ফকির আবদুল মালেক এর সকল পোস্ট

ফকির আবদুল মালেক সম্পর্কে

কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখক।

স্রষ্টার রূপ

15713

আমি জানতাম আমাকে নাস্তিক ট্যাগ দেয়া হবে,
তবু আমি তোমাদের ওয়াজ মাহফিলগুলিকে
রঙ্গমঞ্চ আর কুৎসা রচনার আখড়া বলি,
ওখানে চিৎকার চেচামেচি ছাড়া কিছুই শুনি না।
তোমরা আজকাল বড় বেশি
ইউটিউবের ওয়াজগুলো ইনবক্স কর-

আমি জানতাম আমাকে মুরতাদ ট্যাগ দেয়া হবে,
তবু আমি কোন মানুষকে নূরের তৈরি বলি না,
মাজারগুলি নৈতিক অধঃপতনের সূতিকাগার বলি
‘ইয়া নবী’ ‘ইয়া নবী’ যে গান গাও
সে গান গাওয়া প্রত্যাখান করি।
তোমরা আজকাল বড় বেশি
আশেক হওয়ার আহ্বান করো-

আমি জানতাম আমাকে মোল্লা ট্যাগ দেয়া হবে
তবু মহাবিশ্বের প্রতিটি জড় আর জীবনের
একজন স্রষ্টাকে দেখতে পাই,
আমি পাতার গঠন মনদিয়ে দেখি,
কোষগুলোর ভিতরে জ্ঞানের আলো ঢালি
উদ্ভিদ প্রণীর পারস্পরিক আদান প্রদানে
গ্রহ নক্ষত্রের বিশলতায় আর শৃঙ্খলায়
মস্তিষ্কের পরতে পরতে বিশাল কর্মকাণ্ডে
জ্ঞানের ছড়াছড়ি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই
তোমরা আজকাল বড় বেশি
বিজ্ঞান বিজ্ঞান বলে চেচাও-

আমি জানি আমাকে উদাসীন কবি ট্যাগ দেয়া হবে
তবু পাতার মর্মর ধ্বণিতে অপার্থিব স্পন্দনে কাপি,
বসন্তের ফুল আনন্দের স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়ে
হাসতে হাসতে ঝরে পড়তে দেখি-
পূর্ণিমার জোৎস্নার ময়াবী আলোর ঝিলিক
দিনের আলোয় খুশিতে মিলায়-
ভাবি, আমিও তাদের মতো জীবনের আলোয় ফোটে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ করে খুশিতে সৃষ্টিতে
নাচতে নাচতে হারিয়ে যাব কালের আবর্তে-
কোন এক সময়ের প্রান্তরে
মহান স্রাষ্টার রূপ দেখতে জেগে উঠবো জেনে।
তোমরা আজকাল বড় বেশি
কাব্যহারা ছন্দহারা অভাগা হয়ে যাচ্ছো-

মানুষ লীলা

মন পুটুলি মানুষে দিয়ে আমি ঘুমাই নিশ্চিত হয়ে
স্বপ্ন দেখি দুনিয়া জয়ের গাছতলাতে শুয়ে
মানুষ হয়ে মানুষ লয়ে করছি যে মানুষ লীলা
গড়তে গিয়ে সেই মানুষে খুলতে আছি তালা।
দাঁড়িয়ে আছে মন প্রহরী, মন দরিদ্রের ধন
মন টাকা কড়ি, না জানি কে করছে হরণ
প্রেমে মিশায়ে প্রেম গাইছে মানুষের গান
সাম্য এসে চাইছে দিতে ভালোবাসা দান।

যে যারে মনে ভাবে সে তার স্বভাব পায়
প্রেমিকের এমনি ধারা দেখলে চিনা যায়।
হইলে প্রেম লোলুপ, শরীর ধরে সে রূপ
অঙ্গে অঙ্গে মিলে মিশে, ভুবন মাতায় খেলায়।

