হাসনাহেনা রানু এর সকল পোস্ট

পঞ্চাশ পৃষ্ঠা

পঞ্চাশ পৃষ্ঠা

অচেনা গল্পের বারান্দায় হাত রাখি
নায়িকার এক চোখে
অনুভূতির মৌলিক ঘ্রাণ দেখি,
অন‍্য চোখে সম্পূর্ণ নগ্ন আকাশ
কচি কলাপাতা মেঘ
পাথর কুচি মন ;
স্বপ্ন দেখে
সুস্থির এক আকাশে পাখি উড়ার স্বপ্ন,
রাত্রির ঠোঁটে ডুবে আছে
এক টুকরো মিষ্টি হাসি
এই সব দিনরাত্রি নিয়েই
আরণ‍্যকের সুখী সংসার —
হঠাৎ কি যে হয় …
গল্পের পঞ্চাশ পৃষ্ঠায় নায়িকার বিরহ শোক –
আরণ্যক পরকিয়ায় মত্ত ,
সংকুচিত নায়িকার বিবেকবোধ :
এই শেষ কথা নয় –
গল্পের করিডোর জুড়ে উঠে এসেছে
গরম ধোঁয়া,
সংসার ভাঙ্গনের সুর!

গজারি বনের শীতল ছায়া থেকে একটি হলুদ পাখির এই মাত্র মৃত্যু হল –
সেই ব‍্যথাহত পাখি আর কেউ নয়
পঞ্চাশ পৃষ্ঠা গল্পের নায়িকা
আরণ্যকের চৈতন্য বোধ ফেরে একটু একটু করে
ঝাপসা হয়ে আসে একটি মানবিক মূখচ্ছবি,
স্তম্ভিত চেতনায় আছড়ে পড়ে
সামুদ্রিক ঢেউ –
চুম্বনমত্ত পাহাড়ের ঘনিষ্ঠতা থেকে নেমে এসেছে
বিরহ জল :
এক এক ফোঁটা জলে সৃষ্ট এক সমুদ্র কাহন –
আর্দ্র শ‍্যাওলার মতো
সমুদ্র জলে ভেসে গেছে
পঞ্চাশ পৃষ্ঠার গল্প …

গোপন পাসওয়ার্ড

গোপন পাসওয়ার্ড

এই সংসার অরণ্য ছেড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ জুঁই ফুল স্বপ্ন মাড়িয়ে
তুমি কোথায় যাবে–
চাঁদ, পাহাড়, সাগর
নাকি মঙ্গল গ্রহে…….. ?

তুমি হারাতে পার, কোন নক্ষত্রলোকে –
দু’হাতে নৈঃশব্দ্যের ঢেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে
তুমি হারাতে পার নিঃস্তব্ধ আর নির্জনতার শেষ ঠিকানায়।

তুমি শিশির স্বপ্ন গাঁথা বরফ নদীর কাব্য উপাখ্যান হয়ে-
অাকাশ পালক ছুঁয়ে নিঃসঙ্গ পৃথিবীর হলুদ পাতায় টুপটাপ ঝরে পড়তে পার :
ঘাস ফড়িং নীড়ে- সময় অসময়ে-
সবুজ অরণ্যে গোলাপ, অর্কিড কিম্বা
কুহেলী রাতের অাবরণ ছিঁড়ে শেষ রাতের ডানায় ফোঁটা
এক ঝাড় হাসনাহেনায় তোমার নিঃশব্দ বিচরণ…….।

নীলাকাশের চিল মেঘ সোনালি ডানায় ভেসে
প্রেমিকার গোপন পাসওয়ার্ডে তুমি হারাতে পার-
তুমি হারাতে পার অনন্ত সবুজ বিশ্বাসের শেকড় উপড়ে
আকাশ, গোধূলী স্বপ্ন ছায়ায়–
সাগর, অরণ্য, ফুল, পাখি, নীড়
ঘাস ফড়িং প্রজাপতি ডানায়;
অথবা কবিতার অক্ষরে অক্ষরে –
গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দে………..!

বকুল কুড়ানো ভোরের অাঙিনায় তুমি হারাতে পার-
প্রজাপতি ডানায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে –
হারাতে পার মুঠো মুঠো ঘাস ফুলে,
শিশির শব্দ মিছিলে,
সবুজ মাঠে-ঘাটে
পাহাড়ি লতায় -পাতায়
শস্যের দানায়
শশা ক্ষেতে
লকলকে দূর্বাঘাসে-
মটর সুটির ক্ষেতে……..।

তুমি হারাতে পার, হলুদিয়া পাখির দু’চোখের উত্থাল-পাথাল স্বপ্ন নীড়ে-
তুমি হারাতে পার, সোনালি বিকেলের মধ্যবৃত্ত জীবনে
বেডরুমের সুনিবিড় শীতল ছায়ায় –
মধ্যরাতের চোখ জুড়ে আছে দুধ ঘুম স্বপ্ন কুসুম-
কাশফুল ভালবাসা-
বেঁচে থাকার অনন্ত আশ্বাস-
আর সেই পুরানো বিশ্বাসে ফেরা —
তবু তুমি হারাবে……..!

