ফকির আবদুল মালেক এর সকল পোস্ট

ফকির আবদুল মালেক সম্পর্কে

কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখক।

শব্দ

পাখির কলতান শুনি,
বাতাসে নড়ে উঠা ধানগাছের মর্মস্পর্শী আওয়াজ,
আগুনের দাউ দাউ আস্ফালন,
পাহালে পাটখড়ির পট পট ধ্বনি,
ভালবাসা প্রকাশের শরীর সঞ্চালন শব্দ শুনি,
নবজাতকের ক্রন্দন শুনি-

সকল শব্দ একত্রে চলমান, কিছু বিস্ফোরিত,
কখনও স্থবির, কখনও প্রবহমান,
শহরের শব্দ শুনি- গ্রাম্য আবহের শব্দ, দিন রাত্রির,
অল্পবয়সী বাচালের প্রিয় অযথা সংলাপ,
খাওয়ার সময়ের কর্মজীবি লোকের অট্টহাসি,
শত্রুতার কোলাহল, রোগীর বিলাপ,
জজের টেবিলে হাতুড়ী পিটানোর শব্দ,
তার মলিন পাণ্ডুবর্ণ ঠোঁটে উচ্চারিত
মৃত্যুদন্ডের ঘোষনা শুনি-

ঘাটে জাহাজ ভিড়ানোর, নোঙর ফেলার শব্দ শুনি
ঢং ঢং বেজে উঠা ঘন্টা, আগুনের ক্রন্দন শুনি
ট্রেনের হুইশালের শব্দ, বাস ট্রাকের হর্ণের শব্দ
যন্ত্র ঘর্ষণের ঝিক ঝিক, যাত্রীর হাকডাক,
ট্রাফিকের হুইশাল শুনি-

বেহালার সূর শুনি
গিটার, তবলার ঐক্যতান
গণমানুষের কোরাস শুনি,
অসংখ্য মানুষের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শুনি।

মাঝে মাঝে ক্লাসিক সংগীত শুনি
প্রশিক্ষিত কণ্ঠ নিয়ে অপরূপ রমনী
শৈল্পিক উচ্চারণে মাতিয়ে তুলে
বাদকদল উড়িয়ে নিয়ে যায়,
যেন ঘুরপাক খেতে থাকি শনির বলয়ে,
পাল তোলা নৌকার মত দুলতে থাকি,
নগ্ন পায়ে তাদের বাদ্যতরঙ্গে নেচে উঠি-
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে! উড়নচন্ডী হয়ে যাই!

শুধু তোমর মুখ থেকে
‘ভালোবাসি তোমায়’ শব্দ দুটি
কতদিন শুনি না
কতদিন শুনি না!

আনন্দ বিভা

হৃদয় গোরস্থানে ওঠলো বেজে ইস্রাফিল এর ফু’ধ্বনি
পর্দার অন্তরালে সুপ্ত ছিল যাহা অনুভব হয়ে
শব্দের রূপ নিয়ে খিল খিল করে ওঠলো হেসে-
তাড়িয়ে দিতে চেয়েছি,
দূর দূর করে দুরে রাখতে চেয়েছি যতবার
ওরা আমার সমস্ত কোল জুড়ে, বুক জুড়ে,
কাদ বেয়ে মাথার ভিতরে লাফাতে লাগল।

সবচেয়ে বিস্মিত করতো নিশুতি রাতের তারা
তাদের সত্যিকার নাম জানা ছিল না আমার
তবে সবাইকে চিনতাম আমি, আমার নিজস্ব নামে।
কোন ঋতুতে কোন দিকে কোন তারা উদিত হয় সব
বলে দিতে পারি, আজও।
এমন সময় যেত চারতলা ছাদে শুয়ে শুয়ে
তারাদের উদয়স্ত দেখতাম।
কোন কোন মধ্যরাতে যখন পৃথিবী ঘুমে বিভোর
আমার আর তারাদের মাঝে কথা হতো-

সুন্দরী চুপি চুপি আসত তাদের বাড়ীর ছাদে
দুটি পশাপাশি, ও বাড়ীর উপর দিয়ে
বইয়ে যাওয়া হাওয়া এ বাড়ীতে আছরে পড়ে,
আমি আকাশের সাথে কথা বলতে বলতে
সুন্দরীর গায়ে গন্ধ পেতাম,
কানে আসত ভেসে চেপে রাখা
খিল খিল মাখা ফিস ফিস ধ্বনি
-`ওরে পাগলা, শুয়ে শুয়ে তারা গুন।’