মন পুটুলি মানুষে দিয়া একা মরি ভয়ে
তন্ত্র আাসে মন্ত্র আসে নানা পথ হয়ে।

অন্ধকারের বিজ্ঞাপন

কাণার হাটবাজারে, কানায় কানায় ঠেলাঠেলি
মঞ্চ করে মাইক বাজিয়ে করছে গালাগালি
এখানে দিন কাণা, পরের ক্ষেতে দিচ্ছে হানা
ওখানে রাত কাণা আলোর পথে দিচ্ছে মানা
কেউ দেখি ভাই হয় মাজহাব কাণা
কেউ দেখি পীর খোঁজে হয় ফানা ফানা
নবীর প্রেমের কথা বলে নবীরে ফেলে দূরে
যে জন বড় জনা তাকিয়ে দেখি কাণার ভীড়ে

ডক্টর কাণা অহংকারে, মোল্লা কাণা অবিচারে
আমি কবি বলে, দোষ আসে আমার নীড়ে
কাণায় কয় কাণারে কাণা পথ তোর ভালা না
জ্বালিয়ে নিয়ে আলোর বাতি তাদের দেখিনা, না

আলো ভেবে নিব আলো এই করি পন,
দেখি, ধর্ম নামে অন্ধকারের বিজ্ঞাপন।

মনে মনে মেশামিশি

মন ছুটে মন ধরে আনে, জানের কাছে দিতে জান
মনে মনে না মিশিলে, হয় কি কভু মন জুড়ান
মনে মনে মেশামিশি, ক্ষনে কান্না ক্ষনে হাসি,
এইতো ভালো বাসা বাসি, সজল হাসির গান।

আখি নীড়ে আনে টেনে,
মন মনের কাছে
চোখের জল আর প্রাণের টান,
তা বিনে কি মন্ত্র আছে?
আকুল করা করুণ স্বরে, ডাকার মতো ডাকলে পরে
অমনি এসে ভালোবেসে, আনন্দেতে হৃদয় নাচে
খেলায় খেলে প্রাণের পুতুল,
দোল্ দোলা দোল্ দেদুল দেদুল
যে দেখেছে সে দোলেছে,
সকল কিছু সে ছেড়েছে
আভাস পেয়ে প্রেমিক কবি উঠল নেচে
গাছ তলাতে করছে রোদন
ছুটবে কি তার কাজের বাধন
জন্ম মরন যাবে ঘুচে?

ডাক দেখি মন ডাকার মত
ডাক শুনে না আসে, দেখবো তার সাধ্য কত?
প্রেম ভরে মধুর স্বরে, ডাক দে তারে প্রাণ ভরে
আকুল প্রাণে ডেকে তারে কে কবে গিয়াছে ফিরে?
তারে কাছে ডেকে আন, তারে কাছে ডেকে আন
যারে দেখতে পুড়ায় আখি, ডাকলে জুড়ায় প্রাণ।
ডাক দে তারে হৃদয় কাঁপা গান
শিশুর মতো সকল ভুলে আসবে ছুটে মন জুড়ান।
মনে মনে মেশামিশি, ক্ষনে কান্না ক্ষনে হাসি,
এইতো ভালো বাসা বাসি, সজল হাসির গান।

খেলায় খেলে প্রাণের পুতুল,
দোল্ দোলা দোল্ দেদুল দেদুল।

শুধু পাঁচ জেগে রবে

পুরাতন ঘড়ি টিকটিক চলছে নাতো ঠিক!
বস্’কে শুধাই বিকাল পাঁচে থাক যত পিক
আওয়ার, হারিয়ে যাবার লাগবে আজ ছুটি।
কখনও কি, হয় কাজে এতটুকু ত্রুটি?
আজকে আমার মনটি ভরা আছে দারুণ আবেগে
চাইছে যেতে তার কাছে অরুণ আলোর বেগে
সাড়ে বারো এখন, বল তাতে কি কিছু হয়!
দুনিয়ার কোন প্রান্তে পাঁচটা ঠিক বেজে রয়।