মন চুরি খেলা ঘরে

মন চুরি খেলা ঘরে

তুমি যদি মেঘ হয়ে অাকাশ
জুড়ে থাক …
তুমি যদি শ্রাবণ মেঘে বকুল ডালে বৃষ্টি হয়ে
ঝরো …
তবে, তোমাকে ডাকছি শোন,
কোন এক বিষণ্ন প্রহরে সাদা মেঘে
বৃষ্টি হয়ে অামায় ভিজিয়ে দিও!

তুমি যদি জল জ্যোৎস্নায় শিশির মেখে
গহন রাত্রির একাকীত্ব ছুঁয়ে দিয়ে
গোলাপ হয়ে ফোঁট আর ঝরো,
সেই এক একটি গোলাপ যদি তুমি হও
তবে, তোমায় বলছি শোন –
অামার ভাবনার মৌনতা ছুঁয়ে তুমি
গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্নীল নীল গোলাপ হয়ে
ফুটে থেকো …
আমার কানামাছি মন চুরি মন অরণ্য
খেলা ঘরে :

তুমি যদি জোছনা ভেজা নিঃশব্দ রাত্রির মৌনতায়
ছবির মত ভেসে ওঠো
এক টুকরো কড়া- রৌদ্রের বিছানায়
তবে, তোমায় বলছি শোন —
নীলাকাশের ভাঁজে ভাঁজে নক্ষত্রদের ভীড়ে
নীলিমার নীল আঁচল ছড়িয়ে দিও,
কাঙ্খিত তৃষিত সোনালি ডানার চিল মেঘ পালকের খামে;
আমার জন্য শ্রাবণ বিকেল তুলে রেখো …
সাদা সাদা মেঘের ভেঁজা ঠোঁটে থোকা থোকা
কামিনী ফোঁটা অাবেগী স্বপ্নরা ভিজেছিল
অরণ্যে সবুজ শিশিরে
তুমি যদি মন কাড়া কবিতার ছন্দে রাঙিয়ে দাও
শেষ বিকেলের টি –টেবিলের অাড্ডা ;
তবে, তোমায় বলছি শোন –
স্বপ্ন হয়ে গভীর রাত্রে সুখ ছোঁয়ার নেশায়
চুপি চুপি এসো তুমি আমার কাছে।

তোমার ঘুম কাড়া রংধনু প্রজাপতি নরম ঠোঁটের
আলতো ছোঁয়ায় রাঙিয়ে দিও আমার কপাল
অচেনা – সুখ সুখ ফুল কুঁড়ি সবুজ পাতার
উচ্ছ্বাসিত শিহরণে ,
কেঁপে কেঁপে ওঠে আমার কবিতা লেখা
শরৎ সকাল… … … … !

21.03.2019

৯৯৯ টা সিলভার চাঁদ ও স্বপ্ন কথা

৯৯৯ টা সিলভার চাঁদ ও স্বপ্ন কথা

৯৯৯ টা সিলভার চাঁদের কাছে
স্বপ্ন বন্ধক রেখেছিলাম গত জন্মে
এখন আমি শত জন্ম পার করছি,
একটা মাটির শহর মেঘের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সটান
আর আমি এখন কাঁচের পৃথিবীতে অবস্থান করছি!
আমার মাখন মন মোমের আগুনে গলতে শুরু করেছে
হঠাৎ পাথর বৃষ্টি সে আগুন নিভিয়ে দিল,
সৃষ্টিশীল মানুষের নাকি তৃতীয় নয়ন থাকে
আমি কি তবে সৃষ্টিশীল মানুষ ?
আমি কথার মানুষ জানি ..
দহনের মানুষ:
শুধু মনের মানুষ না
আমার তৃতীয় নয়ন আছে কিনা জানিনা –

আমার একটা গল্প মনে পড়েছে
গত জন্মে আমি কি একটি মেয়ে ছিলাম?
নাকি শত ডানার নীল প্রজাপতি;
আমার কিছুই মনে নেই
আমার দু’চোখের তারায় শুধুই বর্তমান বেঁচে আছে
যখন আমি কাঁচের পৃথিবীতে পা রাখলাম,
অবাক চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকি
স্টিলের পৃথিবীর দিকে,
কেমন ঝকঝকে সাদা চারিদিক –
আমার আম্মা রাবারের একটি পাখি দিয়েছিলেন আমার হাতে,
হঠাৎ দেখি পাখিটা তরল মেঘের স্রোতে না ভেসে ডানা মেলে উড়ছে
আমি ভীষণ অবাক দেখে।

একটি গ্রাম‍্য বধূ কৌতুহলী চোখে নদীর ঘাটে যাচ্ছে পানি আনতে
শূন্য কাঁচের কলসি হাতে —
বধূয়াকে দেখে রাখালিয়ার ভাটিয়ালি গান থেমে গেছে,
আমার কাছে তখন সবকিছুই কেমন উল্টো পাল্টা লাগছে,
প্লাস্টিকের মানুষগুলো উল্টো পায়ে হাঁটছে!

এ জন্মে আমি আমার ডিম কুসুম রং স্বপ্ন
সিলভার চাঁদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছি –
এখন ও পর্যন্ত এটাই বড় সারপ্রাইজ!

