ফকির আবদুল মালেক এর সকল পোস্ট

ফকির আবদুল মালেক সম্পর্কে

কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখক।

আমি কিছু লিখি না

আমি কিছু লিখি না
কারো সাতে পাঁচে থাকি না
কোথায় কবে একেছে কার্টুন
কোথায় কবে লেগেছে আগুন
কে কোথায় হলো গুম
জুলুমের পরেছে ধুম
এসব আমি লিখি না
কারো সাতে পাঁচে থাকি না।

আমি আছি মহা ঝামেলায়
বাজারে গেলে টাকা ফুরায়
খাই বউয়ের ঝারি
এটা আনি সেটা ছাড়ি
স্কুলের স্যারেরা তাড়াতাড়ি যায় বাড়ি
পড়ালেখা টাকা খায় কোচিং-এ ছড়াছড়ি
হাসিগুলি হারিয়ে থাকে শুধু কান্না
মুখ রাখি লুকিয়ে অশ্রু দেখানো যায় না
কোথায় কবে একেছে কার্টুন
কোথায় কবে লেগেছে আগুন
এসব আমি লিখি না
কারোর সাতে পাঁচে থাকি না।

বলছে ছেলেরা লিখতে ছড়া
বইছে যত উন্নয়ন ধারা
সব বিবরণ দিতে হবে টুকি
না যেন থাকে কিছু ফাকি
লিখে দেই- আমার নামের দরকার নাই
ছাপোষা মানুষ আমি -তাই
নিজের লিখা অন্যের নামে চালাই
মিথ্যা বলব না, কিছু টুপাইস পাই
কে কোথায় হলো গুম
জুলুমে পড়েছে ধুম
এসব আমি লিখি না
কারোর সাতে পাঁচে থাকি না।

আমি কিছু লিখি না
কারো সাতে পাঁচে থাকি না
কোথায় কবে একেছে কার্টুন
কোথায় কবে লেগেছে আগুন
কে কোথায় হলো গুম
জুলুমের পরেছে ধুম
এসব আমি লিখি না
কারো সাতে পাঁচে থাকি না।

কোমল স্পর্শ

প্রতিদিন মানুষ মরছে।
এটা একটা শুরু।
প্রতিদিন মৃত্যু থেকে
নতুন বিধবা আর এতিম জন্ম লয়।
তারা হাত গুটিয়ে বসে নতুন জীবন নিয়ে ভাবে।

তারপর তারা গোরস্থানে যায়
এদের মধ্যে কেউ প্রথম বার।
তারা কাঁদতে ভয় পায়
কখনও না কাঁদতে।
কেউ কেউ গভীর সমবেদনা নিয়ে-
কি করতে হবে, কি দোয়া পড়তে হবে
কবরে মাটি দেয়ার নিয়ম, বলে দেয়।

তারা বাড়ি ফিরে আসে
সদ্য বিধবাটি তার বিছানার উপর বসে-
লোকেরা একে একে এসে তাকে সান্ত্বনা দেয়
কেউ তার হাতে রাখে হাত, কেউ জড়িয়ে ধরে।
সে সকলকে বলার মতো কথা খুঁজে পায়
এখানে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

তার হৃদয় চাইছে তারা সকলে চলে যাক।
সে কবরে ফিরে যেতে চায়, অসুস্থ ঘরটায়
কিম্বা হাসপাতালে। জানে এটা সম্ভব নয়।
কিন্তু এটা তার একমাত্র আশা ফিরে যাবে পিছনে
বেশি দূর নয়, একটা বিবাহানুষ্ঠানে, কোমল স্পর্শে।

আহা কি যে সুখ

বলেছিলো, কোন এক দেশ হলে হবে,
আমরা বললাম, বাংলাদেশটা লাগবে!
নিজ ভুমে পান্তাপুটি লুটিপুটি খাব
আপনার হাতে শাসনের স্বাদ নিব
চাষী কি শ্রমিক নাই কোন দুখ
হৃদয়ে বাংলার টান , আহা কি যে সুখ!

হৃদয় আমার ছাড়খার- খানখান
ধর্ম না জাতি নিব- টানাটানি উপাখ্যান
আজীবন ধর্ম আর বাংলা ভালোবাসি
তবে কেন দুইটাতে এত রেষারেষি?
ধার্মিক নাকি বাঙালি নাই কোন দুখ
হৃদয়ে ন্যায়ের টান, আহা কি যে সুখ!