ঘন্টা হিসাবে বলা কাজ, চলে বহু মিনিট
আমার বস জাষ্ট ক্রশ করে যায় লিমিট
তাকে কিছু বলা আমার পছন্দ না ঠিক
সাবধান একদিন ধরা খাবে সোনা মানিক!
মনে মনে ডাকি আয় ছুটি বিপুল তান্ডবে
তুফান যেন তছনছ আমার অনুভবে
সাড়ে বারো এখন, বল তাতে কি কিছু হয়!
দুনিয়ার কোন প্রান্তে পাঁচটা ঠিক বেজে রয়।

দুপুরের খাবার খাই বিকেলের বেলা
কখন সন্ধ্যা নীরবে এসে করে যায় খেলা
পাইনা টের, রাত্রি কখন হয়ে যায় ভোর!
কে কি বলে, আমি বলি এ দোজগপুর।
যা হয় হোকনা করব না বারণ চরাচরে
বিকেলটা আজ দেয়া আছে শুধু তাহারে
সাড়ে বারো এখন, বল তাতে কি কিছু হয়!
দুনিয়ার কোন প্রান্তে পাঁচটা ঠিক বেজে রয়।

পাঁচটা জেগে রয় পৃথিবীর কোন্ কোনে
কোন দেশ তাহা বল কোন টাইম জোনে
মন ছুটে যায় উড়ে দুটি ক্ষুব্ধ আত্মা
কণ্ঠে জাগে প্রেমের করুণ তীব্র ব্যাকুলতা
হাত ধরে, চল ছুটে যাই সেই দেশে
শুধু পাঁচ জেগে রবে, সব যাবে মিশে।
সাড়ে বারো এখন, বল তাতে কি কিছু হয়!
দুনিয়ার কোন প্রান্তে পাঁচটা ঠিক বেজে রয়।

আজ যারা সুখে বেঁচে আছো

আজ যারা সুখে বেঁচে আছো, পান করে যাচ্ছো জল
বায়ু মাঝে ডুবে নিচ্ছ শ্বাস, খেয়ে যাচ্ছো মুল ফল
দেখছো আছে এখানে কেহ, ঘুরে পথে প্রান্তরে
উদাস হয়ে প্রাণের টানে চলে যায় বহুদূরে
তাদের মাঝে কেউ আছে শুধু সুখ খোঁজেনি মিছে
তাদের কাল কাটেনি কেবল জন্মে জন্মানো পিছে।

এখানে ধুম কান্নাকাটি, নত বিচারের বাণী
ঝরে পড়ে মানুষের ঘাম, বিনিময়ে শূন্য ঘানি
ঘুরিয়ে দিয়ে জীবন চাকা, ঘুরে নিজে হাহাকারে
বংশের ধারা চলছে তারা সেই এক কারাগারে
এদের মাঝে পায়নি কেহ এতটুকু স্বস্তি খোঁজে
তাদের কাল কেটেছে কেবল খাদ্য খাওয়া পিছে!

এখানে বাজে নিয়ম তাল, সরল ধর্মের সুরে
এখানে জ্বলে আগুন শিখা ঈর্ষার ছোবল ঘিরে
অতীব বড় কে কার চেয়ে, অতীত স্মৃতির গাথা
‘এখন’ কাঁদে বনে জঙ্গলে, বুক ভরা তার ব্যাথা
এদের মাঝে যারা আছে ছুটে নাই অতীতে মিছে
তাদের কাল কাটেনি কেবলই তর্কাতর্কি পিছে।

আজ যারা চোখ বুঁজে আছো, মুছে নিয়ে নোনা জল
ছাড়ছো দীর্ঘ করুণ শ্বাসে, দুখ গাঁথা অবিরল,
‘শুধু একান্ত মানুষ হও, সব ফেলে বহুদূরে’
শুননি দীপ্ত তাঁদের ডাক, ঘুরে ফিরে বারেবারে?
কখনো তাঁরা এখানে এসে সুখ খোঁজে নাই মিছে
তাদের কাল কাটেনি কেবল জন্মে জন্মানো পিছে।

