হাসনাহেনা রানু এর সকল পোস্ট

রাত পাখি

রাত পাখি

বৃষ্টি পাথর মনের কান্না ছুঁতে পারেনি
রাতের বুকে নিঃশব্দতা নেমেছে ঢের,
আমি গোলাপ গন্ধ মেখে বসে থাকি
পথের ভীড়ে,
হায় … আমার পৃথিবী !
ধোঁয়ার উঠোন ছেড়ে ভেসে যাচ্ছে
সবুজ ছায়া ভরা পাতায় ——
দেবদারু স্বপ্ন !
আমার বুকে বৃষ্টির শব্দ কাঁপন জাগায় ;
ভালবেসে চাঁদটা আমায় জ‍্যোৎস্না দিয়েছে
এক মুঠো
আমি পাথর হয়ে এসেছি এ শহরে,
এখানে আমি নতুন
এ শহর অন‍্যদের দখলে।

রাত জাগা এক পাখি আমার কাছে উড়ে উড়ে এল
হয়তো ভুল করে,
পাখিটার দু’চোখে অশ্রু ;
পাখি ব‍্যথাহত কণ্ঠে বলে, আমি রাত পাখি
কাল আমার নীড় ভেঙ্গে গেছে ,
এখন আমার বিরহ কাল
রহস্য ভরা পথ
যে পাখি কোনদিন এ পৃথিবীতে ফিরবে না,
আমার সঙ্গী ওদের একজন হয়ে গেছে ——
আমার পৃথিবী নীল কষ্টে ডুবে গেছে
প্রজাপতি প্রেমে চাঁদটা আত্মমগ্ন,
শুধু আমার স্বপ্ন হয়েছে ক্ষীণ …

আমি বিরহের আগুনে পুড়তে পুড়তে
একদিন বরফ নদীতে ডুব দেব
আমার নীড় এখন শূন্য …………..

11.04.2019

বৃষ্টি ও কবিতা

বৃষ্টি ও কবিতা

আকাশ মেঘের লুকোচুরি খেলা
বৃষ্টি সারাবেলা
বৃষ্টি আমার মন ছুঁয়েছে,
দৃষ্টি স্বপ্নময় মন পিয়াসী জ‍্যোৎস্না খোঁজে
নীল আকাশে ছুটছে সাদা মেঘের ভেলা
মেঘ বৃষ্টি ;
বৃষ্টি সারাবেলা।

শরৎ ঘ্রাণে দূর্বা ঘাসে শিশির হাসে
নিঃশব্দে শিউলি ফুল পড়ে আছে
ঘাস বুকে ;
কিছুটা রৌদ্দুর মেখে
ব‍্যস্ত ভীষণ শিশির স্নানে …
জলের শরীর ছুঁয়েছে মেঘ
চোখের মাঝে সন্ধ্যা নামের
অন‍্য রকম আবেগ,
মেঘে মেঘে টুপ টুপ বৃষ্টিরা
গল্প করে ———
কবিতা … সকালের রোদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে ঝরছে —–

নীল আকাশে তোমার মায়া
বিনম্র শিশিরে ভিজে ভিজে সারা,
মেঘ বৃষ্টি …
বৃষ্টি সারাবেলা …!
বৃষ্টি এখন অন‍্য আকাশ
বৃষ্টি আবার রোমান্টিক ও —–
তুমুল বৃষ্টিতে ভিজছে দেখো
আমার রোমান্টিক কবিতার
এক শহর ————- ।

বেলাশেষে

বেলাশেষে

নিঃশব্দ বিকেলের ভাঁজ খুলে
নির্জন সন্ধ্যা রাতের সীমাহীন গভীরে ডুব দিব,
কোথাও কেউ থাকবেনা
না সকাল, না দুপুর
ব্যস্ত সময় নিয়ে যাব আমরা শেষ রাতের কাছে,
আর কোন কথা নয় …
না বরং আজ বিকেলটা থাক …
বিকেলের ভাঁজ খুলব না,
আমরা বরং সমুদ্রের ঢেউয়ে ডুবতে ডুবতে
ভেসে থাকব অনন্ত কাল ;
আমাদের সাথে তৃষ্ণার্ত সমুদ্র থাকবে
এক পৃথিবীর আকাশ থাকবে
না আজ থাক,
আমরা বরং অন্য আরেক দিন চাঁদের জ্যোৎস্না নীড়ে বেড়াতে যাব।
ডুবন্ত সূর্য হাতে নিয়ে এবার আমি চাঁদের জ‍্যোৎস্না নীড়ে হারাবো
কথা দিলাম, এবার কথা রাখব …।