না শুনার ভান করতাম ।
‘পাগলা, ও পাগলা’- চকিত তাকাতাম পাশ ফিরে।
কিছু না, সুন্দরীর চোখে মুখে যে আনন্দ বিভা
ছড়িয়ে পড়ত দেখতাম তা ছড়িয়ে পরেছে
সমস্ত আকাশ জুড়ে তারাদের বিন্যাসে বিন্যাসে।

ও নিশুতি রাতের তারা
ও অনন্ত অনাদি আকাশ
আমিতো চেয়েছি ভুলে যেতে,
রেখেছি সেই দ্যোতি বুকের গভীরে যতন করে
কেন তারে জাগালে আজ রাতে-
আজো কেন রাখলে ধরে
সামান্য খুশির ঝিলিক তোমার অলীক বিন্যাসে?
এ কোন অত্যাচারে স্মৃতির অতল গহ্বরে
হৃদয় গোরস্থানে ওঠলো বেজে ইস্রাফিল এর ফু’ধ্বনি
পর্দার অন্তরালে সুপ্ত ছিল যাহা অনুভব হয়ে
শব্দের রূপ নিয়ে খিল খিল করে ওঠলো হেসে-
তাড়িয়ে দিতে চেয়েছি,
দূর দূর করে দুরে রাখতে চেয়েছি যতবার
ওরা আমার সমস্ত কোল জুড়ে, বুক জুড়ে,
কাদ বেয়ে মাথার ভিতরে লাফাতে লাগল।

আদিম উৎসব

এক.
কে যায় সেখানে? নির্বোধ, দুর্বোধ্য, নিথর;
হারিয়ে ফেলেছে দক্ষতা?
ভোজ উৎসব হতে শক্তি রূপান্তরে,
হারিয়ে ফেলেছে সর্ব কর্মসঞ্চালন ক্ষমতা?
সে আজ মৃত!

জীবিত বা মৃত যে কোন অবস্থায়
মানুষের প্রকৃত অবস্থা কি?
আমি আমার কে? তুমি তোমার?
তুমি তো জানো, মৃত্যু কেন্দ্রিক
জীবন যাপনের যে পদ্ধতিগুলি প্রচলিত
আমি তাতে পুরোপুরি অভ্যস্থ নই,
মানুষতো মৃত্যুতে যে অর্থহীনতা জন্ম লয়
তার শূন্যতায় ঈশ্বরকে ডেকে আনে,
অত:পর উপাসনার পদ্ধতির পার্থক্যে
তারা পরস্পর আলাদা হয়ে যায়।
আমি নিজেকে আচার অনুষ্ঠানে পূর্ণ
কতগুলি মন্ত্র উচ্চারণে সীমাবদ্ধ রাখব!

আমি জানি আমি অস্তিত্ববান আর শব্দময়,
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু আমার দিকে
সাংকেতিক বাণী পাঠায়,
আমি শুধু জানি আমাকে
সেইসব বাণীকে লিপিবদ্ধ করতে হবে,
করে তুলতে হবে শব্দময়।

দুই.
আমার কবিতাগুলি প্রেমের উচ্চারণ,
সৃষ্টিশীলতার অনন্য অনুভব,
বস্তুকে আত্মায় রূপদানের অনন্য মাধ্যম,
প্রেমের চেয়ে মাধুর্যময়
আর কোন চিত্রকর্ম নেই অনুভব ক্যানভাসে।

কে সে? রাজ্যজয় করে উঠেছে ক্ষমতারশীর্ষে?
অর্থের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে গায় সফলতার গান?
আমি তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না কখনও,
আমি তাকে সুশাসনের আহ্বান জানাই,
কি হাস্যকর সে আমাকে আদেশ দেয়,
কহে- তাকে বলি মহামান্য!
তার সম্মান তো আলাদা কোন নয়
একজন মানুষ থেকে!

এইসব কোলাহল আর বেদনাহত যন্ত্রণাকে
পাশ ফিরিয়ে তোমার কাছে ফিরে ফিরে আসি,
হে অমিতব্যয়ী প্রেমিকা আমার,
সব কিছু মুছে যাবে, থেমে যাবে কোলাহল
এসো, জেগে থাকি যতক্ষণ জেগে থাকা যায়
সৃষ্টিশীলতার আদিম উৎসবে।

তোমায় আমি চেয়েছিলাম সুন্দরী

তখন উঠেছিল অষ্টাদশীর চাঁদ
দেখেছিলাম পঞ্চম তলার ছাদ
তুমি ছিলে নিরিবিলি ছাদের উপর একা
ভুতের মতো হঠাৎ দিলেম দেখা
খল নায়ক নয়, এন্টি হিরো বলতে পারো, সরি
তোমায় আমি চেয়েছিলেম সুন্দরী!

