দ্বীপ সরকার এর সকল পোস্ট

দ্বীপ সরকার সম্পর্কে

সম্পাদক মাসিক কুয়াশা ওয়েবজিন [email protected]

বসন্ত ও আমার বউ মিনি

images

বসন্ত ও আমার বউ মিনি

খোঁপায় তোর হলুদ গাঁদা,চোখে প্রেমের হাসি
এই বসন্তে নতুন করে তোরেই ভালোবাসি
নতুন করে মনের কোণে,আলগা হাওয়ার খই
প্রেমিক জানে,হলদে দুপুর হলদে প্রেমিক সই
নদীর জলে আছড়ে পড়ে মনকথাদের দোল
গানের সাথে পিছলে পড়ে “ভালোবাসি” বোল
নদীর ধারে গেওড়া গাঁয়ে শিমুল বনের মেলা
আমের মোলে রোদপরীরা করছে হাওয়ায় খেলা
এই যে ফাগুন, এই বসন্ত কেমনে বলো চিনি
ফুলের ঋণে হাত পেতেছে আমার বউ মিনি

পৃথিবী যেনো এক বনসাই লাউ

imaga

পৃথিবী যেনো এক বনসাই লাউ

লাউ বনে গিয়ে দেখি কিছু বেঢপা লাউ
আমাকে ঈঙ্গিত করে শিস দিচ্ছে
আমি ফিরে ফিরে লাউয়ের শরীর দেখি

শরীর বেয়ে ধেয়ে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর মতো জটিলতা
লাউটা বৃত্তাকার-
প্রত্যেকটি লাউ যেনো একেকটি পৃথিবী

পৃথিবীর মতো গোল বলে তাকে গ্লোবাল ভাবি
নিজস্ব স্বকিয়তা নিয়ে লাউ
দিনে দিনে
ধীরে ধীরে
বড় হতে হতে একদিন ঠিকই পৃথিবীময়
আমি এবং কিছু ঝোপঝাড়
বিকেলের নিকটে এই লাউবনের ব্যাখ্যা শুনাতে শুনাতে
পৃথিবীটা কখন বনসাই লাউ হয়ে গেলো
টেরই পাইনি-

বৃষ্টির পিতামহ

images

সূর্য ডুবে যাচ্ছে দেখে-
হাঁটি হাঁটি পা পা করে নিম্নগামী হতে থাকে
দূরের বেলুন
সূর্যের নিকটতম প্রতিবেশি আকাশের বংশধরেরা
বেলুনের শাঁই শাঁই হয়ে নিশ্চুপ বাতাস-
মাঠের গরু হাম্বা হাম্বা করে
রিলিফের ঘাস থেকে মুখ উঠোয়
কৃষক ফেরে আজান শুনে-নীড়ে
ঋতুর ডাকে মধ্য বয়সী শ্রাবণের ঝাঁক-
গোপনে বিয়োয় বৃষ্টির কোরাস
রাতভর্তি সময় খুললে অবিক্রিত কিছু অন্ধকার
বৃষ্টিদের বিপণনী বিতান

ফিরে যাবার আগে-
সূর্য ডুবে যাচ্ছে দেখে
কিছু হিতৈষী ধূ ধূ ভিজে যাচ্চে
সীমানার দেয়ালে সম্প্রতি কারা প্রসব করেছিলো
তারাই প্রকৃত বৃষ্টির পিতামহ।

প্রাক্তণ কথারা

প্রাক্তণ কথারা

আমার প্রাক্তণ কথারা এখন আছড়ে পরে
মনের দেউড়িতে
আমি নিথর বালিয়ারির উঠোন এক,
আমাতে নেমে আসে দুঃসময়ের রোদ।
প্রাক্তণ কথারা লিখে রাখে বাতাসে-
বুনোচোখে রোম্যান্সগাঁথুনি কিছু মহুর্ত।

নাকডুবো জলে ভেসে আসা স্বাক্ষীমাছ
এবারও গিলে নেবে পোড়ারুটির তাপসমূহ-
পোড়া রুটি মানে পাঁজরভাঙ্গার কষ্টের থালা…

আমি তো কথাদের ভিরে ব্যর্থ এক মেঘ,
বৃষ্টি নামলে আমিও অতীতের ভিরে ছেঁকে উঠি,
এখনও এই উঠোনে কথারা নাচলে
কিছু সুপ্ত কথা ঝুনুর ঝুনুর বাজে….

