চন্দন ভট্টাচার্য এর সকল পোস্ট

আমার তুমি

আমি সংযত ছেলে
তুমি খাবে হাতে পেলে

আমি চুপচাপ থাকি
তুমি কথা-বলা পাখি

আমি তুষ-চাপা রাগ
তুমি বদলে কী আগ

আমি লাজুক আঁতেল
তুমি গোয়িং টু হেল

আমি সোনা-মজদুরি
তুমি পেরেকে হাতুড়ি

তুমি লোলিটা নভেল
আমি মাদার-এ পাভেল

তুমি ছেলে দেখে খুশি
চোখ নীচু ক’রে বসি

প্রেমে কমিটেড হব
তুমি ফ্লার্ট নব নব

তুমি য়ুএসএ রাশিয়া
আমি ভুলি নাই প্রিয়া

তুমি ভীষণ চড়াই
আমি পাথর সরাই

আমি ফ্লপ মাস্টার
তুমি ব্লক বাস্টার

বীণাপাণি বনাম খেয়ালী

পাঁচ
শরীরগুলো মাঠে পড়ে আছে – ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যাওয়া ওয়াগন; ঘাম, বর্ষার জল, গায়ের রঙ আর কাদা মিশে একাকার। শুধু বিকাশদা চটি-পাছায় ব’সে বিড় বিড় করছে, “পনেরো বছর সাব-ডিভিশান খেলছি, এমন গোল বাপের জম্মেও দেখিনি। বদমায়েশিটা কমালে ‘পোকা’ একদিন কলকাতা-মাঠ দাপাবে”। চাঁদ সেঁটে থাকে এদের পেছনে, প্রত্যেকটা কথা শুষে নেবে। যেমন, রজত হেড করতে উঠে দুবার কনুই মেরেছে অসীমের চোখে। “গান্ডু রতন কি বাঁশিটা পোঁদের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছিল তখন?” শুয়ে শুয়ে নবদার জবাব, “বাজিয়েছিল, ছ্যাপ-ভর্তি বাঁশি, শোনা যায়নি”। ছ্যাপ মানে থুতু, নব সাহা খুলনার লোক।

খেলার মূল গল্পের সঙ্গে জড়ানো, তারই প্রান্তসীমা থেকে উঠে আসা এই সব টুকরো কাহিনি মিলেই গোটা আখ্যান; না শুনলে বোঝা যাবে না খেলোয়াড়ের মন, তার সাহস আর অসহায়তা, বল নিয়ে হু-হু করে উইং ধরে ওঠার সময় সে কী ভাবে, সকালে বাজারে মাছ নিয়ে বসা বাবুয়াদা আর বিকেলে হলুদ-সবুজ জার্সি-পরা বাবুয়াদার মধ্যে তফাত কোন জায়গায়!

হেরো টিম বেশিক্ষণ বসে না মাঠে, খেয়ালীও বেরিয়ে গেছে। বীণাপাণির প্লেয়াররা এবার টলতে টলতে মাঠ পার হয়ে পাশের রেলপুকুরের দিকে হাঁটল, তাদের কিটব্যাগ বহন করছে সঙ্গীসাথীরা, চাঁদের হাতেও কে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে – আছাড় খাসনে আবার!

রেল কোম্পানির তলাওটি প্রস্থে ছোট হলেও লম্বায় হ্রদের মতো। জলে বাতাস লেগে একটা তিরতিরে স্রোত সব সময়। পাড়ে দাঁড়ালে মাছের গায়ের গন্ধ; জলে নামলে শ্যাওলা-শামুক-জলঝাঁঝির পা এঁটে ধরা স্তব্ধতা। বর্ষায় টাপেটোপে ভরা সেই জলরাশিতে শরীর ছুঁড়ে দিতে থাকে ছেলেগুলো। এখান থেকে গল্পে আর চমক নেই। তোয়ালেয় মাথা মুছে ওরা নিজের নিজের কিট থেকে কোঁচকানো জামাপ্যান্ট পরে নেবে। ছোট চিরুনিতে চুল আঁচড়ে কেউ সোজা হেঁটে কেউ অল্প খুঁড়িয়ে গিয়ে বসবে কাশীকাকুর দোকানে। সেখানে গোগ্রাসে কাঁচা পাঁউরুটি-ঘুঘনি খাবার পর সবার হাতে তিরিশ টাকা ক’রে ধরিয়ে দেবে বীণাপাণির ম্যানেজার ষষ্ঠীতলা প্রাইমারি স্কুলের মাষ্টার কাল্টুদাস্যার। চাঁদের কলোনির পাশে চড়কপাড়ায় তারই স্কুলের বন্ধু ঋতুরাজদের বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেখানে সারাদিন কাজ করার পর দুটো মিস্তিরি আর তিনটে যোগাড়েও টিউবয়েলের জলে স্নান ক’রে শার্ট-ফুলপ্যান্ট প’রে পাতা-কেটে মাথার চুল আঁচড়ে নেয়। তারপর এসে বসে কাশীকাকুর দোকান থেকে একটু দূরে বাবলা ডেকরেটর্সে। সেখানে কনট্রাকটার শুকদেবজেঠু এসে ওদের মজুরি গুনে দেয়। দুই দল পাশাপাশি হাঁটলে ফট ক’রে বোঝা যাবে না কে রাজমিস্তিরি কে ফুটবল প্লেয়ার!