জোর করে ধরেছিলেম তোমার নরম হাত
ভেঙ্গে ছিলো জমে থাকা না বলা কথার বাঁধ
বলেছিলেম তোমায় আমি বড্ড ভালবাসি
হেসেছিলে তাচ্ছিল্যের ক্রর এক হাসি
খল নায়ক নয়, এন্টি হিরো বলতে পারো, সরি
তোমায় আমি চেয়েছিলেম সুন্দরী!

আমার ছিল উরণচণ্ডী জট বাধানো চুল
তাতেই তোমার হয়েছিল মস্ত একটু ভুল
বলেছিলে আয়নায় আপন মুখ দেখতে
তুমি যদি চান্দ্রাবরণ হৃদয় রূপটা বুঝতে!
খল নায়ক নয়, এন্টি হিরো বলতে পারো, সরি
তোমায় আমি চেয়েছিলাম সুন্দরী!

কসম খোদার তুমি আমার সুন্দরী

দম মারো দম, তখন টানি হরদম, জয়বাবা ফেলুনাথ
আমার শরৎ সাদা মেঘলা আকাশে তুমি পুর্ণিমার চাঁদ
চার তলার ছাদ বরাবর তোমার পঞ্চম তলার বারান্দা
চোখর হাসির বাধ ভাঙ্গে, হাতের আঙুলে করি ইশারা
মন যদি মন ছুয়েছে, প্রেম সাগরে ডুবতে কেন দেরী
তেমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী!

নির্ঘুম সারা রাত, এক শব্দ লিখে দুই শব্দ কাটি
একে একে লিখে ফেললাম চার পাতার চিঠি
সেই চিঠিখানি বারান্দাতে যেই ছুড়েছি
বুঝতে পরলাম প্রথম দিনেই বড় ভুল যে করেছি
চিঠি পরেছে তোমার মায়ের হাতে! থোরা কেয়ার করি-
তোমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী।

তোমার বড় ভাই, মস্তানীতে জুড়ি নাই, কাঁপে লোকে
বীর পুরুষের কলিজা, জুটল সহসা, নিরিহ এই বুকে
গাছে বেধে, সকলে একসাথে, মারল কিল-কুনি-ঘুষি
রক্তমাখা ঠোটে, বলছি অকপটে, তবু ভালোবাসি!
মার খেয়েছি বেশ করেছি, যাইনি তোমায় ছাড়ি
তোমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী।

শরীর

এক.

নাফ নদীডা বঙ্গ সাগরে মিইশা গ্যাছে।
বার্মা রাজ্যের অনেকগুলান
মরা মানুষ ভাইসা আইছে।
মাইয়াডা সাগর দিয়া ভাসতে ভাসতে চইলা আইছে
কেউ জানে না কেমনে আইছে!
সবায় জানে ভাইসা আইছে।
পরথম তারে দ্যাখা গেছে উবুত হইয়া হুইয়া আছে।
জটল্লা বাইন্দা হগলতে দেখতে লাগচে।
একডা মাইয়া উবুত হইয়া হুইয়া আছে।
মাইয়াডা ভাইসা আইছে।
হগলতে কয় মাইয়াডা বাইচা আছে!
কিছুপর মাইয়াডা চোখ মেইল্লা চাইয়া রইছে।

দুই.

ভাষাডা বাংলামতো কিছু বুঝা যাইছে।
অল্প পরে অবাক হইছে ,
মাইয়াডা সুইন্দর কইরা
কোরানডা তোলোয়াত করতে লাগছে।
এতিম খানায় তার ঠাই হইছে।
সকাল বিকাল খাইবার পাইছে।
ছোড ছোড পোলাপান তার কাছে কায়দা
পড়া করতে লাগছে।
মাঝে মাঝে সাগর পারে ঘুরতে গেছে,
ঝিনুক শামুক কুড়াইয়াছে।
বেশতো দিন কাটিছে,
মাইয়াডার একটা ঠাই হইছে।

তিন.