লেখাঃ ২০/৯/১৭ইং

বিরান হওয়ার রাত

বিরান হওয়ার রাত

দ্বীপ সরকার

একটা বিরান হওয়ার রাত–
জামদানি কুয়াশার ভেতরে থেকেছি নিশ্চুপ
চারপাশে জ্বালাময়ী ঝোপঝার
সেদিনের সেই ভৌতিক রাতের কথা ভুলিনি—

আঘাতে আঘাতে বিলুপ্ত কথারা মরে যাচ্ছিলো–
লুণ্ঠণের আওয়াজ থেকে শিখেছি বিরহের গান
চোখজুরে নিশিন্দারার কোমল স্পর্শ
তাথৈ নাচে কিছু অন্ধকার এসে ঘিরে ফেলে আমায়
আমি আকণ্ঠ পান করে নিচ্ছি ভয়ার্ত শিয়ালের ডাক
তবুও নিজেকে দাঁড়িয়ে রেখেছি —
অপেক্ষার ভেতরে অপেক্ষাদের কতোনা ব্যাপার থাকে।

ভ্রাংগেল দ্বীপ

ভ্রাংগেল দ্বীপ

দ্বীপ সরকার

সন্দেশের মতো মেঘের ফেনা দলবদ্ধ এবং সারি সারি
পা পিচলে পড়ি- পুনরায় চড়ি দ্বীপে
ঘন নিঃশ্বাসের দলা আটকে যায় গলায়
নিসৃত নিস্তব্ধ উজানের ঢেউ এসে লাগে
আমি চেটেপুটে খাই মেঘ,কুয়াশা আর কিছু ভয়

কেউ যায়নি ওখানে, ওতোদূর – তবে আমি গিয়েছি
বোম্বিং শব্দের মতো ফেটে যায় দ্বীপ -ভ্রাংগেল দ্বীপ
সীমানার নিকট কিছু অচেনা পাখি এসে আমাকে ভাবে পোকামাকড়—-
তাই আমার চোখেমুখে ঠোকর দেয়

বিস্ময় জমিয়ে রাখা চোখ – মিলিয়ন পরিমাণ ভাষা
ঠোকরে ঠোকরে অচেনা পাখিসব কেড়ে নিয়েছে
ভ্রাংগেল দ্বীপ তার দুই পা প্রশস্ত করলে আমি ঢুকে যাই

নীলগুলো কাছাকাছি গোত্রের মনে হয়েছে
এবং আকাশ তার সমগোত্রীয় বিচরণভূমি-
মাছগুলো লুদলুদে গোপনের কাছে যায়;
ভিরের ভেতর বহুদূর – বহুপ্রাচিন কলকারখানার জংঘা থেকে ওদের বংশবিস্তার

আমি বিবিক্ত মানু্ষ-ফিরে আসি নুই নুই করে নিজ গ্রামে।

ডুডল

ডুডল

দীর্ঘ বিরতির পর এই দেখলাম-
তোমার বয়সের ছাপ এসে গেছে- চোখের নিচে
সমস্ত চিন্তার কালো কালো বোধ,
আসলে কতোটা ভালো আছো তুমি?

মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমার গভীরতা-
তোমার এই বেঁচে থাকা দেখে
ডুডল এভাবেই আবির্ভূত হয় বিশেষ বিশেষ মহুর্তে..

শিল্পনামা

গরুর নাক ডুবিয়ে খাদ্যাভ্যাস দেখে একটা স্মৃতি মনে পড়ে,

ক্যাফেতে পোলাও কোরমা’র ঘ্রাণ যখন পীড়া দিচ্ছিলো
এবং আকাশে উড়ছিলো সুগন্ধীর চিল
ডানে বসা ছিলো একদল ভোজনপিপাসু শ্রেণির মানুষ
দেখছিলাম নাক মুখে ওদের ভাত লেগে থাকা ও
দাঁড়ি গোঁফে মাংসঝোলের শিল্প
ওদের খাওয়া দেখে রোদসীও মুখ
থেকে বোরখা সরিয়ে খেতে থাকলো
ভাত, মাংসের ঝোল
এবং তার হা -মুখ থেকে সটকে পড়েছিলো হলদেটে হাসির মচ্চম।

আমি তাজ্জব দৃষ্টিতে সমীকরণ করি
গরুরা কেনো জাবর কাটে
কেনো নাক ডুবিয়ে চারির ভেতর থেকে
খুঁজে আনে খিদের শিল্প।

২/৯/১৮ইং

আমি পাথর অথবা ভিসুভিয়াস

আমি পাথর অথবা ভিসুভিয়াস

আমি পাথর হতে চাইলে তুমি এসে বল্লে হতেই পারো,
অতঃপর আমি পাথর হয়ে গেলাম
নিরেট, নিখাদ দগদগে নীলচে পাথর

এখন আমি গভীর ষড়যন্ত্রেও নিখুঁতভাবে দাঁড়াতে পারি অসহ্যময় পাহাড়ে হেলান দিয়ে

কারন,আমি যে পাথর
অথবা পাথরের মতই

আমার পিটের অপোজিটে ভিসুভিয়াস জন্মে
আমার অন্তরে গিরগিটের পেশাবে জন্মে গাঁজা
চোখ ছুঁয়ে জন্মে বিরহের নীলতট
ঠিক এভাবেই পাথর থেকে নীল
নীল থেকে ধূসর বুক –

নরকের ভয়ে যখন ঝুলে থাকে মাকড়াসা
তখন আমি ঠিকই বুঝতে পারি
নরকের ইদানিং চোখ জন্মেছে বেঢঙা,
বেঢঙা চোখ খুব করে চিনে নিচ্ছে সব পাপ তাপ

যে পাহাড়ে নিরঙ্কুশ বৈরীতার ঘাস জন্মাতো
পাথরেও এক সময় ফুটতো ফুল

আসলে কিছু কিছু পাথরের চোখ আছে দেখার
কান আছে শোনার
অথচ পাথরময় এই আমি, কিছুই দেখিনা,শুনিনা..