ছয়
কলপুকুরের জল অতিরিক্ত কালো হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি নামবে ভেবে চাঁদ আকাশে তাকিয়ে খেয়াল করল বিকেল এখন পাস্ট টেন্স, জাঁকিয়ে সন্ধে নেমে গেছে চারপাশে। সর্বনাশ! অন্ধকার মানে সেজদার খটাস গাঁট্টা, মায়ের জোয়ারিপূর্ণ মুখনাড়া। কিটব্যাগ নামিয়ে রেখে চাঁদ রেলপুকুর প্রায় উড়ে পার হয়ে উল্টোদিকের ইঁটবাঁধানো রাস্তায় এসে পড়ে। ট্রেন-প্যাসেঞ্জারের যাতায়াতে সমৃদ্ধ জনপথ এখন নেতিয়ে আছে, একফোঁটা মানুষ নেই কোথাও, বটগাছের শেকড়ের প্যাঁচে দমবন্ধ হয়ে মরা রেল-কেবিনটা শুধু হাঁ ক’রে দেখছে তাকে।

এমন দৃশ্য থেকে ভয় জন্ম নেয়, স্পষ্ট জেনে গেল সে। ভয় একইসঙ্গে ওই ফাঁকা রাস্তা এবং কেবিনের ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে এসে তার শরীর ছুঁল, সেঁধিয়ে গেল ভেতরে। এই আতঙ্ক সম্পূর্ণ স্বাধীন, তার সঙ্গে ফুটবল ম্যাচ বা বাড়ির শাসনের একটুও জানাশুনো নেই। পড়তে বসার সময় যেমন সকাল, ভয়ের সময় হল সন্ধেবেলা। কারণ সায়ংকালে সবাই একা – টিউশান থেকে দেরি ক’রে ফেরা ছাত্রী, বাঁশবাগান অথবা জীবনসন্ধের মানুষ।

হাওয়ার বেগে ছুটছিল চাঁদ, এই রাস্তাটুকুর অভিশাপ পার হয়ে রেলস্টেশানে পৌঁছোতে পারলে গন্নাকাটা চা-ওলা ছেলেটা, ঢোলা খাকি হাফপ্যান্ট পরা হুড়ুমভাজার দোকানদার সব তার কাছে জীবনদায়ী ওষুধ। অর্ধেকটা ছোটার পর হঠাৎ খেয়াল করল এক দিদিমাবুড়িকে, রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোমর সামনে ঝুঁকিয়ে কিছু তুলে নিচ্ছে রাস্তা থেকে। পথে ঘাটে পড়ে থাকা গোবর কুড়িয়ে নিয়ে যায় অনেক গরীব মানুষ, কিন্তু বুড়ি যেন তার অপেক্ষাতেই ওই পোজে স্থির হয়ে আছে। চাঁদ কি রেললাইন টপকে রেলকোয়ার্টার্সের পাশের রাস্তা ধরবে, যে রাস্তা আরও নিঃঝুম বড় বড় আম-জামরুল গাছে? আপাতত গতি কমানো যাক ভাবল সে, কিন্তু খেয়াল করল কোনওভাবেই দৌড় থামাতে পারছে না, হাওয়ার বেগে ভেসে যাচ্ছে বুড়ির দিকে।