সুখ

সকাল। পবিত্র সময়।
একজন নর আর নারী নির্মল বিছানায় শুয়ে আছে।
পাশে ফুলদানিতে গত রাতের তাজা গোলাপ।
সূর্যের আলো গালে ঢেউ তুলছে পর্দার ঝাঁকুনিতে।
নর নারীর কাছে নিয়ে মুখ ফিসফিসিয়ে ডাকে।
ওদিকে জানালার ওপাশে পাখি ডাকে
একবার দু’বার বারবার।
নারীর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠে
তার শরীর পূর্ণ হয় নিশ্বাসের স্পন্দনে।

চোখ মেলে চাই।
আমাকেই দেখছো গভীর ভাবে।
বললে, আমার মুখ পানে চাও
গভীরভাবে তাকিয়ে থাকো কিছুটা কাল
আমার পবিত্রতায় তুমি নিজেকে কি দেখতে পাও?

কি শান্ত আর পবিত্র তোমার মুখখানি!
একটা জলন্ত চাকা দুর্বার বেগে আমাদের
পিষে দিয়ে চলে যায়।

আমরা অশান্ত আর অপবিত্র হয়ে উঠি।

এমন বৃষ্টি রৌদ্রময়

অনেক দিন আগেকার এক বাণী
আমি জানি
আসে নীরবতা ঝড়ের আগে
সল্প সময়ের তরে, সবেগে
তারপর ঢল নামে, তখন তোমরা বলো
রোদমাখা দিন বৃষ্টি হয়ে এলো
রিনিঝিনি
আমি জানি।

তুমি কি দেখেছো বৃষ্টি ঝরে এমন অঝোরে
উজ্জ্বলতা নেমে আসে , জলে ভর করে?
আমি জানতে চাই, তুমি কি কখনও দেখেছো বৃষ্টি
রূপ নেয় রৌদ্রময় দিনে?
গতকাল, এবং গত পরশু
সূর্য শীতল হয় এবং বৃষ্টি কঠিনে?

গতকাল, এবং গত পরশু দিনে
সূর্য শীতল হয় এবং বৃষ্টি কঠিনে
আমি জানি
এভাবেই চলে আমার সময়, মানি
এভাবে চলে যায় হয়ে বৃত্তে বন্দি
এভাবে হয় গতি আর স্থবিরতায় সন্ধি
আমি থামাতে পারি না, থাকে কেবল বিস্ময়
তুমি কি দেখেছো এমন বৃষ্টি রৌদ্রময়!

এখন আমার যাবার ঘণ্টা বাজে

হয়ত হাটছ নগর রাজপথে,
হয়ত তুমি পেরুতে
একটা দারুন গানের সুর বাজে,
তোমার হৃদ সৈকতে
থমকে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে চাও,
তোমার পরান ছুটে
নিজেকে খোঁজে ঘুরে দেখতে কি পাও
বাংলার ফসল মাঠে!

হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।
যখন মায়াবী গানটি তালে গাও
অনিন্দ্য আয়োজনে
তাহারা বাইতে কি চায় নিজ নাও
বাংলা জলে আনমনে!

এখন উত্তাল সময় ব্যাটে বলে
ক্রিকেট খেলা মাঠে
বাঘের বাচ্চারা খামচে ধরিয়াছে
চড়ে ক্যাঙারো পিঠে
যখন বিজয়ী উত্তাল গান গাও
নাচো মিছিল নৃত্যে
তখন তাহারা সরবে উঠে মেতে
আহা, আনন্দ চিত্তে!
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

এখন তাহারা কর্মী জাতিসংঘে
বাসিন্দা ওয়েস্টে,
এখন তাহারা কোম্পানি মালিক
সৌদি মিডল ইস্টে।
তাদের জন্ম, বেড়ে উঠা বোস্টনে
পিতার বরিশাল,
যতই সুদূর উপরে তারা তবু
বাংলায় হয় মাতাল।
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