একথা কেউ শুনছে নাকি একথা শুনবে
কাব্য চর্চা করে শেষে ধর্মটা হারাবে!
গজে উঠা গোড়াদের শুনি হাঁকডাক
শিল্পের টুঁটি চেপে কয়- চুপ থাক
ধর্ম কি শিল্প, অপসংস্কৃতি দূর হোক
হৃদয়ে আলোর টান, আহা কি যে সুখ!

কোথা থেকে গান আসে, কোথা থেকে সুর
কোন দুঃখ উৎসে জন্মে, যায় বহুদূর
আমি তাহা জানি নাকো, গাথি কথামালা
শব্দ-ভাস্কর্যে প্রাণ হয় যে উতলা
হাসি কি অশ্রুধারা, না বুঝি প্রিয় মুখ
ধর্ম শিল্পে মানুষ খুঁজি, আাহা কি যে সুখ!

এমন আলোর ঝিলিক

এমন আলোর ঝিকিল দেখে তোমাকে কে কোথায়
খুজে পাবে আর; ছিল বসে তালগাছের তলায়
পুকুর পাড়ে ক্ষুধায়, কেউ নেয়নি খবর তার
থুত্থুরে বৃদ্ধার, ছেলে মেয়ে নিয়ে আপনা সংসার
ঘর, আছে মহা ঝামেলায় এই বাংলার গ্রামে-
আমাকে পাঠালে চিঠি ভরে মহাপ্রকৃতির খামে;
আউশধানের চাল, পুটিমাছ জলপাই টকে
রেধে নিয়ে ঝোলের সাথে মসুরের ডালে- এ মাকে

আহা, অনেক যত্নে যেই খাওয়ালাম নিজ হাতে,
তৃপ্তির যে আলো চোখে মুখে উঠলো ফোটে চকিতে-
সেই আলোতে আমি তোমায় দেখলাম হে আল্লাহ
অজান্তে এসে ছিলে দৃষ্টিতে তুমি, সুবহানাল্লাহ!

যাই মসজিদে এবাদত করতে তোমার বটে
এমনি করে তো কখনও কেথাও উঠোনি ফোটে!
(সনেট লেখার প্রচেষ্টা চালালাম)

সবাই গেছে মিনারে

ekush-omor-480x250

অ ডেকে কয় আ’রে
কি করিস বাপুরে?
ক যাবে মিনারে
কে কারে শুনেরে!

ক গেছে বনেরে
খ শুধু ছুটেরে
ঞ লাইন ধরেরে
একুশে গাছের তলেরে।

র লালের রঙেরে
ভালোবেসে আহারে
বায়ান্ন ফুলের মালারে
একাত্তুরে পড়েরে।

চাচি চেচায়- জোরেরে
বউ অপিসে- গেছেরে
গার্মেন্টস লেবার বাহারে
শান্তিতে আছে- সুখেরে।

দেশ স্বাধীন আহারে
বাচ্চা বাড়ে আদরে
সবাই গেছে মিনারে
ভরে গেছে ফুলেরে।

পথের গান

যদি না পাও খুঁজে
আমি যে পথে চলিতাম
জানবে তুমি, আমি গিয়াছি সরে
জানবে হৃদয় খোলা রেখে
আমি শত মাইল দূরে হারালাম।

শত মাইল, শত মাইল, শত মাইল
শত শত মাইল দূর হতে সৌরভে
তুমি এই পথে গাওয়া গান শুনতে পাবে
শত মাইল দূর হতে আমাকে শুনতে পাবে।

প্রভু আমি এক, প্রভু আমি দুই
প্রভু আমি তিন, প্রভু আমি চার
প্রভু আমি পাঁচ শত মাইল দূরে
হারায়ে গিয়াছি অজানার ভীড়ে।

ঠিকানা হতে দূরে, ঠিকনা হতে দূরে
অজানার ভীড়ে,
প্রভু আমি পাঁচ শত মাইল দূরে
প্রভু আমি হাজারো মাইল দূরে!