সইন্ধাবেলায় অনেকগুলা জোয়ান পোলা
সাগর পারে ঘুরতে লাগছেে
একটা পোলা আন্ধাইরে
মাইয়াডারে কাছে ডাইকা লইছে
ঝিনুক শামুক দামাদামি করতে লাগছে,
এক ফাকে তার বুকের মাঝে হাত দিয়াছে।
কতবেল সাইজের ফুইলা উঠা
ছোড ছোড মাংসগুলায় আদর দিছে, আদর দিছে।
মাইয়াডা কাইপা উঠছে, মাইয়াডা কাইপা উঠছে।
ছেলেডা জিগাইছে, কেমন লাগছে? কেমন লাগছে?
মজা লাগচে, মজা লাগছে।
মজা লাগচে, মজা লাগছে।
ঝিনুকের মালা না নিয়া কই যাইতে লাগছে?
বিশ টাহা তার দাম আছে।
ছেলেডা একশ টাকা গুইজা দিছে।
বুকের মাঝে আদর দিলে তার দাম আছে,
মাইয়াডা বুইজা গেছে।

চার.

সকাল বেলা কুরানডা পইড়া মাইয়াডা
যেই বাইরে আইতে লাগছে।
পিছন থেইকা হুজুর মিঞা যাইতা ধরছে।
বুকের মাঝে হাত পড়েছে।
মাইডা বুঝতে পারছে। অবাক হইয়া চাইয়া রইছে।
হুজুর মিঞা হাসতে হাসতে
আরও জোরে চাইপা ধরছে।
জিগায়তাছে, কেমন লাগছে? কেমন লাগছে?
মজা লাগচে, মজা লাগছে।
মজা লাগচে, মজা লাগছে।
বুকের মাঝে আদর দিলে তার দাম আছে,
মাইয়াডা চাইয়া রইছে।
গরিব মানুষ, আমার একটু শখ জাগছে-
বইলা হুজুর চইলা যাইতে গালছে।
বুকের মাঝে আদর দিলে তার দাম আছে,
মাইয়াডা পিছন পিছন চইলা আইছে।

পাঁচ.

পরের দিন বিয়ানে মাইয়াডা হুজুররে খুঁজতে লাগছে
পরের দিন দুপুরে হগলতে হুজুররে খুঁজতে লাগছে
পরের দিন রাইতে হুজুর কোথাও নাই
হগলে জাইনা গেছে।
আদর দিয়া হুজুর মিঞা কোথায় যেন চইলা গ্যাছে,
সাগর দিয়া ভাইসা গেছে।

মুখোমুখি

আমার একজন বন্ধু আছে,
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে উপরে কেউ আছে।
যদিও নয় বোকার হদ্দ
যা কিছু জানে শুষ্কতা আর আদ্র
সবকিছু শেষ পর্যন্ত আকাশে মিলায়।
ভাবে, সবকিছু কেউ একজন সমন্বয় করে যায়।

চিতার মুখে হরিণ শাবক রক্তাক্ত করে অবলীলায়
ঘুরতে গিয়ে দেখি, টানতে টানতে জঙ্গলে চলে যায়।
আমি সৌন্দর্য খুঁজি, মিশিয়ে সৃষ্টিশীল কল্পনা
শব্দতুলিতে আকি সুন্দরের চিত্রকল্প আলপনা,
আর একটা ভীতুর ডিম- যখন সামনে আসে বিপর্যয়
এরূপ বীভৎস দৃশ্য, দ্রুত আমার চোখ বন্ধ হয়!
আমার বন্ধুটির সেই ক্ষমতা আছে প্রকৃতির এইসব
ক্রুদ্ধতা রুক্ষতার ঘটনা শান্তচিত্তে করে অনুভব।

বন্ধু বলে, এই যে চোখ বন্ধ করা, বাস্তবতা পরিহার
বলে, আমি সেই রুগীর মতো যে চোখ অন্ধকার
করতে মাথা ঢেকে রাখে বালিশে, ভাবে মাথা ব্যাথা
উপশম। বলে, আলোকিত জীবন কথোকথা-
বলে, নিমগ্ন কাটিও না কাল, হও মুখোমুখি
দেখো কিভাবে মৃত্যু মাঝে জীবন দেয় উঁকি!