04.12.2018

শত অনুরাগের জ‍্যোৎস্না

শত অনুরাগের জ‍্যোৎস্না

হীম শীতে এক টুকরো রৌদ্দুর বাসনা
এই আমাকে পেয়ে বসেছে
কবিতার মতোই …
গভীর রাতে শব্দহীনতার নৈঃশব্দ্যে কবিতা পড়া
কবিতা লেখা —
এ আমার নেশার মতোই হয়ে গেছে।
রাতের স্তব্ধতার আড়াল ভেঙ্গে
কবিতা লিখতে আমার ভীষণ ভাললাগে!
নিঃশব্দ রাতের আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে,
চারিদিক অন্ধকার
সুনসান প্রকৃতি :
চেনা আকাশ, অচেনা মেঘ
নীল কষ্ট আর নিঃশ্ছিদ্র অন্ধকার ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মেঘ রোদ্রের লুকোচুরি খেলা চলে অবিরত।
খোলা জানালার পাশে কুয়াশার সাদা ধোঁয়ায় দৃষ্টি
আটকে গেছে বহুবার,
এ অনেক পুরনো দিনের কথা !

কুয়াশার সাদা ধোঁয়া শিশুবেলার প্রজাপতি ধরার নেশার মতোই,
খুব ছুঁতে ইচ্ছে করলো —

সব কিছুই স্বপ্নের মতো লাগছিল
শিশুবেলা কেমন ছিল,
আর আজ কেমন আছি —
কত বিচিত্র ই — না মানুষের জীবন !

আমি কি তখন ভেবেছিলাম, বড় হয়ে
এই আমি গভীর রাতের সঙ্গে সন্ধি করব ?
কিম্বা কবিতার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে …

কবিতা আমার নিঃশ্বাস
এক টুকরো স্বপ্ন সারথী ;
শত অনুরাগের জ‍্যোৎস্নার জলে ডোবা মনে
তবুও স্বপ্ন বেঁচে আছে,
আজীবন ওরা বেঁচে থাক
গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতার শব্দ নীড়ে !

19.03.2019

প্রিয়তি মেঘ মন

প্রিয়তি মেঘ মন

এক সমুদ্র জল ভেঙ্গে
অবাধ বালুচরে লিখেছিলাম,
একটি নাম
মেঘ মন :
হঠাৎ বৃষ্টিতে সে নাম
ধুয়ে গেছে,
মুছে গেছে অপার স্বপ্ন সম্ভাবনাও –

আমি এখন এক ফোঁটা দুঃখ জলে ভাসছি
এক সমুদ্র নোনা জলের ঢেউ ভেঙ্গে
বর্ষাতি ; বর্ষা জলে …

সমুদ্র তীরে এপার ওপার
হেঁটে হেঁটে কতখানি বিষণ্ন
এই আমি –!
হঠাৎ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি
আমার নীলাক্ষী জুড়ে একটি নাম ভাসছে
অবাধ ঢেউ — এ
প্রিয়তি মন — !

আবার আমি ফিরে এলাম
পোড় খাওয়া জীবনের নোনা ধরা
জলীয় যন্ত্রণায়,
আমার ভেজা চোখের পাতায়
ক্ষীণ দৃষ্টি যেন কার …
এবার ঠাঁই দাও …
ঠাঁই দাও আমায়
মেঘ মন …
তোমার চিলেকোঠা মনে,
মন সমুদ্র অপর –

__________
18.03.2019

নগ্ন নির্বাসন

নগ্ন নির্বাসন

প্রশ্নবিদ্ধ সময় আঙুল তুলেছে বারবার
মৃত্যুর হীমশীতল স্পর্শ এখন
গোলাপ শরীরে —–
গোলাপের ঝরে পড়ার সময় হয়েছে,
আমি এখন ডুবে আছি গোলাপ ভাবনায় …
মন গোলাপ ব্যথা ছুঁয়ে আছে,
আজ সারাদিন গোলাপ কেঁদেছে —-
কি করে বোঝাবো আমরাও নই মৃত্যু হীন,
দু’দিন আগে পরে …
এই তো পার্থক্য :
এতো গেল গোলাপ কাহান —–

ঘাসের সাদা বিছানায় বিন্দু বিন্দু শিশির
কিছু ঘুমিয়ে আছে,
কিছু জেগে
কিছু স্বপ্ন আঁকছে
কিছু আবার খালি চোখে —

নদীর সাদা জলে ভেসে গেছে ঢেউ
ঘুমন্ত জ্যোৎস্না
কেঁপে কেঁপে উঠছে,
নরম জলের ঢেউয়ে জ্যোৎস্নার ছড়াছড়ি,
নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে ডানা মেলেছে — ‌।

আকাশ বুকে মেঘ ডানা খসে বৃষ্টি হয়ে
টুপটাপ ঝরছে সমুদ্র বুকে :
জলের ওপর জল পড়ার শব্দ কাঁপন তুলছে !

জ্যোৎস্না ধোঁয়া রাত্রি এখন কবিতার উষ্ণ ঠোঁটে
বৃষ্টি রাতে ভাবনার মৌনতা ছুঁয়ে
দারুচিনি দ্বীপে জেগে আছি আমি আর কিছু কবিতা ;

একটা অসমাপ্ত গল্প ঝুম বৃষ্টি রাতে
ধূসর দিগন্তে নিদ্রায় ঢলে পড়েছে
সন্ধ্যার নষ্ট নীড়ে :
গল্পের প্লাটফর্মে আমি আর দাঁড়াই নি
বুঝেছি এ আমার নগ্ন নির্বাসন ;
আমি এখন গোলাপ, শিশির জ্যোৎস্না নদীর বহতা স্রোতে
ক্ষয়ে যাওয়া সময়ের ….