নাই কোন বস্ত্র পরনে
নাই অর্থকরী আপন নামে
আমি ফিরব কিভাবে একমূখী পথে!
একমূখী পথে,
একমূখী পথে,
প্রভু, একমূখী এই পথে
যায় না ফিরা আপন নামের ঘাটে।
আপন নামের ঘাটে,
আপন জানা ঘাটে
আপন মানা ঘাটে,
কিছুটা কালের পরে
পাবে না খুঁজে কেউ আপনাকে এই তল্লাটে।

যদি না পাও খুঁজে
আমি যে পথে চলিতাম
জানবে আমি গিয়াছি সরে
শত শত মাইল দূর হতে তবু, সৌরভে
তুমি এই পথে গাওয়া গান শুনতে পাবে।

উদাস ফকির মানুষে আবার

কদমফুল বিলকুল খা খা রোদ্দুর
ছুটবি হেথা, থামবি কোথা, কদ্দূর?
-ওরে তুই ঠিকানা খুঁজিস কার!
পথ আছে যার শুধু চলবার
পথেই ছন্দ-আনন্দ, পথে সুরাসুর।

ঠিকানা একটা ছিল ছন দিয়ে ঘেরা
তাতে বেধেছিলাম ছোট একটা ঢেড়া
পিপিলিকা দল ছুটে যেত স্ত্রত
আকাবাকা পথটি হয়ে সাব্যস্থ
জাগে মায়ার বাঁধন, তাই ঘরহারা!

একবার বাঁধি ঘর নদী তীরাঞ্চল
আমি ছিলাম ডাঙায়, পাশে বহে জল
মাটির মায়ায় আমি থাকি স্থির
সাগর টানে নদী থাকে অস্থির
পরান ছুটে সদূরে- চক্ষু ছলোছল।

আমি উদাস ফকির মানুষে আবার
বেঁধেছি ঘর যত, ছেড়েছি বারবার
অগনিত অনন্ত অসীম মাঝে
মন ভরে ছুটেছি পথের খুঁজে
শুনি মানুষকেই মানুষে ফিরাবার।

প্রেম দাও

প্রেম দাও
……..

গতকাল রাতে কিছুতেই ঘুমাতে পারিনি,
কিছুক্ষণ পরপর নয়নের জলে বালিশ ভিজেছে।

হে প্রভু তুমিতো জানো,
সন্তানকে আমরা কতটা ভালোবাসি!
সন্তানের জন্মের যে রসায়ন তুমি আমাদের
শরীরে দিয়েছো
আমরা তার খবরও রাখি না
শুধু প্রেমোন্মাদনায় কাঁপি-
কেউ যদি কখনও এই সন্তানেরে অবহেলা করে,
তুমিতো জানো নিজেকে আঘাতের চেয়ে
বহুগুন ব্যাথা বাজে হৃদয়ে।

হে প্রভু,
মানুষতো তোমারই সৃষ্টি,
তোমারই অনুগ্রহে অস্তিত্বে আছি
শুনেছি মানুষ তোমার সৃষ্টিশীলতার সেরা নৈপুণ্যে গড়া।
আমাকে কেউ ঘৃণাভরে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে
তুমিও কি কষ্ট পাও না, হে মহান স্রষ্টা!
আমি তা জানি না, করতে পারি না অনুভব!

কিন্তু গতকাল রাতে, প্রভু তুমিতো জানো
একফোঁটা ঘুমাতে পারিনি
যে সৃষ্টিশীলতা তুমি আমার মননে দিয়েছো
আমি শব্দের নন্দিত খাচায়
সুন্দরের প্রতিমূর্তি করে সাজাই কেবল
তাকেই ছুড়ে দিল মতবাদের ক্রোধাগ্নি শিখায়
চরম মূর্খতায় দাঁড় করাল তোমার বিপরীত উচ্চারণে-

প্রভু, ঘৃণা নয় প্রেম দাও
তোমার ক্রোধের উপর
তোমার রহম যে হয়ে আছে বিজয়ী হয়ে।

ধনী

ধনী
ফকির আবদুল মালেক
………..

একসাথে কান্নার আনন্দ আছে।
একসাথে সুখ ভাগাভাগি করে নেবার আনন্দ আছে।
একসাথে বিশ্বাস ভাগাভাগি করার আনন্দ আছে।
একসাথে আনন্দ ভাগাভাগির আনন্দ আছে।

একসাথে ঈশ্বরকে ভাগাভাগি করে নেবার
আনন্দ আছে- খুঁজি না!
গরীবের ঈশ্বর যেভাবে উপাসনা পায়
ধনীর ঈশ্বর সেভাবে পায় না!
গরীর যেভাবে কাঁদে
ধনী সেভাবে কাঁদে না।

বড় সাধ জাগে,
গরীবের মতো করে ঈশ্বরকে ডাকি।
ধনীদের মতো করে ঈশ্বরকে চিনি।
ফকিহ্’দের মতো করে ঈশ্বরকে খুঁজি ।

আমিতো ছাড়ি নাই ঘর
তবু ঘরকে করেছি পর
নিজ নামে আছে যে সম্পদ ক্ষমতায়
মন থেকে তারে দিয়াছি বিদায়।

গরীবের মত করে কাঁদতে চাহি
কাঁদতে পারি না
তবে কি গরীবের মতো করে
ঈশ্বরকে ডাকতে পারি না!