বন্ধু আমাকে তিরস্কার করে।
আমরা হাঁটছি একই পথ ধরে।
সে বলছিল যখন তুমি পৃথিবীকে ভালোবাসবে
একটা স্বর্গীয় সঙ্গীত শুনতে পাবে।
বলে, খুঁজে দেখ। খুঁজি, পাই না তো কিছুই
কেবল মেঘ দেখি, বৃষ্টি, দেখি বাণিজ্যের ছড়াছড়ি।

রাস্তার ধারে বসে আমরা সূর্যাস্ত দেখি
সময় যায়, নিরবতা ভেঙ্গে দেয় নানা সুুুরের পাখি
এইখানে আমরা বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করতে চাই
মৃত্যু নির্জনতা সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাই-
আমার বন্ধু মৃত হরিণের বেদনার সাথে চিতার
উল্লাসকে জুড়ে দেয়, প্রচেষ্টা পরিপূর্ণ চিত্র আকার
শেষ যেখানে শুরুর আহার।
আমরা শান্ত এখানে, নিরব, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
হঠাৎ রাস্তা অন্ধকার, শীতল হাওয়া দ্রুত বেগবান
এখানে সেখানে শিলাগুলি চকচকে উজ্জ্বল
আমরা ছুঁয়েছিলাম কিছুকাল ভালোবাসা কোলাহল।

প্রতিটি ভালোবাসা দিন শেষে ভালোবাসা হয়ে জন্ম নেয়।

(লেখাটি কিছুদিন আগে পোষ্ট করেছিলাম, কিন্তু কি কারণে জানি না লেখাটি ওপেন হয় না। আবার দিলাম, নিজের সংরক্ষণের জন্য)

সাহস

তোমার বাবার রাগী নয়ন পানে যখন আমি চাই
আমার কাছে মনে হইত হায় এই দুনিয়াতে নাই
সালাম দিয়া দেখি- পান চিবাইয়া যায়
চেয়ারমেন সাব নরম হইয়া মিটমিটিয়া চায়
ভাবি, ডরাইলেরে ডর, ওরে বন্ধু-ডরাইলেই ডর
সাহস কইরা এগিয়ে না এলে তুমি হবা পর!

তোমার হাতে হাতটা প্রথম যেদিন রাখি
পায়ের কাঁপন থামাইতে চুপটি করে থাকি
এখন আমার সাহস কত চিবুক ছুঁয়ে দেই
তোমার হাসির ঝিলিকে আমি আমার মাঝে নেই
ভাবি, ডরাইলেরে ডর, ওরে বন্ধু ডরাইলেই ডর
সাহস কইরা এগিয়ে না এলে তুমি হবা পর।

তোমায় আমি বিয়া করুম কাজী অফিস চলো
খুশিতে দেখি চোখটি তোমার করছে ছলো ছলো
প্রেমের কাঙাল দু’জনাতে যেন একটি জান
স্রোতের নদী পারি দিব আমরা দুইটি প্রাণ
ডরাইলেরে ডর, ওরে বন্ধু ডরাইলেই ডর
সাহস কইরা এলে না তাই আমি হলাম পর।

মুখোমুখি

আমার একজন বন্ধু আছে,
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে উপরে কেউ আছে।
যদিও নয় বোকার হদ্দ
যা কিছু জানে শুষ্কতা আর আদ্র
সবকিছু শেষ পর্যন্ত আকাশে মিলায়।
ভাবে, সবকিছু কেউ একজন সমন্বয় করে যায়।

চিতার মুখে হরিণ শাবক রক্তাক্ত করে অবলীলায়
ঘুরতে গিয়ে দেখি, টানতে টানতে জঙ্গলে চলে যায়।
আমি চিরকাল সৌন্দর্য খুঁজি, মিশিয়ে সৃষ্টিশীল কল্পনা
শব্দতুলিতে আকি সুন্দরের নানা চিত্রকল্প আলপনা,
আর একটা ভীতুর ডিম- যখন সামনে আসে বিপর্যয়
দেখি এরূপ বীভৎস দৃশ্য, দ্রুত আমার চোখ বন্ধ হয়!
আমার বন্ধুটির সেই ক্ষমতা আছে প্রকৃতির এইসব
ক্রুদ্ধতা আর রুক্ষতার ঘটনা শান্তচিত্তে করে অনুভব।

বন্ধু বলে, এই যে চোখ বন্ধ করা তা বাস্তবতা পরিহার
সে বলে, আমি সেই রুগীর মতো যে চোখ অন্ধকার
করতে মাথা ঢেকে রাখে বালিশে, ভাবে হবে মাথা ব্যাথা
উপশম। আমাকে বলে, আলোকিত জীবন কথোকথা-
বলে, নিমগ্ন কাটিও না কাল, হও সাহসী হও মুখোমুখি
দেখো কিভাবে মৃত্যু মাঝে জীবন দেয় উঁকি!