কোথাও কেউ নেই

কোথাও কেউ নেই

যে আকাশে মেঘ নেই সেটা কোন আকাশ না
এমন আকাশ আমি চাই না
আমার আকাশ জুড়ে শুধুই মেঘের আনাগোনা,
এমন মেঘ ছুঁয়ে কখনো
রাতের আকাশে চাঁদ উঠবে না
জ্যোৎস্না ছড়াবে না
নক্ষত্ররা চোখ মেলে তাকাবে না —
প্রকৃতির ঠোঁটে একটি শুকনো পাতা ঝরার শব্দ ও হবে না।

এমন নির্মেঘ ছুঁয়ে
দিন রাত্রি শুধু বৃষ্টিই ঝরবে
আজ বরং বৃষ্টির কথা থাক —
বৃষ্টি এলেই বিরহ এসে যায়
বিরহ অশ্রু ঝরাই —
বৃষ্টি এলেই কদম ফোটে
বকুল ফোটে গাছের শাখায়,
শান্ত বিকেলে গোলাপ ফোটে …
সন্ধ্যার দক্ষিণা হাওয়া গোলাপ ঘ্রাণে মেতে ওঠে —
অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাই আমার শ্রাবণ স্বপ্ন ;
মাধবীলতা ঝাড়ে টুপটাপ শিশির ঝরে পড়ে
কামিনীর শুভ্র থোকায় প্রেমের অনুভূতি
অর্কিডের ঠোঁটে বিচ্ছেদের গান আমায় কষ্ট দিয়েছে ভীষণ !

এত বিরহ শেষে ——–
রাত্রির আকাশে মেঘের আঁচল সরিয়ে
গাঢ় চাঁদ উঠেছে
চাঁদের ঠোঁটে একটি মাত্র সন্ধ্যা তারা
রংধনু আবীর মেখে ডানা মেলেছে —
তবে কি আকাশ থেকে মেঘ সরে গেছে?
না — আমি চাই — ই না, সত্যিই চাই না..
মেঘ বিহীন কোন আকাশ থাক আমার আঙিনা ছুঁয়ে —
এতদিন মেঘ ছিল আমার খুব কাছাকাছি
সময়ে আমার ডান চোখ
অসময়ে আমার বাম চোখ ভেজাত!
মধ্য দিনে কি শেষ রাত্রে চুপিচুপি বৃষ্টিভেজা মুহূর্তরা আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যেত খোলা ছাদে।
হঠাৎ জ্যোৎস্না স্নাত রাত্রি গভীর শূন্যতায় কোন এক কবির নিটোল স্বপ্ন ছুঁয়েছে —
আকাশের ভাঁজে ভাঁজে চঞ্চল মেঘের কারুকাজ,
বরাবরই আমায় খুব কাছে টানে
সেই মেঘলা আকাশ আজ ভরেছে জ্যোৎস্না সরোবরে,
আর মন কতটা ব্যথিত —
সে খবর কে রাখে ?

তুমি যে আমার কবিতা

তুমি যে আমার কবিতা

কবিতা,
তুমি অহর্নিশি …
তুমি অনূ্র্বা মৃত্তিকার কুসুমিত কুমকুম,
তুমি কষ্টের দহনে সহন শান্তির অমরতা
তুমি রঙ মহলে নর্তকীর নাচ
তুমি চির সবুজ যৌবনের অভিলাষ,
তুমি শুভ্র জ‍্যোৎস্নায় তমস‍্য হরিণী ছন্দ
তুমি তমাসিকা —- —- —-
তুমি নীলাকাশ, তুমি নীল নক্ষত্র
তুমি নীল জ‍্যোৎস্না ——–!

কবিতা,
তুমি শুভ্র কাশফুল, তুমি শ্বেত কপোত
তুমি দূর্বাঘাসের বুকে ঘুমন্ত শিশির ..
তুমি ঝরে পড়া শিউলির কান্না,
তুমি গোলাপ, হাসনাহেনার সুগন্ধা —–
তুমি তাঁতে বোনা খট খট আওয়াজে মিহি মসলিন বেনারসী –
তুমি হাতে বোনা নকশি কাঁথা,
তুমি জামদানী পল্লীর নব শিল্প কলা ;

