলো কোত্থেকে?

বিভ্রান্ত রায়হান প্রচন্ড বিরক্তিতে আহসানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আমার মোবাইল দিয়ে কল করে দেখ বাইনচোত মোবাইল খুলছে কি না? খুললে জিগা আর কতক্ষন লাগবে আসতে?

দুইটি অণুগল্প

অতৃপ্তিই জীবন
___________

আমি যেভাবে তাকে কাছে পেতে চাই, সেভাবে সে আসতে চায় না। আমাকে নিয়ে তার নিজের ইচ্ছেপূরণেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা আমি।

দুইয়ের ভিতর চলতে থাকা টানাপড়েণের মাঝে বয়ে যাওয়া সময়ের নাম-ই কী জীবন?
____________________

নিষিদ্ধ নগরী

এ গল্প এক হারানো শহরের। এখানে সম্পর্কগুলি অনবরত হারিয়ে যায়। প্রিয়জনেরা অসময়ে মুখ লুকায় আঁধারে।

এ এক রক্তাক্ত জনপদ। এখানের মানুষগুলো, বড্ড স্বাধীনচেতা। আপাত শান্ত, মনের ভেতর অহর্নিশ ফুঁসে চলে একটা আনাম বিসুভিয়াস। তারপরও শান্ত এরা।

এখানের বাতাসে আনন্দ-আর দু:খ, হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলে। তাই জীবন বড্ড নিরুদ্বেগ এখানে।

এই শহরে হ্যালুসিনেটেড যুবকদের ছড়াছড়ি। এখানে নীল তীব্র বিষ সহজলভ্য। এখানে শহরের বুক জুড়ে বয়ে বেড়ায় বিভ্রান্তির বিষবলয়। এখানে মৃত্যুবাণ ছুড়ে দেয়া নীলচে ধাতব যন্ত্রের ছড়াছড়ি।

তবুও এটা আমাদের শহর। এখানে নিশ্চুপ বাবাদের মৌণতার হাহাকারে ভারী বাতাস- শেষ বিকেলের আবিরে মিশে মিশে, বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাই এখানের বিকেলগুলি, অন্য শহরের থেকে অধিক রক্তিম!

দিগন্তব্যাপী সবুজ বলয় এভাবেই দৃশ্যমান এই শহরে। এখানে প্রতিটি মুহুর্তই এমন ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ- উত্তাল! অণুক্ষণ এমন-ই উন্মাতাল। এই শহরের বাসিন্দাদের হৃদয়েও, এর থেকে প্রবল ঝড় বয়ে চলে সারা বেলা!

এক হারানো শহরে- বিষন্ন বেলায়, একাকি একজন মানুষ-হৃদয়ে বয়ে চলা অনুভবের ভাংগাচুরায় ক্ষয়ে যেতে থাকে। তবুও কতটা নির্বিকার! সময়ের গলন্ত মোম জ্বলন্ত হৃদয়ে জ্বালা ধরিয়ে চলে..তবুও চিৎকার করা যাবে না এখানে! এ এক নিষিদ্ধ নগরী।

এক নিষিদ্ধ মানব, কোনো এক হারানো শহরের শেষ মানুষ হয়ে অপেক্ষায় থাকে, আরেক সভ্যতার ঊষালগ্নের। কখন সুতীব্র চিৎকারে জন্ম নেবে, আরেক জীবন!
___________________

হারিকেনের আলোয় কয়েকটি নীল খাম

একদিন, বাজারে বিক্রি হওয়া প্রমাণ সাইজের একটি আর্ট পেপার কিনেছিলো শিহাব। আর, নীল খাম কয়েকটা। কণাকে বিশাল এক চিঠি লিখতে বসেছিলো। বিয়ের পরে.. একেবারে প্রথমদিকে। এক মধ্যরাতে। শীতের দীর্ঘ রাত ছিলো।

হারিকেন কুপির রহস্যময় আলোয় নীল খামগুলি, ততোধিক রহস্যের অবগুণ্ঠনে ঢেকে ছিলো বলে মনে হচ্ছিলো শিহাবের। মশারির ভিতর থেকে অস্পষ্ট শিহাব। কালো অক্ষরের গুটি গুটি অনুভূতি দিয়ে লাইনের পর লাইন সাজিয়ে চলা, দেড় দশক আগের সেই শিহাবের অনুভব কেমন ছিলো?

– কি কথা ছিলো তখন তোমার মনে?
– এতো কথা কোথায় জমিয়ে রেখেছিলে যে, আস্ত একটা আর্ট পেপারই লিখে পূর্ণ করতে হয়েছিলো সেই আস্ত এক শীতের রাতে?
– কি কথা ছিলো তাহার সনে?

রুমের অন্য দুই বাসিন্দা- একজন প্রভাষক, অন্যজন সিনিয়র শিক্ষক, পালাক্রমে দু’জনই জেগে উঠে একই প্রশ্ন করেছিলেন দুই ভিন্ন সময়ে,
– স্যার! এখনো লিখছেন!

তাদের দিকে না তাকিয়ে ভাবনায় বুঁদ শিহাব উত্তর দিয়েছিলো,
– হ্যা। লেখছি।

হয়তো রহস্যময় হারিকেনের আলোয় তাদের ঘুম ভেঙ্গে যাছিলো।

ঐতিহাসিক সেই চিঠিটি, কানে কম শোনা দপ্তরীর লাল মোরগটির প্রথম চিৎকারে, প্রহর শুরুর সাথে সাথেই লেখা শেষ হয়েছিলো।

প্রিয় সেজ অনুজ সেই গুরুদায়িত্ব পালন করেছিলো 😀 নিজেই কণার শহরের বাসায়, কনার কাছে ‘হ্যান্ডওভার’ করেছিলো চিঠিটা।

– এখন সারাক্ষণই কণা তোমার কাছে। কিন্তু বলার মতো কী কথা আছে এখন তোমার?