বন্ধু  আমাকে তিরস্কার করে।
আমরা হাঁটছি একই পথ ধরে।
সে বলছিল যখন তুমি পৃথিবীকে ভালোবাসবে
একটা স্বর্গীয় সঙ্গীত শুনতে পাবে।
বলে, খুঁজে দেখ। খুঁজি, পাই না তো কিছুই
কেবল মেঘ দেখি, বৃষ্টি, দেখি বাণিজ্যের ছড়াছড়ি।

রাস্তার ধারে বসে আমরা সূর্যাস্ত দেখি

সময় বয়ে যায়, নিরবতা ভেঙ্গে দেয় নানা সুুুরের পাখি
এই সময়টাতে আমরা বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করতে চাই
মৃত্যুর সাথে, নির্জনতার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাই-
আমার বন্ধু মৃত হরিণের বেদনার সাথে চিতার
উল্লাসকে জুড়ে দেয়, প্রচেষ্টা পরিপূর্ণ চিত্র আকার
শেষ যেখানে শুরুর আহার।
আমরা শান্ত এখানে, নিরব, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
হঠাৎ রাস্তা অন্ধকার, শীতল হাওয়া দ্রুত বেগবান
এখানে সেখানে শিলাগুলি চকচকে উজ্জ্বল
আমরা ছুঁয়েছিলাম কিছুকাল ভালোবাসা কোলাহল।

প্রতিটি ভালোবাসা দিন শেষে ভালোবাসা হয়ে জন্ম নেয়।

সূর্য মুখর দিন

ঝুমঝুম বৃষ্টির নুপূর থেমে গেছে একটানা শ্রাবণের
সব বাঁধা মেঠো কাদা দূরে আজ আমার জীবনের
কালো কালো মেঘ আনন্দের বেগ রেখেছিল দূর করে
সব বাঁধা গোপন কাঁদা গিয়াছে যোজন যোজন দূরে
আজ সুর্য মুখর দিন অপার বেদনা
কেটে গেছে দূরে মেঘের আনাগোনা!
আজ চারিধার আলোকিত ওরে
আমার প্রিয়া আজ এসেছে এই নীড়ে।

আহা, সব সকরুণ সূর আজ বাজছে অপরূপ তালে
যা কিছু ব্যাথা, যা কিছু বেদনা সব মধুর মতো লাগে
স্রষ্টার কাছে এই চেয়েছি এমন বর্ণালী রংধনু আলো
আমার প্রিয়া আজ আমারে ভেসেছে অনেকটা ভালো
আজ সুর্য মুখর দিন অপার বেদনা
কেটে গেছে দূরে মেঘের আনাগোনা!
আজ চারিধার আলোকিত ওরে
আমার প্রিয়া আজ এসেছে এই নীড়ে।

যেদিকে চাই কোথাও মেঘ নাই নীল আকাশ কাছে দূরে
সামনে পিছনে প্রকাশে গোপনে উদারতা রয়েছে ঘিরে
আজ সব সাজ ভুলে সব লাজ নাচব মেঠো পথ প্রান্তরে
আজ শুধু খোদা জানে কি আনন্দ বাজে আমার অন্তরে
আজ সুর্য মুখর দিন অপার বেদনা
কেটে গেছে দূরে মেঘের আনাগোনা!
আজ চারিধার আলোকিত ওরে
আমার প্রিয়া আজ এসেছে এই নীড়ে।

আমার হৃদয় আজ উথাল-পাথাল

তুমি দিনের আলো, তুমি রাতের আধার
তুমি আমার সুস্থতা, তুমি কারণ অসুস্থতার
তুমি আমার রক্তের লোহিত কণিকা
তুমি আমার না ছুঁয়া আজন্ম ব্যাথা
তুমি কখনো ভেবে দেখোনি
তুমি কখনো খুঁজে দেখোনি

তুমি আমার ভয়, কখনো ভাবিনি
নিজেকে কখনো অপরূপ জানিনি
এই আঁধারে আমায় খুঁজে দেখো
হাতটি ধরে একটু সামনে হাটো
যেন পুরো পৃথিবী তোমার, পুরো পৃথিবী তোমার
যেন পুরো পৃথিবী আমার, পুরো পৃথিবী আমার

তবে তুমি আছো কিসের অপেক্ষায়?