সাত
ফুল ভলুমে চলা রেডিয়োর সেন্টার বদলাতে গেলে দুটো ব্যান্ডের মাঝখানে যে তীক্ষ্ণ ভয়ের চিৎকার ওঠে, হঠাৎ তেমন কান ফুটো করা শিসে সন্ধের নিশ্চুপ বাতাস ভ’রে গেল। বুড়ি তার তড়িৎক্ষেত্রে চাঁদকে ছুঁড়ে দিয়ে জাল গুটিয়ে আনছে দ্রুত, এভাবে যখন তাদের মধ্যে এক হাতের তফাত, তড়াক ক’রে মাথা তুলল বৃদ্ধা। চাঁদের নিঃশ্বাস-দূরত্বে সাদা ঘোমটার নীচে পোড়া কাঠকয়লা রঙের মুখ, চোখের কোটরে চোখ নেই, হাঁমুখের ভেতরে শুধু অন্ধকার। জ্বরের তড়কা এল তার শিরদাঁড়ায়, শীত করে উঠল গা, বুড়িকে ঠেলে-ধাক্কিয়ে পালাতেই হবে। স্বপ্নের মধ্যে আমরা যেমন দৌড়োই, সেই রকম ভারশূন্য ঋদ্ধিশূন্য ছুট দিতে চাইল একটা, আর সঙ্গে সঙ্গে দড়াম করে আছাড় খেল। বুড়িই কি তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে? মাটিতে পড়ে চাঁদের মাথা একটা ড্রপ খাচ্ছে, দুটো ড্রপ খাচ্ছে, প্রত্যেকটা ড্রপের সঙ্গে রক্তছোপ লেগে যাচ্ছে রাস্তায়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে তার দুচোখে কৃতজ্ঞতা লেগে থাকল সব ধড়শরীরের জন্যে, ধড় না থাকলে আমাদের মাথা কোথাও থামত না, গড়িয়ে গড়িয়ে গোল লাইন পার হয়ে যেত…।

(শেষ)

জন্মদিনকে

ঘনযামিনীর মাঝে আমার
তোমাকে কারা ডেকেছে, ভাই!
শোকের রাজ্যে কোন অধিকার?
যত্ত সব আপদ বালাই…

ইমোটিকন, খেলনা, গোলাপ
সমস্ত দিন ঝেলতে হবে
মেসেজ-বক্সটা ঝেঁটিয়ে শেষে
লিটার-বক্সে ফেলতে হবে

ঘনযামিনীর বৃক্ষে আছি
মিষ্টি গোপন এ-সন্নাটা
কেউ জানে না বর্ষারাতে
হলুদ হয়ে আসছে পাতা

তুমিও মাস-ফুরিয়ে আসো
কাঙাল ছাড়া কিছু তো নও!
একটা টাকা দিচ্ছি,আমার
জীবন থেকে বিদেয় হও…

(“ছোটলেখকি” বই থেকে)

বীণাপাণি বনাম খেয়ালী

তিন
প্রভাতে উভয় সেনা করিল সাজন
কুরুক্ষেত্রে গিয়া সবে দিল দরশন
যে যার লইয়া অস্ত্র যত যোদ্ধাগণ
সিংহনাদ করি রণে ধায় সর্বজন

দিদিমার মুখে শুনে শুনে অর্ধেক কাশীরাম দাস মুখস্থ চাঁদের। খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ তার নবম দিনের যুদ্ধ মনে পড়ে গেল — দ্রোণাচার্যের পতন।

কিন্তু চাঁদ চিরকাল এক পয়ার থেকে উড়ে আর এক পয়ারে ডানা মুড়ে বসে। থঙ্গরাজের মতো হাইট বীণাপাণির গোলি কেষ্টদা, সে যেই খেয়ালীর স্ট্রাইকারের পায়ে ঝাঁপিয়ে গোল বাঁচিয়ে দিল, ওমনি জিভ নড়ে ওঠে একশো আট নামে :

হিরণ্যকশিপু-র উদর-বিদারণ
প্রহ্ললাদে করিলা রক্ষা দেব নারায়ণ
বলীরে ছলিতে প্রভু হইলা বামন
দ্রৌপদীর লজ্জা হরি কৈলা নিবারণ

শুণ্ডে শুণ্ডে জড়াজড়ি লেগে গেছে। কালমার্তণ্ড দাপিয়ে বেড়ায়, তাদের বুটের স্পাইকে খুরজ-খুরজ হয়ে গেল ঘাসের জনসমাজ। পায়ে পায়ে চার্জ ফেটে পড়ছে দোদমার মতো, কালো কাদা ছিটকে দর্শকের চোখেমুখে। প্রাণ জায় পর সম্মান না জায়। চাঁদের চোখ হাঁ ক’রে থাকে, গায়ে করলাকাঁটা, আর তার পা-সন্ধির পটল লোহাশক্ত হয়ে উঠেছে উত্তেজনায়। প্যান্টের পকেটে বাঁ হাত ঢুকিয়ে মুঠোয় ধ’রে থাকে, থুতনি ধক ধক ক’রে ঘোরে যেদিকে বল, আর ঠোঁট বাতাসের বেগে বিড়বিড় করছে পাঁচালি। এইমাত্র শিনবোনে বুটের লাথি খেয়ে বংকাকে ছটফট করতে দেখে চাঁদ আবার স্লিপ ক’রে লক্ষ্মীবন্দনায় চলে গেল :

বৃদ্ধা বলে পতিহীনা আমি অভাগিনী
কী কাজ শুনিয়া মম দুঃখের কাহিনি
পিতাপুত্র ছিল মোর অতি ধনবান
সদা ছিল মোর ভাগ্যে লক্ষ্মী অধিষ্ঠান…