নিশ্চুপ শিহাব একা একা ভাবে,
– কথাগুলো কোথায় হারালো?

তাই তো!
কথাগুলো হারালো কোথায়?

.
#হারিকেনের_আলোয়_কয়েকটি_নীল_খাম_মামুনের_অণুগল্প

মামুনের অণুগল্প: ছায়াসঙ্গিনী

নীলা কলেজে যেত একা। একটা ছেলে খুব বিরক্ত করতে শুরু করল। তার অদ্ভুত সব কাজে মেয়েটা সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকতো। পথে ঘাটে, রেস্তোরাঁয়, সাইবার ক্যাফেতে, কলেজে সর্বত্র ছেলেটা নীলাকে বিরক্ত করতো। এমনসব কাণ্ড যে অন্যরা টের পেত না। সে নীরব অনুভূতি নীলার মধ্যে পার করে দিয়ে ওর ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতো। নিজের মত করে সে হেঁটে যেতো নীলার ছায়া হয়ে।

ছেলেটার কিছু কিছু আচরণে নীলা এত বেশি অপমান বোধ করতো যে সে একদিন ছেলেটাকে খুব অপমান করে। ঐ ঘটনার পর থেকে ছেলেটাকে আর দেখা যায় না। নীলা আগের মত প্রতিদিনের জীবনযাপন করে, তবু সময়ে অসময়ে কেন জানি ছেলেটাকে খুব মিস করে। কলেজে আসা যাওয়ার পথটা মনে হয় জনহীন, শূণ্য। সে হাঁটে কিন্তু বার বার পিছনে তাকায়, তবে আগের মত ওর অনুভূতিতে কেউ বিরক্ত করতে আসে না। পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে কিংবা ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় সবকিছু আগের মতই চলে নীলার। তবে সব কিছু ছিন্নভিন্ন ভাবে…
নিঃসঙ্গ নীলা হৃদয়ের খুব গোপন কোন এক তারে ছেলেটার জন্য প্রচণ্ড ভালোবাসা অনুভব করে। কিন্তু ছেলেটাকে সে আর দেখে না।

একদিন ওকে এদিকে ওদিকে তাকাতে দেখে এক অপরিচিত ছেলে এসে খবর দেয়, ওর কথার তীর্যক বাণে সেদিন রাতেই ছেলেটা একটা নাইনলের রশি দিয়ে নিজের বেডরুমে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। ছেলেটার আর নীলার বাসা অন্য দুই ভিন্ন মহল্লাতে হবার জন্য সে জানতে পারেনি। নীলা ছেলেটার কথা শুনে প্রচণ্ড কষ্ট পায়।

এরপর দিন থেকে নীলা চলার পথে আবারো ছেলেটাকে দেখতে পায়। এবার ছেলেটা সরাসরি ওর সাথে কথা বলে। নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে। হাজারো মানুষের ভীড়ে সে একাকী একটা মেয়ে অদৃশ্য কোনো একজনের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়… সবাই মেয়েটাকে পাগল ভাবে… মেয়েটা কেয়ার করে না। সে তার হৃদয়ে এক প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে অসহ্য গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে ছেলেটার হাত ধরে এগিয়ে চলে। একজন ছায়াসঙ্গিনী হয়ে দুঃখী মেয়েটা ঐ মৃত ছেলেটাকে বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকে।

আমার_আমি_মামুনের_অণুগল্প

যখন লেখালেখির জগতে পা বাড়িয়েছিলাম, টানা লিখে যেতে পারতাম, নিচের গল্পটি সেই সময়ের। ছবির মানুষটিও আমি তখনকার।
_________________
‘ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি’ *

– গানের কলিগুলো ইথারে ভেসে আসা, পাতা ঝরার দিনের মৃদু নিরবতার বুকে জমে থাকা- শুকনো পাতাদের মর্মর ধ্বনির মতো ঘুমপাড়ানিয়া আবেশ যেন! শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন পালকের প্রচন্ড মধ্যাকর্ষণ টানকে উপেক্ষা করে,অসহ্য অলস গতিতে ভেসে বেড়ানোর অনুভূতিতে, একটু বেশীই প্রগলভ যেন আজ আমি!

নিজের ছায়াজীবনে এক রিক্ত প্রচ্ছায়া।
দিগন্তের ওপারে এক প্রচন্ড হাহাকার! নেই হয়ে যাবার অনুভূতি কখন শেষ হয়? আসলেই হয় কী? কিছু একটা আমাকে ঘিরে ধরে। বোধের আকাশ জুড়ে নি:সঙ্গ এক শংখচিল! নিরবতার শ্যেণ দৃষ্টির ধারালো ফলা, আমার অনুভূতির মগজে চরম কর্কশ-কেটে ছিড়ে ফালাফালা-পাপবিদ্ধ অনুভবের ইমেজ এনে দেয়।

মহাসাগরের গভীরতম এলাকার তীব্র সাইনাস পেইন কিংবা আগ্নেয়গিরির দীর্ঘ জ্বালামুখ দিয়ে পতন মুহুর্তের নেই হবার অনুভবে স্থবির হওয়া অথবা লাভায় গলে গলে ক্ষয়ে যাওয়া-এর থেকেও তীব্র কষ্টকর এক অনুভব ইদানিং আমাকে দগ্ধ করছে।

জীবনকণার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝিনুকের ভেতর মুক্তো থাকা সত্তেও কেবল অভিমান আর অবহেলায় সব উলুবনে ছড়িয়ে গেছে।

আমার কি সম্পর্কগুলোর আরো একটু বেশী যত্ন নেয়া প্রয়োজন ছিল? সময়ের পালক হয়ে থাকা পুরনো সম্পর্কেরা কি আবার আগের মতো কাছে থাকবে?নিঃশ্বাস দূরত্বে বিশ্বাসের অনুরণন বেজে ওঠা দূরত্বে। কাছে-দূরের অনুভূতির একটুও কি এখনো রয়ে গেছে, পলাতক সময়ের বুকে?