কবিতা,
তুমি নববর্ষের প্রথম সকালের রৌদ্দুর
তুমি আম্রকাননে কাল বৈশাখী ঝড়,
তুমি অন্ধকার ভ্রুণ ভেঙ্গে জন্ম নিয়েছ
১৪ – ফ্রেব্রুয়ারি ( বিশ্ব ভালবাসা দিবস) সদ‍্যজাত ভোর …
তুমি রাতের আঁধারে অনন্ত কাল জেগে থাকা ক্লান্ত চাঁদ —-
তুমি কনকনে শীতে গরম কাপড়ের উষ্ণতা।

কবিতা,
তুমি সব কিছুর উর্ধ্বে
সেই তুমি চিরচেনা কবিতা ———— ।

মেঘ মেয়ে

মেঘ মেয়ে

মেয়ে, তোমার ওই চোখ দুটো যেন
এক সমুদ্র তোলপাড় করা গল্প,
আমি তোমার দিকে তাকালে বৃষ্টির ঘ্রাণ পাই –
বর্ষা এলেই আমি তোমার স্পর্শ খুঁজে পাই ….
বর্ষা আর তুমি আমার ভাললাগার উৎস।

মেয়ে, তোমার ওই ঠোঁট যেন
গভীর রাত্রির নীড়ে
ঘাস বুকে ঘুমন্ত শিশির কবিতা ;
তোমার গল্প কথা শুনে শুনে
অল্প অল্প ভালবেসেছি আমি তোমাকে –

আজ ত্রিশ বসন্তে এসে গভীর ভাবে
উপলব্ধি করলাম,
আমি তোমাকেই ভালবাসি …
ও মেয়ে, তুমি আমার শত জনমের
ভালবাসা হবে ?

হেম বালিকা

হেম বালিকা

যারা দূরে আছে চিরদিন দূরেই পড়ে থাক
আকাশ প্রকৃতির পরিচ্ছন্ন জীবনে –
ঝরা পাতার গল্পের মত ঝরে যাক
শিশির দহন ;
এক মুঠো স্বপ্ন ফুল
সুবাসিত মুকুল
হলুদ ভালবাসার চোখ সমুদ্র হয়ে
ওদের কাছে টেনেছে।

হীম মেঘলা স্মৃতি সন্ধ্যার
কাশফুল ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে গাঢ় নিস্তব্ধতায় ডুবে যাচ্ছে ধোঁয়া ওঠা কুয়াশা …

হেম বালিকা আছে লবঙ্গ দ্বীপের স্বপ্ন ঘুমে
গোলাপি ফিতায় চুল বাঁধা,
রুপোর নূপুর পায়ে পরে হাঁটছে সূর্যাস্তের সাথে …
আমি ওর গোপনতা বহন করেছি কবিতার বুকে,
সময়ের ব্যবধানে শেষ বিকেলের গল্পটা খানিকটা বিব্রত …
জল বহ্নির পাণ্ডুলিপিতে –

দূর সমুদ্র ভেসে যাক অচেনা স্রোতে ভেসে জল জ্যোৎস্নার ডানায়
হিমানী প্রপাতের পাশে
আগুন বৃষ্টি হোক তুমুল গর্জনে
শব্দহীন একটা দুঃস্বপ্ন এখন কবিতার ঠোঁট কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে …
সমূদ্র তবু নির্বাক ;
এক আকাশ মেঘ দৌঁড়াচ্ছে দূর শহরে,
কাল বৈশাখী ঝড় হয়ে আঘাত হানবে পৃথিবীর সীমানায় –
জল ঝড় বৃষ্টি ভাল লাগে না,
অনেক কষ্ট ঝরে পৃথিবীর সাদা বুকে
ঝড় বৃষ্টি কবিতা হয়ে ওঠে ;
ডায়েরির সাদা পাতা বেয়ে রক্ত অশ্রু ঝরে …
আর আমার এক বুক দুঃখ,
কলমের নিবের আঁচড়ে – সাদা অশ্রু হয়ে ঝরে !
অনেক দহন শেষে একটি কবিতা হয়ে ওঠে –
কবিতা ভূমিষ্ঠ হয়েই তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে কেঁদে ওঠে !!

05.04.2019

পুতুল খেলার দিনগুলো

পুতুল খেলার দিনগুলো

তোমার জন্য লিখতে পারি
এক পৃথিবী …
হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো সবুজ পাতায়,
রঙিন ছাতায়
চোখে তখন অন্য ছবি
এঁকে নেব স্বপ্ন ভারী
আমি এখন তোমার কবি ;

আমি তখন ছোট্ট ছিলাম
মেঘের সাথে খেলতে যেতাম
আকাশ পাড়ায়,
মেঘ যে তখন সাগর হত
অভিমানে নিতাম আমি
আড়ি …
আড়ি …
আড়ি ….!