চার
ফ্রিকিক ভন্ডুল ক’রে হলুদ কার্ড দেখেছিল পিকু, কিন্তু খেয়ালী এই লঘুদণ্ডে রেগে আরও লাল, কারণ তাদের কোচ কাম নির্ভরযোগ্য লেফট ব্যাক অপরেশ মুখার্জি মাঠের বাইরে শুয়ে, কোমরে বরফ ঘষা চলছে। টিম বেশ গগন-গগন খেলছিল, আর পনেরোটা মিনিট কাটাতে পারলে…! তারপর তোদের যেতে হবে না আমাদের পাড়ার ওপর দিয়ে সরকারি লাইব্রেরিতে, কামদেবপুর হাটে যাবি না অথবা কল্যাণী? ধ’রে ক্লাবঘরে বেঁধে রেখে দেব!

কিন্তু শুধু বল উড়িয়ে চললে কাদামাঠে অর্ধেক শট কেটে গিয়ে নিজেদেরই গোল লাইন টপকে দৌড়োয়। এই নিয়ে ন’নম্বর কর্নার পেল বীনাপাণি। পিকু ভয় খেয়ে নীচে নেমে গেছিল, আবার গুটিগুটি সেকেন্ড বারে এসে দাঁড়িয়েছে। নবদার কিক, কিন্তু খেয়ালির রজতদা, গিয়াসুদ্দিন এত লম্বা যে বলে অন্য কারও মাথা লাগানোর সুযোগ এন আই এল — নিল। তবু লবটা উঁচু হয়ে এগিয়ে আসছে, উঁচু হচ্ছে স্টপারদের মাথা, পিকু ভেবে নিল তার সামনে কেউ নেই — বল আর সে আর গোলপোস্ট। বাঁপায়ের বুড়ো আঙুলে গোটা শরীরের ভর এনে ডান পা মাটির সমান্তরালে কোমর পর্যন্ত তুলে ভলি নিল। কী আশ্চর্য, সব লাফানো মাথা এড়িয়ে বল সত্যিই পিকুর পায়ের কাছে গোঁত খেয়ে পড়ছে, পিকুর শটটা বল পৌঁছোনোর দু’সেকেন্ড আগে শেষ হয়েছে শুধু। কিন্তু নটরাজের মতো ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর বিদ্যুততাড়সে ঘুরে যেতে যেতে ছেলে সেটা বুঝে ফেলেছে। ঘূর্ণন না থামিয়ে আর এক চক্র কাটল সে, এবং দ্বিতীয় আবর্তনে ফের আগের জায়গাতে পৌঁছে পায়ে-বলে কানেক্ট করল। দ্বিতীয় পোস্টের কোনা দিয়ে বল জড়িয়ে গেল জালে।

নব লালন

কথা জানো, মন জানো না
ও প্রেমিক, কাচ-বাসনা
আনা চার খুঁজতে গিয়ে
প্রেমে অনাচার ক’রো না

জল কি বাঁধতে পারো?
বান যায় পড়শি-ঘরও
মিলমিশ না হ’য়ে দু’মন
প্রেম-কিশমিশ পেল না

হার্টস-এর টেক্কা চেপে
খ্যালো তাস খেপে খেপে
প্রেমে শর্ট নিতে গিয়ে
ও-শিওর পিঠ হবে না

ট্রেনে কত উঠল হকার
নিমে, নবী, যিশু-অবতার
তারা সব ধরছে দোহার
মাঠে ফুল হাসে, টবে না

.
(“ছোটলেখকি” বই থেকে)

বীণাপাণি বনাম খেয়ালী

এক
চাঁদের বাড়ি পার হলেই দুপাশে দুই পুকুর, বর্ষায় রাস্তার ওপর দিয়ে ডান পুকুরের জল বাঁয়ে গিয়ে মেশে — বাচ্চাদের জন্যে খুব চমৎকার নদী। এখন বসন্তে শিমূলগাছের মানচিত্র থেকে ব্যাডমিন্টনের ফেদার-ককের মতো ফুল মাটিতে পড়ে থেঁতো হচ্ছে। শীত এলে তাদের ফলগুলো রোয়াঁ-জাগা পেস্তাসবুজ ছোট ছোট হাত-গ্রেনেড — শিরা বরাবর ফেটে গিয়ে তুলো উড়বে। তাছাড়া, নিরাপদ অবতরণের খোঁজে বাতাসে ভেসে বেড়াবে সূক্ষ্ম কাপাস, পেছনে একটা চিমসানো বীজ নিয়ে। ভয়ে কাঁটা হয়ে সেই পথটুকু হাঁটে চাঁদ, কলোনির যে-কোনও বাড়ির দাওয়া থেকে গুরুগর্জিত গলা না শোনা যায়, “আবার হ্যাক্কা মারতে বেরোনো হচ্ছে? এই বাঁদর, বাড়ি যা।”