আকাশ যেখানে সবুজ ঘাসের ওড়না হতে দিগন্তে নেমেছে, সেখানে এক রংধনুর নিজের সাত রংয়ের আণবিক বিক্ষেপণ- আমার বোধের গভীর থেকে দুর্বোধ্য কিছু একটা বের করে আনে।

একা
একজন আমি।
অনুভূতির কারিগর। সূক্ষ্ণ ব্যবচ্ছেদকারী। ইচ্ছেমত ভাঙ্গি-গড়ি, বোধের সীমানা পেরিয়ে দুর্বোধ্য জগতে হারাতে চাই।

একজন অনুভূতির কারিগর। চেতনার নীলাকাশে নিঃসঙ্গ শংখচিলের বেদনাপ্লুত অনুভবে বিদীর্ণ হই। নিজের ভিতরে পারু হারানোর বেদনার তীব্রতায় অবাক হই, ক্ষয়ে যাই,গলে যাই। আবার জমাট বরফ হই পুনরায় গলে যাওয়ার জন্য।

নিঃশেষ হতে চাই।
কিন্তু পারি কি?

বিষন্ন বাতাসে বেলা শেষের অবেলায়, এক ছায়ামানব তার প্রচ্ছায়া থেকে বের হতে চায়। তার উদাত্ত আওয়াজ বেদনার সুদর্শণ পোকাদের সাথে নিয়ে ভেসে বেড়ায়-

‘ আমার চলার পথে কিংবা
বাড়ি ফেরার সময়, কয়েদী বহনকারী
নীল গাড়িটি আমি প্রায়ই দেখি। শিকের ওপারে
একচিলতে আকাশ ছুঁতে চাওয়া
অসহায় কতগুলো হাত।
নিঃস্ব কাব্যকলার এক বোবা ভাস্কর্য!

ইদানিং আরো এক জোড়া হাত
আয়তাকার শিকের উপর অসহায়,
নির্ণিমেষ চেয়ে চেয়ে
আকাশ ছুঁতে না পারার অক্ষমতায় স্থবির!
অতি পরিচিত সেই হাত।’

সেই হাত আমার। এক ছায়ামানবের।

বড় রাস্তাটি কিছুদূর পশ্চিমে গিয়ে ঠিক যেখানটায় ডানে মোড় নিয়েছে, আমি ওখানেই থাকি। একজন নবীন লেখক। নিজের মত করে নিজের অনুভূতির প্রকাশক। কিন্তু সেই সাথে আশেপাশের মানুষের অনুভূতি নিয়েও তাড়িত হই। একজন লেখকের হৃদয়ে এক অনুপম চিত্র অংকনের তাড়না কেন জানি আমার থেকেই যায়। বোধের মর্মে নাড়া দেয় এমন অনুভূতিতে প্রলুব্ধ হতে কে না চায়?

দুটো লোহার পাতের আয়তাকার ইন্টারফেসে দৃশ্যমান পাথরজীবন আঁধারেও প্রকট এক দানব যেন!

লেখালেখির জগতের একজন শিক্ষানবীশ আমি একজন লেখককে নিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দেই। কেউ একজনকে দেখতে পাই। একজন শান্ত মানুষ কি মায়া নিয়েই না অশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি সেই ধারালো পথ বেয়ে গভীর শান্ত জলের পরমশীতল অনুভূতিতে শান্ত হতে থাকি… একসময় কোমল হই… চেতনার আরো গভীরে ডুবে যাই। একটা অন্ধকার টানেলের ও মাথার দৃশ্যমান আলো , একসময় আমাকে নিজের সেলে ফিরিয়ে আনে।

একজন লেখককে কতগুলো ভূমিকায় নিজেকে দেখতে হয়? কতগুলো হৃদয় ব্যবচ্ছেদ করে অনুভূতির ‘ফাইন টিউনিং’ করতে হয়?

এই সময়ে একজন লেখক ডিজিটাল জকির ভূমিকা পালন করলে ভালো হবে। পাঠকের ভিতরে অনুভূতি ঠিক কতটুকু ওঠা নামা করবে, এই স্কেল অনুভবকারী দক্ষ এক অনুভূতির কারিগরের মত আচরণ করবেন একজন লেখক।
পাঠক হৃদয় নিয়ে লেখক ভাববেন, পাঠককে যে ভাবতে হবে- প্রথমে এটা শিখাবেন। ক্রমান্বয়ে ভাবের গভীর থেকে গভীরতর অংশে যাবার রাস্তাটিতে কিভাবে পথ চলতে হবে, তাও শিখাবেন। এভাবে উভয়পক্ষের মনোজগতে এক যোগাযোগ রয়ে যাবে। লেখকের অভিজ্ঞতালব্ধ ম্যাসেজগুলো পাঠকের মনোজগতে আলোড়ন তুলবে, তাকে ভাবাবে, ভাবনাগুলোকে ‘ইমপ্লিমেন্ট’ করাতে প্ররোচিত করবে। তবেই না ভালো কিছু একটা হবে। এদিক দিয়ে একজন লেখক, একজন ম্যাসেঞ্জারও বটে।

বাইরের পৃথিবী আঁধারের ঘোমটায় যেন আরো বেশী অন্ধকার দেখায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়াই আমি। ভাবনাদেরকে কয়েকমুহুর্তের জন্য হলেও নির্বাসনে পাঠাতে ইচ্ছে করছে।

“নির্বাসনে! চলে গেছে সব প্রজাপতি” …

ভাবনারা কি তাহলে সব প্রজাপতি! নিজের মনে হাসি। নিজেকে ব্যংগ করলাম কি? একজন লেখক কি নিজেকে কখনো ব্যংগ করেন?