সাগর তখন পরিয়ে দিত
নীল আঁচলের শাড়ি,
আমার তখন একলা লাগত ভারী ——-
মেঘকে আমার আকাশ বুকেই লাগত ভারী বেশ …
লাগত ভীষণ ভালো,

সমুদ্র সৈকত নয়!

জ‍্যোৎস্না আঁচল বিছিয়ে দিয়ে
মেঘ আমায় ছোট্ট একটা
সংসার দিল —
আপন হাতে গুছিয়ে
ধুলো বালি খেলার ছলে..

তেঁতুলখোলায় দু’মুঠো চাল
ফুটিয়ে নিতাম মিছামিছি …
আনাজ পাতি
কতকিছু সারি সারি
দা- বঁটি,
থালা বাটি
ঘটি বাটি,
পুতুল খেলার দিনগুলোয়
অন‍্য রকম আনন্দ ছিল
বুঝতে পারি।

যেন একটি নীড়ে দু’টি পাখি
ভালোবাসায় মাখামাখি …
এমন নাকি —-
ওই বয়সে ভালোবাসার বুঝিটা কি ?

ছোট্ট বেলার ———
পুতুল খেলার
সেই দিনগুলো আজ হারিয়ে গেছে কই –?

আসলেই কি কখনোই সেই পুতুল খেলার বয়সে —-
মেঘ বা সাগর নামে
কেউ ছিল ?
জানা হয়নি …!

আমি এখন লিখতে পারি
এক ডায়েরি,
এক পৃথিবী …

সত্যি যদি এমন হতো
পুতুল খেলার দিনগুলোতে তোমায় পেতাম —-
মেঘ,
মেঘ পিয়াসী মনের রাজ‍্যে
হতাম আমি মিথের রাণী
তোমার জন্য !

02.04.2019

নষ্ট নীড়ে

নষ্ট নীড়ে

নীল সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসে …
এক পৃথিবীর কষ্ট হবো
শ্রাবণ ভাবনায় —
আকাশ বুকে মেঘ হবো,
মনে মনে –
খুব গোপনে
দুঃখ পুষে রাখবো
এক সমুদ্র —

উত্তাল সমুদ্রের গর্জন হবো
নৈঃশব্দ্যের দুপুরে,
কাল বৈশাখী ঝড় হবো।

নিবিড় নিশুতি রাতের নিস্তব্ধতা মাড়াবো –
এক পৃথিবীর বিষণ্নতা বুকে জড়াবো …

এক হৃদয়ের কড়িকাঠ
পুড়ে পুড়ে
এক উনান ছাই হবো।

01.04.2019

এক মন

এক মন

তোমার আকাশে আমি রাত জাগা
শুকতারা হয়ে ফুটে আছি শত বছর ধরে,
কখনও শঙ্খচিলের বেশে
ডানা মেলে উড়ে গেছি দূরের দেশে,
আমি আকাশের বুক থেকে তুলে নিতে পারি
চিল মেঘ ডানার এক মুঠো সোনালি স্বপ্ন কুসুম ;
আমি খসাতে পারি নীল আঁচল
জানি খুব কাছেই আছো তুমি
তবু মনে হয় কত দূরের !
চাপাবনে জ্যোৎস্না হয়ে ফুটেছো
রজনীগন্ধার ছড়ায় ছড়ায়,

আকাশ, সমুদ্র …
চাঁদের পাহাড় মেঘতিকা নীলিমার স্তরে
বাঁধা পড়ে আছে
যেনবা সীমাহীন নীল কষ্টের ঢেউ ক্রমাগত
দু’ হাতে ভাঙ্গছে,
এক কষ্ট সমুদ্র সাঁতরিয়ে আমি বিষাদের
পৃথিবী দেব পাড়ি,
আমি সাদা বরফের স্রোত ভাঙ্গছি দ্রুত ;

তুমি আকাশ নোনা সমুদ্র,
পৃথিবী পড়ছ আমার চোখের তারায় –
জান তো, পরশ পাথর ও গলতে চায়
ভালবাসার উত্তাপে,
কাল ছিল সাদা পূর্ণিমা রাত
আমার চোখ ভিজেছিল ধূসর মেঘের সাদা বৃষ্টিতে,
দৃষ্টি ছিল ঝাপসা কাঁপছিল থির থির !
তুমি মিছেই গোলাপ খোঁজ আমার মুখে
জান তো, কষ্টে জর্জরিত হয়ে এক ফালি
দুঃখরা আজ ও বেঁচে আছে
আমার চোখে — গোলাপ কাঁটা হয়ে,
এ চোখে আকাশ ঘুমায়,
আর কত রাত জেগে জেগে চাঁদ নীল আকাশকে পাহারা দেবে?