লোকে আমায় ফকির কহে
আমিতো গরীব নই,
সবকিছু ছেড়েছি তাই
ধনী হয়ে বেঁচে রই!

জাগো চরবাসী জাগো

জাগো চরবাসী জাগো
……….

প্রতিদিন হতাশার কালো চিল আমার হৃদয়ে ডানা ঝাপটে চলে যায়। কিন্তু আমাকে ধরতে পারে না।

একদিন ছিল।
কঠিন সে দিন।
মঞ্চে স্বরচিত কবিতা আবৃতি করতে হবে বলে ছুটে যেতাম ধ্যাধধেরে ছ্যাঙার চরে।
গিয়ে দেখতাম যে ছেলেটা আমার কবিতার ভক্ত সে আয়োজকদের সাথে ঝগড়া করে ঢাকা চলে গেছে।
রাস্তায় ছুটে বেড়াতাম।
স্থানীয় ডাক্তার, উকিল, শিক্ষক আর সাংস্কৃতিক কর্মীদের দরজায় দরজায় ধরনা দিতাম।
যখন দেখতাম তারা কেউ চিনতেই পারেনি,
তখন হতাশার অন্ধকার গ্রাস করতে চাইত।
ঠিক সেইসময়
আমার বুকের ভিতরের ঈগলটা জেগে উঠতো,
আমি আকাশে আকাশে উড়াল দিতাম,
সাদা কাশবনের মাঝে অনন্য সুন্দরের দিকে
নিচে তাকিয়ে দেখতাম
ধূর্ত শিয়াল একঝাঁক হাসকে
তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে চরের পাড় ঘেঁষে।
হাসগুলি ডানা ঝাপটে উড়াল দিতো।
তাই দেখে জেগে উঠতো চরবাসী।
আমার ঈগল বুকে জেগে উঠতো নতুন একটা কবিতা।
জাগো চরবাসী জাগো।
জাগো চরবাসী জাগো।

তখন আমি ধ্যাধধেরে ছ্যাঙার চর হতে নতুন কবিতা নিয়ে ভক্ত ছেলেটাকে আবৃত্তি করে শুনাব বলে
সারা ঢাকা চষে বেড়াই।
প্রতিদিন হতাশার কালো চিল আমার হৃদয়ে ডানা ঝাপটে চলে যায়। কিন্তু আমাকে ধরতে পারে না।

বিজয়

বিজয়

ইস্পাতের চিল উড়ে গেল ছুঁই-ছুঁই, তালগাছটার ঠিক উপর দিয়ে
দু’টা চক্কর দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ছুটে গেল দানব আওয়াজ ছড়িয়ে
এবং বদলে গেল দৃশ্যপট-
উঠানে বিছানো ধান-খাওয়া মগ্ন কাক কা কা রবে উড়ে গেল এলোপাথাড়ি
লড়াইরত বিড়াল দু’টি ছুটে গেল পাশাপাশি একই নিরুদ্দেশে
এবং গরু, বাছুর, ছাগল আর মানুষের পাল দিকভ্রান্ত ছোটাছুটি
শুরু করল অত্যাসন্ন রক্তপ্লাবন আশঙ্কায়-

এবং রেল লাইন, কালভার্ট, সেনাক্যাম্প পরিণত হলো ধ্বংসস্তুপে
এবং দুই দশকব্যাপী ক্ষমতার স্বাদে অভ্যস্ত, গত নয় মাসে দুর্দান্ত ক্ষমতাধর
ফাইজুদ্দি হাজি মুখ থুবরে পড়ে রইল বড় রাস্তার পাশের বটগাছের তলায়
এবং অনিয়মিত বাহিনীর ভালোবাসা-ঘৃণা-উল্লাস-উত্তাপে
পিছু হঁটা পিশাচ আত্মসমার্পণের জন্য খুঁজে ফিরল নিয়মিত বাহিনী
এবং তখনো আমি দৃশ্যপটে আসিনি
আমার আগমনের পূর্ণ প্রস্তুতি তখনো সম্পন্ন হয়নি
আমি তখনো মায়ের দেহের সাথে একীভূত।