নীরব দহনে একটা অসমাপ্ত গল্প ছুঁয়ে আছি !

_________
16.03.2019

নক্ষত্রের মৃত শহরে

নক্ষত্রের মৃত শহরে

আমার সম্মুখে এখন শান্ত দীঘির জলে সবুজ মায়ায় ভরা কলমি গুচ্ছ
ঢেউয়ের জলে লুকোচুরি খেলছে —
কলমি গুচ্ছে বেগুনি রঙের ফুল ফুটেছে,
দেখার মত :
চারিদিকে জল আর জল
পাশেই সবুজ কচি ধানের ক্ষেতে …
ঢেউয়ের দোলায় দৃষ্টি ছুঁয়েছে!
আমার দৃষ্টি শূন্য আকাশ …
সাদা কালো মেঘ নিয়ে খেলছে।

আমি রং চটা বিকেল ছেড়ে এসেছি বহুকাল …
বিমুগ্ধ নয়নে দৃষ্টি মেলে কেবলই মাতালের মধ‍্যরাতে খুঁজেছি —

আশ্চর্য ! সুন্দর এক পবিত্র ভোর
খুঁজে খুঁজে ব‍্যর্থ হয়েছি
পাইনি ;
স্নিগ্ধ ভোর আমার খুব প্রয়োজন
আর কোন ধূসর সন্ধ্যা চাই না,
চাই না বিষাক্ত কোন রাত
যে রাতের অন্ধকারে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ….
রাতের লাবণ্য গিলেছে অদ্ভুত আঁধার এক —
এই রাতকে আমি কবিতা থেকে ছুটি দিয়েছি
সেই কবে,
কিন্তু আজও কোন স্নিগ্ধ ভোরের দেখা পেলাম না
এ আমার বড় কষ্ট!
বলতে পারি কষ্টের আড়ালে এক পরাজয় …!

অনেক পরে জেনেছি —
স্নিগ্ধ ভোর চিল মেঘ ডানায় উড়ে
ধূসর রৌদ্রের গন্ধ মেখে
মৃত নক্ষত্রদের শহরে চলে গেছে!

14.03.2019

প্রেম বিপাশা

প্রেম বিপাশা

অর্ধেক জীবন গেল আমার কবিতা ভালবেসে বেসে
বাকী জীবন নয় কেন ?
নিঃশব্দ প্রকৃতি, ততোটাই স্তব্ধ পৃথিবী
নীলাকাশ রাতের খণ্ড খণ্ড মেঘ
ভোরের লাল সূর্যটা বৃষ্টির দিনে ঢাকা পড়ে কেমন করে …
আমার তখন ভাললাগে না
আবার মেঘ বৃষ্টি আলো ছায়ার লুকোচুরি খেলা আমার ভীষণ প্রিয়!
বৃষ্টি ছেড়ে দূরে থাকতে পারি না —

আমার সকাল প্রিয় সন্ধ্যা মধ‍্যরাত …
মেঘলা বিকেল অন‍্য রকম এক গল্প হয়ে ওঠে আমার কবিতায় :
সে গল্পের মেয়েটা প্রেম বিপাশা
আর ছেলে …
অলস দুপুরের মেঘ, মেঘ কথার হৃদস্পন্দন!
শিহরণে উত্তাপ ছড়ায়
এক কথায় গল্পটা আমাকে বহুদিন ধরে রক্তাক্ত করছে
আমি কেন গল্পটা একটি জীবন্ত গল্পে রূপ দিচ্ছি না …
গল্পের মেয়েটা এতদিন নীলাভ আকাশের দুঃখ তারা হয়ে ছিল,
মেঘের দেখা পেয়ে এতদিনে —-
একটু একটু করে
সন্ধ্যা, কিম্বা রাত বিরাতে
মেঘের কাছাকাছি শুকতারা হয়ে উঠেছে
প্রেম বিপাশার মুখে এক চিলতে হাসি।

কবে যে চুপচাপ রাতের শুরু হয়েছিল আমি জানি না
না, আমি গল্পের প্রেম বিপাশা আর মেঘের জীবনের প্রথম শুরুর রাতের কথা বলছি ….
প্রেম বিপাশা আর মেঘ ভালবাসার বাঁধনে বাঁধা !

আজ আর ওদের মাঝে কোন দেয়াল নেই
জল ও জ‍্যোৎস্নায় মাখামাখি ওদের ভালবাসা ;
জ‍্যোৎস্নাকে শোনাব অপঠিত কবিতার গল্প।

আমি বাকী জীবন কবিতার সাথে থাকতে চাই
প্রবল ভালবাসা থেকে এ টান আমার
শুধু কবিতার জন্য :
গল্প যে ভালবাসি না তা নয় ——
আর উপন্যাস ভাল লাগে কতখানি সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না —

হয়তো প্রেম বিপাশা আর মেঘ
একদিন রোমান্টিক এক উপন্যাস হয়ে উঠবে,
আমার এই কবিতার গল্পে !