চিন্তাজগতে একজন লেখককে বর্ণীল করায় ঠিক যেখানে রেখে এসেছিলাম, ওখান থেকেই একজন আল মামুন খান একাধারে একজন লেখক এবং একজন পাঠকের দুই ভিন্ন সত্তার অনুভূতিতে প্রবল হয়। একই হৃদয়ে দুই ভিন্ন হৃদয়। বোধের উপরে বোধ…ওপারে বোধ। এক দুর্বোধ্য জগত। আরাধ্য জগত?

একজন লেখকের জগত ঠিক কতোটা বড়? একজন লেখক কত বড়?
ঠিক কতোটা বড় হলে একজন লেখকের মৃত্যু হয়? এক রক্তাক্ত জনপদে নির্বাক পড়ে থাকা এক লেখক নিজের শেষ অণুগল্পটি লিখে যেতে না পারার বেদনায় কি নীল হন?

চিন্তা জগতের সরল রাস্তাটি ধরে একজন পাঠক আল মামুন খান একাই যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, এজন্য লেখক আল মামুন খান হাত ধরে রাস্তা পার করানোর নিমিত্ত হন। এইটুই দরকার পাঠকের। তবেই সে পথের শেষে যেতে পারবে। লেখকের আলোয় পথ চলে পাঠক এক পরিণত স্বত্বায় রুপ নেবে। পাঠক লেখকে পরিণত হবে। তিনি নতুন পাঠক কে হাত ধরে রাস্তা পার করাবেন… সে নতুন অন্যজনকে… … এভাবেই চেতনার পথগুলো সমৃদ্ধ হবে।

এমন যদি না হয়, তবে চেতনা উন্মেষের এই প্ল্যাটফর্মটি পাঠকমনে নিছকই এক দিবস উদযাপনের মত দায়সারা মনোভাবের জন্ম দিবে। মনের খোরাকই যেখানে নেই, সেই প্ল্যাটফর্মের লেখকেরা কালক্রমে সুবর্ণ অতীত হবেন…হারিয়ে যাবেন! ওখানের বাতাস- বিলুপ্তপ্রায় লেখকদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী, গতিতে মন্থর, স্থবির হয়ে থাকবে!

এজন্য পাঠকের মনকে অনুভব করাতে হবে, তার মনের গোপন দরোজাগুলো এখন ধীরে ধীরে খুলে দেবার সময় এসে গেছে। জনপ্রিয়তার লোভের চেয়ে পাঠক প্রীতিতে লেখক হৃদয় পুর্ণ থাকবে। ভালোবাসা শিখাবেন- পাঠক হৃদয়কে এলোমেলো করবেন, কিভাবে ভালোবাসতে হয়-অনুভব করাবেন নিজের লেখনির সাবলিলতায়-পরম দক্ষতায়।

লেখকের মনোজগতের সিঁড়ি পাঠকের মূল লক্ষ্য। লেখক ওপারে শেষ ধাপে পাঠকের পথের শেষে সফল প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকবেন। একজন দক্ষ গাইডও একজন লেখক। নিজের মনোজগতে বিচরণকারী পাঠকের নিজেকে, সমাজের লক্ষ-কোটি ‘সিংগেল ইউনিট’ পাঠকের অন্যতম হয়ে সঠিক পথ চলতে হবে। এ যাত্রায় আঁধার কোনো প্রতিবন্ধকতারই সৃষ্টি করতে পারবে না। আঁধারে পথ চলার মত আলো পাঠক ইতোমধ্যেই অর্জন করেছেন।

আলো বিতরণকারী একজন লেখককে আলো হতে হয়। কঠিন সাধনায় নামতে হয়।

আলো হবার সাধনায় নেমে একজন আমি, এই মুহুর্তে নিজের সেলের একচিলতে ইন্টারফেসে আঁধারের পিছু ধাওয়া এক উল্কার পতন দেখতে থাকি।

নক্ষত্রগুলোর পতন কেমন? অনুভবে এক নক্ষত্রের পতনের নিম্নগতি, উপলব্ধিতে আল মামুন খানকে বিহ্বল করে তোলে।।

#আমার_আমি_মামুনের_অণুগল্প

* কবিগুরুর গানের লাইন

সফল প্রেম কি বিয়ে ছাড়া পূর্ণতা লাভ করে না?

সফল প্রেম কি বিয়ে ছাড়া পূর্ণতা লাভ করে না? কি মনে হয় আপনাদের?

তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তার বিয়ে হলো না, আর যার সাথে তার বিবাহিত জীবন তার সাথে ভালোবাসা হলো না। শুধু শারীরিক প্রয়োজনে কাছে আসা, বছর ঘুরে সন্তান আসা এভাবে মেয়েটির মাথার চুল কখন যে শুভ্র হয়ে যায় সে নিজেও টের পায় না। এদিকে তার বিয়ের আগের প্রিয় মানুষটি বাবা মায়ের ইচ্ছেতে তাদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এবং সে ও একইভাবে জীবনের একমুখী ট্রেইলে সামনে আগাতে থাকে পিছনে যেতে যেতে। তবে ভার্চুয়ালি এই দু’জনের হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের কোনো এক যোগসূত্র থেকেই যায়।

এক রাতে মেয়েটির ঘরের মানুষটির পাশে বসেই মেয়েটি ওর প্রিয় মানুষটির সাথে ইনবক্সে কথা বলছিলো, এর ভিতরে মেয়েটির ঘরের মানুষটি মেয়েটিকে নিজের বিছানায় নিয়ে যায়। ছেলেটি সব কিছু বুঝে নিজের ভিতরে এক বিচিত্র অনুভবে দগ্ধ হয়। কিন্তু করার কি কিছুই আছে? হয়তো ওরা ঘুমাচ্ছিলোই। তবু ছেলেটা, বয়স যাকে লোকটাতে রুপান্তরিত করতে অক্ষম হয়েছে, সে নিঃশব্দে কিছু ছবি আর শব্দ কল্পনা করতে থাকল, সেই কল্পনা থেকে পাওয়া কষ্ট গুলি সইতে লাগল। রাত বইতে লাগল। ঘুম আর আসে না। মাঝরাতে সে ইনবক্সে এলোমেলো লিখতে থাকে। সে কী এভাবে দূরের কোন শহরের এক বিছানায় নিজের মানুষের শরীর থেকে অন্য পুরুষের হাত সরাতে চায়?

অন্যদিকে মেয়েটা তার বিছানায় নির্ঘুম অনুভব করতে থাকে পুরো গল্পটা। কখনো চুলের ওপর নিয়মিত ছন্দে পড়তে থাকা ঘুমন্ত মানুষটার নিঃশ্বাস, কখনো কল্পনার মানুষটার শরীরের প্রতি কোষের অসহ্য কষ্টগুলি, কখনো নিজের দ্বৈত স্বত্ত্বা – আরো কিছু সত্য যা মেয়েটা একার ভিতর লুকিয়ে রাখে, কাউকে বলে না – সব কিছুই যেন বিমূর্ত শিল্পের মত চোখে ভাসছিল। ঘুম নেই, চোখের কোণে..সে মেসেজ আসার শব্দ পায়। নিরবে জেনে রাখে। উত্তর দেয় না। বরং নিজেকে হাজারো প্রশ্ন করতে থাকে…

এভাবেই হতে থাকে নিরব সংলাপে লেখা এক দীর্ঘ উপন্যাস। রাতের পর দিন, দিনের পর রাত গেঁথে গেঁথে বোনা। হৃদয়ের গহীন গভীরে ভালোবাসার জগত। যে সম্পর্ককে পৃথিবীর কিছুই নাগাল পায় না। অনেকগুলো বছর ধরে ওরা দুজনে সেই সম্পর্কটাকে সযত্নে রেখে দিয়েছে। অনেক কষ্টের, অনেক সুখের সম্পর্ক। অনেক দামী। পার্থিব কোন আকাংখা এই মানুষ দুটিকে টলায় না।

ওরা পৃথিবীর কারো কাছে নিজেদের সম্পর্কের জন্য কিছু দাবী করে না। মেয়েটা ওর স্বামী সংসারকে সুন্দরভাবে দেখে, ছেলেটিও পরিবারের সব কিছু ঠিকভাবে করে। কিন্তু হৃদয়ের ভালোবাসাটা শুধুমাত্র মেয়েটির জন্য। এরা দূরে থেকে একে অন্যের জন্য সমগ্র বিশ্বের সকল ভালোবাসাকে ধারণ করে এক অনুপমেয় গ্রন্থ’ লিখে চলে। তার নাম দেয় ‘প্রেম’।

.
________________________________________
ছবিঃ গল্পকারের ক্রেডিটঃ জ্ঞানীবাবু Labiba Mamun Khan.

চলে গেলে কেনো একা ফেলে

জীবনে তিনজন মানুষকে মাফ করতে নেই, যে ভালো না বেসে অভিনয় করে.. যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বেইমানি করে.. যে বিশ্বাসের অমর্যাদা করে- উইকেন্ডে বাসায় ফেরার পথে চলন্ত বাসের ছাদে বসে কোনো কারণ ছাড়াই কথাগুলো হঠাত মনে পড়ে ফরহাদের। কোথায় যেন পড়েছিল। কোথায়.. সেটা মনে পড়ছে না এখন।

কথাগুলো মনের ভিতর ঘুরপাক খায়.. ফাঁকা রাস্তা.. দ্রুতগতির বাস সামনে আগায়। প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে বাসের ছাদে চোখ বুজা অনুভবে ফরহাদ পিছনে যেতে থাকে। সময়ের সমান্তরালে।

হঠাৎ বৃষ্টি নামে। অসহায় ফরহাদ বাসের ছাদে বসে সময়ের স্মৃতিতে ধূসর অন্য এক ভিন্ন ছাদে পৌঁছে যায়। ঝাপসা পটভূমে.. এক সাদা-কালো দৃশ্যপটে বৃষ্টিভেজা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ফরহাদ! অসহায় সেদিনও ছিল সে। রাস্তা জুড়ে নিঃসঙ্গতা.. দূর দূর পর্যন্ত কোথায়ও কেউ নেই। লেপ্টানো বসনে এক যুবতী দেহের বাঁকে বাঁকে প্রলোভনের ডালা সাজিয়ে ফিরে চলেছে!

পারুর সাথে কি ওটা-ই শেষ দেখা ছিল?