এখন আমার যাবার ঘণ্টা বাজে
ট্রেনের হুইসিল
বৃষ্টিতে ভিজিয়ে শরীর আনন্দে
হৃদয় স্বপ্নিল
এখন যাবার বেলা দেশের ঋণ
কিভাবে যে শোধাই
সন্তানের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তাই
দেশপ্রেম গান গাই।

আমার গানের ট্রেনের অতি গতি
তোমার দিক ছুটে
আমি ততদিনে হবো অতীত স্মৃতি
তুমি ফ্রাঙ্কফুর্টে।
হয়ত তাহারা সুদূর হনলুলু,
হয়ত উত্তাল মস্কো
তাদের চারজন রঙিন সিডনি
দুজন কাঠমুন্ডু।

আমি

তোমার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে,
পৃথিবীকে ব্যবহার করতে
আমাকে দিলে অনুমতি!
কিছু ফিরে পাব সেই প্রত্যাশায়, মতিগতি
করে নিয়ে ঠিক
আমি বিনিয়োগ করি অধিক।

বলতেই হয় আমার ইতিহাস
ব্যর্থতার পরিহাস।
বিশেষ করে
টমেটোর পাতা ঝরে
এতটা পোকার আক্রমণ
গুটিয়ে নিতে চায় মন!

তোমার উচিত হবে
অধিক বর্ষণমুখরতা ঝরঝর হয়ে না যেন ঝরে, ভবে
অধিক শৈত্যের রাত যেন না আসে,
পৃথিবীর অন্যখানে তোমার রহমতে হাসে-
সকল প্রাণ পায় উপাদান ঠিক যতটা প্রয়োজন
তুমি কর কি দারুণ আয়োজন!

আর এদিকে আমার বেলায়ঃ
আমি বীজ বুনি তালতলায়
মাটি খুড়ি, বাধি সারি সারি আইল জমিনে
তারপর মাথায় রাখি উল্টো হাত, ‘কেমনে
খাইলরে আমার ফসল মরার পোকায়!’
হাত যায় আবার কোমড় গামছায়।

প্রশ্ন জাগে সারা অংগে
আমার মত হৃদয় খেলে নাকি তোমার সংগে?
তোমার কাছে আলাদা নয় কিছু
জীবন মরন, চিত্ত হরন ছুটি তোমার পিছু।
পোকার পিছনে তুমি কি জানো
আমার হাত কতটা রক্তে রাঙানো?

আমার পাপ করছে অনুতাপ সাধু সাধু বলে
আমিই দায়ী পাকা টমেটো টসটসে গাছেতে ঝুলে!

নিজের গান গাই -৩

৩. শরীর লিখে বীরত্ব গাথা

সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।
বর্তমানের কথা জুড়ি
অতীতের ও দূর গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

অতীত এসে বসল পাশে
সামনে দেখি ভবিষ্যৎ হাসে
লোক সকলে মাতে তাতে
সুধাই আমি দূরে গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

পথিক দাঁড়ায় চলার পথে
অতীত নিয়ে কেবল নাচে
বলি, বর্তমানের গুপ্ত কথা
মনটা শুধু এখন বাঁচে।
এখন সুধা পরাণ দোলা
এখন স্বর্গ, নরক জ্বলে
এখন ঘোড়া দুলকি চালে
টগবগিয়ে সামনে চলা গো।
সময়ের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
সময়ের গান গো।

যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।
যৌবন কালের কথা জুড়ি
সৃষ্টিশীলতা সুর গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

সমকাম এসে বসল পাশে
সামনে দেখি বিকৃতি আসে
কিছু লোক মিছে মাতে
সুধাই আমি দূরে গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

বিপরীতে এসে হাতটি ধরে
প্রেমের কথা জানায় ব্যাথা
বলি, যৌবনেরই গুপ্ত কথা
শরীর লিখে বীরত্ব গাথা।
যৌবন সুধা বিজয় দোলা
যৌবন সৃষ্টি, জীবন খেলে
যৌবন ঘোড়া দুলকি চালে
টগবগিয়ে সামনে চলা গো।
যৌবনের গান গো
ছন্দে ছন্দে গাথি আনন্দে
যৌবনের গান গো।