রেল লাইন পেরিয়ে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠে মুক্তি! এবং মুক্তিসূর্য রেল কেবিনের মাথায় ঝুঁকে পড়েছে, তার আঁচ কাদায় পড়া ফুটবলের মতোই। এদিকে চাঁদের শার্টের সবচেয়ে নীচের বোতাম ছেঁড়া ব’লে ঘন বাতাসে জামার ঝুল পতাকা হয়ে ওঠে। পুরোনো হাফপ্যান্টটা জলকাচা হতে হতে ছোট হয়ে কুঁচকির কাছে, অথচ শরীর বড় হচ্ছে সেই সংকোচনের বিপরীত মুদ্রায়। বর্ষার জল খাওয়া পটলের মতো সেই অঙ্গকে আঁট জামাপাকড় যেন ক্ষেপিয়ে তোলে; বন্ধুরা দেখতে পেলেই টুং ক’রে আঙুলের টোকা দেবে, শুধু বাড়িতে মা বা সেজদারই চোখে পড়ে না কিচ্ছু।

কাজেই, চাঁদ খুব সাবধান — শার্টের কানাত হাওয়ায় উড়ে তাকে অশ্লীল ক’রে দেবে না তো? মাঠে একটাও মেয়ে-দর্শক নেই ব’লে দুটো দল উদোম দুই গোলপোস্টের কাছে ইস্তিরি-করা জার্সি পাট ভেঙে পরে নিচ্ছে। চাঁদ বীণাপাণি সংঘের সমর্থক হিসেবে তাদের দঙ্গলের কাছেই দাঁড়ায়, ফুটবলাররা পায়ে বল নাচাচ্ছে কাদা বাঁচিয়ে সাইড লাইনের বাইরে, কেমন লোমওলা ভারি থাইয়ের, ঝলমলে জার্সির রাজপুত্র সব; সে একটু দূরে দাঁড়াল আশায় আশায়… বল ছিটকে এদিকে এলে শট জমাবে। অথচ চটিপরা কাঠি-পায়ে প্রাণপণ কিক করলেও শটপুটের মতো সেই মহাস্থবির ফুটবল আস্তে গড়ায় প্লেয়ারের দিকে, উল্টে বলের সেলাই লেগে চাঁদের পায়ের শিরা শুলিয়ে যায়। একটু পরে সে নিজেকে নিজেই গুপ্তচর নিয়োগ ক’রে বিপক্ষ শিবিরে অভিযান করবে, শোনা যাক খেয়ালি সংঘ কী কূটকৌশল আলোচনা করছে। কিন্তু টাকমাথা সিনিয়াররা মাঠে বসে কামিনী-কৌশল নিয়ে ব্যস্ত… “এই বাচ্চা, ভাগ এখানে থেকে”! চোখভর্তি অপমান নিয়ে চাঁদ আবার বীণাপাণিতে ফিরে দেখছিল বিকাশদার গোড়ালিতে সাদা ব্যান্ডেজ, ড্রেস করছে না। ভালোই হল, বিকাশ পাল ঝুলিয়ে দেওয়া প্লেয়ার, বদলে তাদের নিবাধুই কলোনির রোগা-প্যাঁটকা পিকু খেলবে। পুরো ধানি লংকা, শুধু বিড়ি খায় ব’লে বেশি দম পায় না বুকে।

দুই
আস্তে আস্তে মাঠে ছাতাসমাবেশ দ্যাখা গেল — যত দর্শক, তত কালো বাদুড়। চাঁদের মাথা খালি; বাড়ি থেকে আসতেই দিচ্ছিল না, আবার ছাতা দেবে? মোটে মা রাঁধে না, তার তপ্ত আর পান্তা! এদিকে লম্বা বাঁশি দিয়ে ম্যাচ শুরু করে দেয় রতনদা, রোগা কিন্তু শিক্ষিত, তার চুনসুরকি ঝ’রে পড়া বাড়ির সবুজ দরজায় লেখা আছে রতন কুমার দে, এমএ (রিডিং)।

মোষযুদ্ধ লেগে গেল। প্লেয়ারদের গায়ে-ফোস্কা-ফেলা ফোঁস-ফোঁস, গলায় খোমানোর শব্দ আর অনেক দিনের পুরোনো তামাকপাতার মতো ঘামের দুর্বাস বগলে। যখন সাইড লাইনে ছররা কেটে থ্রো ইন বাঁচাচ্ছে, চারপাঁচ জন দর্শকও প্লেয়ারের সঙ্গে পড়ে গিয়ে কাদামাখা। আর বল কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে গেলে বাকি তিন দিকের দর্শক মাঠে নেমে আসবে ভালো ক’রে দেখার মানসে, ওমনি লাইন্সম্যান হলুদ পতাকা তুলে তাড়া ক’রে যায়। আকাশ থেকে দেখলে — কালো সমুদ্রপাখির ঝাঁক চারকোনা ঢেউ নিয়ে সবুজ ঘাসের ওপর ভাসছে।