বাইরে উত্তাল প্রকৃতি। নিজের ভেতরেও কোথায় যেন দামামা বাজছে। কোথায়ও কিছু পুড়ছে। গন্ধ পায় ফরহাদ। মনটা জ্বলে ওঠে। সামনে বৃষ্টির তোড়ে দৃষ্টি চলে না। চোখ বুজে দেখার চেষ্টা করে।
দেখে কী?
অনুভব করে। অনেক কিছুই।

‘পারু একা-ই আমার সাথে ঐ তিনজনের কাজ করেছে। তারপরও…’
– তারপরও কি? ওকে ক্ষমা করতে চাইছ না তো?
‘তুমি ঠিক বুঝছ না আসলে। একবার কাউকে ভালোবাসলে, সেখানে ক্ষমা শব্দটা আসারই সুযোগ নেই। যাকে ভালোবাসবে, তার অতীত-ভবিষ্যতের সব কিছু ক্ষমা করেই না ভালোবাসার পথে পা বাড়াবে।’
– একটু আগে তবে মনে মনে কি ভাবলে?
‘উদ্ধৃতি বা কারো বাণী-ই কী সবকিছু? এক একজনের জীবন এক একরকম।’
– পারু কি কখনো জানবে তুমি এভাবে ভাবো?
‘নাহ! সে জানবে না.. অনুভব করবে.. কোনো একদিন!’

রাস্তার দুইপাশের গাছগুলি যেন ওদের ডানা নুইয়ে ফরহাদকে ছুঁয়ে দিতে চায়! দুরন্ত মাতাল হাওয়া পাতায় জমা বৃষ্টিকণা দিয়ে আলতো পরশে ওকে সিক্ত করতে চায়.. গাছের পাতা যেন পারুর বৃষ্টিভেজা চুল! ওর একটুকু পরশ ফরহাদের কোথায় যেন কাঁপন ধরিয়ে যায়।।

মামুনের অণুগল্প : হারানো সুর

নিজের জনকের চল্লিশা শেষে বউ বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে ফিরে চলছে শিহাব। টানা এতগুলি দিন আম্মা এবং ছোট ভাইয়ের সাথে থেকে যেতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও, জীবন জীবিকা অনেক কষ্টকর মুহুর্তকে উপভোগ করতে বাধ্য করে।

প্রচণ্ড বরষায় ভিজে ভিজে সাইডব্যাগটিকে সামলে যখন বাসটির নির্ধারিত আসনে বসে শিহাব, বামপাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো পাশের সহযাত্রী বৃষ্টিবিলাসী মনে গভীর তন্ময়তায় মৌণ-বিভোর! পাশে কারো উপস্থিতিতে ঘোর থেকে জেগে ওঠে নারী.. হাজার বছরের রহস্যময়ী কালের সোপান বেয়ে ধেয়ে আসা দৃষ্টির ছুঁয়ে যাওয়ায় নিশ্চুপ শিহাব.. থমকে যাওয়া সময়ের দ্বিতীয় যাত্রী হয়ে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে অধর কোণের সেই তিলটির দিকে!

এ-টু সিটে বসে সামনের উইন্ডস্ক্রিনের দিয়ে মেঘবালিকাদের অবিরাম কান্না দেখে দেখে নিজের মনে হাসে শিহাব.. হ্যা, সে! সে-ই তো.. হারানো সুর! এতগুলো বছর পরে.. এভাবে? কোনো একসময়ে শিহাবের হৃদয় হরণ করেছিলো এই মেয়েটি। আজ সে যদিও মেয়ে নয়। এখন সে নারী! পুর্ণাংগ রমনী। কিন্তু অন্য কারো…।

মুহুর্তে সময়ের ধাপের পশ্চাদগতিতে অনেক আগে ফিরে যাওয়া.. স্মৃতিদের কোলাহল আর আন্দোলনে থমকে থাকা কিছু বিশেষ সময়.. সব নিমিষে ভাবনা-চিন্তার এপার ওপার করে দিয়ে ফ্রিজ হয়ে যায়।

বাবার পছন্দ ছিলো না এই মেয়েটি। তারপরও বাবা শিহাবের জন্য রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু কেনো জানি সম্পর্কটা হলোই না। জেদী বাবা এক সপ্তাহের ভিতর শিহাবের জন্য নিজের পছন্দের মেয়ে খুঁজে এনেছিলেন।
দেড় দশক আগে!

সময়! কত দ্রুত চলে যায়।
স্মৃতি রেখে যায়..
বাবাও দ্রুত চলে গেলেন।
রেখে গেছেন পছন্দের মেয়েটিকে…

‘তোমার কি পছন্দের নয়?’
এমন প্রশ্নে চমকে ওঠে শিহাব। নিজের দিকে তাকায়। উত্তর খুঁজে ফিরে।

হ্যা! আজ যে মেয়েটি শিহাবের বউ, বাবার পছন্দের হলেও, কিভাবে যেন সে শিহাবেরও পছন্দের মেয়েতে পরিণত হয়ে গেছে!

‘তবে এখনো এ-টু সিটে বসে আছো কি মনে করে?’
হ্যা! তাইতো, বাবার অপছন্দের মেয়েটির পাশে কেনো বসে থাকা? বাবা নেই। স্মৃতি আছে। আছে বাবার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। সিগ্রেট ছেড়েছে, টুকটাক নেশা করতো বাদ দিয়েছে, আড্ডা ছাড়া পেটের ভাত হজম হতো না-বাদ দিয়েছে।
আজ দেড় দশক পরে একদার সেই মেয়েটির পাশের সিটে বসে নস্টালজিক কিছু মুহূর্তকে কেন তবে উপভোগ করা।

পাশের রমনীর চোখে চিনতে পারার দৃষ্টি ফুটে উঠতেই তা নিমিষে বিস্ময়ে পরিণত হয় শিহাবের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। লাফ দিয়ে উঠে শিহাব ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলে। বাস থামে। শিহাব সুপারভাইজারের সামনে এ-টু সিটের টিকেটটি ছিড়ে ফেলে বলে,
– আমি নেমে যাচ্ছি। তুমি পথের থেকে কাউকে নিয়ে বসিয়ে দিও না। ঢাকা পর্যন্ত এই সিটটা না হয় খালিই যাক?