স্বাধীনতা

আমাকে আকড়ে রাখো
হারিয়ে ফেলো না-
কি এসে যায়, কে কি বললো
কি এসে যাবে, কে কি জানলো
তোমার প্রথম নাম মুক্তি
তোমার দ্বিতীয় নাম যুদ্ধ
তোমার নামে বইয়ে বেড়াই ভাব, ছন্দ
মানুষের ভিতরের লাল গোলাপ
প্রতিটি জীবে, পদার্থে
আমার মন তোমায় সাথে নিয়ে চলে
চেতনা তোমার ডানায় ভর করে উড়ে

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

আমাকে আকড়ে রাখো
হারিয়ে ফেলো না-
চিতার ক্ষুধা পায়
হরিণের পিছন পিছন ছুটে
তোমার প্রথম নাম প্রেম
তোমার দ্বিতীয় নাম দেশ
তোমার নামে ধরেছি মাথা বাজি, উদ্দেশ
যখন শিশু প্রথম নিঃশ্বাস নেয়
যখন রাত্রি ভোরের আলোতে হারায়
যখন তিমি সাগরের বিশলতায় ভাসে
যখন সব ছাড়িয়ে মানুষ বড় হয়ে উঠে

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

আমরা তাপ থেকে এসেছি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা ইলেকট্রন
আধার হৃদয়ে ব্যাথা জাগে, আলোর স্ফুটন
বাতাসের মাঝের অনু
সাগরের জলকণা
ঐ সূর্য, আর হা, মানুষ
সব একই উপাদানে তৈরি, একই নির্দেশ

স্বাধীনতা, স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা

নিজের গান গাই

১. নিজের গান গাই

আপন কথা আপন সূরে নিজের গান গাই
আমার কাব্য দারুন গাথা তোমাকে ছুঁবে তাই
যেমনি অনু পুস্প রেনু সকলি গড়ে তোলে
তেমনি তুমি মাঠের ভূমি অনুর চাকে দোলে
এসেছি আমি পিতার হতে মায়ের কোল জুড়ে
তেমনি পিতা তাহার পিতা এমনি ঘুরে ফিরে।

বিজন বনে গভীর মনে আত্মাকে জেগে তুলি
মধুর স্বর রক্ত কণা হাওয়া থেকে দুলি
ধর্ম ঘানি পাঠের বাণী দূরত্বে রেখে আসি
অবসরে যাও আর কী চাও বাজাও মরা বাঁশি!
আমার হৃদে সজল হ্রদে খারাপ ভালো ভাসে
আমিতো দেই আসুক যেই স্বাগত উর্ধশ্বাসে।

২. আপন গন্ধে মাতাল

ঘরের রেকে উথলে উঠা পারফিউমে ঠাসা
নিজের ঘ্রাণে জাগলো প্রাণে আপন ভালোবাসা
গন্ধহীন, নয় রঙিন, নয় পারফিউম
বায়ুর সাথে সন্ধ্যা প্রাতে চলছে প্রেম ধুম
আমি তাহারে, রাখি কোথারে, মুখে লুকিয়ে রাখি
তাহার ছাড়া বাঁচে না প্রাণ, কেমন করে থাকি?

ধ্বনির সাথে কথার মেলা হৃদয় কম্পন
গানের টানে সুরের খেলা বায়ু সন্তরণ
নিশ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস দিয়ে জীবন বিনিময়
সকল খানে দেখবে তুমি কৃত্রিমতা লয়
কে তুমি একর একর জমির মালিক আছো
কে তুমি বিদ্বান অতীব বইয়ে সন্মান খোঁজ

সকল পাবে সকল খানে নিজেকে পাবে নাকো
সকল পাবে সকল খানে তাহার হবে সাঁকো
অন্যের চোখে দেখবি যদি জন্মে কেন এলি
অন্যের কথা বলবি যদি নিজেদের কি পেলি?
নিজ গন্ধ বায়ু ছন্দ কাটবে সকল দ্বন্দ্ব
আমি নিজের গান গাই এটা হোক আনন্দ।