________________
14.03.2019

2020 সাল দুয়ারে কড়া নাড়ছে

2020 সাল দুয়ারে কড়া নাড়ছে

ধরনীর বুকে প্রলয়ংকরী অন্ধকার রাত্রি কেঁপে কেঁপে উঠছে
পৃথিবীর শিহরণে জেগেছে চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র :
এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য যখন উন্মুখ রাত্রি
দু’ফোটা জলের জন্য তৃষ্ণার্ত এই আমি,
পাশেই একটা সমুদ্র —
অথচ আমি তখন ছিলাম শূন্যতায় পরিপূর্ণ ;

এক আকাশ নীল আগুনে পুড়েছে আমার স্বপ্ন
কান্না ভেজা চোখ,
মধ্য আকাশে নীল নক্ষত্র এক শূন্য মন !

সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাজার বিশ সাল
মহাকাল বর্ষ চক্রে ঘুরে ঘুরে,
২০২০ সাল এল এবার : অবাক বিস্ময় নিয়ে
পিছনে ফেলে এসেছি কত শত বছর —
সুখ দুঃখের,
হেসে খেলে কেটেছে কত শত দিন
মাস, বছর … ক্ষয়ে গেছে কত শত সময় কাল,
পিছনে পড়ে আছে ধূলিমাখা মলাট বন্দি সময় ;

সমুদ্র ছিল নিঃশব্দ, নীরব..
আজ জীবন সমুদ্র হয়েছে উত্তাল,
রোদের কান্না বাতাসের আঁচলে ভেসে গেছে
অর্ধেক সময় জীবন থেকে চলে গেছে!
আমি পড়ে আছি একাকীত্বের শূন্য বালুতটে
অনেকটা খড়কুটোর মতোই ভাসছি অথৈ সমুদ্রে :
বুকের ভেতর ধারণ করেছি এক পৃথিবী পাপ
ক’দিন’ই বা এসেছি পৃথিবীতে ?
চলে যাওয়ার সময় এসেছে
সাদা কাফনের ভাঁজে ভাঁজে কাঁদে মন দগ্ধচিত্তে ;

বাকী জীবন অপঠিত থেকে গেল
প্রায় বিবর্ণ সময় :
২০২০ সাল বাজাবে বীণ …
আমার মতো লিখবে হয়তো আরও কত নবীন কবি,
কত দুঃখ কষ্ট সময়ের ভাঁজে ভাঁজে রেখেছি তুলে
আজ পাপ স্রোতে অশ্রু টলমল !
কষ্ট বিলাসী মন পুড়ছে অনুতাপের আগুনে
ব‍্যাকুল ব‍্যথাচিত্তে দগ্ধ মন,
বুকে ভাসে ফের বন‍্য বন‍্যা জল
সমুদ্র গর্জনে ভাসে জীবনের স্মৃতি গুলো,
অন্ধকার রাত্রির মতো ধেয়ে আসছে
শতাব্দীর রুদ্র রুপ! অদৃষ্টের পরিহাসে
ব‍্যথিত মন কেঁদে কেঁদে ভাসে দুঃখের নোনা জলে,
এসেছিলাম পৃথিবীতে ভালবাসাহীন ভালবাসার এক জীবন নিয়ে শূন্য হাতে ——

আত্মীয় স্বজন, পরিজনে কত মায়ায় জড়িয়েছি
পারিবারিক বন্ধন আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছে …
হায় সৃষ্টিকর্তা ! তোমার কি ইচ্ছে জানিনা :
পৃথিবীতে আসা যাওয়ার মাঝে
ছোট্ট এক তিল জীবনে পাপের পাহাড় জমেছে,
প্রভূ তুমি ক্ষমা করো আমাকে ;
ক্ষমা করো এই আমাকে —

আজ ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে লিখছি
মহাকাল বর্ষের এক যুগান্তের কবিতা !
আজ থেকে একশত বছর পরের
২১২০ সালের পৃথিবীতে আমি আর বেঁচে থাকবো না !

থাকবে তো পৃথিবী, নক্ষত্র চাঁদ, সূর্য
থাকবে আমার এ কবিতা,
কবিতার শিরোনাম ২০২০ সাল।
আমি বারবার ফিরে আসতে চাই
এই কবিতার পৃথিবীতে …
সবুজ গল্পের দেশে !

হয়তো নতুন ভোরে গোলাপ হয়ে ফুটবো,
নয়তো শিউলি হয়ে ঝরে পড়ার কান্নার কষ্ট সইবো —-
তবু কিছু একটা হয়ে আসব,
টলমলে কালো দীঘির স্বচ্ছ জলে শ্যাওলা হয়ে
ভেসে থাকব —

এইখানে এই পৃথিবী আমার কত পরিচিত
মাথার ওপর এক আকাশ আমার কত আপন,
নিবিড় মায়াবী রাত্রির ভাঁজে ভাঁজে কবিতার ছন্দ কথা বলে ;
মাধবীলতা সন্ধ্যা
কিম্বা কামিনী ফোঁটা মধ‍্য রাত্রি
স্নিগ্ধ ভোরে সবুজ ঘাসের সাদা ঠোঁটে ঘুমন্ত শিশিরের গল্প …
বকুল, কদমের ঘ্রাণে দূর্দান্ত ভাললাগার কথা রেখে গেলাম !