প্রচন্ড বৃষ্টির ভিতরে শিহাব মাথা উঁচু করে পিছনে বাস কাউন্টারের দিকে এগিয়ে চলে। ঝাপসা জানালা দিয়ে এক জোড়া বিস্মিত চোখের দৃষ্টি ম্লান হতে হতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়ে! দেখা হয়না শিহাবের।

বাবা চলে গিয়ে বাবার পছন্দ-অপছন্দ বড্ড তীব্রভাবে ‘রিয়্যাক্ট’ করাচ্ছে শিহাবকে! বাবা যদি দেখে যেতে পারতেন!

একজন শিহাব প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে পিচঢালা পথ ধরে যেতে যেতে কিছু যদি এবং কিন্তুর হিসেব মিলায়।
হিসেব মিলে কি?

____________________
#অণুগল্প_২৮২_হারানো_সুর।

মামুনের অণুগল্প : একদিন স্রোতের অনুকূলে

একজন পুরুষ গল্পকার এবং একজন নারী কবি, নিজেদের বৈবাহিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অনুভব করেন, নিজ নিজ বিবাহিত জীবনে তারা অতৃপ্ত! শারিরীক সম্পর্কের দিক থেকেই এই অতৃপ্তি।
অথচ তাদের যার যার জুটি তাদের জন্য সব কিছুই করে চলেছেন।

এরপরও তারা মনোদৈহিক অতৃপ্তি মেটানোর বিকল্প পথ খুঁজেন। কিন্তু পথের শেষে দাঁড়ানো এই দু’জন সামাজিক ও পারিবারিক লোকলজ্জা এবং আনুষঙ্গিক আরো নানা বাঁধার কারণে কাছে আসতে পারেন না।

এক বিষণ্ণ বিকেলে, কবি ভার্চুয়ালি কাছে আসতে চান গল্পকারের। গল্পকার নিজের ভূবনে মগ্ন। তীব্র শারিরীক চাহিদা ছাপিয়ে তার ভিতরে তখন অক্ষরের উল্লাসে মেতে ওঠার সাগরসম আকর্ষণ! তিনি কবিকে উপেক্ষা করে অপেক্ষা করতে বলে নিজে সেকথা বিস্মৃত হন।

গল্পকারের উপেক্ষায় জীবন নদীর অপর পাড়ে বসে থাকা কবি’র ভিতরে যন্ত্রণার উদ্রেক করে। তিনি গল্পকারের কাছে আসার জন্য মনে মনে সেতু তৈরী করে চলেন.. ভালোলাগার নুড়ি পাথর একটা একটা করে কুড়িয়ে জমা করেন।

গল্পকার নিজের পাড়ে বসে ভাবনাবিলাস থেকে হঠাৎ জেগে ওঠেন। চোখ মেলেন। দেখেন, ওপাড়ে অপেক্ষমান বিবশ নারী।

নদীতে তীব্র স্রোত.. তাতে গল্প-কবিতা সব হারিয়ে যায়। ভালোলাগা আর ভালোবাসায় পুড়ে পুড়ে সকল অতৃপ্তি, লোকলজ্জা আর বাঁধা ভেসে যায়। সামনে এসে দাঁড়ায় ‘প্রেম’!

তখনও নদীতে তীব্র স্রোত..
স্রোতের অনুকূলে আদিম আকর্ষণে ভেসে চলেন এক জোড়া মানব-মানবী।।

মামুনের অণুগল্প : খেলা খেলা সারাবেলা

নিজে পিতা হয়ে পিতার অনুভবে আব্বাজানের ভালোবাসাটুকু যে অনুভবে এসেছে, তাকে কি জানাতে পারলাম? তাকে আর জানানোই হলো না। যাদের বাবা এখনও কাছে আছেন, বাবার আরও কাছে যান, তাকে অনুভব করান আপনার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা আপনার অনুভবে এসেছে।

ভিন্ন এক জেলা শহরে চাকরি করি তখন। পরিবারের সদস্যরা থাকে আরেক শহরে। সপ্তাহে উইকেন্ডে বাসায় আসি। বাকি দিনগুলি মধ্যবর্তী এক ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’ এর বাসিন্দা আমি। একদিন অফিসে ব্যস্ত। লাঞ্চের ঠিক আগ মুহুর্তে বউ এর ফোন এলো। রিসিভ করলাম,
– কি ব্যাপার? আজ পৌঁছায়ে ফোন করলে না যে?

প্রতি শনিবার বাসা থেকে সেই ভিন্ন শহরের রুমে পৌঁছে আগে বউকে ফোন দেই। সামনে কোরবানির ঈদ। সেদিন গরুর ট্রাকের কারণে সৃষ্ট জ্যাম এর হাত থেকে রক্ষা পেতে, আমার যাতায়াতের নিয়মিত রুট চান্দোরা না গিয়ে বাইপাইল থেকে টার্ণ নিয়ে নরসিংহপুর দিয়ে কাশিমপুর হয়ে কোনাবাড়ি এসেছি। সাধারণত প্রতিবার সকাল ৭ টার পরে পৌঁছাই। সেইদিন ৬ টা ১৫ তে রুমে। এরপর আর বউকে ফোন করতে মনে নেই।

আর বউও সেটা মনে করিয়ে দিলো ঠিক ১টার সময়!
হয়তো অপেক্ষা করেছে, আমি ফোন করি কিনা?
যেভাবে অপেক্ষা করে থাকে, হাসলে ওর গালে এখনও টোল পড়ে কিনা, এটা দেখে ওকে কিছু একটা বলি। কোনো এক ভালো মুডে থাকাকালীন এক সুবর্ণক্ষনে সে জানিয়েছিল আমায়!