ভাষাগত সংঘাতে জমাটবাঁধা রক্ত থেকে আমার সূচনা
আত্মস্বীকৃতির অভিপ্রায়ে মাংসপিন্ডে রূপান্তর
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রাম’
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’
এবং অসমাপ্ত প্রস্তুতিপর্ব
এবং প্রসববেদনা

আমি রক্তাক্ত বেরিয়ে আসি মায়ের জড়ায়ু ছেড়ে।

সুন্দরীর নারীবেলা

শীত কাল।
ঘন কুয়শায় চলমান দৃশ্যাবলী দূরে অদৃশ্য
চরাচরে নেমে আসে মৃত্যুর আগমনী সংকেত
আমার মন বড় আনচান করে ওঠে
কবিতারা দূরে চলে যায় হৃদয় থেকে-
অনেক গল্প এসে কিলবিল করতে থাকে
মাথার ভিতরে।

সে অনেক দিন আগের কথা।

গ্রীক পুরানের মৃত্যু আর অন্ধকারের দেবতা হেডস
প্রেমে পরল!
কি না করল সে!
এই পৃথিবীর অনুরূপ আর একটি
পৃথিবী সৃষ্টি করল, সবকিছু একই রকম,
শুধু তৃণভূমি তলদেশে
একটা বিছানা রেখে দিল।

অন্ধকার রাজ্যে এনে জুড়ে দিল সূর্যের আলো
এই অপরূপ সুন্দরী আলোর জগত থেকে
গহীন অন্ধকারে তীব্রতা সহ্য করতে পারবে না
সে ভাবল-

অতঃপর নড়ে ওঠা পাতাদের ছায়া দিয়ে
ঢেকে দিল সারা পৃথিবী। শুধু চাঁদ তারা।
এরপর না চাঁদ- না তারা। যেন সুন্দরী আস্তে আস্তে
অন্ধকার সহ্য করে নিতে পারে।

পৃথিবীর অনুরূপ হলো ঠিকই
কিন্তু ভালোবাসা ফুটে উঠলো না।
অথচ সবাইতো ভালোবাসা চায়!
বহু বছর অপেক্ষা করলো সে
একটি পৃথিবী গড়তে, জল জঙ্গলে
সুন্দরীকে পর্যবেক্ষনে রাখলো।
সুন্দরী, গন্ধ খুজে, খাবার চায়
সে ভাবল তবে গন্ধ দূরে থাক, ক্ষুধা দূরে যাক।

রাতে প্রেমময় শরীর চায় প্রত্যেকে
শুনতে চায় গাঢ় নিশ্বাস আর গোঙ্গানি
একজন অন্যজনের গহীন গভীরে চলে যেতে চায়-
মৃত্যু আর অন্ধকারের দেবতা
তার পৃথিবীর অনুরূপে এসব গড়তে থাকল।
স্বাদ আর খাবারের কথা বেমালুম ভুলে গেল!
অপরাধবোধ? দ্বন্ধ? পাশবিকতা ?
এসব বিষয় সে কল্পনা করতে পারল না;
কোন গভীর প্রেমিক এসব নিয়ে ভাববার অবসর পায় না।

পৃথবীর অনুরূপ সৃষ্টির পর
একে কি নামে ডাকা যায়?
প্রথমে সে ভাবল, এটার নাম হোক নতুন নরক,
তারপর: বাগান
অবশেষে সে এর নাম দিল: সুন্দরীর নারীবেলা।

একটা মৃদুমন্দ আলো তৃণভূমিতে রাখা
বিছানার উপর এসে পড়ল।
সুন্দরীকে বাহুবন্ধী করে রাখল সে।
বলতে চাইল, আমি ভালোবাসি তোমায়,
কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না

কিন্তু মৃত্যু আর অন্ধকারের দেবতা বুঝে গেল-
মিথ্যা। এখানে প্রত্যেকে ক্ষতিতে ডুবন্ত,
ভালোবাসা কাউকে ভাসিয়ে রাখতে পারে না।
সে বলল,
বরং লড়তে লড়তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়
তখন কোন কিছুই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।
এই বরং অধিক প্রশংসনীয়-
মৃত্যু জগতের শুরু, অধিকতর সত্য।