আজ ভালোবাস তোমার যেভাবে মন চায়
ভালোবাস আমায় যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো তোমার যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো আমায় যেভাবে মন চায়

বিবর্ণ হৃদয়, বিবর্ণ শরীর
স্বর্গের চুড়ায় আমরা করছি ভীড়
তোমার শরীরের প্রতি ইঞ্চি আমার কাছে পবিত্র
যা আমি চেয়েছি খুঁজে সর্বত্র
তুমিই কেবল হৃদয় খানি প্রশান্ত করতে পারো
তুমিই কেবল শরীর খানি প্রশান্ত করতে পারো

তবে তুমি আছো কিসের অপেক্ষায়?

আজ ভালোবাস তোমার যেভাবে মন চায়
ভালোবাস আমায় যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো তোমার যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো আমায় যেভাবে মন চায়

হা হা, আমি এনেছি স্থবিরতায় গতি
আমার আজ ঠিক নাই মতিগতি
আমার হৃদয় আজ উথাল পাথাল
মাথার আজ হলো একি হাল!

তবে তুমি আছো কিসের অপেক্ষায়?

আজ ভালোবাস তোমার যেভাবে মন চায়
ভালোবাস আমায় যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো তোমার যেভাবে মন চায়
ছুঁয়ে দেখো আমায় যেভাবে মন চায়

কান্না

মহুয়া বন মাতাল হাওয়ায় এলোমেলো দুলছে কেন
ঘনকালো মেঘগুলো সব এদিক ওদিক ছুটছে কেন
চিত্ত হরণ রিক্ত কারণ আমার প্রেম ছুইতে বারণ
আজ কেন নয়ন দু’টি টলোমলো হচ্ছে এমন!

পায়রা দুইটি বারান্দাতে বাকবাকুম করছে কেন
চড়ুই কটি বারে বারে কিচির মিচির উড়ছে কেন
কি কারণে কার স্মরণে তোমার নিটোল ননীর গালে
অশ্রু রেখা ওঠলো ফুটে কোন নিরালে!

বৃষ্টির ফোটা আকাশ চুইয়ে আসছে কেন
ঝর্ণাধারা প্রবল স্রোতে মাটি ক্ষয়ে পড়ছে কেন
আমায় তুমি শুন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে পারলে যখন
কেন তবে উথাল পাথাল ঝড়ের বেগে কান্না এখন!

এই নির্জনে

এই নির্জনে

বাইরে ঝিমঝিম পড়ন্ত দুপুর।
ভারী নির্জন, নিরিবিলি কোমল রোদে ঝলমলে।
বারান্দায় ওপরের কড়ি বর্গায়
নানান জাতের পায়রারা ডেকে ওঠে।
পড়ন্ত দুপুরে পায়রার গদগদ স্বরের ডাক এক অদ্ভুত মায়া জন্ম লয়।

শব্দের কি কোন আকার আছে?
শব্দরা সম্ভবত নিরাকার।
তবু পায়রার বুকুম বুকুম
শব্দের আকার গোল মনে হয়,
তুলোর বলের মত গোল।

স্টিমারের হুইছালের শব্দ কি সরু ও দীর্ঘ মনে হয়!
সেতারের ঝনৎকার যেন বহুবর্ণ আগুনের ফুলঝুরি।
এজরাসের ছড় টানলেই মনে ভেসে ওঠে
তন্তুজালের মত আকৃতি,
অদৃশ্য এক মাকড়সা অদ্ভুত দ্রুতলয়ে বুনে চলছে।

পায়রারা গদগদ শব্দে এ কী কথা কয়?
ধ্বনিগুলোকে পরস্পর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিয়ে
ক্রমাগত বুনন চলায় মাকড়শার মতো,
তাতীবাড়ির একটানা ঠকঠককের মতো,
কাঠঠোকরার একটানা ঠোকরের মতো,
সেতারের ঝনৎকারের ফুলঝুরির মতো
এজরাসে ছড় টানার ঐক্যতান মতো
বুকুম বুকুম স্বরে আপ্লুত হতে থাকা পায়রারা
ভালোবাসার কথা কয়?

যারে পায়রা যারে দূরে উড়ে উড়ে
এই নির্জনে তোদের দেখে সুন্দরীরে বড় মনে পড়ে!