আবার আমি আসব এ পৃথিবীতে
মাইলের পর মাইল উড়ে আকাশ বুকে,
শঙ্খনীল চিলের ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মেখে —-

২১২০ শতাব্দীতে : দাঁড়িয়ে আমি পৃথিবীর কপাটে
করাঘাত করব দ্বার খোল, দ্বার খোল, আমি এসেছি
হয়তো ভিন গ্রহের নক্ষত্র হয়েই আবার আমি আসব,
জীবনানন্দ দাশের রুপসী বাংলার ধান সিড়ি নদীর তীরে!
২১২০ সালের কোন কবিতা লিখতে :
তখন কেমন হবে আমার বাংলাদেশ !
সোনার বাংলা হবে তো ?
আমার যে বড় বেশি ভয় হয় — — —

13.03.2019

রাত জাগা বিষণ্ন প্রহরে

রাত জাগা বিষণ্ন প্রহরে

শহরের শেষ সীমানায় জল মেঘের খোলস ছিঁড়ে
বেরিয়ে এসেছিল কৃষ্ণচূড়া রং একটা বিকেল,
আজ বরং সেই বিকেলটা আমি তুলে রাখবো
কবিতার জন্য :
কিছু এলোমেলো শব্দ ছড়ানো ছিটানো ছিল
কিছু শব্দ বকুল তলায়,
কিছু কদম ডালে
কিছু কামিনী থোকায় মিশে ছিল ;

এলোমেলো রোদ শেষে আমি ছন্দ কুড়োতে ব‍্যস্ত
আমার এত আয়োজন শুধু এক কবিতার জন্য
সবুজ পাতা বাহার কবিতার বন্ধু পড়শি …
হঠাৎ বৃষ্টি পতনে পৃথিবী আহত হয়েছে –

আমি এখন কবিতার নীল ডায়েরি উল্টে পাল্টে দেখছি অনেক কিছু,
ডায়েরির পাতায় কবিতা আছে নতুন পুরোনো অনেক –
কবিতার ভাঁজে ভাঁজে শুকনো গোলাপ পাঁপড়ি,
কে বা কবে কেউ গোলাপ তুলে দিয়েছে আমার হাতে,
আজ আর আমার কিছুই মনে নেই
আমি গোলাপ পাঁপড়ি গুলো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকি –
আমি ফিরে যাই এক, দুই, তিন, চার যুগ আগের দিন গুলোতে —
আমার কিছুই মনে পড়ে না,
একের পর এক দিনগুলো আমি দু’হাতে ভাঙ্গতে থাকি
শহর জুড়ে আমার আবছা দৃষ্টি
আমার কবিতার ডায়েরিতে তখন রাত গভীর হতে থাকে একটু একটু করে।

আমার দু’চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে কবিতার পোড় খাওয়া বুকে –
শুকনো গোলাপ পাঁপড়ি গুলো ভিজে হলো সারা !
পাঁপড়ির ভাঁজে ভাঁজে তবে কি অনেক দুঃখ জমেছিল ?
যা আমি জানি না :
আমি কবিতার কাছে ফিরে আসি
গোলাপ পাঁপড়ি গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতার শব্দের মত সতেজ আর জীবন্ত হয়ে উঠেছে,
বুঝলাম ক’ফোটা চোখের জলের কত শক্তি — — —

প্রতিদিন স্নিগ্ধ ভোরে নিয়ম করে
এই আমি একবার আমার লেখা কবিতা গুলো পড়ি …
আর শিশির স্নাত গোলাপ পাঁপড়ি গুলো
আমার কবিতার সবুজ চোখের পাতার ভাঁজে ভাঁজে,
ঠোঁটের কোণে মিষ্টি গোলাপ হাসির উচ্ছ্বাস লেগে আছে ….
সে হাসি দেখার মত !!

বুনো বৃষ্টিরা ভেসে গেছে

বুনো বৃষ্টিরা ভেসে গেছে

রোদে ভাসা মেঘে ছিটেফোঁটা নীলটুকুও আর নেই
শূন্য আকাশ রোদে শুকোয়,
দু’ফোটা দুঃখ কাহন স্বপ্নের চোখে :
এলোমেলো বৃষ্টি হয়ে ঝরছে।
এ দুঃখটুকু একান্তই আমার
হুবহু আমারই প্রতিচ্ছবি!
আমার দু’চোখে মেঘ থমথম আকাশ —
আমি যদি ঝরে যাই
টিপটিপ বৃষ্টির শব্দে …
ভরা আশ্বিনের নীল কুয়াশায়
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে
বৃষ্টিরা কদমের ডালে,
আরও দূরের নির্জন আকাশে
আমি মেঘ ডানায় ভেসে বেড়ায় —–

রোদ্রের ভর দুপুর
কতখানি মেঘ
কতখানি রোদ ছিল
শেষ বিকেলের সাদা ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে
কতখানি আলো -ছায়া পড়েছে সবুজ ঘাস বুকে,
দূরে ওই মাধবীলতা ফোটে
নক্ষত্র রাত্রে :
নীরব নিশুতি রাত্রে জ্যোৎস্না টুপটাপ ঝরছে
শ্রাবণের কদম ডালে,
সারা রাত্রি জেগেছে শিশির গুলো ঘাসে
চারিদিকে ঝিরঝিরে বাতাসের শব্দ …
ঘুমের শিয়রে সাদা সাদা মেঘ
হলুদ পাতা হয়ে উড়ে
শঙ্খচূড় পাহাড়ে !