শীত কাল।
ঘন কুয়শায় চলমান দৃশ্যাবলী দূরে অদৃশ্য
চরাচরে নেমে আসে মৃত্যুর আগমনী সংকেত
আমার মন বড় আনচান করে ওঠে
কবিতারা দূরে চলে যায় হৃদয় থেকে-
অনেক গল্প এসে কিলবিল করতে থাকে
মাথার ভিতরে।

যাকে ছুঁয়েছি, সে কোথাও যেতে পারেনি

ওখানে উৎসব ছিল।
নানা মনি-মুক্তা চাকচিক্য ভরপুর মনোহরি আমোদ,
মানুষের উচ্চতর আদব লেবাস ঐতিহ্য,
অহংকারে উজ্জ্বল বিজয়ী মুখাবয়ব সূর্যশিখার মত
প্রজ্বলিত ছিল-
আমাকে কেউ ডাকেনি, আমি যাইনি।

উৎসবে মাদকতা ছিল।
বিস্ময়ে চোখ জুড়ানো অপার্থিব জোছনার পরিপূর্ণ
জোয়ারে- বাদুরের উড়ে বেড়ানো ছোঁয়াহীন কম্পন,
থরো থরো নিশীথের বুকে করে গেছে করাঘাত,
পৃথিবী রাঙানো ছিল ময়াবী মোহময় রূপে।
আমাকে কেউ ডাকেনি, আমি যাইনি।

আমাকে কালজয়ী বধিরতা চেপে ধরেছিল,
আমাকে কালজয়ী অন্ধত্ব চেপে ধরেছিল,
আমি শুধু ভালোবাসার ক্রমবর্ধমান সঞ্চালনকে
শব্দ দিয়ে স্পর্শ করে গেছি।
আমাকে কেউ ডাকেনি, আমি যাইনি।

যাকে ছুঁয়েছি, সে কোথাও যেতে পারেনি।

নির্ভরতা

ওখানে অন্যেরা ছিল; তাদের শরীরে
আমার প্রস্তুতি পর্ব-
আমি দেখতে এসেছি, যেমন তারা।

শুরুতে কান্নার বাষ্প উড়ে।
পৃথিবীর গহীনে অনেক বেদনা
নিরাকার শোক
ক্ষুধা যার শারীরিক ভাষা।

এবং ক্যাম্পাসে, ফুলে ফুলে ঘুষাঘুষি
সৌরভের এলোপাতাড়ি ছড়াছড়ি,
অতঃপর সংসারের ভয়ানক আত্মত্যাগের সূচনা
নর-নারীর দৈহিক বৈধতা
একটা সোনালী আলোর পথ বেয়ে
সবুজ পাহাড়ের শেষ চূড়ায় আরোহন

বলেছিলাম, হাতে রাখো হাত।
সে অনেক কাল আগের কথা।
আমার হাত তোমাকে বিরক্ত না করে!

স্পর্ধা

সন্ধ্যা এলো নীড়ে ফেরা পাখির পাখায় ভর করে
নীড় ছোট আকাশতো বড়- ভুলে গিয়ে, ইদুরের মতন
গর্তে ঢুকে যায়, অথচ ছিল তাদের ঘিরে
বিশালতা আর উদারতা, পিছুটান এমনি হৃদয় ক্ষরণ !
আমিও এইখানে বটগাছটার নিচে বসে থাকি সন্ধ্যায়
তখন কৃষাণ বাড়ি ফিরে নদীটির তীর দিয়ে হেটে
তখন আকাশ লাল, আমি আসি এখানে স্মৃতির ব্যাথায়
এইখানে সুন্দরী বসেছিল পাশে তারপর গিয়েছিল ছুটে।

বৃহৎ কাজ বড় দায়িত্ব সংসার সব ছেড়ে এইখানে এসে
পড়ন্ত বেলায় চোখ বুজলে সুন্দরী, চোখ খুললে নাই-
বসে থাকি মরুচিকায়! জানতে চাও কোন সুন্দরী সে?
আমাকে দিয়েছিল স্পর্ধা প্রথম সৃষ্টির বেহেশতেই।

তারপর পৃথ্বী সংসার হলো ছাড়খাড় রাজ্য জয় রাজ্য ক্ষয়
অসীম সাহস দুরন্ত আবেগ, পুড়ে ছাই হলো কত যে ট্রয়!