কবিতা

শব্দটিকেট কেটে নিয়ে, বাক্স-প‌্যাঁটরা লোটা কম্বল,
ব্যাংকজমা জমিজমা কানন আঙিনা যা কিছু সম্বল
ব্যর্থ কথোকতা, প্রনান্ত সফলতা ফেলে
কবিতা ট্রেনে চেপে বসেছি হেলেদুলে

ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ
ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ

এই যাত্রায় নির্লিপ্ত এক যাত্রী আমি,
স্মৃতির পুকুরে সাতার কেটে তাকিয়ে দেখি-
সামনের সীটে সুন্দরী এককাহন হাসি নিয়ে
সাতকাহন বক বক যাচ্ছে করে খিলখিলিয়ে।

কুয়াশা কাটাবার প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার
এক টুকরো রোদ্দুরের ঝিলিক যেন, হারাবার!
তারপর যোজন যোজন সময়ের পারাপার
কোথাও সেই ঝিলিক দেখি না আর!

এইসব হৃদয়ের ব্যাথাগুলি- এইসব
ঢের ব্যাথাগুলি বাক্স-প‌্যাঁটরা লুকিয়ে অনুভব
আজ আনন্দ ধারায় মেতে উঠেছি
শব্দটিকিট কেটে কবিতা ট্রেনে চেপে বসেছি-

কবিতা জীবন, কবিতা হৃদহরণ, আনন্দ সফর
কবিতা শব্দ শব্দ খেলা, ছন্দে দোলা, আবেগী ঝড়
কবিতা স্বাধীনতা, ছাদহীন ঘরে মুক্ত খোলা হাওয়া
কবিতা সুন্দরীর প্রত্যাখান কষ্ট বেদনা ভুলে যাওয়া।

ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ
ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ

মেয়ে

সে একটা মেয়ে, সুপ্ত আগ্নেয়গিরি
কল্পনাতীত উপ্তাপ ভিতরে, তবু সে ভীষণ একা
তার একটা জগত আছে, কল্পনার বসতবাড়ি
অনেকটা বিপর্যস্ত, তবু জানে কাটাবে বিহ্বলতা

মেয়ে এখানে রেখেছো পা,
ভেবেছো বিছানো লাল গালিচা
তোমার জন্য অগ্নিশিখা
পাবে না পাবে না কোন দিশা

তোমার চলার পথে আগুন বিছানো আছে
তোমার পথে লেলিহান শিখা সাজানো আছে

এটা অগ্নিপথ
এটা স্পষ্ট ক্ষত

মেয়ে তুমি হৃদশিখা জ্বেলে নাও
মেয়ে তুমি ঊর্ধ বেগে ছুটে চলে যাও।

সে একটা মেয়ে, ফুটন্ত আগ্নেয়গিরি
কল্পনাতীত উপ্তাপ তার, চোখ ফিরানো দায়
সারাদিন কতশত কাজ, ভুলের বসতবাড়ি
সব ভুল হয়, তবু তার প্রেমে ডুবে থাকে সদায়

মেয়ে এখানে রেখেছো পা,
ভেবেছো বিছানো লাল গালিচা
তোমার জন্য অগ্নিশিখা
পাবে না পাবে না কোন দিশা

তোমার চলার পথে আগুন বিছানো আছে
তোমার পথে লেলিহান শিখা সাজানো আছে

এটা অগ্নিপথ
এটা স্পষ্ট ক্ষত

মেয়ে তুমি হৃদশিখা জ্বেলে নাও
মেয়ে তুমি ঊর্ধ বেগে ছুটে চলে যাও।

সে একটা মেয়ে শান্তগিরি, দূর থেকে দেখা
কল্পনাতীত উপ্তাপ যার, এখন ভীষণ একা
তার একটা জগত আছে, আগুনের বসতবাড়ি
অনেকটা বিপর্যস্ত, আর জনমে কাটাবে বিহ্বলতা?

তোমার চলার পথে আগুন বিছানো আছে
তোমার পথে লেলিহান শিখা সাজানো আছে

এটা অগ্নিপথ
এটা স্পষ্ট ক্ষত

মেয়ে তুমি হৃদশিখা জ্বেলে নাও
মেয়ে তুমি ঊর্ধ বেগে ছুটে চলে যাও।

মেয়ে তুমি হৃদশিখা জ্বেলে নাও
মেয়ে তুমি ঊর্ধ বেগে ছুটে চলে যাও।