তোমার আকাশে আমি প্রেম সমুদ্র ভাসাব,
তুমি শ্রাবণ মেঘের জল ধারা হয়েছ আমার চোখে ।
আমি চেয়েছিলাম বৃষ্টি রাতের একটু ছোঁয়া,
সুখের নায়ে ভাসব বলে – তোমার হাতের ছায়ায় ঘেরা
একটু মায়া : ও দু’ টি হাত দাও না বাড়িয়ে
আমার তরে, আমি হৃদ মাঝারে বন্ধু হব তোমার শতবার ;
শতবাঁধা ছিঁড়ে চেয়েছি ব্যাকুল চোখের মায়ায় এক
পলক তোমায় দেখতে – হায় রে !

আমার দিন কাটে না রাত কাটে না…
ভাসছি আমি স্রোতের বিপরীতে
তুমি তৃষিত নিঃশ্বাসে, প্রশ্বাসের এক তৃষ্ণার্ত
নিবিড় মেঘ খণ্ড, কখনও শ্রাবণ মেঘে বৃষ্টি হয়ে ঝরো
কখনও নীল সমুদ্র হয়েই জুড়াও আমার মন,
অশান্ত ঢেউ ভাঙ্গো তুমি আমার সমুদ্র চোখে,
তুমি আছ আমার নিপাট দেহ পাঠের সারা মন জুড়ে; এক মন !

31.03.2019

একগুচ্ছ কবিতা

“তুমি বৃষ্টিতে ভিজে সারা দিন- রাত
নেশা নেশা খেলো
চোখ খোল আর বুঁজো …
উষ্ণ উষ্ণতায় তুমি শুধু নীড়
আর আমি সেই নীড় হারা পাখি —
আমি শুধু তোমাকেই দেখি,
যেখান থেকে চোখের পাতা ছুঁয়ে,
নেমে আসে চিকচিকে নোনা জল
আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি-
তুমি নীড় –
তোমার কবিতাটাই আমি লিখি।”

দুই.
“আকাশের চাঁদ তুমি – নক্ষত্র ও তুমি
আকাশের নীল তুমি-রংধনুটাও তুমি
কাপড়ের বুনন তুমি শিল্পীর কারুকাজ তুমি
সুখের স্বর্গ তুমি আমার পৃথিবী তুমি
আমার নিঃশ্বাস তুমি আমার অনুভূতি ও
তুমি
তুমি আমার সর্ব ইন্দ্রিয় তুমিতে তুমি।”

তিন.
“শুদ্ধ — সুন্দর মুখ, তীক্ষ্ণ নাসিকা
উজ্জ্বল পবিত্র বর্ণ গায়ের রং তার
প্রফুল্ল অধরে হাসি মাখা,
ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে যৌবন
কথা আছে তেমনি থাকবে –
যতদিন আমি আছি
সেও থাকবে তেমনি অবিকল।”

চার.
“এই হৃদয় ছুঁয়েছে তোমার হৃদয়
এই ওষ্ঠ বলেছে তোমাকে ভালবাসি
তোমারা আসলে কথা রাখো না …
তোমাদের জন্য সুন্দর হৃদয় তছনছ হয়ে যায়,
দেবী আমি সবসময় তোমার কথা মনে রাখব
মানুষ দূরে চলে গেলে ছায়া থাকে
স্মৃতি থাকে,
ভালবাসা থাকে –
আর কিছু থাকে না
দেবী আমি সত্যি মরে যাব …
আমি মরে যাব শুধু তোমার জন্য।”

পাঁচ.
“এ দেহে প্রাণ দিলে
চোখের ভিতর দিলে কেন তবে
নোনা জল ;
আমাকে দূঃখই যদি দিলে
কেন তবে দুঃখ মোচনের সময় টুকু দিলে না ?
এই যে ভালবাসা দিলে –
আবার তা দু’হাতে কেন কেঁড়ে নিলে ?
দু’চোখে স্বপ্নই যদি দিলে — এঁকে
দু’পা’য় শিকল কেন তবে পরালে ?
বুকে দিলে বিশ্বাসের বীজ …
সে বুকে ছুরি মেরে আবার কেন তবে দিলে ———- যন্ত্রণার বিষের জ্বালা !!”