সমুদ্র বুকে বুনো বৃষ্টিরা
ঝরে গেছে কবে
মনে নেই …
পৃথিবী ব্যাস্ত রাত্রির তিমিরে,
এক ঝাঁক জোনাকি নীড় বাঁধে
গল্পের রূপকথার দেশে !
আমার দুঃখরা জনশূন্য মেঘের ডানা খসে
বুনো্ বৃষ্টি হয়ে ভেসে গেছে
গত শ্রাবণে।

10.03.2019

মন অরণ্যে ….

মন অরণ্যে ….

অরণ‍্যে ফুল ফুটুক আপন সৌন্দর্য নিয়ে
তুমি রক্ত গোলাপ ফুটালে আমার শূন্য মনে :
আমার মেঘলা করা মন
ভীষণ আবেগপ্রবণ
ভালবাসা রংধনু ছড়িয়েছে মনের আকাশে !

তুমি আমার চেতনার আকাশে ঝড় তুলেছ
তোমার স্পর্শ সে তো উত্তাল সমুদ্র!
আমার চোখের তারায় স্বপ্নময়তার প্রত‍্যাশার আলো জ্বেলেছ ..
তোমার রূপালি রোদে ছড়ানো ঘাস উঠোনে আমি বুনো ফুল;

সে ফুলের খোঁজে তুমি পা রেখো না ঘাস উঠোনে
জল জ‍্যোৎস্নায় আমি স্নান করব ,
দুঃখের সরোবরে..
প্রতি রাতে আমি জেগে থাকি
কবিতার সাথে:
এক কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়!

আকাশের নীলিমায় ডানা মেলে
শ্রাবণ মেঘ,
কুয়াশার ডানা বেয়ে শিশির নেমে এসে —
স্বপ্নের ভেতরে করে অবগহণ !
সন্ধ্যার আকাশে নীল নক্ষত্র …
করে উটাচন ,
বিকেলে জলপাই রং রৌদ্র
নেমে এসে আমার ঘাস ফড়িং মন ছুঁয়ে উড়ে যায়
স্বপ্নের চিল মেঘ ডানায় ,
শেষ বিকেলের নরম রোদ উঁকি দিয়ে হারিয়ে গেছে
অচেনা শহরের বাঁকে :

চম্পাবতী নদীর তীরে
রূপ কথার সাজানো নীড়ে,
নক্ষত্র নীল আবেগে ভরা নির্মেঘ
নিস্তরঙ্গ ঘুম ঘুম রাতে
হঠাৎ চমকে উঠি একি ?
শুধুই স্বপ্ন ;
অ‍্যা হ‍্যাভ এ‍্যা ড্রিম ..
নীল আকাশের আঁচল খসে
চাঁদের রূপালি ছায়া নেমে এসেছে
নীরব নিঃশব্দে !

অরণ‍্য নীড়ে …
শিশির মায়ায় ,
যেন কানামাছি খেলায়
রাত জাগা জ‍্যোৎস্না নীড়ে
দারুচিনি দ্বীপ ছুঁয়ে আছে।

এ কোন্ জীবনের খেলায়
অরণ্য এভাবেই থাকবে তুমি চিরদিন ..
নাকি হারাবে মনের গহীনে,
মন অরণ্যে !!

10.03.2019

নারী দিবসের কবিতা … “না মানুষ”

নারী দিবসের কবিতা : “না মানুষ”

যদিও আমি মানুষ না
মেয়ে ছেলে নারী —-
একদল মানুষের ভীড়ে না মানুষ :
মানুষ হেরে যায় তখন
যখন তার কিছুই করার থাকে না — —
আমি হারতে শিখিনি
যদিও আমি নারী,
সমস্ত জীবন আমার !
আমি একটি স্বাধীন পৃথিবী চাই
যে পৃথিবীতে বুক ভরে আলো,
বাতাসের নিঃশ্বাস নিতে পারব
এটা আমার সংস্কৃতি ; অধিকার বোধ
বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা!

আমি কোন অলৌকিক স্বপ্নের বিকেলে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছি না,
কঠিন বাস্তবতার কথাই বলছি
দৃঢ় বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
ধ্বংস হয়ে যায় যে জীবন বোধের চৈতন্য —-
আমি সে জীবন চাই না,
বেঁচে থাকার জন্য আমি সুন্দর একটি পৃথিবী চাই !

সে পৃথিবীর সকাল এত সুন্দর নির্মল
আর স্বচ্ছ হবে ——
কেউ কাউকে কোন কষ্ট দেবে না
সেই সব পুরুষ মানুষ নামের অমানুষ গুলো
সব নারীদের সম্মান করতে শিখবে,
প্রতিটি পরিবার থেকে শুরু হবে এ যাত্রা :