ওই আকাশেই চাপ বেঁধে আছে মেঘের গ্রানাইট, একজন খেলোয়াড় একবার মাটিতে গড়ালেই বংশপরিচয় হারাচ্ছে, তখন তাকে অন্য প্লেয়ারের থেকে আলাদা করে কে! তবু তার মধ্যে বীণাপাণির সবচেয়ে বলশালী রাইট আউটের নাম মেথর! সে আসলে এক তরতাজা গয়লা শ্রী বারিদবরণ ঘোষ, কিন্তু মিশমিশে এবং লোহাগড়ন গতরের জন্যে ছোটবেলায় বন্ধুদের কাছে পাওয়া ওই খ্যাপানো নামেই আজ আঞ্চলিকভাবে বিখ্যাত। মেথর গরীব গ্রামবাসীদের বিদেশ বসু, বল নিয়ে কচুগাছের গোড়া ওপড়ানোর মতো ঘোঁত-ঘোঁত স্পিডে গোল লাইন পেরিয়ে চলে যায়… পেছল মাঠে তার দুর্বল ব্রেক আরওই কাজে আসছে না। এই ভাবে হাফ-টাইম জাগল। যে খেয়ালি সংঘকে বীণাপাণি যেখানে পাবে হারাবে, সে এখনও গোললেস করে রেখেছে। ভাবনার ব্যাপার!

মধ্যান্তরে মাঠে প্রচুর খোসাবাদামওলা সক্রিয় হয়ে ওঠে, ঘটিগরম ঘুরে ঘুরে হাতেগেলাসে ঝকর-ঝকর ঝাঁকুনি দেয়। কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ আর বাদামের খোলা ভাঙার পুট শব্দে বাতাসে ঝিম। চাঁদের হাতে পয়সা নেই, জিভে জল আছে শুধু। সে জীবনে কোনও একদিন পুরো দু’টাকার ঘটিগরম কিনে বাঁহাতে খুব সাবধানে ঠোঙাটা ধ’রে (একটা দানাও পড়ে না যায়) ডানহাতে ঢেলে ঢেলে মাঠের ফাঁকায় ব’সে খাবে। রাক্ষস ছোড়দা বা হ্যাংলা বোনটা — কেউ ধারেকাছে নেই তখন।

ভালো কথা, পিকুকে আজ খেলানো হবে না-ই ঠিক ছিল; সেভেন-এ-সাইড ম্যাচেই ও চলে, পায়ের কাজ ধুয়ে কি জল খাবো, এসব মাঠে ডিফেন্স এক টিক মারলেই পিকুকুমার চিৎ। এখন প্রথমার্ধে ড্র হওয়ার পর তাকে ঢলঢলে জার্সি প’রে সাইড লাইনে ছুটতে দেখা গেল। খেয়ালি সংঘের স্টপাররা নাকি কোনও ফরোয়ার্ড এগিয়ে এলেই তুড়ে মুখ খারাপ করছে, শুনে মাথা গরম ক’রে বার পোস্টের ছ’হাত ওপর দিয়ে মারছে বীনাপাণি। সরকারি কলোনির ছেলে পিকুর খিস্তিতে পুব-পাকিস্তানের আন্তরিকতা, কিন্তু সে মা সরস্বতীর ক্লাবের হয়ে প্রথমবার নেমে অশৈলী কিছু করল না। হাফ টাইমের পর নিজেদের হাফ লাইনের কাছে ফ্রিকিক পেয়েছে খেয়ালী, ওদের পেটমোটা ব্যাকি অপরেশদা বল জায়গায় বসিয়ে মোশান নিতে পিছিয়ে গেছে খানিক, পিকু আনমনে বলের কাছে দাঁড়িয়ে, অপরেশদা ছুটে এসে শট নেওয়ার আগের সেকেন্ডে সে বুটের এক টোকায় বল সরিয়ে দিল। ব্যাকির শটটা ফলস হয়ে গেল পুরো, ভারি শরীর ফুট তিনেক শূন্যে লাফিয়ে উঠে “বাবা রে” ব’লে দড়াম ক’রে মাটিতে।

(আর একটু বাকি)

এই ছোট্ট ভূগোল

ভাষা থেকে হারিয়ে গেছে রোদ
সব্বাই স্মৃতি খুলে বসেছে অধ্যয়নে
দেখছে, সরে যাওয়ার আগে একটু মায়াবি হল পারস্য-আকাশ