সমর্পণ

শুরুতে পেয়েছি ভয়, হৃদয় নির্মুল চিলতা
তুমি ছাড়া বাঁচা মনে হলো নিরেট বাতুলতা
বহু নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি ভেবে-
অনেক করেছো প্রবঞ্চনা
নিজেকে দিয়েছি সান্ত্বনা
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছো সেভাবে, অনুভবে
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

তুমি চলে গেছো আমার জীবনাকাশ থেকে দূরে
দেখতে এসেছো মলিন মেঘ গাঁথা, চেহারা ঘিরে?
খুলে ফেলেছি সেই অবোধ বন্ধন,
হাতে নিয়াছি মুক্ত হবার চাবি
ছুড়ে ফেলেছি সমস্ত অপদস্থ ছবি
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছিলে সেভাবে, এখন
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

তুমি কি সে নও আঘাতে দিয়েছিলে বিদায়?
ভেবেছিলে আমি মুছে যাব আত্মহত্যায়?
ভেবছিলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাব?
জেনেছি কিভাবে ভালোবাসতে হয়,
জেনেছি কিভাবে ভালোবাসা পেতে হয়
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছিলে সেভাবে, চলব
তোমার জন্য না হয়ে একটু উতলা-

সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ধরে রাখি
ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো একত্রে জুড়তে থাকি
দুঃখের সাগর উড়িয়েছি কান্নার বাষ্পে
সব ছেড়ে দাঁড়িয়েছি উচ্চশিরে
যে ভালেবাসে নিজেকে সঁপেছি তাহারে
দূর হও, যাও সুদূরে, ফটকটা আছে খোলা
যেভাবে এসেছো সেভাবে, অনুভবে
তোমার জন্য হই না একটু উতলা-

দীর্ঘশ্বাস

কোকিলরে তুই ডাকিস না আর কুহু কুহু স্বরে
তোর সেই ডাকে বারেবারে তাকে বড় মনে পড়ে!
চারিধারে বইছিল এক উড়নচণ্ডী হাওয়া
হলো না আর নির্মল তার মুখখানি ছুঁয়া!
এত যে তারে ভেসেছিলাম ভালো কোথায় হারলো
মন খুশি উর্বশী এ মনে কী বেদনা ছড়ালো
ভুলে ছিলাম জেগে গেলাম উঠলরে নাভিশ্বাস
তোর ডাকে দুর্বিপাকে হলো গহীন সর্বনাশ!

পূর্ণিমার রাত চাঁদের আলোয় কী মায়া ছড়ালি
তারে নিয়ে তুই ফাল্গুনী রাতে কোথায় হারালি?
আজও আমি পুকুরের ধারে চুপটি জেগে রই
পূর্ণিমাতো ঠিকই আছে আমার চাঁদটি কই!
এত যে তারে চেয়েছিলাম আজ কোথায় হারালো
মন পবনের নায়ে ভেসে সে কোন ঘাটে দাঁড়ালো!
তোর কারণে ভোলা স্মরণে জপি অতি জলোচ্ছ্বাস
মায়া জাগালি কেন কাদালি করলিরে সর্বনাশ!

ফুল ফোটে ফুল ঝরে, যাহা ঝরে সে না ফিরে আর
থাকে শুধু সুধাবার সুগন্ধি স্মৃতি উপহার
এইখানে গাইবার গান টুকু পেয়ে যায় সূর
চলে যাব কোন খানে জানিনা কোন সুদূর
একদিন এইখানে কবি মন উঠেছিল নেচে
সেইদিন আর ফিরে পাবে নাকো খোঁজ যত মিছে!
ঐ কোকিলের মতো, ঐ চন্দ্রিমার উচ্ছ্বাস
তুমি পাও খুঁজে এই গানে গানে কারো দীর্ঘশ্বাস?