হে নারী,
তোমাদের বলি তোমরা চিরকাল জ্বলে পুড়ে মরো,
তোমরা হয় মরো,
না হয় আগুন জ্বালো পৃথিবীতে —-!
নারীদের ও সুন্দর একটা জীবন আছে…
সে জীবন জুড়ে থাকবে অনাবিল প্রেম,
সমুদ্র স্বচ্ছ জলের মত ভালবাসা ;
নির্মল আকাশের মত বিশ্বাস —-
সব কিছুই মিলিয়ে একটা নারী হয়ে উঠবে
সুখ পাখি,
যে পৃথিবীতে নিয়ম করে
প্রতিদিন — চাঁদ ওঠে না,
ফুল ফোঁটে না ; পাখি ডাকে না,
ভোর হয় না, পাখিরা উড়ে না —–
আর সমুদ্র ঢেউ তুলতে ভুলে যায় —-
এমন পৃথিবী কে চায় ?
এক একটা পৃথিবী,
এক একটা পরিবার
আমরা এমনটা কেন চাই না ?
প্রতিটি পরিবারে এক সুখ পাখির ছোঁয়ায়
প্রতিদিন নিয়ম করে —- চাঁদ উঠবে
ফুল ফুটবে, পাখিরা গাইবে
ভোর হবে, পাখিরা উড়বে—-
যদি পাখির ভাষা পাখিই বোঝে,
পশুর ভাষা পশুই
তাহলে, পুরুষ মনে -প্রাণে
এক মাত্র মানুষ হয়ে
নারীর ভাষা কেন বুঝবে না ?
নারীর বুকে আগুন শুধুই জ্বলছে,
একই আকাশ
একই ছাদের নীচে বসবাস করেও নারী বিচ্ছিন্ন,
এ আমার বড়ই লজ্জা ;
পাখির চোখে ও স্বপ্ন থাকে
মুক্ত আকাশে উড়ার –
আর নারী -?

আর কত কাল পড়ে পড়ে মার খাবে ?
ধর্ষিতা তনুরা,
স্বামীর ষড়যন্ত্রে দুর্বৃত্তদের
এসিডে ঝলসে যাওয়া মাহফুজা আক্তার সুর্বণা ও তাঁর
শিশু কন্যা সানজিদা রিমারা
তোমরা জেগে ওঠো,
আগুন জ্বালাও
চোখের মণিতে
জিহ্বায়…
ঠোঁটে,
বিষধর সাপ হয়ে বিষাক্ত ফণা তোল
ওই সব মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা
অমানুষ রূপী জানোয়ারদের বিরুদ্ধে-।

তীক্ষ্ণ নখের আঁচড় কাটো ওদের ভাগ্যের রেখায়,
তারপর মুক্ত আকাশের খোলা বুকে
মুক্তির নিঃশ্বাস নাও —-
শক্ত মাটির বুকে দাঁড়িয়ে,
একটু একটু করে স্বপ্ন দেখো গত কালকের দুঃস্বপ্নের কাল রাতগুলো দু’ হাতে সরিয়ে দিয়ে —-
আগামী দিনের জন্য…!
এ পৃথিবীর দিন রাত্রি,
আলো, বাতাস চাঁদ, নক্ষত্র তোমার ও,
তুমিও দু’ হাতে ভেঙ্গে ফেলতে পার
কালো অন্ধকারের আবরণে ঢেকে ফেলা রাত্রি,
তুমিও ইচ্ছে মত ফোঁটাতে পার বসন্ত ফুল,
তুমি আর কত কাল গভীর নিঃশব্দ
সমুদ্রের মত জীবন কাটাবে….
এসো নারী,
আমরা ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে
মানুষ হয়ে উঠতে শিখি -!
হে এক পৃথিবীর মানুষ —–
তোমরা দেখো,
এক দল অমানুষের ভীড়ে
আমরা ও মানুষ হয়ে উঠতে পারি !
আজ শুধুই সেই সুদিনের জন্য অপেক্ষা।

08.03.2019

এক কাপ চা

এক কাপ চা

এক কাপ চায়ের নেশায়
কবিতার মঞ্চে যোগ দিলাম
সাথে এক যুবক
সেখানে কবিতা পড়ি
অন‍্যদের পড়াও শুনি,
ভালোলাগে সবই ……

ইদানিং জীবন গুলো হয়ে উঠেছে
ব‍্যস্ত সময়ের মতো,
জীবন এবং সময় আলাদা দুটি সত্ত্বায় গাঁথা ..
জীবন থেমে থাকে না কারো জন্য
সময় ও তাই ——!

আজ কাল মানুষ গুলো বড় বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে
যেন কেউ কারো নয়।

সামনে একটা মিছিল
মিছিলে মরা নদীর গতি
নিত্য দিনের মতো —-
হঠাৎ করে ময়লাপোতা চৌরাস্তার মোড়ে
জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক,
যুবক ভড়কিয়ে যায়
যুবতীকে গুলি করে
মুখোশ পরা ট‍্যাঙ্কের কালো হাত ধারী ..
যুবতীর লাশ পড়ে যায় মাটিতে ..
চিৎকার করে ওঠে যুবক !

যুবকের একবার ফিরে যেতে ইচ্ছে হলো
যুবতীর লাশ ফেলে কবিতার মঞ্চে——–
এক কাপ চায়ের নেশায়
যুবতীর লাশ ফেলে যুবক যেতে পারে না ,
বিবেক তার বাঁধা দেয়
দুর্ভেদ্য প্রাচীর তুলে,
এক কাপ চায়ের জন্য এভাবে আত্মদান ?
মানুষ হয়ে এমনটি সে করতে পারে না,
তবু ————-
চা খাওয়ার নেশাটা তার কাটে না।

03.03.2019