চোখের সামনের এই ছোট্ট ভূগোল জ্বাল দিলে
অনেকটা আখের গুড় বেরিয়ে আসবে
আমি মুগ্ধ, প্রতারিত;
আমি কলাপাতা, কীভাবে হাতিজীবনের
মুখোমুখি হব?
ঘুম থেকে ছেলের ডাকে ওঠা কতদিনের স্বপ্ন ছিল!
অথচ ভাষা যেন মাঠা তুলে রাখা দুধ —
স্বামীনাথন সবটাই জানেন

কোথায় কাদের খাওয়া হচ্ছে না ব’লে
আতঙ্ক ক’রো না
একদিন চালডালের বস্তার মুখ খুললেই
আমরা বেরিয়ে আসব
ততক্ষণ কেউ সন্ধের ভুট্টাভাজা আনবে বাটি ভ’রে
কেউ আহ্নিক না ক’রে ঢোঁকই গিলবে না
আরোগ্যঋতুকে হাঁটিয়ে আনা হচ্ছে রাস্তার
ডান দিক দিয়ে, তার রুপোলি হাতকড়া
দেখতে পেলাম

স্বামীনাথন একজন দেবতা ও একজন
পুলিশ অফিসার

বিশ্বরূপ

জন্মদিন খুঁজব ব’লে ভোরবেলা পথে বেরিয়েছি
মাথায় শোলার টুপি; টাট্টুকে বলছি, দেখে হাঁটো
চোখদুটো ছড়ালাম ক্যারামগুটির মতো, মাঠে;
ধরেছি প্রকৃতিকল মুঠোর ভেতরে আঁটোসাটো

তেঁতুল-বিছে নদী — তার বোরখা-জল, ভেলভেটি ছায়া;
আমি নটবর-হাত মেলে দেব তালবন্ধুগাছে;
পাড়ে শামুক ছুটছে — বড় ক’রে খুলে রাখি মুখ;
এক গরাসে মেঘ-বারিকুল ঢুকে যায়, মহামায়া!

ওদের ভেতরে ঘন জন্মদিন কই? শুধু শুধু
বিশ্বরূপ দেখালাম! থুথু ফেলি দিগন্তরাশির;
ঘোড়ানৌকো ভেসে গিয়ে লোকসন্ধ্যামগ্ন ঘাটে পেল
মেয়েটিকে, হাতে বই — ঝুঁকে পড়ছে ‘রক্তের শিশির’

এইবার জল-স্থল ছেড়ে আকাশে উঠেছে অশ্ব;
মেঘে মেঘে যত আলো, তত অবসন্ন শ্বাসমূল।
হঠাৎ বিদ্যুৎ ভাঙে… জন্মদিন-ঘুড়ি! লুটে নিই;
তার পিঠে পুবের পতাকা আঁকা, পশ্চিমের ফুল…

সন্তানপ্রণাম

12_n

সব বাবা উঠে দাঁড়াও,আপামর বাবা
বুকের বাঁদিকে হাত রেখে বলো, শেষ কবে
সন্তান বুকে জড়িয়ে ধরেছ
ছেলেকে মেসেজ করতে যে-চোখ হঠাৎ
ঝাপসা হয়ে যায়, মুখ তুলে সেই অপরাধী-দৃষ্টি একবার দেখাও আমাকে
দিন যায়, তোমার পিঠ থেকে খুলে
বসন্তের ডানা উড়ে যাচ্ছে ছেলের শরীরে
হারানো জিনিসের লিস্ট থেকেও
হারিয়েছে ‘নির্ভরতা’

আমি জানি, যেখানে সন্তান থাকে,
শুকনো পাতা প্রজাপতি হয়ে ওঠে
যেখানে সন্তান থাকে, পায়রা ময়ূর মনে হয়
ভেবো না ছুটে এলেই কাছে যাওয়া যাবে
সময়ের, সে তোমাকে দুঃখপ্রতিভার কোলে
ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, বাবুজি!
যেন এয়ারপোর্টমুখো একটা মারুতি সিডান
ভেতরে দুর্বোধ্য গান বাজছে।
দরজা খুলে নেমে এসো, সি-অফের হাত নামার আগেই আষ্টেপৃষ্ঠে বুকে
জড়াও সন্তান
ছেলেও জানুক, শার্টের নীচে তুমি কতটা
রোগা হয়ে গেছ…

(“সন্তানপ্রণাম” কাব্যগ্রন্থ থেকে)

বোবা

পোকাও পারে না মারতে
তার আঙুলগুলো আস্তে

সে লিখবে একটা পাতা
কিন্তু ভাববে এক-মাথা

সবার মাতৃভাষা আছে
আকাশ, শিমূলগাছের
তার নীচু চোখে গচ্ছিত
“বলার চেষ্টা করছি তো!”