কিন্তু আমি জেনেও ওকে বলি না। অপেক্ষায় রাখি।
যাইহোক, আমি ঠিকভাবে পৌঁছলাম কিনা বউয়ের এটা জানার ব্যকুলতা আমাকে অনুভবের গভীরে স্পর্শ করায়। সাভারে থেকেও ওর এই কেয়ারটুকু, কোনাবাড়িতে অবস্থানরত অফিসে ব্যস্ত আমার গালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে যায়। কেমন এক ভালোলাগার বিহ্বলতায় ডুবে যেতে থাকি আমি।

এরকম আরও এক পরশ পাই আমি খুলনা থেকে…

গাজীপুর ও ইপিজেডে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন গার্মেন্টসে ভাংচুর চলছে। মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশ জেনে গেছে। কিন্তু আমি কেমন আছি কাছের মানুষদের অনেকেরই সেটা জানার জন্য তেমন ব্যাকুলতা দেখি না।

হঠাৎ আম্মার ফোন,
– তোর ওখানে কোনো সমস্যা নাই তো?
– না মাদার, আমাদের ফ্যাক্টরী রাস্তা থেকে অনেক ভিতরে। সমস্যা নাই।
– তারপরও সতর্ক থাকিস।

মাত্র তো এই কয়েকটি কথা। তবুও এখান থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে আম্মার এই আদর মাখা কেয়ারটুকু ইথারে ভেসে ভেসে আমার মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

আমাকে ঘিরে আমার মা আর বউ এর এই উৎকণ্ঠা আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যায়…। আরেক বুধবার রুটিনের বাইরে গিয়ে সাভারের বাসায় এলাম। কোরবানির গরু’র ট্রাক থেকে পুলিশের প্রকাশ্য চাঁদাবাজির কারণে ২ ঘন্টার পথ সাড়ে ৪ ঘন্টা লাগিয়ে যখন বাসায় ফিরলাম, ভিতরে প্রচন্ড ক্রোধ ছিলো। ক্রোধ নিজের ওপর। কেন জন্মালাম এই দেশে?

সে রাতে আমার ছোট কন্যা কি কারণে যেন একটু পাকামো করে বসেছিলো। বকা দিলাম। সচরাচর আমার এই কন্যাটিকে আমি কিছু বলি না। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত সে নাকি কান্না করেছিলো (ওর মায়ের সাথে সে রাতে ঘুমায়। তার মা আমাকে পরে বলেছে)। আমিও ভিতরে ভিতরে অস্থির বোধ করেছি। রাতে ঘুমের ভিতর বার বার চমকে উঠেছি।

বৃহস্পতিবার অফিসে এসে কোনাবাড়ী থেকে খুব ভালো একটা খেলনা কিনে আনালাম। একটা অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে আমিও ‘ঘুষ’ নামক এই “অধিকাংশ জনপ্রিয়” জিনিস কে ব্যবহার করলাম।

বৃহস্পতিবার আমার বাসায় ফেরার দিন। অফিসের কলিগেরা সবাই দিনটিকে ‘বউ দিবস’ হিসেবেই পালন করতাম। যাইহোক, সেই বৃহস্পতিবারটিকে আমি বউ দিবস থেকে ‘ছোট কন্যা’ দিবসে পরিণত করতে চাইলাম।

সে রাতে বাসায় ফিরে দুই বাপ-বেটি সব কাজ বাদ দিয়ে খেলনা নিয়ে পড়ে রইলাম। ওর মনের গ্লানি-কষ্ট সেদিন রাতেই কান্নার সাথে ধুয়ে গেছিল। আর আমার বুকের ভিতর যে ভারী জিনিসটা ছিল, তাও ওর সাথে ছেলেমানুষি করতে করতে শেষ হল। মেয়ের সাথে বসে অবচেতনে ভাবনা-চিন্তায় আমি স্মৃতির অনেক আগে ফিরে গেলাম। মনে পড়লো আমাদের আব্বাজানও আমাকে এমন ‘ঘুষ’ দিয়েছেন।
একবার না। অ…নে…ক বার। তখন তার সেই দেয়াটা ওভাবে বুঝে আসে নাই।

কিন্তু সেদিন নিজের ভিতরের এক পিতার কর্মকাণ্ড এবং তার এ সংক্রান্ত অনুভব আমাকে আমার পিতার অনুভবকে নতুনভাবে অনুভব করালো।

তখন সবে ‘পাওয়ারড গ্লাস’ ব্যবহার করতে শুরু করেছি। কখন যে চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে উঠেছে টের পাইনি। যখন অনুভবে এলো, চোরের মত এদিক সেদিক দেখে কান্নাটুকু লুকিয়ে ফেললাম। কিন্তু মনের ভিতরে আব্বার জন্য যে বোবা কান্না জমাট বাধা তা কি লুকোতে পারলাম?

নিজে পিতা হয়ে পিতার অনুভবে আব্বাজানের ভালোবাসাটুকু যে অনুভবে এসেছে, তাকে কি জানাতে পারলাম? তাকে আর জানানোই হলো না। :(

একান্ত কাছের মানুষদের সাথে সহাবস্থানের টুকরো টুকরো ভালোবাসার মোড়কে যে অফুরন্ত মায়া জড়ানো, তাদের সেই মায়ার মোহ নিজে অনুভব করার জন্য এক জীবন আসলেই খুব অল্প সময়। অবেলায় কেটে যায় মনুষ্য জীবন খেলায় খেলায় অবহেলায়।