লেখাঃ ১২/৯/১৬ইং

কালাজ্বরের দাউ দাউ

কালাজ্বরের দাউ দাউ

এইখানে একটা জীবিত নরক আছে-
বুকের ঠিক মাঝখানে
যন্ত্রণার ইপিল গাছটা কো-অপারেট
হতে হতে বংশানুক্রমিক হচ্ছে
আমি বোধের রাঙচিতায় মুখস্থ্য করছি
এইসব ইপিল গাছ-

এভাবেই বহুকাল আমার বুকে
চাষা হচ্ছে বংশ পরম্পরার কালাজ্বরের দাউ দাউ
কালাজ্বরের দাউ দাউ
ভয়ানক কর্পোরেট – জ্বলতেই থাকে।

এইসব দৃশ্যাবলী দেখে কেউ কেউ আমার গলায়
ভড়িয়ে দিচ্ছে তাবিজের ঠোস
প্রকারান্তরে আমি গলায় ঝুলিয়ে রাখছি মরা মানুষের হাড়গুল্ম।
লেখাঃ ১৪/৬/১৭ইং

নেতা

টান টান ভাষণে উপচে পড়ছিলো ক্ষ্যাপা,
আঙুল উঁচিয়ে ধরছিলো শারীরিক ভঙ্গিমা
অতঃপর মৃদুস্বরে নেমে আসলো বাস্তবতা…

জনগন সব বোঝে –
নিন্দিত ব্যাকরণের কমা সেমিকোলন থাকেনা।
ভেতর বাহির বৃদ্ধাঙ্গুলির হাহাকার ক্রমশঃ ফুটে ওঠে।

লেখাঃ ১৯/৮/১৭ইং

খসড়া পাঠ

খসড়া পাঠ
——————–
এটা আমার চুড়ান্ত কবিতা নয়
খসড়া বলে চালিয়ে দিতে চাই….

তোমরা এই কবিতা পড়বেনা
কারন কবিতা হতে হলে প্রথমতঃ
মানুষের কথা বলতে হবে।
কিন্ত এই সব প্রজাতন্ত্রের মানুষগুলোকে
কবিতার আবহে ক্যামনে এনে বলি
আমার কবিতা পড়ো..

জন সমুদ্রে আমরা,পরিচিত হাওয়ারা টোকা দিচ্ছে সতত।
ঘোলা পানিতে বৈচিত্র অপহরণ চলছে;
মাদুলিতে তাবিজের ঠিকানায় চলে যাচ্ছে
ওলট পালট জীবন।
কিসের বিষয় লিখতে গিয়ে বিষয়ভূমিতে ভিন্ন প্রসঙ্গঃ
নিজেকে আড়াল করে বলি কিডন্যাপ।

অপরুপ নাটকে আবির্ভুত দৃশ্যে মজহার সাহেব
বিষম নায়ক।আমরাও অজ্ঞাত রিসার্চে ধরে ফেলেছি ঘর পলায়নের নাম অপহরণ।

এটা আমার কবিতা নয়
খসড়া বলে চালিয়ে দিতে চাই..

লেখাঃ ১৬/৭/২০১৭ইং

একটা ঘুম একটা ঘাম একটা একাত্তর

ঘুম থেকে উঠলেই ইদানিং চোখগুলো
দ্রুত বায়োস্কপ থেকে বেরিয়ে পড়ার মত
আচনক খুলে ফ্যালে রাত,
ঘুমটা রাত্রীদের বায়োস্কপের মত।
অথবা জনাকীর্ণ দূপুরে সেঁটে থাকা স্বপ্নরোদ।

একটা বীজ খুব চেনা লাগা ধানের মত,
অন্য বীজটা হুতুমপেঁচার বাচ্ছা,
আমার ঘুমগুলো অচেনা একটা ধানরাত-
সবুজবাহী স্বপ্নের মতোন,
আর হুতুমপেঁচাকে ভয়াল ঘামের জননী বলে
ডেকেছি এক সময়।

একটা সময় ভুলেই গিয়েছিলাম প্রশ্নটাঃ
আমার বেহাত হওয়া ঘুমগুলো
পৌণে দু’টোর মধ্যেই ফিরে দেবে কিনা?
.
একটা নিশাচর ঘাম ভুল শুধরাতে আসেনা –
আসে ভয়কে লুকাতে।

আমার ঘুম
আমার ঘাম,
একাত্তরের দিনে ফিরে নেয়া
অন্য একাত্তর নয়তো?
.
লেখাঃ ৬/৪/২০১৭ইং