28.03.2019

বিরহ ব্যথা

বিরহ ব্যথা

ঠোঁটের বাঁকে এক চিলতে দুষ্টু হাসি দেখে
তুমি বলেছিলে –
এ কিসের হাসি ?
আমি চঞ্চলা হরিণীর মত বললাম,
তোমাকে ভালবাসি…..
এ সেই আনন্দের বহিঃ প্রকাশ,
তুমি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলে অমনি !

একদিন আমার কাছ থেকে তুমি বিদায় চাইলে,
আমি কাঁদলাম —
তুমি আমার চোখের জল স্পর্শ করে বললে,
এ কিসের জল ?
আমি বিরহ বেদনায় নীল হতে হতে বললাম,
তুমি আমায় ছেড়ে যাচ্ছ
এ সেই কষ্টের ( নোনাজল) বহিঃপ্রকাশ
আমার বুকের গভীরে ক্ষত সৃষ্টি করে
তুমি চলে গেলে…
আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখলাম,
আমি কাঁদলাম !

27.12.2015

অগ্নি ঝরা মার্চ

অগ্নি ঝরা মার্চ

২৬ মানেই বাংলার বুকে স্বাধীনতার অবাক সূর্যোদয়
পদ্মা মেঘনা যমুনার উত্তাল জলোচ্ছ্বাসে
এই কথাটি কেবল ভেসে বেড়াই –
তুমি অগ্নি ঝরা উত্তাল মার্চের ১ থেকে ৩১ দিন :
পাকিস্তানি হায়েনারা বাঙালির স্বপ্ন করেছিল লীন
বাংলার দামাল ছেলেরা থেমে থাকিনি সেদিন —
কামার, কুমার, জেলে তাঁতি, ছাত্র- শিক্ষক,
কুলি, মজুর দল মত নির্বিশেষে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র হাতে –
চিরায়ত বাংলার পরাধীনতার লজ্জার গ্লানি মুছে দিতে ,
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধ নামের মরণ সমুদ্রে …

২৫ মার্চের ভয়ঙ্কর সেই কালো রাতে
বাংলার আকাশ বাতাসে খুনের মহা সমুদ্র গিয়েছিল বয়ে …
অনেক ত্যাগের বিনিময়,
অগ্নি ঝরা মার্চ তুমি ছিনিয়ে এনেছিলে
বাংলার স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা ;
অগ্নি ঝরা মার্চ তুমি চৈতালি দুপুরের খাঁ খাঁ রৌদ্দুর,
উত্তাল মার্চের প্রথম সূর্যোদয় ছিল অন্য রকম …
শেষ সূর্যোদয় ছিল বড় বেশি প্রাপ্তির …!

25.03.2019

কি করে বলব তোমাকে

কি করে বলব তোমাকে

তুমি নীল গোলাপ হবে ?
স্বপ্ন গুলো রং ধনু প্রজাপতি ডানা হবে
কিম্বা তুমি লাল, নীল গোলাপ হলে —
স্বপ্ন গুলো রং ধনুর সাত রং প্রজাপতি ডানা মেলবে,
মনের সুখে আকাশ বুকে
তুমি কবিতা হবে ?

ছোট্ট ছোট্ট শব্দ গুলো ভাষা পাবে
নির্জন গোপনে কোন এক কবি লিখবে ;
নীল দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে থাকবে
কবিতার খয়েরি মণির সবুজ চোখ,
প্রকৃতির হলুদ শহরে গাঢ় স্তব্ধতার
এক নির্জন সন্ধ্যা খসে খসে পড়বে,
মাধবীলতার স্বপ্ন কুঁড়ি চোখ মেলবে একটু একটু করে
রাত ধীরে ধীরে নিঃসঙ্গতার আঁচলে ডানা মেলবে
তুমি নীল ঘাস ফুল হবে ?

পথের দু’পাশে বিষন্ন প্রকৃতি পূর্ণতা পাবে,
প্রকৃতির সকল বিবর্ণতা মুছে যাবে
ঘাস ফুল তোমার ঠোঁটে –
নতুন ভোরের শিশির ভালবাসার নগ্নতায় স্বপ্ন আঁকবে !!

একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি

একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি

হ্যালো…
আমি একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি
সেই কবিকে চিনি না,
কবিতাটা পড়ার পর
কী এক সীমাহীন গভীর ভাললাগা অনুভূতি
আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে বার বার,
পৃথিবীর তাবত শব্দ ভাঙ্গার খেলা করে কবিরা:
শুধু মানুষের মন বুঝতে চায় না
সব কবিদের স্বপ্ন কি দুঃখে জর্জরিত হয়ে
ভেঙ্গে যায় ? হয়তো না।

কবি কার সঙ্গে কথা বলে
কেমন করে হাঁটে
কেমন করে সময় কাটায়?
কোন বিকেলের কাছে একা হয় কিনা ?
কবিতায় কিছুই লেখে না কবি,
অথচ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
আর কবিও বড় নির্বাক, নীরব থাকে …
কবির সঙ্গে দেখা করার জন্য
আমি শত ভাগ মন স্থির করে ফেলি
অনেক কষ্টে কবির কন্টাক্ট নম্বর জোগাড় করি,
একদিন নক্ষত্র ফোঁটা রাতে ফোন করি কবিকে।

হ্যালো…
আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?
হ্যাঁ..হ্যাঁ.. পাচ্ছি,
আপনি বলুন- হ্যালো… হ্যালো…
আপনি কি ” সকাল নামছে তোমার চোখে”
কবিতার লেখক বলছেন?
লেখক নয় লেখিকা,
জ্বী… বলছি –

আপনি কে বলছেন ?
প্লিজ আপনার পরিচয়টা বলবেন কী?
আমি কবির কণ্ঠস্বরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি ক্রমাগত –
বললাম আমি আপনার এক ক্ষুদ্র পাঠক মাত্র,
আমাকে আপনি চিনবেন না!
আমি আপনার একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি সদ্য-
আর তাই আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়,
আপনার কি একটু সময় হবে ?
যদি অভয় দেন… একটু সময়, আমার জন্য ?
দেখুন না- প্লিজ ! না করবেন না –
আমি আপনার কবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ –
প্লিজ ! প্লিজ ! প্লিজ কবি….
আমাকে নিরাশ করবেন না —
আপনি এখন কি করছেন?
কবি বড় অভিমানী কণ্ঠে বললেন,
স্ট্রেঞ্জ ? এতসব জানার,
শোনার কি প্রয়োজন আছে আপনার বলুন তো !
কবিতার প্রেমে পড়েছেন, ব্যস –
ও পর্যন্তই থেমে যান না,
তারপর ও এত কৌতূহল কেন আপনার?
আমি কাঁপা ও চাপা স্বরে বললাম,
সেই কবিকে জানব না, শুনব না, দেখব না,
একি বলছেন আপনি? বলুন তাকি হয় ?
প্লিজ ! বলুন না এখন কি করছেন?
কবি বললেন,আমি এখন গভীর নৈঃশব্দ্যের ডানা খসিয়ে
নিঃসীম শূন্যতার সমুদ্র বুকে নিয়ে বসে আছি –
যে সমুদ্রের চারিদিক ঝড়, জল
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে নির্জন প্রকৃতি ;
আর আমি আমার দুঃখ গুলো
নিস্তব্ধ সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছি
কাগজের নৌকা করে !

এখন আমার ভেতর বাহির সবটা জুড়ে কেবল
বৃষ্টি আর বৃষ্টির উচ্ছ্বাস-
কবিকে কেউ খুঁজো না তোমরা
কবিতায় তুষ্ট থেকো,
কেন না, কবিতা আমার সৃষ্টির কারুকার্য !
আমার কাছে অবশিষ্ট আর কোন শব্দ গচ্ছিত নেই,
সব তুলে দিয়েছি কবিতার বুকে
আমার ভেতরে কেবলই ক’ ফোঁটা দুঃখ আছে,
দুঃখরা কান্নার সুর হয়ে বাজে বুকে :
জল,ঝড়,জলোচ্ছ্বাসে গভীর সমুদ্রের
বুকে কতখানি দুঃখ জমেছে
আমি একটু মেপে আসি,
তোমরা আর আমায় খুঁজো না —-
আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে
শতাব্দীর নতুন কোন এক পৃথিবী !