সে বলবে একটা কথা
তাই ছড়িয়েছে শূন্যতা

বেকার বেকার

মুখ থাকতে হাতে কেন
চিটিশ পিটিশ
মন থাকতে তবু টুকে
পরীক্ষা দিস?

হেলমেটহীন বাইক — দিলাম
কেস ঠুকে
লাভ থাকতে লাইক কেন
ফেসবুকে!

ট্রেন থাকতে ট্রেকার চেপে
পাহাড়ে যাই
সিঁড়ি থাকলেও বেকার বেকার
খাদে ঝাঁপাই

তিল থাকতে তালের বিভেদ
ডেকে আনো
ভালোবাসা নাম পালটিয়ে হয়
ভোলক্যানো।

মাথায় কি মাছ রেখে দেব?

মাথায় কি মাছ রেখে দেব?

না গো, কাতলের মুড়ো খেতে চায় না বাড়িতে
তুমি শুধু কানকো ফেলে ব্যাগে ভরে দাও, ডগি-টা রয়েছে

রান্নাঘরে বাজার নামিয়ে এক ঝটকায়
স্নানখাওয়া সারি
অফিসের গেটে মাছওলা বড় এক
ভেটকির আঁশ ছাড়িয়েছে
বাবু, মাথায় কি মাছ রাখতে হবে?
নারে ভাই, পাঁচ-ছ’ টুকরো করো,
ক্যান্টিনের আশপাশে বেড়ালবাচ্চা ব’সে থাকে

তারপর মহাবিদ্যালয় থেকে ফোন এল : বিকেলে আসিস, কতদিন গল্প হয় না!
বিভাগে ঢোকার মুখে খসখস ক’রে মাছওলা পিস করছে রূপচাঁদা —
মাছ ছাড়া মাথা লিখছি, স্যার
নয়ত টিচার-ছাত্র কেউ নম্বর দেবে না

বন্ধু নেই, চিরকুট রেখে গেছে দেখে রাগ হয়
ওহো, আজ না জলসা আছে
সংস্কৃতিভবনে?
টিকিটঘরের নীচে বঁটি নিয়ে অধিষ্ঠান মাছওলা, যদিও কোথাও নদী নৌকো ভাটিয়ালি চোখে পড়ল না
এই বৃষ্টিহীন মুখ নিশ্চিহ্ন ঘেঁটির দিকে তাকিয়ে সে বলে , মাছ রাখলে ভালো দেখাবে কি!
তার চেয়ে জমা দিয়ে অনুষ্ঠানে যান
মাঝখান থেকে ফেঁড়ে ডবল প্লাস্টিকে মুড়ে দেব
রাস্তাঘাটে এক ফোঁটা রক্ত গড়াবে না

অনিঃশেষ

দূর থেকে স্বচ্ছ মনে হতো

কাচ জেনে প্রথম প্রথম যত্নে রেখেছিলে
অর্ধেক পানীয় ভ’রে সাবধানে দু’ঠোঁটের
মাঝখানে নিতে
আর যা যা ভাগ হয়ে দুই…

ধাতু-আচরণ আমিও নিয়েছি শিখে ততদিনে
কিন্তু যেই ভালোবাসা পাঠাও, সাত রঙে
বিশ্লেষণ করে ফেলি
সমস্ত শ্রাবণজন্মে এই কাদামাংসময় ধারাপাত দেখে রেগে আছড়ে ভেঙেছ আমাকে

তারপর যে-কোনও কোথাও পা ফেলার আগে সাবধান হয়ে থাকো
যেন পড়ে আছি জগৎসংসার ভ’রে…
টেবিলের নীচে ঝাঁট দিতে গিয়ে চমকাও
পুরোনো শাড়িতে এখনও আমার গুঁড়ো,
ভেঙে গেলে তারা অনিঃশেষ?

এত ভয় কেন!
চোখের মধ্যেই আছি দু’তারায় দুই কাচ,
ফুটেছি কখনও?

একাই থাকো

আজকে পোষের শেষ দিবসে
মেলা-মিটিং যাব না
মাস্ক দেখব সবার মুখে
হাসি দেখতে পাব না

বন্ধু লেখে — পিঠে খেলাম
পাটিসাপটা, দুধপুলি… আর
তোর ঘরে কী বানিয়েছিলি?
— আমার পিঠে সোয়েটার।

ফ্যাক্টরি খুব বন্ধ, জানি
মালিক ফেরার, শ্রমিক নিঃস্ব;
মানুষ গড়ার কারখানাতেও
তালা — নতুন এমন দৃশ্য!

কিম্বা যারা লকডাউনে
বাছল দোসর আর মনমিত;
তত্ত্বে পেল স্যানিটাইজার
ফুলশয্যায় পিপিই কিট

তাই বলছি একাই থাকো
সংক্রমণের গল্প নেই
বিন-অসুখে-মরে-যাওয়া
সুখটার বিকল্প নেই