এরপর কেটে গেছে অনেক দিন,
অনেকটা সময় গত হয়েছে —
এক পড়ন্ত বিকেলের সবটুকু মায়া নিয়ে
এক পাঠক হাজির হয়েছে আমার বাসায়,
আমি তো রীতিমতো অবাক, এই কে তুমি?
এক গাল হেসে বলল সে –
এরই মধ্যে সব ভুলে বসে আছেন?
আমি সেই যে এক পাঠক :

আপনার কবিতার প্রেমে পড়েছি,
আপনার পৃথিবীটা আমি দেখতে এসেছি স্বচোখে….
কেমন সে পৃথিবী, আচ্ছা কবি, একটা অনুরোধ করব
“সকাল নামছে তোমার চোখে” কবিতাটা
আপনার গোটা পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে হবে,
আর কবিতার কোন কপি থাকলে
সেটাও মুছে ফেলতে হবে,
কবি একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
তা কি করে সম্ভব?
তোমার অডিসি তো কম না? ঠাট্টা করছ?
জানো তুমি কি বলছ?
কোন কবির পৃথিবী থেকে তার লেখা কবিতা মুছে ফেলা সম্ভব?
তুমি শুনেছ কখন ও ?
খোঁজ নিয়ে দেখো তো?
ওই কবিতাটা আমার পৃথিবী জুড়ে
একান্তই দুঃখ কথা — আর তুমি?
কবির মন থেকে সেই দুঃখকথা মুছে ফেলতে চাইছ?
কতখানি দুঃসাহস তোমার ?
দেখো, চেষ্টা করে পার কিনা –
পাঠক বলল, হ্যাঁ আমাকে পারতেই হবে
বিশ্বাস করুন, আপনার গোটা পৃথিবী থেকে
আমি কবিতাটা মুছে দেব কেন জানেন ? কবিতাটা একান্তই
আমার ভালবাসা হয়ে গেছে !
কবি বললেন, সে তোমার ব্যাপার,
তবে চেষ্টা করে দেখো তুমি —
আগন্তক পাঠক মুখ তুলে বলল,
অনেক দিন সময় লাগবে।
তবে আমি কথা দিচ্ছি,
আমি কবিতাটা আপনার মন থেকে মুছে দেবোই,
কবি বললেন, কত আর সময় নেবে তুমি?
এই ধরো, এক মাস দু’ মাস, ছ’ মাস, এক বছর এক যুগ –
যত খুশি সময় নাও- আমার কোন আপত্তি নেই –

পাঠক কবিতার এক একটি শব্দ মোছে
আর থমকে দাঁড়ায় —
এই ভাবে প্রায় দু’ বছর সময় গড়িয়ে গেল ,
কবিতাটা মোছা খুব কঠিন কাজ ছিল,
কবিতাটা মোছা প্রায় শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে –
হঠাৎ এক রাত্রে পাঠক আবিষ্কার করল,
কবিতা মোছা শেষে কবির ছবিটায় ঘুরে ফিরে কবিতা হয়ে উঠছে,
পাঠক তখন মুগ্ধ কবির প্রেমে !

পাঠক একদিন ভর দুপুরে এক রাজ্য ক্লান্তি
নিয়ে কবির বাসায় হাজির হলো,
কবি জানতে চাইলেন শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে….
আর একটাও শব্দ অবশিষ্ট নেই?
পুরো কবিতাটা কি মুছে গেছে?
তবে কি আমিই হেরে গেছি তোমার কাছে?
পাঠক একটু একটু করে মুখ তুলে বলল,
না —
প্রথমত, আমি আপনাকেই ভালবেসেছি,
দ্বিতীয়ত, আপনার সৃষ্টি কর্ম কবিতাকে :

আমি যতবার কবিতাটাকে মোছার চেষ্টা করেছি,
ঠিক ততবার আপনার ছবি কবিতা হয়ে
ফুটে উঠেছে কবিতার ক্যানভাসে –
আমি অভিভূত …
আমি বিস্মায়াভূত! আপনার প্রেমে পড়ে ;
সব শেষে বুঝতে পেরেছি —-
আমি আপনাকেই ভালবেসেছি কবি !
কবি এক কঠিন দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে বললেন,
আমার একান্তই দুঃখটুকু তুমি মুছে দিতে চাইলে দু’ হাতে?
ও কবিতাটা আমার বুক জুড়ে ক্ষত ভরা এক দুঃখ জমিন–
ওকে তুমি কি করে মুছবে?
ওটুকু দুঃখ যে আমার কষ্ট বিলাসী মনটা আঁকড়ে বেঁচে আছে –
আর আমিও বেঁচে আছি দুঃখ বিলাসী হয়ে…

যাও – তোমাকে ক্ষমা করে দিলেম,
তুমি আমার ভালবাসার মেঘ অরণ‍্য শিশির হয়ে
অভিনব কৌশলে অভিনয় না করলেই পারতে,
তোমার ভালবাসার জয় হয়েছে হেরে গেছি আমি….